#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_31
#লেখিকা_সালমা_খাতুন
🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫
আরমান— “ হ্যাঁ ভালোবাসি! ভালোবাসি সেই ছোট্ট মেয়েটাকে, যেই মেয়েটা আমকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিল…আর যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে চিনে নিতে চোখের দরকার হয় না, হৃদয়ের কম্পনে চেনা যায় তাকে। তুমি মাইশা, আমি মানি…কিন্তু আমার হৃদয় যে ‘মায়াবতী’কে চায়, যার কোনো প্রতিচ্ছবি তোমাতে পাই না।
তাই তো, তুমি মাইশা হয়েও আমার পিচ্চি মায়াবতী না…।”
মাইশা আরমানের কথা গুলো শুনে কেমন যেনো ঘাবড়ে গেলো। আর সেটা তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠলো। কিছুটা ভয়ে মাথা নিচু করে নিলো ও, হয়তো বা লুকাতে চাইলো ওর মুখের অনুভূতি। আর আরমান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে। স্পষ্ট বুঝতে পারলো মাইশার ঘাবড়ে যাওয়া। আরমানের ঠোঁটর কোনে ফুটে উঠলো একটা বাঁকা হাসি।
তারপর বলল, “I don’t like it when someone suddenly enters my room. So, you may leave now, Miss Maisha Talukdar.”
মাইশা, অপমানে নাকি ভয় পেয়ে মাথা নামিয়ে চলে যেতে চাইলো বোঝা যাই না। তবে ওকে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে আরমান বলল, “Stop.”
মাইশা পানির গ্লাসটা নিয়ে এসে খাটের পাশে ছোট্ট টেবিল টাতে রেখেছিলো। আরমান সেদিকে এগিয়ে পানির গ্লাস টা হাতে তুলে নিয়ে, আবারও মাইশার দিকে এগিয়ে এসে, ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “You can go now.”
মাইশা আর কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আর এদিকে সামিরা মাইশাকে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে মায়াকে টেনে নিয়ে আবার সিঁড়ি কাছে চলে গেলো। তারপর সামিরা এমন ভান ধরলো যেনো ওরা এখনই সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে এসেছে।
মায়া বিরক্ত হয়ে বলল, “সামিরা কি করছো বলো তো এগুলো?”
সামিরা— “আরে আপু দেখতে থাকো শুধু।”
এদিকে মাইশা রুম থেকে বেরিয়েই সামিরা আর মায়াকে দেখেই থতমত খেয়ে গেলো যেনো। সামিরা মায়ার হাত ধরে মাইশার মুখোমুখি দাঁড়ালো। তারপর সামিরা কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “একি আপু! ভাইয়া আপনার হাতে পানি পান করেনি??”
আবারও একবার থতমত খেয়ে গেলো মাইশা, মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো, “আসলে..মানে পানি গরম হয়ে গেছে।”
সামিরা ওর কথায় ফিক করে হেসে দিয়ে বলল, “পানি গরম হয়ে গেছে? নাকি ভাইয়া গরম হয়ে গিয়েছিল?”
মাইশা বেচারির অবস্থা নাজেহাল। ‘ওরা কি করে বুঝলো যে আরমান রেগে গেছে? ওরা আবার শুনে ফেলেনি তো ওদের কথপোকথন? না না! ওরা তো এই আসছে। সামিরা তো এই বাড়িরই মেয়ে, ওদের তো জানারই কথা আরমানের সম্পর্কে। আর রুবি বলে মেয়েটাও তো আগেই সাবধান করে ছিলো।’
নিজের মনেই কথা গুলো ভাবছিল মাইশা। সামিরার আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো ওর।
সামিরা— “কি হলো আপু? কি ভাবছো? ভাইয়া আবার সত্যি সত্যি গরম হয়ে যাইনি তো? আমার ভাইয়া কিন্তু পছন্দ করে না, হুটহাট কেউ ওর রুমে যাক। গেলেই একদম রেগে বোম… আর তারপর ব্লাস্ট।”
সামিরা শেষের কথা গুলো কিছুটা নাটকিয় ভঙ্গিতে বলল। মাইশা মুখে কিছুটা জোড় করে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে বলল, “আরে না। রেগে যাবে কেন? অন্য কেউ আর আমি উনার কাছে এক হলাম নাকি। আমি উনার বৌ হতে চলেছি। উনি তো রাগ করলেন আমি কাজ করছি দেখে। কোনো কাজ করতে বারণ করলেন আমাই। আর উনি ওয়াশরুমে থাকায় পানিটা গরম হয়ে গেছে। ঠান্ডা পানি চেয়েছিলেন উনি। তাই আমি উনাকে এই পানিটা খেতে দিইনি। আবারও নিচে গিয়ে ঠান্ডা পানি পাঠিয়ে দেবো আমি।”
মায়া ও সামিরা দুজনেই অবাক হলো মাইশাকে বানিয়ে বানিয়ে এতো মিথ্যা কথা বলতে দেখে। সামিরা মনে মনে ভাবলো, “কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রে বাবা? ভাইয়ার থেকে ঝাড়ি খেয়েও লজ্জা নেই? এখন আবার বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছে। কিইবা করবে তাছাড়া? নিজের অপমান কি সহজে নিজের মুখে বলা যাই?”
মাইশা— “মায়া! এখন কেমন আছিস তুই? কিছু মনে করিস না যেন, এসে থেকে তোর সাথে কথা হয়নি একবারো।”
মায়া মুখে বেদনার হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপু! না ঠিক আছে, আমি কিছু মনে করিনি।”
মাইশা হাসি মুখে বলল, “আচ্ছা, আমার রুমে আসবি একবার ঠিক আছে? তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
মায়া— “আচ্ছা আপু।”
মাইশা আর দাঁড়ালো না ওখানে। সোজা নিচের দিকে রওনা দিলো। এদিকে সামিরা মুখ বেঁকিয়ে ওকে নকল করে বলল, “আমার রুমে আসবি একবার ঠিক আছে? হুঁ 😏😏…লাট সাহেবের নাতনি! উনি আদেশ করলেই যেতে হবে। একদম তুমি যাবে না আপু। যার দরকার হবে সে তোমার রুমে এসে কথা বলবে।”
মায়া একটা দুঃক্ষের হাসি দিয়ে বলল, “এমন ভাবে বলতে নেই সামিরা, আপু তোমার বড়ো। বড়োদের সম্মান করতে হয়। আর কিছুদিন পর তো মাইশা আপু তোমার বড়ো ভাবী হতে চলেছে।”
সামিরা জ্ঞানীদের মতো করে বলল, “বয়সে বড়ো হলেই সব জনা সম্মান পাওয়ার যোগ্য হয়না আপু। আর কে বলতে পারে ভাগ্যের চাকা কোন দিকে ঘুরে? ভাইয়া নিজেই বলল, শুনলে না? যে এই বিয়ে হবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।”
“কি হচ্ছে এখানে?”
একটা গম্ভীর আওয়াজে দুজনে সামনে তাকিয়ে দেখলো আরমান ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলো কথাটা আরমানের মুখ থেকেই বের হয়েছে। সামিরা বলল, “কিছু না তো ভাইয়া!”
আবারো ভেসে এলো আরমানের গম্ভীর স্বর, “তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন দুজন?”
সামিরা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, “দাঁড়িয়ে আছি তো কি হয়েছে? এখানে দাঁড়িয়েও থাকতে পারবো না নাকি?”
আরমান গম্ভীর গলায় হুংকার ছাড়লো, “সামিরা!!! মনে হচ্ছে তুমি দিন দিন ভুল যাচ্ছ বড়োদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়। তুমি খুব ভালো করে জানো বড়ো দের সাথে এভাবে কথা বলা আমি পছন্দ করি না।”
সামিরা ভয়ে কেঁপে উঠলো। ও বুঝতে পারলো রাগের মাথায় কি বলে ফেলেছে। মিনমিন করে বলল, “সরি ভাইয়া! ভুল হয়ে গেছে। আসলে মাইশা আপুর সাথে কথা বলছিলাম তাই এখানে দাঁড়িয়ে। মায়া আপু আর আমি আমার রুমে যাচ্ছিলাম।”
আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “আচ্ছা তুই যা। মায়ার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
কথাটা শুনেই মায়া সামিরার হাতটা খামচে ধরলো। আর সামিরা সেই হাত ওর অন্য হাত দিয়ে আস্তে করে ছাড়িয়ে দিলো। তারপর অসহায় চোখে একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে এক ছুটে চলে গেলো।
এদিকে মায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর। সবকিছু বিরক্ত লাগছে যেনো। কোনো ইচ্ছে নেই ওর আরমানের সাথে কথা বলার। তাই মাথা নিচু করেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলো ও, কিন্তু আরমানকে ক্রস করে যেতেই আরমান ওর হাতটা ধরে ফেললো। সাথে সাথেই মায়া থমকে দাঁড়িয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো ও।
এরপর আরমান কোনো কিছু না বলেই সোজা টেনে নিয়ে গেলো ওর ঘরে। ওর ঘরে এসে থামতেই মায়া নিজের হাতটা ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর রাগী গলায় বলল, “এভাবে টেনে আনলেন কেন আমায়?”
আরমান ওর স্বভাব সুলভ গম্ভীর গলাতেই বলল, “বললাম তো কথা আছে আমার তোমার সাথে।”
মায়া— “আমার কোনো ইচ্ছে নেই আপনার কথা শুনার। আর এই ভাবে যখন তখন স্পর্শ করবেন না আমায়।”
আরমান— “কেন? কি হবে স্পর্শ করলে?”
মায়া প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলল, “কেন? কেন স্পর্শ করবেন আমায়? কে দিয়েছে আপনাকে আমাকে স্পর্শ করার অধিকার?”
মায়ার কথা শেষ হতেই, আরমান হঠাৎ মায়ার কোমড়ে হাত দিয়ে এক ঝটকায় দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরলো, তারপর দাঁত কিড়মিড় করে মায়ার মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল, “এই আরমান শাহরিয়ারকে অধিকার দিতে হয়না। অধিকার ছিনিয়ে নেয়।”
মায়ার হাত দুটো দেয়ালের সাথে এক হাতে চেপে ধরে আছে আরমান। আর এক হাত মায়ার কোমড়ে। আরমানের গরম নিঃশ্বাস মায়ার মুখের উপর পড়ছে। মায়ার হার্টবিট হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। চোখ দুটো বন্ধ। আরমান ছাড়া কোনো পুরুষ মানুষ ওর সান্নিধ্যে কোনো দিন আসেনি। মায়াকে প্রথম স্পর্শ করা পুরুষটা হচ্ছে এই আরমান। আবার এই আরমানই—সেই পুরুষ, যাকে প্রথম দেখেই হৃদয়ের আঙিনায় বসন্তের নরম বাতাস বয়ে গিয়েছিল মায়ার।
আরমান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ার মুখের দিকে। কি যেনো খুঁজে চলেছে ওর মুখের মধ্যে। আরমানের গম্ভীর গলার আওয়াজ প্রবেশ করলো মায়ার কর্ণকুহরে। “Open your eyes.”
মায়ার কি হলো জানা নেই, হঠাৎ ও যেনো একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। মন্ত্র মুগ্ধের মতো ধীরে ধীরে চোখ খুলে দৃষ্টি রাখলো আরমানের চোখে। আরমান খুব কাছে থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছু একটা খুঁজলো যেনো মায়ার চোখে। তারপর ধীরে ধীরে আরমানের মুখে খেলে গেলো একটা বাঁকা হাসি। হাসিটা বাঁকা হলেও, প্রাপ্তির। যেনো কাঙ্ক্ষিত কিছু হঠাৎ করেই পেয়ে গেছে ও।
এরপর আরমান ধীরে ধীরে নিজের হাতের বাঁধন আলগা করে দিলো। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে, হাত ঘড়িটা তুলে নিয়ে পড়তে পড়তে স্বাভাবিক গলায় বলল, “যাও আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো।”
মায়া তখনো থমকে দাঁড়িয়ে ছিল, দেওয়ালে ঠেস দিয়ে। আরমানের কথায় ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো যেনো। ভীষণ রাগ লাগলো ওর নিজের উপরই। বিরক্ত লাগলো ওর যে এতোক্ষণ আরমান ওর কাছাকাছি ছিল আর ও বাঁধাও দেয়নি এটা ভেবে। বিরক্ত গলায় মায়া বলল— “পারবো না আমি! আমাকে কি কাজের মেয়ে মনে হয় নাকি? আপনার হবু বৌ তো এনেছিল পানি, খাননি কেন তখন।”
আরমান— “হুম আমার সব কাজ করে দেওয়ার জন্যই তো এনেছিলাম তোমাকে, ভুলে গেলে? অনেক দিন হয়েছে, ছুটি কাটিয়েছো। এবার আবার নিজের কাজে লেগে পড়ো। হ্যাঁ এখন অফিসে না গেলেও হবে। অফিস থেকে এক সপ্তাহ ছুটি দেওয়া হয়েছে তোমাকে। তবে আমার পার্সোনাল মেইড এর কাজ থেকে ছুটি দেওয়া হয়নি।”
মায়া— “বিয়ে করবেন কিছুদিন পর। হবু বৌ তো বাড়িতেই আছে, তাই ভালো হবে নিজের হবু বৌকে তার স্বামীর কাজ গুলো এখন থেকে বুঝে নিতে দিন। নাহলে পরে পস্তাতে হবে। আর হবু বৌ বাড়িতে থাকতে, এখনো আপনার পার্সোনাল মেইডকে কিসের প্রয়োজন?”
আরমান— “বিয়ে!! কাকে করবো বিয়ে?
আমি তো সেই মেয়েটাকেই বিয়ে করে ফেলেছি বহু আগেই— যার নাম হৃদয়ে খোদাই করে রেখেছি মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে, সেই দিন থেকেই।
মায়া ভীষণ বিরক্ত হলো আরমানের এমন কথায়। ও বিরক্ত গলাতেই বলল, “কে? কে সেই মেয়ে? যে আপনাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিল? ওই মেয়েটা কি মাইশা নয়?”
আরমান— “সেই মেয়েটা মাইশা কিনা জানিনা। তবে, আমি সেই একবার ছাড়া দ্বিতীয় বার আর তাকে চোখে দেখিনি, অথচ মনে মনে তার কপালের টিপ থেকে পায়ের নূপুর পর্যন্ত সাজিয়ে রেখেছি— সে আমার দেখা নয়, সে আমার প্রতীক্ষার রূপ।”
ভীষণ ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলে এই লোক, যা মায়ার মাথার উপর দিয়ে যাই। ও বিরক্ত গলায় বলল, “আপনার সাথে কথা বলাই বেকার। মাথা মুন্ডু কি যে বলেন বুঝা মুশকিল। বিরক্তকর লোক একটা।”
কথা গুলো বলেই আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না মায়া। গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। আরমান ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো, “এতো তাড়াতাড়ি বিরক্ত হলে হবে জানেমান? এটাতো সবে শুরু।”
(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/
_.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._..
মায়া নিজের মনে বিড়বিড় করে আরমানকে বকতে বকতে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। আরমানকে পানি দিয়ে এসেছিল রুমে, তখন আবার আদেশ করেছে, “তোমাকে হসপিটাল থেকে বাড়ি আনার চক্করে ব্রেকফাস্ট করা হয়নি আমার। তাই যাও খাবার রেডি করো, আমি আসছি।”
রুবি বলেছিল, স্যার নিচে আসার আগেই ও রেডি করে দেবে খাবার, ও যেনো রেস্ট নেয়। মায়া বলেছে, না থাক। এটা ওর কাজ তাই ও নিজেই করবে। ওর শরীর টা এখনো দূর্বল লাগছে। তাই এখন বিড়বিড় করতে করতে খাবার বাড়ছে আরমানের জন্য।
মায়ার এই অবস্থাতেও মায়াকে কাজ করাচ্ছে আরমান, আর তাই মায়ার ভীষণ রাগ হচ্ছে আরমানের উপড়ে। কিন্তু বোকা মায়া খেয়ালি নেই যে এই কাজ এবং আরমানকে বকার ধ্যানে থাকাই নিজের বাবার মৃত্যুর শোক থেকে কিছুটা হলেও বেড়িয়ে এসেছে।
মায়া— “নিষ্ঠুর লোক একটা। দেখলো আজকেই কিছুক্ষণ আগে হসপিটাল থেকে এলাম। একটুও মায়া, দয়া নেই মনে। নিষ্ঠুর, পাষাণ।”
“গালাগালি দেওয়া শেষ হলে আমি কি খেতে বসতে পারি?”
হঠাৎ নিজের কানের কাছে আরমানের গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে চমকে উঠল মায়া। হাতে ছিল স্যুপের গরম বাটি, সেটাও কেঁপে উঠে পড়ে যেতে নিলো। কিন্তু তার আগেই আরমান, মায়ার হাতে হাত দিয়ে আগলে নিলো বাটিটা। দ্বিতীয় বার কেঁপে উঠলো মায়া, আরমানের ছোঁয়ায়— আর সেটা স্পষ্ট অনুভব করলো আরমান।
“উহুম! উহুম!”
হঠাৎ কারোর নকল কাশির শব্দে ঘুরে তাকালো আরমান ও মায়া। দেখলো আবির তার ৩২ টা দাঁত বের দাঁড়িয়ে আছে। আরমান মায়াকে পাশ কাটিয়ে চেয়ারে বসে গেলো। মায়া কিছুটা লজ্জা পেলো আবিরের এমন হাসি দেখে। সাথে আরমানের উপর প্রচন্ড রাগ হলো। হঠাৎ হঠাৎ এই বেহায়া লোকটা তার এতো কাছে চলে আসছে কেন? বাড়ি ভর্তি মানুষ জন, যদি কেউ দেখে ফেলে তখন তো মায়াকেই দুশ্চরিত্রা বানিয়ে দেবে।
আবির— “বলছি আমিও কিছু খাইনি সকাল থেকে। আমার কপালেও কি কিছু খাবার জুটবে?”
আবিরের পিছন থেকে সামিরাও বলে উঠলো, “আর আমারও।”
মায়া— “তোমরা বসো। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।”
এরপর মায়া ওদের দুজনকেও খাবার বেড়ে দিলো।
আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “আপনিও খেয়ে নিন মিস…না খেয়ে আবারও প্রেশার ফল করলে এবার আর হসপিটালে নিয়ে যাবো না কিন্তু।”
আবির ও সামিরা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো আরমানের দিকে। আবিরের গলায় তো খাবার আটকে গিয়ে খুব জোড়ে বিষম খেলো। কাশতে শুরু করলো। যেই আরমান কোনো দিন কেউ খেলো কি না খেলো তার খোঁজ রাখে না সে আজ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে মায়াকে খেতে বলছে। এতে অবাক হওয়ারই কথা।
আবির এখনো কাশছে। আর এদিকে এই সুযোগ সামিরা হাত ছাড়া করার মেয়ে নয়। ও শুরু করলো আবিরের পিঠে ইচ্ছে মতো কিল চড় দিতে। সাথে মুখে বলছে, “ষাট! ষাট! ৭০, ৮০, ৯০, ১০০, ১১০…”
আর মেরে মেরে গুনতে পারলো না সামিরা। তার আগেই রুবি ছুটে এসে সামিরার হাত ধরে থামিয়ে দিলো। আর মায়া এসে তাড়াতাড়ি পানি দিলো। আবির পানি খেয়ে কিছুটা ধাতস্থ করলো নিজেকে।
রুবি চিন্তিত সুরে সামিরা উদ্দেশ্য করে বলল— “আরে এই সময় কেউ এই ভাবে মারে? এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে তো।”
আবির— “থ্যাঙ্কস! রুবি ডার্লিং। তুমি আজ না আসলে এই শামুকের বাচ্চা শামুক আমাকে মেরেই ফেলতো।”
সামিরা— “আবুল ভাইয়া আমাকে একদম শামুক বলবে…এই এক মিনিট! মিনিট! তুমি রুবি আপুকে কি বললে? রুবি ডার্লিং?”
মায়াও অবাক হলো আবিরের মুখে ডার্লিং শুনে। আবির বুঝলো ইমোশন লুকাতে না পেরে ভুল জায়গায় ভুল কিছু বলে ফেলেছে। দেখলো রুবি কটমট করে তাকিয়ে আছে মিথ্যা রাগ দেখিয়ে। মিথ্যা মনে হচ্ছে কারণ লজ্জায় রুবির গাল লাল হয়ে আছে। আবির কিছুটা বোকা বোকা হেসে বলল, “ডার্লিং বলেছি কারণ, তুই রাক্ষুসে মহিলার মতো আমায় মারছিলি আর রুবি এসে রাজকুমারীর মতো আমাকে বাঁচিয়েছে।”
আবারও সামিরা অবাক গলায় বলল, “এ্যাঁ! আবার রাজ কুমারীও বলছে! শুনলে আপু?”
রুবি আর থাকতে পারলো না এখানে। বেচারি লজ্জায় কেটে পড়লো ওখান থেকে।
এদিকে ধমকে উঠল আরমান, “খাবার টাইমে এতো ডিস্টার্ব ভালো লাগে না। থামবি তোরা!!”
চুপ হয়ে গেলো সবাই। যে যার মতো খেতে শুরু করলো। আর আরমান মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আর তোমাকে কি বললাম শুনতে পাও নি? খেয়ে নিতে বললাম তো।”
মায়া— “আপনাকে এতোটা চিন্তা না করলেও চলবে।”
সামিরা দাঁত বের করে হেসে বলল, “আসলে ভাইয়া..মায়া আপুর খাওয়া অনেক আগেই হয়ে গেছে। বাড়িতে এসেই ছোটো আম্মু খাইয়ে দিয়েছে।”
আরমান কোনো জবাব দিলো না এই কথার। আর এদিকে আবির আরমানের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি হাসছে। ও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। তারপর আবারও মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “দুপুরের লাঞ্চ টা পাঠিয়ে দেবেন অফিসে। আর হ্যাঁ রান্নাটা নিজে করবেন। ঠিক টাইমে যেনো পৌঁছে যাই।”
_.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._..
দুই দিন পর….
কেটে গেছে দুইদিন। মায়া এই দুই দিনে নিজেকে আরো কিছুটা শক্ত করে তুলেছে। ওর চাচী ওকে অনেক কটু কথা শুনিয়েছে, আরমানের সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরও আরমানদের বাড়িতে থাকার জন্য। শাসিয়েছে ওকে, ওর যেনো আর আরমানের জীবনে ঢোকার চেষ্টা না করে। উনার মেয়েটা সুখী হতে চলছে। মায়া যেনো উনার মেয়ের সুখের পথে কাঁটা হয়ে না থাকে। মায়াও নিজেকে ছোটো করে জানিয়েছে, ও এই বাড়িতে এক মাস কাজ করার জন্য এসেছিল। তার বেশি কিছু না। আরমানের সাথে চুক্তি হয়ে আছে ওর এক মাসের। এক মাস শেষ হলেই ও নিজেই এই বাড়ি থেকে চলে যাবে। থাকবেন না উনার মেয়ের সুখের পথে কাঁটা হয়ে।
ড্রয়িংরুমের সোফায় সবাই মিলে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সময়টা সন্ধ্যা সাতটার দিকে। আরমানের বাবা চাচাও অফিস থেকে চলে এসেছে। আরমান আর আবির এখনো আসেনি। মায়া সবার জন্য চা এবং হালকা নাস্তা নিয়ে আসলো। এখন মায়া এই বাড়ির বেশিরভাগ কাজই করে আনজুমা বেগমের সাথে। আর ওর চাচী তো আছেই, সেইদিন মায়ার সাথে কাজের মেয়ের মতোই ব্যাবহার করে। এমন ব্যাবহার হয়তো এই বাড়ির মানুষগুলোও করে না।
হ্যাঁ সাবিনা বেগমও খারাপ ব্যবহার করে না ওদের সাথে। কারণ উনাকে আরমানের বাবা খুব ভালো ভাবে বুঝিয়েছে যে মায়াকে ওদের দরকার। ওদের অফিসের জন্য। মায়ার হাতের ডিজাইন অনেক ভালো। ওর জন্য অনেক প্রফিট হয়েছে, ভবিষ্যতে আরো হবে। তাই উনি যেনো মায়ার সাথে খারাপ ব্যবহার না করে।
মায়া একে একে সবার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে সোফার এক পাশে। সবাই যে যার মতো গল্প করতে করতে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। আর এদিকে মুনজিলা বেগম নিজের মেয়ের তারিফ করতে ব্যস্ত, “আমার মেয়েটাও খুব ভালো নাস্তা বানাই। রান্নাটা ও ভালোই করে। তবে এক মাত্র মেয়ে তো তাই কখনো রান্না করতে দিইনি।”
সামিরা কিছুটা ভাবুক সুরে প্রশ্ন করলো— “আচ্ছা আন্টি, একমাত্র মেয়ে তাই কখনো রান্না করতে দেননি। তাহলে মাইশা আপু রান্না কিভাবে লিখলো?”
সামিরার কথায় উনি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। উনি আমতা আমতা করে বলে উঠলেন— “না মানে, আগে ও করতো রান্না তখন শিখেছে। আর এখন আর করতে দিই না আমি।”
সামিরা দাঁত বের করে হেসে বলল, “ওহ আচ্ছা।”
সাবিনা বেগম— “সামিরা! মাইশাকে আপু বলছো কেনো? ভাবী বলতে পারো তো।”
সামিরা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো— “মম! আগে ভাইয়ার সাথে বিয়েটা হয়ে যাক, তার পর থেকে অবশ্যই ভাবী ডাকবে। এখন কেমন জানি একটা লাগে।”
সামিরার এই কথার প্রতিউত্তরের সাবিনা বেগম কিছু বলবেন তার আগেই হঠাৎ কেউ উনার দুই চোখে হাত দিয়ে ধরলো। উনি কিছু বলবে তার আগেই সামিরা উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠলো, “ছোটো ভাইয়া!!! ওহ মাই আল্লাহ!! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো।”
মিসেস সাবিনা বেগমের চোখ ধরে রাখা ছেলেটি বিরক্ত গলায় বলে উঠলো, “দিলি তো আমার প্ল্যানের বারোটা বাজিয়ে? ধ্যাত ভালো লাগে না।”
আনজুমা বেগম ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন ছেলেটাকে— “আব্বু তুই? এভাবে হঠাৎ করে! বলে আসবি তো?”
ছেলেটিও আনজুমা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললেন— “আম্মু, বলে আসলে কি আর এই সারপ্রাইজ টা পেতে?”
হুম ছেলেটা হচ্ছে এই বাড়ির ছোটো ছেলে, মানোয়ার এবং আনজুম বেগম এর একমাত্র ছেলে— আয়ান শাহরিয়ার।
আয়ান তার আম্মুর চোখের পানি মুছে, বড়ো আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো। উনার চোখেও খুশির পানি। এরই মধ্যে সামিরা ছুটে এসে, নিজের মম এবং ছোটো ভাইয়ার মাঝে ঠেলে ঠুলে ঢোকার চেষ্টা করলো। এতে বিরক্ত হয়ে সাবিনা বেগম ছেড়ে দিলেন আয়ানকে। তারপর সামিরাকে ধমকে উঠে বললেন— “সব সময় এমন বাঁদরামি করো কেনো তুমি।”
ততক্ষণে সামিরা নিজের ছোটো ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছে। ওর মম কে ৩২ টা দাঁত দেখিয়ে বলল, “কারণ আমি বাঁদর তাই। আর আগেই বলেছি তোমরা আমার মম ড্যাড তাহলে….”
আর কিছু বলল না ও। থেমে গিয়ে দুষ্টু হাসি হাসলো ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে। সাবিনা বেগম বিরক্ত হলেন ভীষন। আয়ান একে একে বাবা চাচা কেউ জড়িয়ে ধরলো। এরপর সাবিনা বেগম আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আয়ান বেটা, তোমার হবু ভাবীর সাথে দেখা করবে না? যার কথা বলেছিলাম আমি তোমাকে।”
আয়ান— “হ্যাঁ বড়ো অবশ্যই দেখা করবো। কোথায় সেই হবু ভাবী? তাকে দেখার জন্যই তো হঠাৎ করে এতোদূর কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে এলাম। আমার ভাইয়ের এতোদিনের ভালোবাসা, যাকে সে পাগলের মতো খুঁজছে। তাকে দেখার জন্যই তো আসা।”
সবাই মাইশার দিকে তাকাতেই দেখলো মাইশা ঘোমটা দিয়ে নিজের মুখটা আড়াল করার চেষ্টা করছে। কেমন যেনো তার মায়ের পিছনে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। এটা দেখে সবাই কিছুটা অবাক হলো। সাবিনা বেগম মাইশার কাছে এগিয়ে এসে বলল, “একি মাইশা! তুমি এভাবে ঘোমটা দিয়ে রেখেছো কেনো?”
মুনজিলা বেগম কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বলল, “আমার মাইশা মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে। এইভাবে একটা অন্য ছেলের সামনে আসতে।”
সাবিনা বেগম— “আরে ও অন্য কেউ না। ও তো এই বাড়ির ছোটো ছেলে। আনজুমার ছেলে ও। মাইশা আসো পরিচয় করিয়ে দিই তোমার দেওরের সাথে।”
কথাটা বলেই উনি মাইশাকে উঠে দাঁড় করিয়ে ওর ঘোমটা টা সরিয়ে দিলো।
আয়ান হাসি মুখে বলল— “আরে ভাবী আপনি লজ্জা…. তুমি??
নিজের পুরো কথা শেষ না করেই ‘তুমি’ বলেই চিৎকার করে উঠলো আয়ান। ওর পায়ের তলা থেকে যেনো মাটি সরে গেলো। হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো ওর। মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
চলবে….
#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_32
#লেখিকা_সালমা_খাতুন
🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫
আয়ান হাসি মুখে বলল— “আরে ভাবী আপনি লজ্জা…. তুমি??
নিজের পুরো কথা শেষ না করেই ‘তুমি’ বলেই চিৎকার করে উঠলো আয়ান। ওর পায়ের তলা থেকে যেনো মাটি সরে গেলো। হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো ওর। মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
হবু ভাবীর জায়গায় যে, নিজের তিন বছরের ভালোবাসা মাইশাকে দেখবে কখনো কল্পনাও করেনি আয়ান। পুরো থমকে গেছে ও। আশ্চর্য্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
মিসেস সাবিনা বেগম অবাক জিজ্ঞাসা করলেন, “আয়ান বেটা! তুমি মাইশাকে আগে থেকেই চেনো? কিন্তু কিভাবে? তুমি তো আজ অনেক বছর ধরে লন্ডন এ ছিলে পড়াশোনার জন্য?”
বাড়ির সবাইও ভীষণ অবাক হয়েছে, আয়ান মাইশাকে আগে থেকেই চেনে এটা বুঝতে পেরে। আয়ান তখন যেনো এই দুনিয়ায় নেই। মাইশা তাড়াতাড়ি উত্তর দিলো, “আমারা বন্ধু। মানে..আসলে আমরা একে অপরকে অনেক আগে থেকেই চিনি। ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল। তখন থেকেই আমরা টুকটাক বন্ধু হিসাবে কথা বলি। তবে আয়ান তোমাকে এখানে দেখে আমিও ভীষণ অবাক হয়েছি তোমার মতো। তুমি যে এই বাড়ির ছেলে তা আমি জানতাম না।”
মাইশা শেষের কথা গুলো আয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলল। আয়ান শুধু অবাক হয়ে মাইশার কথা গুলো শুনলো। কি হচ্ছে ওর সাথে ও যেনো নিজেই বুঝতে পারছে না।
মিসেস সাবিনা বেগম— “ওহ আচ্ছা তাই বলো। তাই ভাবছি যে ও তো এতো বছর দেশে ছিল কিন্তু তোমাকে কিভাবে চিনে। এখন বুঝলাম। যাও তোমার তো এবার অনেক ভালো হলো মাইশা, তুমি আমাদের বাড়িতে একটা বন্ধুও পেয়ে গেলে।”
মাইশা নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “হ্যাঁ মম, তুমি একদম ঠিক বলেছো। আমি তো আশাই করিনি যে এইভাবে আয়ান কে এখানে দেখতে পাবো।”
আয়ান তখনো বিস্মিত নজরে দেখে চলছে মাইশাকে। যেনো এই মাইশা ওর বড্ড অচেনা। হঠাৎ কেউ একজন ছুটে এসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আয়ানকে।
“হেই ব্রো! তুই কোথা আসলি? আমি তো পুরোই অবাক তোকে দেখে।”
হুম এটা আবির ছাড়া কেউ না। আবিরই জড়িয়ে ধরেছে আয়ানকে। আর কথা গুলো আবিরই বলল।
আবির আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে বলল, “কেমন আছিস তুই? আর হঠাৎ এইভাবে কোথা থেকে আসলি?”
আয়ান স্বাভাবিক গলাতেই উত্তর দিলো, “ভালো আছি ব্রো। ভেবেছিলাম সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো। কিন্তু নিজের জন্যই যে এতো বড়ো সারপ্রাইজ বাড়িতে অপেক্ষা করছে কল্পনাও করিনি।”
আয়ান শেষের কথাটা মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল। তারপর আনজুমা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল, “আম্মু আমি রুমে গেলাম। লাগেজ গুলো পাঠিয়ে দিও। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। আবার পরে কথা হবে সবার সাথে।”
কথা গুলো গম্ভীর গলায় বলে, আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, গম্ভীর মুখেই সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠে গেলো আয়ান। সবাই ভীষণ অবাক হলো আয়ানকে হঠাৎ করেই পাল্টে যেতে দেখে। ও ভীষণ হাসি খুশি প্রাণবন্ত একটা ছেলে। কিন্তু মাইশাকে দেখার পরপরই চুপসে গেলো ও। আবির তো অবাক হয়েই বললো— “কি হলো ব্যাপারটা? হাসি খুশি ছেলেটা লন্ডন গিয়ে এমন গোমরা মুখো হয়ে গেলো কিভাবে?”
সামিরা— “আরে ভাইয়া তো একইরকম আছে। এসে থেকেও সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু হঠাৎ মাইশা আপুর সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে এমন মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে নিলো।”
আবির দাঁত কেলিয়ে বলল, “বুঝলি শামুক, তাহলে আমার মনে হয় আয়ানের হয়তো মাইশাকে বড়ো ভাবী হিসাবে পছন্দ হয়নি।”
এটা শুনে বেচারি মাইশার মুখটা চুপসে গেলো। মিসেস সাবিনা বেগম বললেন, “তোমরা একটু বেশিই ভাবছো। ও এতো দুর থেকে জার্নি করে এসেছে। তাই কিছুটা ক্লান্ত। একটু রেস্ট নিতে দাও দেখবে, ও আবার আগের মতো হয়ে যাবে।”
আবির— “আরে আন্টি আপনি তো দেখছি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন। আমি তো মজা করছিলাম।”
সাবিনা বেগম— “হুম। বুঝেছি। তোমাদের মজা করা ছাড়া আর আছে কি? আনজুমা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা ছেলেটার জন্য খাবারের ব্যবস্থা কর। এতো দিন পর ছেলেটা এলো, আর তুই এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস?”
আনজুমা বেগম অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। উনার ভীষণ খটকা লাগলো আয়ানের এমন হঠাৎ পরিবর্তন দেখে। সবই তো ঠিক ছিল, কিন্তু মাইশাকে দেখার পরই কেমন যেনো চুপসে গেলো। উনি উনার ছেলেকে খুব ভালো করে চেনে। নিশ্চয় কোনো ব্যাপার আছে তার ছেলের হঠাৎ এমন করার পেছনে।
অন্যমনস্ক হয়ে নিজের ছেলের বিষয়ে ভাবছিলেন উনি। সাবিনা বেগমের কথায় ধ্যান ভাঙলো।
আনজুমা বেগম— “হুম ভাবী, যাচ্ছি।”
বলেই উনি চলে গেলেন আয়ানের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে।
~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~
এদিকে আয়ান ওর রুমে সোফায় বসে আছে। চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। এখনো পরনের পোশাক টাও পাল্টাইনি। দুই জন এসে ওর লাগেজ গুলো দিয়ে গেলো। কিন্তু তাতেও কোনো হেলদোল নেই।
“তুমি যে এই শাহরিয়ার পরিবারের ছেলে, সেটাতো কোই আগে বলো নি তো?”
একটা চেনা অথচ অচেনা রুপের মেয়েলি কন্ঠ স্বর শুনে আয়ান মুখ তুলে তাকালো দরজার দিকে। দেখলো মাইশা দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। আয়ান গম্ভীর গলায় বলল, “কেন? আগে জানলে আমার সাথে ব্রেকআপ করতে না বুঝি? যদিও ব্রেকআপ তুমি করেছো আমি না।”
মাইশা মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “জানলেও কিছু করার ছিল না। তবুও ব্রেকআপ করতাম আমি। কারণ এতো বড়ো সুযোগ কিভাবে হাত ছাড়া করি বলো? তোমার থেকে তোমার বড়ো ভাইয়ের নাম, যশ, খ্যাতি, টাকা পয়সা, পাওয়ার সব বেশি।
কথা গুলো বলতে বলতে সোফায় আয়ানের পাশে এসে বসলো, কিছুটা গা ঘেঁষে। তারপর আয়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস গলায় বলল, “এমনকি তোমার থেকেও ভীষণ হ্যান্ডসাম। দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।”
এরপর ওর কানের কাছ থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে এসে স্বাভাবিক গলায় বলল, “আর এমনিতেও আমি তোমার ভাইয়ের কাছে যাইনি, তোমার ভাই আমার কাছে এসে ধরা দিয়েছে। আমাকে নাকি তোমার ভাই অনেক বছর আগে থেকে ভালোবাসে। আমি ছোটোতে উনার জান বাঁচিয়েছিলাম তাই। আর তোমার বড়ো আম্মু নিজে আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে, তোমার বড়ো ভাইয়ের বউ করার জন্য। আমার মা বাবাও রাজি। তাই ভাবলাম বিয়েটা করেই নিই।”
আয়ানের পুরো শরীর রাগে থরথর করে কাঁপছে। মাইশার প্রতিটা কথা ওর হৃদয়কে পুড়িয়ে দিচ্ছে যেনো। নাহ আর সহ্য করতে পারলো না আয়ান। রাগে এক হাত দিয়ে সোফায় ওর পাশে বসে থাকা মাইশার গলা চেপে ধরে সোফার সাথে ঠেসে লাগিয়ে দিলো। মাইশা ছটফট করতে শুরু করলো। দুই হাত দিয়ে আয়ানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু না, পারলো না। একটা স্বাস্থ্যবান পুরুষ মানুষের কাছে ওর চেষ্টা বৃথা। মাইশার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, মুখ থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না। ধীরে ধীরে ওর চোখ লাল হয়ে গেলো। চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করলো।
আয়ান রাগে হিসহিসিয়ে বলছে, “কেনো করলি তুই আমার সাথে এমন? কি দিইনি তোকে হ্যাঁ? কি দিইনি তোকে? আজ পর্যন্ত তোর একটাও ইচ্ছে অপূর্ণ রাখিনি। বাপ, ভাইয়ের দেওয়া আমার হাত খরচের টাকা দিয়ে তোর সব স্বপ্ন পূরণ করেছি। যখন যেই টা চেয়েছিস সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর আজ, আমার বড়ো ভাইয়ের টাকা দেখে আমাকে ছেড়ে আমার বড়ো ভাইয়ের পেছনে পড়েছিস? না এটা আমি কখনোই হতে দেবো না। তুই শুধু আমার, তুই শুধুই আমার। কিছুতেই তোকে আমি অন্য কারো হতে দেবো না।”
(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/
কথা গুলো বলতে বলতেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আয়ানের। মাইশার এবার দম বন্ধ হয়ে আসছে দেখে ঝটকা দিয়ে ছেড়ে দিলো আয়ান। মাইশা সোফার হ্যান্ডেল এর কাছে গিয়ে পড়লো। হাঁপাতে শুরু করেছে ও। আয়ান উঠে গিয়ে জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে বাড়িয়ে দিলো মাইশার দিকে। কিছুক্ষন আগে একজন স্টাফ দিয়েছিল পানি, আয়নের রুমে।
মাইশা পানিটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। তারপর সোফায় নিজের শরীর টাকে এলিয়ে দিলো। আয়ান ধীরে সুস্থে সোফায় মাইশার পাশে গিয়ে বসলো। তারপর মাইশার মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে এক হাত দিয়ে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাইশা নিজের শরীর ভর ছেড়ে দিলো আয়ানের উপর। বেচারি এখনো বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিচ্ছে। আর একটু যদি আয়ান ধরে থাকতো তাহলে নির্ঘাত ও এতক্ষনে পরপারে পাড়ি জমাতো।
আয়ান— “সরি! তোমাকে ইচ্ছে করে আঘাত করতে চাইনি। আসলে রাগটা কন্ট্রোল করতে পারনি। দেখো, পাগলামি করোনা। আমিও আমাদের বিজনেসে জয়েন করবো। এই যে বাড়িটা দেখছো এটাতেও আমার অধিকার আছে ঠিক যতটা বড়ো ভাইয়ার আছে। তোমাকে কিছু বলতে হবে না। আমি বাড়ির সবার সাথে কথা বলবো। সবাই বুঝবে ব্যাপারটা, ভাইয়াও রাগ করবে না জানি। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেবো তোমাকে।”
মাইশা— “নাহ! কিছুতেই না। কাউকে কিচ্ছু জানাবে না তুমি। আমি চাইনা তোমার হতে। আমার তো ওই আরমান শাহরিয়ার কেই চাই।”
আয়ান রাগে সেন্টার টেবিলে থাকা জগটা তুলে আছাড় মারল মেঝেতে। সাথে সাথে ভেঙে চুরমার হয়ে বিকট একটা আওয়াজ হলো। আর সেই আওয়াজে কেঁপে উঠলো মাইশা। চিৎকার দিয়ে উঠলো আয়ান।
আয়ান— “আরমান!! আরমান!! আরমান!! কি আছে ওই আরমানের মধ্যে? হ্যাঁ? কি আছে যেই আরমানের মধ্যে যে আমাদের তিন বছরের সম্পর্ককে তুমি এই ভাবে পায়ে করে ঠেলছো? কিছুতেই আমি ওই বিয়ে হতে দেবো না। কিছুতেই না। সবাইকে সবকিছু জানিয়ে দেবো আমি। হ্যাঁ, সব কিছু জানিয়ে দেবো।”
মাইশা মুচকি হেসে বলল— “জানিয়ে দেবে? ঠিক আছে জানিয়ে দাও। সবাইকে জানিয়ে দিলেও আমি তোমার হবো না কিছুতেই। আর তুমি তোমার বড়ো ভাইয়ের কথা একবারও ভাববে না? তুমি আমাকে ভালো বেসেছো তিন বছর ধরে। আর তোমার ভাই আমাকে ভালো বেসেছে 10 বছর ধরে। শুনেছি পাগলের মতো খুঁজছে আমায়। তার এতো বছরের অনুভূতির কথা ভাববে না? শুনেছি তোমার বড়ো ভাই নাকি তোমাকে ভীষন ভালোবাসে। তোমার জন্য নিজের জানটাও দিয়ে দিতে পারে, আর তুমি? তুমি তার এতো বছরের ভালোবাসার মানুষটাকে কেড়ে নেবে? তোমার ভাই মানতে পারবে তো এটা? ভাবো তো এই তিন বছরের সম্পর্কে তোমার যদি এতোটা কষ্ট হয়, তাহলে তোমার ভাই যে আমাকে দশ বছর ধরে ভালোবাসছে, তাহলে তার কতটা কষ্ট হবে? শুনলাম আমার জন্য নাকি মায়াকেও মানেনি বউ হিসাবে, তাকেও ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। তাহলে এতো কিছুর পরেও পারবে তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে বেইমানি করতে?”
মাইশার কথা গুলো শুনে আয়ানের রাগী মুখ ধীরে ধীরে অসহায়ে পরিনত হলো। মাইশা বুঝলো ওর কথা গুলো ঠিক জায়গায় গিয়ে লেগেছে। ও একটা বাঁকা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সোফা ছেড়ে। তারপর আবারও বলল— “ঠিক আছে, তুমি যদি চাও তোমার বড়ো ভাই কষ্ট পাক তাহলে জানিয়ে দিও সবাইকে। কিন্তু মাথায় রাখবে, ঠিক এখন তুমি যতোটা কষ্ট পাচ্ছো তার থেকেও হাজার গুণ কষ্ট তোমার ভাই পাবে। ঠিক এখন যতটা ভেঙে চুরমার হচ্ছো তুমি তার থেকেও বেশি তোমার ভাইও ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।”
কথা গুলো বলে এক নজর আয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো মাইশা। ও খুব ভালো করে চেনে, আয়ানকে। ওর কথা গুলো ঠিকই কাজে দেবে।
এদিকে আয়ান অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকলো মেঝের দিকে। হ্যাঁ ঠিকই বলছে মাইশা। আরমান সেই দশ বছর ধরে ভালোবাসে তার মায়াবতীকে, আর এটা এই বাড়ির সবাই জানে। অনেক পাগলামি করেছে ও সেই মেয়ের জন্য। আর আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই মেয়ে হচ্ছে মাইশা। যার সাথে আয়ানের তিন বছরের সম্পর্ক। হ্যাঁ, ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল ওদের। একে অপরের পোস্টে লাইক, কমেন্ট, কমেন্ট এর রিপ্লাই এরপর টুকটাক ম্যাসেজ এ কথা বলা। তারপর শুরু হয় বন্ধুত্ব, আর সেই বন্ধুত্ব থেকেই গড়ে উঠে ভালোবাসা।
আর আজ? আজ সেই তিন বছরের ভালোবাসা হেরে গেলো ওর ভাইয়ের দশ বছরের ভালোবাসার কাছে। হ্যাঁ জেদের বশে প্রথমে সবাইকে জানিয়ে মাইশাকে বিয়ে করবে বললেও ও এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছে এটা সম্ভব নয়। কিছুতেই সম্ভব নয়। ও এতো বড়ো বিশ্বাসঘাতকতা কিছুতেই করতে পারবে না ওর ভাইয়ের সাথে। ও নিজের চোখে দেখেছে সেই মেয়ের জন্য ভাইকে ছটফট করতে। অনেক জায়গায় পাগলের মতো খুঁজ বেরিয়েছো মেয়েটাকে। নাহ, এটা ও কিছুতেই পারবে না। ওর বড়ো ভাইয়াকে কিছুতেই কষ্ট দিতে পারবে না ও।
কারোর পায়ের আওয়াজে মুখ তুলে তাকালো আয়ান। দেখলো ওর আম্মু এসেছে রুমে, হাতে খাবারের প্লেট। আয়ান তাড়াতাড়ি ওর চোখের পানি গুলো দুই হাত দিয়ে মুছে নিলো। হ্যাঁ, এতোক্ষণ কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে পানি পড়ছিল ওর।
সবাই বলে, ছেলেদের কান্না মানায় না।
কিন্তু কেউ ভাবে না—যখন হৃদয় টা ভেঙে চুরমার হয়ে যাই, সেটা তো ছেলে হোক বা মেয়ে, রক্ত তো একই রকম ঝরে। পুরুষ বলে কি তার কষ্টের কোনও শব্দ হবে না?
আয়ান মুখ হাসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বলল, “আরে আম্মু, এসো এসো বসো। আজ আমি তোমার হাতে খাবো। কতদিন খাইনি তোমার হাতে।”
আনজুমা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খাবার থালাটা সোফার সামনের টেবিল টাই রাখে আয়ানের পাশে বসলো। তারপর ছেলেকে টেনে নিজের কোলে মাথা দিয়ে শুইয়ে দিলেন। তারপর মাথায় আদুরে স্পর্শে হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলেন। আয়ানও নিজের গর্ভধারিনী মায়ের স্নেহ পেয়ে আরো ভেঙে পড়লো যেনো। আবারও চোখ থেকে বেরিয়ে এলো অবাধ্য নোনা জল। আর সেগুলো লুকাতে মায়ের কোলে মুখ গুঁজলো আয়ান।
আনজুমা বেগম— “ভালোবাসিস মাইশাকে, তাই তো?”
আয়ান তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে উঠে বসলো। তারপর মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল— “কি সব বলছো আম্মু? তোমাদের সবাইকে এতোদিন পর দেখে ইমোশনাল হয়ে পড়েছি। আর মাইশা আমার ভালো বন্ধু হয়।”
আনজুমা বেগম স্নেহ মাখা কন্ঠে বলে উঠলো— “আমি তোর আম্মু, আয়ান। দশ মাস গর্ভে ধারণ করেছি তোকে। সবার চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেও নিজের মায়ের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবি না।”
আনজুমা বেগমের এমন কথায় আয়ান যেনো নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। আরো ভেঙে পড়লো ও। আবারো মায়ের কোলে শুয়ে পড়ে কোমর জড়িয়ে ধরে, কোলে মুখ গুঁজে হুহু করে কান্না করে দিলো।
কাঁদতে কাঁদতে ভাঙা গলায় বলল— “ভীষণ ভালো বাসি আম্মু। ভীষণ ভীষণ ভালো বাসি। ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আমি।”
আনজুমা বেগম কিছুক্ষণ কাঁদতে দিলেন ছেলেকে। ছেলের কষ্ট দেখে নিজের চোখ থেকেও পানি গড়িয়ে পড়লো আনজুমা বেগমের। স্নেহ ভরা স্পর্শে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন ছেলের মাথায়। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন— “এটা হতে পারে না আব্বু। মাইশার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আরমানের। আর সবাই জানে আরমান মাইশাকে সেই দশ বছর থেকে ভালোবাসে। আর তোর জন্য আমি একটা খাঁটি মেয়ে ঠিক করে রেখেছি। তাকে তোর আব্বুরও খুব পছন্দ। আর আমি জানি সেই মেয়েকে তোরও পছন্দ হবে। আর সত্যি বলতে মাইশা মেয়েটাকে আমার একটুও পছন্দ না। তাই চেষ্টা কর মাইশাকে…..”
কথাটা শেষ করলেন না আনজুমা বেগম। দরজার দিক থেকে চোখ পড়তেই থেমে গেলেন উনি। দরজার কাছে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে আরমান। আয়ান নিজের কান্না থামিয়ে দিয়ে তার আম্মুর কথা শুনছিল। কিন্তু হঠাৎ ওর আম্মুকে থেমে যেতে দেখে মুখ তুলে তাকালো। দেখলো ওর আম্মু ঘাবড়ানো চেহারা নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানও ঘুরে তাকালো দরজার দিকে। আরমানকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও চমকে উঠে বসলো ও। তাড়াতাড়ি দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো ও।
চলবে…..