আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব-৫৩

0
11

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_53
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫 কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

আরমান আর মায়া একসাথে নিচে নামতেই বাগানের অবস্থা দেখে মায়া থমকে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ সে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝে উঠতে পারলো না। চারপাশে একেবারে লন্ডভন্ড—মনে হচ্ছে রান্নার বদলে যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হয়েছে!

আয়ানকে আলু খোসা ছাড়াতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জীবনে কোনোদিন এমন কাজ করেনি সে। ফলে খোসার সাথে অর্ধেক আলুও বাদ দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। একেকটা আলু যেন চিকন হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,“আরে আয়ান ভাইয়া! তুমি আলুর খোসা ছাড়াচ্ছো, নাকি আলুর জানাজা পড়াচ্ছো?”

আয়ান মাথা চুলকে, হেসে বলল, “ভাবী মনি! তুমি এসে গেছো? আমরা ভাবলাম হয়তো রান্না শেষ হওয়ার পর তোমাদের দর্শন পাবো। আর এই আলুর কথা বলছো? শোনো, শিল্পকর্ম তো আর এক দিনে শেখা যায় না। দেখছো না আমি মডার্ন আর্ট করছি!”

এদিকে আসিফের হাতে দেওয়া হয়েছিল পেঁয়াজ কাটার কাজ। পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখের জলে নাকের জলে অবস্থা বেহাল। ছুরি নামিয়ে দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে কাঁদতে কাঁদতে বলল—
—“ভাই, আমি কি রান্নায় হেল্প করতে বসেছি? নাকি নিজের জন্য আজীবনের দুঃখভরা কাহিনি লিখতে বসেছি? এ গুলো পেঁয়াজ? নাকি আমার শত্রু? বুঝলাম না! আহহ!! আমার চোখ জ্বলে যাচ্ছে।”

সামিরা হেসে বলল, “খুব শখ না রান্নায় হেল্প করা? করো আরো হেল্প করো। আমি তো তোমাকে ভালো কাজই দিয়েছিলাম আগে, শুনলে না আমার কথা। মনে রেখো, গরীবের কথা বাসি হলেও মিষ্টি হয়। যদিও আমি গরীব না, বড়োলোক বাপের বেটি….”

এদিকে আবিরের হাতে দেওয়া হয়েছিল ভিজিয়ে রাখা চাল ফুটন্ত পানিতে দেওয়ার দায়িত্ব। পানি থেকে ভাঁপ উঠছে দেখে ও হাতটা একটু উপরে তুলে, মাঝারি সাইজের বাটিতে চাল তুলে হাঁড়িতে ঢালার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বেশ কিছুটা উপর থেকে ঢালার ফলে গরম পানি ছিটকে হাত, পায়ে গায়ে এসে লাগলো।
“ওহ মা গো! বাবা গো! পুড়ে গেলাম!‌ আমি শেষ, ওহ আল্লাহ! কেউ বাঁচাও আমায়।”

চিৎকার করতে করতে লাফাতে লাফাতে সে হাত থেকে চালের বাটিটাও ফেলে দিলো।

লাফাতে লাফাতে আবির একেবারে সোজা গিয়ে পা ডুবালো আলু রাখা গামলার ভেতর। ব্যাস!
গামলা উল্টে আলু সহ আলুর পানি গিয়ে বন্যার মতো পাশে রাখা আদা-রসুন বাটা আর মশলার উপর হামলে পড়লো। মুহূর্তেই সবকিছু লন্ড ভন্ড হয়ে গেলো।

আয়ান:- “হেই ব্রো! কি করলে এটা?”

বলেই আয়ান লাফিয়ে উঠলো। আবির অসহায় মুখ করে তাকালো।

মায়া অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে-মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব। মনে হচ্ছে আর একটু পরেই কেঁদে দেবে মেয়েটা। মাইশা নিজের কপাল চাপড়ে বলল, “হায় আল্লাহ! এরা রান্নায় হেল্প করছে নাকি পিকনিকের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে!”

আয়ান আর আসিফ ওখানে বাবু হয়ে বসে থাকাই ওরাও কিছু টা ভিজে গেলো আলুর পানিতে। ওরা ওঠে দাঁড়াতেই ওদের কোমরের নিচে মানে প্যান্ট থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। সামিরা কিছুটা দুরেই বসে ছিল একটা চেয়ারে, হাসতে হাসতে ওর গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। ও হাসতে হাসতেই বললো, “আয়ান ভাইয়া! আসিফ ভাইয়া! তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে তোমরা প্যান্টে হিসু করে দিয়েছো।”

কথটা বলেই আবারও হেসে কুটিকুটি সামিরা।ওর কথা শুনে মাইশাও মুখ চেপে হেসে ফেললো। এদিকে আসিফ আর আয়ান রাগী চোখে একবার আবিরের দিকে তাকাচ্ছে তো আর একবার সামিরার দিকে তাকাচ্ছে।

আরমান ঠোঁট কামড়ে হাসি চেপে গিয়ে গম্ভীর সুরে বলল, “তাহলে বুঝলাম, আজকের পিকনিকে আমরা আলু, বাটা মশলা, পেঁয়াজ চাল আর চিকেনের স্যুপ খাবো।”

আরমানের এমন কথায় মায়া এবার সত্যি সত্যি আওয়াজ করে কান্না শুরু করলো। সবাই থতমত খেয়ে গেলো মায়ার কান্নায়, তারমধ্যে আরমান ও বাদ গেলো না।

আরমান:- “আরে তুমি কাঁদছো কেনো?”

মায়া কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “দিলো! আমার শখের পিকনিকের বারোটা বাজিয়ে দিলো।”

আরমান মায়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল, “এসবের কি দরকার ছিল বলো তো? রেস্টুরেন্টে থেকে অর্ডার করে খাবার আনিয়ে নিলেই তো পারতে। তোমার যা ইচ্ছা সব পেয়ে যেতে সেখানে।”

কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো মায়া, “হ্যাঁ আপনি তো কোটিপতি মানুষ। এসি রুমে পায়ের উপর পা তুলে বসে যা অর্ডার করবেন পেয়ে যাবেন। তাই এইভাবে নিজে হাতে রান্না করে, সবাই মিলে পিকনিক করার যে আনন্দ, সেটার মূল্য বুঝবেন না।”

আরমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বাড়ির কেয়ারটেকার রহিমা খাল আর রহিমা খালার স্বামীকে ডেকে সবকিছু পরিষ্কার করে আবার নতুন করে আয়োজন করতে বলল। শাস্তি স্বরূপ আবিরকে দিয়েও পরিস্কার করালো। এরপর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবকিছু আবার নতুন করে আয়োজন করলো। আরমান হেল্প করছে মায়াকে, মায়া খুশি মনে আবারও কাজে লেগে গেলো। এই বার আর আবির আয়ান আসিফ কাউকেই কোনো কিছুতে হাত দিতে দেয়নি মায়া। রুবি মাইশা রহিমা খালা ওরা সবাই মিলে করছে। বাকি ছেলে গুলো বসে বসে দেখছে।

প্রায় তিনটের দিকে মায়ার রান্না শেষ হলো। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। সেই থেকে আরমান মায়াকে একবারের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেয়নি। ছায়ার মতো মায়ার পাশে থেকেছে। মায়া বলেছে এই গরমের মধ্যে না থেকে দূরে গিয়ে বসতে, কিন্তু আরমান তা শুনেনি। মায়ার হাতে হাতে সবকিছু এগিয়ে দিয়ে মায়াকে হেল্প করেছে। সাথে মাইশা রুবি তো ছিলোই।

এখন মায়া বিরিয়ানি দমে বসিয়ে স্যালাড রেডি করতে বসেছে। পাশেই আরমান বসে আছে।‌ আর বাকি সবাই আশেপাশে বসে আছে। আসিফ চোখ বন্ধ করে খুব জোড়ে শ্বাস টেনে, বিরিয়ানির ঘ্রাণ শুঁকে বলল, “আহহ! অনেক সুন্দর ঘ্রাণ বেরিয়েছ।‌ আর কতক্ষন লাগবে মায়া? বিরিয়ানির ঘ্রাণে ক্ষিধে দ্বিগুন হারে বেড়ে গিয়েছে আমার।”

আবির:- “তোর ক্ষিধে বেড়ে গিয়েছে আর আমার পেটে ইঁদুর ছুঁচো সব যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।”

সামিরা:- “সেই যুদ্ধে ইঁদুর ছুঁচো শহীদ হয়ে মারা গিয়ে পেটের মধ্যে থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ছিহ কি গন্ধ।”

সামিরা নাক সিঁটকে বলল শেষের কথাটা।

আবির দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলল, “শামুকের বাচ্চা শামুক! তুই চুপ থাক। তোকে তো আমি পড়ে দেখে নেবো। এখনো সেই প্রতিশোধ নেওয়া বাকি আছে।”

সামিরা মুখে কিছু না বলে ভেংচি কাটলো।

মায়া আসিফের কথায় কোনো রিপ্লাই না দিয়ে পাশে থাকা আরমানের দিকে তাকালো। আরমান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে শান্ত চোখে। নিচে আসার পর থেকে আসিফ অনেক বার চেষ্টা করেছে মায়ার সাথে কথা বলার কিন্তু মায়া ইগনোর করেছে আসিফকে।

মাইশা:- “এই তো ভাইয়া। সব তো হয়েই গেছে। সবাই ফ্রেশ হয়ে আসুন, তার মধ্যেই সব রেডি হয়ে যাবে। তাই না মায়া?”

মায়া:- “হুম আপু। যান সবাই ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

আরমান অবাক গলায় বলল, “ফ্রেশ হয়ে আসবে মানে? খাবো কোথায়? এই ফাঁকার মধ্যে?”

মায়া:- “হ্যাঁ। অবশ্যই। তাছাড়া আবার কোথায় খাবো। বাগানে মাদুর পেতে বসে সবাই একসাথে খাবো, এটাই তো মজা।”

আরমান:- “হোয়াট? এখানে এইভাবে খেতে হবে? চেয়ার টেবিলের ব্যাবস্থা করি অন্তত।”

মায়া বিরক্ত হলো প্রচন্ড, “এই আপনি এমন কেনো হ্যাঁ? যান আপনাকে খেতে হবে না, আমারা সবাই এখানে খাবো আর আপনি বাড়ির ভিতর ডাইনিং টেবিলে বসে খাবেন। হয়েছে? শান্তি?”

আরমান:- “আরে আমি কখন বললাম যে আলাদা খাবো বাড়ির ভিতর। যাস্ট বললাম যে এখানে টেবিল চেয়ারের ব্যবস্থা করি।”

মায়া:- “নাহ! অত ভালো আপনাকে করতে হবে না। কোনো চেয়ার টেবিল লাগবে না আমাদের। বুঝেছেন?”

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

আরমান অসহায় ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো। এরপর মায়া মাইশাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আপু! বাড়ির পিছন দিকে কলা গাছ দেখেছি আমি। সেখান থেকে কলা পাতা নিয়ে আসার ব্যাবস্থা।”

আরমান:- “কিন্ত মায়াবতী, কলা পাতা….”

মায়া আরমানের দিকে তাকাতেই আরমান থেমে গেলো কথা শেষ না করেই। মায়া ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি হলো? থেমে গেলেন কেন? বলুন কি বলতে যাচ্ছিলেন।”

আরমান:- “নাহ কিছু না। থাক। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও‌।”

মায়া মাইশার দিকে ঘুরে বলল, “তুমি তো আবার একা পারবে না আপু। আয়ান ভাইয়া! তুমিও যাও আপুর সাথে।”

আয়ান:- “কিন্তু ভাবী মনি কলা পাতা দিয়ে কি করবে?”

মায়া প্রচন্ড রেগে গেলো এবার।

মায়া:- “বিদেশে কত বছর থেকে এলে তুমি?”

আয়ান নিজের প্রশ্নের উত্তরের বদলে অন্য প্রশ্ন শুনে বোকা গলায় বলল, “চার বছর।”

মায়া:- “চার বছর বিদেশে থেকে খুব স্মার্ট হয়ে গেছো না? বিদেশে গিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে? এই দেশে যে বাচ্চা থেকে বুড়ো হলে, আর পিকনিকে কলা পাতা দিয়ে কি করে জানো না? স্মার্ট গিরি দেখাও আমাদের সামনে?”

মায়ার ঝাড়ি খেয়ে মুখ লটকে ফেলে আয়ান। আবির ফিসফিস করে আয়ানের কানে বলে, “কড়াই তেঁতে আছে ব্রো। এই সময় পানির ছিটা দিলেই, ছ্যাঁক করে উঠবে। তাই সাবধান।”

আয়ান কিছু না বলেই এগিয়ে গেলো বাড়ির পিছনদিকে। ইতিমধ্যেই মাইশা সেখানে চলে গেছে। মাইশা কলা গাছের নিচে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে‌ আছে। ও চলে তো এলো, কিন্তু এবার কলা পাতা পারবে কি করে? কারণ ভালো এবং কচি কলাপাতা গুলো গাছের ডগে অনেকটা উপরে আছে। যদিও গাছ গুলো খুব একটা বড়ো নয়, কিন্তু তবুও ওর নাগালের বাইরে।

আয়ানও এসে দাঁড়ালো ওখানে। মাইশা কে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো ও। মুখে কিছু না বলে, নিচের দিকে থাকা মাঝে মাঝে ফেটে ও নষ্ট হয়ে যাও কলা পাতার ডাল ভাঙ্গতে শুরু করলো।

মাইশা:- “আরে আরে এগুলো ভাঙছেন কেনো?”

আয়ান ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি কর কন্ঠে বলল, “তাহলে কোন গুলো ভাঙবো?”

মাইশা কপাল চাপড়ে বলল, “আপনি আদেও জানেন এই কলা পাতা দিয়ে কি করবে মায়া?”

আয়ানের মাইশার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই কিন্তু তবুও কৌতুহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো, “কি করবে?”

মাইশা অবাক গলায় বলল, “সত্যিই জানেন না আপনি?”

আয়ান বিরক্ত হয়ে বলল, “জানলে কি আর জিজ্ঞাসা করি?”

মাইশা:- “খাওয়া হবে এই কলা পাতা দিয়ে।‌ মানে প্লেটের বদলে এই কলা পাতা দিয়ে খাবো আমরা। আপনি কি কখনো দেখননি কলা পাতা দিয়ে খেতে?”

আয়ান:- “ইন্টারনেটে ছবি দেখেছি, হ্যাঁ হিন্দু ধর্মে এই কলা পাতা দিয়ে খেতে দেওয়া হয় পূজোতে। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি যে ভাবী মনি ও এই ব্যাবস্থা করবে। বেশ ইন্টারেস্টিং তো ব্যাপারটা।”

মাইশা:- “হ্যাঁ! গ্রামে থাকতে আমরা যখন অনেক ছোটো ছিলাম, তখন এই ভাবে মাঠে পিকনিক করতাম। আর কলা পাতা দিয়েই খেতাম।”

তখনি শোনা গেলো আবিরের কন্ঠ, “আরে তোরা মিয়া বিবি এখানে গল্প করছিস, কলা পাতা না পেড়ে?”

আবিরের কথায় আয়ান ওর দিকে রাগী চোখে তাকালো। আবির সেদিকে কোনো পাত্তা দিলো না। মাইশা অসহায় গলায় বলল, “কিভাবে পাড়বো? অনেক উঁচুতে আছে তো? নাগাল পাওয়া মুশকিল।”

আবির:- “মাইশা এক কাজ করো। আয়ানকে কলা গাছে উঠিয়ে দাও।”

আয়ান মুখ বেঁকিয়ে বলল, “আমাকে অতোটাও বোকা ভেবো না ব্রো। আমি খুব ভালো করে জানি কলা গাছে উঠা যায় না।”

আবির:- “তাহলে, মাইশাকে কোলে তুলে ধর। তাহলেই তো নাগাল পাওয়া যাবে।”

আয়ান একবার তাকালো মাইশার দিকে। মাইশা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে অন্য দিকে। আয়ান এক কথায় জবাব দিলো, “আমি পারবো না।”

আয়ানের এমন জবাবে মাইশার মুখ টা ছোটো হয়ে গেলো। আবির দুষ্টু হেসে বলল, “আচ্ছা তাহলে আমি কোলে তুলেছি ওকে। মাইশা এসো আমি তোমাকে তুলছি আর তুমি পাড়বে।

মাইশা দ্বিধায় পড়ে গেলো। আমতা আমতা শুরু করলো, “ভাইয়া..ইয়ে.. মানে…”

আবির এগিয়ে আসছিল মাইশার দিকে। কিন্তু আচমকা আয়ান দুই হাত দিয়ে মাইশার পেট জড়িয়ে ধরে উপরে তুলল। আয়ানের ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলো মাইশা। ওদের রিলেশন তিন বছরের থাকলেও জীবনে এই প্রথম কাছে আসা।

আবির একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “কি হলো? এই না তুই বললি উঠাতে পারবি না মাইশা কে?”

আয়ান দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “চুপ থাকো ব্রো।‌ এতোই যদি কাউকে কোলে তুলার ইচ্ছা তাহলে বিয়ে করে নাও। বয়সটা তো আর কম হলো না।”

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নাটকিয় ভঙ্গিতে বলল, “আমার দুঃখটা তুই বুঝলি রে ভাই। আমার না হওয়া বউ টা যদি একটু বুঝতো, তাহলে কি আর বিয়ে না করে এইভাবে সিঙ্গেল ঘুরে বেড়াতাম?”

আয়ান আবিরের কথায় পাত্তা না দিয়ে মাইশাকে ধমকে উঠলো, “তুমি এভাবে স্ট্যাচু হয়ে আছো কেনো। তাড়াতাড়ি পারো, কতক্ষন ধরে রাখবো এইভাবে?”

মাইশা আয়ানের ধমকে নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো যেনো। ও তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে কলা পাতার ডাল ধরে টানাটানি শুরু করলো। বেশ কিছুটা শক্ত হওয়ায় ভাঙছে না, কিন্তু মাইশা তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মাইশা খুব বেশি নড়াচড়া করাই আ আয়ানের তুলে ধরে রাখতে অসুবিধা হচ্ছে।

আয়ান:- “আরে এভাবে এতো নড়ছো কেনো পড়ে যাবো তো? কলা পাতা পাড়ছো নাকি কলা পাতার সাথে যুদ্ধ শুরু করেছো? নিজেও পড়বে আমাকেও ফেলাবে।”

তখনি শোনা গেলো রুবির কন্ঠ, “জানতাম এই অবস্থায় হবে। এইটা নাও আপু। আর এক চোট মারো, দেখো কেটে যাবে।”

রুবির হাতে একটা মাঝারি সাইজের দা।

আবির:- “এটা আবার কোথায় পেলে তুমি?”

রূবি:- “রহিমা খালার থেকে নিয়ে এসেছি।”

———–

সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে বাগানে মাদুর পেতে গোল হয়ে বসেছে। এই বাড়ির দারোয়ান আর রহিমা খালা ও তার স্বামীও বাদ যায়নি। তাদেরকেও ডেকে এনেছে মায়া। সবাইকে নিজে হাতে পরিবেশন করলো মায়া। পরিবেশন করা শেষ হতেই আরমান মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “তুমিও বসো, খেয়ে নাও।”

মায়া:- “সবার খাওয়া হয়ে গেলে আমি খেয়ে নেবো।”

আরমান:- “তুমি না বললে? পিকনিকে সবাই একসাথে বসে খাওয়ার মজাই আলাদা। এখন তুমি কেনো বাদ যাবে? খেয়ে নাও। সব তো রাখাই আছে, যার যা দরকার পড়বে নিজে নিয়ে নেবে।”

সামিরা:- “হ্যাঁ আপু তুমিও খেতে বসো। না হলে পিকনিকের মানে কি হলো?”

সবার জোড়াজুড়িতে মায়াও খেতে বসে গেলো আরমানের পাশে।

———

পরের দিন সন্ধ্যায় মায়া শাহরিয়ার ম্যানশনের ড্রয়িংরুমের সোফায় মুখ ভার করে বসে আছে। বাড়ির বড়োরাও আছে। সবাই যে যার মতো গল্প করছে। ঠিক তখনি ওখানে উপস্থিত হলো আসিফ। আসিফ মায়াকে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখে সোফায় বসতে বসতে বলল, “কি ব্যাপার? মায়া রানির মুখ বাংলার পাঁচের মতো হয়ে আছে কেনো?”

আসিফের মা, মানে আরমানের ফুপি বলল, “আরে দেখ না, আরমান আবির আয়ান অফিস থেকে বিকেলে ফিরে এসে, কোথায় যেনো বেরিয়ে গেছে তাড়াহুড়ো করে। মাইশা কেও নিয়ে গেছে, কিন্তু কোথায় গিয়েছে কাউকে বলে যায়নি। আরমানকে কল করেছিল মায়া কিছুক্ষণ আগে, বলেছে ফিরছি। কিন্তু এখনো আসার নাম নেই।”

আসিফ:- “ওহ আচ্ছা। মায়া রানি মন খারাপ করো না, আরমান নেই তো কি হয়েছে? আমরা সবাই তো আছি। আর ও এমনই কাউকে কিছু বলে না ঠিক মতো। নিজের যেটা মন হয় সেটাই করে।”

মায়ার পাশে বসা সামিরা বলে উঠলো, “ওই ভাইয়া! তুমি একদম আমার বড়ো ভাইয়ার নামে বদনাম করবে না। এমনিতেই ভাবী মনি চিন্তায় আছে।”

আসিফ:- “বদনাম কই করলাম? যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম। আর শুধু কি আরমানই তোর্ ভাইয়া আমি কেউ না?”

সামিরা:- “সেটা কখন বললাম আমি?”

সাবিনা বেগম:- “আরে থাম তোরা। শুরু হয়ে গেলো তো তোদের ঝগড়া? আসিফ যাও আব্বু ফ্রেশ হয়ে নাও, এই তো হসপিটাল থেকে ফিরলে।”

আসিফ:- “যাচ্ছি মামিমা, তার আগে তোমাদের সাথে একটু গল্প করি।”

ঠিক তখনি বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠলো।

আরমানের ফুপি:- “ওরা চলে এসেছে মনে হয়। রুবি দেখো তো।”

রুবি গেলো দরজা খুলে দিতেই। একে একে আবির আয়ান আরমান মাইশা প্রবেশ করলো। তবে মাইশার জড়িয়ে ধরে রাখা ব্যাক্তিটিকে দেখে অবাক হলো সবাই। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।

চলবে….