#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৬
“সায়রা একটা টিউশনি ছেড়ে দিয়েছে।অফিস শেষ করে আবার দুটো টিউশনি করিয়ে বাসায় যেতে রাত হয় তার। ঢাকা শহরের অবস্থা করুন। মেয়ে হয়ে নিজের হেফাজতের জন্য হলেও এই মানুষ রুপি অমানুষদের মধ্যে সে পড়তে চায় না। তবুও বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাতটার মতো বেজে যায়। অফিসে ও অনেক কাজ। আজ ও অফিসে ঢোকার আগে সায়রা মোড় থেকে দুপুরে খাবার জন্য কিছু কিনে নিয়ে অফিসে গেলো। দু’দিন আগে হুট করেই রুহানি সবাইকে নতুন কিছু ড্রেস এর ডিজাইন আনতে বলেছে৷ সায়রা এই দু’দিনে সেসব আর্ট করেছে ফাইলে। প্রথমবার সে তার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছে ইউনিক কিছু করার। তবুও মনে ভয় যদি রুহানির বা বস এর এসব পছন্দ না হয়। মনে ভয় নিয়ে ই অফিসে ঢুকলো। একটু পড়েই শুরু হলো অফিসে কাজ। রুহানির কাছে সবার ফাইল জমা দেওয়া হলো । রুহানি সেগুলো নিয়ে তূর্যর কেবিনে গেলো। সায়রা কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। না জানি শুরুতেই চাকরিটা যায় তার।
তূর্যর কেবিনটা এমন যে সে বাইরের সব কিছু দেখতে পারলেও বাইরে থেকে ভেতরের কিছু দেখা যায় না৷
তূর্য একটার পর একটা ডিজাইন মনোযোগ দিয়ে দেখছে। রুহানি সামনের চেয়ারে বসে তূর্যকে দেখে যাচ্ছে। তার একটু পাশেই নাফিস দাড়িয়ে আছে। তূর্য একটা ফাইল অনেকটা সময় নিয়ে দেখে নাফিসকে বললো”
_সায়রা আজমীরকে ডাকো নাফিস।
_ওকে স্যার।
“নাফিস কেবিন থেকে বের হয়ে দেখল সায়রা ডেস্কের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। নাফিস এগিয়ে গিয়ে পেছনে দাড়িয়ে বলে উঠে”
_অনেক ঘুম পাচ্ছে নাকি সায়রা খাতুন।
“সায়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকায় পেছমে ঘুরে নাফিসকে দেখে বললো”
_আপনি। আমি তো ভয় ই পেয়ে গিয়েছিলাম।
_আহারে বেচারি। ভয় তো এখন পাবে সায়রা খাতুন। তূর্য স্যার ডেকেছে তোমাকে।
“কথাটা শোনার সাথে সাথে সায়রা এক লাফে উঠে দাড়িয়ে গেলো। এই বুঝি চাকরিটা গেলো”
_কেনো ? কি হয়েছে ?
_এতো বাজে ডিজাইন করেছো কি আর বলবো। চলো চলো।
“সায়রা এক পা এগুচ্ছে আর বুকটা কাপছে। আগে টিউশনি টা ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এখন যদি চাকরি যায় তাহলে রাস্তায় থালা নিয়ে বসতে হবে। যে বদমাইশ বস তার। একটু ও ভরসা নেই ওই লোকের উপর। সায়রা ভয়ে ভয়ে কেবিনে ঢুকলো। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে তাকালো সায়রার দিকে। সায়রার পা যেনো বরফ হয়ে গেছে। আহা এখন কি হবে ? রুহানির পাশের চেয়ারটাতে ইশারে করে সায়রাকে বসতে বললো তূর্য ”
_সিট।
“সায়রা বসলো চুপ করে। তূর্য একটা ডিজাইন বের করে সায়রাকে দেখিয়ে বললো”
_এটা তুমি করেছো ?
_জি। আ,আমি করেছি।
_আইডিয়া নিজের নাকি ধার করা ?
_নাহ, নিজের আইডিয়াতেই করেছি৷
_আচ্ছা তুমি যেতে পারো এখন।
“সায়রা কিছুই বুঝলো না৷ ডিজাইন পছন্দ হয়েছে কিনা তা তো বললো না। সায়রা বেরিয়ে এলো। সায়রা আসতেই আবির আর জেরিন এগিয়ে এলো।
রুহানি উদ্দেশ্য করে তূর্য বললো”
_এই ডিজাইনটা ই যাবে। এটার মতো হালকা পিংক গাউন তৈরি করতে বল। বাকিগুলো আপাতত পেন্ডিং থাকুক।
_এইটা ই কেনো ? এটা তো নরমাল,,,,,
“রুহানি কথা শেষ করার আগে তূর্য বললো”
_দিস ডিজাইন ইজ ভেরি অ্যাট্রাকটিভ অ্যান্ড ইউনিক।আর একটা ডিজাইন ও এমন নেই। এটাই সিলেক্ট কর।
“রুহানি ফাইলটা নিয়ে বের হয়ে এলো। একটএ দূরেই সায়রা ওরা দাড়িয়ে ছিলো। রুহানি ওকে গিয়ে বললো ওর ডিজাইন সিলেক্ট করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সায়রা চিৎকার করে জেরিনকে জড়িয়ে ধরে লাফাতে লাগলো। তূর্যর কানে হঠাৎ এমন শব্দ যেতেই বাইরে তাকালো। সায়রাকে দেখে চেয়ে রইলো। লাফাচ্ছে রিতীমতো মেয়েটা। খুশি চোখে মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । তূর্যর সায়রার এমন পাগলামি দেখে হেসে ফেললো । সে হাসলো ও। এমন পাগল মেয়ে সে আর দেখেনি। মনে মনে বললো ” ঝগড়ুটে হলে ও বুদ্ধি আছে”
“অনিক ছেলেটার সাথে সায়রার রোজ দেখা হয় বাসে।
লোকটা রোজ সায়রার জন্য জায়গা রেখে দেয়। এরপর টুকটাক কথা বলতে বলতে বাড়প পৌছায়। অনিককে ভারি রহস্যজনক লাগে সায়রার কাছে। তবুও ভালো। লোকটার মধ্যে খারাপ কিছু দেখে না। উল্টো ভরসা পায় যে নিরাপদে বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারবে।
বাড়ি এসেই দেখলো কোকিলা বেগম বেশ চটে আছেন। সায়রাকে দেখে সেটা যেনো কয়েকগুণ বাড়লো। এগিয়ে এসে বলে বসলো”
_কি এমন চাকরি ধরছো যে রোজ রাইতে বাড়ি ফিরো।
সব কাজ আমার একলা করতে হয়৷ একটু আগে বাড়ি ফিরন যায় না।
“সায়রা ভীষণ ক্লান্ত। এই মুহুর্তে কথা জবাব দিতে ও ইচ্ছে করছে না। তবুও বললো”
_আমাকে দিয়ে আপনার কাজ কওন।এমনি ও আপনি আমাকে দেখতে পারেন না। বাড়িতে না থাকলে আমার মুখটা ও দেখতে হয় না৷ লাভ তো আপনার ই।
“কোকিলা বেগম তেড়ে এলো সায়রার দিকে সায়রার গাল চেপে ধরলো ”
_অনেক গলা বড় হয়েছে না তোর। তোর মা যেমন ছিলো তুই তো তেমন ই হবি।
“সায়রা ঝাড়ি দিয়ে গাক থেকে কোকিলা বেগমের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো”
_খবরদার ওই নোংরা মুখে আমার মা কে নিয়ে কিছু বলবেন না।বললে জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো। আমার মা,অন্তত আপনার মতো মহিলা ছিলো না।
“সায়রা সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। কিসের অপরাধে সে এমন জীবন পেয়েছে কে জানে। না পেলে মায়ের আদর না পেলো বাবার ভালোবাসা। এক জীবন কি শুধু লড়াই করেই কাটবে ? সায়রা কান্না করলো। খিদে পেট। সকাল থেকে ভাত পড়েনি পেটে। এখন খিদেটা ও মরে গেছে। সায়রা ওইভাবে ই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো”
“অফুস থেকে একটু দূরেই বিড়াট জ্যাম লেগে আছে। তূর্য গাড়িতে বসে বসে ই ম্যাগাজিন দেখছে। হঠাৎ ই একটা কন্ঠ কানে এলো। পরিচিত। তূর্য গাড়ির কাচটা একটু নামাতেই গাড়ির পাশে ই রিকাশাওয়ালার সাথে
তর্ক করতে শুনলো সায়রাকে। তূর্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো তর্ক ”
_রোজ আসি এিশ টাকা দিয়ে৷। আজ সেটা চল্লিশ হয়ে গেলো। আমি এিশ টাকার একটা ও বেশি দেবো না।
“রিকশাওয়ালা ও থেমে নেই। সে বলে উঠলো”
_দেহেন আফা এতো কথা কইয়েন না। নেয্য ভাড়া ই চাইছি। টাকা দেন জ্যাম ছাইড়া দিবো৷
_এিশ টাকা দিবো। এর এক টাকা ও বেশি না।
_আচ্ছা পয়এিশ টাকা দেন।
_এক টাকা ও বেশি দিবো না।
“রিকশাওয়ালা মহা বিরক্ত হলো। তার মুখ দেখে মনে হলে এই জীবন সায়রাকে দেখলে ও সে তার রিকশায় উঠাবে না। শেষে এিশ টাকা ভাড়া ই দিলো সায়রা। এরপর হেটে গেলো অফিসের দিকে। তূর্য এতটা সময় শুধু হেসেছে। এটা মেয়ে নাকি ধানিলংকা”
“অফিসে এসে জেরিনের সাথে দেখা হতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো সায়রার। মেয়েটা এই কয়দিনে সায়রার অনেকটা আপন হয়ে গেছে। জেরিনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে সায়রা গান গাইতে লাগলো। তখনো অফিস টাইম শুরু হয়নি। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই হুট করে রুমের সবাই দাড়িয়ে গেলো। জেরিন ও নিজের জায়গায় থেমে গেলো। সায়রা বুঝলো না হুট করে কি হলো। জেরিন চোখ দিয়ে ইশারা করে পিছনে তাকাতে বললো ”
_কি হয়েছে পেছনে,,,।
“সায়রা পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখলো তূর্য সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে সায়রার দিকে চেয়ে। তূর্যর পেছনে নাফিস দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে। সায়রার গলা শুখিয়ে এলো৷ আমতা আমতা করতে লাগলো। এবার কি হবে৷
এই বজ্জাত লোক কি শুনে ফেলেছে নাকি গানটান। তূর্য একটু এগিয়ে এসে সায়রার সামনে দাড়িয়ে বললো”
_মিস সায়রা! এটা কাজের জায়গা৷ শিল্পী প্রতিভা দেখানোর জায়গা না। এভাবে গলা ফেড়ে আর গান গাইবে না।
“কথাটা বলে সবাইকে বসতে ইশারা করে বসতে বলে চলে যাচ্ছিলো সায়রা তখনই বিড়বিড় করে বলে উঠলো”
_একটু গান ই তো গাইছিলাম। কি এমন হয়েছে,,,।
“সায়রার কথা শেষ হতে দেড়ি তূর্য দাড়িয়ে গেলো। পেছন ফিরে চেয়ে সায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললো”
_তুমি কেবিনে আসো। এখনি৷
_কে,কেনো ?
_তোমার শিল্পী প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য একটা অডিশন তো নেওয়া দরকার৷ কুড ইউ প্লিজ কাম টু মাই ক্যাবিন।
“তূর্য নিজের কেবিনে চলে গেলো। সাশরার এখন গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আগুনে ঘি ঢালতে
নাফিস ঢুলতে ঢুলতে এসে সায়রাকে বললো”
_যাও যাও সায়রা খাতুন। অডিশন দিয়ে আসো।
“সায়রা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো নাফিসের দিকে। নাফিস যেতে যেতে বললো”
_আমি আবার কি করলাম।
“সায়রা ঢুকলো কেবিনে। তূর্য যেনো ওর অপেক্ষায় ই ছিলো। সায়রাকে দেখেই বললো”
_নাও শুরু করো। ভালো গান গাইতে হবে কিন্তু ।
“সায়রা মুখে কিছু না বললে ও মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছে তূর্যকে৷ তবুও মুখে বললো”
_সরি স্যার, । আর এমন হবে না। আর গান গাইবো না অফিসে।
“সায়রার এমন করুন মুখটা দেখে তূর্যর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। তবুও হাসি চেপে রেখে চেয়ার থেকে উঠে এসে
দু হাত ভাজ করে সায়রার সামনে এসে দাড়ালো”
_তোমার তো প্রতিভার শেষ নেই মেয়ে। রাস্তায় দশ টাকার জন্য রিকশাওয়ালার সাথে ঝগড়া করো হু।
“সায়রা হা করে চেয়ে আছে তূর্যর দিকে। এই লোক এসব আবার কি করে জানলো। আর সে কি ঝগড়া করেছে নাকি। ভাড়া বাচিয়েছে। সায়রা যা ই করে তাই এই লোকের কাছে ঝগড়া মনে হয় ”
_আপনি দেখলেন কি করে ?
_রাস্তায় নিশ্চয়ই তুমি একা চলাচল করো না৷ আর এভাবে চেঁচালে যে কেউ শুনবে দেখবে।
_এই যে শুনুন৷ আমি যা ই করি তাই আপনার ঝগড়া মনে হয় কেনো বলুন তো ? ওই লোকটা বেশি ভাড়া চাচ্ছিলো। আর আমি তা দিয়ে দিতাম। টাকা কি গাছে ধরে নাকি।
“তূর্য সায়রার দিলে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এই মেয়ে ধিরে কথা বলতে পারে না৷ চলাচল ও ধির গতির নয়৷ সব কিছুতে তাড়াহুড়ো। সায়রা কথা বলছে৷ মোট কথা সে তূর্যকে বুঝাতে চায়ছে সে কেনো রিকশাওয়ালার সাথে তর্ক করেছে। তূর্য তা শুনছে৷ না শুনছে বললে ভুল হবে। সে সায়রাকে দেখছে। শালীন পোশাক। মুখে মেকাপের ম ও নেই। চুলগুলো বেনী করা। চোখের পাপড়িগুলো বড় বড়। পলক ফেললো দেখতে ভারি সুন্দর লাগছে। কথা বলার স্পিড ট্রেনের গতির থেকে বেশি। তূর্য হুট করে বলে উঠলো”
_এই মেয়ে তুমি ধিরে কথা বলতে পারো না ?
_ আমি এভাবেই কথা বলি।
_এই জন্য ই তোমার নরমাল কথা ও ঝগড়া মনে হয়।
_হ্যা, এটা শুধু আপনার কাছেই মনে হয়।
“তূর্য কিছু বলতে যাবে তখনি দরজায় শব্দ হলো৷ সায়রার দিকে চেয়ে তূর্য বললো”
_কাম ইন।
“রুহানি ঢুকলো কেবিনে। রুহানি সায়রাকে এখানে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে দেখে তূর্য সায়রাকে বললো”
_যেতে পারো।
“সায়রা চলে গেলো। রুহানি তূর্যর দিকে চেয়ে বললো”
_ওই মেয়ে এখানে কি করছিলো ?
“তূর্য নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে বললো ”
_তুই এখানে কি করছিস ?
_আমি তো কাজে এসেছি ।
_তাহকে ও নিশ্চয়ই আমার বিয়ে খেতে আসনি। কাজেই এসেছিলো।
_তুই সবসময় আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলিস তূর্য ?
_ওই ড্রেসটার কাজ কতদূর হয়েছে ?
“রুহানি বুঝলো তূর্য কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। তাই কথা না বাড়িয়ে কাজের কথা ই বললো”
_ড্রেস হয়ে এসেছে। ক্লাইনট ও আগামীকাল আসবে। কিন্তু আমি ভাবছি একটা ডিজাইন। যদি তাদের ভালো না লাগে ।
_একশো ডিজাইনের মধ্যে একটা ডিজাইন সিলেক্ট করা হয়েছে। ওটা যদি পছন্দ না হয় তাহলে নেই৷
“রুহানি বসে রইলো৷ তূর্য ওর দিকে কখনো বেশিক্ষন তাকায় না৷ নিজেকে যথেষ্ট আকর্ষনীয় করে রাখে স তবুও তাকায় না। রুহানি মনে মনে কিছু একট ভাবলো
এরপর বললো”
_আচ্ছা এবার কি অফিস থেকে কোনো ট্যুর এ যাওয়া হব না নাকি। নাফিস কোথায় ? তুই ও তো কিছু বলছিস না।
_হবে। এই সমস্যাগুলো যাক। আগামী মাসে ঠিক করবো। দাদিকে ও বলেছি কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবো। সময় হচ্ছে না।
“আরো কিছু সময় পর রুহানি কেবিন থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে যেতেই দেখলো সায়রা মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে৷ মেয়েটাকে রুহানির একদম পছন্দ নয়৷ এই মেয়েটার বেলায় তূর্য কেমন যেনো ছাড় দিচ্ছে। অফিসের বসে সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এই মেয়ে জানেনা৷ তবুও তূর্য একে রেখেছে৷ রুহানি মনে মনে ঠিক করে নিলো একে এখান থেকে তাড়াবে৷ যে করেই হোক ”
চলবে,,,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৭
“আজ জরুরি মিটিং আছে অফিসে। বিদেশি ক্লাইনট আসবে। ড্রেস এর একজিভিউশন। আর সেটা অফিসেই আয়োজন করা হয়েছে। তূর্য রুহানি এদের আর নবম তলায় উপস্থিতি নেই। আয়োজন করা হয়েছে সপ্তম তালায়। তাই সায়রাদের ও আজ কাজের চাপ কম। সায়রা জেরিন আবির সহ কয়েকজন মিলে
এক সাথে গল্প করছে৷
সপ্তম তালায় তূর্য সহ আরো অনেকে৷ সব কিছু রেডি৷
কিন্তু ড্রেস চো করার জন্য যে মডেল ঠিক করা হয়েছিলো সে ই এখনে আসনি৷ রুহানি বারবার কল করছে৷ কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। তূর্য বিষয়টা খেয়াল করে এগিয়ে গেলো রুহানির দিকে ”
_কোনো সমস্যা ?
_মডেলের ফোন বন্ধ বলছে৷ এখনো আসনি।
“তূর্যর ভ্রু কুচকে চেয়ে রইলো। শেষ মুহুর্তে এসে এসব হচ্ছে ”
_যাকে তাকে কেনো ঠিক করিস৷ আনপ্রোফেশনাল লোকজন। এখন কি হবে? শেষ সময়ে এসে কোথায় পাবো মডেল?
“রুহানু বারবার কল করছে। যেহেতু মডেল রুহানি ঠিক করেছে তাই দোষটা ওর ই হবে৷ আর তূর্যকে সবাই চেনে৷ একটু এদিক সেদিক হলেই রেগে যাবে”
_মাথা ঠান্ডা কর প্লিজ। আমি জানতাম না,,,,,
“রুহানি পুরো কথা শেষ করার আগেই নাফিস রুমে ঢুকলো। তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললো”
_স্যার উনারা চলে এসেছে।
“তূর্য কিছু স্টাফদের বললো ড্রেস ডলের মধ্যে পড়াতে। যা হবে হবে। তারা তাই ই করলো।
লোকজন এলো। রুহানি চুপ করে আছে। তূর্য ই তাদের সব কিছু দেখালো। তাদের কথা শুনে মনে হয়েছো ড্রেস তাদের পছন্দ হয়েছে। হুট করেই একজন বলে উঠলো”
_মে আই নো হু ডিজাইনড দিস ড্রেস? আই’ড লাভ টু মিট দ্য ডিজাইনার ইফ পসিবল।
“তূর্য হেসে বললো”
_অফকোর্স, হুয়াই নট৷
“পরপর একজনকে ইশারা করে ডাকতে বললো সায়রাকে। সায়রা তখন কাজ করছিলো। তাকে ডাকা হয়েছে শুনে আবার তার মনে অস্থিরতা শুরু হলো। সপ্তম তলায় এসে বড় রুমটাতে ঢুকতেই দেখলো অনেক মানুষ। সায়রা ধিরে ধিরে হেসে তূর্যর সামনে গিয়ে দাড়ালো। তূর্য বিদেশি লোকটাকে সায়রাকে দেখিয়ে বললো ”
_সি ডিজাইন দিস ড্রেস ।
_হুয়াট্স ইউর নেইম?
_মাই নেইম ইজ সায়রা আজমীর।
“লোকটা সয়ারার দিকে চেয়ে একগাল হাসি দিয়ে বললো”
_দিস ইজ ভেরি বিউটিফুল ডিজাইন।
“সায়রার খুশি হয়ে গেলো। অনেক পরিশ্রম করেছে। তার ফল তো পাওয়ার ই ছিলো ”
_থ্যাকইউ স্যার।
_ওয়েলকাম। সায়রা ক্যান ইউ ওয়ার দিস ড্রেস প্লিজ।
“লোকটার কথায় রুমে থাকা সকলে অবাক হয়ে চায়লো। লোকটা বিষয়টা বুঝতে পেরে তূর্যকে বুঝালো তারা ডলে নয় সায়রাকে ড্রেস টা পড়িয়ে দেখতে চায় ”
_বাট স্যার সি ইজ নট আ মডেল।
_ডোন্টওয়ারি। সি ক্যান।
“সায়রা পড়লো বিপদে। তূর্য সায়রার দিকে এগিয়ে এলো ”
_ওরা চাচ্ছে তুমি ড্রেস টা পড়ে ওদের দেখাও। পারবে?
“সায়রা একটু ভাবলো৷ এরপর বললো”
_পারবো স্যার।
“তূর্য ইশারায় যেতে বললো। সায়রা চলে গেলো আরেকটা রুমে ওর সাথে কয়েকজন গেলো। শুধু ড্রেস পড়লেই হবে না। সাথে সাজতে হবে৷ একেবারে মডেলদের মতো।
সায়রা যেতেই বেদেশি লোকদের আরো কিছু ডিজাইন দেখাতে লাগলো তূর্য। রুহানি এতটা সময় একটা জায়গায় ই দাড়িয়ে সবটা দেখলো।
বেশি সময় লাগলো না সায়রার রেডি হতে। একটু পরেই সে চলে এলো। সায়রা ঢুকতে নাফিস বললো”
_স্যার।
“তূর্য সহ সকলে ঘুড়ে দাড়ালো। সায়রা গাউনটা পরেছে। সাথে হালকা মেকআপ। চুলগুলো ও অন্যরকম ভাবে বেধেছে৷ সায়রাকে এই লুকে দেখে রুমে থাকা প্রতিটা মানুষ চেয়ে রইলো।।গাউনটা ডলের মধ্যে যতোটা সুন্দর লাগছিলো। এখানে তার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে৷ হাজারগুন বেশি৷ বিদেশি লোকটা এবার সন্তুষ্ট হলেন৷ সায়রাকে হেঁটে ও দেখাতে বলা হলো। সায়রা তাই করলো। সে এসব জানে। ফোনে এমন কতো ভিডিও দেখেছে। একজন সায়রা প্রতিটা মুহূর্ত ভিডিও করছে৷ এগুলো আজকের মিটিং এর প্রেজেনটেশন। লোকগুলো পছন্দ করলো ড্রেস টা এবং এটা তারা নিতে চায় বলে জানালো।
মিটিং শেষ হলো সময় নিয়ে। সায়রা মহা খুশি। সে আবার ড্রেস পরিবর্তন করে নিজেরগুলো পড়ে বের হলো। তূর্য তখন যাচ্ছিলো সেখান দিয়ে সাথে নাফিস। তূর্যকে সামনে দেখেই সায়রা উল্টো ঘুড়ে দৌড়ে চলে গেলো। যেনো তূর্যর সামনে পড়লেই বিপদ। তূর্য নিজের কাজে চলে গেলো ”
“রুহানি ছুটি নিয়েছে। তূর্য অফিস শেষে আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে৷ দাদির সাথে একটু সময় কাটিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো। মাথা ব্যথা করছে। একটু পরে একজন এসে কফি দিয়ে গেলো। তূর্য সেটা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো৷ দূরে ভিন্ন মানুষের বাসার বাতি জ্বলছে। সেসব দেখতে দেখতে কফি খাচ্ছিলো এমন সময় ফোনে শব্দ হয়। হুয়াট্স আ্যাপ এ মেসেজ এসেছে। তূর্য পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো নাফিস ভিডিও পাঠিয়েছে। ভিডিওতে ক্লিক করতেই আজকে করা ড্রেস এর ভিডিওগুলো। যাতে সায়রাকে দেখা যাচ্ছে। তূর্য চেয়ে রইলো। চোখ সড়াতে ইচ্ছে করলো না। অন্য সময় সে কখনোই পুরো ভিডিও দেখে না। তবে আজ দেখলো। সায়রার দিকে তখন সে ভালো করে দেখেনি৷ মেয়েটাকে যতোটা আনপ্রোফেশনাল ভেবেছিলো ততোটা নয়। ড্রেসটাতে মেয়েটাকে ভীষণ মানিয়েছে। হালকা গোলাপি রঙের গাউনটা। তূর্য কতো কি ভাবলো আর সায়রার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। হুট করেই তূর্য ভিডিওটা বন্ধ করে দিলো। এসব কি ভেবে যাচ্ছে সে। ফোনটা হাতে নিয়ে কফির মগটা রেখে রুমে চলে এলো”
“পরেরদিন অফিসে কাজের চাপ বাড়লো৷ অফিসে এসে ছুটোছুটি করতে হচ্ছে। সায়রা আর আবির এক সাথে কাজ করছে কথা বলতে বলতে। যেহেতু তাদের ডেস্ক এক সাথে। তখনই তূর্য এলো। একবার শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে নিজের কেবিনে ঢুকে গেলো ।
একটু পরেই সামর্থ্য বেগম এলেন। তাকে তূর্যর কেবিনে নিয়ে বসানো হলো। কয়েকদিন পরপর ই আসেন তিনি। দেখতে। তূর্য সামর্থ্য বেগমকে দেখেই খুশি হয়ে বলে উঠলো”
_কি আমাকে না দেখে থাকতে পারছিলে না বুড়ি।
“সামর্থ্য বেগম বসে আছে চুপ করে। তূর্য কিছু ফাইল সাইন করছে। তখনই দরজায় শব্দ হলো। তূর্য ভেতরে আসতে বললো। সায়রা কিছু ফাইল নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সামর্থ্য বেগম ঘুরে তাকালো। সায়রা ও তাকে চিনতে পেরেছে। তবুও চুপ রইলো। আস্তে করে বললো”
_স্যার ফাইলগুলো,,,,,, ।
_রেখে যাও। আমি সময় করে দেখে দিবো৷
“সায়রা একটু এগিয়ে এসে টেবিলের উপর ফাইলগুলো রেখে দিলো। সামর্থ্য বেগম তখনো সায়রার মুখের দিকে চেয়ে আছে। সায়রা আগ বাড়িয়ে কিছু বললো না। চলে আসবে তখনই সামর্থ্য বেগম বলে উঠলো”
_ওই মেয়ে তুই আমারে চিনিস নাই৷ ওইদিন যে লিফট এর সামনে দেখা হলো,,,,।
“সায়রা সামর্থ্য বেগমের দিকে চেয়ে হেসে এগিয়ে এলো ”
_চিনেছি আপনাকে৷ কিন্তু আমি ভাবছিলাম আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেননি তাই কিছু বলিনি।
_বয়স হয়েছে তো এতো কিছু মনে থাকে না।
_আপনার পায়ের অবস্থা কি এখন। ঠিক আছে ?
“তূর্য এদের কথে শুনছে৷ কিন্তু কিছু বলছে না। শুধু শুধু মনে মনে ভাবছে এই মেয়ে তার দাদি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সামর্থ্য বেগম নিজের কথা জানালেন। সায়রা হেসে চলে গেলো। সামর্থ্য বেগম চেয়ে রইলো সায়রার যাওয়ার দিকে ”
_মেয়েটা লক্ষী আছে!
“তূর্য দাদির সরলতার উপর হাসলো। এই মেয়েকে তার দাদির কাছে লক্ষী মেয়ে লাগছে। দাদিকে যদি একটু দেখাতে পারতো এই মেয়ের ঝগড়া করার স্কিল।
সামর্থ্য বেগম চলে গেলেন একটু পরে। তূর্যর একটা কল আসায় কেবিনে হেটে হেটে কথা বলছিলো। হঠাৎ ই চোখ গেলো সায়রার দিকে। পাশের ডেস্কের ছেলেটা চেয়ে আছে ওর দিকে৷ আবার এটা ওটা বলছে ও৷
তূর্য যতোক্ষন কথা বললো একদিকে চেয়ে বললো। এরপর গিয়ে আবার কাজে মন দিলো ”
“অফিস টাইম শেষ হয়েছে একটু আগে। সায়রা একটএ সময় নিয়ে ই বের হলো। তাড়াহুড়ো করলে ও লাভ হয় না৷ এ সময় লিফর এ ভীষণ ভিড় হয়৷ সায়রা সাথে সাথে আবির ও দেড়ি করে বের হয়েছে। আবির ছেলেটা সায়রার পছন্দ হয় না একেবারে। কেমন গায়ে পড়া স্বভাবের। লিফট এ উঠে দাড়াতেই দেখলো নাফিজ আর তূর্য।
তূর্য লিফট এ ঢুকতে গিয়ে খেয়াল করলো আবির একেবারে সায়রার সাথে ঘেসে দাড়িয়েছে। আর সায়রা শুধু নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। তূর্য লিফটে ঢুকেই আবিরের দিকে এমনভাবে তাকালো যে আবির নিজেই একটু সরে গিয়ে দাড়ালো। নাফিস বিষয়টা বুঝতে পেরে আবিরকে টেনে এনে নিজের পাশে দাড় করিয়ে দিলো। আর ফাঁকা জায়গাটুকুতে তূর্য দু পকেটে হাত রেখে সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
সায়রা একটু সস্তি পেলো। লিফট চলছে। চারজন মানুষ দাড়িয়ে এক সাথে৷ অথচ একটা টু শব্দ হলো না৷ শুধু সায়রার নাকে একটা মিষ্টি ঘ্রান আসতে লাগলো।
এটা সে আগে একবার তূর্যর সামনে গিয়ে পেয়েছিলো৷ অনেক পারফিউম এর ঘ্রান তার জানা। কিন্তু এটা ভিন্ন।লিফট নিচের তালায় আসতেই খুলে গেলো। তূর্য আগের মতোই দাড়িয়ে। নাফিস আবিরের কাঁধে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সায়রা আগে বেরিয়ে গেলো। এরপর তূর্য বের হলো”
“আজ বাসে উঠতে বেশ কষ্ট হয়েছে সায়রার। এতো মানুষের ভিড়। আর হবেই না কেনো?এমন সময় অফিস ছুটি হয় যে। সব মানুষ যার যার গন্তব্যে পৌছায়। সবার কাছে তো আর গাড়ি নেই৷ সায়রা জানালার পাশের সিটে বসে পড়লো। ওর পাশে একটা মেয়ে এসে বসলো। আজ আর অনিককে দেখতে পেলো না সায়রা।
গন্তব্যে এসে বাস থেকে নেমে কিছুদূর হেটে যেতেই পেছন থেকে ডাক আসলো”
_সায়রা ।
“সায়রা পেছন ফিরে তাকালো। অনিক দাড়িয়ে আছে। সায়রা অবাক হলো। রোজ বাসে দেখে লোকটাকে৷ আজ এখানে। অনিক দৌড়ে এসে সায়রার সামনে দাড়ালো”
_আপনি এখানে ?
_আরেহ, আপনি আমার যাতায়াতের পার্টনার না৷ আজ তো আমি ওই বাসটা ধরতে পারিনি৷ পেছনে রিকশা নিয়ে এসেছি।
_তা এতো তাড়াহুড়ো করে আসতে গেলেন কেনো ?
“অনিক মুচকি হেসে বললো”
_আপনাকে দখতে। তাড়াহুড়ো না করে আসলে তো দেখতে পারতাম না আমার পার্টনারকে।
“সায়রা ভ্রু কুচকে চেয়ে আছে দেখে। মুখপ হাসি রেখে অনিক বললো ”
_কিছু পথ তো হেঁটেই যাবেন। চলুন এক সাথে যাই৷ কোনো সমস্যা হবে ?
“সায়রা মাথা নাড়িয়ে না বললো। এরপর হাঁটতে লাগলো দুজনে একসাথে। অনিককে সায়রার খারাপ মনে হয় না৷ যতোদিন ধরে চিনেছে সায়রাকে সব সময় একটু আলাদা ট্রিট করেছে। বিষয়টা সায়রা খেয়াল করে খুব। অনিক বলে যাতায়াতের পার্টনার। মন্দ বলে না খুব একটা”
চলবে,,,