আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব-৩৩+৩৪

0
11

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_33
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

আয়ান সোফা ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি আরমানকে জড়িয়ে ধরলো।

আয়ান— “কেমন আছো ভাইয়া?”

আরমান তখনো শান্ত, নির্বাক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ানের জড়িয়ে ধরার শর্তেও আরমান ধরেনি। এতে আয়ান একটু ভয় পেলো ভিতরে ভিতরে। আরমান শান্ত ভঙ্গিতে ছাড়িয়ে নিলো আয়ানকে। তারপর ওর চোখে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছে? কাঁদছিলি কেন তুই?”

আয়ান জোড় করে মুখে হাঁসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বলল, “আরে ওহ কিছু না ভাইয়া, অনেক দিন পর তোমাদের সবাইকে দেখলাম তো তাই একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছি।”

আরমান গম্ভীর গলাতেই বলল, “আয়ান তুই কিন্তু জানিস মিথ্যা বলা আমি একদম পছন্দ করি না।”

আরমানের এই কথা শুনে আয়ান নিজের মাথা নিচু করে নেই। মাথা নিচু রেখেই ও ধীরে ধীরে বলে, “ভালোবাসি একজনকে। তিন বছরের সম্পর্ক। কিন্তু তার বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। এখন সেও এই বিয়েতে রাজি।”

আরমান— “কে সেই মেয়ে? যে আয়ান শাহরিয়ারকে ছেড়ে দিয়ে অন্য একজন কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাই?”

আয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, “আমাকে ছেড়ে যাকে বেছে নিয়েছে, তার টাকা, পয়সা, নাম, যশ, খ্যাতি সব আমার থেকে বেশি ভাইয়া। তাই আমাকে ছেড়েছে।”

আরমান— “তার মানে সেই মেয়ে, টাকা, পয়সা, নাম, যশ, খ্যাতি এগুলোকে ভালোবাসে। মানুষটাকে না।”

আয়ান— “হুম ভাইয়া। কিন্তু আমি ওই মেয়েটাকেই ভালোবাসি, তিন বছরের সম্পর্ক আমাদের। তাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারি না।”

আরমান— “হুম ওই মেয়ে তোর হবে, কথা দিচ্ছি। তবে তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তাকেও কষ্ট পেতে হবে।”

আয়ান আরমানের কথায় চমকে উঠলো। সেটা ওর মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠল। আলমান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়ান এর মুখের দিকে।

আয়ান কিছুটা আমতা আমতা করে বলল, “না ভাইয়া। মানে এটা সম্ভব না। আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা। এটা করলে যে, যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেও কষ্ট পাবে।‌ তুমি এসব বাদ দাও ভাইয়া, আমি কিচ্ছু চাই না।‌ যে যার মতো সুখী থাক।”

আরমান ভয়ংকর গলায় বলল, “আজ পর্যন্ত তোর কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখিনি আমি। আর তুই ভাবলি কি করে যে সেই মেয়ে তোকে কষ্ট দিয়ে নিজে সুখী হবে। এটা আমি কখনোই হতে দেবো না।”

আয়ান— “কিন্তু ভাইয়া…”

আরমান— “কোনো কিন্তু না। ফ্রেশ হ, অনেক দূর থেকে এসেছিস। খাওয়া দাওয়া করেনে। আর তোর চোখে যেনো আমি আর এক ফোঁটাও পানি না দেখি।”

কথা গুলো বলেই আরমান আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না ওখানে। আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো বড়ো ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে।

_.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._..

পরের দিন বিকালে….

আজ বাড়ির পুরুষরা সব বাড়িতেই আছে। আয়ান এতোদিন পর বাড়ি আসাই বাড়িতে যেনো খুলির ঢল নেমেছে, সামনে এই বাড়ির বড়ো ছেলের বিয়ে। সামনের শুক্রবার আরমান আর মাইশার বিয়ে। বিয়ে বলতে বড়ো কোনো অনুষ্ঠান করা হবে না। শুধু কাছের আত্মীয় দের নিয়ে ছোট্ট করে একটা অনুষ্ঠান করা হবে।‌ কারণ এখন শুধু রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়ে থাকবে। পরে অনেক বড়ো করে অনুষ্ঠান করে বিয়ে সারা হবে। দেশের এতো বড়ো বিজনেস ম্যান এর বিয়ে বলে কথা, তাই হঠাৎ করে তো আর সবকিছু সম্ভব নয়। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আরমানের মত নিয়ে।

বিকেলে বাড়ির বাইরে বাগানে গাজেবোতে বসে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।

(গাজেবো হলো একটি ছাউনিযুক্ত কাঠামো, যা সাধারণত বাগান, পার্ক বা খোলা জায়গায় দেখা যায়। গাজেবোর উপরে একটি ছাউনি থাকে যা রোদ বা বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। আর গাজেবোর চারপাশে সাধারণত কোনো দেয়াল থাকে না, এটি খোলা থাকে।)

শুধু মাত্র আরমান বাদে। আরমানও আজ বাড়িতেই ছিল। দুপুরের খাওয়ার পর বেরিয়ে গেছে, জরুরি মিটিং এর জন্য।

বাড়ির সবাই কিছুটা অবাক আয়ানের আচরণে। কারণ আগে আয়ান ভীষণ হাসি খুশি একটা ছেলে ছিল। এখন কেমন যেনো নির্জীব গম্ভীর টাইপের হয়ে গেছে।‌ আগে আবির, সামিরা আর আয়ান মিলে বাড়িটাকে মাতিয়ে রাখতো।‌ কিন্তু আয়ান আর আগের মতো নেই, কেমন যেনো হয়ে গেছে।

এদিকে মায়া রান্না ঘরে সকলের জন্য সিঙ্গারা বানাচ্ছে। এখন রান্না ঘর পুরো ফাঁক। কোনো কর্মচারী নেই এখন। এই সময়ে তারা রেস্ট নিতে ব্যাস্ত।

প্রতিদিন বিকেলে অথবা সন্ধ্যায় মায়া কিছু না কিছু নাস্তা বানায়। আজ যেহেতু বিকেলে সবাই বাগানে বসে আড্ডা দিচ্ছে তাই ও ভাবলো আজকে নিজের হাতে সিঙ্গারা বানাবে। তাই মায়া কোমড়ে ওরনা পেঁচিয়ে নিজের কাজে লেগে গেছে।

সিঙ্গারাতে ভরার জন্য আলুর পুর রেডি করা হয়ে গেছে। এখন আটা মাখাচ্ছে। কিছুক্ষন মধ্যেই ওর আটা মাখা শেষ হয়। ভীষণ গরম করছে এখন মায়াকে। ছোটো ছোটো চুল গুলো বারে বারে সামনে চলে আসায়, ও আটা হাতেই সরিয়ে দিয়েছে। আর তাই কপালেও কিছুটা শুকনো আটা লেগে গেছে, সেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে। তাই ভাবলো আগে একবার ফ্রেশ হয়ে আসুক, তারপর বাকি কাজ সারবে। এই ভেবে মায়া রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নিজের রুমের উদ্দেশ্যে।

আর এই ফাঁকে মাইশা প্রবেশ করলো রান্না ঘরে। ও এতোক্ষণ নজর রাখছিল মায়ার উপর। মায়া বেরিয়ে যেতেই ও রান্না ঘরে ঢুকে গেলো। তারপর মুখে একটা বাঁকা হাসি নিয়ে আলুর পুরের বাটির ঢাকনা সরালো। তারপর বাটিটা হাতে তুলে নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকে বলল, “উমম, ভীষণ টেস্টি হতো মনে হচ্ছে। কিন্তু সেটা আর হলো না রে মায়া। আমি থাকতে সেটা কিভাবে হতে দিই? তুই আমার শ্বশুর বাড়িতে থেকে তাদের থেকে ভালো ভালো প্রশংসা শুনবি আর আমি চুপচাপ তা দেখবো? নাহ এটা হতে পারে না।”

কথা গুলো বলে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে হাতে থাকা বাটিটা হাতে থেকে নামিয়ে রেখে, লঙ্কা গুঁড়ো এর কৌটা হাতে নিয়ে, প্রায় এক মুঠো হবে লঙ্কা গুঁড়ো তাতে দিয়ে দিলো। এরপর আবার লঙ্কা গুঁড়োর কৌটা যেখানে ছিল সেখানে রেখে, হাত দিয়ে আলুর পুরটাকে ভালো ভাবে মেখে লঙ্কার গুঁড়ো মিশিয়ে দিলো। তারপর আবারও যেমন ছিল তেমন করে ঢাকানা দিয়ে ঢেকে, বেসিনে হাত ধুয়ে, মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে বেরিয়ে গেলো রান্না ঘর থেকে।

এদিকে মায়া কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আবারও নিজের কাজ শুরু করলো।‌ আলুর পুর টা দেখে কেমন জানি রংটা অন্য রকম লাগলো কিন্তু ও ভাবলো যে এতোক্ষণ রেখে দেওয়ার জন্য হয়তো রংটা একটু চেঞ্জ হয়ে গেছে। তাই ও ওই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে, সিঙ্গারা বানাতে শুরু করলো।

কিছুক্ষন পর মায়ার সবকিছু রেডি করা হয়ে গেলো। সিঙ্গারার সাথে গাঢ় দুধের চা বানিয়েছে। সব কিছু রেডি এখন শুধু সবাইকে সার্ভ করার পালা।

ঠিক তখনি রান্না ঘরে মাইশা উদয় হলো। মুখে হাসি নিয়ে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মায়া তোর নাস্তা বানানো শেষ?”

মায়াও হাসি মুখে বলল, “হুম আপু হয়ে গেছে, সব রেডি।”

মাইশা— “আচ্ছা চল, আমি তোকে নিয়ে যেতে সাহায্য করছি।”

মায়া— “আচ্ছা আপু চলো।”

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

বলেই মায়া সিঙ্গারার ট্রে টা মাইশার হাতে ধরিয়ে দিলো। আর নিজে চায়ের ট্রে টা হাতে নিলো। এরপর ওরা দুজন এগিয়ে গেলো বাগানের দিকে।

এদিকে সবাই বাগানের গাজেবোতে রাখা চেয়ারে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। মায়া মাইশা ট্রে গুলো ওখানে মাঝখানে থাকা টেবিলে রাখলো।‌

মাইশা— “এই নিন, গারমা গারাম সিঙ্গারা। এগুলো মা…”

মুনজিলা বেগম— “এগুলো তুই নিজের হাতে বানিয়েছিস তাই তো? আমি জানি, আমার মেয়ে সিঙ্গারাটা দারুন বানায়। ওর হাতের খাবার যে একবার খাবে তাকে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।”

মাইশাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই মাইশার মা নিজের মেয়ের গুনগান করতে শুরু করলো। মাইশা হতভম্ব হয়ে গেলো।‌ ওর মা ওটা কি করছে, ও যে একেবারে যাচ্ছে তাই ভাবে ফেঁসে যাবে। মাইশা তাড়াতাড়ি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে চাইলো— “আসলে মা আজকের সিঙ্গারা গুলো মায়া….”

মুনজিলা বেগম মেয়েকে একটা চোখ টিপ দিয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি, মায়া তোকে সাহায্য করেছে এই কাজে। কিন্তু এগুলো তুই বানিয়েছিস আমি জানি। ঘ্রাণ শুঁকেই বুঝতে পেরেছি আমি। আহহ কি সুন্দর ঘ্রাণ।”

মাইশা মনে মনে বলল— “গেলো রে গেলো, এই মা টা না আমার ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে।”

সামিরা— “না মায়া আপু তো সাহায্য করেনি। একটু আগে আমি যখন আমার ফোন আনতে ঘরে গেলাম, তখন দেখলাম মাইশা আপু একা একাই আলু মাখছে।”

মায়া সামিরার মুখ থেকে মাইশা আলু মাখছে কথা টা শুনে একটু অবাক হলো। কিন্তু কিছু বলল না। ভাবলো ওর চাচী যখন চাইছে নিজের মেয়ের একটু প্রশংসা করতে চাইছে তখন করুক।

মুনজিলা বেগম— “বললাম না, আমার মেয়েটা খুব গুনী। ও খুব ভালো রান্না করে। সবাই বসে আছেন কেনো? খেয়ে দেখুন কেমন হয়েছে? আমার মেয়েটা নিজের হাতে বানিয়েছে।”

মাইশার ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে।‌ ও বুঝতে পারছে না কিভাবে ওর মা কে থামাবে। এখন নিজের ভীষন কান্না পাচ্ছে মাইশার। কেন যে ও অমন একটা কাজ করতে গেলো, এখন মনে হচ্ছে না করলেই ভালো হতো। আবার সামিরা বলছে যে, ও নাকি ওকে দেখেছে আলু মাখতে। এদিকে মায়াও কিছু বলছে না। এখন ও বুঝতে পারছে না সিঙ্গারা গুলো খাওয়া থেকে সবাইকে কিভাবে আটকাবে।

আয়ান এতক্ষণে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, “তিন বছরের বন্ধুত্ব। আমার জানামতে মাইশা রান্নার র ও জানে না।”

মুনজিলা বেগম তাড়াতাড়ি হাসি মুখে বলে উঠলেন, “আরে বাবা তুমি জানবে কি করে? তুমি তো এতোদিন দেশেই ছিলে না।”

সামিরা— “এতো কথা বললে, খাবো কখন? আমি শুরু করছি খাওয়া।”

বলেই সামিরা উঠে সিঙ্গারা নিতে চাইলো কিন্তু ওর হাতে ধরে থামিয়ে দিলো আবির। তার দাঁত দেখিয়ে বলল, “সামিরা, তুমি জানো না বড়োরা সব সময় আগে। আগে বড়োরা টেস্ট করুক তারপর আমরা করবো।”

কথাটা বলেই আবির সামিরাকে আবারও টেনে বসিয়ে দিলো। ওর দুজন পাশাপাশি বসে ছিল। সামিরা এতে প্রচন্ড বিরক্ত হলো। ও বিরক্ত হয়ে কিছু বলবে তার আগেই আবির চোখ দিয়ে ইশারা দিলো। শয়তানরা শয়তানের ইশারা ভালোই বোঝে। তাই সামিরা শান্ত হয়ে গেলো। এরপর আবির নিজের ফোনটা ওপেন করে একটা ভিডিও চুপিচুপি সামিরাকে দেখালো। যা দেখে সামিরা প্রচন্ড শক হলো।

এদিকে মায়া সবার হাতে একে একে চা তুলে দিতে শুরু করেছে, মাইশা মনে মনে কুবুদ্ধি আঁটলো। ও সিঙ্গারার ট্রে হাতে তুলে নিয়ে বলল, “দাঁড়ান আমি সবাইকে দিচ্ছি।”

কথাটা বলেই ও দু-পা এগিয়ে হোঁচট খাওয়ার নাটক করলো “আহ” শব্দ করে। হাতে থেকে ট্রে টা ফেলে দিতে চাইলো, কিন্তু তার আগেই সামিরা গিয়ে শক্ত হাতে ট্রে টা ধরে ফেললো। তারপর হাসি মুখে বলল, “একি আপু শুকনো ডাঙ্গায় হোঁচট খাচ্ছ? এখনি তো আপনার এতো কষ্ট করে বানানো সিঙ্গারা গুলো পরপারে পাড়ি জমাতো।”

মাইশা কিছু বলল না। শুধু একটু জোড় করে হাসি ফুটিয়ে তুললো। তখনও মাইশা ট্রে টা ধরে আছে। সামিরা টেনে নিতে চাইলো নিজের হাতে, কিন্তু মাইশা শক্ত করে ধরে আছে ট্রে টা। ছাড়তে চাইছে না।

সামিরা— “আপু দাও, আমি সবাইকে সার্ভ করে দিচ্ছি। তুমি বসো।”

কথা গুলো বলে সামিরা ট্রে টা মাইশার হাত থেকে কেড়ে নিলো। এরপর সামিরা প্রথমেই ওর মম মিসেস সাবিনা বেগমের কাছে গেলো।

সামিরা দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলল, “নাও মম, আগে তুমিই টেস্ট করো। তোমার হবু বৌমার হাতের সিঙ্গারা। না ওয়েট! ওয়েট! সবাই এক সাথে টেস্ট করবে। আমি আগে সবাইকে দিই। তারপর সবাই একসাথে খাবে এবং, কেমন হয়েছে বলবে মাইশা‌ আপুর সিঙ্গারা।”

কথা গুলো বলে সামিরা সবাইকে একে একে সিঙ্গারা দিতে শুরু করলো।

মিসেস সাবিনা বেগম, “আচ্ছ। তাড়াতাড়ি দাও সবাই কে।”

সামিরা সবাইকে দিতে দিতেই বলল— “কেউ আগে খেতে শুরু করবে না কিন্তু। আমি যখন বলবো তখন মুখে দেবে।”

সবাই সামিরার বাচ্চামো ভেবে সাই জানালো। সামিরা আবিরকে দিতে গেলে, আবির সামিরাকে চোখ রাঙিয়ে বলল, “নাহ আমি খাবো না। এখন সিঙ্গারা খাওয়ার মুড নেই।”

সামিরা আবিরকে উদ্দেশ্য করে একটা চোখ টিপ দিলো। সবাইকে দেওয়া হয়ে গেছে। সবার হাতে সিঙ্গারা শুধু আবির, মাইশা, মায়া আর সামিরার বাদে।

এরপর সামিরা ট্রে টা রেখে, দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “1.2.3 স্টার্ট। এখন সবাই খাওয়া শুরু করো।”

সামিরার বলা শেষ হতেই, সবাই হাসি মুখে খাওয়া শুরু করলো। আর এক কামড় খেয়েই সবাই এক সাথে থম মেরে গেলো। একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো সবাই। ধীরে ধীরে সবার মুখ কিছুটা লাল হয়ে উঠলো। একে একে সবার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করেছে নিঃশব্দে। হ্যাঁ শুধু মাত্র এই সিঙ্গারা খেয়েও আয়ানের কোনো রিয়্যাকশন নেই। ও তখন হাতের সিঙ্গারা খেয়ে চলেছে এক মনে। এদিকে মুনজিলা বেগমও থমকে গেছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, সাথে উনার মুখে আছে ভয়ের ছাপ।

সামিরা মুনজিলা বেগম এর কাছে গিয়ে বলল, “আন্টি, এতো টেস্টি হয়েছে যে কান্না করে দিলেন? খাচ্ছেন না কেনো খান। মম কি হলো খাও। তোমরা সবাই থেমে গেলে কেনো? তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো। আমি তো মাইশা আপুর প্রশংসা শুনান জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।”

সামিরার কথা শেষ হতে দেরি মুনজিলা বেগম এর মুখের খাবার উগলে ফেলতে দেরি হয়নি। উনি উঠে দাঁড়িয়ে মুখের খাবার ফেলে দিয়ে, হাত দিয়ে মুখের কাছে বাতাস করছেন আর বলছেন, “উফফ, পানি! পানি! প্লিজ কেউ পানি দাও। ও মা গো মরে গেলাম গো।”

বাকি সবাই কোনো মতে মুখের খাবার গিলে নিয়ে, হাতের সিঙ্গারা প্লেটে নামিয়ে রাখলো। মিসেস সাবিনা বেগম চোখে পানি নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে কোনো মতে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করলো, “মাইশা বেটা, সবই ঠিক আছে শুধু ঝালটা একটু বেশি হয়ে গেছে। পানি আনা হয়নি, আমি একটু পানি খাবো, বাড়ি থেকে খেয়ে আসি হ্যাঁ।”

কথা গুলো বলে উনি আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। এক হাতে শাড়িটা ধরে ছুট লাগালো বাড়ির ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। উনাকে যেতে দেখে বাকি সবাইও ছুটে চলে গেলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। মুনজিলা বেগম তখনও ওখানে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছে আর পানি পানি করছে। সামিরা উনাকে উদ্দেশ্যে করে বলল, “আন্টি এখানে পানি নেই, ওই যে সামনে সুইমিং পুল দেখছেন ওখানে যেতে পারেন, অনেক পানি আছে।”

মুনজিলা বেগম সামিরার কথা শুনে প্রথমে সুইমিং পুলের দিকে ছুটে গেলেন তারপর আবার কি মনে করে যেনো পিছন ঘুরে সামিরার দিকে তাকালেন। সামিরা বত্রিশ টা দাঁত বের করে হাসছে। সাথে আবিরও যোগ দিয়েছে। মুনজিলা বেগম সামনে ঘুরে এবার ছুট লাগালেন বাড়ির ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

এদিকে আয়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। ও পুরো সিঙ্গারা টা শেষ করেছে খেয়ে। চোখ একেবারে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। আবির সামিরা কে ইশারা দিলো আয়ানকে দেখার জন্য। সামিরা অবাক হলো ভাইকে দেখে। এই অবস্থাতেও স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে। সামিরা ছুটে গেলো আয়ানের কাছে, “ভাইয়া! ওটা ঝাল লাগার সত্ত্বেও খেয়ে ফেললে তুমি। তাড়াতাড়ি যাও পানি খেয়ে আসো।”

আয়ান কিছু বললো না। শুধু একবার শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো মাইশার দিকে। এরপর গম্ভীর মুখে গটগট পায়ে চলে গেলো।

এদিকে মায়া সে তো অবাক হয়ে সবকিছু দেখছে। পুরো বিষয়টা ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো। কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ও কি হচ্ছে। তাই ও ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো টেবিলের দিকে। একটা সিঙ্গারা তুলে নিলো মুখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার আগেই আবির ওর হাত ধরে থামিয়ে দিলো।

আবির— “খেয়ো না মায়া, সহ্য করতে পারবে না।”

মায়া অবাক গলায় বলল, “কিন্তু ভাইয়া আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি তো স্বাদ মতোই ঝাল দিয়েছিলাম। তাহলে সবাই এমন করছে কেন। আমি তো চেক করে ছিলাম, ঝাল তো ঠিকই ছিল।”

আবির একবার মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল, “এতো বুঝতে হবে না তোমায়। যাও ভিতরে গিয়ে দেখো সবার কি অবস্থা।”

মায়া— “কিন্তু ভাইয়া…”

মাইশা— “অতো ভাবিস না তো মায়া চল ভিতরে যাই। দেখি সবার কি অবস্থা।”

কথা গুলো বলেই মাইশা মায়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো। এদিকে সামিরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আবির বলল, “সামুক এতো হাসলে হবে? ওই মাইশার একটা ব্যবস্থা করতে হবে না?”

সামিরা হাসি থামিয়ে বলল, “হুম আবুল ভাইয়া ওর একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে। এতো সহজে ছাড়া যাবে না। কিন্তু আজকে নিজের কাজে নিজেই ফেঁসে গেছে দুই মা মেয়ে। এটাকেই বলে ‘Revenge of nature’. কিন্তু ভাইয়া তুমি ওই ভিডিও টা কোথায় পেলে? সেটা তো বুঝলাম না। তুমি তো প্রথম থেকে এখানেই আছো।”

আবির— “ওটা বলা যাবে না। ওটা সিক্রেট। তবে শোন, ওদের এই রেজিস্ট্রি ম্যারেজ এর আগেই আমাদের কিছু একটা করতে হবে। না হলে সব শেষ হয়ে যাবে।”

সামিরা— “হুম ভাইয়া, একদম ঠিক বলেছো তুমি।”

চলবে….

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_34
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

সান্ধ্যা সাত টা…

মাইশার মন টা এখন ভীষণ ভালো।‌ যদিও বিকেলের ওই ঘটনার জন্য ওর মন খারাপ ছিল। নিজের কাজে নিজেই ফেঁসে গেছিল এক মাত্র ওর মায়ের জন্য। কিন্তু এখন খুশি মনে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে হালকা সাজুগুজু করতে ব্যস্ত। আর ওর এই খুশি এবং সাজের কারণ আরমান। আরমান মাইশাকে নিজের রুমে ডেকে পাঠিয়েছে। তাই মাইশার মন এখন আকাশে উড়ছে।

মাইশা হালকা সাজে সেজে নিয়ে এগিয়ে গেলো আরামানের রুমের উদ্দেশ্যে। দরজার সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো ও। ভিতর থেকে গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পেলো মাইশা, “Come in.”

মাইশা দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো রুমের ভিতর। চোখ গেলো সোফায় গম্ভীর মুখে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে থাকা আরমানের দিকে।‌ মাইশা মাথা নিচু করে ভদ্র মেয়ের মতো সামনে গিয়ে দাঁড়াল আরমানের সামনে। আরমান ওর দিকে না তাকিয়েই বলল, “বসো।”

মাইশা ভীষণ খুশি হলো, আরমান ওকে তুমি করে বলছে শুনে। কারণ এর আগে আগে আরমান ওকে আপনি বলে সম্বোধন করতো। তাই খুশি মনে এগিয়ে গেলো আরমানের পাশে সোফায় বসার জন্য। ও ঠিক যখনি আরমানের পাশে বসতে যাবে তখনি আরমান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “স্টপ, এখানে না। ওখানে বসো।”

আরমান শেষের কথাটা আঙ্গুল দিয়ে টি টেবিলের সামনে থাকা ফাঁকা মেঝেটা দেখিয়ে বলল। মাইশা অবাক হলো আরমানের আঙ্গুল অনুসরণ করে তাকিয়ে। ও অবাক গলাতেই বললো, “কিহ আমি মেঝেতে বসবো?”

আরমান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো মাইশার দিকে, তারপর গম্ভীর গলায় বলল, “তো তোমার জন্য কি সিংহাসন আনতে হবে?”

মাইশা— “নাহ সেটা বলি নি, কিন্তু আমি মেঝেতে বসতে যাবো কেনো? সোফায় এতো জায়গা থাকতে।”

আরমান কিছুটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “কারণ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আর সেটা ওখানে বসলে তারপরই দিতে পারবো।”

মাইশা সারপ্রাইজ এর কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয়েছে উঠলো, কিন্তু মেঝেতে বসতে বলাই কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলো। তাকালো দরজার দিকে, কারণ দরজাটা একেবারে খোলা আছে। ভিতরের সকল দৃশ্য বাইরে থেকে দেখা যাবে স্পষ্ট। তাই কিছুটা সংকোচ বোধ করলো ও। কিন্তু এদিকে ওর মন পড়ে আছে সারপ্রাইজ জন্য।

আরমান— “কি হলো, সারপ্রাইজ নেওয়ার ইচ্ছে নেই?”

মাইশা আরমানের দিকে তাকিয়ে আবারও একবার তাকালো দরজার দিকে। তারপর কি জেনো ভেবে মুখে হাসি নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে গেলো টি টেবিলের সামনে আরমানের সোজাসুজি। আরমান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “প্লেটের ঢাকনা টা খুলো। তারপর প্লেটে যেটা আছে চুপচাপ খেতে শুরু করো। এটাই তোমার সারপ্রাইজ।”

মাইশা কিছুটা অবাক হলো এটা শুনে। ওকে কিছু খেতে দিচ্ছে আরমান তাও এইভাবে, ও একবার আরমানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরমান ওরে দিকেই তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। কিছুটা দ্বিধা নিয়েই প্লেটের ঢাকনা সরালো মাইশা। আর প্লেটের ঢাকনা সরাতেই চমকে উঠলো ও। লাফিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কারণ প্লেটে রাখা আছে, মায়ার বানানো সেই সিঙ্গারা, যেগুলো তে ও প্রচুর পরিমাণে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে ছিলো।

আরমান ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি হলো সারপ্রাইজ পছন্দ হয়নি? নাও খেতে শুরু করো।”

মাইশা জোড় করে নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “না মানে এগুলো তো সেই সিঙ্গারা, বিকেলে আমি বানিয়ে ছিলাম। তবে ভুল করে বেশি ঝাল দিয়ে ফেলেছি। আপনাকে কে দিলো এগুলো?”

আরমান কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল, “আমাকে এগুলো কে দিয়েছে সেটা বড়ো কথা নয়। এগুলো এখন তুমি খেয়ে শেষ করবে।”

মাইশা— “নাহ! এতে অনেক ঝাল দেওয়া আছে, আমি খাবো না।”

আরমান— “খেতে তো তোমায় হবেই মিস মাইশা। খুব শখ না তোমার, অন্য কে সবার চোখে ছোটো করা। সেই শখ আমি মিটিয়ে দেবো। চলো খাওয়া শুরু করো।”

মাইশা কিছুটা আমতা আমতা করে বলল, “ক..কি বলতে চাইছেন আ..আপনি? কাকে ছোটো করতে চেয়েছি আমি সবার সামনে?”

আরমান বিরক্ত গলায় বলল, “এতো কথা বলতে আমার একদম ভালো লাগে না। ওয়েট।”

কথাটা বলেই আরমান নিজের কাছে থাকা ল্যাপটপ এ কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করে ল্যাপটপ টা টি টেবিলে রেখে মাইশার দিকে ঘুরিয়ে দিলো। ল্যাপটপ এ একটা ভিডিও চলছে। ভিডিও টা দেখা মাত্রই চমকে উঠলো মাইশা। ভিডিও তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিঙ্গারা বানানোর যাবতীয় কাজ করছে মায়া। আর তার পরপরই মাইশা এসে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে দিচ্ছে। পুরোটা ভিডিও টা দেখে মাইশার মুখটা ভয়ে চুপসে গেলো। কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়লো।

আরমান গলার আওয়াজ কিছুটা ভয়ংকর শোনালো, “মিস মাইশা এখন কি খাবেন এই সিঙ্গারা? নাকি বাড়ির সবাইকে এই ভিডিও টা দেখাবো?”

মাইশা— “নাহ! প্লিজ কাউকে দেখাবেন না ভিডিও টা। আমি..ওটা..মানে..আসলে..”

মাইশা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছিল না, তাই আমতা আমতা করছিল। আরমান ধমকে উঠল, “ Shut up. কোনো এক্সপ্লেইন চাইনি আমি আপনার থেকে। চুপচাপ এগুলো খাওয়া শুরু করুন। না হলে এই ভিডিও আমি বাড়ির সবাইকে দেখাবো।”

মাইশা আরমানের ধমকে কিছুটা চমকে উঠলো। ধীর ধীরে বসে পড়লো আরমানের সোজাসুজি মেঝেতে। তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে একটা সিঙ্গারা তুলে নিলো হাতে। প্লেটে মোট ছয়টা সিঙ্গারা আছে। মাইশা ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললো। তারপর সিঙ্গারায় একটা কামড় বসিয়ে চিবোতে শুরু করলো। সাথে সাথে মাইশার পুরো মুখ জ্বলে উঠলো। কান দিয়ে যেনো গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করলো। কোনো মতে মাইশা‌ মুখের টুকু গিলে নিলো। তারপর অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আরমানের দিকে। নীরব আর্জি, এই বারের মতো ছেড়ে দিন। কিন্তু আরমান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে, মাইশা ভয়ে ভয়ে আবারও খেতে শুরু করলো। চোখের জলে নাকের জলে মিশে একাকার হয়ে গেলো। মাইশা কাঁদছে, নাক টানছে আবার কাঁদছে। কোনো রকমে একটা সিঙ্গারা শেষ করলো ও। তারপর কাঁদতে কাঁদতে আরমানকে রিকোয়েস্ট করলো, “প্লিজ মাফ করে দিন। এমন ভুল আর জীবনেও করবো না। এটা অনেক ঝাল, আমি সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ একটু পানি দিন আমায়।”

আরমান কিছুটা তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “কাজ টা করার সময় মনে ছিল না? যে এটা ভুল। পানি? পানি তুমি এই সিঙ্গারা গুলো সব শেষ করার পরেই পাবে, তার আগে নয়।”

সামিরা— “ইয়েস! এই না হলো আমার ভাইয়া। এমন শাস্তি সারাজীবন মনে রাখবে এই মেয়ে। ভুলেও কখনো আর এমন কাজ করবে না।”

আবির— “চুপ থা শামুক, তোর ভাইয়া যদি জানতে পারে আমরা এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে ভিতরের কাজ কর্ম দেখছি, তাহলে ওই সিঙ্গারা আমাদেরকেও খাওয়াবে।”

সামিরা আবারও ফিসফিস করে বললো, “না আবুল ভাইয়া, ওই সিঙ্গারা খাওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই। বাপরে সবার যা অবস্থা হয়ে ছিল ওই এক কামড় খেয়ে।”

আবির— “হুম, তাহলে চুপ থাক।”

সামিরা— “আচ্ছা ভাইয়া, আমি এটা বুঝলাম না যে ভাইয়া মাইশার জন্য এতো পাগল কিন্তু তাকে এমন কষ্ট দিচ্ছে কেনো?”

আবির কিছুটা বাঁকা হেসে বলল, “ওটা তোর এই ছোট্ট মাথায় ঢুকবে না শামুক। তাই বেশি না ভেবে নাটক দেখতে থাক।”

সামিরা আর আবির, আরমানের রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে। ওরা এতোক্ষণ ফিসফিস করে কথা বলছিল। সামিরা সামনে পিছনে আবির। সামিরার মাথার উপরে আবিরের মাথা।

“তোমরা এখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছ কেন?”

একটা গম্ভীর আওয়াজে সামিরা আর আবির চমকে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। সামনে তাকিয়ে দেখলো আয়ান দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর মুখে। ভিতর থেকে আরমান আর মাইশাও তাকালো আয়ানের দিকে। কারণ আয়ান দরজার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে, তাই ভিতর থেকেই দেখতে পাচ্ছে আয়ানকে।

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

সামিরা আমতা আমতা শুরু করলো, “আসলে ভাইয়া আমরা.. মানে ওই বড়ো ভাইয়ার সাথে একটু দরকার ছিল। কিন্তু ভিতরের দৃশ্য দেখে আর যাওয়ার সাহস পাইনি।”

“কি দরকার?”

আবারো এক গম্ভীর গলার আওয়াজ। কিন্তু এটা আরমানের। আবারও একবার ভয়েস চমকে উঠলো সামিরা। এমনিতেই ও ভয়ে আছে মাইশার অবস্থা দেখে।

সামিরা— “দরকার বলতে, ওই..মানে..বলছিলাম.. ধ্যাত তোমাদের এই দুই ভাইয়ার গম্ভীর মুখের তেঁতো তেঁতো কথা শুনে আমার কথাগুলো সব ভিতরেই গুলিয়ে যাই।‌ কেনো একটু মিষ্টি করে কথা বললে কি ক্ষতি হবে শুনি। হ্যাঁ বড়ো ভাইয়া না হয় প্রথম থেকেই একটু এইরকম। কিন্তু ছোটো ভাইয়া, তুমি তো আগে অনেক হাসিখুশি, চটপটে স্বভাবের জন্য ছিল, তাহলে হঠাৎ বিদেশে গিয়ে কি হলো? যে একবারে বড়ো ভাইয়ার মতো হয়ে গেলে।”

আরমান— “সামিরা! এগুলো কোন ধরনের কথাবার্তা?”

সামিরা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “হ্যাঁ শুরু হয়ে গেলো তোমার ধমকানি, কেউ ভালোবাসে না আমায়।”

কথাটা বলেই আর দাঁড়ালো না সামিরা।
আয়ান পিছন থেকে ডাক দিলো সামিরাকে।

আয়ান— “আরে বনু শোন তো। রাগ করছিস কেনো?”

না থামলো না সামিরা, কাঁদো কাঁদো মুখে প্রস্থান করলো ওখান থেকে।

এদিকে মাইশা তাড়াহুড়ো করে উড়ে দাঁড়িয়েছে। বেচারি অনেক চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার কিন্তু পারছে না। ভিতরে সব কিছু ওর জ্বলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ভয়ংকর রকমের। চারটে সিঙ্গারা খেয়ে শেষ করেছে ও কোনো রকম। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর। চোখের পানি চেয়েও আটকাতে পারছে না। মাইশা একটু অন্য পাশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

আয়ান একবার ভিতরে তাকিয়ে দেখলো মাইশাকে। বুকের ভিতর টা জ্বলে উঠলো ওর। আয়ান মাইশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মাথা নিচু করে নিয়ে বলল, “সরি ভাইয়া, তোমাদের বিরক্ত করলাম হয়তো। রুবি বলছিল তুমি নাকি ডেকেছো আমায়।”

আরমান একবার মাইশার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “হুম বিরক্ত কিছুটা বিরক্তি করলি, তবে হ্যাঁ ডেকেছিলাম। জরুরী কিছু জানার আছে তোর থেকে।”

মাইশা আরমানের বলা কথাটা শুনে ভীষন ভয় পেলো।

আরমান মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মিস মাইশা, আপনি এখন যেতে পারেন।”

এটার অপেক্ষাতেই ছিল মাইশা। আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না ওখানে। ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলো ও ঘর থেকে। আয়ান মাথা নিচু করে রাখাই হকদেখলো না মাইশার অবস্থা।

আরমান— “আই ভিতরে আয়।”

আয়ান প্রবেশ করলো রুমের ভিতর।

_.._.._.._.._..__.._.._.._.._..__.._.._.._.._.._

বৃহস্পতিবার…

কাল আরমান ও মাইশার বিয়ে। পুরো সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। বিয়ের অনুষ্ঠান বাড়িতেই হবে। বাড়িতে আত্নীয় স্বজন আসতে শুরু করেছে সকাল থেকে। এখন বাড়ির ছোটো রা সবাই সপিং করতে যাবে। যতোই অনুষ্ঠান ছোটো করে হোক, বিয়ে বলে কথা সপিং তো করতে হবেই।

আরমানদের পুরো বাড়ি মেহমান এ ভর্তি হয়ে গেছে। আরমানের মামা, মামি, ফুপি, ফুপা, খালা, খালু, সবাই এসেছে। আয়ানের নানা বাড়ি থেকেও এসেছে। সকল কাজিন মহল এখন এক জায়গায়। তাই হইচয় টা একটু বেশি হচ্ছে। বাড়ির সব ছোটো রা একসাথে বের হলো বাড়ি থেকে। গাড়ি রাখা আছে সারে সারে। সবাই যে যার মতো গাড়িতে উঠে বসলো, কিন্তু আরমানের গাড়িতে কেউ উঠলো না। কারণ কাজিন মহলের সবাই জানে, আরমান কখনো কাউকে ওর গাড়িতে উঠতে নেয় না। বেশি গেঞ্জাম পছন্দ করে না ও। তাই সবাই অন্য গাড়িতে উঠেছে।

কিন্তু মাইশা সোজা গিয়ে আরমানের গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে গেলো। আরমানের গাড়িতে এখন মাইশা ছাড়া কেউ নেই। তাই মাইশা ভীষণ খুশি। হঠাৎ মাইশাকে অবাক করে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো আয়ান। আর তার পর পরই পিছনে দুই দিকের দরজা খুলে উঠে বসলো, সামিরা, রুবি এবং আবির। মাইশা কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে শুরু করলো আয়ান।

এদিকে মায়া বাড়ি থেকে‌ বেরিয়েই দেখলো, একে একে গাড়ি গুলো গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ও ওর পার্স টা রুমে ফেলে এসেছিল, আর সেটা আনতেই গেছিলো। ভীষণ অবাক হলো ও ওকে না নিয়েই সবাই চলে গেলো এটা দেখে। ও প্রথমে যেতেই চাইনি। কিন্তু সামিরার অনেক জোড়াজুড়িতে রাজি হলো। কিন্তু এখন সামিরাও একবার ওর খোঁজ না করে চলে গেলো। কিছুটা মন খারাপ হলো ওর।

এমনিতেই কেনো জানি কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর। এই সব কিছু বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও চলে যেতে। একটু নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে।

“আরে মায়া, আপনি এখানে দাঁড়িয়ে কেনো? যাননি এখনো? গাড়ি তো সব ছেড়ে দিলো।”

একটা পুরুষালী কন্ঠে মায়া নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আওয়াজ অনুসরণ করে তাকালো। দেখলো আসিফ নামের ব্যাক্তি ওর পাশেই বাইক নিয়ে বাইকেই বসে আছে।‌ কখন যে এসেছে লোকটা খেয়াল করেনি মায়া।

আসিফ হচ্ছে আরমানের ফুফাতো ভাই। আরমানের সমবয়সী। মায়া উনাকে চেনে, সামিরা ওর সকল কাজিনের সাথে মায়ার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এই আসিফ নামের পুরুষ টির ব্যাক্তিত্ব দারুন লেগেছে মায়ার কাছে। মানুষ টি যেমন দেখতে সুন্দর তেমন তার কথা বার্তাও সুন্দর। আসিফ একজন ডাক্তার। আর এই ডাক্তার এব ডাক্তারী পেশা দুটোকেই খুব সম্মান করে মায়া‌। কারণ এই ডাক্তারা অসুস্থ মানুষের সেবা করে।

আসিফ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কি ভাবছেন মিস? বেশি ভাবনা চিন্তা না করে উঠে আসুন বাইকে। আমিও ওখানেই যাবো।”

আসিফের বাইকে উঠতে বলাই চমকে উঠলো মায়া। কারণ একটাই, মায়া এর আগে আবির এবং আরমান ছাড়া কোনো পুরুষ মানুষের কাছে আসেনি। মায়া মুখে হাসি নিয়ে বলল, “না ভাইয়া। আপনি চলে যান। আমি যাবো না।”

আসিফও হেসে মজার ছলে বলল, “আরে আমি আপনাকে সপিং মলেই নিয়ে যাবো, অন্য কোথাও নয়। তাই বেশি সংকোচ বোধ না করে বন্ধু ভেবে বাইকে উঠে পড়ুন।”

মায়া কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই, একটা গাড়ি ঝড়ের বেগে এসে ঠিক মায়ার পাশে একদম মায়ার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। মায়া ভয়ে চমকে উঠলো। বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো। মায়া গাড়িটাকে চেনে, এটা আবিরের গাড়ি। তাই ও আর কোনো কিছু না ভেবেই নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “ধন্যবাদ ভাইয়া, তবে আমি বাইকে যেতে পারি না। ভীষণ ভয় লাগে বাইকে উঠতে। চিন্তা নেই, আবির ভাইয়া চলে এসেছে। আপনি চলুন আমি আবির ভাইয়ার সাথে আসছি।”

কথা গুলো বলেই মায়া আর আসিফের প্রতিউত্তরের অপেক্ষা করলো না। গাড়ির দরজা খুলে সামনের সিটে উঠে বসে ঝটপট সিট বেল্ট লাগিয়ে নিলো। এদিকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা ব্যাক্তিটিও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে, গাড়ী চালাতে শুরু করলো।

মায়া সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতেই পাশে কে আছে না দেখেই বলল, “আবির ভাইয়া, এই ভাবে কেউ এতো স্পিডে চালিয়ে এসে গাড়ি থামায়? আর একটু হলে….একি আপনি? আবির ভাইয়া কোথায়?”

মায়ার সিট বেল্ট লাগানো হয়ে গেলে কথা বলতে বলতে পাশে থাকা মানুষটির দিকে তাকালো। কিন্তু নিজের কথা শেষ না করেই অবাক হয়ে শেষের কথাটি চিল্লিয়ে বলল।

চলবে….