#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব১০
#ইস্পিতা_রহমান
“মামার গায়ে শুধু একটা টাচ করে দেখ,একটারও হাত আস্ত রাখবো না।”
ভরাট পুরুষালী ক্রদ্ধ কণ্ঠস্বর শুনে সকলে পেছনে ফিরে তাকায়।অর্কভের চোখে মুখ দিয়ে জেনো অগ্নিতাপ ঝরছে।মামার কলার ধরতে যাওয়া ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে অর্কভ আরো বলে উঠে,
–নিজের ভালো চাস তো এক সেকেন্ডের মধ্যে দোকান ছেড়ে চলে যাবি।তা না হলে কি হাল করবো ধারনার বাইরে।
সাদেকুর রহমান অর্কভের কাছে এগিয়ে এসে ধীর গলায় বলে,অর্কভ,তুমি বাড়ি যাও।এসবের মধ্যে জড়িয়েও না।নতুন চাকরি জয়েন করেছো।আমি সব বুঝে নেবো।শামসুল জম্মাদার খুব ভয়ংকর লোক। তুমি ওসবে নিজেকে জড়াইও না।যাও বাড়ি যাও।
–মামা তাই বলে তুমি ওই লোকের অন্যায় গুলো মেনে নিচ্ছো।আমি থাকতে তোমার কোন সমস্যা হবে না।
–দেখো,আমার টা পরে দেখো।বললাম না লোকটা খুব ড্যাঞ্জারাস। তুমি এসবে জরিও না।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার বোনের কি হবে?আবার মেয়েটার কি হবে?
অর্কভ সাদেকুর রহমানের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকায়।তার এই চরম সমস্যার মধ্যেও সে নিজের বোন, মেয়ে ও অর্কভের কথা ভাবছে।তবে তো অর্কভ তার মামাকে সাহায্য করবেই।কিছুতেই সে যাবে না।এই দোকান তাদের নানার এক মাত্র স্মৃতি। এই দোকান কিছুতেই সে অন্যের দখলে যেতে দিবে না।যতই ক্ষমতা থাকুক না কেনো।অর্কভ কিছুতেই মাথা নত করবেনা।প্রয়োজনে সবাইকে মেরে ধরে একার করে দেবে তাও সে তার মামার এই সারের দোকান কিছুতেই অন্যের দখলে দিবে না।অর্কভ মামার কথা অমান্য করে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসা শামসুল জম্মাদারকে বলে,
–আপনি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাবেন তা না হলে বয়সে বড় সেটা আমি ভুলে যাবো।
শামসুল জম্মাদার পানের পিক ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,এইটুকু পুচকে ছেলে আমাকে ভয় দেখাচ্ছো।কে তুমি হ্যা, কে?এই দোকান আমাএ কাছে বিক্রি করতেই হবে।যদি না করে তবে আমি জোর করে নিবো।এখানে আমার বড় শপিংকমপ্লেক্স হবে।সবাই সবার দোকান দিয়ে দিয়েছে শুধু এই সাদেক সাহেবই ঘাড় ত্যারা করে রেখেছে।
শামসুল জম্মাদার ও অর্কভের মধ্যে এক বিশাল ঝামেলা লেগে যায়।অর্কভ শামসুল জম্মাদারের কয়েকজন লোককে পিটিয়েছো।সাদেকুর রহমান অর্কভকে অনেক বাঁধা দেয়ার চেষ্টাও করে কিন্তু অর্কভ কোন কথায় শুনে নি।উল্টা শামসুল জম্মাদারকে সবার সামনে কলার ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে থানায় ভরে দিয়েছ।
টেনশনে সাদেকুর রহমান দোকান বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি এসে সমানে পায়চারি করে যাচ্ছে।আঞ্জুমান আরা ভাইয়ের পাশে পাশে হেটে বার বার সুধায় কি হয়েছে।
রায়াত সোফায় বসে বাবা আর ফুপুর পায়চারি করা দেখছে।সাদেকুর রহমান আঞ্জুমান আরাকে বলে,
–তোকে কে বলেছে অর্কভবে এসব বলতে।শুধু শুধু ছেলেটা এসবে জড়িয়ে গেলো।ওই শামসুল জম্মাদার কতটা বাজে লোক জানিসই তো।অর্কভ ওকে থানায় ভরেছে।আর ওই শামসুল জম্মাদার কি বসে থাকবে হ্যা।এখন তো শামসুল জম্মাদের শত্রুতা হয়ে গেলো অর্কভের সাথে।না জানি থানা থেকে বেড়িয়ে অর্কভের কোন ক্ষতি করে না দেয়।
আঞ্জুমান আরা কিছুটা চিন্তিত আবার কিছুটা ভাব নিয়েও বলে,আমার ছেলে একদম কাজের কাজ করেছে।কতদিন আর ওই লোকের অত্যাচার সহ্য করবে বলো ত।ওই দোকান আমার বাপ দাদার দোকান।ওই দোকান কেনো আমরা শামসুল জম্মাদারের কাছে বিক্রি করবো।
–বিক্রি করবোনা তা তো ঠিক।কিন্তু শুধু শুধু অর্কভকে কেনো বললি তুই।
–আহ,ভাই তুমি টেনশন করো না তো।অর্কভ যখন থানায় ভরেছে ওকে।তখন উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে।
–কচু হবে।ওর হাত কত লম্বা জানিস তুই।তোদের কোন ধারনা নেই কি হতে পারে।
এবার রায়াত উঠে বলে,তাই বলে কি ওই লোকের ভয়ে আমরা দোকান দিয়ে দিবে।
–তা দিতাম না।কিন্তু আমি ম্যানেজ করে তো নিতাম।এতোদিন তো তাইই করেছি।
রায়াত আবার বলে,কতদিন আর ম্যানেজ করবে।এবার ঠিকি হয়েছে অর্কভ ভাই উনাকে জেলে নিয়ে গিয়ে।
সাদেকুর রহমান মনে মনে বলে,তোরা কেউ আমার কথা বুঝতেছিসই না।ওই জম্মাদার যে কতটা ড্যাঞ্জারাস তা তোদের ধারনায় নাই।ও এক মুহূর্তে আমাদেরপুরোপরিবারকে ধ্বংস করে দিতে দুই মিনিট ভাববে না।।
—+++–+++-
“কার এতো বড় বুকেরপাটা?দেখি সে কে?”
কথাটা বলতে বলতে থানায় প্রবেশ করে মুন্ত্রী রাজিব হাওলাদার। অর্কভ নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়ায়।মুন্ত্রী রাজিব হাওলাদার এসে বলে,তোমার জন্য আমাকে থানায় আসতে হলো।থানার টেলিফোন ধরতে কি হাতে ব্যথা লাগে?বলো তো মলম লাগিয়ে দিয়।
–সরি স্যার,বুঝতে পারি নি আপনি কল দিয়েছিলেন।
–এখন ফটাফট শামসুল জম্মাদারকে ছেড়ে দাও অফিসার।নিজের ব্যাক্তিগত আক্রোশ থানায় কেন টেনে আনবা হ্যা।যাও ছেড়ে দাও।
নিরুপায় হয়ে অর্কভ শামসুল জম্মাদারকে ছেড়ে দিতে হয়।জম্মাদার লকাপ থেকে বেড়িয়ে অর্কভকে বলে,
–বলেছিলাম না,কোন থানা আমাকে আটকে রাখতে পারবে না।তুই তো কোন ছার।যায়হোক,কাজটা তুই ভালো করিস নাই। এর মাশুল তোকে দিতে হবে।
–থানায় দাঁড়িয়েই একজন পুলিশকে হুমকি দেয়ার জন্য আমি আবার আপনাকে লকাপে পুরতে পারি।
রাজিব হাওলাদার বলে,এই জম্মাদার আর ক্যাচাল করো না।এবার চলো।
অগ্নিচোক্ষে শামসুল জম্মাদার অর্কভের দিকে চেয়ে থানা থেকে বের হয়ে গেলো।দেখেই মনে হলো ওই চক্ষু দিয়েই জেনো অর্কভকে ভস্ম করে দিবে।অর্কভও রাগী,সাহসী সিংহের ন্যায় শামসুল জম্মাদারেরপানে চেয়ে ছিলো জেনো জনম জনমের শত্রু কাছে পেয়েও হাত ছাড়া হয়ে গেলো।
বাড়ি ফিরতেই সাদেকুর রহমান উদিগ্ন হয়ে অর্কভকে সুধায় সে ঠিক আছে কিনা।জম্মাদার তার কোন ক্ষতি করে নি তো।অর্কভ মামাকে আশ্বাস দেয় ও ঠিক আছে।তবে জম্মাদার ছাড়া পেয়ে গেছে।এই কথা শুনে সাদেকুর রহমান অনেক চিন্তিত হয়।
এদিকে রায়াত অর্কভকে খোঁচা দিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলে,কি এমন পুলিশ রে,আসামিকে এক ঘন্টাও জেলে পুরে রাখতে পারে না।এ আবার কথায় কথায় আমার উপর চোটপাট দেখায় যে আমাকে নাকি থানায় পুরবে।হুমস বলেই মুখ ভেংচি দেয়।
অর্কভ তেড়ে আসে,বলে,তোকে থানায় পুরলে এক ঘন্টা কেনো,দিনের পর দিন গেলেও তোকে কেউ ছাড়াতে যাবে না।
রায়াত উঠে দাঁড়িয়ে আঞ্জুমান আরার কাছে গিয়ে আদুরে ভঙ্গিতে বলে ফুপুমণি,তুমি যাবে না বলো আমাকে ছাড়াতে।
আঞ্জুমান আরা বলে হু যাবো তো।রায়াত তখন ভাব দেখিয়ে অর্কভকে বলে,দেখুন,ভালো করে দেখুন।আমাকেও ছাড়ানোর লোক আছে।
চলবে..