#তোর_মন_পাড়ায়
পর্ব২২(অন্তিম পর্ব)
#ইস্পিতা_রহমান
অর্কভ ও রায়াতের যে ভাব,ভালোবাসা হয়ে গেছে আঞ্জুমান আরা ভাই-ভাবি,মা কে বলেছে।এখন তো আর ওদের সংসার বাঁধতে কোন বাধা নেই।ওরা নিজেরাই এখন দুজনদুজনকে চাই।এখন একটা শুভ দিন দেখে একটা অনুষ্ঠান করে ওদের চার হাত আবার মিলিয়ে দিতে হবে।অনেক আত্মীয়-স্বজন নিমন্ত্রিত থাকবে।এবার সবাই জানবে অর্কভ ও রায়াত স্বামী-স্ত্রী।অর্কভের থেকে অনুমতি নিয়ে বিয়ের আয়োজন শুরু করে দিলো আঞ্জুমান আরা ও সাদেকুর রহমান।এতে রায়াতের বেজায় দ্বিমত। কারন ও চেয়েছিলো কয়টা দিন প্রেম করে নিবে তারপর বিয়ের পিড়িতে বসবে।কিন্তু এই অর্কভ ভাইয়ের জেনো ধৈর্যহীন।তার জেনো তর সইছে না।আঞ্জুমান আরা যেই বলল ওদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে কিনা।অমনি অর্কভ ভাই বলে দিলো যত দ্রুত সম্ভব আয়োজন করতে।মেহেন্দির অনুষ্ঠানে হাতে মেহেদি পরে বসে আছে রায়াত।বান্ধবিরা তো নানা কথায় হাসি,ঠাট্টা,মশকরা করতেছে।যে তলে তল নিজেই অর্কভ ভাইয়ের সাথে ট্যাম্পু চালিয়েছে আর ওদেরকে বলেছে অর্কভ ভাইয়ের সাথে প্রেম করিয়ে দেবে।পাঞ্জাবি পরে অর্কভ ছাদে এলো।সাথে আছে রিশাদ।গাল ফুলিয়ে রায়াত অর্কভ ভাইয়ের দিকে তাকালো।এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কি দরকার ছিলো।অর্কভ এগিয়ে এলো ওদের দিকে।মাইশা সরে বসে অর্কভবকে বসতে জায়গা করে দিলো।অর্কভ বসলো।রায়াতের ফোলা ফোলা গালে টিপ্পুনি দিয়ে বলল,
–বুইড়া বেডার লগে বিয়ে দিচ্ছে নাকি তোকে এভাবে গাল ফুলিয়া বসে আছিস।বর পছন্দ হয় নি?
রাগি চোখে তাকালো রায়াত অর্কভের দিকে।পাশে থেকে রায়াতের বান্ধবিরা হেসে উঠলো।মাইশা বলল,
–বর পছন্দ না হলেও বরের মাসল গুলো ওর বেশ পছন্দের।
আবার বান্ধবিরা হেসে উঠলো,এবার রিশাদ বলল,আমার বন্ধু এক পিছ।পছন্দ হতেই হবে।
সবাই মিলে বেশ রসিকথা করে উঠে আসার সময়,অর্কভ রায়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
–বাসররাতে তোর পছন্দের জিনিস খুলে দেখাবোনে।এখন তবুও হাস।
বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে অর্কভের দিকে তাকালো রায়াত।অর্কভ চোখ টিপ মেরে উঠে চলে গেলো।রায়াত মনে মনে আওড়ালো,অসভ্য লোক।তোর জেনো সইছে না।
বেশ ধুমধাম করে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানও করা হলো।নাচ,গানের ভরপুর সন্ধ্যা।নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে কজন পাই?খুশিতে সেই সন্ধ্যা রায়াত-অর্কভ উড়াধুরা নাচলো জেনো।রায়াত অর্কভের গালে,অর্কভ রায়াতের গালে,কে কত বেশি হলুদ দিতে পারে প্রতিযোগিতা চলছে জেনো ওদের মাঝে।পরিবারের সবার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে ছেলে-মেয়ে দুটোর খুশিতে।
নয় বছর আগে বিয়ে পড়ানো ছিলো,তবুও আজ বিয়ের এই আয়োনেও আবার নতুন করে বিয়ে পড়ানোর হলো।
তাজা ফুলের বাসর,রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল।মাঝে লালটুকটুকে শাড়ি পরে বসে আছে রায়াত।অর্কভ ভেতরে এলো।দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এলো বিছানার ধারে।পাশে বসলো রায়াতের।ঘোমটা তুলে ওর কপালে অধর পরশ ছুঁইয়ে দিলো।আবেশে চোখ বুঝে নিলো রায়াত।ওর দু গাল ধরে,কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
–আজকের এই এক রাতের আশায়,কতটাদিন অপেক্ষা করেছি ইফতা।কতটা রাত ছটফটিয়ে মরেছি।শুধু তুই বড় হবি এই জন্য দূরে সরে ছিলাম।কাছে টেনে নিবি না আমায়?
রায়াত অর্কভের চোখের দিকে তাকালো।ওই চোখ কতকালের তৃষ্ণা জমে আছে।রায়াত হাসি মুখে ওর অর্কভ ভাইকে সম্মতি দিলো।অর্কব জেনো হাতে ইদের চাঁদ পেলো।রায়াতকে বুকে টেনে নিলো।
রাত যত গভীর হলো,ওদের শ্বাসপ্রশ্বাস ভারি হলো।রায়াতকে পুরো উন্মাদ করে দিচ্ছে অর্কভ।তবুও কখনো কখনো রায়াত বলে উঠছে,
–ছাড়ুন না অর্কভ ভাই প্লিজ।
ব্যথাতুর আওয়াজ করে রায়াতা কাঁদোকাঁদো ভেজা স্বরে অর্কভকে অনুরোধ করলো।অর্কভের কি সেই দিকে হুস আসে।আজ সে চির প্রতিক্ষীত প্রিয়সীকে কাছে পেয়েছে।পুরো উন্মাদ হয়ে গেছে জেনো ও।বউ থাকা স্বর্তেও এতো বছর অপেক্ষা করেছে যে পুরুষ।সে কি আর সহজে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে।তবুও ভাই কথাটা শুনে অর্কভের বেসামাল ভালোবাসার আদরের মধ্যে কেমন জেনো ভাটা পরলো।রায়তের ব্যথাতুর খিঁচে যাওয়া মুখপানে তাকিয়ে বলে,
–আমি ভাই!
–না, মানে, আসলে।
–আসলে কি?
–অর্কভ ভাই..
নিচের ঠোঁট কামড়ে,বাচ্চাদের ভয় দেখানোর মতো করে চোখ রাঙিয়ে রায়াতকে বলে,কি বললি আমার বল?
শুকনো ঢোক গিলে রায়াত বলে, ক ক কিছু না।
–ঠিক তো?
–হু।
–তাহলে এবার আদর কর।
–আ আ আপনিই তো আদর দিচ্ছেন।.
দুষ্টুমি হেসে অর্কভ বলল,কিভাবে?
লজ্জায়,চোখটা অর্কভের থেকে সরিয়ে মুখটা ডান দিকে ঘুরায় রায়াত।অর্কভ ঠোট টিপে হেসে ওর মুখটা নিজের দিকে করে বলে,
–এই কষ্ট পাওয়ার জন্য কি তোকে বড় হতে দিয়েছি হু?নিজেকে এতোদিন কন্ট্রোলে রেখে সেই ছোট্ট বউটাকে বড় হতে দিলাম।তবুও আজ বলিস,ছাড়ুন।এখন তো দেখছি সেই ছোট্ট বেলাতে আদর-সোহাগ দেয়ার উচিত ছিলো তবে সবটা এতোদিন সয়ে যেতো।
-আপনি বড্ড অসভ্য অর্কভ ভাই।
অর্কভ রায়াতকে আরেকটু ব্যথা দেয়।রায়াত কিছুটা গোঙিয়ে উঠে।অর্কভ বলে,আর বলবি ভাইয়া?
–আহঃঅর্কভ ভাই লাগছে।
–লাগুক
–আমার উপর কি একটু মায়া নেই আপনার?
–যতবার ভাই বলবি ততবার ব্যথা দিবো।
–আমার সাজা, আপনার মজা,নাহ?
–খারাপ লাগলে কিছু করার নাই আমার জানু।এতোদিন আমাকে অনেক পু*ড়িয়েছিস।এখন তো একটু সহ্য করে নে আমার উত্তাপ।
–আমি আপনাকে আবার কবে পো*ড়ালাম?
–বউ হোস তুই আমার।তবুও নিজেকে সংযত রেখে দূরে থেকেছি এতোটা বছর।কতটা প্রেমের অনলে খাক হয়েছি দেখিস নি তো তা।শুধু আমার বউটা একটু বড় হোক এই ভেবে দূরে সরে ছিলাম।তবুও তুই আমাকে বাঁধা দিচ্ছিস।
রায়াত বুঝলো অর্কভের আকুলতা।ভালোবাসার সুখের কষ্টের মাঝেও মুখ বুঝে অর্কভের সব জ্বালাতোন সহ্য করলো।ভালোবাসায় উজার করে দিলো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে।এভাবে পূর্ণতা পেলো প্রতিক্ষিত দুটো ভালোবাসার মানুষের।এমনি করে পৃথিবীর সকল মানুষের ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।
সমাপ্ত