তোর মন পাড়ায় পর্ব-০৬

0
7

#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব৬
#ইস্পিতা_রহমান
নানা বাড়ি আসা বেশ কয় একদিন হয়ে গেছে অর্কভের।ছুটির অলস দুপুর।সোফায় বসে আরামসে টিভি দেখছিলো রায়াত।পেছন থেকে অর্কভ এসে ওর হাত থেকে রিমোর্টটা কেড়ে নিয়ে মাথায় একটা রিমোট দিয়ে মে*রে সোফায় বসতে বসতে বলে

— হ্যা রে ইফতারি, তুই না ছোটবেলায় দেখতে কালো পেত্নী ছিলি।সেই তুই ফর্সা হলি কিভাবে রে?অবশ্য দেশে তো নাইট ক্রিমের অভাব নাই।সে সবই ইউজ করে ফর্সা হয়েছিস তাই না?

এমনিতেই রিমোর্টটা কেরে নিয়েছে তার উপর আবার এই কথা বলাতে ক্রোধে মুখ লাল করে রায়াত বলে– প্রথমত,আমার নাম ইফতারি না।দ্বিতীয়ত আমি কোনকালেও পেত্নী ছিলাম না।হ্যা গায়ের রঙ একটু চাপা ছিলো ঠিকি।কিন্তু সেটা এখন ঠিক হয়ে গেছে।তার মানে এই না আমি ওইসব ছ্যাতা,ল্যাতার নাইট ক্রিম ইউজ করেছি।

–ওহ রিয়েলি!তাহলে ফর্সা হলি কেমনে,পার্লারে ফেসিয়াল করে?নাকি ইফতারি করে?

ইফরা আরো রেগে গিয়ে বলে– বললাম না আমার নাম ইফতারি না।আপনি যদি ইফরা বলতে না পারেন তাহলে রায়াত বলবেন।সবাই আমাকে রায়াত বলেই ডাকে।

–বয়ে গেছে আমার রায়াত বলতে।আমার যা ইচ্ছা তাই বলে ডাকবো।

–শুনেন অর্কভ ভাইয়া….

এইটুকু বলতে অর্কভ আগুন চোখে তাকায় রায়াতেরহ দিকে।তারপর গমগমে স্বরে বলে– এই তোর ভাইয়া কে রে?কে তোর ভাইয়া?

এই কথা শুনে রায়াত হতবিহ্বল অক্ষিপটে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অর্কভের দিকে।তারপর বলে– ফুপুর ছেলেকে ভাই বলবো না তো কি বলবো?

অর্কভ নিজের অজান্তেই এমন কথা বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।আসলেই তো তাই।হঠাৎই সে এমন কথা কেনো বলে উঠলো।সে তো ছোটবেলার বিয়ে মানে না।তবে রায়াত ওকে ভাই বললে সমস্যা কি ওর।অত:পর নিজেকে ধাতস্ত করে বলে– আব,আ,হ্যা,হ্যা ভ ভ ভাইই তো বলবি।ভাই।

–হুম।এবার রিমোট দেন।

–খেলা দেখবো আমি।সর, ভাগ।

–আমি সিরিয়াল দেখবো।রিমোট দিন।

–সিরিয়ালে ওইসব কুটনিগিরি আর বউ শ্বাশুড়ির ঝগড়া দেখে ওইসব শিখবি আর আমার মায়ের সাথে তা প্রয়োগ করবি হ্যা?তা হবে না।সর,ভাগ এখান থেকে।

প্রথম কথাটুকু রায়াত শুনলেও, অপমান করে সর,ভাগ বলেছে অর্কভ।ওর বাড়িতে ওকেই অপমান আবার ওকেই টিভি দেখতে দেবে না।যার জন্য ক্রোধান্বিত হয়ে প্রথম কথার উত্তর না দিয়ে ও সর ভাগ এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উঠে গিয়ে অর্কভের থেকে রিমোটটা কেড়ে নিয়ে চলে যেতে নিলেই অর্কভও উঠে এসে ওর হাতে থেকে রিমোট কেড়ে নিতে লাগে।রায়াত কিছুতেই রিমোট দেবে না।শক্ত করে ধরে রাখে।ব্যাস,দুজনের মধ্যে এই নিয়ে মারামারি লেগে যাওয়ার মত হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো।এও রিমোট দেবে না,ও ছাড়বে না।আবার অর্কভ নিয়ে নিলে রায়াত রিমোট নিয়ে নেয়।এভাবে মারামারি করতে করতে রায়াতকে অর্কভ সোফার উপর পেরে ফেলে।রায়াতও কম না। উঠে অর্কভকে ধাক্কা মেরে একদম অর্কভের পেটের উপর উঠে বসে রিমোট নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে।মনে হচ্ছে দুজনের মধ্যে রিমোট আদায় করার প্রতিযোগিতা চলছে।শেষে অর্কভ রিমোর্টটা জোরে টান দিতেই রায়াত টাল সামলাতে না পেরে অর্কভের বুকের উপর ঝুঁকে পরে।আর সেই ঝুঁকে পড়াটা এতোটা ঝাটকায় হয় যে,সোজা অর্কভের ঠোঁটে রায়াতের ঠোঁটে লেগে যায়।ওই মুহূর্তে দুজনের হুস আসে।অর্কভ রিমোট ছেড়ে দেয়।রায়াতও অর্কভের উপর থেকে এক লাফে উঠে পরে।যে রিমোট নিয়ে এতো কিছু মাঝখানে সেই রিমোটটা মেঝেতে গড়াগড়ি খায়।রায়াত উঠে এক দৌড় দেয় নিজেররুমের দিকে।তখনি আঞ্জুমান আরার সাথে ধাক্কা খাই।কি রে কি হয়েছে,আঞ্জুমান আরা প্রশ্ন করে কিন্তু রায়াত কোন উত্তর না দিয়েই দৌড়ে চলে যায়।এদিকে সোফায় তখনো এক ধ্যানে হতভম্ব হয়ে শুয়ে আছে অর্কভ।আঞ্জুমান আরা এসে ওকে ডাকতেই ধ্যাত ভেঙে বাস্তবে ফিরে ও।আঞ্জুমান আরা অর্কবকে সুধায় রায়াত ওভাবে চলে গেলো কেনো।অর্কভ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলে,

–ক্যারেন্ট শখ খেয়েছে তাই।

আঞ্জুমান আরা রিমোর্টটা তুলতে তুলতে বলে,তাই বলে ওইভাবে দৌড়ে যেতে হবে।

এরপর আঞ্জুমান আরা কিছুটা বিচলিত হয়ে বলে– আরে মেয়েটার সত্যিই কিছু হলো না তো কারেন্ট শক লেগে।তাই ওভাবে চলে গেলো।

এই বলে আঞ্জুমান আরা দ্রুত রায়াতের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।অর্কভ রিমোর্টটা হাতে নিয়ে বলে– সে শক তো আমিও খেয়েছি।এরপর জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে– ইয়াক,ইফতারির ঠোট আমার ঠোঁটে।

বলেই অর্কভ উঠে ব্রেসিং এর দিকে যায় নিজের ঠোঁট ধুতে।

এদিকে আঞ্জুমান আরা রায়াতের রুমে এসে দেখে রায়াত ওয়াশরুমে গিয়ে একের পর এক পানি দিয়ে নিজের ঠোঁট ধুচ্চে।আঞ্জুমান আরা ওর কাছে গিয়ে বলে,

–ক্যারেন্টে শক খেলে কেউ পানি নাড়ে হ্যা।পানিতে ক্যারেন্ট এর উৎপত্তি, জানিস না?

রায়াত পানি দিয়ে ঠোঁট ধোঁয়া বন্ধ করে আঞ্জুমান আরার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে– ক্যারেন্ট শক কখন খেলাম?

–অর্কভ যে বলল তোর কারেন্ট শক লেগেছে।

–আমার লাগে নি।তোমার ছেলের লেগেছে।
ভ্রুকুচকে আঞ্জুমান আরা বলে– অর্কভের?

–হু।

বলেই রায়াত ওয়াশরুম থেকে রুমে এসে বিছানায় বসে পরে।পিছে পিছে আঞ্জুমান আরা এসে ওর পাশে বসে বলে– দেখি কোথায় শক লাগছে।

এই কথা শুনে রায়াত ওর ফুপুর দিকে তাকায়।মনে মনে বলে– শক তো খেয়েছি ঠোট দিয়ে সোজা দিল এ।সেটা কিভাবে দেখাবো তোমায়।

আঞ্জুমান আরা আবার বলে– তোকে কতবার বলেছি না ইলেক্ট্রিক্যাল জিনিস না ধরতে।কি টাচ করেছিলি বল?অর্কভকে বলে আজই সেটা বাতিল করবো।প্রয়োজনে নতুন কিনে আনবো।

রায়াত এবারো কিছু বলল না।তবে মনে মনে বলল,তোমার ছেলেকেই টাচ করছি গো।তোমার ছেলের ঠোঁট।ছেলেকে বলো তাহলে ওই ঠোঁটটা চেঞ্জ করতে।

আঞ্জুমান আরা রায়াতকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে– কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি।বল?

–কিছু না ফুপি।

বলেই রায়াত বিছানায় শুতে শুতে বলে– যাও তো নিজের রুমে যাও।আমি এখন একটু ঘুমাবো।
আঞ্জুমান আরা রায়াতের কপালে হাত দিয়ে জোরে বলে– হ্যা রে তোর কি শরীল খারাপ করছে নাকি রে?ওরে ও অর্কভ,ভাইজান,ভাবি দেখে যাও রায়াতের কারেন্টে শক লেগে বোধহয় শরীল খারাপ করছে।ডাক্তার ডাকো।

সোফার রুম থেকে টিভি দেখতে দেখতে অর্কভ ভাবে,মায়ের আবার বেশি বাড়াবাড়ি। চুমুতে কারোর শরীল খারাপ করে?নাকি ডাক্তার ডাকা লাগে?অবশ্য মা তো জানেই না আসল কাহিনি।

এরপর নিজের ঠোট ডলতে ডলতে বলে,উফফ এতো ধুইলাম উঠেছে কিনা কে জানে।

চলবে…