#মৌমোহিনী
পর্ব-১২
ঢাকার মধ্যে এতখানি জায়গা নিয়ে এরকম একটা আশ্রম আছে সেটা আরিফের জানা ছিল না৷ বেশ বড়সড় খোলামেলা জায়গা। সবুজ মাঠ, নানারকম গাছগাছালি, ফুলের বাগান, আর এসবের মাঝে ছোটো ছোটো একতলা সাদা রঙের অনেকগুলো দালান৷ এটা বৃদ্ধাশ্রম নয়, সব বয়সী মানুষেরই আনাগোনা আছে। মূলত পারিবারিক কিংবা মানসিক অশান্তিতে ক্লান্ত মানুষেরা এখানে ভিড় করে। এখানে থাকার জন্য বেশ চড়া টাকা গুনতে হয় বলে লোকজনের সংখ্যা খুব বেশি নয়। মেন্টাল থেরাপি টেরাপি নাকি দেয়া হয়৷ যাদের একা থাকতে পছন্দ তাদের একা থাকার সুযোগও আছে৷
অনেকখানি ড্রাইভ করে আসতে আসতে আরিফ এসব তথ্য জেনেছে এক জুনিয়রের কাছ থেকে। প্রিয়াঙ্কার কাছে ঠিকানা পেয়ে সে ছেলেটাকে জানিয়েছিল ডিটেইলস জেনে তাকে বলতে। ডিটেইলস বলতে এতটুকুই জানা গেছে। এখন ভেতরে ঢুকে আরিফ বেশ মুগ্ধ হলেন। আসলেই একটা শান্তি শান্তি ভাব আছে জায়গাটায়। গেটের পাশে সার দেয়া গাছে দোলনচাঁপা ফুটে আছে। ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে আছে জায়গাটা। এখানে ক’দিন থাকা গেলে বেশ হতো! এই জায়গা প্রিয়াঙ্কা কোথায় খুঁজে পেল?
প্রিয়াঙ্কা হয়তো বলে রেখেছিল তার আসার কথা৷ তাই ঢুকতে কোনো অসুবিধা হলো না। একটা গোল চত্ত্বর পেরিয়ে ওয়েটিং রুম৷ সেখানে বসলেন আরিফ। একজন পরিচারক তাকে বসিয়ে রেখে প্রিয়াঙ্কাকে খবর দিতে গেল।
আরিফ মাথা নিচু করে আজ ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা ভাবছিলেন৷ এখন বিকেল। আজ সারাদিন রোদ ওঠেনি। আকাশ ভার হয়ে আছে৷ আবার বৃষ্টিও হয়নি। কেমন যেন গুমোট হয়ে আছে পরিবেশ। বৃষ্টি হলে খারাপ হতো না৷ আরিফের কেন যেন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে।
প্রিয়াঙ্কা আসার আগেই তৌকিরের কল এলো।
“কিছু খবর পেলি?”
প্রিয়াঙ্কা বলতে নিষেধ করেছে বলে তার কথা জানালেন না আরিফ। বলে দিলেন খবর পাননি৷ তৌকির জানালেন, তার অফিস থেকে অত্যন্ত জরুরি মিটিং ডেকেছে৷ প্রোজেক্টের তথ্য লিক হবার ব্যাপারে ফাইনাল রিপোর্ট নাকি হাতে এসেছে। অফিসে এখন যেতেই হবে।
আরিফ জিজ্ঞেস করলেন, “তোর কি ভয় লাগছে?”
“লাগবে না? হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এসব কেন হচ্ছে আমার সাথে বল তো!”
আরিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “কর্মফল।”
“তাই হবে।” অকপটে স্বীকার করে নিলেন তৌকির৷ তারপর কল রেখে দিলেন। তার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ঠিক এই সময়ে প্রিয়াঙ্কা এসে ঢুকলেন৷ তার চেহারা দেখে চমকে উঠলেন আরিফ। এই সেদিনের দেখা প্রিয়াঙ্কার চেহারা এমন হয়ে গেছে কী করে! আরিফ একবার এক দরিদ্র বাবাকে দেখেছিলেন যিনি মেয়ের বিয়ের জন্য মেয়ের জন্মের পর থেকে টাকা জমাচ্ছিলেন৷ তার বিশ বছরের জমানো টাকা যখন চুরি হয়ে গিয়েছিল তখন সেই বাবার চেহারা যেমন ভেঙেচুরে সর্বহারাদের মতো হয়ে গিয়েছিল, প্রিয়াঙ্কার চেহারায় ঠিক সেরকম ছাপ দেখতে পেলেন তিনি৷ চোখ বসে গেছে, চেহারার জৌলুস সবটা হারিয়ে গিয়ে কেবলই হতাশার ছাপ রেখে গেছে। চোখে একফোঁটা উজ্জ্বলতাও অবশিষ্ট নেই। বাইরে বাইরে জোর বজায় রাখলেও ভেতরে ভেতরে কতটা ভাঙলে কাউকে এমন দেখা যেতে পারে আন্দাজ করতে পারলেন না আরিফ। শুধু নিজের ভেতরকার রক্তক্ষরণ টের পেতে থাকলেন৷
তাকে হা করে চেয়ে থাকতে দেখে প্রিয়াঙ্কা বললেন, “কী দেখছো?”
“তোমার একি অবস্থা!”
প্রিয়াঙ্কা ভাসা ভাসা চোখে তার দিকে চেয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তার চোখ ভর্তি হয়ে গেছে অশ্রুতে। ওড়নায় চোখ মুছে বললেন, “আমি এত কথা বলতে পারব না। কথা বলার মতো কোনো ইচ্ছে আমার অবশিষ্ট নেই। তোমাকে একটা কারনে ডেকেছি৷ যে নাম্বার থেকে আমার কাছে ছবিগুলো এসেছিল সেটা তোমার কাছে কেন? ছবিগুলো কি তুমিই পাঠিয়েছ? আমার মনে হয় তুমি সব জানো। আমাকে সত্যিটা খুলে বলবে?”
প্রিয়াঙ্কার কথাগুলোয় চাপা ক্রোধ, কঠোরতা আর একইসাথে অসহায় আকুতি মিলেমিশে এক হাহাকার তৈরি হয়েছে৷ আরিফের বুকটা আবার মোচড় দিয়ে উঠল। তিনি মনে মনে বললেন, তোকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করব না তৌকির! কোনোদিন না!
নিজেকে সামলে নিয়ে আরিফ বললেন, “তোমার সবকিছু না জানাই ভালো।”
প্রিয়াঙ্কা কিছুই বললেন না৷ অদ্ভুত চোখে চেয়ে রইলেন৷ সেই দৃষ্টিতে ঘৃণা নাকি অসহায়ত্ব আছে বুঝতে পারলেন না আরিফ। তার তখন মনে হলো ওকে সবকিছু বলে দিলেই ভালো হবে৷
আরিফ বলতে লাগলেন৷ একদম শুরু থেকে শুরু করে পুরোটাই বললেন তাকে। এটাও বললেন যে আজ তৌকিরের অফিস থেকে ডেকেছে৷
প্রিয়াঙ্কা মাথা নিচু করে সবকিছু শুনলেন৷ তারপর অস্ফুটে বললেন, “মেয়েটা সত্যিই ম রে গেছে?”
“হ্যাঁ। তোমার আর ভয় পাবার কোনো কারন নেই।”
এতক্ষণে প্রিয়াঙ্কা হঠাৎ হেসে উঠলেন৷ হাসিটা ঠিক হাসির মতো দেখাল না, তবে শব্দ হলো।
“আরিফ! হাসালে তুমি। পৃথিবীতে কি একটাই মেয়ে ছিল?”
“মানে?”
“মানে তোমার যদি চরিত্র খারাপ হয় তাহলে তুমি কি এক মেয়ের পেছনেই পড়ে থাকবে নাকি একটা গেলে দুটো, দুটো গেলে তিনটা, এরকম আরো নতুন নতুন অপশন খুঁজতে থাকবে?”
পরের কথাটা বলতে আরিফের যথেষ্ট কষ্ট হলো, তবুও তিনি বললেন, “তৌকির কিন্তু অনুতপ্ত।”
“অনুতাপ না, সে চাকরি নিয়ে ধাক্কাটা না খেলে এখনো ঠিকই সম্পর্কটা চালিয়ে যেত। তুমিও কিছু জানতে না, আর আমিও না।”
“তোমাকে মনিকা কেন ছবিগুলো পাঠালো বুঝতে পারছি না।”
“তুমি বললে না, চিঠিতে লেখা ছিল যাবার আগে আমি একটা কাজ করে যাব, এক অবলা নারীকে বাঁচিয়ে দিয়ে যাব, তবুও যাতে আমার ন্যায়বিচার হয়? সেই অবলা নারীটা বোধহয় আমি।”
চিঠিটা প্রিয়াঙ্কাকে পড়ে শোনানোর সময়ও কথাটা ধরতে পারেননি আরিফ। তারও মনে হলো প্রিয়াঙ্কা ঠিকই বলছে।
“তুমি কি আর ফিরবে না?”
“না।”
“এখানে কেমন করে এলে? এই জায়গা চিনলে কিভাবে তুমি? এত কস্টলি জায়গায় কিভাবে থাকবে?”
“এটা আমার বান্ধবীর বানানো আশ্রম। শুরু থেকেই আমি সুযোগ পেলে এখানে আসি৷ তোমার ভাইকে বলা হয়নি, বা বলতে পারো আমাকে সে বলার সুযোগ দেয়নি৷ কত বছর হয়ে গেছে, আমার দিকে ভালো করে চেয়ে দেখেনি, পাঁচটা মিনিট গল্প করেনি একসাথে বসে। আমি পুরানো হয়ে গিয়েছি অনেক আগেই। আমার রিপ্লেসমেন্ট আসতে হয়তো একটু দেরি হয়ে গেছে। হোয়াটঅ্যাভার! আমাকে তোমার ভাই চাকরি করতে দেয়নি৷ বলেছে ওর টাকা দিয়েই চলবে। কিন্তু আমি শুরু থেকে অল্প করে টাকা জমিয়ে ইনভেস্ট করতে শুরু করি৷ এখন আমার টাকাপয়সা যা আছে তাতে মা মেয়ের চলে যাবে। বুঝলে আরিফ, যত বড় লাইফ সাপোর্টই থাকুক না কেন, সব মেয়েরই নিজের পায়ের নিচে মাটি রাখা উচিত। সেই মাটিটা হলো ফিনানশিয়াল সাপোর্ট৷ ওটা না থাকলেও বেঁচে থাকা যায় ঠিকই, কিন্তু আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচা যায় না। কে ভেবেছিল বলো যে আমাকেও এই দিন দেখতে হবে?”
কথাগুলো শুনতে শুনতে আরিফের ভেতরটা ভেঙেচুরে যেতে লাগল। তার ইচ্ছে হলো প্রিয়াঙ্কার হাত ধরে তাকে একটু ভরসা দিতে। কিন্তু সেই অধিকার তার নেই। মাঝেমাঝে চোখের দেখা এক কদমের দূরত্বে থাকা মানুষ আদতে যোজন আলোকবর্ষ থেকেও বেশি দূরে থাকে। তাদের ধরাছোঁয়ার কোনো অধিকার থাকে না। তাদের পাশে থাকার অধিকারটুকুও হয়তো পাওয়া যায় না৷
আরিফ নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “কিন্তু এখানে থাকতে গিয়ে তুমি পরিবারের মানুষের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছ৷ সবাই চিন্তা করছে! তুমি তোমার বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকো। সেখানে কত মানুষ আছেন। তোমার নিজের মা বাবা আছেন৷ এখানে আত্মীয়পরিজন বাদে একা একা কেমন করে থাকবে?”
“তুমি ভালো করেই জানো আরিফ, আমি তৌকিরকে বিয়ে করার জন্য মা বাবার কতটা অবাধ্য হয়েছি। কতবার তাদের মানুষের সামনে ছোটো হতে হয়েছে আমার কারনে। তারা আমাকে কোনো ধরনের কথা শোনাতে বাকি রাখেননি। ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তৌকির চাকরি পেলে নাকি আমাকে আর চিনবে না৷ কিন্তু তা তো হয়নি। সে আমাকেই বিয়ে করেছিল৷ আমি ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় বড়াই করে বলে এসেছিলাম, যার কাছে যাচ্ছি, সে আমাকে তোমাদের থেকে বেশি যত্নে রাখবে। এখন সেখানে কোন মুখে ফিরে যাব বলো? আজ আমার কারো সাথে যোগাযোগ করতে ইচ্ছে করছে না৷ কাল ওদের ফোন করে কথা বলে নেব৷ কিন্তু দোহাই লাগে, তোমার ভাইকে আমার ঠিকানা বলবে না। আমি ওর ছায়াও দেখতে চাই না।”
আরিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলেন, “তিন্নি কোথায়?”
“খেলছে। এখানে কয়েকটা বাচ্চাও আছে। ওদের সাথে খুব ভাব হয়েছে। ও ভালোই আছে।”
“কিন্তু ভালো থাকবে কি? তিন্নি বাবা বলতে অজ্ঞান। বাবা ছাড়া কি সে বাঁচবে?”
“তৌকির যদি আজ ম রে যায়, তাহলে কি তিন্নি বাঁচবে না? কেউ কারো শোকে ম রে যায় না আরিফ। ঠিকই বেঁচে থাকে। তিন্নিও থাকবে। অমন বাবা থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। আমি চাই না আমার মেয়ে কোনো চরিত্রহীনের সংস্পর্শে থাকুক।”
প্রিয়াঙ্কা ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে ছিল, যার জীবনের পুরোটাই আবর্তিত হতো স্বামী আর মেয়েকে ঘিরে। তৌকিরের শরীরের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লেও ও অস্থির হয়ে উঠত, যেন পৃথিবী নড়ে উঠেছে। আজ তার মুখে কথাগুলো শুনে আরিফ আরেকটা ধাক্কা খেলেন। কেমন করে বিনা বাঁধায় কথাগুলো বলে ফেলল প্রিয়াঙ্কা! তার এই মুহূর্তে এসে মনে হলো যে প্রিয়াঙ্কাকে তিনি চিনতেন সে বেঁচে নেই। এই প্রিয়াঙ্কা কেবল আগের মানুষটার শরীর আর স্মৃতিটুকু ধারণ করে আছে৷
আরিফের হতভম্ব ভাব দেখে প্রিয়াঙ্কা বললেন, “তুমি বুঝবে না আরিফ। নিশ্ছিদ্র বিশ্বাস ভাঙলে কেমন লাগে তা তুমি কোনোদিন বুঝবে না।” বলতে বলতে উঠে পড়লেন তিনি। “যদি তৌকির এই ঠিকানা জানে, তাহলে তোমাকেও কোনোদিন ক্ষমা করব না আমি। সত্যিই হারিয়ে যাব।”
আরিফ কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলেন না৷ প্রিয়াঙ্কা বেরিয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে এসে বললেন, “মেয়েটাকে জাস্টিস পাবার ব্যবস্থা করে দিও। ওর ওপর আমার রাগ নেই। লখিন্দরের বাসর ঘরে ফুটো না থাকলে কোনো উপায়েই সাপ ঢুকতে পারত না।”
******
তিন ঘন্টার মিটিং সেরে যখন বের হলেন তৌকির সাহেবের তখন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। মনে হচ্ছে কোনো অলৌকিক উপায়ে বেঁচে গেছেন তিনি। সবটুকু দোষ গিয়ে পড়েছে কায়সারের ওপর। এটা সত্যিই যে কায়সার তথ্য পাচার করেছিল। সব প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু তবুও তৌকির সাহেব মিটিংয়ের প্রতিটা মুহূর্ত ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছেন, কেবলই মনে হচ্ছিল এখন তার নামটা উঠবে। কিন্তু ওঠেনি। তাকে কেউই ধরতে পারল না? তাহলে কি মনিকা তার থেকে তেমন কোনো তথ্যই নিতে পারেনি? নাকি তার কপালটা খুব বেশি ভালো?
কিন্তু কতটাই বা ভালো? মনিকার চক্করে পড়ে চাকরি খোয়াতে হয়নি যদিও, কিন্তু সংসারটা যে শেষ হয়ে গেছে। প্রিয়াঙ্কার বিশ্বাস, ভালোবাসা সব এক লহমায় পরিণত হয়েছে অবিশ্বাস্য রকমের ঘৃণায়। প্রিয়াঙ্কা তার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল সেটা ভাবলে তার এখনো ইচ্ছে করে ম রে যেতে। কোথায় আছে ওরা? ভাবতে গিয়ে আবারও বুকটা হু হু করে উঠল। তিন্নির জন্য বুকের ভেতর হাহাকার করছে। মেয়েটা ভালো আছে তো?
এক দফা মিটিং শেষে আবারও মিটিং বসল। এবার শুধু প্রোজেক্টের আগের সদস্যদের নিয়ে বসা হলো। আবারও প্রোজেক্টের কাজ শুরু করতে হবে। এই প্রোজেক্টের কথা জনগণের কাছে এবার তুলে ধরা হবে। এটা হবে সরকারের নির্বাচনী প্রচারণার একটা হাতিয়ার। এই সরকার স্পষ্টভাবেই এখন আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়ার ব্যাপারটা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে চায়। তথ্য যখন বেরিয়েই গেছে, তখন লুকোছাপা করে আর কাজ নেই। ভারতকে হাতে রাখারও আপাতত দরকার নেই। ভারত যেহেতু চাচ্ছে অপজিশন পার্টি জিতুক, তাই তারাও এখন ভারতবিরোধী হয়ে উঠেছে। এই প্রোজেক্ট হাতে থাকলে আমেরিকাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এই সরকার টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে।
মিটিংয়ে বসে থাকলেও তৌকির সাহেবের মন এখানে রইল না। যে উদ্দীপনা নিয়ে তিনি প্রোজেক্টের অংশ হয়েছিলেন সবটা হারিয়ে গেছে। বিন্দুমাত্র আগ্রহ পাচ্ছেন না তিনি। শেষে বলেই ফেললেন, তিনি আর এই প্রোজেক্টে থাকতে চাচ্ছেন না। তার শরীর ভালো না৷ এই শরীর নিয়ে খাটাখাটুনি করা সইবে না। তাকে যেন এখান থেকে বাদ দেয়া হয়৷
অফিস থেকে বাড়ি না ফিরে তিনি প্রিয়াঙ্কার বাপের বাড়িতে চললেন৷ যদি দেখানে কোনো খোঁজ পাওয়া যায়।।
আরিফকে ফোন করে সব বললেন তিনি। আরিফ কিছুই বললেন না উত্তরে।
*******
তার ফার্ম হাউজে গোয়েন্দা যাওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের সিল করার কথা ফারহান রুশদি জানতে পারলেন সেদিন রাতে। সকালে সব কাজ শেষে বাড়ি ফিরে বহু কসরত করে নাঈশার রাগ ভাঙিয়ে ছুটতে হয়েছে পার্টি অফিসে। গতকালের পার্টিতে না যাওয়া থেকে শুরু করে অর্ধেক দিনে লেগে যাওয়া নানা ঝামেলা সমাধান করতে করতে গভীর রাত হয়ে গেছে। এত রাতে এসে তিনি এক সোর্সের মারফত এতকিছু জানতে পারলেন৷ তার সোর্স ওই থানারই এক অফিসার৷ লোকটা তাকে সারাদিন রিচ করার চেষ্টা করেছে, তবে পারেনি। তার থেকেই রুশদি গোয়েন্দা আরিফের কথা জেনেছেন।
আরিফ লোকটা বড্ড বাড় বেড়েছে। সেই কবে থেকে সে মনিকার পেছনে লেগে তাকে ধরার চেষ্টা করছে৷ দুই টাকার গোয়েন্দা কি তার ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখে না? সেধে সেধে কেন সাপের ল্যাজে পা দিতে যাচ্ছে সে? জানের মায়া নেই? একটা নতুন খবর তিনি জানলেন আজ। আরিফ তৌকিরের চাচাতো ভাই। এসবের পেছনে কি তবে তৌকির আছে? নাকি আরিফ স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব করে যাচ্ছে?
রুশদি তার শ্বশুরকে ফোন করে আরিফের তথ্য দিয়ে শুধু এটুকু বললেন, “লোকটা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। একে সরানো জরুরি।”
রুশদির শ্বশুর বললেন, “দেখছি কী করা যায়।”
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু