#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_41
#লেখিকা_সালমা_খাতুন
🚫 হ্যাশট্যাগ ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫
মায়াকে যেই কেবিনে রাখা হয়েছে, সেই কেবিনে আবির আরমানকে নিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করলো। আরমান এখন একটা হুইলচেয়ারে বসে আছে। সাথে আরমানের মা ও প্রবেশ করলো কেবিনে আর দুইজন ডক্টর। বাকি সবাই বাইরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, ডক্টর এতোজনকে একসাথে ঢুকতে নিষেধ করেছে, রোগীর কেবিনে।
আরমানের হৃদয় মুচড়ে উঠলো, মায়ার ফ্যাকাশে, ও শুকিয়ে যাওয়া মুখটা দেখে। মায়া তখনো নির্জীব। আবির একেবারে মায়ার বেডের পাশে আরমানেকে নিয়ে গেলো। আরমান বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো— “মায়া! আমার মায়াবতী, আমার পিচ্চি মায়াবতী।”
আবারো দুই ফোঁটা পানি আরমানের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো। আরমান ওর ভালো হাতটা রাখলো মায়ার এক হাতে। অসহায় গলায় জিজ্ঞাসা করলো ও— “কি হয়েছে আমার মায়ার? ও এখনো জ্ঞানহীন কেনো?”
মায়ার চিকিৎসা করা ডক্টর বলল— “বলছি আপনাকে সব। তবে প্লিজ আপনি বেশি স্ট্রেস নিবেন না। শান্ত হয়ে শুনবেন আমার কথা গুলো। আপনার অবস্থাও ভালো নয়, কিন্তু আপনি যেহেতু কিছুটা জেনেই গেলেন তাই পুরোটা জানাচ্ছি আপনাকে।”
আরমান অনুভূতি শূন্য চোখে তাকালো সেই ডক্টরের দিকে। উনি বলতে শুরু করলেন— “প্রথমত আপনার স্ত্রীকে ড্রাগস দেওয়া হয়েছিল। এক ধরনের ভয়ঙ্কর ড্রাগস। সাধারণত এই ড্রাগস আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। আর ওই ড্রাগস এর ফলেই আপনার স্ত্রীর মিসক্যারেজ হয়েছে, অ্যাক্সিডেন্ট এর অনেক আগেই। সম্ভবত তিন সপ্তাহ মতো হবে গর্ভধারণ করেছিলেন উনি। আর ওই ড্রাগস এর বিষয়ে জানার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে ব্লাড স্যাম্পেল, রিপোর্ট আসলেই বলতে পারবো ওই ড্রাগস কেনো দেওয়া হয়েছিল উনাকে।
আর অ্যাক্সিডেন্টে উনার ব্রেনের হিপ্পো ক্যাম্পাস অঞ্চলটি সম্পূর্ণভাবে ড্যামেজড। এই অংশটাই মানুষের মেমোরি রেজিস্ট্রেশন, স্টোরেজ ও রিকল-এর মূল কেন্দ্র। পারলে ‘ক্যামেলিয়া ডিসুজা’ এর সাথে যোগাযোগ করুন। টপ নিউরোসার্জন দের মধ্যে উনি একজন।”
আরমান অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করলো— “কি বলতে চাইছেন ডক্টর? স্পষ্ট করে বলুন।”
ডক্টর— “স্পষ্ট করে এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। উনার জ্ঞান ফিরলেই, বুঝতে পারবেন কেনো বলছি কথা গুলো। আর প্লিজ এখানে বেশিক্ষণ থাকবেন না এতে উনার ও ক্ষতি হবে আর আপনারও।”
কথা গুলো বলেই ডক্টর দুজন বেরিয়ে গেলেন। আরমান আবিরের দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় জিজ্ঞাসা করলো— “আবির কি বলল ডক্টর? আমি কিছুই বুঝলাম না। আর মায়াকে ড্রাগস দেওয়া হয়েছিল, আর তার ফলেই আমার অনাগত সন্তান দুনিয়ার মুখ দেখতে পেলো না।”
কথটা বলেই চোখ বন্ধ করে নিলো আরমান। এরপর যখন চোখ খুলল তখন ওর চোখে যেনো আগুন জ্বলছে। আরমানের বলা কথা গুলো যে কারোর হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করবে—”কে করেছে এই কাজ? আমি তোকে একদিন সময় দিচ্ছি, এর মধ্যে তাকে আমার সামনে হাজির কর। ছাড়বোনা, কিছুতেই ছাড়বোনা আমি তাকে। ভয়ঙ্কর শাস্তি পেতে হবে তাকে, আর ওই শাস্তি আমি তাকে নিজে দেবো।”
আবির যেই ছেলেটা হাসিখুশি থাকতো সব সময় সেই ছেলেটার গলায়ও আজ গম্ভীর ভাব স্পষ্ট— “হুম খুঁজে তো বের করবোই তাকে। আর আরো একটা বিষয়, তুই হয়তো খেয়াল করিস নি। আমার মনে হয় অ্যাক্সিডেন্ট টা সুন্দর পরিকল্পনা করে সাজানো হয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই খোঁজ লাগাতে শুরু করেছি। তোদের যেখানে অ্যাক্সিডেন্ট টা হয় ওখান থেকে সামান্য দূরে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। রাতের অন্ধকার থাকলেও বজ্রপাতের আলোয় যতটুকু বোঝা গিয়েছে, লরিটা মায়াকে আঘাত করার জন্যই ওর দিকে ধেয়ে আসছিল। এবং ঘটনার পরপরই লরিটা না থেমে বেরিয়ে যায় খুব স্পিডে।”
আরমান প্রচন্ড অবাক হলো আবিরের কথা গুলো শুনে। অবাক গলাতেই বলল— “কিন্তু কে? মায়ার বিষয়ে তো তেমন কেউ জানেই না।”
আবির— “হুম ওটাই তো ভাবনার বিষয়। আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না, আমি দেখছি বিষয়টা। চল তোকে তোর কেবিনে যেতে হবে। তুই এখনো অনেক টা অসুস্থ, এইখানে এইভাবে থাকা ঠিক নয়।”
আরমান— “প্লিজ আবির কিছুক্ষণ একা থাকতে দে আমাকে ওর কাছে।”
আবির কিছু বলল না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরমানের কাঁধে একবার হাত দিয়ে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।
আরমান ঘুরে তাকালো মায়ার শুকিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। আরমান নিজের কাঁপা কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে মায়ার পুরো মুখে স্পর্শ করলো। অসহায় গলায় কিছুটা অভিযোগের সুরে বলল— “কেনো মায়াবতী? কেনো আর একটু অপেক্ষা করলে না? আমি তো সব ঠিক করে দিতাম। একটু বিশ্বাস রাখা যেতো না আমার উপর?”
কথাটা বলেই আরমান নিজের বলা কথাতেই তাচ্ছিল্য হাসলো।
“কিভাবেই বা রাখবে আমার উপর বিশ্বাস? বিশ্বাস রাখার মতো কোনো কাজই তো করিনি আমি। জানি অনেক অনেক ভুল করেছি আমি, কিন্তু দেখো সেই ভুলের শাস্তি এতোটাই কঠিন যে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাও পেলাম না। আজ নিজের ভুলের জন্য নিজের অস্তিত্বকে হারালাম।”
এই পর্যায়ে আরমানের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। আরমান হাত রাখলো অচেতন মায়ার পেটের উপর— “এইখানে, ঠিক এইখানে ছিল আমারই এক অংশ। পারলাম না তাকে রক্ষা করতে। তোমার সাথে করা অন্যায় গুলোর জন্য আজ নিয়তি আমাই এইভাবে শাস্তি দিলো। কিন্তু নিয়তি কি জানে? আমার সাথে সাথে তোমাকেও শাস্তি দিলো? আমি নাহয় দোষ করেছিলাম, ভুল করেছিলাম, অন্যায় করেছিলাম, কিন্তু তুমি তো কোনো ভুল করোনি। তাহলে এমন টা কেনো হলো? সে কি পারতো না আমাদের মাঝে থেকে যেতে?”
আরমানের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিচ্ছে।
“এই মায়াবতী!! চোখ খুলো প্লিজ। আর কতক্ষন এইভাবে ঘুমিয়ে থাকবে? আমার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, বিশ্বাস করো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। জ্বলছে বুকের ভিতরটা। ভীষণ ভাবে জ্বলছে। আমি যে আর পারছিনা।”
আরমান কথা গুলো বলতে বলতে বেডের এক পাশে পড়ে থাকে মায়ার হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে দিলো। ঠিক তখনি আরমান অনুভব করলো মায়ার হাত নড়ছে। ধরফর করে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো আরমান। মায়ার চোখের পাত কাঁপছে। হয়তো এখনি চোখ খুলবে। হুম ধীরে ধীরে মায়া তার চোখ খুলছে। আরমানের চোখে পানি অথচ মুখে হাসি ফুটে উঠলো। চিৎকার করে ডাক দিলো আবিরকে— “আবির!! আবির ডক্টরকে ডাক, মায়ার জ্ঞান ফিরছে।”
আবির দরজার কাছেই ছিলো, ওখানে আরমানের পরিবারের সবাইও ছিল। আরমানের ডাকে ভিতরে প্রবেশ করলো কয়েক জন। আবির গেলো ডক্টরকে ডাকতে।
এদিকে মায়া চোখ খুলে চারপাশ দেখছে ফ্যালফ্যাল চোখে। আরমান ওর হাতটা রাখলো মায়ার মাথায়। স্নেহের সাথে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল আরমান— “মায়া!! তু..তুমি ঠিক আছো? কোথাও কি কষ্ট হচ্ছে?”
আরমানের গলার আওয়াজে মায়া তাকালো ওর দিকে। মায়ার মুখে কোনো অনুভূতি নেই, কেমন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে।
সামিরা— “মায়া আপু! আপু এখন কেমন আছো তুমি? তোমার কি কোনো অসুবিধা হচ্ছে? না! না! এখন আর আপু বলবো না। তুমি তো এখনো আমার ভাবী মনিই আছো। আজকে থেকে আবারো ভাবী মনি বলা স্টার্ট করলাম।”
মায়া তাকালো সামিরার দিকে। কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না। এরপর মায়া রুমে থাকা সকলের দিকে তাকালো, তারপর হঠাৎই ধরফর করে উঠে বসলো ও। এরপর মায়া বেডের এক কোনে গিয়ে বুকের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে গুটিয়ে বসলো। মুখ লুকালো হাঁটুর কাছে।
সবাই মায়ার এমন অপ্রত্যাশিত ব্যাবহারে অবাক হয়ে গেলো। আরমান এগিয়ে গেলো মায়ার কাছে। মায়ার গায়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
আরমান— “কি হলো মায়া, এমন করছো কেন? তোমার কি কোথাও কষ্ট হচ্ছে?”
হঠাৎই মায়া আরমানের হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলো দিলো। অদ্ভুত ভাবে চিৎকার করে উঠল— “নাহ!! নাহ!!”
তখনি ডক্টরের আওয়াজ শোনা গেলো— “প্লিজ সবাই কেবিন টা একটু খালি করুন। এতো জন থাকবেন না, পেশেন্ট এর প্রবলেম হবে।”
ডক্টরের কথায় ধীরে ধীরে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, শুধু রয়ে গেলো, আরমান, আবির, সাবিনা বেগম আর আনজুমা বেগম এবং ডক্টর। বাকি সবাই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কেবিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।
এদিকে আরমান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। মায়া কেমন যেনো অস্বাভাবিক আচারণ করছে। মায়ারা মুখে অতিরিক্ত ভয়ের ছাপ।
(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/
ডক্টর— “আমারা যেটার আশঙ্কা করছিলাম সেটাই হয়েছে। She has lost her memories. আর এটাই স্বাভাবিক। আগেই বললাম, উনার ব্রেনের হিপ্পো ক্যাম্পাস অঞ্চলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আঘাত লাগার কারণে। আর রিপোর্টও এসে গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই উনাকে ড্রাগস দেওয়া হচ্ছিল। আর ওই ড্রাগস টা উনাকে দেওয়া হচ্ছিল উনার স্মৃতি নষ্ট করার জন্যই। অ্যাক্সিডেন্টে আঘাত না লাগলেও কিছুদিন পর উনি এমনিতেই উনার স্মৃতি হারিয়ে ফেলতেন, এই কারণেই এই ড্রাগস দেওয়া। অ্যাক্সিডেন্টে লাগা আঘাত আর এই ড্রাগস দুটোই খুব ভালো ভাবে উনার ব্রেনে ইফেক্ট করেছে, আর যার ফলে উনি মানসিক ভারসাম্য ও হারিয়ে ফেলছেন।”
ডক্টরের বলা কথা গুলো শুনে আরমানের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। সেই সাথে শাহরিয়ার পরিবারের সবাইও ভীষণ বিস্মতি হলো। আরমান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, বেডের এক কোনে, দুই হাঁটু বুকের কাছে জড়ো করে তাতে মুখ লুকিয়ে বসে থাকা মায়ার দিকে।
ওর মায়াবতী ওকে ভুলে গেছে, ভুলে গেছে ওদের বিয়ে, ওদের সম্পর্ক, ওকে গভীর ভাবে ভালোবাসা, সব। সব ভুলে গেছে।
আর সবচেয়ে কঠিন সত্য— ওর মায়াবতী ওকে দেখে ভয়ও পাচ্ছে। আর এই কঠিন সত্যটা নিতে পারল না আরমানের হৃদয়।
সমস্ত শরীর হঠাৎ করে নিস্তেজ হয়ে এল, মনে হল সমস্ত পৃথিবীটা যেন তার বুকের ওপর চেপে বসেছে। ধীরে ধীরে জ্ঞান হারালো আরমান।
————————
অন্যদিকে…
“আমি পেরেছি। কিছুটা হলেও পেরেছি, আরমানকে শেষ করতে। হ্যাঁ! চেয়েছিলাম আরমানের মায়াবতীকে চিরতরে পরপাড়ে পাঠাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরমান ঠিকই তাকে বাঁচিয়ে নিলো।”
কথা গুলো উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে উঠলো ব্যাক্তিটি। এরপরই সেই ব্যাক্তিটি পাগলের মতো হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই বলে উঠলো— “কিন্তু আরমানের বাচ্চা? আরমানের অস্তিত্ব? সেটা তো মিটে গেলো। আরমান তার মায়াবতীকে বাঁচাতে পারলেও বাঁচাতে পারলো না নিজের অস্তিত্বকে। বাঁচাতে পারলো না মায়ার স্মৃতিকে। আরমানের মায়াবতীর স্মৃতি থেকে আরমান ফুরুৎ।”
শেষের কথাটা কিছুটা নাটকিয় ভঙ্গিতে বলল।
“মায়াবতীর মন মস্তিষ্ক থেকে মুছে গেলো আরমান। হা হা হা। এভাবেই.. ঠিক এভাবেই শেষ হতে হবে আরমানকে। এটা তো সবে শুরু। আরো..আরো অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে আরমানের জীবনে। আমি কিছুতেই আরমানকে সুখী হতে দেবো না। একটু একটু করে শেষ করে দেবো আরমানকে। ছিনিয়ে নেবো আরমানের মায়াবতীকে। মায়াবতীর মাঝেই আছে আরমানের প্রাণ ভোমরা। আর সেই প্রাণ ভোমরাকেই শেষ করবো আগে। এতে আরমান নিজে নিজেই শেষ হয়ে যাবে। হা হা হা হা হা।”
_.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._..
কেটে গেছে দু’টি দিন।
আরমান জ্ঞান হারানোর প্রায় ছয় ঘণ্টা পর ধীরে ধীরে চোখ খুলেছিল। প্রথমে চারপাশের সবকিছু যেন অস্পষ্ট, ঝাপসা। পরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল আলো, দেয়ালের রং, মানুষজনের মুখ… শুধু মায়ার নামটিই ছিল আড়ালে বন্দি।
জ্ঞান ফিরলেও শরীর আবারও খারাপের দিকে ঢলে পড়েছিল। এখন কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, ওর ভিতরটা যেন সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ।
মায়ার কথা কেউ তুলতে সাহস করছে না। কারণ ও নিজেই সেই বিষয়ে একটিও শব্দ করেনি। না অভিমান, না অভিযোগ—একটা সম্পূর্ণ শূন্যতা ঘিরে রেখেছে ওকে।
আরমান যেন আর আগের মানুষটা নেই। তার মুখে কোন স্পর্শ নেই অনুভূতির—না দুঃখ, না রাগ, না কান্না… শুধু এক অদ্ভুত নির্জীবতা।
শরীরটাও চোখে পড়ার মতো ভেঙে পড়েছে। পেটানো গড়ন যেন কয়েক রাতেই কেমন নুয়ে গেছে। চোখের নিচে জমেছে ক্লান্তির কালো ছায়া।
সেভ না করার কারণে গালে জমে উঠেছে একরকম এলোমেলো, অগোছালো দাঁড়ির রেখা। যেন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বড় হয়েছে, ঠিক যেমন করে বেড়েছে আরমানের ভেতরের তীব্র নিঃসঙ্গতা।
এই আরমানকে দেখে মনে হয় না, এটা সেই আগের গম্ভীর রগচটা জেদী আরমান শাহরিয়ার ।
এই আরমান… যেন ভাঙা আয়নায় প্রতিফলিত এক অচেনা ছায়া। নিঃসঙ্গ, নিঃশব্দ, নিঃপ্রাণ।
এই দুই দিন আরমান হাসপাতালে নিঃশব্দে কাটালেও আর কিছুতেই এখানে থাকতে রাজি নয় ও। আজকেই বাড়ি ফিরতে চাই। বাকি চিকিৎসা ও বাড়ি থেকেই করাবে। আর কেউ ওকে রাজি করাতে পারেনি হাসপাতালের থাকার জন্য। ডিসচার্জ এর সমস্ত ব্যাবস্থা হয়ে গেছে।
——————
হুইলচেয়ারে বসে ধীরে ধীরে শাহরিয়ার ম্যানশনের মূল ফটক পেরিয়ে এলো আরমান শাহরিয়ার। নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল চারপাশে।
সকলের চোখ জলে ভিজে উঠল। কেউ কখনো কল্পনাও করেনি যে, এই চিরদম্ভী ছেলেটিকে এভাবে হুইলচেয়ারে ফিরতে হবে। এই দৃশ্যটা যেন কাউকে বিশ্বাস করাতে চাইছে না— তবুও এটাই বাস্তব।
সাবিনা বেগম ছুটে এলেন ছেলের কাছে। তাঁর কণ্ঠে মাতৃত্বের ছোঁয়া, কাঁপা হাতে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
“আব্বু… কষ্ট হচ্ছে না তো?”
আরমানের কণ্ঠ ছিল নিঃসাড়, অনুভূতিহীন—
“নো, মম।”
চোখের কোণে জমে থাকা জল মুছে নিয়ে সাবিনা বেগম আবার বললেন,
“আমি আর তোর ছোট্ট আম্মু, দুজনে মিলে তোর জন্য রান্না করেছি। সব তোর পছন্দের। তেল-মশলাও কম দিয়েছি। খাবি চল।”
আরমান শুধু তাকিয়েই বলল—
“এখন না, মম… একটু পর।”
ঠিক তখনই বেজে উঠল দরজার কলিং বেল।
রুবি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো দেখে মুহূর্তেই ঘরের বাতাস পাল্টে গেল। শাহরিয়ার পরিবারের সকলের মুখে বিস্ময়ের ছায়া, শুধু বাদ আরমান ও আবির।
পুলিশ।
বাড়ির ভেতরে দৃঢ় পায়ে প্রবেশ করল কয়েকজন পুলিশ অফিসার।
আরমানের বাবা চমকে উঠে বললেন,
“এ কী! বাড়িতে পুলিশ কেন?”
একজন অফিসার গম্ভীর গলায় উত্তর দিলেন,
“অপরাধী যেখানে থাকবে, পুলিশ তো সেখানে যাবেই, মিস্টার শাহরিয়ার।”
ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আনোয়ার শাহরিয়ারের।
“অপরাধী! এই বাড়িতে?”
আবির এগিয়ে এসে দৃপ্ত কণ্ঠে বলে উঠল,
“হ্যাঁ আঙ্কেল, অপরাধী। মায়ার অপরাধী। সেই ব্যক্তি যিনি দিনের পর দিন মায়াকে ড্রাগস খাইয়ে স্মৃতি লোপ করিয়ে দিচ্ছিলেন। অফিসার, অ্যারেস্ট করুন তাঁকে।”
সঙ্গে সঙ্গে আবির একটি নির্দিষ্ট দিকে আঙুল তুলল।
সবাই ঘুরে তাকাল সেই দিকেই। সোজা গিয়ে থেমে গেল দৃষ্টির রেখা—মিসেস মুনজিলা বেগমের উপর।
হ্যাঁ, মাইশার মা।
মুনজিলা বেগম চমকে উঠলেন। মুখ কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। হঠাৎ জড়িয়ে পড়া কণ্ঠে বলতে লাগলেন—
“আ… আমি কিছু করিনি। আবিরা, তুমি মিথ্যে বলছ। আমি ড্রাগস দিইনি মায়াকে। বিশ্বাস করো…”
চারপাশের মানুষ নির্বাক। কারও ঠোঁট কাঁপছে, তো কেউ চোখের পলক বার বার ঝাপটাচ্ছে। বাড়ির সমস্ত সার্ভেন্ট গুলোও উপস্থিত হয়েছে ড্রয়িংরুমে।
আরমান তখন নিস্পৃহ গলায় বলে উঠল—
“আবির, প্লিজ… তাড়াতাড়ি এই নাটক শেষ কর। শরীর ভালো নেই। মাথা ধরেছে খুব।”
তখনই এক পুলিশ অফিসার এক মহিলা কনস্টেবলকে চোখের ইশারা করলেন।
কনস্টেবলটি এগিয়ে গেল।
সবাই মনে করল, মিসেস মুনজিলা বেগমকেই গ্রেপ্তার করতে এগোচ্ছে সে।
কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে কনস্টেবল টি তাঁকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল, মিসেস মুনজিলা বেগমের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা—মিসেস আনজুমা শাহরিয়ারের দিকে।
তারপর হ্যান্ডকাফ উনার সামনে তুলে ধরে, ঠান্ডা কণ্ঠে উচ্চারণ করল—
“You are under arrest, Mrs. Anjuma Shahriar. মিস্টার আরমান শাহরিয়ারের স্ত্রীকে বেআইনিভাবে ড্রাগস দেওয়ার অপরাধে আপনাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।”
এক মুহূর্তের নিঃস্তব্ধতা যেন সময়কে থমকে দিল।
মাটির সঙ্গে গড়িয়ে পড়ল পারিবারিক বিশ্বাসের ভরসা। সকলেই স্তম্ভিত চোখে তাকিয়ে রইল আনজুমা বেগমের দিকে। কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
আর ঠিক তখনই, সবাইকে আশ্চর্য্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে দিয়ে, আনজুমা বেগম চুপচাপ মাথা নিচু করে দুই হাত মুঠো করে বাড়িয়ে দিলেন কনস্টেবলের দিকে।
কোনো কথার প্রয়োজন ছিল না আর। তার সেই নীরব সমর্পণই যেন স্বীকার করে নিল—অপরাধ, প্রতারণা… এবং এক চিরস্থায়ী বিশ্বাসঘাতকতা।
চলবে….
#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_42
#লেখিকা_সালমা_খাতুন
🚫 হ্যাশট্যাগ ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫
আনজুমা বেগমের নীরব আত্মসমর্পণে সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়ান উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে এলো আরমানের কাছে।
আয়ান— “ভাইয়া!! ভাইয়া তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। এটা! এটা কিছুতেই হতে পারে না। আম্মু কেনো এমন কাজ করবে?”
আরমান গম্ভীর গলায় বলল— “সেটা তো তোর আম্মুই ভালো জানবে আয়ান।”
এতোক্ষণে আনজুমা বেগমের হাতে হাতকড়া পড়ানো হয়ে গেছে। উনি তখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিশ্চুপ ভঙ্গিতে। আয়ান ওর আম্মুর কাছে গেলো, ওর আম্মুর হাতের দুই বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, “ও আম্মু! তুমি কিছু বলছো না কেন? বলো না প্লিজ যে তুমি এমন কাজ করো নি।”
আনজুমা বেগমের অনুভূতি হীন গলায় বললেন— “আমি এটা করেছি আয়ান।”
আনজুমা বেগমের কথা টা শুনে আয়ান চমকে উঠে দুই পা পিছিয়ে গেলো। অবাক চোখে তাকালো ওর আম্মুর দিকে।
সামিরা ছুটে এলো আরমানের দিকে। দুই চোখ অশ্রুতে টইটম্বুর— “নাহ ভাইয়া! এটা হতে পারে না। কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। ছোট আম্মু এমন কাজ করতে পারে না, ছোটো আম্মু তো ভাবী মনিকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে।”
আরমান কিছু বললো না শুধু ইশারা দিলো আবিরের দিকে। আবির আগেই রুবিকে দিয়ে আরমানের ল্যাপটপ আনিয়ে রেখেছিল। সেটা নিয়েই আবির কিছু ঘাটাঘাটি করে একটা ফুটেজ বের করে চালিয়ে দিলো। যেখানে দেখা যাচ্ছে আনজুমা বেগম কিছু একটা মিশিয়ে দিচ্ছে দুধের সাথে। এই রকম অনেক ফুটেজ আছে একেক দিনের।
রুবি কিছুটা আমতা আমতা করে বলল— “আসলে, ভাবী মনি প্রথমবার যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল উনার বাবা মারা যাওয়ার পর, তখন উনাকে হসপিটাল থেকে আনার পর স্যার আমাকে অর্ডার দিয়েছিল ভাবী মনি কে যেনো প্রতিদিন দুধ নিজে দাড়িয়ে থেকে খাওয়াই। ছোট্ট আম্মুও জানতেন বিষয়টা, উনিই প্রতিদিন দুধ গরম করে দিতেন আমাই। আমি একদিন দেখেছিলাম ওই ওষুধ টা মিশাতে, ছোটো আম্মুকে জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন এই ওষুধ নাকি ডক্টর দিয়েছে ভাবী মনি কে খাওয়ানোর জন্য।”
বাড়ির সবাই মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আরমানের বিয়ে উপলক্ষে আসা, ওদের কাছের আত্মীয় গুলো এখনো রয়ে গেছে। সবার জানামতে এই বাড়ির মধ্যে ছোটো আম্মুই সব থেকে বেশি মায়াকে ভালোবাসতো, আর উনিই এমন ক্ষতি করলেন মায়ার সেটা বিশ্বাসই করা যায় না।
একজন অফিসার বললেন, “উনার রুম টা একটু সার্চ করতাম। নিশ্চিত ওই ড্রাগস উনার রুমেই পাওয়া যাবে।”
কিছু জন সাই জানালো অফিসারের কথায়। আবির পুলিশ অফিসার গুলোকে নিয়ে গেলো আনজুমা বেগমের রুমে। পিছু পিছু বাড়ির মানুষ গুলোও গেলো কৌতূহল দমাতে না পেরে। আর সার্চ করতেই সেই ড্রাগস পাওয়া গেলো আনজুমা বেগমের বেডের পাশে রাখা টেবিলের ড্রয়ারে।
মিসেস সাবিনা বেগমের চোখেও পানি চলে আসলো, “যেই দিন থেকে তুই এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিস, সেই দিন থেকে তোকে নিজের বোনের চোখে দেখেছি। এতো কিছুর পরও বিশ্বাস করতে পারছি না যে তুই এই কাজ করেছিস। প্লিজ সত্যি টা বল বোন আমার, কেনো করলি এমন?”
আনজুমা বেগম মুখ তুলে তাকালেন সাবিনা বেগমের দিকে। মুখে নেই কোনো অনুতাপের ছাপ। বললেন— “মায়া! যাকে আমরা আরমানের বিয়ের আগে চিনতামও না। সেই মায়ার নামে বাবা এই শাহরিয়ার পরিবারের সমস্ত সম্পত্তির ভাগ দিয়ে গেছে। ঠিক যতটা ভাগ আরমান, আয়ান, সামিরা পাবে ঠিক ততটা মায়াও পাবে। মারা যাওয়ার আগে এই উইল করে গেছেন উনি। তাহলে আমার ছেলের হবু বউ কি দোষ করলো? তার নামে কেনো সম্পত্তির ভাগ দেওয়া হলো না? উইল এ এটাও উল্লেখ আছে, আরমান যদি মায়াকে ডিভোর্স দেয় তাহলে আরমান এই বাড়ির সম্পত্তিতে কোনো ভাগ পাবে না। আর হ্যাঁ আমি জানতাম মায়াই সেই মেয়ে যাকে আরমান পাগলের মতো খুজে বেড়াচ্ছে। তাই চেয়েছি মায়া সব কিছু ভুলে যাক। আরমান যেনো মায়াকে কখনো না পাই। সবকিছু আমি করেছি, হ্যাঁ সবকিছু আমি আমি করেছি। নিজের স্বার্থের জন্য এই সবকিছু করেছি আমি। আরমান এই সম্পত্তির ভাগ না পেলে পুরো সম্পত্তি হবে আমার ছেলের, আর আমি চেয়েছিলাম মায়ার সাথে আয়ানের বিয়ে দিতে।”
কথা গুলো বলে শেষ করতেই, আয়ানের বাবা মানোয়ার সাহেব সজোরে একটা থাপ্পড় মারলেন মিসেস আনজুমা বেগমের গালে। তবুও উনি নির্জীব পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আনজুমা বেগমের কথা গুলো, ড্রয়িং রুমে থাকা প্রতিটা মানুষের কানে ঝঙ্কার তুললো যেনো। সামনের মানুষ টি যেনো আনজুমা বেগম নয়, উনার রুপে থাকা অন্য কেউ। সাবিনা বেগম ধপ করে বসে পড়লেন সোফায়। চোখে মুখে এখনো বিস্ময়। আর আয়ান সে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে, মাথা নিচু করে।
মানোয়ার সাহেব— “জীবনে এই প্রথমবার তোমার গায়ে আঘাত দিলাম। বিশ্বাস করো একটুও খারাপ লাগছে না। তুমি এতোটা স্বার্থপর কবে হলে আনজুমা? তুমি তো এমন ছিলে না।”
আরমানের ফুপি বলে উঠলো, “সত্যি ভাবী, তোমার মনে এই ছিল? এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। ছিঃ তোমার মন মানসিকতা যে এতোটা নিচু কখনো ভাবতেও পারিনি। আরে শুধু তো উইল করা আছে এখনো সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাইনি, বললেই পারতে যে তোমার আয়ানের বউয়ের নামেও ভাগ লাগবে, তাহলেই তো হয়ে যেতো।”
আরমানের দূর সম্পর্কের এক চাচী বলে উঠলো, “ আরে আনোরা, তুমি বুঝতে পারছো না। ভাবী তো নিজের মুখেই বলল, উনি তো আরমানকে নিঃস্ব করতে চেয়েছিল। ভাবী তো চেয়েছিল আরমান আর মায়াকে আলাদা করতে, এতে আরমানের এই বাড়ির সমস্ত সম্পত্তি থেকে অধিকার উঠে যাবে।”
(আনোরা আরমানের ফুপির নাম। আনোয়ার আর মানায়োর শাহরিয়ার এর মেঝো বোন আনোরা শাহরিয়ার)
এইভাবে অনেকেই অনেক কিছু বলে আনজুমা বেগমকে কথা শুনাতে লাগলেন। কিন্তু উনি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উনার মুখে না আছে অনুশোচনার ছাপ আর না আছে কষ্টের ছাপ।
একজন অফিসার বলে উঠলেন— “মিস্টার শাহরিয়ার! অনুমতি দিলে আমরা উনাকে নিয়ে যেতাম। আমাদের দেরি হচ্ছে।”
কেউ কিছু বলার আগেই আনোয়ার সাহেব বলে উঠলেন, “নিয়ে যান, নিয়ে যান। প্লিজ তাড়াতাড়ি ওকে এখান থেকে নিয়ে যান। সহ্য হচ্ছে না আর, ওর মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে এখান থেকে নিয়ে যান, আর চেষ্টা করবেন যেনো অনেক কঠিন শাস্তি হয়।”
উনার কন্ঠে ছিল এক অজানা কষ্ট। মুখে রাগ থাকলেও চোখে ছিল পানি। আর সেই পানি আড়াল করতে উনি আর এখানে দাঁড়ালেন না। নিজের ঘরে চলে গেলেন।
অফিসার তাকালো আরমানের দিকে, আরমান তার চোখের ভাষায় অনুমতি দিলো। অফিসার ও মেয়ে কনস্টেবল টিকে আদেশ দিলেন আনজুমা বেগম কে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কনস্টেবল টি উনার এক হাত ধরে এগিয়ে গেলো, উনিও কনস্টেবল টির সাথে পা মিলিয়ে এগিয়ে গেলেন নির্দ্বিধায়। এরপর বাড়ির মেন দরজাটার কাছে গিয়ে উনি হঠাৎই থেমে গেলেন। পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে এক বার পুরো বাড়ি এবং বাড়ির মানুষ গুলো কে দেখে নিলেন, কেউ অসহায় চোখে তাকিয়ে তো কেউ ঘৃণার চোখে। এতোক্ষণে উনার দুই চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সেই চোখের পানি লুকাতে উনি তাড়াহুড়ো করে সামনে ফিরে হাঁটা ধরলেন।
———–
আবির আরমানের হুইল চেয়ার ঠেলে এগিয়ে গেলো লিফটের দিকে। শাহরিয়ার ম্যানশনে লিফটের ব্যাবস্থাও আছে, তাই আরমানের কোনো অসুবিধা হবে না উপরে নিজের রুমে যেতে।
আবির আরমানকে নিয়ে দোতলায় একটা রুমের সামনে দাঁড়ালো। রুমের দরজাটা হালকা ভেড়ানো ছিল, রুবি সেটা ধীরে ধীরে খুলল, নিঃশব্দে। আর আবির আরমানকে নিয়ে প্রবেশ করলো সেই রুমে। আর সামনের দৃশ্য দেখে আরমানের বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠলো। মনে হচ্ছে ওর হৃদয়ে কেউ যেনো আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, আর সেই আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে ওর হৃদয়।
মায়া শুয়ে আছে ফ্লোরে, হাত পা গুটিয়ে। চুল গুলো এলে মেলো। পরনের জামাটা কিছু জায়গায় ছেঁড়া। শরীরে কিছু জায়গায় আঘাতের দাগ।
আরমানের মাথা ঘুরে উঠলো যেনো মায়ার অবস্থা দেখে। আরমান কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “আ..আমার মায়ার এ..এই অবস্থা কেনো? তোরা ওর খেয়াল রাখিসনি? আঘাত করেছিস তোরা আমার মায়াবতীর শরীরে?”
শেষের কথটা রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেসা করলো আরমান।
তৎক্ষণাৎ সামিরা বলে উঠলো, “না ভাইয়া তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভাবী মনি চিৎকার করে, নিজেকে নিজেই আঘাত করে, আর আজ সকালেই আমি আর রুবি আপু ভাবী মনির জামা টাও পাল্টিয়ে দিয়েছিলাম, ভাবী মনি নিজেই আবার জামাটা ছিঁড়েছে। আর আমরা ভাবী মনিকে বিছানাতেই শুয়েই দিয়ে গিয়েছিলাম।”
সবার গলার আওয়াজে মায়া চমকে উঠলো। ধরফর করে উঠে বসে দেওয়ালের এক কোণে গিয়ে লেগে গেলো। মুখ লুকালো হাঁটুর ভাঁজে।
এই দৃশ্য দেখে আরমানের বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ওর মায়াবতী ওকে দেখে ভয় পাচ্ছে। এটা ওর একদমই সহ্য হচ্ছে না।
মায়া ভয়ে ভয়ে মুখ তুলে একবার করে সবার দিকে তাকাচ্ছে, তারপর আবার মুখ লুকাচ্ছে। আরমান নিজেই ওর হুইল চেয়ার এর চাকাটা এক হাত দিয়ে ঘুরিয়ে এগিয়ে গেলো মায়ার কাছে। তারপর ওর কাঁপা কাঁপা হাতটা রাখলো মায়ার মাথার উপর। আর সাথে সাথে মায়া আরমানের হাত টা ঝটকা দিয়ে ফেলে দিলো।
আরমান নিচু কন্ঠে অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করলো, “মায়াবতী!”
আরমানের কথাটা হয়তো মায়ার কানে গেলো। ও আরমানের দিকে মুখ তুলে তাকালো। মায়াও বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো, “মায়াবতী।”
(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/
আরমান অবাক হলো, ওর উচ্চারণ করা শব্দ মায়াও উচ্চারণ করলো এটা শুনে। সামিরা এগিয়ে এলো ওদের দিকে। বলল— “ভাবী মনি মাঝে মাঝেই একদম একটা স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করে। আবার হঠাৎ করেই ভীষণ অস্বাভাবিক আচারণ করে। নিজের চুল দুই হাতে খামচে ধরে, নিজেকে আঘাত করে। কিন্তু কখনো অন্য কাউকে আঘাত করে না। স্বাভাবিক আচরণ করার পর আবার সেই ঘটনা গুলো ভুলেও যাই। মনে রাখতে পারে না কিছু।”
আরমান তাকালো আবিরের দিকে। আবির বুঝে গেলো আরমানের মনের কথা। আবির বলল, “ডক্টর ক্যামেলিয়া ডিসুজা হয়তো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি উনাকে। উনি স্পেশালি মায়ার জন্যই এই দেশে আসছেন, নিজের সমস্ত সিডিউল চেঞ্জ করে।”
মিসেস সাবিনা বেগম এগিয়ে এলেন মায়ার দিকে। উনি মায়ার গায়ে থাকা ওরনাটা নিয়ে ভালো করে জড়িয়ে দিলেন। তারপর বললেন, “ আম্মু! উঠো, চলো।”
মায়া ফ্যালফ্যাল চোখে চাইলো উনার দিকে। বোকার মতো তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলো, “কোথায় যাবো?”
সাবিনা বেগম— “ওয়াশরুমে আম্মু। জামাটা পাল্টাতে হবে তো, দেখো এগুলো ছিঁড়ে গেছে।”
মায়া আবারও বোকা বোকা গলায় প্রশ্ন করলো, “কিভাবে ছিঁড়ল?”
সাবিনা বেগম মিথ্যা রাগ দেখিয়ে পাশে থাকা সামিরাকে মারতে মারতে বলল, “এই যে, এই দুষ্টু মেয়েটাই ছিঁড়ে দিয়েছে।”
সামিরাও ওর মমের সাথে সাই দিয়ে মিথ্যা অভিনয় করলো। “আহ! মম লাগছে তো। উফ! ব্যাথা পাচ্ছি আমি।”
মায়া সামিরাকে মারতে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো, “হ্যাঁ ও দুষ্টু। আম্মু ও দুষ্টু।”
সাবিনা বেগম থমকে গেলেন, মায়ার মুখে আম্মু ডাক শুনে। সেই সাথে রুমে থাকা সবাইও অবাক হলো। সবাই মায়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আর মায়া সে তো নিজের মনে হেসে যাচ্ছে।
সাবিনা বেগম— “তুমি আমাই আম্মু ডাকলে মায়া?”
নাহ মায়া যেনো উনার কথা শুনতেই পেলো না। মায়াতো নিজের দুনিয়ায় ব্যাস্ত। এদিকে সাবিনা বেগমের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। মনে পড়ে গেলো সেই দিন গুলোর কথা, উনি কতই না খারাপ ব্যাবহার করেছিলেন এই মেয়েটার সাথে। আর মায়া সব মুখ বুজে সহ্য করেছে। উনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন, অনেক বার মাফ চেয়েছে মায়ার থেকে। কিন্তু উনি হয়তো ক্ষমার অযোগ্য, তাই তো ভাগ্যের এই নিষ্ঠুর খেলায় মায়া বুঝেইনি, মাফ চাওয়া, মাফ করা, এগুলো কাকে বলে। সৃষ্টিকর্তা ওদের মা ছেলেকে মায়ার থেকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাই দিলো না। মায়া এখন এক অবুঝ বাচ্চার মতো। আর এই মেয়েটাই হচ্ছে আরমানের প্রাণ ভোমরা।
হঠাৎই করেই পাল্টে গেছে সাবিনা বেগম। সবাই উনার এমন পরিবর্তনে ভীষণ অবাক, সেই সাথে খুশিও। মায়ার সাথে উনি এখন নিজের মেয়ের মতোই ব্যবহার করে। এই দুই দিন উনি নিজ দায়িত্বে মায়ার সমস্ত খেয়াল রেখেছে। মায়ার দুই হাত ধরে চোখের পানি ফেলে অনেক বার ক্ষমা চেয়েছে ওর থেকে, নিজের করা ভুল গুলোর জন্য। কিন্তু অবুঝ মায়া কিচ্ছু বুঝেনি। শুধু ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থেকেছে উনার দিকে।
সাবিনা বেগম নিজের চোখের পানি মুছে বললেন, “আবির! যাও আরমানকে ওর রুমে নিয়ে যাও। ওকে ফ্রেস হতে সাহায্য করো। আমি মায়াকে ফ্রেশ করিয়ে দিই, তারপর দুজনকেই খেতে দেবো। আর আরমানের জন্য রাখা নার্স ও চলে আসবে এতোক্ষণে।”
আরমান বিরক্ত গলায় বলল, “নো মম। আমার কোনো নার্স লাগবে না। আবির আছে, রুবি আছে, তোমারা তো সবাই আছো। আমার এমনিতেই ভালো লাগে না নিজের রুমে অন্য কারো উপস্থিতি।”
সাবিনা বেগম বললেন, “কিন্তু আব্বু! তোমাকে তো বুঝতে হবে, তুমি এখন স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তুমি অসুস্থ।”
আরমান বিরক্ত গলায় বলল, “তবুও মম, আমার কোনো নার্স লাগবে না। আবির আমি যেনো ওই নার্স টার্স আমার রুমে না দেখি।”
হঠাৎ করেই মায়া নিজেকে সাবিনা বেগমের পিছনে লুকিয়ে নিলো। তারপর উঁকি দিয়ে তাকালো আরমানের দিকে। সবাই বুঝলো মায়া হয়তো আরমানকে দেখে ভয় পাচ্ছে। মিসেস সাবিনা বেগম মায়াকে ধরে বলল, “চলো আম্মু।”
মিসেস সাবিনা বেগম মায়াকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন ওয়াশরুমের দিকে। মায়া যেতে যেতে একবার করে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে আরমানের দিকে।
তা দেখে আরমানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু হাসিটা খুশির ছিল না ছিল দুঃখে কষ্টে ভরা।
—————-
সময়টা সন্ধ্যার দিকে…
আরমান ওর রুমের ব্যালকনিতে বসে আছে। ব্যালকনিটা অন্ধকারে আবৃত। ঠিক যেমন আরমানের জীবনটা।
পাশের রুম থেকে মায়ার আর্তনাদ ভেসে আসছে। পাগলের মতো চিৎকার করছে মায়া। সামিরা, রুবি, সাবিনা বেগম সবাই চেষ্টা করছে মায়াকে শান্ত করার।
আরমান আজ সবকিছু পেয়েও হারালো যেনো। আরমানের চোখে অশ্রু, হ্যাঁ! এই শক্ত পোক্ত গম্ভীর কাঠখোট্টা মানুষটার চোখ এখন যখন তখন ভিজে উঠে। কিছুতেই বাঁধ মানতে চাই না। নিজের এই পরিবর্তনে তাচ্ছিল্য হাসে আরমান, নিজের উপরেই। মনে পড়ে যাই সেই আগে মায়ার সাথে করা খারাপ ব্যাবহার গুলো, ওকে দেওয়া কষ্ট গুলো। কিন্তু ওই বা কি করবে? ও যে নিজের অনুভূতি কিভাবে প্রকাশ করতে হয় জানত না। শুধু মনে হতো, মায়া ওর। মায়ার উপর শুধু ওর অধিকার। আর তাই তো সব সময় শুধু মায়ার উপরে জোড় খাটাতো।
ডক্টর ক্যামেলিয়া ডিসুজা, একজন বিখ্যাত নিউরোলজিস্ট। উনি এসে মায়ার চেকআপ করে গেছে, অনেক গুলো টেস্ট করাতে দিয়েছে। কাল মায়াকে নিয়ে যাওয়া হবে টেস্টের জন্য। মায়ার এই আর্তনাদের কারণ ওর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে, আর সেটা ও সহ্য করতে না পেরে নিজেই নিজেকে আঘাত করছে, পাগলের মতো ব্যাবহার করছে।
মায়ার রুমে…
মায়া ওর মাথার দুই পাশের চুল খামচে ধরে চিৎকার করছে। মাঝে ছুটে যাচ্ছে দেওয়ালের কাছে, মাথা ঠুকার জন্য। সামিরা, রুবি ছুটে গিয়ে মায়াকে আটকাচ্ছে। মায়া ওদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। মায়ার গলা থেকে বেরিয়ে আসছে, কষ্টে ভরা এক আর্তনাদ। সাবিনা বেগম, সামিরা রুবি সবাই চেষ্টা করছে মায়াকে শান্ত করার। কিন্তু কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না মায়া। আরমান নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে শুনতে পাচ্ছে মায়ার এই কষ্টে ভরা আর্তনাদ। মায়ার প্রতিটা চিৎকার যেনো আরমানের হৃদয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ মায়ার চিৎকার থেমে গেলো। ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেলো ও। ওর রুমে একটা গানের আওয়াজ ভেসে আসছে, খোলা ব্যালকনি হয়ে। এক ব্যার্থ প্রেমিকের মনের হাহাকার, যেনো গানের মধ্যে নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে চাইছে—
(গান)
ওরে পোড়া মন, ওরে পোড়া মন
পুড়ে পুড়ে যায় যখন তখন।
ওরে পোড়া মন, ওরে পোড়া মন
জ্বলে পুড়ে ছাই নিজের মতন।
তোকে ছাড়া চলে না, রাতে রাত ঢলে না,
কোনো কথা বলে না এ মন।
আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে
অকুল দরিয়ার মাঝে কুল নাই রে।
আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে
অকুল দরিয়ার মাঝে কুল নাই রে।
মন রে, মন রে, মন রে, মন রে,
মায়া হঠাৎ পাগলের মতো পুরো রুমে ছুটে বেড়াচ্ছে। যেনো খুঁজে বেড়াচ্ছে আওয়াজ টা কোথা থেকে আসছে। সামিরা ওর কাঁধে হাত রাখলো, মায়া থেমে গেলো। এরপর সামিরা মায়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো আরমানের রুমে। তারপর ব্যালকনির কাছে গিয়ে ওর হাতটা ছেড়ে দিলো।
মায়া এখন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সেই গানের আওয়াজ। আরমান খালি গলায় গাইছে সেই গান। ব্যালকনির হালকা ড্রিম লাইট টা জ্বালিয়ে দিলো সামিরা। আর সেই আলোতেই মায়া দেখতে পাচ্ছে আরমান শুয়ে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে আছে কাউচে, ভাঙ্গা পা টা মেলে দিয়ে।
(গান)
সে রোদের আসমানী নীলে,
বেসামাল তুমিও তো ছিলে।
তোকে ছাড়া চলে না, রাতে রাত ঢলে না,
কোনো কথা বলে না এ মন।
আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে
অকুল দরিয়ার মাঝে কুল নাই রে।
আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে
অকুল দরিয়ার মাঝে কুল নাই রে।
মায়া ধীরে পায়ে এগিয়ে গেলো আরমানের দিকে। তারপর একদম আরমানের গা ঘেঁষে বসে পড়লো ফ্লোরেই, কুঁকড়ি হয়ে। কিন্তু আরমান ওর ভালো হাতটা দিয়ে মায়াকে উঠালো গাইতে গাইতেই। তারপর নিজের ভালো পায়ের উরুর উপর বসিয়ে নিলো মায়াকে। ওই পা টা না ভাঙলেও আঘাত লেগেছে, তাই কিছুটা ব্যাথাও অনুভব করলো। কিন্তু এই ব্যাথাই ওর কিচ্ছু যায় আসে না।
ও মায়াকে নিজের কোলে বসিয়ে, এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে, মায়াকে নিজের বুকে চেপে ধরে হেলিয়ে শুয়ে পড়লো কাউচের উপর।
মায়াও আদুরে বিড়াল ছানার মতো আরমানের বুকে লেপ্টে রইলো।
(গান)
সে ঘুমের অতল গভীরে,
আমি চাই তুমি এসো ফিরে ফিরে।
ও.. তোকে ছাড়া চলে না, রাতে রাত ঢলে না
কোনো কথা বলে না এ মন।
আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে
অকুল দরিয়ার মাঝে কুল নাই রে।
আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে
অকুল দরিয়ার মাঝে কুল নাই রে…
আরমানের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। মায়ার মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে স্নেহের পরশ দিলো। মায়া ঘুমিয়ে পড়েছে। একটা অবুঝ শিশুর ন্যায় আরমানের বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে। আরমানের চোখে পানি থাকলেও হৃদয়ে প্রশান্তি।
মায়ার শরীরের পুরো ভর এখন আরমানের উপর। আরমানের আঘাতে ভর্তি শরীরে কষ্ট হলেও, আরমানের কাছে এই কষ্টই যেনো সুখের।
দূর থেকে এই দৃশ্য দেখলেন সাবিনা বেগম ও সামিরা। ওদের চোখেও পানি। সামিরা জড়িয়ে ধরলো ওর মাকে। সাবিনা বেগমও মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। নিজের চোখে পানি মুছে নিলেন। তারপর মেয়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে, রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন মা মেয়ে।
চলবে….