আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব-৪৯+৫০

0
11

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_49
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫 কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

অজ্ঞাত তিন ব্যাক্তি আরমানকে টেনে টেনে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে। আরমানের হাত বাঁধা, চোখও ঢাকা, ছটফট করেও স্বাস্থ্য বান তিন পুরুষের সাথে পেরে উঠছে।

ওরা আরমানকে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসালো, এরপর চেয়ারের সাথে বেঁধে দিলো। বাঁধা হয়ে গেলে, আরমানের মুখের উপর থেকে কাপড় সরালো এক ব্যাক্তি সামনে থাকা মানুষটির ইশারা পেয়ে।

আরমানের চোখ থেকে কালো কাপড় টা সরাতেই, সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো। চোখ বড়বড় করে তাকালো ও। এরপর আসেপাশে থাকা মানুষ গুলির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

“খুব শখ না পালিয়ে বেড়ানোর? এবার কি করবেন মিস্টার আরমান শাহরিয়ার। অবশেষে আপনাকে তো এই মায়ার হাতে ধরা পড়তেই হলো।”

আরমানের তপ্ত হৃদয়ে যেনো এক পশলা বৃষ্টি নামলো। মায়া সুস্থ অবস্থায় ওর চোখে সামনে একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। এটাই যথেষ্ট ছিল ওর হৃদয়কে প্রশান্তি দেওয়ার জন্য। আবিরের ফোন থেকে আসা ম্যাসেজ টা দেখে আরমানের প্রাণ পাখি উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল।

আরমানের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে আবির আর এক পাশে আয়ান। দৃশ্য টা ঠিক এমন যেনো, আরমান একজন বড়ো অপরাধী, তাই তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে চেয়ারের সাথে। আবির ও আয়ান হচ্ছে দুই জন গার্ড, ওরা অপেক্ষা করছে তাদের বসের আদেশ পাওয়ার জন্য। আর তাদের ঠিক সামনে পায়ের উপর পা তুলে একটা চেয়ারে বসে আছে ওদের বস মায়া।

আরমানের মুখ বাঁধা তাই ও মুখে উম উম শব্দ করতে করতে পাশে থাকা আবিরের দিকে রাগী চোখে তাকালো। আবির আরমানের দিকে একবার অসহায় চোখে তাকিয়ে এরপর তাকালো মায়ার দিকে। মায়া ইশারা দিতেই আবির আরমানের মুখের বাঁধন খুলে ফেললো। মুখ খোলা পেতেই প্রথমেই আরমান একটা বড়ো করে শ্বাস নিলো। তারপর অসহায় গলায় বলল, “মায়াবতী ঠিক আছো তুমি? আবিরের ম্যাসেজ দেখে আর একটু হলে আমি হার্ট অ্যাটাক করতাম।”

আরমান এবার আবিরের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “ইডিয়ট! রাস্কেল! স্টুপিড! এমন ম্যাসেজ দিয়েছিস কেন হ্যাঁ? মেরে ফেলার প্ল্যান করেছিলিস নাকি আমাকে?”

আবির ইনোসেন্ট ফেস করে বলল, “আমি দিইনি ভাই। ওই ম্যাসেজ আমার ফোন থেকে মায়া দিয়েছে।”

আবিরের কথা শুনে আরমান অসহায় চোখে তাকালো মায়ার দিকে। মায়া নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আরমানের দিকেই।

“কেনো? কেনো ওই ম্যাসেজ দেখে আর একটু হলে হার্ট অ্যাটাক করতেন আপনি? কে হয় আমি আপনার?”

‘কে হয় আমি আপনার’ কথটা আরমানের হৃদয়ে ধারালো ছুরির ন্যায় বিঁধে গেলো। অসহায় চোখে তাকালো ও মায়ার দিকে।

আরমান:- “মুখে বলাটা কি খুব প্রয়োজন? একটুও কি নিজে থেকে বুঝে নেওয়া যায়া না?”

মায়া:- “নাহ! নিজে থেকে বুঝত চাই না আমি। আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই। আচ্ছা এই কথা পড়ে হবে, আগে বলুন আপনার সেই বিদেশি গার্লফ্রেন্ড কোথায় গেলো?”

আরমান অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করলো, “বিদেশি গার্লফ্রেন্ড? কি সব বলছো? পাগল হয়েছো নাকি?”

মায়া:- “হ্যাঁ এখন নিজেকে বাঁচাতে আমাকে তো পাগল সাজাবেনই। শহর থেকে অনেক টা দূরে এই বাড়িতে এসে, আজ সারাদিন বিদেশি এক মেয়েকে নিয়ে ফূর্তি, মজা করেননি? কি ভেবেছেন কেউ জানতে পারবে না?”

মায়ার কথা শুনে আরমান অসহায় চোখে তাকালো সবার দিকে। তবে এই বাড়ির কেয়ার টেকার রহিমা খালার দিকে চোখ পড়তেই যা বোঝার বুঝে গেলো আরমান।

————

তখন আরমানের অফিসে….

পাগলের মতো হেসে মায়া বলল, “আচ্ছা উনি যদি নিজের বউয়ের মরার খবর শুনে তাহলে নিশ্চয় বাড়ি ফিরবে তাই না।”

কথাটা বলেই আবিরের ফোন টা নিয়ে আরমানের ফোনে আবিরের নামে ওই ম্যাসেজ দেয়। এরপর নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, “চলো বাড়ি চলো এখন।‌ আমার মনে হয় উনি যদি ম্যাসেজ দেখে তাহলে নিশ্চয় ফিরে আসবে।”

এরপর ওরা অফিস থেকে বেরিয়ে পরে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু মায়ার এমন অবস্থা আবিরের মনে দাগ কাটলো ভীষণ ভাবে। কি যেনো ভেবে কল লাগালো মায়া কুঞ্জে থাকা কেয়ার টেকারকে। উনি জানালেন সারাদিন আরমান ওখানেই ছিল, অনেক ক্ষন আগে বেরিয়ে গেছে, তবে বলে গেছে আজ রাতে এখানেই ফিরবে এবং এখানেই থাকবে।

আবির সব কিছু জানালে মায়া ওখানে যেতে চাই। এরপর আবির, সামিরা, রুবি, মায়া, মাইশা, আয়ান সহ সবাই মায়া কুঞ্জে উপস্থিত হয়।

মায়ার ভেতরটা যেন আরও ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, যখন কেয়ারটেকার রহিমা খালার মুখে শুনল—আরমান নাকি সারাদিন এই বাড়িতে একা থাকলেও সন্ধ্যার পর এক বিদেশি মেয়ে হাজির হয় মায়া কুঞ্জে। মেয়েটি যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ তারা ইংরেজিতে কথা বলে—যার একটি শব্দও রহিমা খালা বুঝতে পারেননি। শুধু তাই নয়, সেই মেয়ের জন্যই নাকি বিশেষভাবে নানারকম বাঙালি রান্না করতে হয় রহিমা খালাকে। এরপর রাতের খাবার শেষ করে, তাকে নিয়ে আরমান বেরিয়ে যায় বাইরে।

মায়া এমনিতেই হেড ডিজাইনারকে নিয়ে নিজের মতো করে কল্পনার এক জাল বুনছিল, যার সুতো জড়িয়ে ছিল নানা প্রশ্ন আর অদেখা দৃশ্যে। অথচ রহিমা খালার মুখ থেকে এত কিছু শোনার পর মনে হলো, এই মানুষটিকে সে চেনে কি আদৌ? স্মৃতির ক্যানভাসে আরমানের সাথে তার পরিচয় মাত্র দুই মাসের, অথচ মনে হয়, হাজার জনমের চেনা, অদ্ভুতভাবে আপন। একদিকে তার মন বিশ্বাস করতে চায়, আরমান এমন নয়; অন্যদিকে চোখে দেখা আর কানে শোনা কথাগুলো বুকের ভেতরে তীব্র কষ্টের আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ভেতরটা যেন দাউ দাউ করে পুড়ছে, অথচ কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে—তার হিসেব মিলছে না কিছুতেই। মাথার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে আছে, নিজেই বুঝতে পারছে না সে আসলে কী ভাবছে, আর কী করছে।

রহিমা খালার কথা অনুযায়ী আরমান এই বাড়িতেই ফিরে আসবে। কিন্তু ওর মনে ভয় হয় আবারও আরমান যদি পালিয়ে যায় ওকে দেখে।
তাই রাত দুইটার সময় মায়ার প্ল্যান অনুযায়ী আবির আয়ান এবং রহিমার স্বামী জসিম উদ্দিন, মশার কামড় খেয়েও বসে থাকে গেইটের পাশে ঝোঁপে। এবং আরমান বাড়িতে প্রবেশ করলে সাথে সাথে ওরা হামলে পড়ে আরমানের উপর।

—————–

টি টেবিলের উপর ফলের ঝুড়িতে ফলের সাথে একটা ধারালো ছুরি ছিলো। হঠাৎই সেটা হাতে তুলে নিলো মায়া, এরপর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি টা ধরলো আরমানের গলায়। সবাই আঁতকে উঠলেও আরমান নির্বিকার ভঙ্গিতে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। মায়ার হাত কাঁপছে, চোখ ছলছল করছে, কিন্তু মুখে উচ্চারণ করা কথা গুলো ছিল খুবই দৃঢ়।

“অনেক হয়েছে লুকোচুরি খেলা। আর নয়। আমি সবকিছু জানতে চাই মিস্টার আরমান শাহরিয়ার। শুরু থেকে শেষ অবধি, সব। সবকিছু। কে হয় আমি আপনার? আপনার সাথে কিসের সম্পর্ক? আর আজ এই বাড়িতে আপনার সাথে থাকা বিদেশি মেয়েটি কে ছিল?”

আরমান শান্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো, “বিদেশি মেয়েটি ছিল ডক্টর ক্যামেলিয়া ডিসুজা। উনিই তোমার চিকিৎসা করছেন। তুমিও তাকে খুব ভালো করেই চেনো মায়া। উনি দুইদিনের জন্য এই দেশে এসেছিলেন নিজের কাজে। এতোদিনে উনার সাথে আমার একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আজ উনি ফিরে গেলেন নিজের দেশে। আমি উনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন তোমার ব্যাপারেই, উনার দশটার দিকে ফ্লাইট ছিলো। তার আগে উনি ফ্রি ছিলেন তাই উনাকে আমি এই বাড়িতেই ডেকে নিয়েছিলাম। এরপর তোমার ব্যাপারেই কথা হয়েছে উনার সাথে। ডিনার করে উনাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম। রহিমা খালা তো বাড়িতেই ছিল সারাদিন, জিজ্ঞাসা করো উনি কি কখনো দেখেছে আমাদের দুজনকে একসাথে রুমে যেতে?”

আরমান তাকালো রহিমা খালার দিকে। মায়াও তাকালো। রহিমা খালা মিনমিন করে বললেন, “হ্যাঁ মানে স্যার আর উনি সারক্ষণ এই সোফাতেই বসে কথা বলছিলেন। এরপর রাতের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ থেকেই উনারা বেরিয়ে যায়।”

মায়া তখনো শক্ত ভঙ্গিতে আরমানের গলায় ছুরি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ও বলল, “কি প্রমাণ আছে যে ওটা ওই ডক্টর ক্যামেলিয়াই ছিলেন।”

আরমান তাকালো মায়ার দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আবির! আমার ল্যাপটপ অন করে এই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ গুলো বের কর।”

আবির আরমানের কথা মতো ল্যাপটপ অন করে ড্রয়িংরুমের সিসিটিভি ফুটেজ দেখালো। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ডক্টর ক্যামেলিয়া। এবার মায়া ছলছল চোখে তাকালো আরমানের দিকে। কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো, “আ..আর আপনার সাথে কিসের সম্পর্ক আমার?”

যদিও মায়া জানে আরমানের সাথে ওর কিসের সম্পর্ক কিন্তু তবুও আরমানের মুখ থেকে শুনতে চাই। জানতে আরমানের অনুভূতি।

আরমান কিছু বলবে তার আগেই ও ভ্রু কুঁচকে তাকালো মায়ার পিছনে থাকা সামিরা আর আবিরের দিকে, ওরা দুইজন কি যেনো ঈশারায় বলতে চাইছে।

মায়া আরমানকে এইভাবে পিছনে তাকাতে দেখে ও নিজেও ঘুরে তাকালো। সাথে সাথে সামিরা ঘুরে অন্য দিকে চলে গেলো, ভাবটা এমন যেনো কিছুই হয়নি। আর আবির বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলল, “বল! বল! কিসের সম্পর্ক তোর ভাবী মনির সাথে?…না মানে মায়ার সাথে।”

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

ভাবী মনি বলার সাথে সাথে মায়া চোখ রাঙিয়ে তাকালো আবিরের দিকে।

আরমান গম্ভীর গলায় বলল, “তোমার সাথে আমার একজন বস এবং স্টাফের সম্পর্ক। আগে তুমি আমার কম্পানিতে জব করতে।”

মায়া অবাক হলো। তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “বাহ এখন আবার বাড়ির কাজের লোক থেকে কম্পানির স্টাফ ও হয়ে গেলাম। আর কি কি বাকি আছে আমার জানার?”

আরমান অবাক হলো মায়ার কথা শুনে। ও চোখ লাল করে তাকালো সামিরা আবির আর আয়ানের দিকে। সামিরা তাড়াহুড়ো করে বলল, “আমি বলিনি, ওই কথা আবির ভাইয়া বলেছে।”

আরমান আবিরের দিকে এমনে তাকালো যেনো ওকে ওই চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দেবে। আবিরের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। ও কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো। আর এদিকে মায়া আবারও তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “তার মানে তখন কার বলা আবিরের ভাইয়া কথা টা মজা ছিল না, তাই তো সামিরা?”

সামিরা থতমত খেয়ে গেলো। কি বলবে ও নিজেও বুঝতে পারলো না।

মায়া:- “কি হলো বলুন? আমি আপনার বাড়ির কাজের লোক ছিলাম?”

আরমান:- “যদি না বলি, তবে কি এই ছুরিটা দিয়েই শেষ করে দেবে আমায়? দোহাই লাগে এতোটা নিষ্ঠুর হয়ো না… আমার এখনো কিছু স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেছে, আমি আমার অর্ধাঙ্গিনীকে বুকে জড়িয়ে হাজার বছর বাঁচার। তাকে নিয়ে একটা ছোট্ট সংসার গড়বো, যেখানে প্রতিটা সকাল শুরু হবে ওর হাসিতে, আর প্রতিটা রাত শেষ হবে ওর বুকে মাথা রেখে।”

মায়ার কেনো জানি মনে হলো আরমান হেঁয়ালি করছে ওকে নিয়ে। কিচ্ছু ভাবতে পারছে না ও। আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না। ও তখনো আরমানের গলায় ছুড়ি ধরেছিল হঠাৎ সেই ছুঁড়ি নিজের গলায় ধরলো।

“ওহ! আপনাকে শেষ করে দিলে আপনার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে। আপনার অর্ধাঙ্গিনীকে বুকে জড়িয়ে হাজার বছর বাঁচতে চান? তাহলে আমি নিজেকেই শেষ করে দিই? আমি তো আপনার অফিসের স্টাফ তাই না? আমি আপনার বাড়ির কাজের লোক? সেই কাজের লোককে আবার মায়াবতী বলেও ডাকা যায়? তার চিকিৎসার জন্য স্পেশাল করে বিদেশ থেকে ডক্টরও আনা যায়? এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলবেন না তাই তো? ঠিক আছে বলতে হবে না। একজন বাড়ির কাজের লোক যদি আত্মহত্যা করে তাহলে নিশ্চয় কোনো যায় আসবে না আপনার?”

ওখানে থাকা প্রত্যেকটা ব্যাক্তি আঁতকে উঠলো। এতোক্ষণ আরমানের গলায় ছুরি ধরে থাকলেও কেউ অতটা গুরুত্ব দেয়নি, কারণ সবাই জানে মায়া আরমানের কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু মায়া যে নিজের ক্ষতি করবে করবে না এটার কোনো গ্যারান্টি নেই।

আরমান বিচলিত গলায় চিৎকার করে উঠলো, “মায়া! কি পাগলামো শুরু করেছো হ্যাঁ? দেখো ছুঁড়ি টা অনেক ধারালো প্লিজ ওটাকে ফেলো! পাগলামো করো না।”

আরমান এবার আবির দের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোরা এভাবে হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ওকে আঁটকা। আরে কেউ আমার হাতের বাঁধন টা তো খুলে দে প্লিজ।”

মায়া:- “না কেউ এগিয়ে আসবে না আমার দিকে। আমি কিন্তু সত্যি সত্যি নিজেকে শেষ করে দেবো।”

কথটা বলেই মায়া ছুঁড়ি টা হালকা করে চাপ দিলো গলায়। সাথা সাথে গলার নরম চামড়া কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো। মায়া ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিলো। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।

আরমান:- “মায়াআআ!!”

মাইশা:- “প্লিজ মায়া বোন আমার, ওটা ফেলে দে। এমন করিস না। তুই তো সব কিছু জেনেই গিয়েছিস তাও কেনো এমন পাগলামো করছিস?”

মায়া:- “হুম আপু, জেনে গিয়েছি। জানানো হয়নি। আর এখনো উনি সব কিছু লুকাতে চাইছে আমার থেকে।”

আবির:- “প্লিজ মায়া। তুমি না আমার সোনা বনু? প্লিজ ওটা ফেলে দাও।”

এদিকে সামিরা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “প্লিজ ভাবী মনি ওটা ফেলে দাও আমার ভয় লাগছে তো।”

মায়া সামিরার হঠাৎ এমন কান্না দেখে ওর দিকে মনোযোগ ঘুরে গেলো। ও কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই কেউ একজন ওর হাত থেকে ছুঁড়ি টা কেড়ে নিয়ে ছুরে ফেলে দিলো। আর তারপরই ঠাসস!! করে একটা থাপ্পর পড়লো মায়ার গালে। মায়া আচমকা চড়ের ধাক্কা সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ে গেলো ফ্লোরে। তারপর মুখ তুলে তাকালো ধীরে ধীরে। আরমান দাঁড়িয়ে আছে অগ্নিমূর্তি রুপ ধারণ করে। চোখ দিয়ে যেনো আগুন বর্ষণ হচ্ছে।
“আর কত, হ্যাঁ? আর কতটা সহ্য করবো আমি? আর কতবার এভাবে তিলে তিলে কষ্ট দেবে আমায়? এর চেয়ে বরং ওই ছুরিটা একেবারে আমার বুকে গেঁথে দাও। অন্তত সেই ব্যথাটা হবে শেষ ব্যথা…যেটা দিয়ে সব কষ্ট একসাথে মুছে যাবে।”

আরমান নিজের কথা শেষ করেই ধপ করে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল ফ্লোরে। আর মায়া ভেঙে পড়ল বুকফাটা কান্নায়। মায়ার মনোযোগ সামিরা দের দিকে ঘুরে যেতেই আয়ান আর রহিমা খালা মিলে তাড়াহুড়ো করে আরমানকে চেয়ার সাথে বাঁধন থেকে মুক্ত করে দেয়।

মায়া অসহায় গলায় বলে, “আমি তো কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি,” ভাঙা গলায় বলল মায়া, “শুধু চেয়েছি আমার জীবনের ধোঁয়াশায় মোড়া সেই অধ্যায়টা জানতে—যেটা আমাকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়। কেন এত কষ্ট পান আপনি? শুধু সেটুকুই জানতে চেয়েছি আপনার কাছ থেকে। আমাদের সম্পর্ক, যেটা আপনি আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন—তার সত্যিটাই তো জানতে চেয়েছি।”

আবারও বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়লো মায়া।

আরমান চিৎকার করে উঠল,“সম্পর্ক!! সম্পর্ক!! সম্পর্ক!! স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আমাদের। তুমি শুধু আমার জীবনের অংশ নও, তুমি আমার অর্ধেক প্রাণ, আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার হালাল সম্পত্তি তুমি। সম্পর্কটা শুধু কাগজের কয়েকটা লাইনে বাঁধা নয়, এটা আমার রক্তে মিশে আছে। প্রতিটা শ্বাসে তোমার নাম খোদাই করা। তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ… তোমাকে হারানো মানে আমার নিজের আমি টাকে হারিয়ে ফেলা। মায়া! তুমিই ছিলে আমার শুরু, আর শেষটাও তোমাতেই। মাঝের প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা শ্বাস, প্রতিটা স্বপ্ন…সবই শুধু তোমায় ঘিরে।”

প্রথমদিকের কাথ গুলো চিৎকার করে বলেও ধীরে ওর গলার আওয়াজ কমে এলো। এরপর ওর কথা গুলো মুখ থেকে নয় হৃদয়ের গহীন থেকে বেরিয়ে এলো যেনো।

হঠাৎই মায়া উঠে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল আরমানের বুকের উপর। দুই হাতে মরিয়া হয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে, যেন এই আঁকড়ে ধরা দিয়ে নিজের সমস্ত ভয় আর কষ্টকে আটকে রাখতে চায়। মুখ গুঁজে দিল আরমানের বুকে, আর কান্নায় ভিজিয়ে দিল তার শার্টের কাপড়। তবু আরমান নির্বিকার…. চোখে কোনো ভাষা নেই, ঠোঁটে কোনো শব্দ নেই। সে মায়ার গায়ে হাতও রাখল না, চুপ করতেও বলল না, শান্তনার একটি বাণীও উচ্চারণ করল না। শুধু নিঃশব্দে বসে রইল, মায়াকে কাঁদতে দিল… যেন সেই কান্নাই একমাত্র ভাষা, যা এ মুহূর্তে দুজনের মধ্যে বেঁচে আছে।

এরপর কিছুক্ষণ সময় যেতেই আরমান নির্লিপ্ত গলায় বলল, “চলো! তোমাকে তোমার সেই ধোঁয়াশায় মোড়া অধ্যায়টা জানাবো..যেটা জানার জন্য তুমি এতোটা মরিয়া হয়ে উঠেছো। আর কোনো কিছু আড়ালে রাখবো না তোমার কাছ থেকে। এবার সবটা খুলে বলবো, এরপর তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে। আমিও আর পারছি না, মায়া… এই বোঝা বয়ে নিয়ে চলতে চলতে আমিও ক্লান্ত। এবার এই সবকিছুর থেকে মুক্তি চাই।”

মায়া অবাক চোখে তাকালো মায়ার দিকে। কথটা বলেই আরমান মায়াকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড় করালো। তারপর সোফায় বসালো। রহিমা খালাকে ইশারা দিতেই উনি তাড়াহুড়ো করে ফাস্ট এইড বক্স এনে দিলেন। আরমান মায়ার গলায় আঘাত পাওয়া জায়াগাটায় ড্রেসিং করে দিতে দিতে বলছে শুরু করলো সবটা। সবটা। সেই শুরু থেকে। যেখানে দেখা হয়েছিল ওর পিচ্চি মায়াবতীর সাথে.. তারপর পিচ্চি মায়াবতীর প্রতি গভীর ভাবে আসক্ত হয়ে পড়া.. পিচ্চি মায়াবতীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা…এর পর আরমানের দাদুর জোড় করে মায়ার সাথে বিয়ে দেওয়া.. তারপর আরমানের মায়ার প্রতি নিজের অনুভূতি নিয়ে বিভ্রান্তি হওয়া.. বাবার সাথে রাগারাগি করে মায়াকে ডিভোর্স দিতে গিয়েও সেই পেপারে সাইন না করা.. এরপর অযাচিত ভাবে আবারও একটা খারাপ পরিস্থিতিতে ওদের দুজনকে দেখা হওয়া.. আরমানের ভুল বুঝা.. মায়াকে যেভাবেই হোক নিজের কাছে রাখতে চাওয়া..মিস্টার ড্যানিয়েল কে নিয়ে ওর জেলাসি.. তারপর হঠাৎ করেই মায়া বাবার এই দুনিয়ায় মায়া ত্যাগ করা..মাইশার আগমন পিচ্চি মায়াবতীর পরিচয়ে.. তারপর আরমানের বুঝতে পারা মায়াই আসল মায়াবতী.. ওকে পুরো দুনিয়ায় সামনে স্বীকৃতি দিয়ে নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাওয়া.. কিন্তু হঠাৎ করেই মায়ার ভুল বুঝে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা.. তারপর ওদের অ্যাক্সিডেন্টওকে ড্রাগস দেওয়া…

শুরু থেকে শেষ অবধি সবটা বলল আরমান। শুধু লুকিয়ে খেলো একটাই বিষয়…ওর আর মায়ার অনাগত সন্তান। এমনিতেই এতো কিছু একসাথে মেয়েটার ব্রেন কতটা নিতে পারবে আরমানের জানা নেই। তার উপর সন্তান হারানোর কষ্ট..এটা নিজে থেকেই আরমান জানালো না মায়াকে। এই কষ্ট নিজের বুকেই জমা রেখে দেবে আরমান‌ সারা জীবন। থাক না কিছু অজানা যদি এতে মেয়েটার কষ্ট কিছুটা হলেও কমে।

মায়ার দুই চোখ দিয়ে তখন অশ্রু ঝড়ছে। ও মাথা নিচু করে বসে আছে। ওর জীবনে এতো কিছু ঘটে গেছে, ভাবতেই পারছে না ও। ওর জন্মদাতা পিতা….তার মুখটাও হাজার চেষ্টা করলেও মনে করতে পারছে না। দুই হাতে মাথা চেপে ধরলো মায়া। ভীষণ ভাবে চাপ দিলো ব্রেনে, কিন্তু তবুও কিচ্ছু মনে করতে পারছে না।

আরমান শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। বুঝতে চাইছে মায়ার মনের অনুভূতি। মেয়েটা কি ওকে ভুল বুঝে আবারও দূরে সারে যাবে?

আরমান:- “সব বললাম তোমায়, মায়া… বিন্দুমাত্র আড়াল না রেখে। এবার তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে আমার নিয়তি। যদি সত্যিই মুক্তি চাও, আমি নিজের হাতেই ছেড়ে দেব তোমাকে—আটকে রাখব না আর। আমি ভীষণভাবে ক্লান্ত… শুধু শরীর নয়, মনও। এতদিন ধরে বুকের ভেতর যে ভার চাপিয়ে রেখেছি, এবার সেই ভার নামিয়ে রাখতে চাই।”

হঠাৎই মায়া ঝাঁপিয়ে পড়ল আরমানের বুকের ভেতর। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“কিন্তু আমি তো মুক্তি চাই না, গম্ভীর সাহেব। আমি সারা জীবন আটকে থাকতে চাই আপনার মাঝে। আপনার ক্লান্ত হৃদয়ে শান্তি বুনতে চাই। যতদিন বাঁচব, ততদিন এই বুকে মাথা রেখে বাঁচতে চাই। এই মায়াবতীর ভার কোনোদিনও নামবে না আপনার বুক থেকে—কোনোদিনও না। আমাকে আপন করে নিন, গম্ভীর সাহেব… সারাজীবন আপনাতে আবদ্ধ থাকতে চাই।”

মায়ার এমন কথা শুনে আরমান দুই হাতে জড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়াকে। চুলের ভাঁজে এঁকে ঠোঁটের পরশ। আরমানের চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। এই চোখের পানি দুঃখের নয় বরং প্রাপ্তির।

মায়া কুঞ্জে এই ড্রয়িংরুমে উপস্থিত থাকা প্রত্যেকটি ব্যাক্তির চোখে আজ অশ্রু কিন্তু ঠোঁটে লেগে রয়েছে তৃপ্তির হাসি।

চলবে…????

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_50
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫 কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মায়া দৃষ্টি বাইরে রেখে। নিজের জীবনের হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত। ঠিক তখনি পিছনে থেকে আরমান মায়ার পেটে দুই হাত দিয়ে কোমর পেঁচিয়ে ধরলো। থুতনি রাখলো মায়ার কাঁধে। সাথে সাথে ভয়ে চমকে উঠলো। পুরো শরীর দিয়ে একটা ঠান্ডা শীতল স্রোত বয়ে গেলো যেনো।

আরমান মায়াকে ভয় পেতে দেখে বলল, “হেই রিল্যাক্স। কি ভাবছিলে যে এই ভাবে চমকে উঠলে?”

মায়া উদাস গলায় বলল, “কিছু না এমনি।”

আরমান মায়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নরম গলায় বলল, “কিছু না তো মন খারাপ কেনো? তোমার কি এখনো কোনো সন্দেহ আছে? কি ভাবছো বলো আমায়।”

মায়া:- “আরে আপনার প্রতি কোনো সন্দেহ নেই। আমি তো শুধু আমার বাবার মুখ টা মনে করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না।”

কথটা বলতে বলতেই এক ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো মায়ার চোখ বেয়ে। আরমান মায়াকে নিজের বুকে টেনে নিল। কিন্তু মুখে শান্তনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না। আরমান মায়াকে এক হাতে বুকে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করলো। তারপর ফোনে কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করে মায়াকে দেখিয়ে বলল, “এই দেখো এটা তোমার বাবা। ব্রেনে চাপ দিয়ে মুখ মনে করার চেষ্টা করার দরকার নেই। এতে সমস্যা হতে পারে।”

মায়া তাড়াহুড়ো করে আরমানের ফোনটা ছিনিয়ে নিলো। তারপর দুই চোখ ভরে দেখতে থাকলো ছবিটাকে। এই ছবিটাও আরমান আর মায়ার বিয়ের দিনেই তোলা হয়েছিল। যেখানে মায়ার বাবা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মায়াও তার বাবার বুকে আদুরে বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে আছে। ছবিটা দেখে মায়া চোখের বাঁধ ভাঙলো। ঝরঝর করে পানি পড়তে শুরু করলো। অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো, “পাপা!”

আরমান মায়ার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।

মায়া উদগ্রীব হয়ে বলল, “কি হলো? ফোনটা দিন। এভাবে কেড়ে নিলেন কেনো?”

আরমান:- “জানো না মৃত্যু মানুষের ছবি দেখে এইভাবে কান্না করতে নেই তাও আবার এই রাতের বেলা।”

মায়া:- “আর কাঁদবো না, প্লিজ ফোনটা দিন। আমি আমার পাপাকে আরো কিছুক্ষন দেখতে চাই।”

আরমান:- “না আর এখন আর দেখতে হবে না। পরে দেখবে আবার। রাত শেষ হতে চলল, ঘুমাবে চলো। না হলে শরীর খারাপ করবে তোমার।”

মায়া:- “কিছু হবে না। আচ্ছা আপনি আমাকে আগে কথা দিন ওই ছবিটা বাঁধিয়ে এনে দেবেন। ওই ছবিটা আমি আমার বাবার শেষ চিহ্ন হিসাবে রাখতে চাই।”

আরমান, “আচ্ছা দেবো” বলেই মায়াকে কোলে তুলে নিলো। মায়া হকচকিয়ে উঠলো।

“আরে আরে কি করছেন? নামান বলছি।”

আরমান:- “অনেক হয়েছে এখন ঘুমাবে চলো। সেই কখন রুমে এসেছো তুমি আর এখনো ঘুমানোর নাম নেই।”

মায়া:- “নামিয়ে দিন, নিজের পায়ে যেতে পারবো আমি। লজ্জা শরম নেই নাকি? এভাবে কোলে তুলে নিলেন কেনো?”

আরমান মায়াকে এইভাবে হঠাৎ করে কোলে তুলে নেওয়ায় মায়া প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছে। যেটা ওর মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে কিন্তু তবুও মায়া নিজের মুখে রাগী ভাব রাখার চেষ্টা করছে যেটা ওর দাঁড়ায় সম্ভব না। আরমান নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “নিজের বউকে বন্ধ চার দেওয়ালের মাঝে কোলে তুলেছি, এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আর তুমি যে তখন ড্রয়িংরুমে সবার সামনে জড়িয়ে ধরলে?”

আরমান মায়াকে বারান্দা থেকে নিয়ে আসতে আসতে, মায়াকে লজ্জা দিতে কথটা বলে উঠলো। আর হলেও তাই। মায়া আর নিজের মুখের রাগী ভাব ধরে রাখতে পারলো না। লজ্জায় মুখ লুকালো আরমানের বুকে। যা দেখে আরমান নিঃশব্দে মুচকি হাসলো।

আরমান মায়াকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিল। মায়া এখনো লজ্জায় আরমানের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না, চোখ বন্ধ করে উল্টো দিকে ঘুরে গেলো।‌ আরমান মুচকি হেসে বিছানায় মায়ার পাশেই শুয়ে পড়লো। এরপর মায়ার শরীর ঘেঁষে মায়ার কোমর জড়িয়ে ধরে, মায়ার উন্মুক্ত পিঠে নাক ঘষতে ঘষতে বলল, “এইভাবে মায়াবতী যদি তার লাজে রাঙা মুখ, তৃষ্ণার্ত গম্ভীর সাহেবকে দেখায় তাহলে নিজেকে কিভাবে কন্ট্রোল করবে সে?”

মায়ার তো অবস্থা নাজেহাল।‌ মনে মনে দোয়া করছে এই ঘরের মেঝেটা দুই ভাগ হয়ে যাক আর ও তার মাঝে টুক করে ঢুকে পড়ুক। হঠাৎই মায়া কি মনে করে ধরফর করে উঠে বসলো বিছানায় আরমানের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে।

আরমান মায়াকে এভাবে উঠতে দেখে নিজেও ভয় পেয়ে উঠে বসলো। জিজ্ঞেসা করলো, “কি হলো মায়া? কোনো অসুবিধা হচ্ছে? মাথায় ব্যাথা করছে?”

মায়া:- “না আমি ঠিক আছি। কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু আপনি এখানে কেনো শুয়েছেন?”

আরমান বোকা বোকা চোখে তাকালো মায়ার দিকে, “তো কোথায় শুবো?”

মায়া:- “অন্য রুমে যান।”

আরমান:- “অন্য রুমে কেনো যাবো। এটাই তো তোমার আর আমার রুম। স্পেশাল ভাবে সাজিয়েছি রুম টাকে, সুন্দর না?”

মায়া:- “হুম সুন্দর, আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আপনি আমার সাথে এক রুমে থাকতে পারবেন না।”

আরমান ভ্রু কুঁচকে বলল, “তিন কবুল বলে বিয়ে করা বউ তুমি আমার। তাহলে কেনো তোমার সাথে এক রুমে ঘুমাতে পারবো না।”

মায়া:- “তিন কবুল বলে বিয়া করা বউ? কই আমার তো মনে নেই যে আমাদের বিয়ে হয়েছে।”

আরমান মায়ার বলা কথাটা শুনে পুরোই বোকা বনে গেলো যেনো। কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না। কিছুক্ষণ বোকা বোকা চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “তোমার তো আগের কোনো কথায় মনে নেই তাহলে বিয়ের কথা কিভাবে মনে থাকবে?”

মায়া:- “হুম সেটাই তো বলছি। যেহেতু আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা মনে নেই তাই আপনি আমার সাথে এক রুমে থাকতে পারবেন না।”

আরমান:- “আরে এটা কোনো কথা? তাহলে কোথায় থাকবো আমি?”

মায়া:- “যেখানে ইচ্ছা থাকুন তবে আমার সাথে এক রুমে নয়।”

আরমান মায়াকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল, “প্লিজ মায়াবতী। একটু বোঝার চেষ্টা করো। এতো রাতে কোথায় যাবো আমি? আর আমারা স্বামী স্ত্রী হয়েও কতদিন আর এভাবে আলাদা থাকবো?”

মায়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল, “যতোদিন না আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা মনে পড়বে ততোদিন।”

আরমান:- “আর যদি কোনোদিন মনে না পড়ে তাহলে?”

মায়া:- “তাহলে জানি না। এই আপনি যান তো।‌ অনেক ঘুম পেয়েছে আমার। আর বিরক্ত করবেন না।”

কথটা বলেই মায়া উঠে দাঁড়িয়ে আরমানকে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে একেবারে সোজা দরজার বাইরে বের করে দিলো। তারপর দরজা লক করে দিলো।

আরমান দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মায়াবতী! বউ আমার এতো রাতে কি পাগলামো শুরু করলে? কোথায় যাবো আমি?”

মায়া:- “কেনো এই এতো বড়ো বাড়িতে রুমের অভাব আছে নাকি? অন্য রুমে যান।”

আরমান:- “সত্যিই রুমের অভাব বউ। উপরে এই তিনটে রুম ই আছে। একটা এটা আর একটাতে সামিরা রুবি মাইশা আছে আর একটাতে আয়ান আর আবির। নিচের রুম গুলোতে এখোনো কিছুটা কাজ বাকি।”

মায়া:- “আমি জানি না যেখানে ইচ্ছা যান।

হঠাৎই আরমান গেয়ে উঠলো…

(গান)
জানলে আগে এমন মাইয়া করতাম না বিয়া..
সর্বনাশ কইরাছি পায়ে কুড়াল মারিয়া..

জানলে আগে এমন মাইয়া করতাম না বিয়া..
সর্বনাশ কইরাছি পায়ে কুড়াল মারিয়া..

সুখে কত আদরে..রাখি ভাত কাপড়ে..
আমার সাথে টেক্কা মারে আমারি ঘরে..

আরমানের গান শুনে মায়া কিছুক্ষণ হাসলো। গান থামাতেই ভিতর থেকে মায়া বলে উঠলো, “এতো সহজে এই মায়াবতীর মন গলবে না মিস্টার আরমান শাহরিয়ার।”

আরমান:- “হুম মায়াবতীর মন কিভাবে গলাতে হয় সেটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে মিসেস আরমান শাহরিয়ার।”

মায়া বিরক্ত গলায় বলল, “এই আপনি যান তো।”

আরমান:- “সত্যিই চলে যাচ্ছি। আর কাছে ডাকলে আসবো না কিন্তু।”

মায়া:- “হুম যান। ডাকবো না কাছে।”

এটা বলেই মায়া মুখ বেঁকিয়ে বিড়বিড় করে উঠলো, “কই একবারও তো বলছে না, যে তোমার বিয়ের কথা মনে নেই তো কি হয়েছে? আমারা আবারও একবার বিয়ে করবো। আগের বিয়েতে তো রাজিই ছিল না, ছবিতেও মুখ দেখলে বোঝা যায়, যে জোড় করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে উনাকে। এতো সহজে তো আপনাকে এই মায়াকে পেতে দেবো না মিস্টার আরমান শাহরিয়ার। অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে, যদিও আমার কিছু মনে নেই। কিন্তু তবুও এই মায়ার কাছে আসতে হলে আপনাকে আমাকে সবার সামনে স্বীকৃতি দিতে হবে। আবারও বিয়ে করতে হবে আমাকে তবে আমি সেটা নিজের মুখে বলবো না। দেখি আপনার ভাবনা কতদূর যায় আমাকে নিয়ে।”

আরমান বাইরে থেকে বলল, “যতোই তুমি আমাকে দূরে সরাতে চাও না কেনো, আমি ততোই তোমার কাছে আসবো মায়াবতী। আমার থেকে তোমার নিস্তার নেই। আমার এই আমিতেই আবদ্ধ থাকতে হবে তোমায়।”

মায়া:- “নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ।”

আরমান:- “হুম। বউয়ের জন্য নির্লজ্জ হতেও রাজি।”

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

ভিতর থেকে আর কোনো সাড়া শব্দ এলো না। আরমানের আর কি করার, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাঁটা দিলো আবিররা যেই রুমে আছে সেই রুমের উদ্দেশ্যে।

ওদের রুমে গিয়ে দেখলো আবির আর আয়ান দুজনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। ও একবার সেইদিকে তাকিয়ে অসহায় চোখে তাকালো সোফার দিকে। এই টুকু সোফায় ওর এতো বড়ো শরীর টার কিছুতেই জায়গা হবে না। ও কি যেনো ভেবে আবিরের কাছে গিয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ধীর আওয়াজে বলল, “আবির! তোকে রুবি ডাকছে। বাইরে অপেক্ষা করছে তোর জন্য। কি যেনো বলতে চাই।”

কথাটা আবিরের কানে যেতেই ধরফর করে বিছানায় উঠে বসলো ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে। আয়ান আর ও একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকায়, আবির এভাবে উঠতেই আয়ান বিছানা থেকে ধপ করে পড়ে গেলো। ওরা দুজন বিছানার একদম ধারেই শুয়েছিল।

আয়ান আর্তনাদ করে উঠলো, “ওহ মাগো। আমি শেষ।

এদিকে আবির ঘুম ঘুম চোখে, “কোই কোথায় রুবি? কোথায় ডাকছে? কোথায় যেতে হবে?”

আরমান:- “বাইরে অপেক্ষা করছে তোর জন্য।”

আয়ান মেঝেতে বসে থেকেই কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “প্লিজ ব্রো দয়া করে আমাকে একটু ঘুমাতে দাও। এতোটা রাত অবধি কোনো দিনও জেগে থাকিনি। চোখ গুলো প্রচন্ড জ্বালা করেছে।”

কথাটা বলেই আয়ান নিজের সাথে পড়ে যাওয়া বালিস টাকে নিয়ে, মাথার নিচে দিয়ে মেঝেতেই শুয়ে পড়লো।

আর আবির তো ঘুম ঘুম চোখেই বেরিয়ে গেছে তার রুবি ডার্লিং এর কথা শুনে। আরমানের রাস্তা ক্লিয়ার। ও বিছানাটা ঠিক করে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। এদিকে আবির কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখলো আরমান শান্তি করে বিছানায় ঘুমাচ্ছে।

আবির:- “ওই ব্যাটা? কোথায় রুবি? এই এই তুই রুমে কি করছিস?”

আরমান ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল, “রুবি নিজের রুমে আছে। ঘুমাতে দে আবির ডিস্টার্ব করিস না।”

আবির:- “রুবি নিজের রুমে কিন্তু তুই যে বললি…এই এক মিনিট। তোকে নিশ্চয় মায়া রুম থেকে বের করে দিয়েছে তাই না? আর তাই তুই মিথ্যে বলে আমাকে উঠালি বিছানা দখল করার জন্য।”

আরমানের তরফ থেকে কোনো উত্তর এলো না। ও ঘুমাতে ব্যাস্ত। আবির বিরক্ত হয়ে বলল, “এই আমি কোথায় ঘুমাবো তাহলে?”

আরমান ঘুম ঘুম কন্ঠ তেই উত্তর দিলো, “আজকের মতো সোফায় অ্যাডজাস্ট করে নে আর নয় তো আয়ানের মতো ফ্লোরে।”

আবির:- “ওই টুকু সোফায় শোয়ার অভ্যাস নেই আমার। বিছানা টা তো অনেক বড়ো, ভালো ভাবে দুই জনার জায়গা হয়ে যাবে।”

আরমান:- “ভুলেও ওই চিন্তা মাথাতে আনিস না। আমি কারোর সাথে বেড শেয়ার করতে পারি না।”

আবির:- “ওই তাই বুঝি? নাচতে নাচতে তো চলে গেলি মায়ার সাথে ঘুমানোর জন্য। তাহলে বউয়ের সাথে কিভাবে বেড শেয়ার করতিস?”

আরমান বিরক্ত হয়ে বলল, “ধ্যাত! বউ আর তোরা এক নাকি? বউ মানেই, বউকে বুকে নিয়ে প্রশান্তির ঘুম দেওয়া। বেশি বকবক করিস না, ঘুমাতে দে।”

বলেই আরমান একটা বালিশ নিয়ে কানে চাপা দিলো। আবিরের আর কি করার? একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাকালো মেঝেতে শুয়ে থাকা আয়ানের দিকে। ওই শক্ত মেঝের থেকে ছোটো সোফাটাই বেটার। তাই কোনো রকমে গুটিশুটি মেরে সোফাতেই শুয়ে পড়লো ও।

——————–

পরের দিন দুপুর ১২ টার দিকে…

বাড়ির ছেলেরা এখোনো ঘুমে বিভোর। রুবি গিয়েছিল একবার ওই রুমে। তবে ওদের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ। মায়া মাইশা ওদেরকেও ডেকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছে। আয়ান মেঝেতে মাথার বালিশ বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আর আবির বেচারা সোফা থেকে পড়ে গিয়ে মেঝেতেই ঘুমাচ্ছে। এক পা তখনো সোফায়। আবির এবং আয়ানের শোয়ার ভঙ্গি ভীষণ হাস্যকর। আর আরমান? সে বাবু তো বিছানায় আরাম করে ঘুমাচ্ছে। ওদেরকে অনেক ডেকেও উঠাতে পারেনি।

তাই মায়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজকের দিনটা মায়া কুঞ্জেই কাটাবে। পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখেছে ও। এই পুরো বাড়িটা ওর ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। ও শুনেছে কাগজে কলমেও নাকি এই বাড়ি মায়ার নামে আছে। অনেক আগেই আরমান এই ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়েছিল ওর জন্য। সত্যি মানুষটা পারেও বটে। পুরো বাগান টাও খুব সুন্দর করে সাজানো বিভিন্ন দেশি বিদেশি গাছ দিয়ে। আর সবথেকে আকর্ষনীয় বিষয় হলো এই সুন্দর বাগানে একটা কাঁচের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছোট্ট কুঁড়ে ঘরের মতো বাড়ি। ঘরটির মধ্যে একটা সিঙ্গেল বেড রাখা। আর অনেক আর্টিফিশিয়াল ফুল পাতা গাছ দিয়ে সাজানো পুরো রুমটি। একেবারে মায়ার মনের মতো। ঘরটি বাগানে হওয়াই, জানালার কাঁচ সরালেই খুব সুন্দর বাতাস আসে।

মায়া রুবির মুখে শুনলো, ও যখন অসুস্থ ছিল তখন শাহরিয়ার ম্যানশনের বাগানে এমন একটা ঘরের জন্য বায়না ধরেছিল। আর সেই বায়না রাখতেই হয়তো মায়া কুঞ্জে এমন ঘর বানিয়েছে।

মায়া মাইশা রুবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজকে এই মায়া কুঞ্জের বাগানে রান্না করবে। ছোটো খাটো একটা পিকনিক এর মতো। এমনিতেই ওরা আজ অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে, ছেলেগুলো তো এখনো উঠেইনি।

ওরাও সকালের ব্রেকফাস্ট দুপুর বারোটায় করে এখন বাগানে, বিরিয়ানি রান্নার জন্য জোগাড় করতে ব্যাস্ত।

মায়া আলু কাটতে কাটতে জিজ্ঞাসা করলো, “আপু সামিরা এখনো উঠেনি তাই না?”

রুবি:- “না ভাবী মনি, এখনো উঠেনি। ও হচ্ছে আর এক কুম্ভকর্ণের নাতনি। এমনিতেই অনেক বেলাতে ঘুম থেকে উঠে, তার উপর আবার কাল সারারাত জেগেছে।”

মায়া উদাশ গলায় বলল, “হুম! কাল তোমাদের সকলকে অনেক জ্বালিয়েছি আমি তাই না?”

মাইশা মায়ার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল, “হুম তা তো একটু জ্বালিয়েছিসই বটে। কিন্তু আমাদের থেকে বেশি আরমানকে জ্বালিয়েছিস। বাব্বাহ মেয়ের কি সাহস! আরমান শাহরিয়ার এর গলায় ছুরি ধরে!”

মাইশার শেষের কথায় মায়া একটু লজ্জা পেলো, “ওটা তো উনাকে ভয় দেখানোর জন্য ধরেছিলাম।”

রুবি:- “হ্যাঁ প্রথমে না হয় স্যারকে ভয় দেখানোর জন্য ধরেছিল। কিন্তু তারপর নিজের গলায় যে ধরেছিলে? সেটা কিন্তু একদম ঠিক করোনি ভাবী মনি।”

মাইশা:- “হ্যাঁ রুবি ঠিক বলেছে। এমন কেউ করে? আর একটু হলে জান বের হয়ে যেতো আমাদের।”

মায়া দাঁত বের করে বলল, “একটা সিক্রেট বলি তোমাদের? নিজের গলাতেও ছুঁড়ি আমি উনাকে ব্লাকমেইল করার জন্যই ধরেছিলাম।”

মাইশা মৃদু রাগ দেখিয়ে বলল, “হ্যাঁ ব্লাকমেইল করার জন্য, তাহলে গলা টা এভাবে কাটলি কেন।”

মায়া কাঁদো কাঁদো হয়ে গলায় কাটা জায়গা টাই হাত দিয়ে বলল, “সত্যি আপু ওটাও ও ভয় দেখানোর জন্যই একটু চাপ দিয়েছিলাম কিন্তু বুঝতে পারেনি যে সত্যি সত্যি এতোটা কেটে যাবে। প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু।”

মাইশা:- “আর যাই করিস কখনো সুইসাইড করা নিয়ে ব্লাকমেইল করিস না আরমান ভাইয়াকে। মানুষটার প্রাণ ভোমরা হচ্ছিস তুই।”

মায়া মুখে কিচ্ছু বলল না শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।

রুবি:- “দাঁড়াও আমি সামিরাকে উঠিয়ে নিয়ে আসি। ও তো বিরিয়ানি খেতে ভীষণ ভালো বাসে।”

বলেই রুবি উঠে গেলো সামিরাকে ডাকতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামিরাকে নিয়ে এলো রুবি। মাথার চুল এলোমেলো, পরনে একটা টিশার্ট আর প্লাজো। গলায় একটা ওরনা ঝুলছে। এখনো চোখ বন্ধ করে আছে ও। রুবি ওকে একহাতে ধরে আছে। কারণ এখনো ঘুম ছাড়েনি ওর পা টলমল করছে।

সামিরা এক বার চোখ খুলেই আবার বন্ধ করে নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো, “তোমরা কি করছো ভাবী মনি?”

মায়া হাসি মুখে বলল, “তোমার ফেভারিট বিরিয়ানি রান্না।”

সামিরা:- “ওহ আচ্ছা করো তাহলে আমি দোলানাটাতে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিই। বিরিয়ানি হয়ে গেলে উঠিয়ে দিও কিন্তু।”

বলেই সামিরা ঘুমু ঘুমু চোখে এগিয়ে গেলো বাগানে থাকা দোলনাটার দিকে। কিন্তু দোলনা আর সামিরার মাঝে আছে চুলা, যার মধ্যে ভাত রান্নার জন্য পানি গরম করতে দেওয়া হয়েছে। সামিরা চোখ বন্ধ করেই হাঁটছে। আর একটু গেলেই জলন্ত চুলা আর হাঁড়ির সাথে ধাক্কা খাবে। মায়া রুবি মাইশা আঁতকে উঠলো।

মায়া:- “সামিরা!! চুলার সাথে ধাক্কা খাবে তো দেখো হাঁটো।”

রুবি ছুটে গিয়ে সামিরাকে ধরলো। আর একটু হলেই ধাক্কা খেতো ও। আর ধাক্কা খেলেই গরম পানি সহ চুলার আগুন সামিরার গায়ে লাগতো।

সামিরা কিউট ফেস করে বলল, “সঅঅরি। দেখিনি। আর একটু হলে তোমরা বিরিয়ানির জায়গায় সামিরা রোস্ট খেতে।”

কথাটা বলেই দাঁত বের করে হাসলো সামিরা। মায়ারা সবাই কপাল চাপড়ালো। এই মেয়ে জীবনেও শুধরাবে না।

ঠিক তখনি গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে সবাই ঘুরে তাকালো। একটা বিএমডব্লিউ কার মায়া কুঞ্জে প্রবেশ করছে। বাগান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গাড়ি ঠিক বাগানের কাছে এসেই থেমে গেল। তবে গাড়ি থেকে নেমে আসা অপ্রত্যাশিত ব্যাক্তিটিকে এই অসময়ে এখানে দেখে ওরা সবাই অবাক হলো।

চলবে…..