মৌমোহিনী পর্ব-০৪

0
21

#মৌমোহিনী
পর্ব-৪

“Shame on you!”

সব শোনার পর অনেকক্ষণ চুপ থেকে এই একটা বাক্যই বলতে পারলেন আরিফ। তার মাথা কাজ করছে না। নিজের ভাই, কাছের বন্ধুর থেকে এরকম কথা শুনতে হবে তা কোনোদিন কল্পনাও করেননি তিনি। তার শরীরটা গুলিয়ে আসছে৷

তৌকির সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছেন। তিনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় আরিফ জিজ্ঞেস করলেন, “প্রিয়াঙ্কা কিছু জানে?”

“নাহ।”

“জানলে কী হবে ভেবে দেখেছিস?”

“জানতে দেব না ওকে।”

আরিফ হঠাৎ প্রচন্ড রেগে বললেন, “জানাজানির থেকে বড় কথা বিশ্বস্ত থাকা। ও যদি জানে তুই এই বয়সে এসে হোটেলে গিয়ে সস্তা মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়ে বেড়াচ্ছিস তাহলে ওর কেমন লাগবে ভেবে দেখেছিস? সহ্য করতে পারবে? আর তোর মেয়ের চোখের দিকে তুই তাকাস কেমন করে?”

“বিশ্বাস কর আরিফ, আমার চরিত্রের স্খলন এর আগে কোনোদিনই হয়নি। এই প্রথম। মনিকা ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে.. ”

“খুবই গর্বের কথা এটা, তাই না? ধর তোর বউ যদি আরেকজনের সাথে রাত কাটিয়ে আসে তাহলে তোর কেমন লাগবে?”

“প্রিয়াঙ্কা? হেহ… ও এমন করবে না কখনো।”

“প্রিয়াঙ্কাকে জিজ্ঞেস করলেও তোর ব্যাপারে ও একই উত্তর দেবে। ভেবে দেখ তুই কত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছিস।”

“যা হয়ে গেছে তা তো আর বদলানো যাবে না। এখন তুই আমাকে সাহায্য করবি কি না বল!”

আরিফ বিরক্ত মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোর ঝামেলা তুই সলভ কর। আমি এসবের মধ্যে নেই।”

“প্লিজ আরিফ! আমি আর কার কাছে যাব তুই ছাড়া?”

“ছোটোবেলা থেকেই তুই ঝামেলা পাকিয়ে আমার কাছে আসিস সলভ করতে। কেন? ঝামেলায় জড়ানোর আগে মনে থাকে না যে এটা তোর দ্বারা সমাধান হবে না?”

“আমি তো আর ইচ্ছে করে জড়াইনি…”

“ইচ্ছে করে জড়াইনি মানে? তুই কি স্কুলের বাচ্চা যে ওই মেয়ে কি তোকে চকোলেটের লোভ দেখিয়ে থাইল্যান্ড নিয়ে গিয়েছিল? শালা….”

“কিন্তু আমি…”

“শাট আপ! ভেবে দেখব কিছু করা যায় কি না।”

তৌকির সাহেবকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন আরিফ। অতিথিরা সব চলে গেছে ততক্ষণে। একগাদা গিফটের মাঝে বসে আছে তিন্নি। বাবার সাথে বসে খুলবে। প্রিয়াঙ্কা তার গৃহকর্মীকে নিয়ে ঘরদোর পরিষ্কারের কাজে লেগে গেছেন। আরিফকে বের হতে দেখে প্রিয়াঙ্কা হেসে বললেন, “কী এত সিক্রেট কথা দরজা বন্ধ করে? এত ব্যস্ত থাকো তোমরা, বাব্বাহ! দুই ভাই মিলে একেবারে দেশ উদ্ধার করে ফেলবে!”

অন্য সময় হলে আরিফ উত্তরে নিজেদের কাজ নিয়ে বড়াই করে কিছু বলতেন। আজ আর বলতে পারলেন না৷ বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।

*****

Block–12, seismic survey, US involvement.

সুদর্শন বুদ্ধিদীপ্ত রাজনৈতিক নেতাটি ছোট্ট কাগজের টুকরোয় লেখা শব্দগুলো পড়ে হাসলেন। টেবিলে আঙুল ঠুকে বললেন, “ঠিক আছে, এবার শুভক্ষণ দেখে দিল্লির কানে কথাটা ঢোকাতে হবে। সময়টা আমাদের ভালোই যাচ্ছে, কী বলো ডার্লিং?”

সামনে বসা মেয়েটা একটু বিরক্ত গলায় বলল, “ফিচেল লোকটার পেট থেকে একটা শব্দ যদি বের হতো! এটুকু তথ্য বের করতে গিয়েই এতদিন লেগে গেল! টুকটাক ফোনকল থেকে হালকা আন্দাজ করছিলাম, গতকাল মোবাইল ঘেটে একটামাত্র ডকুমেন্টের ছবি পেয়েছি৷ সব মিলে এইটুকু।”

“এক টুকরো সামান্য তথ্যই রাজনীতির মারাত্মক অস্ত্রে পরিণত হতে পারে ডার্লিং! তুমি দারুণ কাজ দেখিয়েছো।”

“কাজ কি শেষ? নাকি আরো চালিয়ে যেতে হবে?”

“অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। এখনো কতকিছু জানতে বাকি! সোমবার ওদের একটা জরুরি মিটিং আছে। সেদিন অবশ্যই দেখা করবে। ওকে রিলাক্স করে আস্তেধীরে কথা আদায় করবে। বেশি করে মদ খাইয়ে নেবে, তাহলেই দেখবে গড়গড় করে সব বলে দিচ্ছে।”

“চেষ্টা করবো।”

“আহ! তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব একটা ভালো লাগছে না কাজ? তুমি তো এদিকেরও খাচ্ছো, ওদিকেরও খাচ্ছো। সমস্যাটা কোথায়?”

মেয়েটা হেসে উঠে গিয়ে নেতার কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরল। “তোমার কাছে থেকে অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। এখন আর কাউকে মনে ধরাতে পারি না। ওই বুড়োটা না টাকায় তোমার সমান হতে পারবে, না অন্য কিছুতে।” দুষ্টুমির হাসি খেলে গেল মেয়েটার ঠোঁটে।

নেতা হাসল। এত সুন্দর করে হাসতে পারে লোকটা! বারবার প্রেমে পড়ে যায় মেয়েটা। সত্যিকারের প্রেম! ইচ্ছে করে ওর সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু সম্ভব না। নেতার বাহুবন্ধনে পিষ্ট হতে হতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটা। এই লোক কোনোদিন তাকে সামাজিক মর্যাদা দিতে পারবে না, দেবেও না। ওর বউ বাচ্চা নিয়ে সুখী পরিবার আছে।

ওর বউ টুকটুকে সুন্দরী৷ এক ইভেন্টে লোকটা বউয়ের সামান্য এলোমেলো হয়ে যাওয়া হিজাব ঠিক করে দিয়েছিল৷ সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে রাতারাতি তারা সেলিব্রিটি বনে গেছে। এখন সবাই ওর মতো স্বামী চায়। বাংলাদেশের নতুন আইডল, আদর্শ স্বামী, সবচেয়ে প্রমিসিং রাজনীতিবিদ হিসেবে ইতিমধ্যেই সে ইয়াং জেনারেশনের কাছে তুমুল জনপ্রিয়।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মেয়েটা এবার হেসে ওঠে। খিলখিল করে হাসতে থাকে। লোকটা তাতে আরো পাগল হয়ে যায়। এ বড় ভয়ানক নেশা!

******

ছুটির দুটো দিন তৌকির সাহেব বউ মেয়েকে যথেষ্ট সময় দিলেন। তার মন এত অস্থির হয়ে আছে যে কাজেকর্মে সেই মন আর বসেনি। এরচেয়ে তিন্নির সাথে রান্নাবাটি খেলা সহজ৷ বাবা মেয়ের ছোট্ট সুখের সংসার। বাবা বাজার করেন, আর মেয়ে রান্নাবান্না করে৷ ছোট্ট প্লেটে বেড়ে দেয় ভাত-তরকারি, ছোট্ট কাপে চা। বাবা খেয়ে বলেন, পৃথিবীর সেরা খাবার আজ খেয়েছেন। ছোট্ট ব্যাগ হাতে অফিস থেকে ফিরে টাকা এনে মেয়ের হাতে দেন৷ মেয়ে গুছিয়ে পুতুলের আলমারিতে দেখে দেয়। এর মাঝে মা এসে বাগড়া দেন সংসারে। মেয়েকে গোসল করাতে নিয়ে যান৷ তৌকির সাহেব আবার ডুবে যান চিন্তায়। গতকালের পর আর মনিকা কোনো মেসেজ বা কল করেনি। করলে তিনি কী করবেন না বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ওর কাছে কতটুকু তথ্য আছে সেটা না জেনে ওকে কিছুতেই জানতে দেয়া যাবে না যে তিনি সব বুঝে ফেলেছেন।

রাতে তিন্নি ঘুমিয়ে পড়লে অনেকদিন পর স্বামীকে একান্তে পেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে এলেন প্রিয়াঙ্কা। গাঢ় ভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তোমার গায়ের গন্ধটাও ভুলে যাচ্ছি! তোমার কি আমায় একটুও কাছে পেতে ইচ্ছে করে না? এত পুরানো হয়ে গেছি?”

তৌকির সাহেব প্রিয়াঙ্কার কথার কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। তার কলিজা খামচে ধরল কিছু একটা। বুকের ভেতরটা অস্থির লাগতে শুরু করল। প্রিয়াঙ্কা কোনো জবাব বা সাড়া নে পেয়ে স্বামীর দিকে চেয়ে দেখলেন তার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। প্রিয়াঙ্কার বুকটা মায়ায় আর্দ্র হয়ে এলো। তিনি স্বামীর মুখ দু’হাতে তুলে বললেন, “আহা! কাঁদো কেন? আমি একটুও রাগ করিনি। বুঝি তো তোমার ব্যস্ততা। কিন্তু আমাদের একটু সময় দিতে পারলে তো আমাদের সাথে তোমারও মনটা শান্তি লাগবে তাই না?”

তৌকির সাহেব প্রিয়াঙ্কাকে বুকে জড়িয়ে বললেন, “আর কথা না। একটু চুপ করে থাকো। তোমাকে অনুভব করতে দাও।”

এটুকু কথায় প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ অভিমান সব গলে যায়। সে আজ বোঝে, এটুকু ভালোবাসা না পেলে এত বিত্ত বৈভব, স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনও কেমন অর্থহীন মনে হয়।

*****

রবিবারে অফিসে গিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রইলেন তৌকির সাহেব। ঠিকমতো মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারলেন না৷ শুধু হাসফাস লাগছে৷ আসন্ন বিপদের ছায়া তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার চারদিকে ঘনিয়ে আসছে৷ মিটিংয়ে বসে ঘন ঘন তাকে পানি খেতে দেখে বের হবার পর সিনিয়র জুবায়ের আলম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “কী তৌকির সাহেব, শরীরটা খারাপ নাকি?”

“না স্যার, আসলে…”

“খারাপ লাগলে একটু রেস্ট নিয়ে নিন। শরীরের যত্ন নেবেন। বয়সটা অসুখ বিসুখে পড়ারই৷ জিম টিম করতে পারেন না? আপনার তো ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। হা হা হা।”

“যা চাপ যাচ্ছে, জিম করার সময় কোথায়?”

জুবায়ের আলম কাজের কথায় চলে গেলেন৷ আসলেই সময় নেই হাতে। কাজের ওপর কাজ জমে পাহাড় হচ্ছে কেবল৷

******

সেদিন রাতে আরিফ তৌকির সাহেবের কাছ থেকে মনিকার নাম, আইডি, ফোন নাম্বার সব নিয়ে নিল। মন গলেছে তার। বুঝতে পারছে কত বড় ঝামেলা হতে পারে। তৌকির সাহেব কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন।

পরদিন অফিস শেষ হতে একটু দেরি হয়ে গেল। এর মাঝে মনিকার ফোন৷ তিনদিন পর কল করছে মেয়েটা। তৌকির সাহেবের মনে হলো, মেয়েটা তার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত। অথচ স্বাভাবিক ব্যাপার হলে তার দিক থেকে মেয়েটার কাছে ফোন যাবার কথা ছিল। এত বেকুব কেন তিনি? এসব আগে খেয়াল করলে হতো না? তিনি ফোন ধরলেন না৷ কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। মনিকা আবার ফোন করছে।

তৌকির সাহেব আরিফকে ফোন করলেন এবার। তার সাথে পরামর্শ করে এগুনো ভালো৷

আরিফ বললেন, “ফোন ধর। ওকে সন্দেহ করতে দেয়া যাবে না। দেখা কর। ওর থেকে উল্টো কথা আদায়ের চেষ্টা কর। তারপর বের হয়ে ওর ফোনে টেক্সট করতে থাকবি রাত পর্যন্ত। আমি ওর ফাইনাল লোকেশন ট্রেস করার চেষ্টা করবো।”

“ওকে।”

এবার মনিকাকে কল করলে সে অভিমানী সুরে বলল, “দারুণ খেল দেখাচ্ছো তো! প্রথমে কল ধরলে না, তারপর ওয়েটিং! কার সাথে কথা হচ্ছিল?”

“রাগ করে না মৌ। লোকজন সাথে ছিল বলে ফোন ধরিনি। এরপর বউ ফোন করেছিল।”

“তোমার বউটা একদম আনরোমান্টিক।”

তৌকির সাহেবের এবার রাগ হলো একটু৷ কিছু বলতে গিয়ে আবার মনে পড়ল কাছাকাছি একটা কথা মনিকা তাকে বলেছিল থাইল্যান্ড ট্রিপে গিয়ে। তখন তিনি হেসে সহমত জানিয়েছিলেন। এখন বউয়ের প্রতি দরদ দেখিয়ে কথা বলা যাবে না। তিনি বললেন, “হুম বেরসিক। যাকগে, তোমার আজ সময় আছে নাকি?”

নেশাতুর কণ্ঠে মনিকা বলল, “হুম! তোমাকে এত্ত মিস করছি!”

“আজ কোথায় দেখা হবে তাহলে?”

“আমার ফ্ল্যাটে।”

“ফ্ল্যাটে?”

“হুম। রুমমেট নেই। ফাঁকা ফ্ল্যাটে একা মেয়ে থাকাটা ভালো নয় বলো? একজন সঙ্গী প্রয়োজন।”

“আসছি আমি। ঠিকানা দাও।”

মনিকা ঠিকানা দিল। তৌকির সাহেব পৌঁছে গেলেন জায়গামতো। দারোয়ান তাকে পরিচয় জিজ্ঞেস করলে মনিকার কথামতো বলে দিলেন তিনি তার মামা।

দরজা খুলে দিলে তৌকির সাহেব বার কয়েক ঢোক গিললেন। মেয়ে তো নয়, এটম বোমা! মনিকা পাতলা একটা শাড়ি পরেছে আজ। ওর সরু কোমটা বলিউডের নায়িকাদেরও হার মানায়। ব্লাউজ পরেনি, অন্তর্বাসের ওপর শাড়ি আটকে রেখেছে কেমন করে কে জানে!

মনিকা হেসে উঠল। “চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে নাকি ভেতরে আসবে?”

ফ্ল্যাটটা বেশ বিলাসবহুল। এই ফ্ল্যাটের ভাড়া দেয়া, আরামদায়ক জীবনযাপন করার টাকা কোথা থেকে আসে? জিজ্ঞেস করবে নাকি? জিজ্ঞেস করলে যদি আবার ভাবে সে তাকে সন্দেহ করছে?

ড্রইংরুমে দুটো পানীয়ের বোতল। তৌকির সাহেবকে বসিয়ে মনিকা নিজেই ড্রিংক বানিয়ে তার হাতে তুলে দিল। ভাবাভাবি না করে এক চুমুক খেয়ে নিলেন তিনি।

কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলেন আবার আগের মতো উত্তেজনা হচ্ছে। হ্যাঁ সেই নিষিদ্ধ আকর্ষণ ফিরে আসছে। মেয়েটা স্পাই জেনেও এরকম কেন হবে? মনে হচ্ছে চাকরি গেলে যাক, দেশ রসাতলে যাক, সে মনিকাতে ডুবে ডুবে দিব্যি সুখে থাকবে!

আরো বেশ খানিকটা ড্রিংক জোর করেই তাকে করালো মনিকা। ড্রিংকে খানিকটা যৌন উত্তেজক ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছে। তাতে ফল হলো খুব! আজ মনে হলো তৌকির সাহেবের বয়স দশ বছর কমে গেছে!

উত্তেজনাম দুটো ঘন্টা কেটে গেল। তৌকির সাহেব এত ক্লান্ত হলেন যে তিনি শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম ভাঙলো রাত সাড়ে বারোটায়৷ তিনি চোখ ডলে তাড়াতাড়ি মোবাইল ফোনটা হাতে নিলেন৷ এটাতে আগে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক দেয়া ছিল। সেজন্য মনিকা এক ফাঁকে অন করে নিতে পেরেছিল। আরিফের পরামর্শে সেই লক সরিয়ে দিয়েছে সে৷ মনে হচ্ছে আজ আর খুলতে পারেনি মনিকা।

কল এসেছে অনেকগুলো। প্রিয়াঙ্কা, ড্রাইভার, আরিফ সবাই কলের পর কল করে গেছে। ড্রাইভার প্রিয়াঙ্কাকে তার লোকেশন বলে দেয়নি তো? তাকে বুঝিয়ে বলা ছিল যদিও৷

তৌকির হন্তদন্ত হয়ে কাপড় পরতে লাগলেন। মনিকা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। বুড়োটা ঘুমিয়ে পড়ায় তার কাজ হয়নি এক বিন্দুও৷ সে তৌকির সাহেবকে জাপটে ধরে বলল, “না, আজ যেতে দেব না। থাকতে হবে আমার সাথে। তুমি চলে গেলে আমি খুব ভয় পাব।”

তৌকির সাহেব তাকে জোর করে ছাড়িয়ে নিলেন নিজের থেকে। বিরক্ত গলায় বললেন, “পারব না থাকতে। বোঝো না তুমি, আমার পরিবার আছে? চাইলেই কি বাইরে রাত কাটানো যায় নাকি?”

মনিকা আর কিছু বলল না৷ তৌকির সাহেব বেরিয়ে গেলে দরজা বন্ধ করে এসে বিছানায় বসল। চোখ পানিতে ভর্তি হয়ে গেছে তার৷ অসহ্য একটা জীবন! প্রয়োজনে সবাই প্রবল আকর্ষণে কাছে টেনে নেয়। আর প্রয়োজন ফুরোলে সোজা ফেলে দেয়া হয় ডাস্টবিনে। না তার সামাজিক কোনো মর্যাদা আছে, না আছে কারো থেকে সামান্য ভালোবাসা, ভালো ব্যবহার, যত্ন পাবার কপাল। ভেতরে একটু একটু করে রাগ দানা বাঁধতে থাকে তার।

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু