#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_11
#লেখিকা_সালমা_খাতুন
🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫
সকালবেলা…..
সকালের সূর্যটা ধীরে ধীরে আকাশের পূর্ব দিক থেকে উঁকি দিচ্ছে। চারপাশে এক শান্ত, নির্মল পরিবেশ। পাখিরা ডানা মেলে গাছের ডালে বসে মিষ্টি সুরে ডাকে, প্রকৃতির এক স্বাভাবিক সংগীত। বাতাসে হালকা শিশিরের গন্ধ, ঘাসে জমে থাকা শিশিরবিন্দু সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। গাছের পাতাগুলো রৌদ্রছায়ায় দুলছে, যেন সকালে তারা নতুন প্রাণ পেয়েছে।
এই মনোরম দৃশ্য মায়া তার বারান্দা থেকে দেখছে আর উপভোগ করছে। আজ খুব সকালেই ঘুমটা ভেঙে গেছে ওর। তাই বিছানা থেকে উঠে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে। কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে। তারপর হাত মুখ মুছে রওনা দিলো রান্না ঘরের উদ্দেশ্যে। এই বাড়ির সবাই হয়তো এখোনো ঘুমে। শুধু পাখির কিচিরমিচির ছাড়া চারিদিক এখনো নিস্তব্ধ। মায়া রান্না ঘরে গিয়ে সকালের নাস্তা বানাতে শুরু করলো।
কিছুক্ষণের পরেই শোনা গেলো কোরোর পায়ের আওয়াজ। মায়া রান্না ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো, মিসেস আনজুমা বেগম আসছেন।
আনজুমা বেগম:- “আরে মায়া মা তুমি? এতো সকালে রান্না ঘরে কি করছো?”
মায়া মুচকি হেসে বলল, “এই তো ছোটো আম্মু ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছি।”
আনজুমা বেগম:- “তোমার বানানোর কি দরকার মা? রান্নার জন্য শেফ আছে, আমি আছি।”
ঠিক তখনি রান্না ঘরে প্রবেশ করলো রুবি। এরই মধ্যে ওদের বাড়ির শেফরাও উঠে যে যার কাজ লেগে গেছে।
রুবি:- “মায়া! স্যার এই সময় কফি খায়। জিম রুমে আছেন উনি। এরপর উনার ঘরটাও পরিস্কার করতে হবে।”
মায়া:- “আচ্ছা আপু ঠিক আছে। আমি এখনি যাচ্ছি কফি নিয়ে। আর উনার জিম রুমটা কোন দিকে?”
রুবি:- “উনার রুমের সাথেই অ্যাটাচ রুম আছে। ওটাই জিম রুমে।”
মায়া:- “আচ্ছা আপু।”
আনজুমা বেগম অবাক হয়ে দেখছে এই ছোট্ট মেয়েটাকে যে কিনা বুকে হাজারো কষ্ট চাপা রেখে কতটাই না স্বাভাবিক দেখাচ্ছে নিজেকে। ভালোদের সাথেই সবসময় কেন এমন হয়? মেয়েটার তো ওর বাবা ছাড়া এই দুনিয়ায় কেউ নেই। আর দেখাই বোঝা যেত ওর বাবা ওকে কতটা আদরে মানুষ করেছে। যদি ওর বাবা এই দুনিয়ায় থাকে তাহলে কোথায় যাবে মেয়েটা? তখনো কি এইভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারবে? ভীষণ মায়া হয় উনার এই মেয়েটাকে দেখলে। কত সুন্দর মিষ্টি স্বাভাবের মেয়েটা। আর তার কপালেই কিনা এতো কষ্ট। ভাবলেই অবাক লাগে।
মায়া কফি বানাতে বানাতে আনজুমা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল, “কি ভাবছো ছোট আম্মু?”
আনজুমা বেগম মায়ার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “কিছু না মামনি। দোয়া করি আল্লাহ তোমার সব কষ্ট ধুয়ে মুছে দিক। তুমি দেখবে, এখন কষ্ট পেলেও একদিন খুব সুখী হবে তুমি।”
মায়া এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলল না। শুধু ওর মুখে ফুটে উঠলো কষ্টের হাসি। তারপর বলল, “আচ্ছা ছোট আম্মু, আমি তো জানি না এই বাড়ির সবাই ব্রেকফাস্টে কি খায়, তাই লুচি আর আলুর দম বানিয়েছি।”
আনজুমা বেগম হেসে বললেন, “অনেক ভালো করেছো। আমি তোমার আঙ্কেলরা আর সমিরা তো লুচি খেতে অনেক ভালোবাসি। দেখবে ওরা এই ব্রেকফাস্ট দেখে অনেক খুশি হবে। বড়ো ভাবী আর আরমান হয়তো খাবে না ওরা ডায়েট করে তো, তাই খুব বেশি অয়েলি জিনিস খায় না ওরা।”
মায়া:- “আচ্ছা ঠিক আছে। আর আঙ্কেলরা কি উঠে গেছে? তাহলে উনাদের জন্য বানাতাম।”
আনজুমা বেগম তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে বল উঠলো, “ওহ দেখছো আমি তো ভুলেই গেছি। তোমার আঙ্কেল দের জন্যই চা বানাতে এলাম আমি। উনারা মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছে, এখনি ফিরে এসে চা চাইবেন।”
মায়া মুচকি হেসে নিজের কাজ করতে করতেই বলল, “তুমি চিন্তা করো না ছোটো আম্মু, আমি এখনি বানিয়ে দিচ্ছি।”
বলেই চা বানাতে শুরু করলো। আর আনজুমা বেগম না না করে বললেন, “আরে আরে আমি বানাচ্ছি, তুমি যাও এরপর তোমাকে আরমানের রুম পরিস্কার করতে হবে। তারপর অফিসেও তো যাবে তুমি। আজকে আবার প্রথম দিন।”
মায়া:- “ওহ কোনো ব্যাপার না ছোট আম্মু, এখনি হয়ে যাবে বেশিক্ষণ লাগবে না। যাও তুমি গিয়ে ড্রইংরুমে বসো আমি এখনি চা আনছি।”
আনজুমা বেগম মায়ার মাথার চুল গুলো হালকা এলোমেলো করে দিয়ে বললেন, “পাগলী একটা।”
বলেই উনি চলে গেলেন। এদিকে মায়া নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/
এরপর কিছুক্ষণের মধ্যেই মায়া সবকিছু রেডি করে, রান্না ঘর থেকে উকি দিয়ে ড্রয়িংরুমে তাকলো, দেখলো আঙ্কেল রা চলে এসেছেন। মায়া একটা ট্রেতে করে চা নিয়ে গেলো উনাদের কাছে। ছোটো আম্মু কেও চা দিলো। এরপর আবারও রান্না ঘর গিয়ে আরমানের জন্য বানানো কফি নিয়ে এগিয়ে গেলো দোতালার দিকে। তারপর আরমানের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক্ষন নক করার সত্বেও ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ এলো না। ওর মনে পড়লো রুবি বলেছিল জিম রুমে থাকবে এই সময় তাই হয়তো অত দূরে নক করার আওয়াজ যাচ্ছে না। মায়া আর কোনো কিছু না ভেবেই রুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। ওর এই রুমটা ভালো করে দেখা হয়নি কখনো, তাই পুরো রুমটাই একবার চোখ বুলালো। বিশাল বড়ো রুমটা। সবরকমের ফার্নিচারও আছে। পুরো রুমাটাই সাদা কালার, তার সাথে দরজা জানালার পর্দা থেকে শুরু করে বিছানার চাদরটাও সাদা কালার। এতো ঝাঁ চকচকে রুমটার কি পরিস্কার করবে ভেবে পেলো না মায়া। রুমে কিং সাইজের একটা বেড রাখা। আর তার কিছুটা পাশেই একটা বিশাল বড়ো বেলকনি। থাই গ্লাস লাগানো। সেই থাই গ্লাস ভেদ করে রুমে সকালের মিষ্টি রোদ প্রবেশ করছে। রুম থেকে যতোদূর দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বেলকনিটা অনেক ফুল গাছ দিয়ে সাজানো। মায়ার আবার ফুল গাছ অনেক পছন্দ। তাই মায়া কফি হাতেই এগিয়ে যেতে গেলো সেইদিকে, কিন্তু তখনি একটা মোটা গম্ভীর পুরুষালী আওয়াজ ভেসে এলো ওর কানে, “আমার রুমে কি করছো তুমি?”
আরমান একটা টাওয়েল দিয়ে ঘামে ভিজে থাকা শরীরটা মুছতে মুছতে জিম রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে মায়ার উদ্দেশ্য কথা টা বলল।
মায়া আরমানের গম্ভীর গলার আওয়াজে থেমে গেলো। তারপর আস্তে আস্তে আরমানের দিকে ঘুরলো কিন্তু তখনো ও মাথা নিচু করে রেখেছে। আরমান আবারও গম্ভীর গলায় বলল, “কারোর রুমে ঢুকতে হলে আগে অনুমতি নিতে হয়, সেই জ্ঞান টা নেই তোমার?”
মায়া:- “সরি আসলে আমি আপনার জন্য কফি এনেছি। বাইরে থেকে অনেক বার নক করেছি কিন্তু আপনি হয়তো শুনতে পাননি। তাই বাধ্য ঢুকেছি রুমে।”
কথা গুলো বলেই মায়া মুখ তুলে তাকালো আরমানের দিকে, আর সাথে সাথেই পিছনের দিকে ঘুরে গেলো ও। কারণ আরমানেন গায়ে কোনো জামা ছিল না। শুধু একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়া ছিল।
আরমান মায়াকে এইভাবে পিছনে ঘুরে দাঁড়াতে দেখে এগিয়ে এলো মায়ার কাছে। একদম মায়ার ঠিক পিছনে পিঠ ঘেষে দাঁড়িয়ে মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বাঁকা হেসে স্লো ভয়েসে বলল, “এমন ভাব করছো যেনো মনে হচ্ছে তুমি আমাকে এই অবস্থায় প্রথম বার দেখছো?”
মায়া ভীষণ লজ্জা পেলো ওর কথায়। এই লজ্জা একজন স্বামীর কথায় স্ত্রী যেমন পাই তেমন লজ্জা নয়। এই লজ্জা অপমানের লজ্জা। এই লজ্জা অন্য জনের থেকে অপমানিত হওয়ার লজ্জা।
মনে পড়ে গেলো সেই দিন সেই ক্লাবের কথা। ওর বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করার পর পরই টাকা চেয়েছিল ওর থেকে। আগে নাকি হসপিটালের বিল জমা করতে হবে তারপর ট্রিটমেন্ট শুরু করবে। অনেক রিকোয়েস্ট করে দুইদিন সময় চেয়েছিলো ও। তারপর অনেক জায়গায় ছুটে ছিল টাকার জন্য, কিন্তু ও কুপ্রস্তাব ছাড়া কেউ ওকে টাকা দিতে চাইনি। প্রথম দিন ব্যার্থ হয়েছিল টাকা জোগাড় করতে। তারপর ওর একটা কলেজ ফ্রেন্ড কে কল করে। তেমন একটা কাছের বন্ধু ছিলো না। এমনি চেনা পরিচয় ছিল। ওর কাছে সাহায্য চাইলে, ওই মেয়েটায় ওকে ওই ক্লাবের ঠিকানা দেয়। আর ওই কাজের প্রস্তাব দেয়। মায়া প্রথমে না করে দিয়েছিল। মেয়েটা অনেক বুঝিয়ে ছিল যে এতো টাকা হঠাৎ করে কেউই ওকে দিতে পারবে না ওটাই একমাত্র উপায়।
তারপরও মায়া না করে দিয়েছিল। আবারও সারাদিন ছুটে বেরিয়ে ছিল অনেক জায়গায় লোনের জন্যেও। কিন্তু একদিন লোন দেওয়া সম্ভব না। সন্ধ্যার দিকে হসপিটাল থেকে কল আসে ও যদি টাকা জমা না করে তাহলে ওর বাবাকে কেবিন থেকে বের করে দেওয়া হবে।
তখন মায়ার হাতে আর কোনো উপায় ছিল না। ওর মায়ের রাখা গয়না গুলো বিক্রি করে যেই টাকা টুকু জোগাড় করেছিল সেই টাকা টুকু জমা করে আসে হসপিটালে। আর ওই রাতটুকু সময় চেয়ে নেয়। বাকিটা কাল সকালে জমা করবে বলে।
এরপরই আর কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে শুধুমাত্র ওর বাবাকে বাঁচানোর জন্য ওই পথ বেছে নিয়েছিল। আর ওই জায়গায় আরমানকে দেখে জেদের বসে ও কি কি বলছিল সেটা নিজেরও খেয়াল ছিল না। কেমন যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিল ও। সেই কথা গুলো আর ওর করা কাজ গুলো মনে পড়লে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে ওর। কিন্তু ওর যে কিছু করার নেই। ও মরে গেলে ওর বাবার কি হবে? ওর বাবার শেষ সম্বল হচ্ছে ও।
প্রথম প্রথম ওর অজান্তে ওকে কিনা নেওয়ার জন্য আরমানের উপর রাগ, ঘৃণা থাকলেও এখন ও সত্যিই আরমানের কাছে কৃতজ্ঞ, ওকে এই সার্ভেন্ট এর কাজ দেওয়ার জন্য। যদি ওকে কিনে না নিত, যদি ওর সার্ভেন্ট না বানাতো, তাহলে ওকে ওই নোংরা জায়গায় এখনো কাজ করতে হতো। সত্যিই আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
মায়ার এই সব কথা ভেবেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আরমান ওকে এক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছিল। ওদের বিয়ের পর কখনো এতো কাছে থেকে, কাছে থেকে তো অনেক দূরের কথা, দূর থেকেও চোখ তুলে একপলক দেখেনি ভালো করে। শুধু মাত্র মাইশার কথা ভেবে। আর এখন মেয়েটাকে দেখলে কেমন যেনো তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।
আরমান তখনো মায়ার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েই এক দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া সেটা বুঝতে পেরে কাঁপা কাঁপা হাতে কফিটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আ…আপনার কফি। ঠা.. ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
আরমানের ঘোর কাটলো যেনো। না না কি করছে ও। ওকি এই মেয়েটার মায়ায় পড়ে যাচ্ছে? না না এটা কিছুতেই সম্ভব না। ও শুধু মাত্র ওর মাইশাকে ভালো বাসে।
আরমান মনে মনে ভীষন বিরক্ত হলো মায়ার উপর। বিরক্তিকর গলায় ওর কাছ থেকে সরে এসে বলল, “ঠান্ডা তো হয়েই গেছে। যাও আবার গিয়ে নতুন করে কফি বানিয়ে নিয়ে আসো।”
মায়াও যেনো এই অপেক্ষাতেই ছিল। আরমানের বলার সাথে সাথেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আর আরমান নিজের উপরেই বিরক্ত হয়ে ওয়াশরুমে গেলো শাওয়ার নিতে।
এদিকে মায়াকে আবার কফি হাতে ঘুরে আসতে দেখে ছোটো আম্মু বললেন, “কি হলো মামনি, কফি নিয়ে ঘুরে এলে যে?”
মায়া:- “আসলে ছোটো আম্মু উনি জিম রুমে ছিলেন তাই কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
আনজুমা বেগম:- “ওহ আচ্ছা।”
মায়া আবারও রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানাতে শুরু করলো। কফি বানাচ্ছে আর নিজের মনে বিড়বিড় করে আরমানকে বকছে। কফি বানানো হয়ে গেলে মায়া আবারও আরমানের রুমে গেলো। দরজায় নক করলে, কোনো সারা পেলো না। তাই দরজাটা হালকা খুলে মুখ বাড়িয়ে দেখলো রুমে কোথাও আরমান আছে কিনা। কিন্তু আরমানকে রুমে কোথাও দেখতে পেলো না। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ আসছে। তারমানে আরমান ওয়াশরুমে। এই ভেবে রুমে ঢুকে গেলো মায়া। কফিটা বেড সাইড টেবিলে রেখে যেমন এসেছিল তেমন ভাবেই চলে গেলো মায়া। এবার বুঝে করুক উনি, এখন আর কফি ঠান্ডা হলে ওর কোনো দোষ নেই। খেলে খাক না খেলে না খাক।
চলবে….
#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_12
#লেখিকা_সালমা_খাতুন
🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫
ঠিক সকাল আটটার সময় শাহরিয়ার ম্যানশনের সকল সদস্য এসে হাজির হলো ডাইনিং টেবিলে। এটাই এখানকার নিয়ম। সকালের ব্রেকফাস্ট আর রাতের ডিনার ঠিক সময়ে সবাইকে একসাথে করতে হবে। এই নিয়ম আরমানের দাদু বেঁচে থাকতে করে গিয়েছিলেন। সেই নিয়ম এখনো বজায় আছে।
মিসেস সাবিনা বেগম টেবিলে লুচি আর তরকারি দেখে নাক মুখ সিঁটিকে বললেন, “কি সব রান্না হয়েছে এগুলো? অয়েলি ফুড? জানো না এসব আমি খাই না।”
আনজুমা বেগম:- “এগুলো আমাদের জন্য ভাবী। তোমাদের জন্য তোমাদের মতো রান্না করা হয়েছে। আনছে ওরা।”
এরপর দুই জন সার্ভেন্ট আরমান এবং সাবিনা বেগমের জন্য ওরা যা খাই তাই এনে দিলো। এদিকে সামিরা তো লুচি তরকারি দেখে অনেক খুশি।
সামিরা:- “ওয়াও ছোটো আম্মু, কি বানিয়েছো। অনেক অনেক থ্যাংকস তোমায়, অনেক দিন হলো লুচি তরকারি খাইনি।”
আনজুমা বেগম মুচকি হেসে বললেন, “আমি বানাইনি এগুলো মায়া বানিয়েছে।”
মানোয়ার সাহেব মজা করে বলে উঠলেন, “তাই তো ভাবি আজ সূর্য কোনোদিকে উঠলো যে আমার গিন্নি এতো সুন্দর খাবার বানিয়েছে। এখন দেখছি সূর্য যেদিকে উঠার সেদিকেই উঠেছে।”
আনজুমা বেগম মৃদু রাগ দেখিয়ে বললেন, “হ্যাঁ এমন ভাব করছো যেনো মনে হচ্ছে আমি কোনোদিনও রান্না করে খাওয়াই না।”
আনোয়ার সাহেব:- “আহ ছোটো বৌমা এসব কথা বাদ দাও তো, আগে খেতে দাও। খাবার দেখেই জিভে পানি আসছে। আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”
সাবিনা বেগম মুখ বাঁকিয়ে বললেন, “এমন সব ভাব করছে যেনো মনে হচ্ছে ওই মেয়ে খাবার বানায়নি অমৃত বানিয়েছে। হুহ।”😏
আরমান খাবার টা মায়া বানিয়েছে শুনে আরচোখে তাকালো লুচি গুলোর দিকে। এখনো অনেক টা ফুলে আছে। দেখেই খেতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে ভীষণ টেস্টি হয়েছে খেতে। ওরও ভীষণ ইচ্ছে যাচ্ছে খেতে, কিন্তু নিজের ইগোর জন্য খেতে পারছে না।
আর এদিকে আবিরও এসে আরমানকে জ্বালানোর জন্য মায়ার রান্নার অনেক প্রশংসা করছে, আর মজা করে খাচ্ছে। আর আবিরের সাথে যোগ দিয়েছে সামিরাও।
কিছুক্ষণ পর সামিরা একটা লুচি তুলে আরমানের প্লেটে দিলো। দিয়ে বলল, “ভাইয়া প্লীজ একটা খাও। দেখো না অনেক টেস্টি হয়েছে।”
সাবিনা:- “সামিরা! একে তো তুমি এসব অয়েলি খাবার খেয়ে নিজের শরীরটা নষ্ট করছো তার উপর আবার আমার বাবুর পেছনেও লেগেছো?”
সামিরা:- “তোমাকে তো আর খেতে জোর করিনি মম। এটা আমার আর ভাইয়ার ব্যাপার। তাই তুমি তোমার মতো খাও।”
সাবিনা বেগম ধমকে বলে উঠলেন, “সামিরা!! তুমি মনে হচ্ছে ভুলে যাচ্ছো বড়োদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়। একদম আমার মুখে মুখে কথা বলবে না। এটা আমার পছন্দ না।”
আনোয়ার সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিলেন চুপ থাকতে। আরমান ওর মায়ের উদ্দেশ্য বলল, “মম একদম আমার ছুটকিকে বকবে না। ও আমার একমাত্র বোন। আর একটা লুচিই তো খেতে বলেছে এ আর এমন কি। আমি আমার বোনের এতটুকু আবদার রাখতে পারবো না।”
আবির নিজের মনে বিড়বিড় করে বলল, “শালা, হারামী, নিজের খেতে ইচ্ছে করছে সেটা তো বলতে পারছে না ও নাকি আবার বোনের আবদার রাখতে খাবে।”
সাবিনা বেগম আরমানের উদ্দেশ্যে বলল, “হ্যাঁ। তোমার আদরেই তো দিন দিন বাঁদর হচ্ছে। পুরো বাঁদর একটা।”
সামিরা এটা শুনে ঝটপট বলে উঠলো, “আচ্ছা আমি যদি বান্দর হয় তাহলে পাপা তুমিও তো বান্দর হবে। যেহেতু আমি তোমার মেয়ে। তাহলে ছোটো আব্বুও বান্দর হবে যেহেতু তোমারা ভাই ভাই। আর মমও তাহলে বান্দর যেহেতু আমার গর্ভধারিণী মা। আর তার সাথে ভাইয়াও বান্দর। হি হি হি।” 😁😁
সামিরার এমন কথা শুনে আবির হু হা করে হেসে দিলো। আর আনজুমা বেগমও মুখ চেপে হাসলেন। আর এদিকে আনোয়ার সাহেবের মুখের খাবার নাকে উঠে বিষম খেয়ে যাচ্ছে তাই অবস্থা। মানোয়ার সাহেব পাশে বসায় উনি তাড়াতাড়ি বড়ো ভাইকে পানি দিলেন। এদিকে আরমান মুখ টিপে হাসছে ওর দুষ্টু বোনের কথা শুনে।
আরমান মিথ্যা রাগ দেখিয়ে সামিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “সামিরা!! তুমি কিন্তু ভীষণ দুষ্টু হয়েছো। এতো দুষ্টুমি ভালো না।”
এদিকে সাবিনা বেগম ভীষণ বিরক্ত হলেন। নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলেন যেনো। উনার খাওয়া শেষ তাই উনি বিরক্তকর মুখ নিয়ে উঠে গেলেন।
আনোয়ার সাহেব আনজুমা বেগমকে খেতে খেতেই জিজ্ঞাসা করলেন, “ছোটো বৌমা! মায়া মাকে দেখছি না তো, কোথায় মেয়েটা?”
আনজুমা বেগম, “হ্যাঁ ভাইয়া আমিও অনেকক্ষণ থেকে দেখছি না। ও বলছিল অফিস যাওয়ার আগে একবার হসপিটাল যাবে ওর বাবাকে দেখতে। তাই হয়তো বেরিয়ে গেছে মেয়েটা।”
আবির হতাশ হওয়ার ভান করে বলল, “যাহ চলে গেলো! কোথায় ভাবলাম একসাথে যাবো দুইজন।”
সামিরা:- “কিন্তু আবির ভাইয়া তুমি তো বড়ো ভাইয়ার সাথে যাও রোজ।”
আবির দাঁত দেখিয়ে বলতে লাগলো, “হ্যাঁ তোর বান্দর ভাইয়ের সাথেই যেতাম আগে, তবে এখন থেকে ঠিক করেছি আমি আর মায়া একসাথে যাবো, আমার গাড়িতে করে।”
আরমান বিরক্ত গলায় বলে উঠলো, “খাওয়ার সময় এতো কথা বলা ঠিক না। এতো বকবক করিস কেন দুজন? চুপচাপ খা।”
ওরা আর কোনো কথা না বলে দুইজনই আরমানক উদ্দেশ্য করে মুখ বেঁকিয়ে খাওয়াই মন দিলো। আরমানের খাওয়া শেষ হতেই ও ওঠে গেলো চেয়ার ছেড়ে। লুচি তরকারি টা সত্যিই খুব সুন্দর হয়েছিল। সত্যিই মেয়েটার রান্নার হাত ভালো। খুব সুন্দর রান্না করে মেয়েটা। এই সব ভাবতে ভাবতেই ও ওর রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। ওর রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা খেলো।
আর এই ধাক্কা খাওয়ার মানুষটা আর কেউ নয় আমাদের মায়া। সবাই যে যার মতো ব্রেকফাস্ট করতে যেতেই মায়া উপড়ে এসেছিল আরমানের রুম পরিস্কার করতে। ও ওর কাজ শেষ করে এগিয়ে যাচ্ছিল দরজার দিকেই। ও নিচের দিকে তাকিয়েছিল, আর তার কারণ ওর হাতে ছিল ময়লা পানির বালতি। মেঝে পরিষ্কার করছিল ও পানি দিয়ে। সেই ভারী বালতি তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করেনি সামনের দিকে থেকে আসা আরমানকে। তাই দুজনেই খেলো ধাক্কা। সাথে সাথে মায়ার হাতে থাকা বালতি সহ মায়া ধপাস করে নীচে পড়ে গেলো। সমস্ত ময়লা পানি আবারো মেঝেতে পড়ে গেলো, সাথে কিছুটা মায়ার গায়েও লাগলো।
এদিকে তো আরমান হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। কি হলো বিষয়টা ও বুঝতে পারলো না। অবাক হয়ে নীচে পড়ে থাকা মায়ার দিকে তাকালো।
মায়া নিজের কোমড়ে হাত দিয়ে পড়ে থেকেই আর্তনাদ করে উঠলো, “ওহ মা গো! আমার কোমড়টা বুঝি গেলো। ওহ আল্লাহ!!”
(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/
মায়ার আর্তনাদে আরমানের ধ্যান ফিরলো যেনো। ও তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে গেলো মায়াকে উঠানোর জন্য। কিন্তু ময়লা পানিতে তাড়াহুড়োই পা দেওয়ার কারণে ও নিজেও স্লিপ করে পড়লো মায়ার উপর। মায়া নীচে আর ও মায়ার উপরে।
ঠিক তখনি ওদের কানে আবিরের গলার আওয়াজ এলো, “আমি কিছু দেখি নি, আমি কিছু দেখিনি।”
আরমান পুরোপুরি মায়ার উপরে পড়েছিল। মায়া আবিরের গলার আওয়াজ পেতেই আরমানকে দিলো এক ধাক্কা আর আরমান গড়িয়ে মায়ার পাশে গিয়ে পড়লো। মায়া কোনো মতে উঠে বসলো। আর আবির তখনো মুখ দুই হাতে ঢাকা দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে। আরমান রেগে গিয়ে বলল, “নাটক কম কর আবির। তোর এই নাটক আমার একদম পছন্দ না।”
বলতে বলতেই আরমান উঠে বসলো মেঝেতেই। মায়া তখনো কোমড়ে হাত দিয়ে মেঝেতেই বসে আছে। আবির আরমানের কথায় মুখ থেকে হাত সরিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে দাঁড়ালো। আরমান বিরক্তিকর গলায় মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আমার রুমে কি করছিলে তুমি। আর চোখে দেখতে পাও না, যে এইভাবে দিনের বেলায় এভাবে ধাক্কা খেলে।”
আবির তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো, “এইভাবে দিনের বেলায় তোমার ধাক্কা খাওয়া একদম উচিত হয়নি মায়া। তোমার উচিত ছিল রাতের বেলায় ধাক্কা খাওয়া।”
আরমান রেগে কটমট করে তাকালো আবিরের দিকে। আর আবির আবারও সিরিয়াস হওয়ার ভান ধরে, মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
এদিকে মায়াও আরমানকে তেজ দেখিয়ে বলল, “আমি তো আপনার রুম পরিস্কার করতে এসেছিলাম। আর ধাক্কা আপনি দিয়েছেন আমি না। আর আপনি নিজেই এই পানিতে স্লিপ কেটে পড়েছেন, তাই একদম আমার দোষ দিবেন না।”
আরমান মায়ার প্রতিউত্তরে কিছু বলল না। শুধু প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। আর আবির এগিয়ে এসে মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। মায়া আবিরের হাত ধরে উঠে দাঁড়াতেই মায়া এক হাত কোমড়ে দিয়ে “আহ” শব্দ করে উঠলো। আর এক হাত দিয়ে আবিরের হাতের বাহু খামচে ধরলো।
আবির মায়াকে এমন করতে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল, “কি হয়েছে মায়া? কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?”
মায়া:- “ওহ কিছু না ভাইয়া। ঠিক আছি আমি। শুধু কোমড়ে হালকা ব্যাথা পেয়েছি মনে হয়। এখনি ঠিক হয়ে যাবে।”
আবির:- “ঠিক হয়ে যাবে মানে? আপনা আপনি কিভাবে ঠিক হবে? চলো তোমায় নিয়ে হসপিটালে যাই।”
এদিকে আরমান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে। কেন জানি ওদের এইভাবে একসাথে দেখে একদম সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে দুজনকে ধাক্কা দিয়ে দুইদিকে সরিয়ে দিতে।
মায়া আবিরের হাত ছেড়ে দেওয়াল ধরে দাঁড়ালো।
তারপর বলল, “সরি। আমি কিছুক্ষন পর এসে রুমটা পরিস্কার করে দিচ্ছি।”
আবির:- “তুমি রেস্ট নাও। আমি গিয়ে রুবিকে ডেকে দিচ্ছি, ও পরিস্কার করে দেবে।”
এরপর মায়া আস্তে আস্তে কোনো রকমে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। আবির ও মায়ার পিছু নিলো। আর আরমান রাগে বিরক্তিতে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দিলো। শরীরে ময়লা পানি লেগেছে ওকে আবারো গোসল করতে হবে।
এদিকে মায়া নিজের রুমে গিয়ে ও নিজেও গেলো গোসল করতে। কারণ ওর গায়েও ময়লা পানি লেগেছে। মায়া গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দেখতে পেলো ছোটো আম্মু হাতে একটা অয়েন্টমেন্ট নিয়ে খাটে বসে আছে। উনি দরজা খোলার আওয়াজে মায়ার দিকে তাকালো। মায়াকে ওয়াশরুম থেকে বেরোতে দেখে উনি তাড়াতাড়ি উঠে গেলেন মায়ার কাছে। তারপর মায়ার গায়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কোথায় লেগেছে মামনি? আবির বলল পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছো তুমি?”
মায়া:- “আরে ছোট আম্মু তুমি এতো ব্যাস্ত হয়ো না তো। আমি ঠিক আছি। শুধু কোমড়ে হালকা ব্যাথা পেয়েছি।”
আনজুমা বেগম:- “আচ্ছা আসো, আমি অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিই। একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।”
মায়া এগিয়ে গিয়ে খাটে বসলে আনজুমা বেগম যত্ন সহকারে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিতে দিতেই বলল, “আমি তো ভাবছিলাম তুমি বেরিয়ে গেছো। তোমার বাবাকে হসপিটালে দেখতে যাবে বলছিলে, আর তুমি পড়লে কিভাবে মা?”
মায়া:- “আমি উনার ঘরটা পরিস্কার করতে গিয়েছিলাম ছোটো আম্মু। পানিতে স্লিপ কেটেই পড়ে গেছি।”
মায়া একটু মিথ্যায় বলল, কারণ ধাক্কা লাগার কথাটা বলতে ওর কেমন যেনো লাগছে। এরপর অয়েন্টমেন্ট লাগানো হয়ে গেলে উনি বললেন, “আচ্ছা তুমি বসো আমি এখনি আসছি।”
বলেই উনি চলে গেলেন। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এলেন হাতে একটা খাবারের থালা নিয়ে। তারপর উনি মায়ার কাছে বসতে বসতে বলল, “কই দেখি হাঁ করো তো।”
মায়া অবাক হয়ে বলল, “আরে ছোটো আম্মু কি করছো?”
আনজুমা বেগম মায়ার মুখের সামনে খাবার ধরে বললেন, “একদম কোনো কথা না। আমি খাইয়ে দিচ্ছি চুপচাপ খাও। সেই সকাল থেকে কাজ করছো তুমি।”
এরপর মায়া হাঁ করলে উনি মায়াকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। এতোটা আদর যত্ন দেখে মায়ার চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
আনজুমা বেগম:- “কি হলো মামনি? কাঁদছো কেন? ব্যাথা করছে খুব?”
মায়া দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল, “এই ভাবে পাপা ছাড়া কেউ কখনো খাইয়ে দেয়নি তো তাই পাপার কথা মনে পড়ছে খুব। আচ্ছা ছোটো আম্মু পাপা না থাকলে আমি কিভাবে থাকবো বলো তো?”
মায়ার কথা শুনে আনজুমা বেগমের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো যেনো। সত্যিই তো মেয়েটার বাবা যদি না থাকে তাহলে কোথায় যাবে মেয়েটা?
আনজুমা বেগম মায়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন, “কাঁদে না মা, সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।”
এরপর উনি মায়াকে আরো অনেক কিছু বলে শান্তনা দিয়ে খাবার টা খাইয়ে দিলো।
_.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._..
আবির মায়ার রুমে এসে মায়াকে পেলো না। মায়ার রুম থেকে যাওয়ার সময় সামনে রুবিকে দেখতো পেলো তাই ওকে জিজ্ঞাসা করলো, “রুবি, মায়াকে দেখেছো?”
রুবি:- “মায়া তো এই মাত্র বেরিয়ে গেলো অফিসের জন্য।”
আবির:- “এই মেয়েটাও না, কোমড়ে ব্যাথা নিয়ে কি দরকার ছিল আজ অফিসে যাওয়ার। কাল জয়েন হলেই তো পারতো।”
আবির নিজের মনে কথা গুলো বলে ছুট লাগলো বাইরের দিকে। মায়াকে যদি পাই সেই আশায়। আর পেয়েও গেলো। মায়া এখনো এই বাড়ির গেট পেরোয়নি। আবির একেবারে রেডি হয়ে নেমেছিল অফিসে যাওয়ার জন্য। ভাবলো মায়ার যদি খুব বেশি ব্যাথা লাগে তাহলে মায়াকে নিয়ে আগে হসপিটালে যাবে। কিন্তু এই মেয়ে তো অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
আবির আরো জোড়ে ছুটে গিয়ে মায়ার সামনে দাঁড়ালো। মায়া এইভাবে কাউকে ছুটে এসে ওর সামনে দাঁড়াতে দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। তারপর আবিরকে দেখে সস্তির শ্বাস ছাড়লো। আর আবির সে তো হাঁটুতে হাতের ভর দিয়ে হাঁপাতে ব্যাস্ত। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “কিচ্ছু বলার নেই তোমায়। চুপচাপ এখানে দাঁড়াবে, আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।”
বলেই আবির এগিয়ে গেলো গ্যারেজ এর দিকে গাড়ি আনতে আর মায়া বাধ্য মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকলো ওই জায়গাতেই।
এরপর আবির গাড়ি নিয়ে আসলে, সামনের দরজা খুলে দিলো। মায়াও চুপচাপ উঠে বসলো। তারপর ওরা গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিলো নিজেদের গন্তব্যে। আর এই পুরো দৃশ্যটা টা একজন তার রুমের বেলকনি থেকে জলন্ত চোখে দেখছিল। তার হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে আছে বারান্দার রেলিং।
চলবে….