আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব-৫১

0
11

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_51
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫 কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

সামিরা অবাক গলায় বলল, “আসিফ ভাইয়া! তুমি এখানে?”

আসিফ হাসি মুখে বলল, “হুম আমিও চলে আসলাম তোদের পিকনিকে সামিল হতে। আমার জন্য তোদের খাবার কম পড়ে যাবে নাকি?”

সামিরা:- “আরে না কম পড়বে কেনো? কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে যে আমরা এখানে আছি? এই বাড়ির অ্যাড্রেস তো কেউ জানে না। আমি তো শুধু মম কে কালকের ঘটনা খুলে বলেছিলাম। এই বাড়ির অ্যাড্রেস তো দিইনি।”

আসিফ কিছুটা বাঁকা হেসে বলল, “এই আসিফের থেকে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা যায় না সামু বেবি।”

সামিরা কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বলল, “আমাকে একদম বেবি বলবে না ভাইয়া। আমি বাচ্চা নয় যথেষ্ট বড়ো হয়েছি। কিছুদিন পরেই ভার্সিটিতে ভর্তি হতে চলেছি। আর তুমি কি ম্যাজিশিয়ান নাকি? যে কোনো কি লুকিয়ে রাখা যায়া না তোমার থেকে?”

আসিফ সামিরার গাল টিপে বলল, “ভার্সিটিতে উঠলেও তুই আমাদের কাছে বাচ্চায় রয়ে যাবি। আর আমি ম্যাজিশিয়ান নয় তার থেকেও বেশি কিছু বলতে পারিস।”

সামিরা কিছু বলল না। মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো। এদিকে আসিফ এগিয়ে মায়াদের কাছে গিয়ে বসে পড়লো। তারপর বলল, “এই যে মহিলাগণ আমিও আপনাদের সাথে যোগ দিতে চাই। তার জন্য কি করতে হবে বলুন।”

মাইশা:- “আপনাকে কিছু করতে হবে না ভাইয়া। আমরা করে নেবো চিন্তা নেই।”

আসিফ:- “আরে তাই বললে হয়? পিকনিকে সবাই মিলে একসাথে কাজ করার মজাই আলাদা।”

সামিরা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলল, “হ্যাঁ ভাইয়া একদম ঠিক বলেছো। ছোটো ভাবী! ভাইয়া যখন কাজ করতে চাইছে তো দাও না। মানা করছো কেন? আমি তোমাকে কাজ দিচ্ছি ভাইয়া। রান্না ঘরে কিছু এঁটো প্লেট আছে। ওগুলো পরিস্কার করে এসো কারণ এর পর তো আবার ওই প্লেটেই খেতে হবে আমাদের। সাথে একটা এঁটো কড়াই ও আছে কাল রাতের, ধোয়া হয়নি। ওটাতে আবার বিরিয়ানির জন্য আলু ফ্রাই করতে হবে।”

আসিফ:- “হোয়াট?? আমি এঁটো বাসন কড়াই এসব ধোবো?”

সামিরা আবারও দাঁত দেখিয়ে হাসি দিয়ে বলল, “হ্যাঁ। এগুলোও তো পিকনিক এর কাজের মধ্যেই পড়ে তাই না?”

হঠাৎই রুবি উঠে দাঁড়ালো।
“আমি পরিস্কার করে নিয়ে আসছি কড়াই।”

কথাটা বলেই আর দাঁড়ালো না রুবি ওখানে। তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো। মনে হলো এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে যেনো। সামিরা অবাক হয়ে বলল, “আরে আমি তো এমনিই বললাম এঁটো প্লেট আর কড়াই এর কথা। সত্যি সত্যি ধোয়া হয়নি নাকি? কিন্তু রহিমা খালা তো আছেই এসব করার জন্য।”

আসিফ কেমন যেনো চোখে তাকিয়ে রইল রুবির চলে যাওয়ার দিকে। এদিকে মাইশা একবার রুবি যাওয়ার দিকে তাকাচ্ছে তো আর একবার আসিফের দিকে। ও যতোদিনই এই বাড়িতে থেকেছে, প্রায়শই খেয়াল করে দেখেছে, যখনি আসিফ শাহরিয়ার ম্যানশনে আসতো তখনি রুবি আসিফকে কেমন যেনো এড়িয়ে চলতো। সব সময় ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতো।

আসিফ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, এমন ভঙ্গিতে বলল, “যাক বাবা! বাঁচা গেলো। তাহলে আমাকে আর অন্তত এঁটো থালা বাসন পরিস্কার করতে হবে না।”

মায়া হাতে কিছু পেঁয়াজ আর একটা চাকু এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই নিন তাহলে এই পেঁয়াজ গুলো কেটে দিন।”

আসিফ:- “আচ্ছা দাও। কিন্তু কিভাবে কাটবো?”

সামিরা মুখ বেঁকিয়ে বলল, “এখনো কিভাবে পেঁয়াজ কটাতে হয় সেটাই জানে না আর এসেছে রান্নায় হেল্প করতে। হুঁ।”

আসিফ:- “আরে জানি না তো কি হয়েছে? শিখে নেবো। কিন্তু তুই চুপ থাক। তুই নিজে কি পারিস হ্যাঁ? শুধু বসে বসে ডাইলোগ দিতেই জানিস। মায়া আমাই দেখিয়ে দাও কিভাবে কাটতে হবে, আমি কেটে দিচ্ছি।”

মায়া আসিফকে দেখিয়ে দিতে শুরু করলো। আর এদিকে মাইশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আসিফের দিকে। সামিরা দোলনায় বসা থেকে উঠে বলল, “রুবি আপু তো এখনো এলো না, আমি দেখে আসি কি করছে। আর আমার গুনধর তিন ভাইকেও ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আসি। সবাই কাজ করবে আর ওরা শুধু বসে বসে খাবে? সেটা তো হবে না।”

বলেই সামিরা চলে গেলো। ও কিচেনে গিয়ে দেখলো ওখানে রুবি নেই তাই উপরে গেলো। কালকে ওরা যেই রুমে ছিলো সেই রুমে এসে দেখলো রুবি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বাইরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে।

“আপু তুমি এখানে কি করছো? তুমি না রান্নার জন্য কড়াই নিতে এলে?”

রুবি যেনো চমকে উঠলো।

“হ্যাঁ মানে ওই একবার রুমে এসেছিলাম ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য। আচ্ছা চলো যাই।”

বলেই রুবি হাঁটা দিলো। সামিরা বলল, “আরে দাঁড়াও। আগে চলো তিন বাঁদরকে উঠিয়ে আসি।”

রুবি চোখ বড়বড় করে বলল, “ওদের দুজনকে বাঁদর বলছো ঠিক আছে তাই বলে স্যার কেও? স্যার শুনলে তোমায় আস্ত রাখবে তো?”

সামিরা আমতা আমতা করে বলল, “ইয়ে মানে আসলে টানে টানে বেরিয়ে গেছে। প্লিজ আপু বড়ো ভাইয়াকে বলো না। ভাইয়া জানতে পারলে আমাকে মনে হয় নুন ছাড়াই চিবিয়ে খাবে।”

রুবি মুখ গম্ভীর করার ভান করে বলল, “হুম ঠিক আছে। এইবারের মতো বলবো না। কিন্তু আর যেনো না শুনি। ওরা তোমার অনেক বড়ো সামিরা, তাই তোমার উচিত ওদেরকে সম্মান দেওয়া।”

সামিরা মুখ বেঁকিয়ে বলল, “বড়ো ভাইয়া সম্মান পাওয়ার যোগ্য এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ওরা দুজন যেই বাঁদরামি করে আমার সাথে তার বেলা? বিশেষ করে আবির ভাইয়া। আর আয়ান ভাইয়া তো কেমন যেনো হয়ে গেছে। চেনাই যায় না। আগে কত হাসিখুশি ছিল, আমরা তিন জন পুরো বাড়িটাকে মাথায় করে রাখতাম।”

রুবি:- “হুম। এমনিতেই ছোটো ভাবী মনি সাথে মনোমালিন্য আবার তারপরে ছোটো আম্মুর অমন একটা কাজ, আর তার পরিনতি।‌ এতো বড়ো শকড নিতে পারেননি উনি, ছেলে মানুষ তো তাই ভিতরের কষ্ট কাউকে দেখাতেও পারেনা। তাই এমন হয়ে গেছে উনি।”

সামিরা মন খারাপ করে বলল, “হ্যাঁ আপু একদম ঠিক বলেছো তুমি। কিন্তু জানো? আমার এখনো বিশ্বাস হয় না যে ছোটো আম্মু অমন কাজ করতে পারে।”

রুবি:- “হুম আমারও বিশ্বাস হয় না। কিন্তু সমস্ত প্রমাণ তো উনার বিরুদ্ধে। আচ্ছা বাদ দাও, মন খারাপ করো না। চলো স্যারদের উঠিয়ে আসি।”

সামিরা:- “হুম চলো।”

ওরা রুম থেকে বেরোতেই যাবে ঠিক তখনি কার যেনো ফোন বেজে উঠলো। সামিরা ভ্রু কুঁচকে বলল, “কার ফোন বাজছে? তোমার নাকি আপু?”

রুবি:- “না আমার নয়। মনে হয় মাইশা ভাবীর ফোন ওটা।”

সামিরা:- “হ্যাঁ। দাঁড়াও আমি ছোটো ভাবীকে ডেকে দিই।”

বলেই সামিরা ওদের রুমে থাকা বারান্দায় গেলো। বারান্দা থেকে বাগান স্পষ্ট দেখা যায়। ও গলার আওয়াজ বাড়িয়ে ডাক দিলো মাইশা কে।

“ছোটো ভাবীইইই। তোমার ফোন বাজছে, নিয়ে যাও।”

মাইশা ওখান থেকেই চেঁচিয়ে উঠলো, “তুমি নিয়ে আসো ফোনটা। এইসব কিছু ফেলে রেখে কিভাবে যাবো।”

সামিরা:- “বড়ো ভাবী আর আসিফ ভাইয়া আছে তো ওখানে, কোনো অসুবিধা হবে না। তুমি নিয়ে যাও। আমাদের এখন যাওয়া যাবে না, আমরা এখন একটা ইম্পর্টেন্ট মিশনে নামবো।”

বলেই সামিরা বারান্দা থেকে চলে গেলো। এদিকে মাইশা একবার তাকালো আসিফ আর মায়ার দিকে। কেনো জানি ওর আসিফের কাছে মায়াকে একা রেখে যেতে মন চাইছে না। তাই ভাবলো বাজুক ফোন, পরে দেখে নেবে। কিন্তু মায়া মাইশাকে যেতে না দেখে বলল, “কি হলো আপু যাও। আমরা এখানে আছি তো।”

মাইশা:- “বাদ দে। পরে দেখে নেবো।”

মায়া:- “আরে দরকারি কলও তো হতে পারে।”

মাইশা ভাবলো, হ্যাঁ দরকারি কল ও হতে পারে। ও কিছু কম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছে, যদি তাদের মধ্যে কেউ হয়।

আসিফ মজা করে বলল, “আরে ভয় নেই মিস। আপনার বোনকে খেয়ে ফেলবো না আমি, যে আমার কাছে একা রেখে যেতে ভয় পাচ্ছেন। বরং যত্নেই রাখবো।”

মায়ার সরল মনে অতো প্যাঁচ নেই তাই হেসে ফেললো আসিফের কথা শুনে। হাসি মুখেই বলল, “কি যে বলেন না ভাইয়া। আপু আমাকে আপনার কাছে রেখে যেতে ভয় পাবে কেনো?”

মাইশা কড়া কন্ঠে আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলল, “খেয়ে ফেলার প্রশ্নই আসে না ভাইয়া। কেউ হাজার চেষ্টা করলেও আরমান ভাইয়া থাকতে মায়ার গায়ে একটা ফুলের টোকাও দিতে পারবে না। আর রইলো বাকি যত্নে রাখার কথা? আমার বোনকে যত্নে রাখার জন্য তার হাসবেন্ডই যথেষ্ট, অন্য কারোর প্রয়োজন পড়বে না।”

মায়া মাইশার কথা শুনে লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলল, “কি যে বলো না তুমি আপু।”

মাইশা আসিফের থেকে চোখ সরিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল, “যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম। আচ্ছা তুই থাক আমি ফোনটা নিয়ে আসি।”

মায়া:- “হুম যাও।”

মাইশা একবার আসিফের দিকে তাকিয়ে উঠে চলে গেলো। আসিফ পেঁয়াজ এর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতেই বলল, “মায়া পরি! তুমি কি জানো? শাড়িতে তোমাকে পুরো মায়াবতী লাগে।”

——–

ওদিকে…

আবিরেদের রুমে, সামিরা আর রুবি দুজনে দুটো মাঝারি সাইজের বালতিতে ওয়াশরুম থেকে পানি ভরে আনলো। আবির আয়ান দুজনেই ফ্লোরে শুয়ে আছে। সামিরা আয়ানের পাশে আর রুবি আবিরের পাশে বালতি হাতে নিয়ে দাঁড়ালো। তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকালো। সামিরা গুনতে শুরু করলো, 1..2..3…. থ্রি বলা শেষ হতেই দুই জন দুই হাতে বালতি তুলে আবির আর আয়ানের মুখে সমস্ত পানি বালতি উপুড় করে ঢেলে দিলো। সাথে সাথে দুজন ধরফর করে উঠে বসলো। আবির শোয়া থেকে উঠতে উঠতে চিৎকার করলো, “আমি ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে গেছি কেউ বের কর আমায়।”

এদিকে আয়ান ঘুমের ঘোরে চিৎকার করলো, “আবির ব্রো!! সুনামি এসেছে। চলো পালাই! পালাই!”

ওদের দুজনের চিৎকারে বেডে শুয়ে থাকা আরমানও ধরফর করে উঠে বসলো। আর এদিকে সামির আর রুবি হাসতে হাসতে অবস্থা শেষ। সামিরা তো আরমানের পা তলায় বেডে শুয়ে পড়েছে হাসতে হাসতে। আর রুবি সোফায় বসে পেট চেপে ধরে হাসছে। ওদের দুজনের হাসির আওয়াজে পিটপিট করে তাকালো আবির আয়ান। এরপর ঘুম ছাড়তেই দুজন দুজনের দিকে বোকা চোখে তাকালো। ওরা বুঝলো কি ঘটেছে এখানে, আবির রাগে দাঁত কিড়মিড় করে উঠতে উঠতে বললো, “শামুকের বাচ্চা শামুক, আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।”

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

বলতে বলতেই আবির তেড়ে যেতে গেলো সামিরার দিকে। কিন্তু বেচারার ভাগ্য এতোটাই খারাপ যে, মেঝেতে পানি থাকায় তাড়াহুড়ো করে হাঁটার ফলে পা পিছলে ধপাস করে পড়লো আয়ানের উপর। আয়ানও নিজের ভারসাম্য হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো।

আয়ান কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “আল্লাহ গো বাঁচাও আমায়। কাল থেকে পড়তে পড়তে জীবন শেষ। ব্রো তোমার ওই হাতির মতো শরীর টা সরাও আমার উপর থেকে।”

সামিরা রুবি এমনিতেই হাসছিল। এখন আবার ওদের অবস্থা দেখে আরো হাসতে শুরু করলো।‌ হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। ওদের অবস্থা দেখে গম্ভীর আরমান নিঃশব্দে হেসে ফেললো। কিন্তু তারপরই ও মুখে গম্ভীর ভাব টেনে নিয়ে, গম্ভীর গলায় বলল, “সামিরা! এগুলো কোন ধরনের মজা?”

সামিরা হাসতে হাসতে বলল, “এগুলো একজনকে ওয়াশিং মেশিন ঢুকানো আর একজনের উপর সুনামি আছড়ে ফেলার ধরনের মজা।”

সামিরা এই বলে হাসতে হাসতে উঠে পড়লো বিছানা থেকে। এরপর রুবিকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আপু চলো পালাই। নাহলে ওরা ধরতে পারলে অবস্থা শেষ করে দেবে।”

বলেই সামিরা রুবির হাত ধরে রুবি আর ও মিলে এক ছুটে বেরিয়ে গেলো। আবির চেঁচিয়ে উঠলো, “একবার তোদের শুধু পাই, বুঝিয়ে দেবো মজা করা কাকে বলে।”

——-

এদিকে মাইশা মোবাইল হাতে নিয়ে বেরোতেই দেখলো মাইশা আর রুবি আবির দের রুম থেকে বেরিয়ে ছুটে যাচ্ছে হাসতে হাসতে। ও কিছুটা অবাক হলো। আবিরদের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো দেখার জন্য। আবির আর আয়ানের অবস্থা দেখে ও অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করলো, “একি আপনাদের এই অবস্থা কিভাবে হলো? ভিজলেন কিভাবে?”

আরমান:- “আছে না একটা বিচ্ছু। রুবিকে সাথে নিয়ে এই অবস্থা করেছে ওদের। তোরা যা ভিজে জামা গুলো পাল্টে নে, নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।”

এরপর আরমান মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মাইশা, আমার রুমে ওয়ারড্রোবে দেখো শার্ট, টিশার্ট প্যান্ট সব আছে। মায়াকে বলো ওদের জন্য বের করে দিতে। আচ্ছা চলো আমি যাচ্ছি, তুমি একটু এনে দেবে।”

মাইশা:- “তার আর দরকার নেই ভাইয়া। আপনারা উঠছিলেন না তাই মায়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজকের দিনটা এখানেই কাটাবে। এবং তার জন্য সবার জামাকাপড় ওই বাড়ি থেকে আনিয়েছে। ওই যে ওই ব্যাগটাই উনাদের জামা প্যান্ট আছে।‌ বড়ো আম্মু সব ভরে দিয়েছে।”

আরমান বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, “ওহ আচ্ছা। মায়া কোথায়? ওকে দেখছি না যে?”

মাইশা:- “নিচে আছে ভাইয়া। বাগানে পিকনিকের ব্যাবস্থা করেছে পাগলিটা। তাই এখন বাগানে রান্না করছে।”

আবির:- “ওয়াও পিকনিক! তাও আবার বাগানে? দারুন মজা হবে তাহলে। আমি যাই তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়েনি। মাইশা আমার টিশার্ট টা একটু বের করে দিও তো ব্যাগ থেকে।”

বলেই আবির ছুট লাগালো ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে। আয়ান চেঁচিয়ে উঠলো, “ওই ব্রো আমি আগে যাবো। দাঁড়াও।”

আয়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবির ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আরমান বলে উঠলো, “তুই মাইশা দের রুমের ওয়াশরুমে চলে যা আমি আমার রুমে যাচ্ছি।”

আয়ান মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। এরপর ও যেখানে ওদের জামাকাপড়ের ব্যাগ রাখা আছে সেদিকে এগিয়ে গেলো জামা বের করার উদ্দেশ্যে। মাইশা সেটা দেখে বলল, “আপনি যান আমি আপনার ড্রেস নিয়ে আসছি।”

আয়ান:- “নিজের কাজ আমি নিজেই খুব ভালো করে করতে পারি। কারোর হেল্প এর প্রয়োজন নেই।”

মাইশা অসহায় চোখে তাকালো। ওকে যে আর কতা অবহেলা সহ্য করতে হবে আল্লাহই ভালো জানেন। আরমান বিরক্ত কন্ঠে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আয়ান! মাইশা বলল তো ও নিয়ে যাচ্ছে তোর জামা। পুরো ভিজে আছিস, এই অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয়। তুই যা ও নিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে কতদিন চলবে? মানুষ মাত্রই ভুল করে। কিন্তু সে যখন তার ভুল বুঝতে পেরেছে অবশ্যই তাকে আর একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। তাই বলবো যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সব ঠিক করে নে। এভাবে জীবন চলে না।”

আয়ান একবার তাকালো মাইশার দিকে। মাইশা মাথা নিচু করে রেখে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। আয়ান কোনো কিছু না বলেই নির্বিকার ভঙ্গিতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, জামা প্যান্ট না নিয়েই। মাইশা ওটা দেখে এগিয়ে গিয়ে ব্যাগ থেকে জামা বের করতে শুরু করলো।

এদিকে আরমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নিলো রুম থেকে, ঠিক তখনি মাইশা পিছন থেকে ডাক দিলো।

মাইশা:- “ভাইয়া?”

আরমান পিছনে ঘুরে উত্তর দিলো, “হুম? কিছু বলবে?”

মাইশা:- “হ্যাঁ মানে আসিফ ভাইয়া এসেছে। নীচে বাগানে মায়া এতোক্ষণ একা ছিল উনার সাথে। এখন মনে হয় রুবি আপু আর সামিরা গিয়েছে।”

আরমান অবাক হলো, “হোয়াট? আসিফ এখানে কিভাবে আসলো?”

মাইশা:- “উনি ওই বাড়ি গিয়েছিলেন আগে। আমরা সবাই এখানে আছি শুনে উনিও এসেছেন। এটাই বললেন।”

আরমান চিন্তিত গলায় বলল, “তুমি ওর কাছে মায়াকে একা ছাড়লে কেনো? তুমি তো জানোই সবকিছু।”

মাইশা:- “আসলে আমার ফোনটা রুমে ছিলো।‌ কল এসেছিল তাই…”

আরমান:- “আচ্ছা আমি দেখছি।”

বলেই আরমান বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

———–

এদিকে তখন….

মাইশা একবার আসিফের দিকে তাকিয়ে উঠে চলে গেলো। আসিফ পেঁয়াজ এর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতেই বলল, “মায়া পরি! তুমি কি জানো? শাড়িতে তোমাকে পুরো মায়াবতী লাগে।”

আসলে মায়া ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পড়েছিল। আরমানের রুমে আরমানের আর ওর বিভিন্ন ড্রেস রাখা। তার মধ্যে এই হলুদ এক রঙা জর্জেট এর শাড়ি টা ওর ভীষণ পছন্দ হয়েছিল তাই এটাই গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে।

মায়া:- “প্লিজ ভাইয়া মায়াবতী টা বলবেন না। এটা উনি ডাকে। আর আমি চাই এই ডাকটা একান্তভাবে উনারই থাক। আর সবার আড়ালে মায়া পরি ও বলে ডাকার দরকার নেই, সবার সামনে যেমন মায়া বলে ডাকেন তেমন সবার আড়ালেও মায়া বলে ডাকলেই খুশি হবো।”

আসিফ:- “মায়াবতী না হয় নাই বললাম, কিন্তু তুমি কি জানো সেই প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছি সেদিন থেকেই তোমাকে মায়া পরি বলেই ডাকি আমি। তোমার তো আগের কিছুই মনে নেই। তোমার সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল আগে। তুমি অসুস্থ হাওয়ার পর আমি কিছুদিনের জন্য বিদেশে চলে যায়, আর আফসোস! ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলি তোমার মতো মিষ্টি বন্ধুটাকে। তোমার স্মৃতি থেকে সবকিছু মুছে যাওয়ার পর, আমি তোমাকে সময় দিতে পারেনি তাই তুমি আমাকে একেবারেই ভুলে গেলে। যখন অসুস্থ ছিলে তখনও তুমি আমার সাথে খুব ফ্রেন্ডলী মিশতে, কিন্তু ওই যে হঠাৎ করে লন্ডন চলে যাওয়াই ভুলে গেলে আমাকে। ধীরে ধীরে সুস্থে হয়ে উঠলে ঠিকই কিন্তু অসুস্থ থাকার সময় কালের ঘটনা গুলোও ভুলে গেলে।”

মায়া:- “হুম। কিন্ত অসুস্থ থাকার সময় কালেরও কিছু কিছু ঘটনা মনে আছে আমার।”

আসিফ আফসোসের সুরে বলল, “হুম আর সেই কিছু কিছু ঘটনার মধ্যে আমি নেই।”

মায়া:- “হ্যাঁ আমার স্মৃতি অনুযায়ী এই নিয়ে তিনবার দেখা হলো আপনার সাথে।”

আসিফ:- “হ্যাঁ। আর আগের দুই বার তো তুমি আমার সাথে কথায় বলোনি শুধু বিরক্ত হয়ে ইগনোর করেছো।”

মায়া কিছুটা লজ্জিত হয়ে বলে উঠলো, “কিছু মনে করবেন না ভাইয়া। তখন আমার মাথার ঠিক ছিল না। কি করতাম, কি ভাবতাম নিজেই বুঝতে পারতাম না।”

আসিফ:- “আরে এতে গিলটি ফিল করার কিছু নেই। জানি আমি সবকিছু। তবে জানো তো, আমি না ভাবতে পারিনি যে তুমি এতো তাড়াতাড়ি সব ভুলে আরমানকে মেনে নেবে।”

মায়া:- “এতে মেনে না নেওয়ার কি আছে ভাইয়া? উনি যথেষ্ট ভালোবাসেন আমায়। আমার চাওয়ার থেকেও বেশি।”

আসিফ:- “আচ্ছা মায়া আদেও কি আরমান তোমাকে সব ঘটনা খুলে বলেছে? মানে তোমার সাথে ওর করা অন্যায় গুলো?”

মায়া:- “হুম ভাইয়া সব বলেছে। উনি কিচ্ছু লুকাননি আমার থেকে। আর এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়ো কারণ উনাকে মেনে নেওয়ার।

আসিফ:- “কিন্তু তোমার তো আগের কোনো ঘটনাই মনে নেই তাহলে কিভাবে বিশ্বাস করলে যে ও যা বলেছে সব সত্য।”

মায়া:- “আগের ঘটনা মনে নেই ঠিকিই। কিন্তু আমার মন বলেছে উনার প্রতিটি কথায় সত্য। উনার অনুভূতি মিথ্যা নয়। সবাই তো খুশি আমি উনাকে মেনে নিয়েছি তার জন্য। আপনি কি খুশি হননি ভাইয়া?”

আসিফ মায়ার শেষের প্রশ্ন টা শুনে হকচকিয়ে উঠলো যেনো, “না আসলে তেমন কিছু নয়। সবাই খুশি কারণ সবাই আরমানের কথা ভাবছে। আর আমি এগুলো তোমাকে বলছি কারণ আমি তোমার কথা ভাবছি।”

মায়া:- “আমি উনাকে মন থেকে মেনে নিয়েছি ভাইয়া। আর এখন আমি খুশিও আছি। তাই আগের কথা আর ভাবতে চাই না। আপনাকেও আর ভাবতে হবে না। আমি এখন খুব ভালো আছি, আর এটাই যথেষ্ট।”

আসিফ:- “হুম। আমিও মন থেকে চাই, তুমি ভালো থাকো। আচ্ছা মায়া তুমি কি জানো? তোমার সাথে আরমানের বিয়ের একবছর পর আরমান তোমাকে ডিভোর্স দিয়েছিল। আর তাই এগুলো বলছি আমি। তোমার বাবার অসুস্থতার সময় তুমি একা প্রচন্ড অসহায় হয়ে পড়েছিলে।”

মায়া:- “হুম। সব জানি আমি। উনি আমাকে সব কিছুই বলেছে। বাবার অসুস্থতার সময় খুব খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম আমি। সেই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ে কিছু ভুল কাজও করতে গিয়েছিলাম। যেখান থেকে উনিই আমায় ফিরিয়ে এনেছেন। আমাকে কষ্ট দিয়েছে ঠিকই কিন্তু একদিকে দিয়ে যে কতটা উপকার করেছে তা বলার ভাষা নেই। আর এই বিষয়ে কেউ জানে না। কাউকে জানতে দেয়নি উনি। কিন্তু আমাকে জানিয়েছে।”

আসিফ কৌতুহল মিশ্রিত গলায় জিজ্ঞাসা করলো,‌ “কি সেই বিষয়? আমি কি জানতে পারি?”

মায়া:- “না ভাইয়া এই বিষয়টা কাউকে জানানোর মতো নয়। এতে আমিই ছোটো হবো। প্লিজ জোড় করবেন না। এটা আমাদের মধ্যেই থাকতে দিন।”

আসিফ:- “আচ্ছা তুমি বলতে না চাইলে জোড় করবো না।”

মায়া মুখে হাসি নিয়ে বলল, “ধন্যবাদ ভাইয়া। আর ডিভোর্স এর বিষয়টা বললেন না, ওটাও জানি আমি। আপনি হয়তো কিছুটা ভুল জানেন। উনি আমাকে ডিভোর্স দিয়েও দেননি। মানে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিল ঠিকিই কিন্তু উনি সাইন করেননি অথচ আমি সাইন করে দিয়েছিলাম। আর উনি মায়াকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মায়াবতী জন্য। আর সেই পিচ্চি মায়াবতী কিন্তু আমিই।”

ঠিক তখনি সামিরা রুবি ছুটতে ছুটতে চলে আসে। আর যার কারণে আসিফের মুখে বিরক্তি কর ভাব ফুটে উঠে।

মায়া ওদেরকে দেখে বলে, “কোথায় ছিলে তোমরা এতোক্ষণ? এখনো রান্নার জোগাড় করাই শেষ হলো না রান্না কখন হবে? মাইশা আপুও গিয়ে থেকে গেলো।”

সামিরা মায়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “আমার কিউট পিউট ভাবী মনি রাগ করো না প্লিজ। এই তো আমরা চলে এসেছি। ভাইয়া থেকেও উঠিয়ে দিয়েছি ঘুম থেকে। ওরাও এক্ষুনি চলে আসবে। সবাই একসাথে কাজ করলে খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবো দেখো।”

ঠিক তখনি গটগট পায়ে উপস্থিত হলো আরমান। গম্ভীর গলায় মায়াকে ডেকে উঠলো, “মায়া!! রুমে আসো একবার, দরকার আছে।”

মায়া আরমানকে দেখে অবাক গলায় বলল, “একি আপনি এখনো ফ্রেশ হননি? এভাবেই নিচে চলে এসেছেন।”

আরমান মুখে ফুটে উঠলো বিরক্তির ভাব। গম্ভীর গলা আরো কিছুটা গম্ভীর হয়ে উঠলো, “আমি তোমাকে ওখান থেকে উঠে আসতে বলছি। কথা কানে যায় না?”

মায়া:- “আরে বাবা আসছি, এতো রেগে আছেন কেনো? হঠাৎ কি হলো আপনার?”

আরমান কোনো উত্তর দিলো না। মায়া ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই আরমান ওর হাত ধরে গটগট পায়ে হাঁটতে শুরু করলো। আরমানের পায়ের সাথে পা মিলাতে গিয়ে রিতিমত দৌড়াতে হচ্ছে মায়াকে।

আসিফ কেমন যেনো চোখে তাকিয়ে রইল ওদের চলে যাওয়ার দিকে।

এদিকে মায়া বিরক্ত হয়ে বলল, “আরে এভাবে টানছেন কেনো? দেখছেন তো শাড়ি পড়ে আছি। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।”

ইতিমধ্যেই ওরা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করেছে। আরমান হঠাৎই থেমে গিয়ে এক ঝটকায় মায়াকে কোলে তুলে নিলো। তারপর নির্বিকার ভঙ্গিতে হাঁটা শুরু করলো।

মায়া:- “আরে কি করছেন টা কি? এই আপনি আমায় এইভাবে যখন তখন কোলে তুলে নিচ্ছেন কেন হ্যাঁ?

আরমান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জবাব দিলো, “এই না বললে তোমার শাড়ি পড়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে?”

মায়া:- “সেটা তো আপনি টানছিলেন তাই। প্লিজ নামান কেউ দেখে ফেলবে।”

আরমান সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠত উঠতে বলল, “দেখার মতো কেউ নেই এখন এই বাড়িতে। আবির আয়ান রুমে আছে, তাই মুখ বন্ধ রাখো। তবে শাড়ীতে আমার বউ টাকে মাশাআল্লাহ অপূর্ব সুন্দর লাগছে। মায়াবতী থেকে একেবারে হলুদ পরি। নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য।

আরমানের এমন কথায় মায়া লজ্জা পেয়ে আরমানের বুকে মুখ গুঁজলো। যা দেখে আরমানের ঠোঁটে ফুটে উঠলো নিঃশব্দ এক মিষ্টি হাসি।

চলবে….