আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব-৩৯+৪০

0
11

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_39
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

মায়ার রেখে যাওয়া চিঠি….

প্রিয় গম্ভীর সাহেব..

গম্ভীর সাহেব বলছি বলে আবার রাগ করবেন না যেনো। এই নামটা একেবারে আপনার স্বভাবের সাথে যাই, এই ডাকটা আমার খুব প্রিয়।‌ কিন্তু আফসোস কখনো ডাকা হয়নি, সেই সুযোগই পাইনি কখনো। জানেন সেই প্রথম যখন আপনাকে দেখেছিলাম মানে, আমাদের বিয়ের দিন, তখন প্রথম দেখায় আপনার মুখের গম্ভীর ভাব দেখে এই ডাকটাই প্রথম আমার মনে এসেছিল। কিন্তু আফসোস কখনো সামনাসামনি ডাকা হয়নি, আপনি তো সে সুযোগ টাই কখনো দেননি আমায়। তবে আজ, যখন চিরতরে চলে যাচ্ছি, আর ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই—নিজের এই ক্ষুদ্র ইচ্ছে টা আপনাকে লেখা এই চিঠিতে মিটিয়ে নিচ্ছি। মুখে না হোক, কলমে তো অন্তত বলতে পারলাম, “গম্ভীর সাহেব…”

আচ্ছা যেটা বলার জন্য এই চিঠি লেখা, সেটা আগে বলি। চলে যাচ্ছি আমি। চলে যাচ্ছি আপনাদের জীবন থেকে। অনেক দূরে। আর হয়তো কোনোদিনও দেখা হবে না। আর আপনাকে এই বিরক্তিকর মেয়েটির মুখ দেখতে হবে না। হুম কিছুটা ঋণ থেকে গেলো আপনার কাছে, শোধ করা হলো না সেটা। চুক্তির এক মাস শেষ হতে এখনো কিছুদিন বাকি আছে। এটার জন্য আবার বিশ্বাস ঘাতক ভাববেন না প্লিজ। সন্ধ্যায় গাড়িতে আসার সময় এই বিষয়ে বলেছি আপনাকে, মুক্তি চেয়েছিলাম এই চুক্তি থেকে, আপনিও কিন্তু মুক্তি দিয়েছেন আমায়। আপনি তো বলেই দিলেন, আজ থেকে আপনার জীবনে আপনার অর্ধাঙ্গিনী থাকবে। তাই আজ থেকে আমি মুক্তি পেলাম আপনার কাছে। আমাকে এই মুক্তি দেওয়ার জন্য, আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ থাকব আপনার কাছে।

এই মুক্তি টা যে আমার ভীষণ দরকার ছিল গম্ভীর সাহেব। ভীষণ ভীষণ দরকার ছিল।‌ আমি যে আর সহ্য করতে পারছিলাম না। সহ্য করতে পারছিলাম না নিজের স্বামীকে অন্য কারো হতে দেখতে। তবে এটাকে আবার বড়ো বোনের প্রতি হিংসা ভাববেন না। মনে রাখবেন, আপনি আমার বড়ো বোনের হওয়ার আগে, আপনি আমার ছিলেন। আর নিজের স্বামী বললাম কারণ— হ্যাঁ আমি আপনাকে এখনো নিজের স্বামী বলেই মানি।‌ সেই বিয়ের প্রথম দিন থেকেই। এখনো আপনাকে ভালোবাসি গম্ভীর সাহেব, এখনো ভালোবাসি আপনাকে। এই বিরক্তকর মেয়েটা আপনাকে ভালোবাসে। চলেই তো যাচ্ছি আপনার জীবন থেকে, তাই ভাবলাম মনের কথা আপনাকে জানিয়েই যায়। এতে আমার হৃদয়ের ভাড় কিছুটা হালকা হবে।

জানেন গম্ভীর সাহেব! অনেক চেষ্টা করেছি আপনাকে ভুলে যাওয়ার, কিন্তু পারিনি। অনেক ভেবেছি আপনাকে ভুলে নিজের জীবনে এগিয়ে যাবো। কিন্তু পারিনি। আপনাতেই থমকে গেছিল আমার জীবন। হয়তো আপনার চোখে বা এই দুনিয়ায় চোখের আমার এই ভালোবাসা অন্যায় কারণ, আমাদের যে কাগজে কলমে ডিভোর্স হয়ে গেছে। তবে আমার চোখে আমার এই ভালোবাসা এখনো বৈধ, অন্যায় নয়। কারণ আমরা যে ইসলাম ধর্মের নীতি মেনে, কালেমা পড়ে, আল্লাহ কে সাক্ষী রেখে তিন কবুল বলেছিলাম। ইসলামিক শরিয়াহ মতে, কেবল তালাকনামায় স্বাক্ষর করলেই তালাক কার্যকর হয় না, যদি না এর সঙ্গে নিয়ত ও স্পষ্ট উচ্চারণ থাকে। তাই এখনো আমি আপনাকে নিজের স্বামী বলে মানি। ভালোবাসি আপনাকেই গম্ভীর সাহেব। আপনার অনেক অবহেলার পরও আপনার জন্য আমার হৃদয়ে থাকা ভালোবাসা মুছে ফেলতে পারিনি, হয়তো তিন কবুলের জোড়েই।

জানেন গম্ভীর সাহেব, যেদিন আপনি আমাদের বাড়িতে ডিভোর্স পেপার পাঠালেন, বলে বোঝাতে পারবো না সেদিন কতটা কষ্ট হয়েছিল। তবুও সাইন করে দিয়েছিলাম আপনার কথা ভেবে। এতে যদি আপনি খুশি থাকেন তাহলে তাই সয়। জানেন গম্ভীর সাহেব, যখন আমি সাইন গুলো করছিলাম তখন মনে হচ্ছিল, আমার হৃদয় টা কেউ হাত দিয়ে টেনে ছিঁড়ে বাইরে বের করে নিচ্ছে। তবুও সাইন করেছিলাম, আপনার ভালো থাকার কথা ভেবে।

আমি চাইলেই কিন্তু ডিভোর্স এর আগে, আমাদের বিয়ের কথা ফাঁস করে দিতে পারতাম। গোটা দুনিয়া বাসীকে জানিয়ে দিতাম পারতাম। আর এতে আপনি আমাকে আপনার স্ত্রীর অধিকার দিতে বাধ্য হতেন।‌ কিন্তু আমি তো আপনার কাছে ভালোবাসা চেয়েছি। চেয়েছি ভালোবেসে আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিন, ভালোবাসে আপন করে নিন। আপনাকে বাধ্য করতে চাইনি। আবির ভাইয়া বলেছিল আমাকে এমন করতে, আবির ভাইয়া আমাকে সব রকমের সাহায্য করতে চেয়েছিল এই বিষয়ে। কিন্তু আমি রাজি হয়নি। এতে যে আপনার ক্ষতি হবে গম্ভীর সাহেব। এতে যে আপনার সম্মানহানি হবে।

আর যাকে ভালোবাসি তার এতো বড়ো ক্ষতি কিভাবে করতে পারি? তার থেকে বরং ভালো থাক ভালবাসার মানুষটি। সে যেভাবে ভালো থাকতে চাই ভালো থাক। ভালোবাসা মানেই তো নিজের কষ্ট হলেও, ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো রাখা। তাই আমার কষ্ট হলেও সাইন করেছিলাম আপনার পাঠানো ডিভোর্স পেপারে।

তারপর অনেক চেষ্টা করেছি আপনাকে ভুলে এগিয়ে যাবো নিজের জীবনে, কিন্তু পারিনি। কারণ ওই যে— হৃদয়ে ছিল তিন কবুল এর বাস। এরপর হঠাৎই অপ্রত্যাশিত ভাবে আবারও দেখা হয়ে গেলো আপনার সাথে।‌ আপনাকে এমন জায়গায় দেখবো কখনো কল্পনাও করিনি। রাগের মাথায় অনেক কিছু বলেছিলাম। রাগের মাথায় নিজেকেও অনেকটা ছোটো করেছিলাম আপনার সামনে।‌ যাক গে, সে সব কথা থাক। তবে আমি সত্যিই ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ‌ আপনার কাছে গম্ভীর সাহেব, আমাকে ওই নোংরা জায়গা থেকে বের করে আনার জন্য। হাজার ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যাবে। ওই ঋণ আমি কোনো দিনও শোধ করতে পারবো না। সেই রাতে নিজের কুমারিত্ব হারিয়ে ছিলাম, তবে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে মানুষটি আমার স্বামী ছিল।

এরপর শুরু হয় আপনার কাছাকাছি থাকা।‌ এতে আমার হৃদয়ে চাপা পড়া ভালোবাসা, আসক্তি আবারও জেগে ওঠে। আপনার হাজার অপমান, কটুক্তিও পারেনি আপনার জন্য আমার হৃদয়ে ঘৃণা সৃষ্টি করতে। কারণ আপনার দেওয়া কষ্ট গুলোর গভীরতার চেয়ে আমার হৃদয়ে থাকা ভালোবাসার গভীরতা বেশি ছিল। তবে ভাববেন না যে আমার ভালোবাসা জাহির করে আপনার থেকে সহানুভুতি পেতে চাইছি। এইধরনের মেয়ে আমি নয়। শুধু হৃদয়ের ভাড় কমানোর জন্য কথা গুলো আপনাকে জানিয়ে রাখলাম গম্ভীর সাহেব। আমি জানি এই চিঠি যখন আপনার হাতে পড়বে তখন আপনি হয়তো আমার বড়ো বোনের হয়ে যাবেন।

থাক অনেক কিছু বলে ফেলেছি।‌ শেষে একটাই চাওয়া, মাঝে মাঝে হয়তো আমিও আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি রাগের মাথায়।‌ তার জন্য মন থেকে সরি। শেষ বারের মত ক্ষমা করে দেবেন, এই বিরক্তিকর মেয়েটাকে।

ভালোবাসি গম্ভীর সাহেব।‌ কোনোদিন আসবো না, আমার এই ভালোবাসার দাবী নিয়ে। ভালো থাকা ভালোবাসা…..

ইতি…

আপনার অপ্রিয়
(আপনার ভাষায়) প্রাক্তন স্ত্রী..

আবির চিঠিটা পড়ে শেই করতেই চারিদিকে নীরবতা ছড়িয়ে পড়লো। সবাই মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। দুজনেই ভালোবেসেছে একে অপরকে, তবে তা খুব গোপনে। একজন গোপন রেখেছে অভিমানে, আর একজন গোপন রেখেছে নিজের অনুভূতিতে নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে। হ্যাঁ আরমান কষ্ট দিয়েছে মায়াকে, তবে ওর দেওয়া প্রতিটি আঘাতের পিছনে কোনো না কোনো কারণ ছিল। আচ্ছা ও কি খুব বেশি আঘাত দিয়ে ফেলল মায়াকে? ও তো ভেবেছিল ওর করা ভুল গুলোর জন্য সকলের সামনে ক্ষমা চেয়ে মায়াকে আপন করে নেবে। কোনো কিছুর পরোয়া না করা আরমান তো কোই আজ নিজের ব্যাক্তিত্বর কথা ভাবেনি। পুরো দুনিয়া বাসীর সামনে মায়াকে পাওয়ার জন্য মায়ার সামনে মাথা নত করতে রাজি ছিল ও। কিন্তু এমনটা কেনো করলো মায়া? ভুলে বুঝে কেনো এইভাবে দূরে সরে গেলো ও?

নাহ এখন এই সব ভাবার সময় নেই। খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে খুঁজে বের করতে হবে মায়াকে। এতো অল্প সময়ের মধ্যে খুব বেশি দূরে হয়তো মায়া যেতে‌ পারবে না। এই ভেবে আরমান হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ালো, ছুটে গেলো যেই ঘরে মায়াকে রাখা ছিল সেই ঘরে। হ্যাঁ রুবির কথা মতো বিছানায় রক্তের দাগ। সাথে ফ্লোরেও কিছুটা রক্ত।

থমকে গেলো আরমানের হৃদয়। মায়া ঠিক আছে তো? এই রক্ত কিসের রক্ত? অজনা আশঙ্কায় বুকের ভিতর টা কেঁপে উঠলো‌ আরমানের।

_.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._..

রাত ১:৩৫

আরমানের হৃদয়ে সাথে যেনো পৃথিবীর বুকেও ঝড় উঠেছে। আকাশে বজ্রপাতের শব্দ এত বিকট যে, মানুষের বুকের ভেতর কাঁপতেও বাধ্য। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাতাসের গতি। আর সেই বাতাসের গতির সাথে যেনো নিরব যুদ্ধ চলছে আরামানের। কিন্তু প্রকৃতির এই তান্ডবের সাথে পাল্লা দেওয়া কি এতোই সহজ? গাছ গুলো এমন ভাবে দুলছে যেনো এখনি ভেঙে পড়বে আরমানের গাড়ির উপর।

হ্যাঁ! সকলের বাধা উপেক্ষা করে এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে এসেছে আরমান। সিসিটিভি ফুটেজ এ দেখেছে মায়াকে বিদ্ধস্ত অবস্থায় ইভেন্ট হল থেকে বেরিয়ে আসতে। কেমন যেনো টলমল করছিল মায়ার শরীর টা।

শুধু ও একা নয়, সমস্ত গার্ড দেরও আদেশ করেছে মায়াকে খুঁজে বের করার। এই ঝড় বৃষ্টি মধ্যেও গার্ডরা তার বসের আদেশ অমান্য করেনি। ওরাও খোঁজ চালাচ্ছে শহরের প্রতিটি অলিগলিতে। আরমান ওর সমস্ত সোর্স কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। যেভাবেই হোক ওর মায়াকে ফেরত চাই। কিছুতেই হারাতে পারবে না ও ওর পিচ্চি মায়াবতীকে।

আবিরও বসে নেই। ও নিজেও বেরিয়েছে মায়াকে খুঁজতে। আবিরও নিজের বোনের মতো ভালোবাসে ওকে।

আরমান গাড়ির চলন্ত অবস্থাতেই, এদিকে ওদিকে তাকাতে ব্যাস্ত, একটি বার সেই চেনা মুখটির দেখা পাওয়ার আশায়। তখনো আকাশের বুক চিড়ে নেমে আসছে বজ্রপাত। থেকে থেকেই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সেই আলোয় অনেকটা দূরে দেখা গেলো আবছা এক নারী মুর্তি। আরমান সতর্ক হলো। তীক্ষ্ণ চোখে চাইলো সেই দিকে। হ্যাঁ একটা মেয়ে, এলোমেলো পায়ে ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, এগিয়ে যাচ্ছে সামনে দিকে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় তা দেখতো পেলো আরমান। মনে হল, মেয়টির পরনে ওর দেওয়া সেই সবুজ শাড়ী। আরমানের শুষ্ক হৃদয় যেনো পানি পেলো। মুখে ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসি। ওর পিচ্চি মায়াবতীকে ফিরে পাওয়ার আশায়।

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

কিন্তু আরমানের মুখের সেই হাসি বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না। হঠাৎই এক বিকট আওয়াজে বজ্রপাত পড়লো আরমানের গাড়ির কিছুটা সামনে একটা গাছের উপর। সাথে সাথে গাছটি দুই ভাগ হয়ে পড়ে গেলো রাস্তার উপর। আরমান খুব জোড়ে ব্রেক কষে, গাড়ি থামিয়ে দিলো। পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ যেনো ওর আর মায়ার মাঝে, এই বিশাল বড়ো গাছটা দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আর এই দেওয়াল এর জন্যই ওর মায়াকে দেখতে পাচ্ছে না আর। প্রকৃতিও যেনো চাইছে না আরমান আর মায়া এক হোক। এই প্রকৃতিকেও আরমানের নিজের শত্রু মনে হচ্ছে এখন। আরমান তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে। সাথে সাথে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ভিজাতে শুরু করলো আরমানের শরীর টাকে।

আরমান এসবের উপেক্ষা করে, গাছের ডাল পালা আর পাতার ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেলো প্রকৃতির সৃষ্টি করা দেওয়াল মধ্যে দিয়ে। এরপরই সামনের দৃশ্য দেখে আরমানের হৃদয় কেঁপে উঠলো। ঠান্ডা হয়ে গেলো বুকের ভিতর টা। এই বৃষ্টির মধ্যেও আরমান দেখতে পেলো, একটা বিশাল বড়ো লরি এগিয়ে আসছে মায়ার দিকে। আর মায়া ঠিক রাস্তার মাঝখানে লরিটার সোজাসুজি দাঁড়িয়ে আছে, মাথা চেপে ধরে। মায়া যেনো এই দুনিয়াতে নেই।

এই দৃশ্য দেখে আরমানের মাথার ভিতর টা ফাঁকা হয়ে গেলো যেনো। চিৎকার করে উঠল ও— “মায়াআআআআ!!!!”

না মায়ার কোনো হেলদোল নেই ও এক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আরমান আর কিছু ভাবতে পারলো না, প্রাণ পনে ছুট লাগালো ও।

এদিকে লরিটাও তীব্র গতিতে ছুটে আসছে মায়ার দিকে। আরমান মুখে উচ্চারণ করতে করতে ছুটছে— “মায়া! প্লিজ সরো ওখান থেকে!! প্লিজ সরো। মায়াআআ!!”

নাহ! আরমানের এতো ডাক হয়তো মায়ার কানে গেলো না। মায়া তখনো এক ভাবে মাথা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরমানের এই ছোটার মাঝে বাতাসের গতি আর পায়ের নিচে পানি, কতোবার যে হোঁচট খেয়ে পড়লো তার হিসাব নেই। কিন্তু এই সবকিছুর উপেক্ষা করে আরমান আবারও দাঁড়িয়ে ছুটে চলেছে।

হ্যাঁ! সম্ভব হলো। লরি টির আগেই আরামান পৌঁছে গেলো মায়ার কাছে। দুই হাতে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কপালে দিলো ঠোঁটের পরশ। তারপর মায়াকে দুই হাতে জোড়ে ধাক্কা দিলো। মায়া ছিটকে পড়লো রাস্তা থেকে কিছুটা দুরে। আরমানের মুখে প্রাপ্তির হাসি।‌ ও পেরেছে মায়াকে বাঁচাতে। ওর পিচ্চি মায়াবতীকে বাঁচাতে পেরেছে। ঠিক তখনি সাথে সাথে দুম করে আওয়াজ হলো। আরমান তার পিচ্চি মায়াবতীকে রক্ষা করতে পারলেও নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না। লরিটি এসে খুব জোড়ে ধাক্কা দিলো আরমানকে। আরমান ছিটকে গিয়ে পড়লো রাস্তার আরেক পাশে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো লরিটা এতোকিছুর পরও থামলো না। তীব্র গতিতে বেরিয়ে গেলো লরিটি।

মায়া এই দৃশ্য আবছা চোখে দেখলো। মুখে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো, “গম্ভীর সাহেব”।

আরামানের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে পিচের রাস্তা টা। আরমানও রাস্তার ওপার থেকে নিভু নিভু চোখে দেখছে, তার পিচ্চি মায়াবতীকে। পুরো শরীর যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে, তবুও ঠোঁটের কোনে লেগে রয়েছে এক ফোঁটা হাসি। প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেনো বৃষ্টির ফোঁটা নয়, একেক টা আকাশের বুকে চিড়ে বেরিয়ে আসা কাঁচের টুকরো। ঠিক এমনটাই অনুভব হচ্ছে আরমানের শরীরে।

আরমান বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় দেখলো মায়া তার একটা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আরমানের দিকে। আরমানের মনে সন্দেহের বাসা বাঁধলো, ওর মায়াবতী ঠিক আছে তো? এখনো এইভাবে পড়ে আছে কেনো? মায়ারও কি আঘাত লেগেছে কোথাও?

মায়ার চোখও নিভু নিভু করছে। আরমানের ধাক্কা দেওয়ার ফলে মায়ার মাথা বাড়ি খেয়েছে রাস্তার পাশে থাকা ছোটো পুলে। কপাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আর সেই রক্ত মিশে যাচ্ছে বৃষ্টির পানিতে। মায়া স্পষ্ট দেখলো আরমানের লরির সাথে ধাক্কা খাওয়ার নির্মম দৃশ্য। মায়ার চোখের পানি বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যাচ্ছে। ওর শরীরে এক ফোঁটাও শক্তি নেই উঠে দাঁড়ানোর। হঠাৎই পেটের ভিতর টা যেনো তীব্র যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয়, মায়া নিভু নিভু চোখে দেখতে পাচ্ছে রাস্তার ওপাশে পড়ে থাকা আরমান নিথর শরীর টা।

আরমান অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না, মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো পিচ ঢালা রাস্তায়। আরো কিছুটা আঘাত পেলো ও। বাঁ পা টা হয়তো ভেঙে গেছে। তীব্র যন্ত্রণায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো আরমান। রাস্তায় পড়ে থেকেই চেষ্টা করলো মায়াকে দেখার। শরীরে এক ফোঁটাও শক্তি নেই ওর। পুরো শরীরে আঘাতে ভর্তি। রাস্তায় পড়ে থেকেই শরীর টাকে কোনো রকমে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো এপার থেকে ওপারে। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে খুব। অল্প চেষ্টাতেই হাঁপিয়ে উঠছে। পুরো শরীর ব্যাথায় বিষিয়ে উঠছে। আকাশ থেকে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা গুলো, আঘাত পাওয়া স্থানে লাগতেই চিড়বিড় করে জ্বলে উঠছে।

নাহ! ওকে হার মানলে হবে না। কষ্ট হলেও যেতে হবে ওকে ওর মায়াবতীর কাছে। ওর মায়াবতী ঠিক আছে কিনা ওকে দেখতে হবে। ওর মায়াবতী যে এখনো ওর দিকে হাত বাড়িয়ে আছে। ওর মায়াবতীও হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। ওকে পৌঁছাতেই হবে মায়াবতীর কাছে।

আরমান নিজের শরীরের কষ্টকে উপেক্ষা করে, নিজের শরীর টাকে রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থাতেই টেনে টেনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শরীরটা রাস্তায় ঘেঁষোর লেগে আঘাত পাওয়া জায়গাগুলো তে আরো আঘাত পাচ্ছে। দ্বিগুন হারে বাড়ছে কষ্ট।

এদিকে মায়াও আরমানকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে নিজেও নিজের শরীর টাকে টেনে টেনে নিয়ে আসছে রাস্তা আঁকড়ে ধরে। কেনো জানি ওর শরীরেও এক ফোঁটা শক্তি নেই উঠে দাঁড়ানোর। দুজনেই দুজনের দিকে হাত বাড়িয়ে আছে। অনেক কষ্টের পর একে অপরের হাত ধরতে পারলো। আরমান মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে একটা শান্তির নিশ্বাস ছেড়ে শরীরের ভর ছেড়ে দিলো। রাস্তায় পানিতেই মাথা নামিয়ে দিলো।

তারপর আবারও কি যেনো ভেবে মায়ার দিকে তাকালো। দেখলো মায়ার মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠলো ওর। আবারও নিজের শরীর টাকে টেনে নিয়ে গেলো মায়ার কাছাকাছি। মায়ার শরীর টাকে টেনে নিলো দুইহাত দিয়ে। জড়িয়ে ধরলো বুকের মাঝে শক্ত করে। চোখে মুখে অজস্র চুমু আঁকলো। মায়া নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে আরমানের দিকে। আরমান চেয়েও যেনো মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে পারছে না। তবুও কোনো রকমে মুখ থেকে বের করলো, “আ..আমি কি তো..তোমায় পেয়েও হা..হারালাম মায়াবতী? কেনো বু..বুঝলে না আমাকে একটু? আর একটু কেনো অপেক্ষা করলে না তু..তুমি?? আমাকে কি আর এ..একটা সুযোগ দেওয়া যে..যেতো না?? কথা বলতে ক..কষ্ট হচ্ছে খুব, মা.. মায়াবতী। অনেক কথা রয়ে গেলো..বলা হলো না তোমায়। শুধু একটাই রি.. রিকোয়েস্ট করছি তোমায়। শু.. শুধু একবার তোমার মুখ থেকে ‘গম্ভীর সাহেব’ ডাকটা শু..শুনতে চাই, একবার।”

মায়া ফিসফিস করে উচ্চারণ করলো অনেক কষ্টে, “গম্ভীর সাহেব।”

এতো কষ্টের মাঝেও আরমানের মুখে ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসি। মায়াকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

“ভালোবাসি তোমাকে, আমার পিচ্চি মায়াবতী… অন্তরের গভীর থেকে ভালোবাসি। কত কথা জমে ছিল হৃদয়ে, বলা হয়নি… আর বলা হবে কি? আজ, যখন সবকিছু ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে… তখন তোমাকে জানাতে এসেছি—তোমার জন্যই ছিল আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস, তুমি-ই ছিলে আমার গল্পের শুরু। তবে কি শেষটাও তোমার নামেই হবে? বলো মায়াবতী, আমাদের গল্পটা কি সত্যিই এখানেই শেষ?”

না কোনো উত্তর এলো না মায়ার তরফ থেকে। কিভাবে আসবে? মায়া যে আরমানের বুকেই জ্ঞান হারিয়েছে। আরমানও পারলো না আর চোখ খুলে রাখতে। ধীরে ধীরে সে ও চোখ বন্ধ করলো, প্রেয়সীকে বুকে নিয়ে। বিকট আওয়াজে বজ্রপাত হলো কাছে কোথাও। বৃষ্টির বেগ বাড়তেই থাকলো। আর এই বৃষ্টির পানিতেই রাস্তায় পড়ে থাকলো দুটো জ্ঞানহীন নিথর দেহ।

_.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._..

শাহরিয়ার পরিবার টা যেনো একেবারে ভেঙে পড়ছে। আর ভাঙ্গবেই নাই বা কেনো। বাড়ির প্রধান খুঁটিটাই যে নড়ে উঠেছে। হাসপাতালের উপর নীচ দুই ওটিতে চিকিৎসা চলছে মায়া আর আরমানের। মায়া আছে নিচের তলায়, আর ঠিক তার উপর তলার ওটিতে আছে আরমান। মায়ার বাঁচার গ্যারান্টি দিতে পারলেও আরমানের বাঁচার চান্স ১০০% এর মধ্যে ১০%। অনেক টা দেরি করে ফেলেছে পেসেন্ট কে হাসপাতালে আনতে, যার ফলে অনেক টা রক্ত বেরিয়ে গেছে শরীর থেকে। অনেক আঘাত পেয়েছে আরমান।

আর মায়া? মায়ার শরীরে নাকি এক ভয়ঙ্কর ড্রাগস পাওয়া গেছে। আরো অবাক করা বিষয় হলো মায়া নাকি প্রেগন্যান্ট ছিল, কিন্তু ড্রাগস এর প্রভাবে মিসক্যারেজ হয়েছে। এই খবর এক মাত্র আবির আর ছোটো আম্মু ছাড়া কেউ জানে না। এক মাত্র এই দুজনই মায়ার ওটির সামনে বসে আছে। আবির ছোট আম্মু কে বারণ করেছে এখন বাকি সবাইকে এই বিষয়টা জানাতে। ওরাও ভীষণ রকমের অবাক হয়েছে। কিন্তু এখন কোনো কিছু ভাবার পরিস্থিতি নেই।

ওরাও একবার করে ঘুরে আসছে উপর তলা থেকে। বাকিরাও একবার করে এসে খোঁজ নিচ্ছে মায়ার, বাকিরা বলতে সামিরা, আরমানের বাবা, চাচা, আয়ান এরাই। বাড়ির সবাই ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছে। আরমানের মা তো বারে বারে সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে, ছেলের এমন অবস্থা দেখে।

চলবে…..

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_40
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫 হ্যাশট্যাগ ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

দিন পেরিয়ে রাত নেমেছে। আর সেই রাতের নিকষ কালো অন্ধকার নেমে এসেছে শাহরিয়ার পরিবারে। শহরের সবচেয়ে আলো ঝলমলে এই হাসপাতাল ভবনের নির্দিষ্ট দুটি আইসিইউতে তখনও নিঃশব্দে লড়াই করে চলেছে জীবন আর মৃত্যুর সঙ্গে, দুটো ভালোবাসার মানুষ।

নীচের তলার আইসিইউ— সেখানে শুয়ে আছে মায়া তালুকদার, নিঃসাড়, স্তব্ধ।
আর তার ঠিক উপরেই, ওপরতলার আইসিইউতে নিথর হয়ে শুয়ে আছে আরমান শাহরিয়ার— যাকে বাঁচানোর সম্ভাবনা ডাক্তার রা মাত্র দশ শতাংশ বলেছে।

আর দশ শতাংশ… এর মানে তো প্রায় না থাকারই সমান।

শাহরিয়ার পরিবারের মানুষ গুলোর শ্বাস যেন এখন হাসপাতালের কাঁচের দেয়ালেই আটকে আছে। কারও চোখে এখন আর পানি নেই— কিভাবে থাকবে, কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শেষ। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে সবার।

শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস, নিস্তব্ধতা আর ব্যথা মেশানো দৃষ্টি ঘুরে ঘুরে আটকে আছে হাসপাতালের করিডোরে।

ডাক্তারদের চোখে স্পষ্ট উদ্বেগ আর ক্লান্তির ছাপ। সিস্টেমে আরমানের রক্তচাপ কখনো হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে, আবার হঠাৎ কমে যাচ্ছে। ওর শরীরটা যেন আর কোনোভাবেই সাড়া দিচ্ছে না।

কিন্তু তবুও… ডাক্তাররা তাদের চেষ্টায় কোনো কমতি রাখেনি। কারণ আরমানের চোখের পাতায় তখনো একটু সারা ছিল, যেনো সে বলছে— “আমি বাঁচতে চাই, ফিরতে চাই মায়াবতীর কাছে। বলতে চাই না বলা কথা গুলো।”

——————–

ওদিকে, নীচতলার আইসিইউ রুমের সামনে এখনও বসে আছে আবির আর ছোটো আম্মু।
মায়ার শরীরে যে ভয়ঙ্কর ড্রাগস পাওয়া গেছে, আরমান মায়াকে ধাক্কা দেওয়াই মায়ার মাথা গিয়ে বারি খাই রাস্তার পাশে থাকা ছোটো পুলে। ভয়ংকর রকমের আঘাত লেগেছে মায়ার মাথায়। ব্লাড লসের পরিমাণ টাও অনেকটা বেশী। তার উপর ভয়ংকর ড্রাগস—আর ওই ভয়ংকর ড্রাগস এর প্রভাবেই হয়েছে মিসক্যারেজ। মেয়েটা এর পর কতটা নিতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে ডাক্তারদের।

রক্তের মধ্যে পাওয়া ড্রাগস, পরিক্ষার জন্য বড়ো ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। মায়ার বিষয়ে এখনো সিউর ভাবে কিছু বলেনি ডাক্তারা।

ছোটো আম্মুর মুখে কোনো ভাষা নেই। একদিকে আরমান আবার আর একদিকে নিজের মেয়ের সমতুল্য মায়া—শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে উনি আইসিইউ এর দিকে।

আবির চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে আছে, ঠোঁট নড়ছে ধীরে ধীরে। যেনো সে উপড়ওয়ালার কাছে দোয়া করছে— আরমান আর মায়া ফিরে আসুক।

উপরে, ডাক্তারদের চিৎকারে আইসিইউ কেঁপে উঠছে।
“সিস্টোলিক প্রেশার ড্রপ করছে… CPR! 1… 2… 3… CLEAR!”

পুনরায় চেষ্টা। আরেকবার ইলেকট্রিক শক দেওয়া হলো।

হঠাৎ এক মুহূর্তে মনিটরের স্ক্রিনে একটা ছোট্ট স্পাইক। তারপর… একটানা হার্টবিট। খুব দুর্বল, খুব কাঁপা কাঁপা… কিন্তু জীবিত।

সেই একটানা শব্দ যেন পুরো হাসপাতাল ভবনে আলো জ্বেলে দিল।

ডাক্তার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল—
“He’s back. Heartbeat’s stabilizing… unbelievable.”

কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না। যে মানুষটির বাঁচার চান্স ছিল মাত্র দশ শতাংশ, তাকে তারা ফিরিয়ে এনেছে। না, শুধু তারা না। মানুষটির বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা, তার প্রিয় মানুষটির প্রতি অসম্পূর্ণ টানটাই তাকে বাঁচিয়ে তুলেছে। সব থেকে বড়ো কথা উপরওয়ালা তার হায়াত রেখেছে…

চোখদুটো এখনো পুরোপুরি খুলেনি আরমান, তবে তার শরীর সাড়া দিচ্ছে ডাক্তারদের চিকিৎসায়।

আরমান ফিরে এসেছে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছে সে— মায়ার স্পর্শহীন ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে। যার ভালোবাসা ছিল না-কথায় বলা, কিন্তু প্রতিটি নিঃশ্বাসে লেখা। এখন অপেক্ষা শুধু— চোখ মেলে তাকানো, আর সেই কথাগুলো… যা বলা হয়নি এখনো।

আর ঠিক তখনই নিচের তলার আইসিইউ থেকেও খবর আসে—মায়া এখন স্থিতিশীল। অবচেতন হলেও বিপদমুক্ত। কিন্তু কিছু একটা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ডাক্তাররা, মায়ার জ্ঞান ফিরেলেই সবকিছু জানাতে পারবে।

আবির ছোটো আম্মুর দিকে তাকাল। মুখে কোনো কথা নেই। শুধু মনে মনে ভাবলো— “এরা দু’জন একে অপরের জন্যই বেঁচে আছে।”

_.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._

পরের দিন ভোরবেলা….

এখনো আইসিইউতেই আছে আরমান। পরনে হাসপাতালের পোশাক, একটা পায়ে এবং হাতে প্লাস্টার করা। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। শরীরে অনেক জায়গায় ব্যান্ডেজ।

ধীরে ধীরে চোখের পাতা কিছুটা কেঁপে উঠলো ওর। হাতের আঙুল গুলো নড়ে উঠলো। জ্ঞান ফিরছে আরমানের। কিন্তু এই রুমে এখন কেউ নেই। আরমানের পরিবারের সবাই এখন একটু পাশের একটা ফাঁকা কেবিনে রেস্ট নিচ্ছে। ওরা আরমানকে দেখেছে দূর থেকেই। ডক্টর জানিয়েছে, আরমানের জ্ঞান ফিরলে আবারো একবার চেকআপ করে নর্মাল কেবিনে শিফট করা হবে।

হঠাৎই আরমান চোখ খুললো। যেনো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে পড়েছে। মায়া! ওর মায়াবতী ঠিক আছে তো? জ্ঞান ফেরার সাথেই সাথেই প্রথমে এটাই ওর মনে প্রশ্ন জাগলো।

চেষ্টা করলো হাত পা নড়ানোর কিন্তু পারলো না। নিজের শরীর টাকেই নিজের কাছে ভীষণ ভারী লাগছে ওর। চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাকালো। বুঝলো ও এখন হাসপাতালে। এরপর হঠাৎই ভালো হাতটা দিয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেললো, ধরফর করে উঠে বসলো বেডের উপর। আর সাথে সাথেই ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো ও। শ্বাস নিচ্ছে বড়ো বড়ো করে। পুরো শরীর মনে হচ্ছে ব্যাথায় ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু না— ওর এভাবে বসে থাকলে হবে না। খোঁজ নিতে হবে মায়াবতীর। মায়া কি ঠিক আছে?

আরমানের একটা হাত ভেঙে গেছে, আর একটা হাতে সামান্য কাটা ছেঁড়ার জন্য ব্যান্ডেজ করা। সেই ভালো হাতটাতেই লাগানো ছিল স্যালাইনের ক্যানোলা। ওই হাতটা তুলে নিয়ে গেলো প্লাসটার করা হাতটার কাছে। একটানে স্যালাইনের পাইপ টেনে ছিঁড়ে ফেললো। সাথে সাথে টপটপ করে রক্ত পড়তে শুরু হলো। কিন্তু ওর সেই দিকে কোনো ধ্যান নেই। তখনো শ্বাস নিচ্ছে বড়ো বড়ো করে। এরপর তাড়াহুড়ো করে নামতে চাইলো বেড থেকে, একটা পা প্লাস্টার করা, পড়ে যেতে নিলো কিন্তু বেড ধরে নিজেকে সামলে নিলো। মেঝেতে পা রাখতেই পুরো শরীর দিয়ে একটা ব্যাথার চোড়া স্রোত বয়ে গেলো যেনো। মাথা ঘুরে উঠলো। কিন্তু না তবুও থামলো না ও।

ভাঙা পা নিয়েই খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে এলো আইসিইউ থেকে। দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে গেলো ও। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, হাঁপাচ্ছে। তবুও থেমে থাকলে চলবে না। টলমলে পায়ে মাতালের মতো এগিয়ে গেলো। তখনি ছুটে এলো দুজন তরুণ নার্স। আরমানকে ধরতে চাইলো।

“একি স্যার! আপনি এভাবে উঠে এসেছেন কেন? আপনার শরীরের অবস্থা ভালো না।”

আরমান ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে রাগী চোখে তাকালো। দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে প্রশ্ন করলো— “ম..মায়া কো.. কোথায়?”

“প্লিজ স্যার!! আপনার অবস্থা ভালো নয়! এভাবে থাকলে আরো ক্ষতি হবে আপনার।”

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

বলেই ছেলেটি এগিয়ে গেলো আরমানকে ধরার জন্য, আরমান তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভয়ঙ্কর গলায় হুংকার ছাড়লো— “আমি প্রশ্ন করেছি মায়া কোথায়? আমার সাথে তাকেও নিশ্চয় হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছে, কোথায় আমার স্ত্রী?”

এই অবস্থাতেও আরমানের গম্ভীর গলায় বলা কথা গুলো যেনো ভিতর কাঁপিয়ে দিলো দুই তরুনের। আরমানের চোখ লাল হয়ে আছে। কেমন যেনো ভয়ঙ্কর লাগছে ওকে। ওখানে থাকা একজন নার্স ভীতু গলায় বলল— “নীচের তলায় আছেন উনি। জেনারেল কেবিনে দেওয়া হয়েছে উনাকে।”

আরমান আর ওখানে দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করলো না। আবারো টলমল পায়ে এগিয়ে গেলো। সামনেই ওর চোখে পড়লো সিঁড়ি। ভাঙা পা নিয়েই সেই সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করলো। কিন্তু দূর্ভাগ্য‌ বশত এই শরীর নিয়ে সামলাতে পারলো না নিজেকে। মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো সিঁড়িতেই, আর তারপর গড়াতে গড়াতে একেবারে নিচের তলায় গিয়ে পড়লো। পিছনে সেই নার্স দুটো ছুটে আসছে। ওরা তাড়াতাড়ি এসেও কিছু করতে পারলো না, এর মধ্যে যা হওয়ার হয়ে গেছে।

আরমান এতোকিছুর পরেও উঠে বসার চেষ্টা করছে। নার্স দুটো ছুটে এসে আরমানকে ধরে উঠিয়ে বসালো। আরমানের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলো দুজন। আঘাত পাওয়া শরীরে আবারও আঘাত লেগেছে। কপালের কাছটা কেটে গেছে, ব্যান্ডেজ করা জায়গা গুলো থেকে আবারো তাজা রক্ত বেরিয়ে এলো। কপালে কেটে যাওয়া জায়গা টা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে ঠিক চোখের কাছে।

এতোকিছুর পরেও আরমানের কোনো ভাবান্তর নেই। ও আবারও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তাই নার্স দুটো ওকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলো। এরপর আরমান উঠে দাঁড়িয়ে আবারও কোনোরকমে দেওয়াল ধরে ধরে টলমল পায়ে প্লাস্টার করা পা টা টেনে টেনে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। পাগলের মতো একের পর এক কেবিনের দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলতে শুরু করলো। আপ্রান চেষ্টা মায়াবতীকে খুঁজে বের করার। মুখে বিড়বিড় করছে— “মায়া!! কোথায় আমার মায়াবতী? আমার মায়াবতী ঠিক আছে তো?”

পিছন থেকে আরমানের বাবা, চাচা, মা, সবাই ছুটে আসছে। আরমানকে থামতে বলছে। কিন্তু কারোর কোনো কথা আরমানের কানে ঢুকছে না।

দূর থেকে আবির এই দৃশ্য দেখে চমকে উঠলো। ছুটে এসে আরমানকে জড়িয়ে ধরলো। আরমান থেমে গেলো, আহত লাল চোখে তাকালো আবিরের দিকে। গলা থেকে বেরিয়ে এলো মাত্র দুটো বাক্য— “আমার মায়াবতী কোথায় আবির? ও ঠিক আছে তো?”

আবিরের চোখ ছলছল করছে। ছুটে এসেছে আরমানের পরিবারের সবাই। আরমানের মা ও ছেলের এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো। আরমান শুধু একবার অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে তাকালো নিজের মায়ের দিকে।

সাবিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলল— “কেনো এমন পাগলামী করছিস বাবা? মায়া ঠিক আছে, তুই একটু শান্ত।”

হঠাৎই মিসেস মুনজিলা বেগমের বলা কথাটা সবার কানে ঝঙ্কার তুলল যেনো— “একটা চরিত্রহীন মেয়ের যেনো এতো পাগলামি সাজে না।”

আরমান রক্ত লাল চোখে তাকালো উনার দিকে। মুনজিলা বেগম আরমানকে এভাবে তাকাতে দেখে, মুখ বেঁকিয়ে বলল— “এভাবে তাকানোর কি আছে? কার না কার বাচ্চা এতোদিন পেটে নিয়ে ঘুরছিল তার ঠিক নেই। ওই সব মেয়েকে তো চরিত্র হীনই বলে।”

এরপর উনি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, “কি ভেবেছিলে কেউ জানতে পারবে না? সত্যি কথা কোনোদিন চাপা থাকে না, হুম। আমি ঠিকই শুনেছি ডক্টরের, কথা গুলো। এতদিন কার না কার বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরছিল, কিন্তু এখন সেই বাচ্চা নাকি আবার নষ্টও হয়ে গেছে। এই ধরনের পাপ কাজ করলে, চরিত্রহীন মেয়েদের সাথে এমনই হয়। আচ্ছা তুমি এই কথা সবার থেকে লুকাতে চাইছিলে কেনো? ওই চরিত্রহীন মায়াতো খুব আবির ভাইয়া! আবির ভাইয়া! করতো, তোমার সাথে আবার রাত কাটিয়ে পেট বাধ….”

যেই নোংরা কথাটা উনি বলতে যাচ্ছিলেন সেটা আর শেষ পারলেন না উনি। কথাটা শেষ করার আগেই আরমান নিজেকে আবিরের থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ালের সাথে গলা চেপে ধরলেন মুনজিলা বেগমের। চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে। বাকি সবাইও ভীষণ অবাক হয়েছে মুনজিলা বেগমের বলা কথা গুলো শুনে। সবার চোখে মুখে বিস্ময় ছাপ।

আরমান হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, “আমার মায়াবতীর নামে আর একটাও বাজে কথা বললে আপনার জীভ টেনে আমি ছিঁড়ে ফেলবো। আমার মায়াবতী চরিত্রহীন নয়। আমার মায়াবতী পবিত্র। আমার মায়াবতীকে আপনার ওই অপবিত্র মুখ দিয়ে আর একবার চরিত্রহীন বললে আপনাকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় করতে আমার এক মূহুর্ত সময় লাগবে না।”

আরমান যেই হাত দিয়ে মুনজিলা বেগমের গলা চেপে ধরেছে সেই হাত থেকে বেরিয়ে আসা রক্ত উনার শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে, সবাই চেষ্টা করছে আরমানকে থামানোর। মুনজিলা বেগমের অবস্থা ইতিমধ্যে খারাপ হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে নিঃশব্দে। জীভ বেরিয়ে এসেছে অনেকটা।

মিসেস সাবিনা বেগম— “আরমান ছেড়ে দে বাবা, উনি মারা যাবে তো। আর উনি ঠিকই বলেছে, আমিও শুনলাম মায়া প্রেগন্যান্ট ছিল। চরিত্রহীন না হলে মায়ার পেটে বাচ্চাটা কোথা থেকে এলো?
সব হয়েছে ওই মেয়ের জন্য। আজ ওর জন্যই তোর এমন অবস্থা।”

আরমান মিসেস মুনজিলা বেগমকে ছিটকে ফেলে দিয়ে রক্ত লাল চোখে ওর মায়ের দিকে তাকালো। গর্জে উঠলো ওর মাকে উদ্দেশ্য করে— “জাস্ট শ্যাট আপ মম!! তুমিও যদি আমার মায়াবতীর নামে চরিত্রহীনের ট্যাগ লাগাও তাহলে আমি ভুলে যাবো যে তুমি আমার মা। আমার মায়াবতী চরিত্রহীন নয়। ও পবিত্র। মায়ার পেটে থাকা বাচ্চাটা ছিল আমার। ওটা আমার অস্তিত্ব। আমার রক্ত। আমার হালাল সম্পদ। যেটাকে আমি রক্ষা করতে পারলাম না।”

মেঝেতে ধপ করে বসে পড়লো আরমান। কেউ কখনো তাকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি,
যে মানুষটা ছিল পাথরের মতো গম্ভীর, সেই মানুষটাই আজ কান্নার ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে।
চারপাশ নিস্তব্ধ, মুখে মুখে বিস্ময়…সবাই যেন ভুলে গেছে— এই মানুষটাও ভাঙতে পারে।

আবির আরমানের কাছে বসে ওকে ধরলো।‌ আরমান অসহায় চোখে তাকালো আবিরের দিকে, ভাঙ্গা গলায় বলল— “প্লিজ আবির। একবার নিয়ে চল না আমাই মায়ার কাছে। জানিস ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার, কিন্তু এই শারীরিক কষ্টের থেকেও হৃদয়ের দহন অনেকটা বেশি। এই চোখ ভীষণ ভাবে তৃষ্ণার্ত, এক পলক মায়াবতীকে দেখার জন্য। এই হৃদয় ভীষণ ভাবে ব্যাকুল, মায়াবতীর স্পর্শ পাওয়ার জন্য। আমি যে আর পারছি না। বিশ্বাস কর ভীষন কষ্ট হচ্ছে আমার। আর..আর আ..আমার অস্তিত্ব টাও কি সত্যিই বিলীন হয়ে গিয়েছে?”

আরমানের এমন ভাঙা কণ্ঠে উচ্চারিত আকুলতা শুনে, আবির আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না— চোখ বেয়ে নেমে এলো নিঃশব্দ অশ্রু। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড় করালো আরমানকে। পাশেই থাকা একটা চেয়ারে বসালো ওকে।

আবির— “মায়া এখন ঠিক আছে আরমান। তোকে নিয়ে যাবো আমি ওর কাছে। কিন্তু তুই একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে। তোকে যদি মায়া এই ভাবে দেখে তাহলে ও আরো কষ্ট পাবে। তুই কি চাস মায়া আরো বেশি কষ্ট পাক?

আরমান বাচ্চাদের মতো দুইদিকে মাথা নাড়ালো। আবিরো আবারো বলল, “পাঁচ মিনিট এখানে চুপটি করে বসে থাক। কথা দিচ্ছি আমি তোকে নিয়ে যাবো মায়ার কাছে।”

আবির কথাটা বলেই ডক্টরের দিকে ইশারা দিলো। আরমানের চিকিৎসা করা ডক্টরাও ছুটে এসেছে খবর শুনে। ডক্টর নার্স ও আরো কিছু পাবলিক লোক এ ভরে আছে করিডোর টা। সবাই হতভম্ব, শক্ত পোক্ত গম্ভীর কাঠখোট্টা মানুষটার এমন গভীর ভালোবাসা দেখে।

ডক্টর ও নার্স এগিয়ে এসে আরমানের আবার আঘাত পাওয়া জায়গাগুলো ড্রেসিং করিয়ে দিতে লাগল। অন্য একজন বড়ো ডক্টর সবাই কে যে যার কাজে ফিরে যেতে বলল। ধীরে ধীরে মানুষে ভর্তি থাকা করিডোর ফাঁকা হলো।

ডক্টর— “কিন্তু উনার এইভাবে থাকাটা রিস্ক‌ হয়ে যাই। রীতিমত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন উনি। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব উনাকে বেডে নিতে হবে।”

আবির— “হ্যাঁ বুঝতে পারছি। কিন্তু ওকে একবার মায়াকে না দেখালে ওর পাগলামি থামবে না বরং আরো বেড়ে যাবে।”

অন্য ডক্টর এবং আরমানের বাবাও সাই দিলো আবিরের কথায়। ধীরে ধীরে ওইভাবেই আরমানের আবার আঘাত পাওয়া জায়গাগুলো ড্রেসিং করিয়ে দিলো। স্যালাইন এর পাইপ টেনে ছিঁড়ে ফেলায় সূচ টাও একেবারে বেঁকে গিয়ে হাত টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। সেই জায়গাটাও ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। আরমান চোখ বন্ধ করে পেছনের দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে, নির্বাক এক মূর্তির মতো। এত কিছুর পরেও তার মুখ থেকে একটা আহ্ পর্যন্ত বের হয়নি। কেবল চোখ বেয়ে নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ছে উষ্ণ ধারা। হ্যাঁ, আরমান কষ্ট পাচ্ছে। নিজের করা ভুলের অনুশোচনা তাকে বিদ্ধ করছে। নিয়তি তার ওপর যেন কঠিনতম এক আঘাত হেনেছে।

চলবে…