#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব৯
#ইস্পিতা_রহমান
মোড়ের উপর দোকান গুলো একটা একটা করে বন্ধ হতে শুরু করেছে।এখনো বন্ধু রিশাদের ওষুদের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছেই।অর্কভের মামা দোকান বন্ধ করে চলে যাওয়ার সময় অর্কভকে হাঁক ডেকে দ্রুত জেনো বাড়ি চলে আসে বলে দিয়ে যায়।
—হ্যা রে অর্কভ,এই অর্কভ,কই হারিয়ে গেলি?
রিসাদের ধাক্কাতে ভাবনার জগত থেকে সজাগে ফিরে অর্কভ।রিসাদ ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলে,ওই ছেলেটা আমার দোকান থেকে সবে ওষুধ কিনে নিয়ে গেলো না?এই ছেলেটা রায়াতের পিছে ঘুরে।
অর্কভ ওর বন্ধুর দিকে তাকায়।রিসাদ চোখ দিয়ে ইশারায় বোঝায় সত্যিই।অর্কভ তখন উঠে দাঁড়িয়ে ওই ছেলেটাকে ডাক দেয়।ছেলেটা দোকানে এলেই অর্কভ হুট করে ওর কলার চেপে ধরে বলে,
–আর একদিন যদি রায়াতের পিছে দেখছি না তোর ঠ্যং ভে*ঙে হাতে ধরিয়ে দেবো।
–কে আপনি?আমি রায়াতের পিছে ঘুরবো নাকি আগে ঘুরবো আপনি বলার কে?
দাঁতে দাঁত পিষে অর্কভ বলে,আমি বলার কে?আমি ওর স্বা..আমি ওর ফুপুর ছেলে।আমার মামুর মেয়েকে ডিস্টার্ব করবি আর ছেড়ে দিবো।
–বোনকে আগলে রাখা ভাই আইছে রে।
–এই খবরদার ভাই-বোন বলবি না।
–তো কি স্বামী-স্ত্রী বলবো?
–এক থাপ্পড়ে তোর দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব ছেলে।একেতে একটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করিস তার উপর এসব কথা বলিস।
–দেখেন,আমি ওই রকম ভিতু প্রেমিক না যে প্রেমিকার ভাই হুমকি ধুমকি দেবে সেই ভয়ে প্রেমিকাকে ছেড়ে দিবো।আমি তো রায়াতকে সত্যিকারের ভালোবাসি।
–তোর সত্যিকারের ভালোবাসার পাছায় লাথি। ধরে নিয়ে না থানায় পুরে দিবো।চিনিস আমাকে?
–এক্ষুনি তো বললেন রায়াতের ভাই।
–এই আবার ভাই বলি!
পাশে থেকে রিশাদ ছেলেটাকে বলে,ও পুলিশ।এখানকার থানায় নতুন জয়েন করেছে।
ছেলেটা এবার হাত জোর করে বলে স্যার, স্যার,স্যার ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দেন।আর এমন হবে না।
অর্কভ ছেলেটার কলার ছেড়ে দিয়ে বলে,আজকের মত ছেড়ে দিলাম।নেক্সট টাইম যেনো ওরে ডিস্টার্ব না করিস।।
–একদম ডিস্টার্ব করবো না।
–গুড।যা এবার।
ছেলেটা চলে গেলে অর্কভের বন্ধু হাসতে হাসতে শেষ।তা দেখে অর্কভ বলে হাসার কি হলো।তখন বন্ধু বলে,
–স্বামী না,আবার ভাই বললেও জ্বলিস।নিজের মুখে বোন উচ্চারণ করতে পারিস না আবার রায়াতের ভাইও বলতে পারিস না।মামার মেয়ে,ফুপুর ছেলে এসব কি রে হ্যা?
তোতলাতে তোতলাতে অর্কভ বলে,ওই, ওরে বোন কে বলবে রে।বজ্জাত মেয়ে একটা।
–ও হো তাই নাকি?
–আচ্ছা থাক।আমি গেলাম এখন।
–পালাচ্ছিস?আচ্ছা যা।
ফোনে কথা বলতে বলতে অর্কভ বাড়িতে ঢুকে।সদর দরজা দিয়ে ঢুকে ওর সামনে দিয়ে বিড়াল রাস্তা কাটলো এমনভাবে রায়াতও ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যায়।অর্কভ ওর সাথে বেঁধে যেতে যেতে থেমে যায়।রায়াত পার হয়েগেলে আবার সামনে এগুতে নিলেই আবার রায়াত ওর সামনে দিয়ে হেটে চলে যায়।অর্কভ কানে থেকে ফোনটা নামিয়ে রায়াতের এহেন কান্ড দেখতে থাকে।রায়াত আড় চোখে অর্কভের দিকে তাকাচ্ছে আর মনে মনে বলছে,
–হুমস,নিজেই শুধু ফোনে প্রেমিকার সাথে কথা বলতে পারে।আমিও পারি ফোনে কথা বলতে।
আরেকবার রায়াত অর্কভের সামনে দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে যেতে নিলেই অর্কভ রায়াতের বাহু চেপে ধরে এক টানে নিজের সামনে দাড় করিয়ে বলে,
–সমস্যা কি তোর?এভাবে বার বার কালি বিল্লির মত রাস্তা কাটছিস কেন?
মুখ ভেংচি কেটে রায়াত বলে,বয়ে গেছে আপনার রাস্তা কাটতে।দেখছেন না আমি হেটে হেটে ফোনে কথা বলছি।
অর্কভ ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে কপাল চুলকিয়ে রাগানিত্ব মুখ করে ধমকিয়ে বলে,এইটা কথা বলার জায়গা হ্যা?প্রেমিকের সাথে কথা বলবি তো নিজের রুমে গিয়ে বল।যা ভাগ।
–নিজেও ত গফ এর কথা বলতে বলতে বাড়িতে ঢুকলেন।আমি কি কিছু বলেছি?
ভ্রুকুঞ্চিত করে রায়াতের দিকে তাকিয়ে একটু ঝুঁকে গিয়ে বলে,তুই কি জেলাস?
রায়াত বেষম খাই।তারপর তোতলাতে তোতলাতে বলে,আ আ আপনিও রুমে গিয়ে কথা বলেন গিয়ে তাতে আমার কি। হুমস। রায়াত সেখান থেকে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরে।অর্কভ বলে উঠে,
–আইছে দেখো,বউগিরি ফলাতে।হ্যা জব্বার সাহেব বলেন কোন গোপন তথ্য পেলেন কিনা?
কানে ফোনে কথা বলতে বলতে অর্কভও নিজের রুমের দিকে যায়।মূলত থানার কনস্টবল জব্বারের এর সাথে কথা বলতে বলতে অর্কভ বাড়িতে ঢুকতে ছিলো।আর রায়াত ভেবেছে অর্কভ প্রেমিকার সাথে কথা বলছে।তাই ওকে দেখানোর জন্য নিজেও কথা বলার ভান ধরে কারন রায়াতের মনে হয় যে অর্কভ তাকে ফেলে চলে গিয়েছিলো তবে অর্কভের যদি প্রেমিকা থাকে তবে সেও কম কিসে।তাকেও অনেক ছেলে লাইন মারে।
সকালে চা খেতে খেতে অর্কভ টিভি দেখছিলো।রায়াত এসে বলে,অর্কভ ভাই,আপমি শিপনকে মেরেছেন?
অর্কভ রায়াতের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আপাদমস্তক দেখে বলে,শিপন কে?
–গতকাল রাতে আপনি কাকে মেরেছেন?
চা খেতে খেতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অর্কভ বলে,আমি কাকে মা*রবো,না মা*রবো তোর কি তাতে?
–শিপন আমার বান্ধবির ভাই।স্বপ্না এখন ফোন করে বলল আপনি নাকি তাকে মেরেছে।
অর্কভ রায়াতের দিকে তাকিয়ে বলে,কেনো মেরেছি সেইটা বলে নি?
রেগে রায়াত বলে,কেনো মেরেছেন হ্যা?ওর ভাই চোর নাকি ডাকাত হ্যা?স্বপ্না শুধু আমাকে ভুল বুঝলো।বলে আমার ভাই নাকি তাকে মেরেছে।কাজটাএকদম ঠিক করে নি।
কথাটা বলেই অর্কভকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বড় বড় পা ফেলে রায়াত চলে গেলো।অর্কভ হাতের চায়ের কাপটা শক্ত করে চেপে ধরলো যে কাপটা ভেঙে গরম চা অর্কভের হাতে লেগে গেলো।সেদিকে অর্কভের হুস নেই।ও শুধু ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,যার জন্য চুরি করলাম সেই চোর বলে গেলো।যাকগে তাতে কি,যে ছেলে তোকে ডিস্টার্ব করবে তার এমন হালই হবে।এমন সময় আঞ্জুমান আরা দৌড়ে আসে অর্কভের কাছে।হাঁপাতে হাঁপাত আঞ্জুমান আরা অর্কভকে ডাকে।অর্কভ ফিরে তাকায় মা কে এমন উভ্রান্ত দেখে বলে কি হয়েছে।তখন আঞ্জুমান আরা বলে,
–অর্কভ,তোর মামার দোকানে,শামসুল জম্মাদার এসে ঝামেলা করতেছে।তুই তাড়াতাড়ি সেখানে যা বাপ।
অর্কভ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,কিসের ঝামেলা আম্মু?
–সে অনেক কথা তুই এখন আগে তোর মামার দোকানে যা।
–হু সে আমি যাচ্ছি।কিন্তু…
–কোন কিন্তু না।তুই যা।তোর মামাকে হয়রানি হাত থেকে বাচা।
–এক্ষুনি যাচ্ছি আমি।
চলবে….