#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব১১
#ইস্পিতা_রহমান
অফিস থেকে ফিরে সদর দরজার কাছে আসতেই অর্কভ দেখতে পেলো ড্রয়িংরুমে ভর্তি অতিথি।রায়াত ওড়না মাথায় দিয়ে অতিথিদের মাঝে বসে আছে।মামি,নানু ও ওর মা হেসে হেসে তাদের সাথে কথা বলছে। ওকে দেখেই আঞ্জুমান আরা উঠে এসে অর্কভের কাঁধে হাত রেখে অতিথিদের উদ্দেশ্যে বলল এই তার ছেলে অর্কভ এখন পুলিশে আছে।অর্কভকে দেখে তারা প্রশংসা করলো ছেলে পুলিশ আবার সুদর্শনও বটে। অর্কভ তাদের তেমন চিনলো না।মায়ের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চাইলো। আঞ্জুমান আরা ছেলের ভাব বুঝতে পারলেন।তাই চিনিয়ে দিলেন তারা আঞ্জুমান আরা এর কাজিন।অর্কভ সৌজন্যমূলক কিছু কথা বলে নিজের ঘরের দিকে হাটা ধরলো।আঞ্জুমান আরা ছেলের জন্য কফি ও হালকা নাস্তা দেয়ার জন্য উঠতে নিলেই রমেনা বেগম তাকে থামিয়ে দিয়ে রায়াতকে ঠেলে তুলে দিয়ে বলল অর্কভকে গিয়ে দিয়ে আসতে।কত দিন পর তার কাজিনরা এসেছে একটু গল্পগুজব না করলে চলে।মুখটা তেঁতো করে রায়াত উঠে গেলো।কফি বানালো,নুডুলস বানানোই ছিলো তা হাফপ্রিচে তুলে নিয়ে ট্রে সাজলো।ইউনিফর্ম ছেড়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকেছে অর্কভ।রায়াত রুমে ঢুকলো,তখনি গোসল করে কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো অর্কভ।উদাম শরীরে অর্কভকে দেখে রায়াত জেনো জমে যায়।ট্রে হাতেই স্তব্দা মেরে দাঁড়িয়ে অর্কভের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।অর্কভ তা খেয়াল করলো।ড্রেসিংটেবিলের সামনে যেতে যেতে বলল,
–ওভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেনো?
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রায়াত শুকনো ঢোক গিলে।চোখ নামিয়ে নিয়ে তুতলিয়ে বলে,আ আ আপনে কফি।
–হু,ওখানে রাখ।
রায়াত বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে ট্রে-টা নিয়ে আড়চোখে একবার অর্কভকে দেখে বেড়িয়ে যাওয়াত জন্য পা বাড়ায়।অর্কভ ডেকে উঠে,
–এই দাঁড়া।
রায়াত ঘুরে তাকায় অর্কভের দিকে।অর্কভ আয়নার দিকে তাকিয়েই বলে,কাবাট থেকে আমার টাউজার আর টিশার্টটা বের করে এনে দে।
–কিহ!
–কানে কম শুনিস?
চাঁচিয়ে রায়াত রাগে রাগে বলল,আমি কি আপনার ঘরের বউ নাকি যে হুকুক করবেন।
অর্কভ এবার ওর দিকে ফিরে তাকায়।তীক্ষ্ম চাহুনিতে তাকিয়ে বলে,তাহলে কফি আনলি কেনো?স্বামী অফিস থেকে ফিরলে বউরা ওভাবেই কফি এগিয়ে দেয়।
— আমি কি সাধে দিয়েছি।ফুপু ওদের সাথে কথা বলছে তাই আমাকে পাঠালো।
অর্কভ নিজেই টাওজার টিশার্ট নিলো।রায়াত চলে গেলো।কিছু সময় পর রায়াত আবার অর্কভের ঘরে আসে।কফিতে চুমুক দিয়ে পায়চারি করে অর্কভ ফাইলে নজর বুলাচ্ছিলো।
রায়াত চেয়ে রইলো কিছুসময়। এরপর বলল,
–অর্কভ ভাই।
বিস্ফোরিত চোখে অর্কভ রায়াতের দিকে তাকালো।তেড়ে এসে বলল,
–কে তোর ভাই হ্যা?কে?
রায়াতও রেগে বলল,ফুপুর ছেলে ভাই বলবো না তো বর বলবো।আমি তো ভাবছি এখন থেকে আপনাকে দুলাভাই বলবো।
ভ্রু কুঁচকে অর্কভ বলে,কিহ!দুলাভাই!
–হু।
রায়াত একটা চিঠি বের করে অর্কভের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
–ভার্সিটির এক সিনিয়র আপু এইটা আপনাকে দিয়েছে।
গম্ভীর স্বরে অর্কভ বলে,এইটা কি?
–আমি কি করে জানবো?আপনিই খুলে দেখেন।
অর্কভ চিঠিটা নিয়ে খুলে পড়ে।দাঁত কিড়মিড়ি করে রায়াতের দিকে তাকায়।বলল,
–পিয়নগিরি? পিয়নগিরি করতে আইছিস?লাভ লেটার দিতে আসি আমাকে?
শেষের টুকু চেঁচিয়ে বলল অর্কভ।চমকে উঠলো রায়াত।ও কি করে জানবে ওটা লাভ লেটার।ভার্সিটির সিনিয়র আপুটা যেদিন থেকে জেনেছে ভার্সিটির ঝামেলা মেটাতে আসা সেই হ্যান্ডসাম পুলিশটা রায়াতের ফুপাতো ভাই।সেইদিন থেকে রায়াতেত পিছে পরে আছে।এ কথা,সে কথায় শুধু অর্কভের কথা জিজ্ঞেস করে।রায়াতের থেকে ফোন নাম্বার চেয়েছিলো।রায়াত সাফ সাফ বলে দিয়েছিলো ও ফোন নাম্বার জানে না।তাই আজ চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে।
–তোরে তো খাইছি…..
অর্কভের কথা শুনে রায়াতের যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।প্রেমপত্র পেয়ে যে অর্কভ খুশি হয় নি উল্টা এখন ওরে ধোলায় দিবে। রায়াত কোনকিছু না ভেবেই দিলো ভোঁ দৌড়।অর্কভ জোরে বলল,
–একবার হাতের কাছে পাই তোকে।পিয়নগিরি করা বের করবো।
পরেরদিন অর্কভ রায়াতের ভার্সিটিতে গেলো।কল দিলো রায়াতে।কল পেয়ে ডিপার্টমেন্ট থেকে বেড়িয়ে আসতেই সামনে পুলিশের জিপ।আর অর্কভ তাদে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুখটা ভটকে যাওয়ার মতো করে এগিয়ে এলো। অর্কভ ওকে বলল যে মেয়েটা ওকে চিঠি দিছে তাকে ডেকে আনতে।রায়াত পাল্টা প্রশ্ন করলো,
–কেনো?তাকে কেনো চাই?
তখন অর্কভ বলে,
–তার চাঁদ বদমখানা দেখবো না?নিশ্চয় খুব সুন্দরী হবে।আহ,সারারাত ধরে চিঠি পড়ে পড়ে কল্পনা করলাম।যার হৃদয়ের অনুভূতি এতো সুন্দর করে চিঠিতে প্রকাশ করেছে না জানি সে কত সুন্দরী।
–বালের সুন্দরী। এই ভার্সিটিতে এক মাত্র আমিই সুন্দরী।আর কেউ না।
মনের কথা মনেই চেপে রাখলো রায়াত।মুখটা ভেংচি কেটে বলল,
–আমি পারবো না।
–তোর কি জেলাস হচ্ছে?
বলেই ভ্রু নাচালো অর্কভ।
–বয়ে গেছে জেলাসি হতে।
ক্ষ্যাপাটে স্বরে বলল রায়াত।স্মিত হাসলো অর্কভ।এরপর বলল,তাহলে যা ডেকে নিয়ে আয় ওকে।তাকে দেখে প্রাণটা জুড়ায়।
ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে ডাকতে গেলো সেই সিনিয়র আপুকে রায়াত।অর্কভের সামনে নিয়ে আসলো তাকে।অর্কভকে দেখে মেয়েটা গদগদ করতে লাগলো।তা দেখে রায়াতের গা পিত্তি জ্বলে গেলো। ও সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই অর্কভ ডেকে উঠে,
–ওই তুই কই যাচ্ছিস?দাঁড়া এখানে।
রায়াত দাঁড়ালো।অর্কভ মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।মেয়েটি খুশি ও উৎসুক হয়ে অর্কভের দিকে তাকিয়ে আছে।অর্কভ বলল,
–তা খালাম্মা,
রায়াত চোখ তুলে তাকালো অর্কভের দিকে।ছোট আপু,টোতো আপু বললতে পারতো। তা না করে সরাসরি খালাম্মা?ঠোঁট টিপে হাসি চেপে রাখলো রায়ায়।মেয়েটা আহম্মকের মতো চেয়ে রইলো অর্কভের দিকে।অর্কভ বলল,
–এসব কি?থানার অফিসারকে প্রেমপত্র!লকাবে ভরে দিয়?নাকি বাড়িতে কল দিবো?তাদের মেয়ে কি করছে,না করছে জানাই তাদের।
–সরি সরি স্যার।ভুল হয়ে গেছে।থানায় নিয়ে যাবেন না প্লিজ।
–হুম।ভবিষ্যৎ এ কাজ দ্বিতীয়বার জেনো না হয়।আউট।
মেয়েটা কাছুমাছু হয়ে চলে গেলো।রায়াতও আবার চলে যেতে নিলো।অর্কভ গম্ভীর স্বরে বলল,
–আবার চলে যাচ্ছিস?গাড়িতে উঠ।তোর শাস্তি এখনো বাকি আছে।পিয়নগিরি করা বের করছি তোর।
তখনি হঠাৎ কেউ রায়াতকে ডেকে উঠলো…রায়াত।
চলবে….