ফেরারী বসন্ত পর্ব-২২ এবং শেষ পর্ব

0
9

#বড় গল্প
#ফেরারী বসন্ত
শেষ পর্ব
মাহবুবা বিথী

হাসনার জ্ঞান ফিরেছে। আরশী থেকে শুরু করে ওর শাশুড়ী মনোয়ারা বেগম,শ্বশুর, চাচা শ্বশুর ওর বাবা মা এমনকি হাসেম আর সিতারা সহ সবাই ওকে আর বাবুটাকে দেখতে হাসপাতালে চলে এসেছে। শুধু রাজ আর সায়েরাকে হাসনা দেখতে পাচ্ছে না। ওর শাশুড়ী মা বাচ্চাটাকে বুকের মাঝে ধরে রেখেছেন। মাঝে মাঝে হাসনার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সবাই থাকা সত্বেও ওর চোখ দুটো রাজ আর সায়েরাকে খুঁজে চলেছে। একসময় শাশুড়ী মাকে হাসনা জিজ্ঞাসা করে,
—-মা,রাজ আর সায়েরাকে দেখছি না যে? ওরা হাসপাতালে আসেনি?
—রাজ তো হাসপাতালেই ছিলো। বাচ্চার কানে আযান দিয়ে কিছুক্ষন আগে দাদুভাইকে আমার কোলে রেখে বাড়িতে চলে গেল। বলল,কি যেন একটা জরুরী কাজ পড়েছে।
—আপনারা সবাই আসলেন কিন্তু সায়েরাকে আনলেন না কেন?
মনোয়ারা বেগম কিছু বলার আগেই আরশী বলে,
—-সায়েরা আসতে চেয়েছিলো কিন্তু পাপা ওকে কোথায় যেন নিয়ে গেল।
হাসনার কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক লাগলো না। সে কারণে মনোয়ারা বেগমকে জিজ্ঞাসা করে,
—-মা আপনি জানেন, রাজ সায়েরাকে নিয়ে কোথায় গিয়েছে?
—আচ্ছা, তুমি সায়েরাকে নিয়ে এতো ভাবছো কেন? ওতো ওর বাবার সাথেই আছে। এখন বাবুটাকে একটু ব্রেস্টফিডিং করাও। সেই তখন থেকে সায়েরা সায়েরা করে যাচ্ছো।
ঐ সময় হাসনার মা আসমা বেগম বলেন,
—-বেয়াইন তো ভুল কিছু বলেননি। তোর এখন ছেলেটাকে নিয়ে ভাবা উচিত। ওকে ঠিকমতো খাইয়ে দে।
হাসনা কাউকে আর কিছু বলে না। মনে মনে বলে,”তোমরা কেউ জানো না ঐ মেয়েটা আমার কাছে কি? এ বাড়িতে এসে ঐ বাচ্চা মেয়েটার ভালোবাসা আমি সবার আগে পেয়েছি। ও আমাকে ওর মায়ের স্থানটাই দিয়েছে। সুতরাং ওকে আমি এক সেকেন্ড না দেখে থাকতে পারি না। অথচ আজ আটচল্লিশ ঘন্টা হয়ে গেল ওকে আমি দেখিনি। আমার চোখ দুটো আমার অজান্তে ওকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে।”
হাসনা ছেলেটাকে নিজের বুকের কাছে টেনে নেয়। হাসেম ওর বোনের মনোভাব বুঝতে পেরে বলে,
—-আমি ভাইয়াকে ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। তুমি এতো টেনশন করো না।
হাসেমের কথার সুর ধরে সিতারা বলে,
—-তুমি বাবুটাকে খাইয়ে দাও। ভাইয়া হয়তো মিষ্টি কিনতে গিয়েছে।
হাসনা ওর দিকে তাকিয়ে মুখে কিছু বলে না। তবে মনে মনে বলে,”তোমরা এই বিষয়টাকে যতই স্বাভাবিকভাবে দেখার চেষ্টা করো না কেন আসলেই বিষয়টা স্বাভাবিক নয়। আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে।”
এরপর বাচ্চাটাকে হাসনা ব্রেস্ট ফিডিং করায়। খাওয়ানো শেষ হওয়ার পর হাসেম করিডোর থেকে রুমে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। নক করে হাসেম রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। কেননা হাসনা বাচ্চাকে খাওয়াতে গিয়ে অগোছালো থাকতে পারে। এরমধ্যে হাসনার খাওয়ানো শেষ হয়। হাসেম হাসনার বেডের পাশে এসে দাঁড়ায়। হাসেমকে দেখে হাসনা বলে,
—রাজের সাথে তোর কথা হয়েছে?
—-ভাইয়া আর দশমিনিটের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে যাবে।
—-সায়েরার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলি?
—-নাহ্ জিজ্ঞাসা করা হয় নাই।
হাসনার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সায়েরার ভাবনায় বাচ্চাটার দিকে ভালো করে তাকায় না। সেদিকে লক্ষ্য করে শাশুড়ী মনোয়ারা বেগম বলেন,
—-তুমি এতো সায়েরা সায়েরা না করে নিজের বাচ্চাটার দিকে খেয়াল রাখো।
এরমাঝে দরজা নক করে রাজ কেবিনে প্রবেশ করে। রাজের পায়ের শব্দে হাসনা পাশ ফিরে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
—–সায়েরা কোথায়?
রাজ হাসনার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-তোমার শরীর এখন কেমন আছে?
—–ভালো আছি। সায়েরার কথা কিছু বললেন নাতো?
—হুম, ও কদিনের জন্য ওর মায়ের কাছে বেরাতে গিয়েছে।
হাসনা অভিমানী কন্ঠে বলে,
—-এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলেন অথচ আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না। এমনকি সায়েরার সাথে আমার দেখাও হলো না।
—ও অবশ্য যেতে চাইছিলো না কিন্তু রেশমীর অনুরোধ আমি ফেলতে পারলাম না। সে কারনেই ওকে দিয়ে আসছি। দুদিন থেকেই চলে আসবে।

সাত দিনের দিন হাসনা ওর বেবিটাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। হাসনার দাদী শাশুড়ী থেকে শুরু করে সবাই ভীষণ খুশী। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের বাসায় প্রচুর মিষ্টি পাঠানো হয়েছে। এসব নিয়ে হাসনার মনে কোনো আনন্দ খেলা করে না। কারণ যদি মেয়ে হতো তাহলে মুহুর্তে এদের এই চেহারা থাকতো না। সবাই কোনো না কোনো ভাবে ওকে কথা শোনাতো। এদিকে সায়েরার কোনো পাত্তা নাই। মনটা ওর ভীষণ উচাটন হয়ে আছে। কবে যে মেয়েটা আসবে কিংবা আদৌ আসবে কিনা ওতো জানে না। রাজকে একবার সায়েরাকে নিয়ে আসার কথা বলেছিলো। কিন্তু রাজ বেশ গম্ভীর হয়ে বলে,
—-,ওর যখন সময় হবে তখন আসবে। এটা নিয়ে তুমি প্যানিক করোনা। এমনিতেই অফিসের ঝামেলা নিয়ে ব্যস্ত আছি।

এর মাঝে দুসপ্তাহ পার হয়ে যায়। আজ দুপুরে খাওয়া শেষ করে কেবল শরীরটা একটু এলিয়ে দিয়েছে। অমনি ফোনটা বেজে উঠে। ঘুম ঘুম চোখে হাসনা স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখে রাজ ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রাজ বলে,
—হাসনা,বাবুকে আম্মার কাছে রেখে তোমাকে আমার সাথে একটু বেরোতে হবে।
—-কোথায় যাবো?
—-গেলেই দেখতে পাবে। আমি আসছি। হর্ণ দিলেই চলে এসো।
রাজ ফোনটা রেখে দিতেই হাসনার কেন যেন সায়েরার কথা মনে পড়লো। আচ্ছা, সায়েরার কিছু হয়নি তো?
সায়েরার ভাবনা মাথায় আসাতে হাসনা আর একমুহুর্ত দেরী না করে দ্রুত রেডী হয়ে নেয়। ছেলেটাকে শাশুড়ী মায়ের কাছে রেখে রাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গাড়ির হর্ণ শোনা মাত্রই হাসনা গাড়ির কাছে চলে যায়। রাজ হাসনাকে নিয়ে সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে চলে যায়। চারটার ফ্লাইটে রাজ আর হাসনা ঢাকার পথে উড়াল দেয়। ঘন্টাখানিকের মধ্যে ওরা ঢাকায় পৌঁছে যায়। এয়ারপোর্টের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে উবার নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে সন্ধা ছ,টার দিকে যায়। সেখানে শিশুওয়ার্ডে সায়েরাকে ভর্তি করা হয়েছে। হাসনাকে দেখেই সায়েরা ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে,
—-,মামনি,তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে? আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি।
—-আমিও করেছি মা।
—-,মামনি,আমার ভাইটা কেমন আছে?
—-ভালো আছে।
—-আমাকে তুমি এখান থেকে নিয়ে যাও।
—-ইনশাআল্লাহ আজকে তোমাকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো।
রেশমি দাঁড়িয়ে হাসনা আর সায়েরার সব কথাগুলো শুনে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
—-জন্ম দিলেই আসলে মা হওয়া যায় না। মা হতে গেলে আলাদা যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। সেটা হয়তো আমার ছিলো না।
—-ওকে হাসপাতালে ভর্তি করলে কেন?
—-না করে তো উপায় ছিলো না।
—-ওতো প্রথমদিন থেকে আমার সাথে থাকতে চাইছিলো না। তার উপর খাওয়া নিয়ে ভীষণ যন্ত্রণা দিতে থাকে। বলতে পারো একরকম না খেয়েই থাকা শুরু করে। যার ফলে শরীরে পানিশুন্যতা দেখা দেয়। অগত্যা ওকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে হলো।
—-এতো কিছু ঘটে গেল তুমি আমাকে একটু জানাতে পারতে?
—-তা পারতাম কিন্তু তোমারও তো ঘরে বাইরে প্রচন্ড ব্যস্ততা আছে। যাক তোমার মেয়েকে তোমার কাছে বুঝিয়ে দিলাম। আগামীকাল আমি পাঁচবছরের জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছি। সায়েরাকে নিয়ে কিছু বলার নেই। ওতো ওর মায়ের কাছে আদরে থাকবে। আসলে মানুষ জীবনে যা চায় তাই পায়। হয়তো না বুঝে অনেক কিছু আল্লাহপাকের কাছে চেয়ে নেয়। কিন্তু সব চাওয়া কি ভালো হয়, হয় নাতো? এই যেমন আমি জীবনে ঝা চকচকে ক্যারিয়ার চেয়েছি। হা,আল্লাহপাক আমাকে দিয়েছেন। বিনিময়ে ঘর সংসার সব হারিয়েছি।

এরপর হাসনার দিকে রেশমা এগিয়ে গিয়ে বলে,
—তুমি অনেক ভাগ্যবতী। অন্তত আমার থেকে বহুগুন বটে। স্বামী সংসার ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে থাকো।
সায়েরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রেশমা ধীর গতিতে বিমর্ষভাবে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। রাজ আর হাসনা ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। সায়েরা হাসনার গলা জড়িয়ে ওর কোলের উপর বসে থাকে। সেদিকে লক্ষ্য করে রাজ সায়েরাকে বলে,
—তোমার আম্মুর পেটে সেলাই আছে। কোলে এখন বসা যাবে না।
—ওহ্ সরি আম্মু,তুমি আমাকে আগে বলবে তো!
হাসনা সায়েরার কপালে চুমু দিয়ে বলে,
—-এতো সরি হতে হবে না।
এরপর রাজের দিকে তাকিয়ে হাসনা বলে,
—হাসপাতালের বিল মিটিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে যাওয়া উচিত।
এরমাঝে রেশমা রাজের মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়,বিল সব কমপ্লিট করা হয়ে গিয়েছে। রাজ একটা গাড়ি ভাড়া করে হাসনা আর সায়েরাকে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। মাঝে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে ভাত খেয়ে নেয়। রাজ সায়েরাকে খাইয়ে দিতে চাইলে ও বলে,
—-আমি একাই খেতে পারবো।
হাসনা আর রাজ দুজনেই সায়েরার দিকে তাকায়। মেয়েটার চোখে মুখে ক্লান্তি ছাপ স্পষ্ট হয়ে আছে। একটু দুর্বল মনে হচ্ছে। হাসনা সায়েরার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
—আমি খাইয়ে দেই?
—-দিবে,দাও। কতদিন তোমার হাতে খাই না।
হাসনা মমতা আর আদরে সায়েরাকে গালে তুলে খাইয়ে দেয়। রাজ দুজনের দিকে তাকিয়ে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে, হাসনা পেরেছে সবাইকে মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে নিতে। এমন সময় রাজের ফোনটা বেজে উঠে। স্ক্রীনে আরশীর নাম ভেসে উঠে। রাজ ফোনটা রিসিভ করে বলে,
—হ্যালো আরশী মা,তোমরা কেমন আছো?
আরশী কিছুটা ইতস্তত সহকারে বলে,
—-পাপা ভালো আছি। আম্মুর ফোনটা বন্ধ পেয়েছি তাই আপনার মোবাইলে ফোন দিয়েছি।
—হুম,তোমার আম্মুর মোবাইলে চার্জ নেই। জরুরী কিছু?
—-না মানে দাদীমা জানতে চেয়েছেন আপনাদের আসতে আর কতো দেরী হবে?
—-অনেক রাত হবে। ভাই কি কাঁদছে?
—-কাঁদছিলো। সিতারা খালামনি ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
—-সিতারা কখন আসছে?
—আজকে সন্ধায় খালামনি আর মামা এসেছে।
সিতারা আর হাসেমের বাসায় আসার খবর পেয়ে রাজ আর হাসনা কিছুটা নির্ভার হলো। রাজ আরশীকে ফোনে বলে,
—-ঘুম থেকে উঠে গেলে হাসপাতাল থেকে যে মিল্কপাউডার দিয়েছে ঐটা খাওয়াতে বলো। আমরা আসছি।
—-ওকে পাপা।
সায়েরা সাথে সাথে রাজকে বলে,
—-পাপা,আপুকে ফোনটা রাখতে নিষেধ করো। ভিডিও কল দিতে বলো।
—-কেন?
—-পাপা,ভাইকে তো আমার দেখা হয়নি?
—-বাড়িতে গিয়েই তো দেখতে পাবে।
—-না পাপা,আমি এখনি দেখবো।
হাসনা সাথে সাথে রাজকে বলে,
—-ও যখন দেখতে চাইছে তখন আরশীকে ভিডিও কলটা দিতে বলেন।
অগত্যা রাজ আরশীকে ভিডিও কলে ছেলেটাকে দেখাতে বলে। আরশী ভিডিও কলে দেখালে সায়েরা খুব উৎফুল্ল হয়ে বলে,
—-পাপা, বাবুটাকে আমার এখনি কোলে নিতে ইচ্ছা করছে।
—-বাড়িতে ফিরেই তুমি সারাদিন ভাইকে কোলে নিয়ে রেখো। এখন ফোনটা রেখে দাও। আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। ভাইয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল আবারও কান্নাকাটি করবে।
ওরা খুব ভোরে রংপুরে পৌঁছে যায়। সায়েরাকে দেখে বাড়িতে সবাই খুব খুশী। এদিকে সিতারা কনসিভ করেছে শুনে হাসনারও ভীষণ ভালো লাগে। হাসেমের চাকরি হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাসনা এখান থেকেই ওর বাবা মায়ের আনন্দটা উপভোগ করতে পারছে। কনসিভ করার পর থেকে বাবার বাড়িতে ওর যাওয়া হয়নি। তবে এখন রাজসহ আরশী সায়েরা আর ছেলেটাকে নিয়ে বেরাতে যাবে।
সন্তান আল্লাহপাকের দেওয়া অনেক বড় নেয়ামত। স্বামী স্ত্রীর মাঝে একটা সেতু বন্ধন সন্তান তৈরী করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো এই যুক্তি খাটে না তবে হাসনা ভাবে, সন্তানের কারণে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা বেড়ে যায় । কেননা ওর ছেলেটা গর্ভে আসার পর রাজ ওর প্রতি অনেক বেশী যত্নশীল হয়েছে।
আজ হাসনার কাছে নিজের সংসারটা অনেক পরিপূর্ণ মনে হয়। সায়েরাকে ছাড়া কেন যেন হাসনা নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবতে পারছিলো না। রাজও ভিতরে ভিতরে সায়েরাকে মিস করছিলো। অপরদিকে রেশমার চাওয়াটাকে রাজ অগ্রাহ্য করতে পারছিলো না। রাজ আজ সবদিক থেকে পরিপূর্ণ কিন্তু রেশমার চারিদিক নিঃসঙ্গতায় ঢেকে আছে। বিশেষ করে ওর মা মারা যাবার পর রেশমা বড্ড একাকি। সেকারণে সায়েরাকে রাজ মিস করলেও রেশমার মাতৃত্বের দাবীকে অস্বীকার করতে পারেনি। তবে আজ ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আসায় রাজ ভীষণ খুশী। সারাটাদিন রাজ সায়েরা আরশী আর ছেলেটাকে নিয়ে সময় কাটায়। এরমধ্যে ছেলেটার নামও রেখে দিয়েছে। আরশী আর সায়েরা মিলে ভাইয়ের নাম রেখেছে সায়ান। হাসনার দিনটা আজ ভীষণ ভালো কেটেছে।
রাতের ডিনার করে হাসেম আর সিতারা কামালকাছনায় চলে যায়। এদিকে ভাইকে নিয়ে খেলা করতে গিয়ে হাসনা আর রাজের বিছানায় ওরা ঘুমিয়ে পড়ে। হাসনা আরশী আর সায়েরাকে ডাকতে গেলে রাজ বাঁধা দিয়ে বলে,
—-ওদের ডেকো না। আজ এখানেই ঘুমাক। আমার এই ঘরটা আজ পরিপূর্ণ। চলো আমরা বারান্দায় গিয়ে বসি।

আকাশে আজ পূর্ণিমা। বারান্দায় পাশাপাশি রাজ আর হাসনা বসে আছে। রাজ হাসনার কাঁধে হাত রাখে। হাসনা রাজের কাঁধে নিজের মাথাটা এলিয়ে দিয়ে বলে,
—-একসময় অপমানে অভাবে কত কষ্ট নিয়ে জীবনের সময়গুলো কাটিয়েছি। তবুও আল্লাহপাকের উপর থেকে ভরসা হারাইনি। আজ আল্লাহপাক আমাকে একটা পরিপূর্ণ সুখী জীবন দান করেছেন।
রাজ হাসনার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,
—আমিও আজ খুব সুখী। আল্লাহপাক তোমার মতো একজন জীবনসঙ্গীনি আমাকে দান করেছেন। এই শোকরিয়ার কোনো শেষ নেই। যে মানুষটা আমার পালসকে অনুভব করতে পারে।
দুজনের মুখে আর কোনো কথা নেই। চাঁদের আলো এসে হাসনার মুখের উপর প্রতিফলিত হয়েছে। সেই আলোতে হাসনার সুখী মুখটা দেখে রাজ মনে মনে বলে,
ইনশাআল্লাহ, তোমাকে সারাজীবন আমি আদর ভালোবাসা আর নির্ভরতায় জড়িয়ে রাখবো। হাসনাও মনে মনে ভাবে এই অচেনা মানুষটা কবে থেকে ওর এতো আপন হয়ে গেল ও জানতেই পারলো না।

সমাপ্ত