#এক_চিলতে_প্রেম
#পর্ব_৮
#লেখা_আইজা_আহমেদ
(কপি করা নিষিদ্ধ)
১০ বছর পর।
দশ বছর, শব্দে মাত্র দুটো। কিন্তু সময়ের গায়ে লেগে আছে অসংখ্য ঋতু, অসংখ্য সকাল-সন্ধ্যার স্মৃতি। কতগুলো দিন, কতগুলো সপ্তাহ, কতগুলো মাস গড়িয়ে গেছে, তার আর হিসাব রাখে না আরশান। বছরগুলো ধীরে ধীরে বালুর মতো হাত ফসকে গিয়েছে। প্রথম দিকে সে প্রতিটি দিন গুনত প্রথম বছর, দ্বিতীয় বছর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোনার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে।
সাঁঝের আর খোঁজ মিলেনি। সে কী অবস্থায় আছে? কী করছে? কিছুই জানে না সে। এখনও আরশান কানাডাতেই আছে। এর মাঝে দুইবার বাংলাদেশে ফিরেছে আরশান। প্রতিবারই তার ভেতরে এক অদ্ভুত আশার আলো জ্বলে উঠত হয়তো কোথাও পেয়ে যাবে, হয়তো সাঁঝ আরশান ভাইয়া বলে দৌড়ে ওর কাছে আসবে। কিন্তু, না। সাঁঝ আর আসেনি। প্রতিবারই ফিরে এসেছে হতাশা নিয়ে।
কানাডায় ফিরে গিয়ে প্রতিবারই সে নিজেকে প্রশ্ন করেছে সাঁঝ কোথায় গেল? কোন শহরে? কার সঙ্গে? আরশান চেষ্টা করেছে বোঝার, কিন্তু উত্তর মেলেনি। তার ভেতরে শূন্যতা জমে গেছে কারও অদৃশ্য হাত তার বুকের ভেতর থেকে কিছু কেড়ে নিয়েছে, যার ফাঁকা জায়গা কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা যায় না।
রাতগুলো সবচেয়ে বেশি কঠিন। কাজের ব্যস্ততা দিনে তাকে কিছুটা ভুলিয়ে রাখে, কিন্তু রাত নামলেই মনে পড়ে যায়।
আরশান মাঝে মাঝে নিজের জীবন নিয়েও অবাক হয়। এত বছর কেটে গেছে, অথচ এই একটা প্রশ্নের উত্তর সে এখনও পায়নি। সাঁঝ কোথায় যেতে পারে? সে কি ভালো আছে?
দশ বছরের ফাঁকে অনেক কিছু বদলে গেছে পৃথিবী, শহর, মানুষ। কিন্তু বদলায়নি শুধু একটাই জিনিস সাঁঝের জন্য আরশানের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষা হয়তো এখন আর তেমন প্রকাশ্য নয়, কিন্তু তার ভেতরের গভীরে, এখনো জেগে আছে।
——
ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে হঠাৎ বেজে উঠল অ্যালার্ম। ঘুমঘুম চোখে হাত বাড়িয়ে এলার্মটা বন্ধ করল আরশান। ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোরের আলো ঠিক পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি, কিন্তু কানাডার বসন্তের সকাল ইতিমধ্যেই জানালার ফাঁক গলে ঘরে ঢুকে পড়েছে।
শূন্য নীরবতা ফিরল ঘরে, কিন্তু একবার জেগে গেলে আরশানকে বিছানায় রাখা কঠিন।
সে ধীরে ধীরে উঠে বসল। কপালে হাত রেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। চোখের পাতায় এখনো রাতের ঘুমের ভার, অথচ মাথার ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা। মাঝে মাঝে ভোরবেলা এই নীরবতার মধ্যে তার মনে হয়, জীবনটা অনেকগুলো ভাগে কেটে গেছে। পেছনেরটা, যেখানে ছিল উষ্ণতা, হাসি, আর কিছু মুখ…আর এখনকারটা, যেখানে সে আছে একা, কিন্তু নিজেকে ব্যস্ত রাখার কৌশল রপ্ত করেছে।
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বিছানা ছাড়ল সে।
বাথরুমে গিয়ে মুখে ঠান্ডা পানি ছুঁইয়ে দিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পোর্টস শু পরে বেরিয়ে পড়ল জগিংয়ের জন্য।
ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে চেরি ব্লসমের সুগন্ধ তার নাকে এসে লাগল।
পুরো রাস্তার দু’পাশ জুড়ে হালকা গোলাপি আর সাদা ফুলের মায়াবী ছায়া। চেরি ব্লসমের মৌসুম এখন কানাডায়। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে হালকা গোলাপি ও সাদা পাপড়ি। কিছু মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে, কিছু তার কাঁধে এসে থামছে।
জগিং ট্র্যাক দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হালকা উষ্ণ শ্বাসে ফুলের গন্ধ ভরে যাচ্ছে বুক।
এই সময়টা আরশানের প্রিয়। ভোরের আলো, পাখির ডাক, আর চারপাশের নীরবতা, যেটা তার মনকে শান্ত করে। তবে কোথাও একটা অজানা শূন্যতাও থেকে যায় এই দৃশ্যটাও যে অসম্পূর্ণ। জগিং শেষে বাড়ি ফিরে এল সে। বাড়িটা নতুন। জাইরান আর নির্ভাণের পাশেই একটা সুন্দর ডুপ্লেক্স কিনেছে সে। তিনজনের একটা ভালো বিজনেসও আছে এখন, সেটার ম্যানেজমেন্টে বেশ ব্যস্ত থাকে।
ভেতরে ঢুকে সরাসরি শাওয়ার নিল। শাওয়ার শেষে শরীরে শুধু সাদা টাওয়াল জড়ানো। পানি এখনো ফোঁটা ফোঁটা করে চুল থেকে গড়িয়ে পড়ছে। প্রশস্ত কাঁধ, দৃঢ় বুক, আর পেটের সমানভাবে কেটে যাওয়া অ্যাবস।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রায়ার চালাল। গরম বাতাসের ঝাপটায় চুলের ভেজা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। টাওয়াল সরিয়ে কালো ট্রাউজার আর সাদা টি-শার্ট পরে নিচে নেমে এল কিচেনে। ফ্রিজ খুলে কিছু ডিম আর সবজি বের করল। প্যানে তেলের গন্ধ ভরতেই রান্নাঘর উষ্ণ হয়ে উঠল। অমলেট বানাল, টোস্টে মাখন মাখাল, আর নিজের জন্য এক কাপ ব্ল্যাক কফি ঢালল। একা থাকার অভ্যাসে এখন রান্নাটা সে বেশ ভালোই রপ্ত করে ফেলেছে।খাওয়ার সময় একবার জানালার বাইরে তাকাল আরশান। চেরি ব্লসমের পাপড়ি তখনো বাতাসে নেচে নেচে পড়ছে। খাওয়াদাওয়া শেষে আবার উপরে গিয়ে পুরোপুরি রেডি হল। সাদা শার্টের ওপর ব্ল্যাক স্যুট জ্যাকেট, বোতাম লাগাতে লাগাতে আয়নার সামনে দাঁড়াল। কিন্তু বোতাম থামল মাঝপথে।
মনে হঠাৎ ভেসে উঠল। সাঁঝ এখন নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়ে গেছে। অবচেতনেই মনে প্রশ্ন জাগল, দেখতে কেমন হয়েছে এখন?
দশ বছর কেটে গেছে। তখন সে ছিল ছোট্ট এক মেয়ে চোখে স্বপ্ন, ছোট্ট মুখে সরল হাসি। এখন হয়তো অনেক বড় হয়ে গেছে, অনেক পরিণত।
আরশানের হাত ধীরে ধীরে গালের উচ্চতায় উঠল। “এতটুকু?” মনে মনে হাসল আরশান।
তারপর হাত গলার কাছে তুলল।
“না হয়তো এতটা।” শেষে বুক পর্যন্ত নামাল হাত। “নাকি এতটা?”
এক মুহূর্ত থেমে নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকাল আরশান। আয়নার ভেতরের মানুষটা গম্ভীর, কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত কোমলতা ভাসছে। নিজের এই অদ্ভুত আচরণে সে হালকা হাসল বটে, কিন্তু হাসির আড়ালে একটা গভীর কৌতূহল লুকানো। দশ বছর পর, সাঁঝ দেখতে কেমন হয়েছে? তার জীবন কেমন এখন? সে কি এখনো মনে রেখেছে তাকে? হয়তো রেখেছে…অথবা, হয়তো নয়।
গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে দরজা লক করল আরশান। গ্যারেজে ঢুকে কালো রঙের চকচকে গাড়ির দরজা খুলে বসে পড়ল সিটে। গাড়ি ধীরে ধীরে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে মূল রাস্তায় উঠল। সামনের দিকে নির্ভাণদের বাড়ির সামনে গাড়িটা থামাল সে। তারপর গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিল। সামনে তাকিয়ে দেখল দরজা ফট করে খুলে গেছে, নির্ভাণনের মা হাতে একখানা জুতা নিয়ে নির্ভাণনের পেছনে তেড়ে আসছেন। নির্ভাণনের হাতে তখনও আধখাওয়া পাউরুটি, মুখে অপরাধীর মতো ভয়ার্ত চাহনি, আর পা তো বিদ্যুৎগতিতে চলছে।
নির্ভাণন দৌড়ে সরাসরি আরশানের গাড়ির দিকে এল, এখন এটাই তার নিরাপদ আশ্রয়। দরজা খুলে এক লাফে বসে পড়ল সিটে, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “তাড়াতাড়ি চল।”
“জাইরান আসবে, ওর জন্য অপেক্ষা করবি না?”
নির্ভাণ পিছনে তাকিয়ে নিশ্চিত করল যে তার মা এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে কড়া চোখে তাকিয়ে আছেন। তারপর সে গম্ভীর মুখে বলল,
“আরে ও পরে আসবে নে… আগে আমার জীবন বাঁচানো ফরজ। তুই তাড়াতাড়ি চল।”
আরশান হাসি চেপে গিয়ার বদলাল।
————
সকালের নরম আলো ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ছিল পাতলা সাদা পর্দা ভেদ করে।
টেবিলের ওপর রাখা এলাম ঘড়িটা হঠাৎ কর্কশ শব্দে বেজে উঠল। ঘুম ঘুম চোখে এলিশা হাত বাড়িয়ে এলাম বন্ধ করল। চোখ কচলাতে কচলাতে আবার নরম চাদরের ভেতরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল। মাথার ভেতর ভাবনা,আরও পাঁচ মিনিট ঘুমাই, তারপর উঠব।
কিন্তু পাঁচ মিনিট মুহূর্তেই এক ঘন্টায় বদলে গেল। দ্বিতীয়বার চোখ খুলতেই সে হকচকিয়ে উঠে বসল। দেয়ালঘড়ির কাঁটা দেখে বুক ধক করে উঠল দেরি হয়ে যাচ্ছে। ফটাফট চাদর সরিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। পা টেনে টেনে বাথরুমে গিয়ে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুতে ধুতে মনে মনে নিজেকেই বকতে লাগল,
“এলিশা, তুই কোনোদিন সময়মতো উঠবি না, এটা নিশ্চিত।”
ফ্রেশ হয়ে এসে জানালার কাছে দাঁড়াল।
ওর কাঠবিড়াল ছোট্ট বাদামি রঙের, নাম নুটি। বারান্দার রেলিংয়ে বসে লেজ দুলিয়ে তাকিয়ে আছে। এলিশা হাত বাড়িয়ে নুটির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল। নুটি কিচকিচ করে যেনো অভিমান জানাল”এত দেরি করে উঠলি!”
এলিশা নিচে নামতেই বসার ঘরের সোফায় বসে থাকা পরিচিত এক মুখ চোখে পড়ল। মিরাব, এলিশার মামাতো বোন, তবে সম্পর্কটা অনেক গভীর, আপন বোনের মত। গায়ের ওপর হালকা নীল রঙের শাল জড়িয়ে বসে আছে, হাতে চায়ের কাপ।
“এসেছে গেছে চুন্নি।”
এলিশা ভেঙছি কাটলো। মিরাব তাকিয়ে বলল,
“ভেঙছি কাটিস না, বুঝবি পরে।”
এলিশা কাঁধ ঝাঁকিয়ে রান্নাঘরের দিকে চিৎকার করল, “মা, আমি যাচ্ছি।”
তখন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন সোফি ।হাতে সদ্য বানানো গরম গরম স্যান্ডউইচের প্লেট। চোখে-মুখে উদ্বেগ, “খেয়ে যাবি তো?”
এলিশা তাড়াহুড়া করে মাথা নাড়ল,
“খেতে পারব না মা, দেরি হয়ে যাবে ভার্সিটি যেতে।”
কিন্তু সোফি কি আর এত সহজে ছাড়বেন।
মুখে গাম্ভীর্য এনে বললেন,
“না, না, না… কিছু না খেয়ে বের হতে দেব না।
সকালবেলার খালি পেটে রাস্তায় বের হওয়া ভালো না।”
এলিশা নিরুপায় হয়ে সোফার ধারে বসে তাড়াতাড়ি স্যান্ডউইচ মুখে পুরে নিল।
চোখে-মুখে স্পষ্ট বিরক্তি, তবুও মায়ের তৃপ্তি মেয়েকে অন্তত কিছু খাইয়ে বের করতে পারলেন। বাড়ির বাইরে বের হয়েই এলিশা দেখল, গাড়ির পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামির, মিরাবের বড় ভাই। এক হাতে গাড়ির চাবি ঘোরাচ্ছে, চোখে সানগ্লাস।
এলিশা দৌড়ে গিয়ে বলল,
“তাড়াতাড়ি চল ভাইয়া, অনেক লেট হয়ে গেছে।”
সামির ভুরু উঁচু করে বলল,
“তুই প্রতিদিনই দেরি করিস, নতুন কিছু না।”
এলিশা ঠোঁট বাঁকিয়ে জবাব দিল,
“কি করব, ঘুম যে আমাকে ছাড়ে না।”
সামির হেসে মাথা নাড়ল, গাড়ির দরজা খুলে দিল। দু’জনেই গাড়িতে উঠে পড়ল।
.
.
লাইব্রেরির ভেতর নীরবতা, কেবল পাতাগুলো উল্টানোর মৃদু শব্দ মৃদু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বড় বড় বইয়ের তাকগুলো চারপাশ ঘিরে রেখেছে, আর কোণের জানালা দিয়ে ঢুকে আসা রোদের আলো ধুলো কণাগুলোকে ঝিলমিল করাচ্ছিল। এলিশা কোণের টেবিলে বসে ছিল, সামনে একটা বই খোলা, কিন্তু চোখ বইয়ের অক্ষরে নয় মনের ভেতরে আরেকটা গল্প চলছিল। হঠাৎ সে মাথা নিচু করে লাজুক হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“য়ে লাড়কা… হায় আল্লাহ!”
বলেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল সে, যেনো নিজের গাল লাল হয়ে যাওয়া কেউ দেখতে না পায়। তার পাশে বসে থাকা মেহুল সঙ্গে সঙ্গেই ভুরু কুঁচকে তাকাল,
“এত সরম পাচ্ছিস কেন তুই? আরশান ভাইয়া কী স্বপ্নে তোকে কিস করেছে?
এলিশা গলা নামিয়ে বলল, “মেহুল, তোর উল্টাপাল্টা ভাবনা বাদ দে প্লিজ।”
মেহুল একটু হেসে চেয়ারে হেলান দিল।
“উল্টাপাল্টা ভাবনা নাকি? তাহলে তুই এভাবে লাল-নীল হয়ে যাচ্ছিস কেন? বই পড়ছিস নাকি দিবাস্বপ্ন দেখছিস?”
এলিশা হালকা চেপে রাখা হাসি নিয়ে চোখ নামিয়ে বলল, “আরশোলা স্যরি আরশান ভাইয়ার কথা ভাবলেই… আমার গাল লাল হয়ে যায়। আমি কী করবো?”
মেহুল ঠোঁট কামড়ে হাসি চেপে রাখল,
“এলিশা…”
“কী?”
“তুই কি একটু বেশি করছিস না?”
এলিশা একদম গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, “না রে, সত্যি বলছি।”
মেহুল কপাল কুঁচকে আরও কৌতূহলী হল।
“তা আজকে স্বপ্নে কী দেখেছিস?”
এলিশা তার কথা কেটে দিয়ে হঠাৎ ফিসফিস করে বলল, “জানিস, উনি আমাকে চর মেরেছে।”
মেহুল বিস্মিত হয়ে চেয়ারের সামনে ঝুঁকল।
“কী??”
“হ্যাঁ, সম্ববত আমাদের প্রথম দেখায়ই উনি আমাকে চর মারবেন।”
মেহুল এক মুহূর্ত থমকে থেকে হেসে ফেলল।
“ভালো করে স্কিন কেয়ার করিস । চড়ের দাগটা যেন আমি দেখতে পাই।”
এলিশা মেহুলের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে মুখ বাঁকাল, যেনো চড়ের চেয়ে এই কথাটাই বেশি কষ্ট দিয়েছে। “তুই আমার বন্ধু না।”
মেহুল হেসে বই বন্ধ করে বলল,
“আচ্ছা আচ্ছা, রাগ করিস না। আর বলবো না।”
এলিশা মুচকি হেসে আবার বইয়ের দিকে তাকাল, কিন্তু পাতার অক্ষরগুলো এবারও ঝাপসা হয়ে গেল মনের ভেতর তখনও আরশানের ঝাপসা মুখ ভাসছে। চোখের পাতা ভারী হয়ে এলো, তারপরই মনটা অদ্ভুতভাবে ভার হয়ে গেল তার। দশ বছর। হ্যাঁ, পুরো দশ বছর ধরে সে আরশানকে চোখে দেখেনি। সময়টা এত লম্বা হয়ে গেছে যে তার মুখটা এখন মনে পড়ার কথা নয়। তবুও, কোথাও একটা অস্পষ্ট অবয়ব রয়ে গেছে।
যতই চেষ্টা করুক, স্পষ্ট করে মনে পড়তে চাইলেও আরশানের মুখটা ছবির মতো পরিষ্কার হয় না। সব ধোঁয়ার মধ্যে মিলিয়ে যায়।
কিন্তু একটা জিনিস আজও হারায়নি।
চেইন, যেটা আরশান তাকে দিয়েছিল অনেক বছর আগে। চেইনটা আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে অনুভব করল, সময় যতই কেটে যাক না কেন, কিছু স্মৃতি হৃদয়ের ভেতর ঠিকই জায়গা করে নেয়। আরশানের দেওয়া এই ছোট্ট উপহারটাই তার কাছে সেই অদেখা, ভুলে যাওয়া মুখের সঙ্গে একমাত্র টিকে থাকা সেতু।
চলবে……