#গালিব_মির্জা
#পর্ব_১০
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
গালিব শান্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
“তুই আমার হবু বউ। তোর উপর খরচ করলে সেটা অপচয় নয়, ইনভেস্টমেন্ট। এ বিষয় বিস্তারিত সন্ধ্যায় বলবো।”
তামসীর বুকটা অদ্ভুত কেঁপে উঠলো। কথাগুলো শুনে ওর ঠোঁটে অজান্তেই লাজুক একটুকরো হাসি খেলে গেলো। ভেতরে কোথাও যেনো একধরনের নিশ্চিন্তি গেঁথে বসলো– এ মানুষটা তাকে কেবল সাজগোজ বা খরচের জন্য নয়, তার ভবিষ্যতের সঙ্গী হিসেবেই ভাবছে।
“আচ্ছা…”
মৃদু স্বরে উত্তর দিলো তামসী। গালিব আর কিছু বললো না। বিল মিটিয়ে ফেলে নির্ভার ভঙ্গিতে ব্যাগগুলো হাতে তুলে নিয়ে তামসীর পাশে দাঁড়ালো। শপিংমলের কাঁচের দরজা ঠেলে দু’জন বাইরে বেরিয়ে আসতেই হালকা বাতাস তামসীর খোলা চুলে দোলা দিলো। গালিব ব্যাগগুলো এক হাতে ধরে, অন্য হাতটা আলতো করে তামসীর হাতে রাখলো। মুহূর্তটুকু তামসীর মনে এমনভাবে গেঁথে গেলো, যেনো এই ছোঁয়া তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় এনে দিয়েছে।
মাগরিবের আজান ভেসে আসছে মসজিদের মিনার থেকে। চারপাশের বাতাসে তখন এক ধরনের প্রশান্তি আর পবিত্রতার ছোঁয়া ছড়িয়ে গেছে। সুমাইয়া আর আয়মান নিজেদের ঘরে চলে গেছেন নামাজ পড়তে। ড্রইংরুমে একসাথে বসেছে রাবিন, লামিয়া, মেঘলা, শুভ আর রাফি। সবাই যেন দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে একটু হালকা মেজাজে সময় কাটাতে চাচ্ছে।
গালিব বিকেলবেলা বাইরে থেকে বেশ কিছু জিনিসপত্র কিনে এনেছে। তামসী তখন একটু ঘুমিয়ে নিয়েছিলো। আর গালিব নিজ ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে। বাইরে আলো আধারে সন্ধ্যার আবহ মিশে যাচ্ছে ঘরের ভেতরের হলুদ আলোয়, যেন একধরনের উষ্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
“শুভ ভাইয়া তুমি আজকে আগে খেলবে।”
চঞ্চল চোখ মেলে বললো মেঘলা।
শুভ মুচকি হেসে তাকালো । সবাই সোফা বাদ দিয়ে আরাম করে মেঝেতে গোল হয়ে বসেছে। মাঝখানে রাখা লুডুর কোট।
“ঠিক আছে, তাহলে শুরু করি?” শুভর ঠোঁটে অল্প উত্তেজনার রেশ।
সবাই মাথা নেড়ে রাজি হলো। শুভ ছক্কা হাতে নিয়ে একবার ঝাঁকিয়ে ফেললো। চোখেমুখে তার দুষ্টুমি আর প্রতিযোগিতার মিশ্রণ। প্রথমবারেই ছক্কার মুখে ভেসে উঠলো ছয়।
“ওইইইইইই!”
রাফি আর রাবিন একসাথে চিৎকার করে উঠলো। উত্তেজনায় তাদের গলা ভরে উঠলো হাসিতে।
“হে হে… ভাই পুরাই আগুন। আজকে লামু আর মেঘুকে হারাতেই হবে।”
রাবিনের গলায় গর্ব মিশে গেলো।
মেঘলা ঠোঁট বাঁকিয়ে ভেংচি কাটলো, যেন ওর চোখে আগুন ঝলসে উঠছে। লামিয়া কেবল মুচকি হেসে একবার শুভর দিকে তাকালো।
“আগে হারিয়ে দেখাও, তারপর বড়ো কথা বলিও। সবসময় হেরে যাওয়া পাবলিকরা আবার মুখ বড় করে কথা বলতে এসেছে।”
মেঘলার গলায় খুনসুটির ঝংকার।
রাবিনের মুখভঙ্গি সঙ্গে সঙ্গেই বদলে গেলো। ভ্রু কুঁচকে মুখটা গম্ভীর করে ফেললো সে। মনে হলো যেন যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গেছে।
শুভর পর ছক্কা ছোঁড়ার পালা এলো লামিয়ার। ওর মুখে নির্ভার হাসি, তবে চোখেমুখে লুকানো প্রত্যাশা। ছক্কার পর দুই পড়তেই ঠোঁটে হালকা বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলো। মেঘলা সঙ্গে সঙ্গে হো হো করে হেসে উঠলো। তারপর এলো মেঘলার পালা, তারপর রাবিন – প্রতিটি ছক্কা পড়ার সাথে সাথে ঘর ভরে উঠলো হাসি, খুনসুটি আর মিষ্টি উত্তেজনায়। যেন লুডুর ছোট্ট বোর্ডটাই তাদের জন্য আনন্দের এক মহাযুদ্ধের ময়দান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দরজায় হালকা ঠকঠক শব্দে তামসী শরীর নড়েচড়ে উঠল, কিন্তু ঘুমের ঘোর কাটলো না। বিকেলের ঘুম এখনও তাকে আঁকড়ে ধরে আছে। তামসীর স্বভাবই এমন একবার ঘুমিয়ে পড়লে চারপাশে কী ঘটছে সে খবর রাখে না।
ভেতর থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে গালিব নিঃশব্দে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দিতেই চারপাশে নেমে এলো ঘন নীরবতা। তার চোখ সরাসরি গিয়ে পড়লো বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটির উপর।
উপুড় হয়ে শুয়ে আছে তামসী। এলোমেলো চুল ছড়িয়ে আছে বালিশের ওপর, হাত-পা ছড়িয়ে এমনভাবে শুয়ে আছে যেন পৃথিবীর কোনো দুশ্চিন্তাই তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। দৃশ্যটা দেখে গালিবের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি খেলে গেলো। পা টিপে টিপে বিছানার কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে পাশে বসল সে। মমতায় ভরা আঙুলে কয়েকবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তামসী নিঃশ্বাসের ভেতর আরামের সুরে শরীর ঘুরিয়ে সোজা হয়ে শুলো। তার ঢিলেঢালা প্লাজু হাঁটু পর্যন্ত উঠে গেছে অগোচরে।
গালিবের গলা শুকিয়ে এলো। চোখ আটকে গেলো ফর্সা পা দুটোর দিকে। তামসীর বুকের ওঠানামা, নিঃশ্বাসের ছন্দ সবকিছুর চেয়ে পায়ের সেই অসহায় নিষ্পাপ সৌন্দর্য গালিবকে টেনে নিলো কাছে। বসা থেকে উঠে তামসীর পায়ের দিকে গিয়ে দাঁড়াল সে। তারপর মেঝেতে ধীরে হাঁটু গেড়ে বসল । দ্বিধার মতো একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুব আলতো করে তামসীর ডান পায়ের আঙুলে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো গালিব । তামসীর শরীর কেঁপে উঠলো হালকা, কিন্তু চোখ খুললো না । ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা।
গালিব নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো, এবার তামসীর বাম পায়ের আঙুলে ঠোঁট রাখলো। তারপর ধীরে ধীরে আঙুল থেকে পায়ের পাতা, গোড়ালি হয়ে ঠোঁটের স্পর্শ ছড়িয়ে দিলো উপরের দিকে। হঠাৎই তামসীর চোখ খুলে গেলো কিন্তু গালিবের বিভোর চেহারা দেখে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চোখ আবার বন্ধ করে ফেলল সে। মুহূর্তেই তামসীর ভেতর দিয়ে যেন বিদ্যুতের ঝলক বয়ে গেলো। ঘুমের ঘোর ভেঙে গেলেও চোখ মেলে তাকালো না সে। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে জোরে, শ্বাস ভারী হয়ে উঠছে, তবুও চোখ বন্ধ রেখেই অনুভব করতে থাকলো গালিবের প্রতিটি স্পর্শ। ভদ্রলোক ঠিক কতদূর যেতে পারে সেটুকু দেখবে বলেই নিজেকে সামলাতে লাগলো তামসী।
একসময় থেমে গিয়ে গালিব আস্তে করে তার প্লাজু ঠিক করে দিলো। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পাশে এসে বসল। ঝুঁকে কপালে রাখলো একখানি গভীর চুমু।
“তামসী? … তামসী?”
প্রথমে কোনো সাড়া দিলো না তামসী। গালিবের দ্বিতীয় ডাকের পর সে ধীরে চোখ মেললো। আর তাকালো এমন ভঙ্গিতে যেন সত্যিই মাত্র ঘুম ভেঙেছে ওর।
“আপনি!”
তামসী হঠাৎ উঠে বসল। বালিশের পাশ থেকে ওড়না টেনে নিয়ে গায়ে জড়াল তাড়াহুড়ো করে।
গালিবের চোখে তখনো সেই নরম দৃষ্টি। তবে কণ্ঠে ভরাট গাম্ভীর্য।
“সন্ধ্যা হয়ে গেলো, এখনও ঘুমাচ্ছিস? বের হবো কখন?”
“আপনি যান, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
গালিব উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে হাঁটতে হাঁটতে থেমে ফিরে তাকালো।
“একেবারে রেডি হয়ে আয়। লিপস্টিক আর কাজলই যথেষ্ট, আপাতত অন্য কিছু মাখতে হবে না।”
তামসী ঠোঁট কামড়ে টিপে হেসে মাথা নেড়ে বলল,
“ওকে।”
গালিব বড়ো বড়ো পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। দরজা আটকে যেতেই তামসীর মুখে চাপা হাসি শব্দ হয়ে ফেটে পড়লো।
“আহা! এতক্ষণ কীসব করছিলো আর এখন যেন কী ভদ্রলোক!”
নিজের মনে মনে গুনগুন করে হাসতে লাগলো সে। গালিবের ভদ্ররূপের আড়ালে দুষ্টামির ঝলকটা ভাবতেই বুকের ভেতর কেমন যেন শিহরণ বয়ে গেলো।
হাসতে হাসতেই চুলগুলো গুছিয়ে খোঁপা করল তামসী। তারপর আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বে একঝলক তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
“তোরা মেঝেতে বসেছিস কেন? ঘরে গিয়ে বিছানায় বসে খেলতিস, এখানে বসে কেন!”
সুমাইয়া মির্জা ছেলেমেয়েদের কাণ্ডকারখানা দেখে অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বললেন।
“এখানেই ঠিক আছি আমরা। তোমরা গিয়ে নাস্তার ব্যবস্থা করো তো। খিদে পেয়েছে খুব।”
হাসি মেশানো কণ্ঠে বলে উঠলো রাফি।
আয়মান মির্জা সবার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
“ঠিক আছে। চলো সুমাইয়া, ওরা নিজেদের মতো থাকুক।”
“আচ্ছা ভাবি।”
হেসে সায় দিলেন সুমাইয়া। তারপর দুজন রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
কয়েক মিনিট পর ট্রে ভরে নানা রকম নাস্তা নিয়ে আবারও ফিরে এলেন দুজন। খাবারের গন্ধে ঘর ভরে উঠলো, আর ছেলেমেয়েগুলো একে একে সোফায় উঠে বসল। লুডুর বোর্ডটা সরিয়ে রেখে সবাই এখন খাওয়ায় মন দিলো। হাসি-ঠাট্টা, ছোটখাটো খুনসুটি ড্রইংরুম যেন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠলো।
এমন সময় সিঁড়ি বেয়ে নামলো গালিব। তার আগমনে যেন মুহূর্তেই পরিবেশে একটু ভিন্ন আবহ তৈরি হলো। পরনে নেভিব্লু কালারের এক্সক্লুসিভ ফিটিং শার্ট, হালকা শেডের জিন্স। চুল ব্যাকব্রাশ করা, একেবারে স্মার্ট লুক। চোখে স্টাইলিশ কালো সানগ্লাস। রাবিন একপাশ থেকে ভাইয়ের দিকে তাকালো। গালিবের লুক দেখে তার ভেতরে একধরনের কৌতূহল আর বিরক্তির মিশ্র প্রতিক্রিয়া জাগলো। শুভর দিকে কনুই দিয়ে ইশারা করে দেখালো,
“রাতেও সানগ্লাস পরে নামছে!”
শুভ ঠোঁট বাঁকিয়ে মুচকি হেসে ইশারায় বোঝালো, “এটা স্টাইল, ভাই।”
রাবিন মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। মনে মনে ভাবলো,
“এই স্টাইল যদি আমি করতাম, তবে বাড়ির লোকজন নির্ঘাত পাগল বলতো। হুহ্।”
গালিবের উপস্থিতিতে ঘরে এক ধরনের গাম্ভীর্য ছড়িয়ে পড়লো। অন্যরা হয়তো হাসি-ঠাট্টায় মেতে আছে, কিন্তু গালিব যেন ভিন্ন এক লিগের মানুষ– ক্লাসি, রিজার্ভড আর স্টাইলিশ।
“কী রে গালিব? কোথাও যাচ্ছিস?”
মায়ের প্রশ্নে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল গালিব। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“তামসীকে নিয়ে বেরুচ্ছি একটু।”
মিটিমিটি হাসলেন সুমাইয়া মির্জা। পাশে বসে থাকা আয়মান বললেন,
“ঠিক আছে। তবে সাবধানে ড্রাইভ করিস আর তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবি।”
“চেষ্টা করবো।”
সংক্ষিপ্ত জবাব দিলো গালিব।
সকলের কথার মাঝে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছিলো তামসী। তার পরনে অফ-হোয়াইট লং গাউন, নরম সিল্কি ফেব্রিকের ওপর সূক্ষ্ম সোনালি এমব্রয়ডারি করা। গাউনের ফ্লেয়ার হাঁটার সাথে সাথে হালকা দুলছে, যেন প্রতিটি পদক্ষেপে চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠছে। গলায় পরেছে একটি স্লিম চেইন, কানে ছোট মুক্তার দুল। চুলগুলো খোলা, হালকা ওয়েভি হয়ে কাঁধে পড়েছে। মুখে সামান্য মেকআপ– গালে হালকা ব্লাশ, ঠোঁটে ন্যুড শেডের লিপস্টিক। সকলে একবার নজর বুলিয়ে নিলো তামসীর ওপর। তামসী ধীরপায়ে এসে গালিবের পাশে দাঁড়ালো। ধীর কণ্ঠে বলল,
“ রাবিন ভাইয়া তুমিও যাবে আমাদের সাথে? “
গালিব ভ্রু কুঁচকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই হকচকিয়ে গেল মেয়েটা। গালিব দেশে ফেরার আগপর্যন্ত তামসী যখন যেখানে যেতো রাবিন ওকে সঙ্গ দিতো, সাথে যেতো। সেখান থেকেই হুট করে কথাটা বলে ফেলেছে মেয়েটা। রাবিন তো বোকার মতো তাকিয়ে রইলো কেবল।
“ সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি আমরা ?”
গালিবের কণ্ঠে হালকা রাগ মেশানো ।
তামসী একগাল চুপ করে না’বোধক মাথা নাড়লো। সুমাইয়া তখন মুচকি হেসে বললেন,
“আজকে তোরা ঘুরে আয়, পরে সবাইকে নিয়ে যাস।”
“ আচ্ছা। “
সংক্ষিপ্ত উত্তর তামসীর। গালিব ওর হাতটা ধরে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
“ আসছি। “
আয়মান মির্জা হেসে মাথা নাড়লেন কেবল। কপোত-কপোতী হাত ধরে এগোতে লাগলো। রাবিন ভেংচি কাটল আড়ালে। গালিব যে এতো হিংসুটে আগে জানতোনা রাবিন।
বাইরে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো গালিব। চারপাশে হালকা বাতাস বইছে, আকাশে মাগরিবের লালচে আভা টিকে আছে এখনো। গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে সে আগে দরজা খুলে ধরল, চোখের কোণে মৃদু কঠোরতা থাকলেও ভেতরে যেন এক অদ্ভুত কোমলতা খেলা করছে।
“বস।”
গম্ভীর অথচ ভদ্র কণ্ঠে বলল গালিব।
তামসী এক মুহূর্ত থেমে গালিবের দিকে তাকাল, তারপর ধীরে পা বাড়িয়ে গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসে পড়ল। গালিব দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করল।
এরপর নিজের দিকের দরজা খুলে সে ড্রাইভারের সিটে বসল। ইঞ্জিন চালু হওয়ার সাথে সাথেই গাড়ির ভেতরে একধরনের নীরবতা নেমে এলো। বাইরে শহরের কোলাহল থাকলেও ভেতরে কেবল গালিব আর তামসীর নিঃশব্দ উপস্থিতি।
গাড়ি চলতে শুরু করল। জানালার বাইরে আলো-আঁধারি সন্ধ্যা নামছে। তামসী সিটে ঠেস দিয়ে বসে আছে, চুপচাপ। গালিব একবার ওর দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,
“তুই এতক্ষণ ধরে ক্ষুধার কথা লুকাচ্ছিস কেন? তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, খিদে পেয়েছে তোর। আগে বললে ঘরেই কিছু খেয়ে আসতে পারতি।”
তামসী ঠোঁট কামড়ালো হালকা ভঙ্গিতে।
“আপনি তো রেগে যান সহজেই… তাই ভাবলাম চুপ থাকাই ভালো।”
গালিব ভ্রু কুঁচকালো, কিন্তু কণ্ঠে গম্ভীরতার আড়ালে হালকা নরমভাব।
“ তোকে না খাইয়ে কখনো কোথাও নিয়ে যাবো ভাবলি কীভাবে ?”
তামসী একটু অবাক হয়ে তাকাল, কিছু না বলে চোখ ফিরিয়ে নিল জানালার দিকে। গালিব হালকা হেসে দিল স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে।
কিছু মিনিট পর সামনের এক নামকরা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামাল সে। দরজা খুলে বাইরে নেমে গিয়ে আবার তামসীর দরজা খুলে দাঁড়াল।
“নেমে যা। আগে ডিনার, তারপর শপিং।”
তামসী এবার ভড়কে না গিয়ে শান্ত গলায় বলল,
“হ্যাঁ… খিদে পেয়েছে সত্যিই। চলুন। ”
গালিব তৃপ্তির ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল, ওকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল রেস্টুরেন্টে। ভেতরে নরম আলো, হালকা সুর বাজছে, সাজসজ্জা রাজকীয়।
চলবে…..