#ভীনদেশী_তারা
#শারমিন_প্রিয়া(৬)
ঘুম ভাঙলো বিকেলে। নিজেকে রুমে একা আবিষ্কার করলাম। রুমের লাইট অফ। জানলা খোলা। তার ফাক দিয়ে অল্প আলো ঘরে ডুকছে। হালকা হাওয়ায় নড়ছে জানলার পর্দা। । হঠাৎ মনে হলো আমি কোথায়? ভুলেই গিয়েছিলাম আমি ভিন্ন জায়গায়, জিয়ানের বাড়িতে। সেকেন্ড যেতে টের পেলাম। ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করে দরজায় গিয়ে উঁকি দিতে লাগলাম। পরিচিত মুখ খুঁজছি, জিয়ান বা শিয়াংকে দেখতে পাচ্ছি না। তাদের বোনকেও না। উঠোনে কাঠের বেঞ্চে জিয়ানের মা সহ কয়েকজনকে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে। পাশে বাচ্চারা খেলছে। আমি বের হলাম না। বের হলে বিপদে পড়ব। উনারা কিসব বলবেন, আমি কানাকড়িও বুঝব না। মোবাইল হাতে নিয়ে জিয়ানকে কল করলাম। দুবার রিং হওয়ার পর সে রিসিভ করে ঘুমকাতুরে গলায় বলে, “উঠেছো?”
“তুমি এখনও ঘুমাচ্ছো?”
“এখনি উঠে আসছি।”
জিয়ান আসার আগে তার বোন শাওলি আমার কাছে আসলো। ইংলিশে বলল, “উঠে পড়েছো? গোসল করেছো?”
“করেছি।”
“নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছো। এসো খাবে।”
আমাকে শাওলি সাথে করে নিয়ে গেলো। ততক্ষণে জিয়ানও এসে পৌঁছে গেছে। সেও গোসল সেরে এসেছে বোধহয়। ভেজা লম্বা এক গুছি চুল কপালের উপর পড়ে আছে তার। আমি মুগ্ধ চোখে তাকালাম, বেশ আকর্ষণীয় লাগছে তাকে। সে তাকাতেই আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। আমার জন্য তারা রান্না করেছে ভাত, গরুর মাংস, মাছ ভাজি এবং আরও কয়েক পদ। সাথে টমেটো সসও ছিল। আমি শুধু মাছ আর মাংস দিয়ে খেয়েছি। জিয়ান মাংস এক টুকরো নিয়েছে শুধু আর খেয়েছে তাদের পছন্দের কিছু খাবার।
জিয়ান খাওয়া শেষে বলল, “সন্ধ্যায় আমাদের শীতকালীন উৎসব আছে। চায়ের আসর বসবে, আনন্দ-উল্লাস হবে। তাই বিকেলে আর বের হবো না। কাল সকালে গ্রাম ঘুরে দেখাব। এখন আমাদের বাড়িটা ঘুরে দেখবে আমার সাথে।”
উঠোনে বের হতেই জিয়ানের মায়ের সাথে বসা মহিলারা ঘিরে ধরলো আমাকে। সাথে বাচ্চারাও। এমনভাবে আমাকে দেখছে, মনে হচ্ছে অদ্ভুত প্রাণী দেখছে। আমি তাকানো আর মুখে মৃদু হাসি রাখা ছাড়া আর কিছু করতে পারলাম না। শাওলি হাত ধরে নিয়ে গেল বাড়ির অন্য পাশে। জিয়ান দেখাতে লাগলো, ছোটবেলায় সে কী কী করেছে, কোথায় খেলতো।
“জানো, মেঘমালা? আমার দাদু ছিলেন আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ছোটবেলায় উনি আমার সাথে বেশি খেলাধুলা করতেন। রাতে উনার সাথে ঘুমাতাম। প্রায় রাতে উনি আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে তুষার দেখাতেন। তারপর আগুন ধরিয়ে চা বানাতেন, কাঠের কয়লায়। কয়লা জ্বলতো, তাতে আমরা হাত-পা গরম করে নিতাম। দাদা তখন অনেক রূপকথার গল্প বলতেন। কিন্তু দেখো, স্মৃতিগুলো এখনও তরতাজা রয়ে গেছে, শুধু উনি নেই।” জিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ কাতর করে বললাম, “স্মৃতিগুলো এমনিই, বেঁচে থাকে। মন খারাপ করো না। আচ্ছা, তোমার বাবা নেই, জিয়ান? দেখলাম নাতো।”
“আমার বাবা আছেন। এলাকার সর্দার তিনি। আমার এক চাচা থাকেন অন্য এক প্রদেশে। ওখানে দাদি ও আছেন। তাই বাবা সেখানে ঘুরতে গেছেন। দাদি অসুস্থ নাহলে বাবা সাথে করে নিয়ে আসতেন দাদীকে।”
“আমার বাবা কিন্তু ভীষণ গরম,” শাওলি বলল।
জিয়ান বাধা দিলো, “ওসব বাদ দাও, শাওলি। আমরা বরং নীহারিকাকে বাড়িটা ঘুরে দেখাই।”
সন্ধ্যা হতেই শীতকালীন অনুষ্ঠানের আয়োজনে মানুষের ঢল নামলো। আমি বারান্দায় কাঠের বেঞ্চে বসে ওসব দেখছি। জিয়ান, শাওলি, সবাই কাজে ব্যস্ত। শিয়াং এসে বসল আমার পাশে। জিজ্ঞেস করলো, “একা একা, বোরিং লাগছে?” মৃদু হেসে বললাম, “ঠিক আছি।”
“তোমাকে ভাইয়া খুব পছন্দ করে! জানো এটা?”
আমি চোখ ছোট করে বললাম, “তাই নাকি? কেমনে বুঝলে?”
“বোকা মেয়ে নাকি তুমি। এই প্রথম ভাইয়া কোন মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসলো। বাড়ির সবার সাথে তোমার কথা আগেই গল্প করেছে। কেউ কাউকে পছন্দ না করলে এমন করে নাকি? তুমিও কি পছন্দ করো ভাইয়াকে?”
আমি ঠোঁট টিপে হাসলাম। বললাম, “জানিনা তো।”
“ভাইয়াকে পছন্দ না করে তুমি আমাকে করতে পারো। আমি ভাইয়ার থেকে সুন্দর বেশি।” চোখ-মুখ কুঁচকে শিয়াংয়ের দিকে তাকালাম।
সে হেসে উঠলো, “আরে, ফাজলামো করছি।”
মনে মনে ভীষণ খুশি হলাম আমি, জিয়ানের কর্মকাণ্ডে র্স্পষ্ট যে সে আমাকে পছন্দ করে। এটা আমি জানি, তবে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি সেই দিনের, যখন সে মুখে মুখে তার মনের সব অনুভূতি আমাকে বলবে।
সন্ধ্যা আরেকটু গাঢ় হতেই উৎসবের রং গাঢ় হলো। উঠোন জুড়ে লাল লণ্ঠন ঝুলছে, বাতাসে ভাসছে মিষ্টি ধূপের গন্ধ। লাল আর সোনালি কাগজে মোড়া ঝালর বাতাসে দোল খাচ্ছে। জিয়ানের মা আর আত্মীয়রা সবাই লাল রঙের পোশাক পরে উৎসবমুখর হয়ে উঠলেন। উঠোনের এক অংশে বানানো হচ্ছে খাবার। সেখান থেকে ভেসে আসছে ডাম্পলিংস আর ভাজা খাবারের গন্ধ। টেবিল ভর্তি নানা রকম খাবার, ভাপানো মাছ, নুডলস, মোমো, চা। শিশুরা উঠোনে দৌড়াচ্ছে, হাতে ছোট ছোট কাগজের লণ্ঠন। কেউবা আতশবাজি জ্বালাতে শুরু করেছে। আকাশে ছুটে যাচ্ছে রঙিন আলো। এতকিছুর মধ্যে হুট করে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। এত আয়োজন, এত মানুষের ভিড়েও আমি একেবারে একা। এখানে আমার মা-বাবা নেই, নিজের ভাষার মানুষ নেই, চারপাশে শুধু ভিন্ন ভাষা আর অচেনা মুখ। বুকের ভেতর ভীষণ শূন্যতা অনুভব করলাম।
ঠিক তখন জিয়ান কাছে এসে দাঁড়াল। হাতে দুই কাপ ধোঁয়া ওঠা চা। এক কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বসে বলল, “তুমি শান্ত হয়ে দেখছো কেন? পছন্দ হয়নি?”
মৃদু হেসে মাথা নাড়ালাম, “পছন্দ হয়েছে। অনেক সুন্দর তোমাদের সংস্কৃতি।”
জিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর আকাশের দিকে ইশারা করে দেখালো, “দেখো, আতশবাজি ফেটে উজ্জ্বল আলোয় আকাশ রঙিন করে দিচ্ছে। শীতকালে এরকম অনুষ্ঠান হয় আমাদের। সবাই নাচে, গায়, ফূর্তি করে, চা খায়।” শাওলি এসে টেনে নিয়ে গেল উঠোনে। যেতে সংকোচ বোধ করছিলাম, জিয়ান আশ্বাস দিলো, “যাও, সমস্যা নেই।ভালো লাগবে।”
উৎসব শেষে চারদিক নীরব হয়ে এলো। সবাই ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। ঘরে কোনো কথাবার্তার আওয়াজ নেই, হয়তো ঘুমিয়ে পড়ছে। দুতালার বারান্দায় হেলান দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আমি। আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে আগুনের ঝিলিক ভেসে আসছে। ছাদগুলোয় জমে আছে তুষারের আস্তর। জিয়ানের কণ্ঠস্বর তখন শুনতে পেলাম, ফিসফিস করে ডাকছে। নিচে তাকাতেই দেখি জিয়ান ডাকছে ফিসফিসিয়ে, “এই মেঘমালা, যাবে আমার সাথে?”
“কোথায়?”
“দাদার পুরনো কাঠের ঘরে। নেমে এসো।”
আমি নেমে গেলাম। জিয়ান আমার হাত ধরে নিয়ে গেল তার দাদার পুরনো কাঠের ঘরের বারান্দায়। ছোট একটা ঘর। ছোট বারান্দা। সেখানে দাঁড়াতেই সামনে ভেসে উঠল রূপকথার মতো দৃশ্য, চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে সাদা তুষার। দূরে পাইনের মাথাগুলো তুষারে ভরে রুপালি হয়ে গেছে। আকাশে ঝলমল তারা, মাঝখানে অর্ধেক চাঁদ ঢেকে আছে মেঘে। এ রাত যেন ছবিতে আঁকা কোনো ক্যানভাস।
নিঃশ্বাস আটকে দেখলাম সব। বললাম, “এত সুন্দর রাত আমি আগে কখনো দেখিনি।”
জিয়ান মৃদু হাসলো।
অনেকক্ষণ দাঁড়ানোর পর ঠান্ডায় আমার হাত দুটো কাঁপছিল। তখনই শুরু হলো তুষারবৃষ্টি। জিয়ান তাড়া করে ঘরে ঢুকতে বলল। আমি আবদার করলাম, “বৃষ্টি টা দেখি, প্লিজ। তুষারবৃষ্টি আমি কখনো দেখিনি।” তুষার পড়তে লাগলো উড়ে উড়ে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে সেগুলো ছুঁয়ে দিচ্ছি। কতগুলো তুষারকণা আমার চোখ-মুখে ছিটকে পড়লো। জিয়ান এগিয়ে এসে মৃদু করে আমার মাথা থেকে তুষার ঝাড়তে থাকলো এবং বলল, “চোখে-মুখে সাদা তুষার পড়ে তোমাকে আরও পবিত্র লাগছে, মেঘমালা।”
জিয়ান এমনভাবে কথাটা বলল, মুহূর্ত থেমে গেল আমার। ছেলেটা মাঝেমধ্যে এমনভাবে কথা বলে, থামিয়ে দেয় আমাকে। তাছাড়া যখন ‘মেঘমালা’ বলে ডাকে, অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে।
“ঠান্ডায় কাঁপছো তুমি। আর তুষার দেখা লাগবে না। ঘরে চলো।”
ঘরে ডুকে বললাম, “দরজা খোলা রেখো। তুষারবৃষ্টি দেখব।” দরজা খোলা রেখেই ভেতরে গিয়ে বসলাম। ঠান্ডায় কাপছি। জিয়ান তাড়াতাড়ি করে কাঠের ছোট চুল্লি জ্বালাল। পুরনো কেতলিতে পানি গরম করে চা বানাতে লাগল। চারদিকে মৃদু ধোঁয়া আর চায়ের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কিছুটা স্বস্তি লাগলো। চায়ে চুমুক দিলাম আর আগুনে হাত রেখে হাত গরম করলাম। আগুনের তাপে ঠান্ডার গতি টাও কম মনে হচ্ছে।
বাহিরে সাদা অন্ধকার, নীরব, নিস্তব্ধ রাত। এই রাতে এই ঘরে আছি আমরা দুজন, জিয়ান আর আমি। কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে লাগলো আমার। জিয়ান কোন কথা বলছে না। চোরা চোখে তাকালাম একবার তার দিকে। দেখি সেও তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তে হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। নিচের ঠোঁট কামড়ে তাড়াতাড়ি করে চোখ ফিরালাম। জ্বলন্ত আগুনের শিখায় কী যে সুন্দর লাগছে জিয়ানকে। ইদানীং জিয়ানের ব্যাপারে ভীষণ অসভ্য বোধ করছি আমি। বেশিক্ষণ ওর সামনে থাকলে হয়ত কিছু একটা করে ফেলব। সেজন্য আমি বাইরে যাওয়ার জন্য উঠতেই জিয়ান হাত ধরে বসল পেছন থেকে।
“নীহারিকা?”
এত রাতে এই পরিবেশে আমার নাম তার মুখে শুনে কেঁপে উঠলো আমার সারা অঙ্গ। থিরথির করে কাঁপতে লাগলাম। সে আরও শক্ত করে হাত ধরলো আমার। আমার সামনে এসে দাড়াল। আমি আর তাকাতে পারলাম না। চিবুক তুলে বলল, “তাকাও আমার দিকে? আমি কাছে আসলেই কি তুমি উতলা হয়ে উঠো? পছন্দ করো আমাকে?”
আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। ড্যাবড্যাব করে শুধু তাকালাম।
“জানো? আমার জীবনে তুমিই প্রথম মেয়ে, যাকে এত প্রায়োরিটি দিচ্ছি। প্রেম এসেছে আগেও, কিন্তু তোমার মতো এমনভাবে কেউ মনে দখল করতে পারেনি। একটা ছেলে তোমাকে তার বাড়িতে নিয়ে আসছে, তার বাড়ির সবার সাথে তোমার কথা শেয়ার করেছে, বুঝতে পারো, ছেলেটার কাছে তুমি কতটা দামী? ভাবছিলাম আরও দিন যাক, পরে বলব। কিন্তু মনে হচ্ছে আর ধৈর্য নেই আমার। আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো। আমিও করি। মনে আছে, যেদিন ঠোঁট মেশালে আমার ঠোঁটে, এর পর থেকেই তুমি আমার স্বপ্নে, বাস্তবে — সব জায়গায় মিশে আছো। কীভাবে কীভাবে তোমাকে মনে দখল দিয়ে দিয়েছি।”
আমি কাপা-কাপা গলায় ঢোক গিলতে লাগলাম। আমি চাইতাম জিয়ান এসব বলুক, কিন্তু এসব শুনে বুঝিনি এমন অবস্থা হবে।
“আমি তোমাকে চাই, সারাজীবনের জন্য। তুমি আমাকে বিয়ে করবে? স্ত্রী হবে আমার?”
জিয়ানের মুখে এসব শুনে শক্ত করে ধরলাম জিয়ানের হাত।
থেমে-থেমে বললাম, “আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি, জিয়ান। কিন্তু বিয়ে?”
“প্রবলেম?”
“আ..আমি তো মুসলিম। তুমি খ্রিস্টান।”
জিয়ান আমার হাত ছেড়ে বারান্দার কাঠের গ্রীল ধরে দাঁড়াল। “আমি বলেছিলাম একদিন, মনে আছে নীহারিকা? কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়। আমি অনেক দিন ভেবেছি, মনে হয়েছে তুমিই গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। তোমার ধর্ম নিয়েও আমি গবেষণা করেছি, আর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি মুসলিম হবো এবং মুসলিম হয়েই আমি তোমাকে বিয়ে করব। তুমি যাকে সৃষ্টিকর্তা মানো, আমিও উনাকে মানব। আর কোন আপত্তি আছে?”
বিশ্বাস হচ্ছিল না জিয়ানের কথা। যতদিন থেকে জিয়ানকে মনে জায়গা দিয়েছি, ততদিন এই সমস্যা টার জন্য আমি হাসফাস করেছি। যখনই মনে হতো আমি তাকে ভালোবাসি, তখনই তার ধর্ম আলাদা ভেবে মন ভেঙে যেত। শান্তি পেতাম না আমি। এখন সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে, এটাও সম্ভব? জিয়ান এত ভালোবাসে আমাকে। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম জিয়ানকে। এলোপাতাড়ি চুমু খেলাম।
“যে কোন মুহূর্তে আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি, জিয়ান। কিন্তু তোমার পরিবার তোমার ধর্মত্যাগ কি মেনে নেবে?”
“মাকে বলে দিয়েছি। মা প্রথমে আপত্তি করলেও পরে কিছু বলেননি। খুশি না হলেও উনি নারাজ হবেন না। আমার খুশিকে প্রাধান্য দেবেন। আর কাউকে জানাব না। গোপনে থাকবে। আমার বাবা অনেক গরম মানুষ, উনি জানলেই ঝামেলা করবেন, এমনকি আমাকে মেরেও ফেলতে পারেন।”
“এত গরম উনি?”
“ওসব বাধ।এখন শুধু আমাদের মধ্যে ভালোবাসার কথা হবে।”
অনেক কথা হলো জিয়ান আর আমার মধ্যে। এতদিনের জমে থাকা কথা দুজনেই বলে অনেক শান্তি লাগলো। জিয়ান আরও কত রকমের গল্প করলো, হাসলো, তার হাসি আমার প্রাণ কেড়ে নেয়। এত মিষ্টি লাগে তাকে হাসলে। সে কথা বলছিল আর আমি অবাক হয়ে আগুনের আলোয় দেখছিলাম, প্রেমে পাগল হওয়া এক ভীনদেশী ছেলের দৃষ্টি।
চলমান….!