আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব-৬০ এবং শেষ পর্ব (প্রথমাংশ)

0
11

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#শেষ_পর্ব (প্রথমাংশ)
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫 কপি করা সম্পূর্ণ

মায়া আয়নাই নিজের প্রতিবিম্ব দেখে হতবাক। ও বুঝতে পারছে না ওকে কেনো একজন ব্রাইডের মতো করে সাজানো হয়েছে। মায়াকে সাজিয়ে দিয়ে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। মায়া ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় সামনে অবাক হয়ে নিজের সাজ দেখছে। হঠাৎই নিজের পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে ঘোর কাটলো ওর, আয়নায় দেখতে পেলো, আরমান পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে ওকে। শাড়ি ভেদ করে পেটের মধ্যে কি যেনো লেপে দিচ্ছে আরমান, সেই স্পর্শে কেঁপে উঠছে মায়া, পুরো শরীরে শিহরন বয়ে যাচ্ছে ওর। চোখ বন্ধ করে আছে মায়া, আরমান মায়ার চোখে ফুঁ দিয়ে বলল, “আমার বউকে সবার প্রথম হলুদ লাগানোর অধিকার একমাত্র আমারই।”

এরপর মায়ার পেটে হঠাৎই হাতের চাপ দিয়ে, আরো কিছুটা নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আরমান। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে মায়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে নেশাক্ত কন্ঠে ফিসফিস করে উচ্চারণ করলো আরমান, “মায়াবতীর সৌন্দর্য হাজার গুণ বেড়ে গেছে। চোখ ফেরানো যাচ্ছে না তার থেকে। যেনো আসমান থেকে হলুদ পরী নেমে এসেছে জমিনে।”

মায়া:- “উফফ্ কিন্তু এমন সাজ কেনো গম্ভীর সাহেব? দেখে তো আমাকেই গায়ে হলুদের ব্রাইড মনে হচ্ছে।”

আরমানের উত্তর দেওয়ার আগেই, রুমের দরজা নক করে চিল্লিয়ে উঠলো সামিরা, “ভাইয়া!! দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। অনুষ্ঠান শুরু হবে, আমি জানি তুমি রুমে আছো তাই রুমের দরজা বন্ধ। তাড়াতাড়ি ভাবি মনিকে ছেড়ে দাও প্লিজ।”

আরমান প্রচন্ড বিরক্ত হলো, ধমকে উঠলো সামিরাকে উদ্দেশ্য করে, “সামিরা!! তুমি কিন্তু দিনকে প্রচন্ড দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো। মার খাবে কিন্তু আমার হাতে।”

সামিরা বিড়বিড় করে উঠলো, “হ্যাঁ! সত্যি কথা বললেই দোষ। হুঁ।” 😏

আরমান মায়ার কপালে স্নেহের চুম্বন দিয়ে বলল, “নিচে গেলেই সব বুঝতে পারবে। নিজের এই ছোট্ট মাথায় আর এতো প্রেশার দিতে হবে না। যাও। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

আরমান এগিয়ে গিয়ে রুমের দরজা খুলে দিলো। সামিরা হুড়মুড় করে রুমে প্রবেশ করলো, সাথে আরো কিছু কাজিন আছে। ওরা গিয়ে মায়াকে ঘিরে ধরলো, আরমান একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো, এইদিকে মায়া তখনো কিছুই বুঝতে পারছে না ওকে নিয়ে কি হচ্ছে।

————

টাটকা গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা আরো বিভিন্ন ফুল কাঁচা ফুলের গন্ধে পুরো স্টেজ ম ম করছে। যেনো একটা ফুলের বাগানে প্রবেশ করেছে সবাই। সেই স্টেজে মায়াকে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো রাজকীয় দেখতে লাল রঙের সোফা।‌ বেশ কিছু গ্রামের মহিলারা ঘিরে ধরলো মায়াকে। একজন মহিলার হাতে একটা ডালা, ডালার মধ্যে আছে, একটা বাটিতে হলুদ, একটা বাটিতে সরিষার তেল, কিছু ধূব্রা ঘাস, কড়ি, একটা লাল গামছা আরো বেশ কিছু জিনিস রাখা আছে।

মায়া তো এইসব কিছু দেখে পুরোই হতবাক, বোকা বোকা চোখে দেখছে সবকিছু।

ও অবাক গলায় বলল, “আরে তোমরা আমাকে কেনো এখানে বসাচ্ছো?”

আরমানের আব্বুর চাচী মা, মানে আরমানের দাদী বলে উঠলো, “ছেড়ি কয় কি? হ্যাঁলা তোর বিয়া, তোর গায়ে হলুদ, তোরে বসামু নাতো কি আমি বসমু?”

মায়া পুরোই বোকা বনে গেলো যেনো। ও গোল গোল চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “আমার বিয়ে মানে?”

গ্রামের এক মহিলা বলে উঠলো, “যার বিয়ে তার খোঁজ নাই আর পাড়া পড়শির ঘুম নাই। এই মেয়ে কি নিজেই জানে না? যে ওর বিয়ে?”

সামিরা তাড়াতাড়ি করে বলল, “ভাবি মনি! আয়ান ভাইয়া আর মাইশা ভাবির সাথে তোমার আর বড়ো ভাইয়ার ও বিয়ে হবে। এটা আগে থেকেই ঠিক ছিল, শুধু তুমি জানতে না।”

মায়া অবাক গলায় চেঁচিয়ে উঠলো, “হোয়াট!! আমাদেরও বিয়ে? মানে কি ভাবে কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

সামিরা:- “অতো বুঝতে হবে না তোমায়। শুধু এইটুকু জেনে রাখো যে, ভাইয়া তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। আর তুমি খুব ভালো ভাবেই সারপ্রাইজ হয়েছো। আগেই ছোট ভাইয়ার আর ছোটো ভাবি মনির গাঁয়ে হলুদ হয়ে গেছে, এখন তোমার পালা। তাই অবাক পরে হবে, এখন হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হোক।”

আরমানের মা সাবিনা বেগম এগিয়ে এলো মায়ার দিকে। মায়ার গালে হাত রেখে নরম গলায় বলল, “আমারা প্রথমে তোমার আর আরমানের বিয়েটাই ঠিক করেছিলাম, আরমান বলল তাহলে একসাথে আয়ান আর মাইশার বিয়েটাও হয়ে যাক। তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল আরমান তাই তোমায় কিছু জানানো হয়নি। আরমানকে তো তুমি চিনোই।”

গায়ে হলুদের স্টেজটা বাগানে করা হয়েছে। সেখানে থেকেই তিনতলা জমিদার বাড়িটা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। মায়া স্টেজে দাঁড়িয়ে তাকালো বাড়ির দুইতলার ডান দিকের একটি নির্দিষ্ট রুমের দিকে। সাথে সাথেই দুই জোড়া চোখের দৃষ্টি মিলল।

আরমান দাঁড়িয়ে আছে সেই রুমের বারান্দায়, ঘেরা দেওয়ালে হাত দিয়ে ঝুঁকে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার চোখ মায়ার দিকে আবদ্ধ। মায়া লাজুক হাসি দিলো। আরমানের ঠোঁটেও ফুটে উঠলো এক সুক্ষ্ম হাসি, যা এই মুহূর্তে মায়া ছাড়া আর কারোর বোঝার সাধ্য নেই।

সাবিনা বেগম সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনারা অনুষ্ঠান শুরু করুন।”

আরমানের দাদি:- “এডা কি কথা কও বড়ো বউ? তোমার ছেড়াডা কই? তারে আগে হলুদ না লাগায় এরে কেমনে লাগামু? তার গায়ের হলুদ লইয়াইতো তার বউ এর গায়ে দিমু।” (আমি গ্রামের ভাষা তেমন একটা জানি না, তাই ভুল ত্রুটি মাফ করবেন)

আর এক জন মহিলা বলে উঠলো, “হ্যাঁ আগে ছেলেকে ডাকুন ভাবি, আগে ছেলের গায়ে হলুদ দিতে হবে।”

ওদের কথা শুনে মিসেস সাবিনা বেগমের মুখ চুপসে গেলো। উনি উনার জা দের দিকে তাকালেন অসহায় চোখে। আনজুমা বেগম উনার চাচী শ্বাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আসলে ছোটো মা, আরমান এই সব হলুদ মাখতে পছন্দ করে না। তাই ও আসবে না আগেই বলে দিয়েছে।‌”

আরমানের দাদী:- “এইডা কোনো কথা হইল? হলুদ মাখতে পছন্দ করে না বলে কি বিয়াতেও হলুদ মাখবে না? ডাকো তারে, আমি দেখতাছি মাখে কি না মাখে।”

সামিরা একটা শুকনো ঢোক গিলল। আরমান সেই প্রথম থেকে এইগুলো পছন্দ করে না, ওদের আত্মীয় স্বজনদের কারোর বিয়ের অনুষ্ঠানেও যায় না ও। আজকেও সাবিনা বেগম আনজুমা বেগম এবং উনাদের দুই জা অনেক বুঝিয়েছিল, কিন্তু ও কিছুতেই এই হলুদ টলুদ মাখবে না, স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে সেটা। মায়াকে নিয়ে সবধরনের অনুষ্ঠান, নিয়ম পালন করতে পারে তাতে ওর কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ও এইসব গ্রামের নিয়ম মানতে পারবে না।

সামিরা:- “আসলে ভাইয়া এসব গ্রামের নিয়ম মানে না। আপনারা ভাবী মনি নিয়েই শুরু করুন অনুষ্ঠান।”

একজন মহিলা বলে উঠলো, “নিয়ম মানে না বললেই হলো? তাহলে বিয়ে কে করতে বলেছে?”

মায়া তাকালো সাবিনা বেগমের দিকে, “আম্মু আমি একবার কথা বলি উনার সাথে?”

মিসেস সাবিনা বেগম কি বলবেন ভেবে পেলেন না। আনজুমা বেগম বললেন, “তুমি কথা বলবে? কিন্তু ওর যা জেদ, ও কি রাজি হবে?”

মায়ার:- “উনার জেদ আছে আর আমার কি জেদ নেই নাকি? উনি হলুদ না মাখলে আমিও মাখবো না। সামিরা চলো তো আমার সাথে।”

ইতিমধ্যেই চারিপাশে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। সবিনা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।‌ আর এদিকে মায়া সামিরাকে নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। যেতে যেতেই তাকালো আরমানের রুমের বারান্দার দিকে, এখন আর সেখানে আরমানকে দেখা গেলো না।

মায়া আরমানের রুমে গিয়ে দেখলো, আরমান সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। মুখের ভঙ্গি গম্ভীর, মনোযোগ সহকারে ল্যাপটপে কিছু একটা করছে।

মায়া সোজা গিয়ে ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলো। আরমান প্রচন্ড রেগে গিয়ে চিৎকার করতে চাইলো, “What the…”

নিজের কথা শেষ করার আগেই চোখ পড়লো মায়ার উপর। মায়া দুই কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আরমানের রাগী দৃষ্টি শান্ত হয়ে গেলো।

আরমান:- “এখানে কি করছো তুমি? এখনো শুরু হয়নি হলুদের অনুষ্ঠান?”

মায়া:- “আপনাকে ছাড়া কিভাবে শুরু হবে?”

আরমান:- “আমার ওইসব হলুদ টলুদ মাখতে ভালো না। তার উপরে আছে আবার গ্রামের কিসব আজব নিয়ম। তুমি যাও, মেখে নাও হলুদ।”

মায়া ভ্রু কুঁচকে বলল, “বিয়েটা কি আমার একার যে আমি একা হলুদ মাখবো? আর এমনিতেও ছেলের গায়ে মাখানো হলুদ নিয়ে মেয়েকে মাখাতে হয়, এটাই নিয়ম। আর আমি এই নিয়ম পালন করতে চাই, তাই আপনাকেও হলুদ মাখতে হবে।”

আরমান:- “আচ্ছা তাহলে এক কাজ করো, হলুদ এখানে নিয়ে আসো, তারপর আমার হাতে একটু লাগিয়ে সেটা বাকি হলুদের সাথে মিক্সড করে নাও। আমার গায়ে লাগানো একটু হলুদ হলেই তো হলো।”

বলেই আরমান আবারও ল্যাপটপ অন করে নিজের কাজ করতে শুরু করলো। মায়া প্রচন্ড বিরক্ত হলো। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো ও। বিরক্ত গলাতেই বলে উঠলো ও, “এই আপনি এতো ঘাড় ত্যাড়া স্বভাবের কেনো বলুন তো?”

আরমান:- “আমি এমনই, সেটা তো তুমি আগে থেকেই জানো।”

এরপর আরমান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই নিজের কাজ করতে করতেই বলল, “এখনো সময় আছে কিন্তু। তাই তুমি চাইলে বিয়েটা….”

নিজের কথাটা আর নিজে থেকেই সম্পূর্ণ করলো না আরমান, তার জায়গায় হালকা বাঁকা হাসি দিলো।

মায়া রাগী গলায় বলল, “আমার তো মনে হচ্ছে আপনার নিজেরই আমাকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই। তাই এতো বাহানা করছেন।”

আরমান মায়ার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, “তোমার এটাই মনে হচ্ছে?”

মায়া একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল, “হ্যাঁ..না মানে আপনি নিচে গিয়ে হলুদ মাখবেন কিনা বলুন?”

আরমান আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল, “বললাম তো নিচে যাবো না, এখানেই একটু হলুদ নিয়ে আসতে বলো। আর এখন একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ করছি, প্লিজ কাজটা শেষ করতে দাও।”

মায়া:- “সত্যিই যাবেন না তাহলে?”

আরমান নির্লিপ্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো, “না।”

সাথে সাথে মায়া আরমানের ল্যাপটপ তুলে নিয়ে এক হাতে শাড়ি ধরে মারলো ছুট। ওকে আর পাই কে? আরমান বিরক্ত হয়ে তাকালো মায়ার ছুটে চলে যাওয়ার দিকে। ওর কাজটা সত্যিই ইম্পর্টেন্ট ছিলো, কিন্তু মায়া বুঝলে তো। আরমান যেমন ঘাড় ত্যাড়া স্বভাবের মায়াও ঠিক তেমনি। মায়ারও প্রচন্ড জেদ আছে, যেটা বলবে করেই ছাড়বে। আরমান বিরক্ত হয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এরপর বেরিয়ে গেলো মায়ার কাছে থেকে ল্যাপটপ আনার উদ্দেশ্যে।

এদিকে মায়া ল্যাপটপ লুকিয়ে রেখে বাগানে এসে স্টেজে রাখা সোফায় আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে। এরপর মায়া ভাব নিয়ে বলল, “এখনি আসবেন উনি। আপনারা সবকিছু রেডি করুন।”

আরমানের মা চাচীরা একে অপরের দিকে তাকালো। ওরা ভাবছে সত্যিই কি আরমানের আসবে?

হ্যাঁ সবাইকে অবাক করে আরমান গম্ভীর মুখে গটগট পায়ে এগিয়ে আসছে। সবার মুখে ফুটে উঠলো মিষ্টি হাসি। আর মায়া হাসছে বাঁকা হাসি। আরমানের এক চাচী বলে উঠলো, “ভাবী! তোমার ছেলে দেখছি বউ পাগলা। আমরা এতো করে বললাম রাজি হলো না আর এখন বউয়ের কথায় ঠিকই চলে এলো।”

ওরা তো আর জানে না আসল ঘটনা। মিসেস সাবিনা বেগম এবং আনজুমা বেগমও প্রচন্ড অবাক হলো, তবে ওরাও খুশি। আরমান গম্ভীর মুখে গটগট পায়ে স্টেজে উঠে আসলো। এদিকে মায়া উপরে উপরে সাহস দেখালেও ভিতরে ভিতরে কিন্তু ঠিকই ভয় পাচ্ছে। আরমান মায়াকে কিছু বলবে তার আগেই ওরা দাদী টেনে আরমানকে বসিয়ে দিলো।

দাদি:- “এই তো আমার দাদুভাই আইয়া পড়ছে। নে তোরা এহন শুরু কর। অই ছেড়ি তুই এহান থেইকা উঠ। আগে তোর স্বামীর গায়ে হলুদ দেওয়া হবে এরপর তোর।”

উনার কথায় মায়া সোফা থেকে উঠে দাঁড়য়ে পাশে একটা চেয়ারে বসলো। এইদিকে আরমান কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে ঘিরে গ্রামের সব মহিলারা ঘুরতে শুরু করলো। মুখে গাইছে গীত, আর একজন মহিলা পাশে বসে ঢোল বাজাচ্ছে। কিছু মহিলা তো সেই ঢোল আর গীতের তালে নাচতে শুরু করেছে। আরমান প্রচন্ড বিরক্ত হলো, এদিকে ও কিছু বলতেও পারছে না। মেয়ে বউরা আরমানের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে হাত তালি দিচ্ছে, মুখে গাইছে গীত, আর কেউ কেউ কোমর দুলিয়ে নাচ করছে, আরমান ফাঁক ফোকর দিয়ে মায়ার দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছে একবার করে, আর এইদিকে মায়া আরমানের এমন রিয়্যাকশন দেখে দুষ্টু হাসছে।

একে একে হাবিজাবি বিভিন্ন নিয়ম পালন করা হলো। এরপর দাদি পাশ থেকে সামিরাকে ডেকে বলল, “এই সতীন, এহানে আয়। তোর ভাইয়ের মাথায় তেল ঢালতে হইবো।”

আরমান চেঁচিয়ে উঠলো, “হোয়াট?? তেল??”

দাদি:- “হ তেল। বেশি কথা কস না দাদু ভাই, চুপচাপ বস এহন।”

আরমান রাগী চোখে তাকালো ও মিসেস সাবিনা বেগমের দিকে, “মম?”

সাবিনা বেগম এগিয়ে এলেন ছেলের দিকে। উনি অনুরোধের সুরে বললেন, “প্লিজ আব্বু! একটু ম্যানেজ করে নাও। আয়ানের মাথাতেও তেল ঢালা হয়েছে, বেশি না অল্প দেবে। গোসল করার সময় ভালো করে ধুয়ে নেবে।”

আরমান আর কিছু বলল না, বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। সামিরা এগিয়ে এলো তেলের বাটি নিয়ে, হাতে এক অন্যধরনের চামচ। মহিলারা শুরু করলো আর একটা অন্য গীত, তারপর কি যেনো একটা মাথার উপর ধরলো সবাই। সামিরা গুনে গুনে নয় চামচ নারকেলের তেল দিলো আরমানের মাথায়। কিছুটা তেল কপাল বেয়ে গাল পর্যন্ত নেমে এলো।‌ আরমানের মুখের অবস্থা দেখার মতো হয়েছে। ও রেগে পুরো বোম হয়ে আছে। ততক্ষণে গীত ও তেল দেওয়া থেমে গেছে।

আবির সহ কিছু কাজিন চেয়ার নিয়ে স্টেজের নীচে বসেছিল আরমানের সোজাসুজি। আরমান অবস্থা থেকে আবির পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে গেলো, সামিরা রুবি মায়া ওরা মুখ চেপে হাসছিল আরমানের অবস্থা দেখে। কিন্তু হাসতে হাসতে আবিরকে চেয়ার থেকে পড়ে যেতে দেখে, সবাই হু হা করে হেসে ফেললো। আবির তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলিয়ে উঠে চেয়ার ঠিক করে আবারও চেয়ারে বসলো। আবিরের চোখ আরমানের উপর পড়তেই দেখলো, আরমান কটমট করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। যেনো আবিরকে কাঁচাই খেয়ে ফেলবে এমন ভাব।

দাদি:- “বড়ো বউ কয় গেলা? এহানে আসো, নাও আগে ছেলের মাথা থেইকা তুমি পেতথমে তেল তুইলা নাও।”

আরমানের মা তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলেন। আগে নিজের আঁচল দিয়ে আরমানের মুখে গড়িয়ে পড়া তেল মুছে দিলেন। আরমান শান্ত চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে, সবিনা বেগম মুখে কিছু না বলে, অনুরোধের চোখে তাকালেন আরমানের দিকে। এরপর উনি নিজের মাথার চুল খুলে, আরমানের মাথার চুলের উপর ঘষা দিয়ে তেল নিজের চুলে নিলেন। এরপর একই ভাবে আনজুমা বেগমও নিলেন এরপর আরমান ফুপি, তারপর একে একে আরমানের বাকি সব চাচীরা, তারপর গ্রামের কিছু মহিলা।

(পরবর্তী পর্ব এই পেজে পেয়ে যাবেন)
https://www.facebook.com/share/19BxWdTt3h/

এরপর আরমানের দাদি বলে উঠলেন, “হ তেল ঢালা তো শেষ হইলো। এরপর হলুদ মাখানো হইব, দাদুভাই তোমার জন্য তো লুঙ্গি গেন্জির আনা হইছিলো। তুমি তো আবার শহরের পোলা, লুঙ্গি তো পড়বেক নাই, কিন্তু জামাটা খুইলা এই ঘামছা টা গায়ে জড়ায় নাও।”

আরমান চিল্লিয়ে উঠলো, “হোয়াট?? এই এতো মহিলার মাঝে আমি শার্ট খুলবো?”

আবির:- “কিচ্ছু করার নেই ব্রো। এরা আয়ানকেও ছাড়েনি। আয়ানও শুধু একটা গেঞ্জি পড়েই ছিল।”

আরমান রাগে উঠে দাঁড়ালো। বলল, “মম! আমি গেলাম। অনেক বড়ো ভুল হয়েছে এই গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানের প্ল্যান করে।”

সাবিনা বেগম তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলেন। উনি বললেন, “প্লিজ আব্বু। আর একটু থাকো, শার্ট খুলতে হবে না। শার্টের হাতা তো গোটানোই আছে, আপনারা ওর হাতে আর গালে অল্প করে হলুদ লাগিয়ে দিন। একটু হলুদের ছোঁয়া গায়ে লাগলেই তো হবে।”

আনজুমা বেগমও একই কথা বললেন, এরপর আরমানকে শান্ত করে কোনো রকমে বসালো। এরপর সবাই একটু একটু করে আরমানের গালে এবং হাতে হলুদ লাগিয়ে দিলো। গ্রামের অনেক মেয়েই মুখ বেঁকালো, আরমানের এতো আপত্তি দেখে। এরপর কোনো রকমে আরমানের গায়ে হলুদ শেষ করলো। আরমান গাল ও হাতে লেগে থাকা হলুদ গুলো নিয়ে, মায়ার জন্য রাখা হলুদে মেশানো হলো।

আরমান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “শেষ হয়েছে? এবার আমি যেতে পারি?”

সামিরা হেসে বলল, “হ্যাঁ ভাইয়া, এখন যেতে পারো তুমি।”

মায়া স্টেজেই একপাশে চেয়ার নিয়ে বসে ছিল। আরমান মায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে, মায়ার চেয়ারের দুই পাশে হাত দিয়ে ঝুঁকে গেলো একদম মায়ার মুখের কাছে। এরপর ফিসফিস করে বলল, “এতো গুলো মহিলা দিয়ে টর্চার করালে তুমি আমায়। এর বদলা তো আমি নিয়েই ছাড়বো মায়াবতী। এখন তুমি রেডি হও, আরমানের টর্চার সহ্য করার জন্য।”

মায়া একটা শুকনো ঢোক গিলল। আমতা আমতা করে বলল, “আ..আপনার ল্যা..ল্যাপটপ সামিরার কা..কাছে আছে।”

আরমান আর কিছু বলল না, শুধু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেলো। মায়া যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। সবার দিকে তাকাতেই দেখলো, ছোটো আম্মু, ফুপি এবং চাচীরা সবাই মুখ চেপে হাসছে, গ্রামের কিছু মেয়েরা কেমন যেনো চোখে তাকিয়ে আছে। মায়া বিরক্ত হলো আরমানের প্রতি, সবার সামনে এইভাবে কাছে আসতে হবে কেনো? একটুও লজ্জা শরম নেই উনার।

এরপর মায়াকে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো। একে একে একই রকম ভাবে পালন করা হলো গায়ে হলুদের নিয়ম। তেল ঢালার সময় আসলে, একজন মহিলা বলে উঠলো, “মেয়ের বাড়ির লোক কই? মেয়ের পরিবারের তো কাউকে দেখছি না, মেয়ের মাথায় তেল তো মেয়ের ভাইকে ঢালতে হবে। নিজের ভাই না থাকলে, চাচাতো ফুপাতো ভাই হলেও চলবে।”

উনার কথা গুলো তীরের মতো আঘাত করলো মায়ার মনে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। ওর যে নিজের পরিবার বলতে কেউ নেই, যেই একজন ছিল তাকে উপরওয়ালা কেড়ে নিলো ওর থেকে।

“আমি মেয়ের বড়ো ভাই। আমি ঢালবো তেল। কিভাবে কি করতে হবে আমায় বুঝিয়ে দিন।”

মায়া মুখ তুলে তাকালো কথাটা শুনে। আবির দাঁড়িয়ে আছে পাশে। আবিরের এমন কথায় মায়া আওয়াজ করে কান্না করে ফেললো। আবির তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো মায়ার সামনে, মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “আরে পাগল মেয়ে, কান্না করছিস কেনো? তুই তো আমাকে ভাইয়া বলেই ডাকিস, আমি তো তোকে নিজের ছোটো বোনের চোখেই দেখি। নে দেখ আজ থেকে তোকে তুই বলতে শুরু করলাম, বোনকে কেউ তুমি তুমি করে নাকি? আরে এখনো কান্না করছে, তাহলে কি তুই আমার হাতে তেল নিবি না? ভাইয়া মুখেই ডাকিস? সত্যি কারের ভাইয়া ভাবিস না তাহলে?”

মায়া কাঁদতে কাঁদতে তাকালো আবিরের। উচ্চারণ করলো, “ভা..ভাইয়া !!”

শোনা গেলো আরো একজনের গলার আওয়াজ, “আমি মেয়ের ছোটো মা। আমি ওর মাথা থেকে তেল নেবো। হ্যাঁ ওর নিজের মা এই দুনিয়ায় নেই তাতে কি হয়েছে? ওর ছোটো মা এখনো এই দুনিয়ায় বেঁচে আছে।”

কথাটা বলেই মুনজিলা বেগম (মাইশার মা) মায়ার কাছে এগিয়ে এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি মুছে দিলেন। কপালে চুমু খেয়ে বললেন, “দেখো মেয়ের কান্ড। কেমন বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে। দেখ তো সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে, মানুষজন কি ভাববে বল তো? আর কাঁদে না মা, এবার তো চুপ কর।”

মায়া কাঁদতে কাঁদতে কোনো রকমে উচ্চারণ করলো, “ছোটো মা!”

এরপর মুনজিলা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

—————

সন্ধ্যা নেমেছে…

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে এখন চলছে মেহেন্দীর অনুষ্ঠান। মেহেন্দীর অনুষ্ঠান বাড়ির ভিতরে রাখা হয়েছে।‌ খুব সুন্দর করে ফুল ও রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে ড্রয়িংরুম। এখন রাজকীয় সোফার বদলে আছে নরম গদি। মেঝেতে অনেক টা জায়গা জুড়ে বিছানো হয়েছে নরম গদি, কাজিন মহল এক একজন নিজের কোলে বালিস নিয়ে বসে আছে। কেউ কেউ মেহেন্দী পড়ছে, শহর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ছয় টা মেহেন্দী আর্টিস্ট। মায়া ও মাইশার পরনে মেহেদী রঙা লেহেঙ্গা, দুজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে। দুইজন আর্টিস্ট ওদের কে মেহেন্দী পড়িয়ে দিচ্ছে।

আরমান আয়ান আরো কিছু ছেলে কাজিন বসে আছে সোফায়। বিয়ে বাড়িত ছেলে মেয়ে একসাথে থাকবে আর মিষ্টি মধুর ঝগড়া বাঁধবে না তাই কি কখনো হয়? ছেলে এবং মেয়েরা সবাই মিলে কথা কাটাকাটি করছে আর মজা করছে, মিউজিক বক্স হালকা আওয়াজে মিউজিক বেজে চলেছে। আর এইসব কিছুর থেকে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে বসে আরমান নিজের ফোন চালাতে ব্যাস্ত। আরমান মায়ার দিকে ভালো করে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত, এই জন্য মায়া মুখ ভার করে বসে আছে। হঠাৎই মিউজিক বক্সে মিউজিক থেমে গেলো, ড্রয়িংরুমের মাঝখানের মায়াদের ঠিক সামনে আলো নিভে গেলো, তাই জায়গাটা কিছুটা অন্ধকার হয়ে উঠলো। এরপর বক্সে বেশ কিছুটা জোড় আওয়াজে একটা বাংলা গানের মিউজিক বেজে উঠলো।

গান শুরু হওয়ার সাথে সাথে লাইট ও জ্বলে উঠলো। কাজিন মহলের সবাই হইহই করে উঠলো সামনের দৃশ্য দেখে। রুবি গ্রামের মেয়ের মতো লাল টকটকে শাড়ি পড়ে আছে, পা থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে। মাথায় মাঝখানে সিঁথি করে দুই পাশে দুটো বেনুনি আর বেনুনির ডগে লাল ফিতে দিয়ে ফুল করা। কোমরে রয়েছে একটা কলসি।

পিছনে আবির, পরনে লুঙ্গি গেঞ্জী, গলায় গামছা। মাথার চুল গ্রামের ছেলেদের মতো আঁচড়ানো।

(গান)
ও রূপসী মাইয়ারে তোর কলসির ভিতর কী?

খাঁটি গরুর দুধ বেঁচতে এনেছি

ও রূপসী মাইয়ারে তোর কলসির ভিতর কী?

খাঁটি গরুর দুধ বেঁচতে এনেছি

গান শুরু হতেই আবির রুবির শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছে, এবং গানের সাথে ঠোঁট মিলাতে শুরু করেছে। রুবির লাইন আসতে রুবিও পিছনে ঘুরে ঠোঁট মিলিয়ে গাইলো।

দে না একটু খাই

দামটা আগে চাই

আরে দে না একটু খাই

দামটা আগে চাই

তোদের মত বিড়ি খাওয়াদের চিনে নিয়েছি।

গানের তালে নাচ করছে রুবি আর আবির, আর এদিকে কাজিন মহল সবাই হা করে চিল্লিয়ে উঠছে। মায়ার মুখ এতোক্ষণ ভার থাকলেও এখন হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে, আর আরমান আবির রুবির নাচ দেখে বাদ দিয়ে মায়ার হাসি দেখছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে।

ও রূপসী মাইয়ারে তোর কলসির ভিতর কী?

খাঁটি গরুর দুধ বেঁচতে এনেছি

ও রূপসী মাইয়ারে তোর কলসির ভিতর কী?

খাঁটি গরুর দুধ বেঁচতে এনেছি।

পুরো গানটার সাথে মিলিয়ে খুব সুন্দর ভাবে নাচ শেষ করলো আবির রুবি।‌ সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো। রুবি তো এতোক্ষণ ডান্স করলেও এবার লজ্জা পেয়ে ছুটে পালালো বেচারি।

এরপর আবারও মিউজিক বেজে উঠলো। সমস্ত ছেলে কাজিন উঠে এলো। গানের তালে ঠোঁট মিলালো।

(গান)
Ye kudiyaan nashe di pudiyaan

সাথে সাথে মেয়েরাও উঠে। একই ভাবে ঠোঁট মিলালো।

Ye munde gali de gunde

ছেলে:- Ye kudiyaan nashe di pudiyaan

মেয়ে:- Ye munde gali de gunde

ছেলে:- Nashe di pudiyaan

মেয়ে:- Gali de gunde..

Ooooo Oooooo

ছেলেরা সরে যেতেই ছেলেদের মাঝে থেকে বেরিয়ে এলো আরমান। মায়া যেনো পুরোই অবাক।

Mehndi laga rakhna

Doli saja ke rakhna

Mehndi laga rakhna

Doli saja ke rakhna

Lene tujhe o gori

Aayenge tere sajna

গানের তালে নাচতে শুরু করেছে আরমান, মায়ার দিকে ইশারা করে। বাড়ির সবাই অবাক, হাঁ করে তাকিয়ে আছে আরমানের দিকে। গম্ভীর রগচটা ছেলেটা আজ এই গান ডান্স করছে এটা যেনো কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না। এখন আর আরমানের মুখে গম্ভীর ভাব নেই। তার বদলে রয়েছে গানের লিরিক্স অনুযায়ী ভাব।

Mehndi laga rakhna

Doli saja ke rakhna

Oh.. ho.. oh.. ho..

বাকি ছেলে কাজিন মহলও আরামানের সাথে তাল মিলিয়েছে।

O.. aa..aa…

Sahra sajake rakhna

Chehra chhupake rakhna

Sahra sajake rakhna

Chehra chhupake rakhna

Yeh dil ki baat apne

Dil mein dabake rakhna

এবার উঠে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মিলালো মায়া। তারপর ও নিজেও গানের তালে নাচতে শুরু করলো।

Sahra sajake rakhna

Chehra chhupake rakhna

Mehndi laga rakhna

Doli saja ke rakhna

(মিউজিক)
Hoye.. hoye.. hoye..

Hoye.. hoye.. hoye..

Bhrrru..

মিউজিক এর সমান তালে ছেলে এবং মেয়েরা নেচে চলছে।

ছেলে:- Ud udke teri zulfein

Karti hain kya ishaare

Dil thaamke khade hain

Aashiq sabhi kanware

মেয়ে:- Chhup jaayein saari kudiyaan

Ghar mein sharamke maare

Gaanv mein aa gaye hain

Paagal shehar ke saare

আরমান এগিয়ে এলো মায়ার দিকে। মায়াকে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে, গানের সাথে তাল মিলালো।

Nazrein jhukake rakhna

Daaman bachake rakhna

Nazrein jhukake rakhna

Daaman bachake rakhna

Lene tujhe o gori

Aayenge tere sajna

বাকি কাজিনরা নাচ সহ গেয়ে উঠলো।

Mehndi laga rakhna

Doli saja ke rakhna

Sahra sajake rakhna

Chehra chhupake rakhna

Oh.. ho.. oh.. ho.. aa..

এতদূর শেষ হতেই আয়ান মাইশাকে টেনে নিলো নিজের কাছে। মাইশা চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়েছিল। আয়ান মাইশাকে নিয়ে গানের সাথে তাল মেলালো।

Main ek jawaan ladka

Tu ek haseen ladki

Ye dil machal gaya toh

Mera kusoor kya hai

মাইশাও অবাক। কিন্তু এখন ও অবাক ভাব পাশে রেখে তাল মিলালো।

Rakhna tha dil pe kaabu

Ye husn toh hai jaadu

Jaadu hi chal gaya to

Mera kusoor kya hai

আরমান, আয়ান একসাথে ডান্স করতে লাগলো।
Rasta hamara takna

Darwaaza khula rakhna

Rasta hamara takna

Darwaaza khula rakhna

Lene tujhe o gori

Aayenge tere sajna

পুরো গানটাতে ছেলে এবং মেয়েরা মিলে নাচ শেষ করলো। এরপর শেষ হলো মেহেন্দী অনুষ্ঠান। মায়া প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ায় না খেয়েই রুমে চলে গেলো। সবাই যে যার মতো খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলো, আবার অনেকেই লাইন দিয়ে ড্রয়িংরুমেই শুয়ে পড়লো।

আরমান আয়ানকে ছাদে ডেকেছিল, দুই ভাই মিলে নিরবে কিছুটা সময় কাটালো। তখনি শোনা গেলো আসিফের কন্ঠস্বর, “এতো রাতে কি কথা হচ্ছে দুই ভাইয়ের মধ্যে? কাল বিয়ে আর এখনো ঘুমাসনি তোরা।”

আয়ান:- “আরে আসিফ ভাইয়া! তুমিও ঘুমাওনি এখোনো?”

আসিফ:- “না রে ঘুম আসছে না। তোরা নিজের নিজের মনের মানুষকে পেয়ে গেলি, আমি যে কবে পাবো?”

আয়ান:- “হেই ব্রো! তারমানে তোমার ও মনের মানুষ আছে?”

আসিফ:- “হ্যাঁ সে তো অবশ্যই আছে। তবে আমার মনের মানুষটার মনে অন্য কেউ আছে। কিন্তু ভাবছি যেভাবেই হোক কাল তাকে নিজের করে নেবো। ছিনিয়ে নেবো তাকে আমি।”

আয়ান হেসে বলল, “তুমিও যে কি বলো না ব্রো!”

আরমান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আসিফের দিকে। ও কল লাগিয়েছিল রুবিকে, রুবি কল রিসিভ করতেই আরমান ফোন কানে নিয়ে বলল, “রুবি!! মায়া না খেয়েই চলে গিয়েছিল। ওর খাবার টা ওকে রুমে দিয়ে এসো।”

অপর পাশ থেকে কি বলল শোনা গেলো না। আরমান কল কেটে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “অনেক রাত হয়েছে, যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।”

বলেই আরমান একবার আসিফের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। আয়ান আসিফকে বলল, “চলো ব্রো। ঘুমাবে না?”

আসিফ:- “তুই যা আমি আসছি।”

আয়ান:- “ওকে।”

বলেই আয়ানও চলে গেলো। আসিফ একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে ঠোঁটে চেপে ধরলো। এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে, কল লাগালো একটা নাম্বারে। রিসিভ হতেই বলে উঠলো, “রুবি মায়ার জন্য খাবার আনতে গিয়েছে দেখ রান্না ঘরে। যেভাবেই হোক ওই খাবারে ওষুধ টা মিশিয়ে দিবি।”

অপর পাশ থেকে কি বলল, শোনা গেলো না। আসিফ আবারও বলল, “কিভাবে কাজটা করবি আমি জানি না। তবে এটাই শেষ সুযোগ। যেভাবেই হোক ওই ওষুধ মিশাতে হবে খাবারে।”

আসিফ:- “না। মায়া এখনো খাইনি। আরমান কল করেছিল রুবিকে। মায়ার জন্য খাবার নিয়ে যেতে বলল, এখনি রুবি আসবে দেখ খাবার নিতে। যেভাবেই হোক ওই খাবারে ওষুধ টা মিশিয়ে দিবি।

————–

রুবি রান্না ঘরে যেতেই দেখলো, চেমেলি নামের এক 20 বছর বয়সী মেয়ে খাবার বাড়ছে। ওকে রুবি খুব ভালো করেই চেনে। অনেক বছর থেকে এই বাড়িতে কাজ করছে চেমেলি।

রুবি:- “কিরে চেমিলি, এখনো ঘুমাসনি? আর কার জন্য খাবার বাড়ছিল?”

চেমেলি রুবিকে দেখে বলল, “রুবি আপু তুমি? কিছু দরকার ছিল? আসলে মায়া ভাবি মনি তো না খেয়েই উপরে চলে গেছে, তাই ভাবলাম ভাবি মনির খাবার টা উপরেই দিয়ে আসি।”

রুবি:- “আমি তো মায়া ভাবি মনি খাবার টাই নিতে এসেছিলাম। কই আমাকে দে, আমি তো উপরে যাবোই। তোকে আর যেতে হবে না।”

চেমেলি:- “ওহ! তাহলে ভালোই হলো। এই নাও তুমিই নিয়ে যাও তাহলে।”

কথাটা বলেই চেমেলি খাবারের প্লেট রুবির হাতে ধরিয়ে দিলো। রুবিও আর কোনো কিছু না ভেবে খাবারের প্লেট টা নিয়ে মায়ার রুমে চলে গেলো।

রুবি চলে যেতেই, চেমেলি নিজের ফোন বের করে একটা নাম্বারে ম্যাসেজ পাঠালো, “কাজ হয়ে গেছে স্যার।”

চলবে….