#এক_চিলতে_প্রেম
#পর্ব_২০
#লেখা_আইজা_আহমেদ
(কপি করা নিষিদ্ধ)
সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পাথরের গায়ে। সেই শব্দের ভেতর মিলেমিশে যাচ্ছিল আরশানের নির্ভার হাসি। সাঁঝের অবস্থা অবশ্য একেবারেই উল্টো। হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে ভিজে বালির ওপর পড়ে গিয়ে কোমর পর্যন্ত জল লেগে গেছে তার। ঠান্ডার শিহরণ কাঁপুনি ধরাচ্ছে শরীরে। অথচ সাহায্য করার বদলে ছেলেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে, আরও জোরে হেসে যাচ্ছে। অপরিণত শিশুর মতো খিলখিল করে, প্রাণখোলা, অচিন্তনীয় উল্লাসে।
সাঁঝ ভিজে শরীর জড়িয়ে শিউরে উঠল, কাঁপতে কাঁপতে চোখ তুলল তার দিকে। চোখের দৃষ্টিতে ক্ষোভের ঝিলিক, ঠোঁটে জমে থাকা অনুযোগ। ভেবেছিল, আরশান দৌড়ে এসে হাত বাড়িয়ে দেবে, তাকে টেনে তুলবে ভিজে যাওয়া বালুর ফাঁদ থেকে। অথচ সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে তার বিপত্তি। কঠোর চোখে তাকিয়ে রাগে জ্বলতে জ্বলতে উঠল সাঁঝ। আরশান হাসি সামলানোর চেষ্টা করল বটে, কিন্তু সাঁঝের রাগী চেহারা দেখে আবারো মুখ বাঁকা হয়ে গেল তার। হাসির ঝিলিক থামানো গেল না। সেই মুহূর্তে সাঁঝের ভেতরটা দাউ দাউ করে উঠল। ঠান্ডার কাঁপুনির সঙ্গে মিশে গেল ভীষণ রাগ। আরশান তখনও হাসির রেশ সামলাতে না পেরে তবুও হাত বাড়িয়ে দিল। কিন্তু সাঁঝ একবারও তার হাতের দিকে তাকাল না। নিজেই ঠোঁট কামড়ে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ালো। ভারি পদক্ষেপে ধপ ধপ শব্দ তুলে হাঁটা শুরু করল। প্রতিটি নিঃশ্বাসে ভাসছে শীতল রাগ। ভেজা চুলের ফোঁটা কাঁধ বেয়ে পিঠে ঝরে পড়ছে, অশ্রুবিন্দুর মতো।
আরশান দাঁড়িয়ে থেকে বুঝতে পারল সাঁঝ সত্যিই রেগে আছে। এবার হাসি মিলিয়ে গেল তার মুখ থেকে। চোখ নামিয়ে একটু গম্ভীর হলো। কয়েক সেকেন্ড পর আরশান চুপচাপ সাঁঝের পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলো। সাঁঝ কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে গেল কিন্তু আরশান সোজা তার পেছনে না গিয়ে ঘুরে গেল কিচেনের দিকে। ঠান্ডা জলে ভিজে থাকা সাঁঝের গায়ে ঠান্ডা লেগে যাবে। এই চিন্তাটাই প্রথম মাথায় এলো তার। তাই চুপচাপ কফির পাত্রটা নামিয়ে গরম জল বসিয়ে দিল। ধোঁয়া ওঠা কফি তৈরি করবে।
ভেজা কাপড় বদলে সাঁঝ নতুন কাপড় পরে বিছানায় বসে আছে। রাগের আগুনে ভিতরটা তখনও ধিকিধিকি করছে। একবারও নিচে নামার চেষ্টা করল না। ইচ্ছে করেই নিজেকে আড়াল করে রেখেছে চার দেয়ালের ভেতর।
আরশান কফি বানিয়ে উপরে উঠে।রুমে ঢুকেই সাঁঝকে দেখে থমকে দাঁড়াল। বিছানায় বসে আছে সে, মুখটা ফুলিয়ে রাখা, চোখে একরাশ অভিমান। নীরবতা ভাঙল আরশানই। টেবিলের ওপর কফির কাপ রেখে শান্ত কণ্ঠে বলল,
“এটা খেয়ে নে। ভালো লাগবে।”
সাঁঝ আরশানের দিকে ফিরেও তাকাল না। নিঃশব্দে হাত বাড়িয়ে মগটা তুলে নিল। ধোঁয়া ওঠা কফি হাতের মুঠোয় এলো, উষ্ণতার ছোট্ট পরশ ছড়িয়ে দিলো আঙুলে।
কফির শেষ চুমুকটুকু নিয়ে সাঁঝ ধীরে ধীরে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ কানে ভেসে আসছে, আকাশে ঝুলে থাকা চাঁদের আলো বালুর উপর রূপালি ছটা ছড়িয়ে দিয়েছে। বাতাস ভিজে শীতল, তার চুল উড়ছে হালকা হাওয়ায়।
কিন্তু ঠোঁট শক্ত করে চেপে দাঁড়িয়ে আছে মন ভরা অভিমান আর রাগে। তখন পেছন থেকে হালকা পায়ের শব্দ পেল। বুঝতে একটুও দেরি হলো না, আরশানই আসছে। বুকের ভেতর এক ঝটকা খেলেও সাঁঝ তা প্রকাশ করল না। চোখ নামিয়ে বারান্দা থেকে দ্রুত ফিরে গিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। আরশানের ঠোঁটে একফালি কুটিল হাসি খেলে গেল। রাগের ঝড়টা এখনও একটুও থামেনি বরং আরও যে বেড়েছে বুঝতে আর বাকি নেই। সাঁঝ কিছু বুঝে ওঠার আগেই, মুহূর্তে তাকে কোলে তুলে নিল আরশান। সাঁঝ চমকে উঠল।
“কী করছেন? নামান আমাকে।”
আরশান কোনো কথা না বলে ধীর ভঙ্গিতে বিছানায় বসে পড়ল। সাঁঝকে তার কোলে বসিয়ে দিলো। এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তার নরম কোমর। সাঁঝ ছটফট করছে, হাত-পা ছুঁড়ে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা। চোখে রাগের ঝিলিক, মুখে লালচে অভিমান। কিন্তু আরশানের হাত অটল। সাঁঝ ছটফট করতে করতে হঠাৎ রাগে আরশানের কাঁধ আঁকড়ে ধরল , হাতের নখ গেঁথে দিলো চামড়ায়। আরশান কুঁচকে উঠল না, বরং ঠোঁটের কোণে আরও চওড়া হাসি খেলে গেল। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাকে। গলা ঝুঁকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,
“সিঁন্ড্রেলার, এত রাগ কই থেকে আসছে?”
সাঁঝ আরও জোরে ছটফট করতে লাগল। গলা কেঁপে উঠল তার চাপে,”ছাড়ুন আমাকে।”
“ছাড়িয়ে নে।”
.
জানালার পর্দা নরম বাতাসে দুলছিল, আর তার ফাঁক দিয়ে ঢুকে আসছিল আলো, বাতাসে মিশে আছে সমুদ্রের হালকা নোনাধরা গন্ধ। সেই শান্ত পরিবেশের ভেতরেই হঠাৎ ভাঙন ধরল সাঁঝের রাগী ধপধপ শব্দে। মুখমণ্ডলে নেই কোনো প্রশান্তি। মুখটা গম্ভীর, রাগে টগবগ করছে। ধপধপ শব্দ তুলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। চোখে-মুখে অভিমান ঝরে পড়ছে।
তাঁর ঘুমের সঙ্গে আরশানের এত শত্রুতা কেন?একটু বেশি ঘুমালেই কী পৃথিবী উল্টে যায়।রাতভর তাকে ঠিকমতো ঘুমাতে দেয়নি, আর ভোর হতে না হতেই আবার তাকে জাগিয়ে তুলেছে। একটু বেশি ঘুমালে কী হতো। এতে তার পৃথিবী তো আর ভেঙে পড়তো না। মনে মনে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে এলো সাঁঝ। পিছন পেছন আরশানও আসছে। ঠোঁটের কোণে চেনা দুষ্টুমি ঝুলছে, চোখে খেলা করছে একরাশ হাসি। কিন্তু হঠাৎ সবকিছু এক মুহূর্তে বদলে গেল। সাঁঝ হোঁচট খেলো। এক নিমেষে ভারসাম্য হারিয়ে সামনে পড়তে গিয়েও দুই হাত মাটিতে ভর দিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। মুহূর্তেই তার লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে মুখ ঢেকে দিল। আরশান এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। তারপর আচমকা হেসে উঠল।
সাঁঝের বুকটা ভার হয়ে গেল। লজ্জা, অস্বস্তি আর অভিমান একসাথে চেপে বসলো।এত ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে হঠাৎই কান্না চলে এলো চোখে। বড়ো বড়ো অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল তার গাল বেয়ে। আরশানের হাসি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। মুহূর্তেই দৌড়ে এলো। মুখের দুষ্টু হাসি তখনও টিকেছিল, কিন্তু চোখে ভেসে উঠল দুশ্চিন্তা।
“কী হয়েছে? ব্যথা পেয়েছিস নাকি? কোথায় লেগেছে? আমাকে দেখতে দে।”
সাঁঝ কোনো উত্তর দিল না, কেবল অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল গাল বেয়ে। আরশানের বুকটা হঠাৎ কেমন করে উঠল। সে এক মুহূর্ত দেরি না করে সাঁঝকে কোলে তুলে নিল। হাঁটতে হাঁটতে লিভিংরুমের বড় গোল সোফার দিকে গেল। সেখানে বসে ধীরে ধীরে সাঁঝকে তার কোলে নামিয়ে রাখল।
“এখন বল, কোথায় লেগেছে? বেশি ব্যথা পেয়েছিস?”
সাঁঝের চোখ দু’টো এখনও কান্নার জন্য ভিজে আছে। আরশান ঝুঁকে এসে তার মুখটা দেখার চেষ্টা করে।
“কোথায় লেগেছে, বল।”
সাঁঝ মাথা নেড়ে মৃদুস্বরে বলল,”লাগেনি।”
এরপরই সাঁঝ দু’হাত তুলে আরশানের গলা জড়িয়ে ধরল। ভেজা চোখ থুতনির কাছে লুকিয়ে রাখল। কণ্ঠ কেঁপে উঠল,
“আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।”
আরশানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল। চোখ নরম হয়ে এলো। ধীরে ধীরে বলল,”তাহলে তোকে ছাড়া থাকতে পারি না কেন?”
সাঁঝ এবার আরশানকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। দুই হাত আরশানের গলা আঁকড়ে ধরে রাখল। হটাৎ কোমরে দৃঢ় স্পর্শ পেতেই সাঁঝ থমকাল। আরশানের হাত তখন ধীরে ধীরে নামল সাঁঝের কোমরে। কোমরের ওপর আরশানের শক্ত, উষ্ণ হাত যেনো পাষাণ শিকল। সূক্ষ্ম কোমরের বাঁক স্পর্শ করতেই কেঁপে উঠল। সাঁঝের আঙুল তখন মুঠি হয়ে আঁকড়ে ধরল আরশানের কাঁধের শার্ট। কিন্তু আরশানের হাত স্থির নয়। শক্তিশালী, বেখেয়ালি হাতগুলো নিজের খেয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে নেমে এলো সাঁঝের পেটের দিকে। সাঁঝের শ্বাসরুদ্ধ হয়ে উঠলো। কোমল, তুলতুলে পেটের উপর সেই থাবার মতো হাত বসতেই তার শরীরে অদ্ভুত কাঁপুনি জাগলো। তার ছোটখাটো শরীর মোচড় দিয়ে পালাতে চাইলো আরশানের শক্ত বুক থেকে। নিঃশ্বাস কেঁপে উঠলো।কিন্তু পরের মুহূর্তেই আরশানের বাহু তাকে আরও শক্ত করে জাপ্টে ধরলো। তখন কাঁপা কণ্ঠ এলো,
“আরশান…”
“হু..”
“ক্ষুধা লেগেছে।”
আরশানের হাত থেমে গেল। নিঃশ্বাস ফেলে সাঁঝকে ছাড়ল। দুই হাত দিয়ে তাকে ধীরে ধীরে বসিয়ে দিল বড় গোল সোফায়।
“বস, আমি নিয়ে আসছি।”
সাঁঝ সোফায় হেলান দিল। চোখদু’টো এখনও কিছুটা লাল, কিন্তু তার ঠোঁটে হালকা এক চোরাগোপ্তা হাসি খেলা করছিল। তখনই টেবিলের ওপর রাখা আরশানের ফোনটা কাঁপতে শুরু করল। কৌতূহলী হয়ে ফোনটা হাতে নিল। স্ক্রিনে মম লেখা। চোখ ভিজে উঠল সাঁঝের। কত বছর কথা হয়নি, কতদিন দেখা হয়নি। বুকের ভেতর জমে থাকা একরাশ শূন্যতা হঠাৎ ভরে উঠল। কত বছর হয়ে গেল, মৌসুমী বেগমের সঙ্গে তার কথা হয়নি। দ্বিধা না করে সে ভিডিও কল রিসিভ করে ফেলল।
কিন্তু ওপাশে মৌসুমী বেগম হকচকিয়ে গেলেন। থমকে তাকিয়ে রইলেন ফোনের দিকে। কারণ তাঁর ছেলের ফোনে তিনি কোনো বিদেশি অচেনা মেয়েকে দেখছেন। ভুরু কুঁচকে উঠল। ঠোঁট শক্ত হয়ে এলো। চোখে-মুখে একধরনের সন্দেহ ছড়িয়ে পড়ল। কে এই মেয়ে? কেন আমার ছেলের ফোন ধরে আছে? সাঁঝ নরম হেসে তাকিয়ে রইল, কিন্তু কোনো কথা বলল না। সেই মিটিমিটি হাসিটাই মৌসুমী বেগমকে আরও অস্বস্তিতে ফেলল। হঠাৎ মৌসুমী বেগমের পাশে বসে থাকা অর্ণব বলে উঠল,
“এই অর্ণব, তুই কার কাছে ফোন দিয়েছিস?”
অর্ণব মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“আমি তো ভাইয়ার কাছেই ফোন দিয়েছি।”
মৌসুমী বেগম রাগ সামলাতে না পেরে ঝট করে বললেন, “তাহলে এই বিদেশী মেয়েটা কে? আরশানের ফোন কোথায় পেল?”
অর্ণব ফোনটা নিজের হাতে নিল। পর্দার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকল। ওপাশে মিটিমিটি হেসে থাকা সাঁঝকে দেখে কৌতুক মাখা কণ্ঠে বলে উঠল,
“দেখেছো মা, ভাইয়া নিশ্চয়ই কোনো মেয়ে পেয়ে গেছে। আমাদের ভুলে গেছে। ভাইয়া আমাদের ভুলে গেছে, মা।”
অর্ণবের কথা শুনে মৌসুমী বেগম রাগে ফুঁসে উঠলেন। এক ঝটকায় অর্ণবের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলেন। কপালে ভাঁজ নিয়ে, কঠিন কণ্ঠে বললেন, “আমার ছেলে মোটেও এমন না।”
তারপর ফোনের ওপাশে সাঁঝের দিকে সরাসরি তাকালেন তিনি। গলায় কড়া সুর এনে বললেন,
“এই মেয়ে, তুমি কে? আমার ছেলের ফোন ধরেছো কেন?”
সাঁঝ কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল তাঁর দিকে। ঠোঁটের কোণে আবার সেই স্নিগ্ধ হাসি ফুটে উঠল। চোখে জমে থাকা অশ্রুর ঝিলিক স্পষ্ট হয়ে উঠল স্ক্রিনে। সাঁঝ বলল,
“এই মেয়ে এই মেয়ে করছো কেন ফুফি। আমি সাঁঝ।”
মৌসুমী বেগম হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন। তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষন। ভাবতেই পারছেন না, এটা যে ছোট্ট সাঁঝ। চোখে ঝিলমিল জল জমে উঠল। ঠোঁট কাঁপছিল, কণ্ঠ ভাঙা হয়ে এলো,
“সাঁঝ…”
“হ্যা, ফুফি।”
“কত বড় হয়ে গেছিস রে। আমাদের মনে আছে তোর?”
সাঁঝের গলার স্বর নরম হয়ে গেল। চোখে অশ্রু জমে উঠল,
“ভুলে যায়নি ফুফি… তোমাদের অনেক মনে পড়ে।”
মৌসুমী বেগম আঙুল দিয়ে চোখের কোণ মুছে নিলেন। তিনি অস্থির গলায় বললেন,
“তুই হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলি রে? কই কোনো খবর পাইনি। যাক, তুই ঠিক আছিস, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।”
সাঁঝ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তার চোখও ভিজে উঠল। তখনই অর্ণব ফোনটা মায়ের হাত থেকে নিয়ে উঁকি দিয়ে সামনে এল।
“কী রে, আমাকে ভুলে গেছিস নাকি?”
সাঁঝ হালকা হেসে মাথা নেড়ে বলল, “একদম না। ভুলে যাওয়া এত সহজ, অর্ণব ভাইয়া।”
অর্ণব খুশিতে হেসে উঠল।
“তুই দেখি বড় হয়ে গেছিস। আগের মতো আর ছোট্ট দুষ্টু মেয়ে নেই।”
“সাঁঝ এখন বড় হয়ে গেছে, not a little girl.”
সাঁঝের কথায় মৌসুমী বেগম আর অর্ণব দু’জনেই হেসে উঠলেন।
চলবে…..
#এক_চিলতে_প্রেম
#পর্ব_২১
#লেখা_আইজা_আহমেদ
(কপি করা নিষিদ্ধ)
বিকেলের মিষ্টি রোদ জানালার কাঁচ ভেদ করে ঘরে ঢুকছে। হালকা হলুদ আভা পড়েছে।মেহুলদের বাসাটা সবসময়ই প্রাণবন্ত থাকে, তবে আজ একটু আলাদা। কারণ নিকো অসুস্থ জ্বরে কাবু হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। সবাই আজ ওর খোঁজখবর নিতে এসেছে।
নিকো বিছানায় শুয়ে আছে, কপালে হালকা ভাঁজ। বিছানার পাশে চেয়ার টেনে বসেছে মিরাব আর সাঁঝ। দু’জনেই নিকোর পাশে বসে ওর হাত ধরে আছে। সাঁঝ নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, “কেমন লাগছে এখন, নিকো?”
নিকো ঠোঁট বাঁকায়, মুখটা বিরক্তিতে লালচে হয়ে আছে।
“কিছুই ভালো লাগছে না। সবাই কেন আমার রুম ভর্তি করেছে বুঝি না। আমার তো বিশ্রাম দরকার।”
পাশের সোফায় বসে আছে আরশান, জাইরান আর নির্ভাণ। নির্ভাণ একটু নড়েচড়ে বসে, মুখে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে আসে নিকোর দিকে। হাতটা বাড়িয়ে কপাল ছুঁতে যায়।
“জ্বর কী কমেছে?”
নিকো চোখ কুঁচকে তাকাল। কপালে ভাঁজ ফেলল। “রাবিশ! তুই এসেছিস কেন? বলেছিলাম তোকে আর না আসতে। তাও আসলি কেন?”
নির্ভাণ থতমত খেয়ে যায় না। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
“আমাকে দেখলেই এমন করিস কেন ? জিগরি দোস্ত না হয়ে এক নম্বর শত্রু হয়ে যাচ্ছি।”
নিকো চোখ ঘুরিয়ে নেয়। বিছানায় কম্বল টেনে নেয় মুখের ওপর।
“তুই থাকলে আমার জ্বর আরো বাড়বে।”
সাঁঝ তখন হেসে বলে,
“আসলে ব্যাপারটা অন্য রকম। নিকো মেহুল কে খুব ভালোবাসে। তাই আশেপাশে অন্য কেউ থাকলে সেটা পছন্দ করে না। ও মনে করে, মেহুল অন্য কারও সাথে থাকলে, তখন ওকে কম ভালোবাসবে। আগে আমার সাথেও এমন করত। আমি মেহুলের পাশে থাকলে, নিকো এসে মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেত। আমাকে দূরে সরিয়ে দিত। কিন্তু এখন আর করে না।”
মিরাবও মুচকি হেসে মাথা নাড়ল,
“হ্যাঁ, কয়েকদিন যাক, নিকো আপনার সাথেও আর ঝগড়া করবে না। এখনও বাচ্চা ছেলে, তাই এসব করছে।”
সাঁঝ হাসতে হাসতে নিকোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। “দেখলি নিকো? সবাই তোকে কত ভালোবাসে। ঝগড়া করে লাভ নেই, শুধু রাগ বাড়ছে।”
তখন হাতে এক ট্রে ভর্তি নাস্তা নিয়ে ভেতরে ঢুকল মেহুল। ট্রের ওপর ধোঁয়া ওঠা স্যুপ, টোস্ট আর ফল সাজানো আছে। মেহুলের ঠোঁটে নরম হাসি লেগে আছে।
“কী হলো,এখানে পার্লামেন্ট বসেছে নাকি?”
সবাই হেসে ফেলল। জাইরান বলল,
“আমরা তো শুধু প্রেস কনফারেন্স নিচ্ছি, কেমন আছে আমাদের ছোট প্রেসিডেন্ট।”
নিকো মুখ ভার করে বসে ছিল, কিন্তু মেহুলকে দেখে চোখ চকচক করে উঠল।
“আপু ওদের বলো না আসতে। এরা সবাই আমাকে বিরক্ত করছে।”
মেহুল ট্রে বিছানার পাশে রাখল, তারপর নিকোর কপালে হাত রাখল।
“জ্বর কিছুটা কমেছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি যায়নি। ঠিকঠাক খেতে হবে।”
মেহুল এগিয়ে এসে স্যুপটা হাতে নিয়ে চামচে তুলে ধরল। “এক চামচ খেয়ে দেখ। ভালো লাগবে। সকাল থেকে তো কিছু খেলি না।”
নিকো মুখ ফিরিয়ে নিল। “না, আমি খাব না।”
সাঁঝ কাছে এগিয়ে গিয়ে নরম গলায় বলল,
“খাবে না? আচ্ছা, তাহলে আমি খাই?”
সাঁঝ চামচটা নিজের মুখের কাছে নিয়ে গেল। নিকো তৎক্ষণাৎ সোজা হয়ে বসে উঠল।
“না না, এটা আমার। তুমি খেয়ো না। আমি খাব।”
সবাই যখন নিকোকে নিয়ে হাসিঠাট্টা আর খুনসুটি করছে, তখন নির্ভাণ অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ মেহুলের দিকে তাকিয়ে ছিল। মেয়েটা একবারও ওর দিকে চোখ তুলল না। মেহুল ব্যস্ত নিকোকে স্যুপ খাওয়াতে, তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে। কখনও আবার সাঁঝকে কিছু বলে হাসছে, কখনও মিরাবকে সাহায্য করতে ডাকছে। অমন উদাসীনতা দেখে নির্ভাণের ভেতরে শূন্যতা জমে উঠল। সবকিছু জীবনে পাওয়া যায় না, সবকিছু চাইলে হাতে মেলে না। মেহুল ওর সাথে কথা বলছে না, ওর দিকে তাকাচ্ছে না। নির্ভাণ জানে, জোর করে কিছু পাওয়া যায় না। ভালোবাসা কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না। হয় আসে, না হয় আসে না। যদি জোর করে কিছু পাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে সেটা কেবল একতরফা হয়ে যাবে। সে তো মেহুলকে বন্দি করতে চায় না, তার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায় না। নির্ভাণ ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে মনে মনে বলল, “খুশি থেকো, মেহুল। আমার প্রাপ্য না হলেও, তুমি সুখী হলেই আমি তৃপ্ত।”
সবাই বেশিক্ষণ আর দেরি করেনি। হাসিঠাট্টা, গল্পগুজব শেষে সকলে বেরিয়ে পড়ল।শহরের রাস্তাগুলো অল্প আলোয় ভরেছে। মিরাব আর জাইরান হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে অন্য গাড়িতে উঠে পড়ল। অন্যদিকে, সাঁঝ, আরশান আর নির্ভাণ উঠল দ্বিতীয় গাড়িতে। গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে নির্ভাণ সামনের সিটে বসে স্টিয়ারিং ধরল। গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠতেই অন্ধকার রাস্তায় আলো কেটে গেল। পিছনের সিটে পাশাপাশি বসেছে সাঁঝ আর আরশান। বাইরে আকাশে ধীরে ধীরে রাত নামছে। অল্প বাতাসে গাছের ছায়া ঝাপসা হয়ে ছুটে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামল সাঁঝের বাড়ির সামনে।
আরশান মুচকি হাসল, ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে এক ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিল। সাঁঝ লজ্জায় একটু হেসে মাথা নিচু করে দ্রুত ভেতরে চলে গেল।দরজা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে আরশান চোখ সরাল না। যতক্ষণ না সাঁঝ ভিতরে ঢুকে যায়, ততক্ষন দৃষ্টি আটকে রইল। তখনই আরশানের খেয়াল হলো। নির্ভাণ রিয়ারভিউ মিররে তাকিয়ে সব দেখছে। আরশান ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এভাবে তাকাস না রে। নজর লাগিয়ে দিবি তো।”
নির্ভাণ সঙ্গে সঙ্গে হেসে ফেলল। স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, “শা’লা… তোদেরই জিন্দেগী।”
“আর তোর?”
“আমার শুধু গাড়ি চালানোর জন্যই আছে মনে হয়।”
“চিন্তা করিস না, আন্টিকে বলবো তোর জন্য বউ খুঁজতে।”
—-
সাঁঝ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপের দিকে। চোখের সামনে ফাঁকা ডকুমেন্ট, অথচ ঘড়ির কাঁটা নির্দয় গতিতে ছুটছে। কালকে এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন। অথচ সে এখনো এক লাইনও লিখতে পারেনি। মাথার মধ্যে একগাদা অজুহাত ঘুরছে। এমন সময় ভিডিও কল আসে আরশানের। ফোনটা রিসিভ করতেই দেখা গেলো আরশানের মুখ। আরশান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠল,
“মুখটা এমন করে রেখেছিস কেন?”
“কালকে এসাইনমেন্টের লাস্ট ডেইড। আমি এখনো শুরু করিনি।”সাঁঝ হেসে আবার ফোনটা একটু কাছে টেনে আনল,
“আচ্ছা, একটা কাজ করুন। আমার অর্ধেক এসাইনমেন্ট আপনি করে দিন। প্লিজ।”
“কি? এখনো পড়ার ফাঁকিবাজি শুরু করলি? আগে তো পড়তে বসলেই তোর হঠাৎ হাত ব্যথা, মাথা ব্যথা, মুখ ব্যথা পর্যন্ত শুরু হয়ে যেত? একদম মাস্টার ফাঁকিবাজ।”
সাঁঝ সঙ্গে সঙ্গে বলল, “মোটেও না। আমি কখনো এমনটা করিনি।”
“আমাকে মিথ্যুক বানিয়ে ফেললি? এই জন্যই তো, সবকিছু রেকর্ড করে রাখা উচিত ছিল তখনকার কাণ্ডগুলো। প্রমাণ থাকলে আজকে মুখে মুখে পাল্টা দিতে পারতিস না।”
সাঁঝ ঠোঁট কামড়ে লজ্জা লুকাতে ল্যাপটপের কিবোর্ডে মন দিল। তড়িঘড়ি টাইপ করতে শুরু করল। আরশান চুপ করে তাকিয়ে রইল স্নিগ্ধ মুখটার দিকে। চোখের দৃষ্টি আটকে গেছে তার মসৃণ কপালে, নরম ভ্রু রেখায় আর ঠোঁটের কোণের মায়াবী বাঁকে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে আরও কাছে টেনে নিচ্ছে তাকে, অথচ দূরত্বে লুকিয়ে রাখা টানও আছে। চোখের গভীরে যে শান্ত স্বপ্নীলতা, তাতে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আরশান বুঝতে পারল, এটা তার অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি, তার আকাঙ্ক্ষার উত্তর, আর এক অদম্য টান, যেটা তাকে থামতে দেয় না। সাঁঝ অস্থির হয়ে গেল।
“কি হলো? এতক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছেন কেন?”
আরশান ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে বলল,
“তোর এই সিরিয়াস হওয়ার ভানটা দেখতে ভালো লাগে। মনে হয় কোনো বড় প্রফেসর হবি এখনই। অথচ পাঁচ মিনিট পরেই বলবি।কিছুই বুঝতে পারছি না।”
সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আপনি আমাকে একদমই সিরিয়াসলি নেন না।”
“নিলাম তো। তোর এই হাসি,অস্থিরতা সবই সিরিয়াসলি নিই আমি।”
“এমন করলে আমি এসাইনমেন্ট শেষ করতে পারবো না।”
“ঠিক আছে, কর। আমি শুধু তাকিয়ে থাকবো।”
সাঁঝ ভ্রু তুলে বলল,”তাকিয়ে থাকবেন কেন?”
“কারণ এভাবেই সবচেয়ে ভালো লাগে তোকে দেখতে।”
সাঁঝের গাল লাল হয়ে উঠলো। সে চোখ ফিরিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকাল, যেনো খুব মন দিয়ে কাজ করছে। অথচ ভেতরে ভেতরে তার মনে হচ্ছে, এসাইনমেন্টের থেকেও বেশি জটিল হয়ে উঠছে আরশানের কথাগুলো।
.
বহুদিন পর ঠিক সময়ে ভার্সিটিতে এসেছে ।সকাল থেকেই সাঁঝের মনটা বেশ ফুরফুরে। সকালের ক্লাসগুলোও ঠিকঠাক করেছে, আর সবচেয়ে বড় কথা এসাইনমেন্ট-ও জমা দিয়েছে। এজন্যই সাঁঝের মুখে একরাশ তৃপ্তির হাসি। ক্লাস শেষে মেহুলকে নিয়ে গেইটের দিকে বের হলো। হালকা রোদ পড়ছে চারপাশে। তখনই হঠাৎ করেই সাঁঝ আর মেহুলের সামনে দাঁড়িয়ে গেল কয়েকজন অপরিচিত লোক। তাদের পরনে সাদাকালো শার্ট-প্যান্ট, গম্ভীর চেহারা, আর আচরণে কেমন বডিগার্ডদের মতো একটা ভাব। এক জন সামনে এসে বলল,
“আপনার নাম কী এলিশা?”
সাঁঝ এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। চোখ বড় বড় করে মেহুলের দিকে তাকাল, তারপর লোকটার দিকে ফিরে উত্তর দিল,”জী।”
লোকটা ভদ্র ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল,
“আরশান স্যার আমাদের পাঠিয়েছে।আপনাকে নিয়ে যেতে ।”
সাঁঝ চমকে উঠল। সকালে বা গতরাতে তো ও কিছুই বলেনি। তাহলে হঠাৎ করে লোক পাঠালো কেন? কিন্তু পরক্ষণেই তার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটল। হয়তো সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই বলেনি। মেহুল হেসে কনুই দিয়ে সাঁঝকে খোঁচা মেরে বলল,
“দেখ! তোর জন্য ভিআইপি গাড়ি পাঠিয়েছে।”
সাঁঝ হেসে চোখ পাকালো, তবে মনে মনে আনন্দও লুকাতে পারল না। এতো আয়োজন নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ কিছুর জন্য।লোকগুলো আবার বলল, “চলুন, গাড়ি রেডি আছে।”
সাঁঝ হালকা মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। মেহুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি যাই তাহলে। পরে ফোনে কথা হবে।”
“হ্যাঁ ঠিক আছে। সাবধানে যাস।”
গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বড় কালো ঝকঝকে গাড়িটার দিকে এগোল সাঁঝ। গাড়ির কাঁচ গাঢ় কালো হওয়ায় ভেতরটা বোঝা যাচ্ছিল না। গাড়ির সামনে আরেকজন দাঁড়িয়ে দরজা খুলে দিল ভদ্রভাবে। সাঁঝ ধীরে ধীরে গাড়িতে উঠে। গাড়ি ধীরে ধীরে গেইট ছেড়ে সামনে এগোতে লাগল।
বিকেল গড়িয়ে রাত নেমেছে । ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দশটা ছুঁই ছুঁই।রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় আশেপাশের রাস্তাগুলো ফাঁকা লাগছে। চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে, কিন্তু সাঁঝের খোঁজ নেই। একটু আগে সোফি ফোন দিয়েছে জাইরানের কাছে। সাঁঝ এখনও বাড়ি ফিরেনি। জাইরান একটু আগে মেহুল কেও ফোন দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে সে আরশানকে ফোন করলো। ফোন ধরতেই জাইরান তড়িঘড়ি করে বলল,
“সাঁঝ কী তোর কাছে?”
আরশান অবাক গলায় বলল, “না। কেন?”
“আন্টি ফোন দিয়েছে। সাঁঝ এখনো বাড়িতে যায়নি। ফোনও বন্ধ দেখাচ্ছে।”
আরশানের চোখের ভ্রু কুঁচকে গেলো।
“আজকে তো সাঁঝ আমার কাছে আসেনি।”
“একটু আগে মেহুল যে বলল, তুই নাকি গাড়ি পাঠিয়েছিলি ভার্সিটিতে,ওকে আনতে।”
“কি বলছিস? আশ্চর্য! আমি গাড়ি পাঠাবো কেন? আমি তো কাউকে পাঠাইনি।”
জাইরান কপালে হাত বুলিয়ে থমকে গিয়ে বলল, “তাহলে গেল কোথায়? যদি তুই গাড়ি না পাঠাস। তাহলে সাঁঝ কার গাড়িতে উঠলো?”
আরশানের মাথায় চিন্তার ঝড় বইছে। একটার পর একটা প্রশ্ন তাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। সাঁঝ কার গাড়িতে উঠলো? কোথায় যেতে পারে? নাকি কেউ ইচ্ছে করে তাকে নিয়ে গেছে? চোখের সামনে ভেসে উঠছে সাঁঝের হাসিমাখা মুখ। চিন্তা করতে গিয়েই বুকটা কেঁপে উঠলো। যদি কোনো বিপদ ঘটে থাকে? আর দেরি করলো না। গাড়ির চাবি তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। রাতের নিস্তব্ধ রাস্তায় তার গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ আরও কর্কশ লাগছিলো। স্টিয়ারিং আঁকড়ে ধরে, ভেতরে যে অস্থিরতা জমে উঠছে ঢেউয়ের মতো।
চলবে…..