#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৮
“পরেরদিন অফিসে ঢুকতেই জানানো হলো নতুন নিয়ম৷ ছেলে মেয়েদের ডেস্ক আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। সামনের দুই সাড়ি মেয়েদের পেছনের দুই সারি ছেলেদের। এই কথা শুনে সকলে অবাক। এতো বছর ধরে একই নিয়মে চলছে। হুট করে পরিবর্তন। তবে সায়রা এই ঘটনায় খুব খুশি হলো। আবিরের ফালতু বকবক শুমতে হবে না। সায়রা জেরিনের পাশের ডেস্কটায় গিয়ে বসলো। নিজের সমস্ত ফাইল যা কিছু ছিলো সব সব গুছিয়ে রাখলো। এরপর শান্তি করে বাসতেই তূর্য ঢুকলো রুমে। সঙ্গে সঙ্গে আবার দাড়িয়ে যেতে হলো।
তূর্য এদিক সেদিক চেয়ে একবার সায়রার দিকে তাকাল। সায়রা তখন নিজের হাতের আঙ্গুল দেখছে মনোযোগ দিয়ে। তূর্য নিজের কেবিনে চলে গেলো।
নাফিস আজ একটএ লেট করেই এসেছে। এরজন্য দৌড়ে আগে তূর্যর কেবিনে গেলো ”
_গুড মর্নিং স্যার!
“তূর্য নাফিসের দিকে চেয়ে বললো”
_মর্নিং এখন হলো ?
_সরি স্যার। কাল রাতে ঘুম হয়নি তাই,,,।
_ঘুম হয়নি৷ কেনো ? তোমার কি গার্লফ্রেন্ড আছে নাফিস?
“কথা বলতেই নাফিস হতাশা ভরা মুখ নিয়ে বললো”
_আমার আবার গার্লফ্রেন্ড স্যার! গার্লফ্রেন্ড রাখতে হলে সময়,দিতে হয় ঘুরতে নিয়ে যেতে হয় এতো সময় কি আছে আমার। সারাদিন তো আপনার সাথেই থাকি। এখন আর মেয়ে মানুষ ভালো ও লাগে না,,।
“তূর্য কথাটা শুনে চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বললো”
_কি বলতে চাইছো ?
_না না কিছু না। আমি এখন আসছি স্যার।
“নাফিস কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। যেতে যেতে মনে হাজারটা আফসোস করতে লাগলো। এই লোকের সাথে থাকতে থাকতে তার মন মস্তিক দুটোই শেষ । না প্রেম হচ্ছে না বিয়ে। ওই লোকের ও হচ্ছে না ”
“নাফিস যেতেই তূর্য নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। এরপর সোজা বাইরে তাকালো। সবাই কাজ করছে। সামনের সারির একটা ডেস্কে সায়রা বসে। মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে। চুলগুলো আজ উঁচু করে খোঁপা করা। তূর্যর চোখ সরলো না। চেয়ে রইলো।
একটু পরে দেখা গেলো সায়রা কিছু কাগজ নিয়ে উঠে আসছে তূর্যর কেবিনের দিকে। তূর্য দ্রুত সোজা হয় বসলো৷ এমন করলো যেনো সে এতটা সময় ধরে কাজ ই করে যাচ্ছে। সায়রা দরজার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো”
_মে আই কাম ইন স্যার?
_ইয়েস।
“সায়রা ঢুকলো কেবিনে। তূর্যর দিকে কাগজগুলো এগিয়ে দিলো দেখার জন্য। নতুন কিছু ডিজাইন। আগো এগুলো রুহানিকে দেখাতে হতো শুরুতে। কিন্তু রুহানি কিছুটা অসুস্থ থাকায় ছুটি নিয়েছে। তূর্য ডিজাইনগুলো দেখছে। হুট করেই খেয়াল করলো ডিজাইনের মধ্যে একটা লাইন একটু বাকা হওয়াতে সেটা অন্যরকম লাগছে৷ তূর্য সপটা ঠিক করার জন্য নিজের টেবিলে পেন্সিল খুজলো কিন্তু নেই। সায়রার দিকে চেয়ে বললো”
_পেন্সিল।
“সায়রা একটু চেয়ে থেকে বুঝলো যে পেন্সিল চাচ্ছে। কিন্তু সে তা আনেনি৷ পর মুহুর্তে মনে পরলো তার চুলের খোঁপায় পেন্সিল গুজে রেখেছে। সায়রা সেটা খুলে তূর্যকে দিতেই সায়রার চুলগুলো খুলে গেলো। তূর্য পেন্সিল নেওয়ার জন্য সায়রার দিকে তাকাতেই এই দৃশ্যটুকু তার চোখে পড়লো। চুলগুলো হাটু পর্যন্ত হবে। সায়রা পেন্সিলটা দিয়ে আরেকটা কাজ করে বসলো। যা তূর্য চেয়ে ও এড়িয়ে যেতে পারলো না। সায়রা চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করতে লাগলো। এক মুহুর্তের জন্য তূর্য নিজেকে বেহায়া মনে হলো। এভাবে সে একটা নারীর চুল খোঁপা করা দেখছে৷ কথায় বলে
নারী যখন চুলে খোপা করতে থাকে তখন তার সৌন্দর্য কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। আর সেই সৌন্দর্য শুধু মাএ একজন পুরুষ উপলব্ধি করতে পারে।
তূর্য অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সায়রাকে বললো ”
_তুমি এখন যেতে পারো।
“সায়রা মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো। সায়রা যেতেই তূর্য আগে নিজের ব্লেজারটা খুলে ফেললো। ভেতরে আজ কালো শার্ট পড়ছে। গলার টাই টা ও একটু ঢিলে করে দিলো। এ কোন মসিবতে সে পড়ছে আবার ”
” টিফেন টাইমে আবির এলো সায়রার ডেস্কে। সায়রা জেরিনের সাথে কথা বলছিলো। আবির এসে ই জিজ্ঞেস করলো ”
_সায়রা আমাকে ছাড়া তোমার দিন কেমন গেলো হু ?
“সায়রা একগাল হাসি দিয়ে বললো”
_শান্তিতে।
“আবিরের মুখটা চুপসে গেলো সঙ্গে সঙ্গে। যে উন্মাদনা নিয়ে সে এসেছিলো তা শেষ৷ জেরিন মুখ চেপে হাসছে।
আবির উঠে চলে যেতেই ওরা দুজনে শব্দ করে হেসে ফেললো। সে সময় ই তূর্য আর নাফিস কেবিন থেকে বের হয়েছে৷ ওদের এমন অট্টহাসি শুনে ওদের দিকে তাকাতেই সায়রা আর জেরিন চুপ করে গেলো। তূর্য আর নাফিস বেরিয়ে গেলো।
তূর্য যেতেই জেরিন বলে উঠলো ”
_স্যার সব সময় ওইভাবে তাকায় কেন? মনে হয় এখনি ভস্ম করে দিবে সব৷
“সায়রা ভেঙচি কেটে বললো ”
_নিজেকে বাঘ মনে করে৷ একবার ও হাসতে দেখেছিস ? সব সময় ওমন করে থাকে।
_থাকবে না কেনো ? এতো বড় বিজনেসম্যান। তার মধ্যে নায়কের মতো দেখতে। ওনি কি আর স্টাফদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে।
“সায়রা হুট করেই বলে বসলো”
_ওই রুহানি ম্যাডাম। ওর সাথে ঠিকই হেসে হেসে কথা বলে।
_আমার মনে হয় স্যার রুহানি ম্যাডামকে পছন্দ করে।
_হুম হতে পারে। বাদ দে তো আমাদের কি।
“দুজনে কম হলেই আধা ঘন্টা তূর্যকে নিয়ে চুগলি করে। এই টপিকে কথা বাদ দিয়েছে ”
“তূর্য আর নাফিস এলো রুহানির বাসায়। রুহানি অসুস্থ। দু’দিন হলো অফিসে যাচ্ছে না। তাই তূর্য রুহানির পছন্দ মতো জিনিসপত্র কিনে এসেছে ওকে দেখতে। রুহানি শুয়ে ছিলো। কলিং বেল বাজলো। দরজা খুলতেই তূর্যকে দেখে রুহানি আৎকে উঠলো।
তূর্য এসেছে ”
_তুই ।
“পেছন থেকে নাফিস একটা বড় সাইজের ডালা নিয়ে এসে বললো”
_আমি ও আছি।
“রুহানি ওদের ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো। রুহানি একাই থাকে৷ বাবা মা দেশের বাইরে। রুহানি ও সেখানেই থাকতো হয়তো। কিন্তু নিজের মনকে উপেক্ষা করতে পারেনি। তাই একা পড়ে আছে এ দেশে। একটা মানুষের সঙ্গে সঙ্গে থাকার জন্য।
রুহানি চোখ মুখ শুখিয়ে গেছে। মেড এসে ওদের কফি দিয়ে গেলো। নাফিস বসে গেছে ভিডিও গেম খেলতে।
তূর্য রুহানির ঘরের বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। বিকেলের সময় এখন। রুহানি এসে তূর্যর পাশে দাড়ালো। অভিযোগের সুরে বললো”
_এই দুইদিনে একটা কল ও করিসনি তুই আমাকে।
“তূর্য একটু সময় নিয়ে উওর দিলো ”
_সময় পায়নি। দেখতে যে এলার সেটা তো বললি না।
“রুহানি হেসে বললো”
_উদ্ধার করেছিস আমাকে তুই।
_এখন কেমন আছিস ? ডক্টর কি বললো ?
_ওই এক কথা। মস্তিসকে চাপ দিতে পারবো না। ডিপ্রেশন হতে পারবে না, এসব ই।
_তো তুই কেনো মস্তিসকে চাপ দিস। কিসের এতো ডিপ্রেশন তোর ?
“রুহানি চেয়ে রইলো তূর্যর দিকে। কালো রঙের একটা শার্ট পড়ে আছে। ব্লেজারটা টা নিশ্চয়ই গাড়িতে রেখে এসেছে৷ রুহানির ডিপ্রেশন তো এই মানবকে নিয়ে। যূি হারিয়ে ফেলে। যদি না পায়। এটা ই তে মস্তিসকে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু এটা সে তূর্যকে কি করে বুঝাবে ”
_রাতে খেয়ে যাবি কিন্তু ।
“হুট করেই কথাটা বললো রুহানি। তূর্য কফির মগটা রুহানির হাতে ধরিয়ে দিলো ”
_দাদি অপেক্ষা করবে। আরো কিছুদিন রেস্ট কর। তোর ছুটি বাড়িয়ে দিলাম।
_ছুটি লাগবে না আমার।
_তাহলে একটা বিয়ে দিয়ে দেই। হাসবেন্ড নিয়ে সংসার কর। দেখবি সব চলে গেছে৷ আসছি।
“তূর্য বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। রুহানি এলো এগিয়ে দিতে। নাফিস তখন উঠতে চায় না ভিডিও গেম ছেড়ে ”
_স্যার আর একটু৷ এখনি জিতে যাবো। প্লিজ স্যার।
_তুমি উঠবে নাফিস৷ নাকি রেখে চলে যাবো।
“নাফিস না চাইতে ও উঠে গেলো। রুহানি ওদের বিদায় দিয়ে এসে তূর্যর আনা জিনিসগুলো দেখতে লাগলো। একটা বিশাল ডালা
যাতে ফল থেকে চকলেট সব আছে”
“সন্ধা হয়ে এসেছে। গাড়ি চালাচ্ছে নাফিস। পাশেই তূর্য বসে। নাফিস এর মনটা ভীষণ খারাপ৷ গেমটা আর একটু হলেই জিতে যেতো। টেনে হিচরে নিয়ে আসলো তাকে৷ একটএ পরেই বিশাল জামে পরলো ওরা। অফিস ও ছুটি হয়ে গেছে ততক্ষণে। তূর্য এদিক সেদিক দেখছে। হুট করে চোখ পড়লো রাস্তার আরেশ পাশে।বাস ছাউনির নিচে সায়রা দাড়িয়ে আছে। না সে এই মেয়েকে চিনতে ভুল করবে না।
তূর্য খেয়াল করতে লাগলো। সায়রা হয়তো বাসের জন্য দাড়িয়ে আছে৷ জাম তখনো পুরোপুরি ছাড়েনি। হুট করেই দেখলো একটা ছেলে এসে দাড়ালো সায়রার পাশে হেসে হেসে কথা বলছে। তূর্যর ভ্রু কুচকে এলো৷
এ মেয়েকে যাকে পায় তার সাথেই কথা বলে। চেহারা দেখে তো এমন মনে হয় না। সেদিন লিফটে ও দেখেছপ সায়রাকে ভয় পেতে।
একটু পরে বাস এলো আর তূর্যদের সাইটের জাম ও ক্লিয়ার হলো। আর দেখতে পেলো না তূর্য। তবে ইচ্ছে করলো গাড়ি থেকে নেমে যেয়ে দেখতে ”
“নাফিসকে নিয়ে একটা ভিডিও গেমমের জিনিসপত্র পাওয়া যায় এমন একটা শপে এলো তূর্য। নাফিস তার সাথে শুধু ঘুরে বেড়ায়৷ এ কাজের বেতন ও পায় ভালোই। তাই ঘুরছে। তূর্য বিশাল সাইজের একটা মনিটর আর গেম কনসোল কিনে নিলো। নাফিস ভাবছে এই লেক তার গেম নষ্ট করে এখন নিজে খেলবে বলে কিনছে নাকি এসব৷ মনে মনে ভাবলো কিনুক। মাঝে মাঝে গিয়ে খেলতে পারবে।
সব প্যাকেট করা হলে সেসব গাড়ির ডেকিতে তুলে দিলো দোকানের লোকেরা। ওরা আবার এসে গাড়িতে বসলো।
বাসার সামনে এসে গাড়ি থামতেই তূর্য নামলো। সাথে নাফিস ও৷ গাড়ির চাবিটা তূর্যর দিকে এগিয়ে দিলো নাফিস ”
_তোমার কাছেই রাখো।
_আর গেমের জিনিসপত্র। সেট করবেন না বাসায় ?
“তূর্য একটু এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বললো”
_নাহ, ওটা তোমার বাসায় সেট করো। মাঝে মাঝে গেলে খেলবো।
“নাফিস অবাক হলো। কিছু বলার আগে তূর্য চলে যাচ্ছিলো। কয়েক কদম গিয়ে আবার ফিরে এলো ”
_নাফিস ।
_জি স্যার।
_সায়রা আজমীরকে তোমার কেমন মেয়ে মনে হয় ?
_সায়রা খাতুনকে। অনেক ভালো মেয়ে স্যার। ছোট খাটো একটা কিউট হাসের বাচ্চার মতো।
“তূর্য অবাক হয়প চেয়ে বললো”
_কিহ,হাঁসের বাচ্চা,,,,,,। ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড নাফিস।
“তূর্য দাড়ালো না চলে গেলো বাড়িতে। কাকে কি জিজ্ঞেস করেছে সে। মানুষকে হাসের বাচ্চার সাথে তুলনা করছে ”
চলবে,,,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৯
“মাস শেষে অফিস আর টিউশনি থেকে বেতন পেয়ে সায়রা দেখলো মোটামুটি একটা ভালো অংকের টাকা।
আজ আবার অফিস ও ছুটি। সায়রা ঠিক করলো সন্ধায় বের হবে। একটা বড় শপিং মল থেকে বাবার জন্য কিছু কিনবে। মানুষটা যেমন ই হোক বাবা তো। সায়রা মনে মনে অনেক কিছু ঠিক করলো। এরপর রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো। সাথে জেরিনকে ও ডাকলো।
সে ও শপিং করবে।
একটা রিকশা নিয়ে সায়রা একটা শপিংমলের সামনে গিয়ে নামলো। একটু দাড়াতেই জেরিন ও চলে এলো। এরপর দুজন মিলে ঢুকলো ভেতরে। সায়রা এর আগে কখনো আসেনি এমন শপিংমলে। লোকাল মার্কেটগুলো থেকেই পড়ার জামাগুলো নিতো। জেরিন ঘুরে ঘুরে দেখছে। সায়রা ও দেখছে। কিন্তু এতো এতো
দাম জিনিসপত্রের। সায়রা আর সেসব নিলো না। লোকাল মার্কেট থেকেই নিলো। তবে শুধু বাবার জন্য নয়। সবার জন্য টুকটাক। আর মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরলো। বাড়িতে দিয়ে ঢুকতেই বসার ঘরে দেখলো কোকিলা বেগম। সায়রা কিনে আনা জিনিসপত্র গুলো কোকিলা বেগমের সামনে রেখে দিয়ে বললো”
_এখানে সবার জন্য কিছু জামাকাপড় আর কিছু বাজার আছে৷ আর এই যে কিছু টাকা বাবার ঔষধের জন্য।
“কিছু টাকা কোকিলা বেগমের দিকে এগিয়ে দিতেই তিনি ছো মেরে নিয়ে নিলেন৷ সায়রা কিছু বললো না
ঘরে চলে যেতে নিলেই কোকিলা বেগম বলে উঠলো ”
_আর সংসার এর টাকা কে দিবো। এতে বড় নাকি চাকরি পাইছো দিশা কইলো। আর বেতম এতটুক।
“সায়রার ভারি গায়ে লাগলো কথাটা৷ মানুষ কতো সহজে কতোকিছু ভেবে নেয়। সায়রা উওর দিলো না। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ ড্রেস টা পাল্টে নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো৷ অনেকদিন হলো ফোনটা একটু ভালো করে দেখতে পারে না। সায়রা অনেকদিন পর তার ফেসবুক আইডিতে ঢুকলো
জেরিন অনেকবার বলেছে তোকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি একসেপ্ট করিস৷ সায়রা আর তা করতে পারেনি । আজ করলো। এরপর ঘুরতে লাগলো নিউজফিডে। হুট করেই তূর্যর একটা ছবি ফিডে চলে এলো।।সায়রা তা দেখে অবাক। তূর্যর আইডি। সায়রা কৌতুহল নিয়ে ঢুকলো আইডিতে। পাবলিক করা আইডিটা। খুব বেশি পোস্ট নেই। শুধু কিছু ছবি। তাও অনেকদিন পর পর আপলোড করেছে। তবুও অনেক ফলোয়ার দেখা গেলো। সাথে হাজারের বেশি লাইক ছবিতে। কমেন্ট ও কম না। সায়রা একটা ছবিতে ক্লিক করলো। যেটা বিদেশের কোথাও একটা হবে। সেই ফরমাল লুক। কাঁচের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ছবিটা সুন্দর। কিন্তু কমেন্ট দেখতে গিয়ে সায়রা হতবাক। এতো এতো মেয়ের কমেন্ট। কিন্তু একটা কমেন্ট এ ও রিপ্লাই নেই৷ সায়রার অনেক বাজে একটা অভ্যাস হলো একজনের আইডি থেকে আরেকজনের আইডিতে যাওয়া। সায়রা কমেন্ট বক্স এ রুহানির আইডি পেলো। সেখানে গেলো। রুহানির আইডিতপ যা তা অবস্থা। একচাপা এতো এতো দুঃখের ভিডিও শেয়ার দিয়েছে। সায়রা কিছু সময় দেখে বিরক্ত হয়ে বের হয়ে এলো। এতো সুন্দর মেয়েটার কিসের এতো দুঃখ কে জানে ”
“চলে গেছে আরো কয়েকদিন। একই ভাবে চলছে জীবন৷ সায়রা অফিস এরপর টিউশনি এরপর একটু পড়তে বসা এসব করেই দিন পার করছে৷
রুহানি অফিসে জয়েন করেছে৷ এর মধ্যে কোম্পানির ও কিছু ভালো প্রোফিট হয়েছে৷ প্রতি বছর ই এই অফিস থেকে অফিস ট্যুর এর ব্যবসথা করা হয়। এবার ও তেমন কিছুই হচ্ছে। তূর্য ও চাচ্ছে সামর্থ্য বেগমকে নিয়ে কোথাও যেতে৷
এসব খবর স্টাফদের কানে যেতেই হৈচৈ শুরু হলো। একেকজন নলছে এ জায়গায় গেলে ভালো হতো কেউ কেউ বলছে ওই জায়গায় গেলে ভালো হতো। তূর্যর কানে ও এ খবর গেলো। তূর্য নাফিসকে ডাকলো ”
_সবাই কোথায় যেতে চাচ্ছে নাফিস ?
_স্যার সবার মতামত ভিন্ন। স্টাফ তো এর দুই একজন নয়। অনেক৷ তাই আমার মনে হয় আপনার ই জায়গা ঠিক করা উচিৎ।
_কোথায় গেলে ভালো হয় ? আমি দাদিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি ।
_তাহলে স্যার কক্সবাজার ভালো হবে।
_অনেকবার যাওয়া হয়েছে৷ ভিন্ন কিছু বলো।
_তাহলে সেন্টমার্টিন। একবার ও যাওয়া হয়নি স্যার৷
_তিন দিন লেগে যাবে যেতে আসতে।
_তো কি হয়েছে। যাদের সমস্যা তারা যাবে না।
“তূর্য একটু ভাবলো৷ এরপর অনুমতি দিলো। দুদিন লাগবে সব ঠিক করতে। দু’দিন পরই রওনা হবে৷ এটা অফিস থেকে ফ্রি ট্যুর। তাই অনেকেি যাবে।
একথা শোনার পর থেকে জেরিন সায়রার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে ”
_চল না বোন এমন করিস কেনো। গেলে কি হবে তিনদিনের ই তো ব্যাপার।
_জেরিন, আমার টিউশনি আছে৷ তিনদিন আমি কি করে ছুটি নিবো।
_সেসব আমি জানিনা। তুই যাবি। এটাতে টাকা ও লাগছে না। তূর্য স্যার এর পক্ষ থেকে। সব ফ্রি। এতো বড় সুযোগ মিস করবি ?
“সায়রা কাজ করছিলো মন দিয়ে। শুধু কান দিয়ে জেরিনের কথা শুনছিলো। এবার জেরিনের দিকে চেয়ে বললো”
_হ্যা করবো। আমার মনে এতো আনন্দ নেই রে। তিনদিন বন্ধ দিলে টিউশনি থেকে বের করে দেবে৷ শুধু চাকরির পয়সায় আমার দিন যাবে না।
_তাই বলে তুই যাবি না ?
_নাহ।
“জেরিন মন খারাপ করে বসে রইলো। সায়রা নিজের কাজ করছে। তখনই সেখানে হাজির হলো ”
_কি ব্যাপার আলালের ঘরের দুলালিরা। মন খারাপ কেনো হু?
“জেরিন নাফিসের দিকে চেয়ে মন খারাপ করে বললো”
_সবাই যাবে ট্যুরে। ও যেতে চায়ছে না। ও ছাড়া আমি কার সাথে যাবো।
“নাফিস এমন একটা ভান করলো যেনো সে খুব অবাক হয়েছে। ভান ধরেই বললো”
_কেনো সায়রা খাতুন। যাবেনা কেনো ? কি হয়েছে তোমার ?
“সাশরা এদের জ্বালায় কোথাও বসে ও শান্তি পায় না। নাফিস ওর নাম রটিয়ে দিয়েছে পুরো। কবে জানি নিজেই ভুল করে বলে বসে সায়রা খাতুন। সায়রা নাফিসের দিকে চেয়ে মুখে হাসি এনে বললো”
_আপনি প্লিজ আমার সামনে থেকে যান তো।
“নাফিস ও কম গেলো না। অপমান হজম করতে না পেরে জেরিনের পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো ”
_যাবো না আমি। আগে বলো কেনো যাবে না ?
_ইচ্ছে হয়েছে তাই। আপনি জেরিনকে সঙ্গে করে করে নিয়ে যান।
“নাফিসের মুখটা এই মুহুর্তে লাজুক লাজুক দেখা গেলো। জেরিন সায়রাকে একটা ঘুসি মেরে দিলো। নাফিস একটু হেসে সায়রার দিলে ঝুকে ফিসফিস করে বললো”
_কোলে করে নিয়ে গেলে কেমন হয় ?
“সায়রা ও ফিসফিস করে বললো ”
_মাথায় চড়িয়ে নিয়ে গেলে আরো ভালো হয়।
_এই যাহ,। এটা একটএ বেশি হয়ে যাবে না।
“সায়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তূর্যর কন্ঠ শোনা গেলে। নাফিস এক লাফে উঠে দাড়াতে গিয়ে জেরিনের উপরে পরে যাচ্ছিলো। কোনো রকমে নিজেকে সামনে নিলো আবার ডাক এলো। এবার তূর্য তার কেবিনের সামনে দাড়িয়ে নাফিসের দিকেই চেয়ে আছে। নাফিস যেতে যেতে বললো”
_এই মানুষটা আমার একটা প্রেম ও হতে দিবে না।
“কোনো রকমে গিয়ে তূর্যর সামনে গিয়ে দাড়ালো নাফিস। তূর্য একটু চেয়ে থেকে বললো”
_মিটিং আছে। চলো।
“তূর্যর সাথে নাফুস চলে গেলো। নাফিস যেতেই জেরিন আবার সায়রাকে বোঝাতে শুরু করলো। সে কিছুতেই সায়রাকে ছাড়া যাবে না।
গাড়িতে বসে আছে তূর্য আর নাফিস। নাফিস চুপচাপ। তূর্য ফোনে কথা বলছিলো দাদির সাথে। কল কেটে দিয়ে ফোনটা রেখে নাফিসের দিকে চেয়ে বললো ”
_মেয়েদের সাতে এতো কি গল্প করো নাফিস? আমাকে ও একটু বলো।
“নাফিস হতবাক হয়ে একবার তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”
_মেয়ে, কোথায় মেয়ে? কোন মেয়ে? মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন স্যার। সইবে না সইবে না।
“নাফিস মুখ কাঁদো কাঁদো ভাব করে কথাটা এমনভাবে বললো তূর্য হেসে ফেললো। নাফিসকে কুনয়ই দিয়ে গুতো দিয়ে বললো ”
_হাতেনাতে ধরা পরে আবার অভিনয় করছো। এই শিখলে তুমি নাফিস।
_আসলে স্যার সায়রা খাতুন ট্যুরে যেতে চাচ্ছে না। তাই ওর বান্ধুবির মন খারাপ।একটু বুঝাচ্ছিলাম।
_কেনো যেতে চায়ছে না ? ফ্রি অফার তবু ও।
_সেটা তো বলছে না কেনো যেতে চায়ছে না। শুনলাম টিউশনি আছে এমন বললো,, । না যাওয়ার অজুহাত ও হতে পারে।
“নাফিসের কথা শুনে তূর্যর ভ্রু কুঁচকে এলো। চাকরি করেি এবার টিউশনি। এতো চাপ নিচ্ছে কেনো এই বয়সে মেয়েটা। পড়াশোনা ও তো রানিং। তূর্য একটু অবাক হলো। সাথে এটা ও টের পেলো দিন দিন সায়রা মেয়েটার বিষয়ে বেশ কৌতূহলি হয়ে উঠছে তূর্য । মেয়েটার মধ্যে তার মতোই কিছু একটা আছে যেটা সে কাউকে বলছে না। গোপন করে চলছে”
_স্যার
_হু।
_সায়রা মেয়েটাকে আপনার কাছে অন্যরকম লাগে না।
_হ্যা , ওই যে ওইদিন বললে। হাঁসের বাচ্চার মতো। একেবারে তাই। শুধু প্যাকপ্যাক করে।
“কথাটা শুনেই নাফিস হেসে দিলো। তূর্য ও হাসলো। দ্রুদ্রুত গতিতে গাড়ি চলছে। গাড়ির কাচ বন্ধ। বাইরে হাওয়া রোদ। একটা জায়গায় হুট করেই থামতে হলো। সামনে ঝামেলা হয়েছে একটু। তূর্য সেসবে আগ্রহী নয়। ঢাকার শহরে রোজ রিকশাওয়ালার সাথে এমুক ওমুকের কথা কাটাকাটি হয় এটা ওটা লেগেই থাকে। কিন্তু আজকে তূর্য চেয়ে রইলো। ওই ভীরের মধ্যে একজনের মুখ তূর্যর ভারী চেনা লাগলো। হ্যা ছেলেটাকে তূর্য চেনে। সেদিন একে সে সায়রার সাথে কথা বলতে দেখেছে। ছেলেটাকে দেখে তূর্য আন্দাজ করলো কিছু একটা। ছেলেটা ওই ভীর থেকে বের হয়ে একটা চিপা গলিতে ঢুকে গেলো। যেখানে দিয়ে ভালো মানুষের যাতায়াত কম৷ তূর্য চোখ সরিয়ে নিলো। গাড়ি আবার ছুটতে শুরু করলো। তবে তূর্য সেই ছেলেটার মুখটা মনে রাখলো”
“সন্ধায় অফিস ছুটি হলো। নাফিস আর তূর্য মিটিং শেষ করে আবার অফিসে এসেছিলো। সায়রা আর জেরিন লিফট এর জন্য ওয়েট করছে। জেরিন এখনো সায়রাকে বলে যাচ্ছে ”
_তুই যাবি কিনা বল। আমি কিন্তু কেঁদে ই ফেলবো।
“জেরিনের কথা শেষ হতেই পেছন থেকে একজন বলে উঠলে”
_আহারে বেচারি।
“জেরিন আর সায়রা এক সঙ্গে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো তূর্য আর নাফিস দাঁড়িয়ে। তূর্য বরাবরের মতো সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে সামনের দিকে চেয়ে। সায়রা তূর্যকে অনেক সময় খেয়াল করেছে। তূর্য মেয়েদের দিকে খুব কম তাকায়। সব সময় কেমন সোজা হয় দাড়ায়। চোখের দৃষ্টি ও সামনের দিকে থাকে। তূর্যকে না চাইতেও সায়রার কাছে জেন্টলম্যান মনে হয়। সায়রা আবার ঘুরে সামনে তাকালো। জেরিন নাফিসের দিকে চেয়ে চোখ রাঙালো”
“তূর্য বাড়ি ফিরেই সামর্থ্য বেগমের ঘরে গেলেন। তখন তিনি সিরিয়াল দেখছিলেন। সিরিয়ালের মধ্যে বউ শাশুড়ীর তুমুলযুদ্ধ চলছে। তূর্যর হাতে ব্লেজার ঝুলানো। সামর্থ্য বেগম তূর্যকে দেখে হাসলো। কাছে এসে বসতে বললো। তূর্য গিয়ে হাটু গেড়ে বসলো ”
_এসব কি দেখো বলো তো বুড়ি। এই বয়সে এসব দেখে কেউ।
_তোর বউ এলে তোর বউয়ের সাথে এমন যুদ্ধ করতে হবে না তাই শিখছি এখন থেকেই।
_এরপর আমার বউ তোমাকে রাতের আধারে গলা টিপে ধরলে কেমন হবে বুড়ি। কে ছাড়াবে তোমাকে ?
_কেনো রে। শাঁকচুন্নি বিয়ে করবি নাকি তুই।
“তূর্য হেঁসে ফেললো । সঙ্গে সামর্থ্য বেগম ও ”
_বিয়ে করলে শাঁকচুন্নির মতো কাউকেই করবো। তোমার এতো সুখ সয্য হচ্ছে না আমার বুড়ি।
_তাও একটা বিয়ে কর তুই। এতো সুখ আমার ও আর ভালোলাগছে না। তোকে কারো সাথে দেখলে মনটা একটু শান্ত হতো।
_হয়েছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। এক সাথে খাবো।
_আচ্ছা যা।
“তূর্য চলে এলো নিজের ঘরে।সারাদিন পর এ ঘরটায় সে ঢুকে সে। এই এতো এতো বিলাসিতার জীবন। এখনো ছুটে চলেছে সে। অথচ কোথাও তার কেউ নেই। দাদি আর নাফিস ছাড়া তার জীবনে অতো কাছের কেউ নেই। কেউ হতে চায়নি বিষয়টা এমন নয়৷ যারা কাছের হতে চেয়েছে তারা লোভে পড়ে। তবে ওই যে কথায় আছে মানুষ বেশিদিন অভিনয় করতে পারে না।
এমন ই হয়েছে। তূর্য আগে ওয়াসরুমে ঢুকলো। লম্বা সময় নিয়ে সাওয়ার নিলো। ঝরনার নিচে দাড়ালে তূর্যর মনে হয় সারাদিনের সব ক্লান্তি পানির সাথে ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে ”
চলবে,,,,