আমার হায়াতি পর্ব-০৫

0
5

#আমার_হায়াতি
পর্ব : ৫
লেখিকা : #Nahar_Adrita

(প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য উন্মুক্ত)

সন্ধ্যার পর। গাঢ় আকাশের নিচে আদিবের বিশাল দুইতলা বাড়িটা আলোয় ঝলমল করছে। বারান্দা, ছাদ, গেট—সবখানেই রঙিন আলো, ফুল আর আতরের সৌরভ। বাড়ির সামনে লেখা—
“স্বাগতম নববধূ হায়াত।”

গাড়ি এসে থামতেই সবাই দৌড়ে এগিয়ে এলো। ফটকে দাঁড়িয়ে আদিবের চাচী, খালা, আর কয়েকজন আত্মীয়—হাতের তালুতে আতর, পানের পাতা, চোখে ভেজা হাসি।

গাড়ির দরজা খুলে আদিব যখন হায়াতকে নামাল, তখন চারপাশ থমকে গেল।
হায়াত মাথায় লাল ওড়না, গায়ে গয়না, চোখে একটুকরো ভয় আর এক সমুদ্র স্বপ্ন।
সবার মুখে তখন একটাই কথা—

বউটা তো একেবারে পরী।

আদিব হালকা হাত রাখল হায়াতের পিঠে। খুব আস্তে বলল,

ভয় পেও না লাজুক পাখি… এ বাড়ির প্রতিটা ঘর এখন থেকে তোমার জন্য।

বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই চাচী শাশুড়ী আদিবের কপালে টিপ দিয়ে বরণ করলেন, আর হায়াতের হাত ধরে বললেন,
— আয় মা, এই বাড়িতে তুই শুধু বউ না, তুই এই ঘরের মেয়ে।

হায়াতের চোখে তখন চিকচিক জল। এত যত্ন, এত ভালোবাসা যেন নতুন করে শ্বাস নিতে শেখাচ্ছে তাকে।

দোতলার দক্ষিণ দিকের রুমটা ছিল সাজানো—লাল চাদর, ফুলে মোড়ানো বালিশ, দেয়ালে লেখা “হায়াত & আদিব”। জানালার পাশে মোমবাতি জ্বলছে। বাতাসে প্রেমের গন্ধ।

রুমে ঢুকেই আদিব হায়াতের কানে ফিসফিস করে বললো,

এই ঘরটা, এই বিছানাটা, এই রাতটা—সব আজ থেকে আমাদের। তুমি #আমার_হায়াতি… আর এই বাড়ি তোমার রাজ্য।

হায়াত চোখ নিচু করে হাসলো, বুকের ভেতরে ধুকপুকানিটা একটু শান্ত হলো।

আদিব হালকা গলায় বললো,

চলো, দুজনে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নেই। আমাদের সম্পর্ক শুরু হোক আল্লাহর সামনে মাথা নত করে।

হায়াত লাজুক মুখে মাথা নেড়ে বলল,

এইটাই তো চেয়েছিলাম… আমাদের শুরু হোক দোয়ার মাধ্যমে। আমাদের সম্পর্কটা একদম হালাল। যে সম্পর্কে কোনো জটিলতা নেই।

দুজনে আলাদা করে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। হায়াত হালকা কাজ করা সাদা ওড়না জড়িয়ে নিল, আর আদিব পাঞ্জাবি পরে জায়নামাজ বিছিয়ে দিল ঘরের এক কোণে। ঘরটা তখন আর শুধুই রুম না—একটা শান্তির ছোট্ট মসজিদ যেন।

আদিব দাঁড়াল ইমাম হয়ে, হায়াত নীরবে পাশে কাতারে।
আল্লাহু আকবার…

ঘরটা নিস্তব্ধ। সেজদায় তাদের মাথা যখন নিচু, মনে মনে দু’জন দুটো প্রার্থনায় ডুবে—

হে আল্লাহ, এই সম্পর্কটা তুমি পবিত্র করো, তুমি সহজ করো, তুমি আস্থায় ভরিয়ে দাও।

নামাজ শেষে দুজনে হাত তুলল একসাথে।
দুজনের দোয়া আলাদা হলেও ইচ্ছেটা একটাই ছিল—
“একসাথে থাকা… একসাথে বাঁচা… একসাথে জান্নাতে যাওয়া।”

নামাজ শেষে হায়াতের চোখে একটুকরো শান্তি, আর আদিবের মুখে একরাশ দায়িত্বমাখা মায়া।

আদিব আস্তে করে বললো—

আজ শুধু বিয়ে না, আজ আমাদের রূহও একসাথে সেজদায় বসলো, লাজুক পাখি।

নামাজ শেষ। হাত তুলে দোয়া করা হয়ে গেছে। সেজদা থেকে উঠে দুজনেই একে অপরের দিকে তাকালো—চোখে প্রশান্তি, মুখে শান্ত এক হাসি।

আদিব হায়াতের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল,

আমার হায়াতি, আমার পৃথিবী… এখন তোমাকে একটা জিনিস দেওয়ার সময় হয়েছে।

হায়াত একটু অবাক হয়ে তাকালো, গলায় কৌতূহল, মুখে লজ্জা মেশানো হাসি ঝুলিয়ে বললো,

কি…

আদিব ধীরে ধীরে বিছানার পাশে রাখা ছোট্ট একটা গিফট বক্স বের করলো। লাল আর সোনালি কাগজে মোড়ানো, উপরে ছোট্ট একটা কার্ড আটকানো।

হায়াত হাতে নিয়ে বলল,

এটা আমার জন্য?

আদিব জবাব দিল,

হু বউ, শুধু তোমার জন্য। যেমন করে আমার হৃদয়টা এখন শুধু তোমার।

হায়াত ধীরে ধীরে মোড়ক খুললো। ভিতরে ছিল একটা স্বর্ণের চেইন আর একটা ছোট্ট নোট।

হায়াত একটু কাঁপা হাতে চিরকুটটা খুলে পড়ল—

“এই চেইন শুধু গলায় পরার জন্য নয়…
এটা প্রতীক, যে আজ থেকে তুমি আমার হৃদয়ের গায়ে ঝুলে থাকা নাম।
প্রতিটি দুলুনিতে আমি চাই তুমি আমাকে অনুভব করো…
তুমি যেন কোনোদিন ভুলে না যাও—
তুমি শুধু আমার বউ না, তুমি আমার দোয়া, আমার জীবনের নিয়ামত।
– তোমার আদিব”

হায়াতের চোখ চিকচিক করে উঠল। কিছু বলতে পারলো না সে, শুধু ঠোঁটে একটুকরো কৃতজ্ঞতা-ভরা হাসি।

সে চেইনটা হাতে নিলো, ধীরে গলায় পরতে গেলে আদিব এগিয়ে এসে নিজেই পরিয়ে দিলো। গলায় চেইন আর কপালে হালকা চুমু—এই দুটো জিনিসই আজ ছিল হায়াতের সবচেয়ে দামী অলংকার।

আদিব প্রশ্ন করল মৃদু কণ্ঠে,

চিরকাল থেকে যাবে?

হায়াতের উত্তর, একটুখানি কাঁপা কণ্ঠে, কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরা চোখে বললো,

আমার গলায় যেমন আপনার দেওয়া এই চেইন, তেমনি আমার প্রাণেও আপনি স্বামীজান। সেখান থেকেও যাবো না।

হায়াত তখনো জায়নামাজে বসে, একটু লাজুক, একটু চুপচাপ। মুখে সেই কোমল হাসি, চোখে জলের দাগ।

ঠিক তখন আদিব ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো, হায়াতকে নরম করে কোলে তুলে নিলো।
সে চমকে উঠলো—

কি করছেন?

চুপ জান… আজ আমার নববধূকে আমি কোলে করে নিয়ে যাবো তার রাজ্যে।

আদিবের কণ্ঠ ছিল মোলায়েম, চোখে নির্ভরতার দীপ্তি।

বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে হালকা গলায় গাইতে শুরু করলো—
“Ye raaten, ye mausam, nadi ka kinara…”

হায়াত মুগ্ধ হয়ে শুনলো। এই কঠিন ছেলেটা এত কোমল সুরে গাইতে পারে, সে ভাবতেই পারেনি।

চাঁদের আলো জানালা গলে পড়ে রুমটাকে আরও নরম করে তুলেছে।
আদিব হায়াতকে পাশে বসিয়ে তার হাতে আলতো করে হাত রাখলো।

আজ রাত শুধু আমাদের না, এই ভালোবাসার একটা শুরু।

হায়াত লাজুক গলায় বললো,

আপনার পাশে বসে এত শান্তি লাগছে, ভয়টাও কমে গেলো…

আদিব আস্তে হাত রাখলো হায়াতের গালে।
চোখে চোখ রেখে বললো,

আমি তোমার সম্মান রক্ষা করে ভালোবাসবো, জান। আজ রাত শুধু অনুভবের, কোনো জোর নেই, শুধু ভালোবাসা।

হায়াত নিচু মাথায় মাথা নাড়লো।

তাদের মাঝখানে তখনও একটা লাজুক বাতাস, কিন্তু আবেগে ভেজা।
আদিব হায়াতের কপালে চুমু দিলো।
সেই চুমুতে কোনো জোর নেই, ছিলো দায়িত্ব… ছিলো মমতা।

দুজনের মাঝে দুরত্ব আস্তে আস্তে গলে যেতে থাকলো, ঠিক যেমন ভালোবাসা গলে যায় একটুখানি বিশ্বাসে।

রাতের চাঁদ তখন জানালার পাশ ঘেঁষে।
বিছানার একপাশে জ্বলছে মোমবাতি, আরেকপাশে দুজন মানুষ—দুজন আত্মা—নীরবে এক হয়ে যাচ্ছে।

তাদের ভালোবাসা সেই রাতের মতোই নিঃশব্দ, শান্ত, আর পবিত্র।

#চলবে………….