#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১২
“সন্ধায় রিসোর্ট এর সামনে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করা হয়। যেটা রিসোর্ট এর লোকেরা ই করে দেবে। তূর্য আর নাফিস তাদের সব বলে দিয়ে রিসোর্ট এর সামনে এলো। যেখানে সবাই গোল হয়ে বসে আছে৷ কেউ দাড়িয়ে আছে। মাঝখানে আগুন জ্বালানো হয়েছে। কেউ কেউ গুনগুন করে গান গাইছে। সামর্থ্য বেগম এর পাশে সায়রা বসেছে। তার পাশে জেরিন। এভাবে গোল করে বসেছে সবাই। রুহানি আরেক পাশে বসে আছে একা। একটা ছেলে গিটার নিয়ে গান গাইছে। তূর্য আর নাফিস এসে বসলো এক কোনায়। রুহানি উঠে গিয়ে তূর্যর পাশে বসে পড়লো।সবাই আস্তে আস্তে হাত তালি দিচ্ছে গানের সাথে তাল মেলাতে। মাঝে দাড়িয়ে একজন খুবই সুন্দর কন্ঠে গাইছে ”
“”” দুঃখটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে,,
“” এক পৃথিবী ভালোবাসা রয়েছে ঘিরে,,
“”মনটা যেনো আজ পাখির ডানা। হারিয়ে যেতে
“”তাই নেই তো মানা,,, চুপি চুপি চুপি সপ্ন ডাকে হাত
বাড়িয়ে,,, মন চায় মন চায় যেখানে চোখ যায়
সেখানে যাবো হারিয়ে “”””
“গানটা শুনতে শুনতে সায়রা ভাবলো আগের কথা। এই গানটা তার ভীষণ প্রিয়। হুমায়ূন আহমেদ এর পরিচালিত দারুচিনির দ্বীপ ছবির এই গানটা শুনলেই সায়রার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়। সেখানেও এই সেন্টমার্টিন ঘুরতে আসা নিয়ে একদল ছেলে মেয়ে কতো কিছুই না করলো। সেই সেন্টমার্টিন দাড়িয়ে এই গান শুনার অনুভূতি ভিন্ন ।
সায়রার এই ভাবনার মাঝে অরেকপাশ থেকে কেউ তার দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলো তা হয়তো সে খেয়াল ই করলো না৷
কেউ গান গাইলো। কেউ একটু গানের তালে নাচলো।
এভাবেই রাতের সময়টা পার হলো। রাতের খাবার খেয়ে এবার যে যার যার মতো চলে গেলো। কেউ রুমে তো কেউ সমুদ্রের পারে। কেউ কিছু কিনতে দোকানে”
“রাত বারোটা৷ তূর্য রুম থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে টখন তেমন কেউ নেই। দোকানগুলো খোলা আছে। তূর্য রিসোর্ট থেকে বের হতেই দেখলো সমুদ্রর পারে ওই সাদা ড্রেস পরিহিত কেউ দাড়িয়ে আছে একা একা৷ কিছু হয়তো খুজছে। এটা যে সায়রা তূর্য চিনতে ভুল করলো না৷ এতো রাতে এই মেয়ে এখানে একা কি করছে ? তূর্য এগিয়ে গেলো। সায়রা ফোনের আলোতে
বালু থেকে কিছু তুলছে। তূর্য পেছনে যেয়ে দাড়িয়ে বললো ”
_এই মেয়ে,,,,।
“সায়রা ভয়ে লাফ দিয়ে উঠলো। পরপর তূর্যকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মনে হয় একটু শান্তি পেলো ”
_ওহ আপনি। আমি আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
“তূর্য ভ্রু কুঁচকে বললো ”
_কেনো অন্য কারো আসার কথা ছিলো নাকি ?
_এমা না না। অন্য কে আসবে।
_কি করছিলে এতো রাতে এখানে ?
“সায়রা হাসলো। হাতের মুঠোয় থাকা ছোট ছোট ঝিনুকগুলো তূর্যর সামনে এগিয়ে দেখালো ”
_এগুলো তুলছিলাম।
_কেনো ?
_স্মৃতি নিয়ে যাবো। এককালে আমার বাচ্চাদের দেখিয়ে বলবো তোদের মা সেন্টমার্টিন ঘুরেছে। তাই।
“তূর্য অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। বাচ্চাদের দেখাবে বলে এতো রাতে এসে ঝিনুক তুলছে। তূর্য এগিয়ে এগিয়ে এসে বললো ”
_কোথায় ঝিনুক পাচ্ছো দেখি।
“সায়রা তূর্যকে দেখাতে লাগলো। তূর্য নিজের ফোনের
আলো ও জ্বালালো। প্রতিটা ঢেউ এসে যখন চলে চায় তখন সাদা সাদা ঝিনুকগুলো দেখা যায়। তূর্য লাইট ধরলো সায়রা আরো অনেকগুলো ঝিনুক তুললো। তূর্য জীবনে এসব ও করবে সে ভাবতে পারছে না। করিম এই যে সায়রা ঝিনুক তোলার পর কতো খুশি হয়ে হাসছে৷ এটা তূর্যকে মুগ্ধ করছে। সে চায়লে ও এসব উপেক্ষা করতে পারছে না। একটু পরে তূর্য বললো ”
_হয়েছে অনেকগুলো নিয়েছো। সব তুমি নিয়ে নিলে অন্য মানুষ কি নিবে। উঠে এসো।
“সায়রা পানি দিয়ে ঝিনুকগুলো পরিষ্কার করে উঠে এলো। তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”
_আপনি তো ভারি হিংসুটে স্যার৷ আমি কি সব নিয়েছি। মাএ এই কয়টা নিয়েছি৷
“তূর্য চেয়ে দেখলো এক হাত ভর্তি ঝিনুক। মুখ চেপে হাসলো ”
_অনেক কম নিয়ে ফেলেছো। যাও এবার রুমে যাও।
“সায়রা যেতে নিয়ে ও আবার ফিরে এলো। তূর্য দাড়িয়ে আছে। সায়রা এসে তূর্যর দিকে কয়েকটা ঝিনুক বাড়িয়ে দিলো। তূর্য কোনো প্রশ্ন না করেই সেগুলো হাতে নিলো। সায়রা হেসে বললো ”
_আপনি এই কয়টা রেখে দিন স্মৃতি হিসেবে। আপনার বাচ্চাদের দেখাতে পারবেন। আসি।
“সায়রা চলে গেলো। তূর্য ঝিনুকগুলোর দিকে চেয়ে রইলো। এই মেয়ে তাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে তুলছে।
তূর্য জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে ঝিনুকগুলো টাউজারের পকেটে রেখে দিলো। তূর্য কখনো বিয়ে নিয়েই ভাবেনি। সে বিয়ে করবে তার বাচ্চা হবে। তাদের আবার এই ঝিনুক দেখাবে স্মৃতি হিসেবে। এটা কি কখনো হবে ? হয়তো হতে পারে।
তূর্য দাড়িয়ে রইলো সেখানেই। সমুদ্রর ঢেউয়ের গর্জন। শান্ত পরিবেশ। কিছু মুহুর্ত। তূর্য উপভোগ করলো ”
“পরেরদিন সকাল আটটায় রিসোর্ট থেকে নাস্তা খেয়ে সবাই বের হলো। আর একদিন তারা এখানে আছে।
রকিব একট বড়সড় বোট ভাড়া করেছে। এখান থেকে ছেঁড়াদ্বীপে যাবে। অনেকে আগে ই বোটে উঠে গেছে।
সায়রা আর জেরিন ও উঠে গেছে আগে আগেই সায়রা তো এমন সৌন্দর্য দেখেই পাগল হয়ে যাচ্ছে। একটু পরে জেরিন সায়রাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে তাকাতে ইশারা করলো। সায়রা চেয়ে দেখলো তূর্য আসছে সাথে রুহানি ও। তূর্য আজ আকাশি রঙের শার্ট সাথে লাইট গ্রে রঙের পেন্ট পড়েছে। চোখে কালো সানগ্লাস। আর রুহানি নীল রঙের টি শার্ট সাথে জিন্স পড়ে আসছে
তূর্যরা কাছে আসতেই সায়রা চোখ সরিয়ে নিলো। জেরিন রুহানিকে দেকে নাক কুঁচকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।
তূর্য বোটে উঠার পরে রুহানি হাত বাড়িয়ে দিলো যাতে তূর্য ওকে হাত ধরে উঠায়। বোটের সবাই চেয়ে আছে৷ নাফিস এক কোনায় দাড়িয়ে দাত কিড়মিড় করছে। তূর্য হুট করেই সামনে হেঁটে চলে গিয়ে নাফিসের পাশে গিয়ে দাড়ালো। ধরলো না রুহানিকে।
এই নিয়ে অনেকে মুখ চেপে হাসলো। জেরিন মহা খুশি হলো বিড়বিড় করে বললো”
_একদম ঠিক হয়েছে। সব সময় ঢং করে ।
_এরুম বলিস না। ওনি লজ্জা পেলেন তো বিষয়টাতে।
(বললো সায়রা)
_তুই চুপ কর তো। তোর শুধু সবার জন্য দরদ। দেখিস না তূর্য স্যার ও মনে হয় এই মেয়ের উপর বিরক্ত।
“রুহানি একাই উঠেছে বোটে। সামর্থ্য বেগম যাবেন মা। তিনি রিসোর্ট এ রয়েছে। রুহানি উঠে গিয়ে আবার তূর্যর পাশে গিয়ে দাড়ালো। বোট ছাড়লো তখন নয়টা বাজে। ছেঁড়াদ্বীপে যেতে আধ ঘন্টার মতো লাগবে।
সায়রা বোটের এক কোনায় বসে পরিবেশ দেখতে লাগলো। নীল পানি একেবারে পরিষ্কার। তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ওরা।
আধ ঘন্টা তূর্য শুধু বসে ফোন দেখলো এক সাইডে দাড়িয়ে । এরপর বোট এসপ থামলো ছেঁড়াদ্বীপে । সবাই সবার মতো নামলো। এটা খুবই ছোট্ট একটা দ্বীপ
এখানে মানুষজন নেই। শুধু গাছপালা বিভিন্ন রকমের।
তবে এখানে আসার একটা ই সমস্যা জোয়ার ভাটা। জোয়ার এর সময় এখানে অনেক পানি হয় তাই ভাটা থাকতে থাকতে ফিরে যেতে হয়৷ এখানে ওরা এসেছে দুই ঘন্টার জন্য।
দ্বীপে নেমেই দেখা গেলো অনেক পাথর পড়ে আছে। সেগুলো দিয়ে হেঁটে সবাই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে রুহানি একটু পর পর চেচাচ্ছে। তূর্য বিরক্ত হয়ে রকিবকে পাঠালো।
একটু সামনে আসতেই দেখা গেলো বিশাল এক ঝাউগাছ এর বাগান।
জেরিন ভিডিও করছে।।সায়রা জেরিনের হাত ছেড়ে দিয়ে একাই ঘুরতে লাগলো। বাংলাদেশের মধ্যে এতো সুন্দর জায়গা। ইস না এলে ভারি আফসোস হতো পড়ে ”
“তূর্য আর নাফিস হাঁটছে এক সাথে। নাফিস ও ভিডিও করছে। তূর্য নিজেও কিছু ছবি তুলছে জায়গাটার। সাথে ভিডিও করছে। একটু সামনে যেতেই তূর্যর চোখে পড়লো সায়রা। একা একা পানির মধ্যে পা ভিজিয়ে হপটে যাচ্ছে। এ পাথর থেকে ওই পাথর লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে। এই মেয়েটাকে তূর্য দেখলো একটা ছবি না তুলতে। না হাতে কোনো ফোন নিয়ে ঘরতে। সে তার মতো ঘুরছে। তূর্য এগিয়ে গেলো সায়রার দিকে বাকি সবাই আরেকদিকে। তূর্য এসে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কিছু সময় দেখলো সায়রাকে। দুনিয়ার কোনো দিকে তার হুস নেই৷ সে তার মতো। একটা মুহুর্তে তূর্য বলে উঠলো ”
_পা ভাঙার অনেক শখ নাকি তোমার ?
“সায়রা চমকে গিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো তূর্য দাড়িয়ে আছে।সায়রা থেমে গেলো। আস্তে করে বললো ”
_নাহ্। পা ভাঙার শখ কেন হবে।
_তাহলে এই শেওলা ধরে যাওয়া পাথরের উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছো কোন দুঃখে।
“সায়রা হেসে বললো ”
_দুঃখে নয় স্যার সুখে। পা ভাঙা যদি নসিবে থাকে। তাহলে ভাঙবে।
_আচ্ছা তাই। তাহলে আর কি লাফাও।
“সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে রইলো। কেউ নেই এই পাশে। সবাই অন্যদিকে চলে গেছে ”
_আচ্ছা।
“সায়রা আবার নিজের মতো ঘুরতে লাগলো। তূর্যর হাঁটতে ইচ্ছে করছে না। তবুও সে আরেকদিকে চলে গেলো।
রুহানি অনেকটা সময় ধরে তূর্যকে খুজে এরপর দেকলো সে ঝাউ বাগানের ওইদিকে বালুর মধ্যে বসে আছে। রুহানি এসে ওর পাশে বসে পড়লো ”
_কিরে কই ছিলি তুই ?
_এইটুকু দ্বীপের বাইরে আর যাবো কই।
_তোর কি মন খারাপ তূর্য ?
“তূর্য রুহানির দিকে তাকালো। হেসে বললো ”
_তুই চলে এলি কেনো ? যা গিয়ে ঘুর। যাওয়ার সময় হয়ে গেলো তো।
_তোর পাশে বসলেই তুই এমন করিস।
_ওসিডি আছে আমার। বুঝিস ই তো।
“রুহানি উঠে চলে গেলো। আর একটু পরেই তাদের যাওয়ার সময়। অলরেডি জোয়ারের পানি আসতে শুরু করেছে। ঝাউ বাগান ছাড়া সব পানিতে তলিয়ে যায় । বোট এলো ঠিক বারোটায়। সবাইকে বোটে উঠে যেতে বলা হলো। ততক্ষণে পানি অনেকটা চলে এসেছে। সবাই যখন উঠলো তখন ই জেরিন চেচিয়ে বলে উঠলো”
_সায়রা কোথায়। বোট ছাড়বেন না প্লিজ। সায়রা উঠেনি। ও কোথায়?
“সবাই জেরিনের দিকে তাকালো। তূর্যর কেনো যেনো এ কথাটা কানে যেতেই অজানা কারনে বুকটা কেঁপে উঠল। সবাই আছে। ওই মেয়ে গেলো কোথায়?
নাফিস তূর্যর দিকে তাকালো। ইশারায় বললো আসলেই নেই সায়রা বোটে। তূর্য নেমে যাবে বোট থেকে এমন সময় রুহানি এসে বাঁধা দিলো। সামনে এসে দাড়ালো ”
_তুই কোথায় যাচ্ছিস তূর্য। পানি বাড়ছে। তুই যাবি না। অন্য কেউ যাক,,,।
“তূর্য রুহানিকে সরিয়ে দিতে চায়লো। রুহানি তবুও বাঁধা দিচ্ছে দেকে তূর্য চেচিয়ে বলপ উঠলো ”
_আমি ই যাবো। ওকে আমি কারো হাতে ছাড়তে পারবো না। কারো হাতে না।
“তূর্য ওই পানিতেই নেমে গেলো। বোট এখানে বেশি সময় রাখতে পারবে না। তূর্যর হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ভিজে গেছে। দুপুরের সময় এখন। রুহানি করুন চোখে চেয়ে আছে। কানে শুধু একটা কথা ই বাজছে। ওকে আমি অন্য কারো হাতে ছাড়তে পারবো না”
“তূর্য পানির মধ্যে ই এগিয়ে গেলো যে দিকে সে সায়রাকে দেখেছিলো। কিন্তু সায়রার দেখা মিললো না। আরেক সাইডে গেলো সেখানে ও কোথাও দেখা গেলো না। তূর্যর রাগ বাড়ছে। কোথায় খুজবে এখন ওই মেয়েকে সে। যদি হারিয়ে যায়। তূর্য ছুটলো ঝাউবাগানের দিকে। এটাই শেষ ভরসা। ওখানে পানি নেই৷ তূর্য দৌড়ে ঢুকলো ঝাউবাগানে। এদিক ওদিক ছুটলো। চিৎকার করে ডাকতে যাবে তখনই দেখলো একটা গাছের নিচে সায়রা বসে পায়ে কি যেনো করছে। তূর্যর এই মুহুর্তে এতো রাগ হলো সে হেঁটে গিয়ে
সামনে দাড়াতেই সায়রা মুখ তুলে তাকালো তূর্যর দিকে। তূর্য রাগ সামলাতে পারলো না সঙ্গে সঙ্গে একটা চর বসিয়ে দিলো সায়রার গালে। সায়রা গাল চেপে ধরে তাকাতে যাবে তূর্যর দিকে তূর্য হুংকার দিয়ে বললো ”
_এই মেয়ে কোনো কনমসেন্স নেই তোমার। জোয়ার চলে এসেছে। চারদিকে পানি বাড়ছে। এখানে বসে বসে ঢং করছো। মরার যখন এতোই শখ একা গিয়ে মরতে পারো না। যদি রেখে চলে যেতাম। কি করতে এই দ্বীপে বসে। কে আসতো তোমাকে বাঁচাতে।
“সায়রা গালে হাত দিয়ে তূর্যর দিকে চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো ”
_চলে যেতেন। আসতে কে বলেছে।
“তূর্যর রাগ আরো বাড়লো। এই মেয়ের জন্য সে এই পানির মধ্যে এখানে এসেছে। আর এই মেয়ে তাকে কি বলছে ”
_আরেকটা চর খাওয়ার আগে উঠো। তোমার ঢং দেখার ইচ্ছে নেই আমার।
“সায়রা উঠছে না দেখে তূর্য ওকে টেনে তুলতে গেলেই সায়রা চিৎকার করে উঠলো ”
_আমার পা। আমি দাড়াতে পারছি না।
“তূর্য থেমে গেলো। সায়রা পা চেপে বসে কাঁদছে। তূর্য বুঝলো ওর পায়ে কিছু হয়েছে। ও দাড়াতে পারছে না। তূর্য সায়রার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। আরেকদিকে পানি বাড়ছে ”
_কি হয়েছে পায়ে ?
_পড়ে গিয়েছি।
“তূর্যর এই মুহুর্তে মনে হলো নিজের মাথা নিজেই ইট দিয়ে বাড়ি দিতে। সায়রার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বললো ”
_এখন কি বলবে নসিবে ছিলো। বলেছিলাম আমি। বেশি লাফিও না। এখন উঠো কষ্ট করে। বোট ছেড়ে দিবে। তোমার জন্য এতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে আমাকে।
“সায়রার ভারি কান্না পাচ্ছে। আসলেই তো তূর্য বলেছিলো। সে শুনেনি। এখন আবার তার জন্য ঝামেলা। এই দ্বীপে আটকা পড়ছে কতোগুলো মানুষ।
তূর্য সায়রার মুখের দিকে চেয়ে থেকে বললো ”
_কষ্ট করে উঠো। যেতে হবে।
“সায়রা চেষ্টা করে ও উঠতে পারলো না। তূর্য হুট করেই সায়রার জুতা জোড়া এক হাতে তুলে সায়রাকে ও কোলে তুলে নিলো। সায়রা হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো
।তূর্যর শার্ট চেপে ধরে রইলো। বিড়বিড় করে বললো”
_স্যার আমি,,,।
_চর খেতে না চাইলে চুপ করে থাকো। ননসেন্স একটা।
“বোট এখনো দাঁড়িয়ে আছে। পানিও কিছুটা বেড়েছে। রুহানি চেয়ে আছে কখন তূর্যকে আসতে দেখবে সে আশায়। বোটের সবাই ই চেয়ে আছে। তখনই চোখে পড়লো তূর্যকে। রুহানি খশি হওয়ার আগে ওর বুকটা কেঁপে উঠল। তূর্যর কোলে সায়রা।
বেটের বাকি সবাই হা করে চেয়ে আছে এই দৃশ্য দেখে।
তাদের বস সাদমান শাহারিয়ারকে এভাবে দেখছে।
বোটের কাছে আসলো হাটু অব্দি পানি পেরিয়ে। জেরিন দৌড়ে গিয়ে ধরলো সায়রাকে। তূর্য বোটে উঠেই আগে বললো ”
_ওর পা মচকে গেছে হয়তো। হাঁটতে পারছে না। বসিয়ে দাও এক জায়গায় ।
“জেরিন সায়রাকে নিয়ে বসিয়ে দিলো। ওর পা অনেকটা ফুলে গেছে ।
নাফিস তূর্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ”
_ভিজে গেছেন তো স্যার।
_হু৷ কি করবো এখন। তোমার পেন্ট টা খুলে দাও পরে নেই।
“নাফিস জিহবায় কামড় দিয়ে বললো ”
_তাহলে আমি কি আনড্রেস থাকবো স্যার ?
_সেটা আমি কি জানি।
“নাফিস আরো একটু এগিয়ে গিয়ে তূর্যর কানে ফিসফিস করে বললো ”
_সায়রা খাতুনকে কোলে নেওয়াতে রুহানি খাতুনের মাথায় আগুন জ্বলে উঠেছে স্যার। আবহাওয়া ভালো ঠেকছে না কিন্তু ।
“তূর্য তাকালো রুহানির দিকে। রুহানির চোখ সায়রার দিকে। এমন ভাবে চেয়ে আছে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে। তূর্যর এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। এসব অহেতুক লাগে তার কাছে ”
” সেন্টমার্টিন পৌঁছে বাঁধলো আরেক বিপওি। বোট থেমে নামবে কি করে সায়রা। পায়ের অবস্থা ও খারাপ।
এখানে এমন কোনে হসপিটাল ও নেই৷ সবাই বোট থেকে নেমে যাওয়ার পর জেরিন সায়রাকে রুমে নিয়ে যেতে চায়লো। সায়রা জেরিনকে ধরে দাড়ালো কষ্ট করে। বোটের মধ্যে এখন রুহানি, নাফিস,সায়রা,তূর্য ই আছে।তূর্য এগিয়ে গেলো সায়রার দিকে। জেরিনকে বসাতে বললো। নিজেও ও হাঁটু গেড়ে বসলো। এসব কি হচ্ছে কেউ বুঝতে পারছে না। এমনকি তূর্য নিজে ও না
সায়রা তূর্যকে এভাবে বসতে দেখে বললো”
_কি করছেন স্যার?
_চুপ থাকবে। তেমার জন্য আর ঝামেলা পহাতে পারবো না আমি।
“তূর্য সায়রার পা চেপে ধরে একটা মোচড় দিলো। সঙ্গে সঙ্গে সায়রা চোখ বন্ধ করে ফেললো। এতো ব্যথা লাগলো যা বলার মতো নয়।তূর্য বললো ”
_এরপর ও ব্যথা না কমলে চুপ করে রিসোর্ট এ বসে থাকবে। অসভ্য মেয়ে একটা।
“কথাটা বলে তূর্য উঠে চলে গেলো। কারো দিকে তাকালো না। রুহানি ও রাগে গজগজ করতে করতে নেমে গেলো। সায়রা পা নাড়িয়ে দেখলো। ব্যথা হচ্ছে। তবে এখন পা নাড়াতে পারছে সে ”
“রিসোর্ট এ গিয়ে সায়রা বিছানায় শুয়ে পড়লো। জেরিন একটা ব্যথার ঔষধ খাইয়ে দিলো। সায়রা মনে মনে ভাবলো সে আজ আসলেই পাকনামি করে ফেলেছে। তাই বলে কি তূর্য তাকে এভাবে একটা চর মারবে। আগে কথা না শুনে গায়ে হাত তুললো। এসব ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমিয়ে পড়লো।
দুপুরে খাওয়ার সময় ও সায়রাকে দেখা গেলো না।
নাফিস এসে খবর নিলো ”
“রুহানি নিজের রুমে এসে হাতের কাছে যা পেলো তাি ছুড়ে ফেলে দিলো। ওই মেয়েকে তূর্য কোলে তুলেছে। অথচ রুহানি পাশে বসতে পারে না। তূর্য তার উপর অবিচার করছে। এটা সে কিছুতেই মামতে পারছে না। সায়রার উপর ক্ষোভে সে জ্বলে যাচ্ছে। হাতের কাছে পেলে ওই মেয়েকে সায়েস্তা করেই ছাড়বে ”
“সারা বিকেলে ও সায়রার দেখা পেলো না তূর্য। অথচ সামর্থ্য বেগমের রুমে যাওয়ার পর ও ওই মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছে। একটু পড়ে সন্ধা নামলো। আজকের রাত শেষ হলে কাল সকালে তারা ঢাকা ফিরবে। তূর্য একটা চেয়ারে বসে আছে। একা৷ হুট করেই নাফিস এলো। পাশে বসলো ”
_খবর আছে একটা স্যার ?
_আবার কি করেছে ওই মেয়ে ?
“নাফিস মুখ চেপে হেঁসে বললো ”
_মেয়ে করেনি স্যার। দাদি করেছে৷ সায়রা খাতুনকে সারাদিন দেখতে না পেয়ে নিজেই সায়রা খাতুনের রুমে গেছে দেখা করতে।
“তূর্য চমকে তাকালো নাফিসের দিকে। তার দাদি তার মতো মানুষ গুনে গুনে মিশে। এই মেয়ে কি করেছে কে জানে ”
_তুমি ভাবতে পারছো নাফিস, ওই বিচ্ছু মেয়েটা কি করছে। দাদিকে পর্যন্ত নিজের ভক্ত বানিয়ে ছেড়েছে।
“নাফিস আফসোস করে বললো ”
_আমরা সবাই হয়ে গেছি স্যার। শুধু আপনি ই হলেন না।
_চুপ থাকো নাফিস।
“নাফিস একটু চুপ রইলো। একটু চুপ থেকে আবার বললো ”
_ওই দ্বীপে তখন কি হয়েছিল স্যার যদি একটু বলতেন?
_তোমার কি মনে হয় ? ওখানে কিছু হওয়ার ছিলো।
“নাফিস মনে মনে বললো। আর কি হওয়ার থাকবে যা হলো সবাই তো তা দেখেছেই। কিন্তু মুখে বললো”
_বলুন না স্যার কি হলো ?
_ওই মেয়ের গালে একটা চর মেরেছিলাম। তুমি আরেকটা প্রশ্ন করলে তোমাকে ও মারবো।
“নাফিস গালে হাত দিয়ে চুপ করে উঠে চলে গেলো। চর খাওয়ার শখ তার নেই আপাতত।
তূর্য একাই বসে ছিলো কতোক্ষন। দূরে কিছু ঝিনুকের দোকান দেখা যাচ্ছে। যেখানো ঝিনুক দিয়ে বানানো অনেক কিছু বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই কিনছে সেসব। তূর্য চেয়ে রইলো সে দিকে ”
“সায়রার পায়ে ব্যাথা অনেকটা ই কমেছে। সামর্থ্য বেগম এসে অনেকক্ষন থেকে গেছে সায়রার কাছে।
সায়রা এবার বিছানা ছাড়লো। দুপুরে খাওয়া হয়নি তাই রেডি হয়ে রাতের খাবারে জন্য রিসোর্ট এর খাবারের জায়গায় আসতেই দেখলো অনেকে বসে খাচ্ছে। সায়রা আর জেরিন বসলো। তখনই সেখান দিয়ে তূর্যকে যেতে দেখলো। খাওয়া দাওয়া করে জেরিন আর সায়রা বের হলো একটু। কাল ই চলে যাবে৷ বাড়ির জন্য সায়রা তেমন কিছু নিলো না কারন এখানে তেমন কিছু ই নেই। কয়েকটা ঝিনুকের গয়না কিনে নিলো। এরপর আবার রিসোর্ট এ ফিরে আসতেই সামনা সামনি হলো রুহানির। রুহানি সায়রাক দেখেই বললো”
_বাহ্। এখন তো দেখছি খুব হাঁটতে পারছো। তখন বুঝি ইচ্ছে করো ভান করে ছিলে।
_এসব আপনি কি বলছেন ম্যাডাম।
“রুহানি এগিয়ে এসে বললো”
_চুপ থাকো। তোমাদের মতো মেয়েরা পারেই এসব। ওয়েট ওই তো তূর্য আসছে। এখনি তোমার আসল চেহারা আমি বের করবো।
“তূর্য আসছিলো রুমের দিকে৷ নাফিস ও সাথে। সায়রা ঠায় দাড়িয়ে রইলো। চোখ দিয়ে পানি পরছে।অবুঝ তো নয় সে। রুহানি তূর্যকে টেনে নিয়ে এলো ”
_দেখ দেখ। অভিনেত্রী কে দেখ। একে না পাগল পাগল হয়ে বাঁচাতে গিয়েছিলি। পায়ের ব্যথায় মেয়েটা তোর কোলে চরে বসলো। এখন দেখ হেঁটে বেড়াচ্ছে তাও ওই পা দিয়ে ই।
“তূর্য দাড়িয়ে রইলো। সায়রা পারছে না মাটির সাথে মিশে যেতে। রুহানি কি মিন করে কথা বলছে তা সবার বোঝা হয়ে গেছে। তার মধ্যে সয়ং তূর্য দাড়িয়ে। সে কি পারবে আর তূর্যর মুখোমুখি হতে। রুহানির মতো তূর্য ও তো বিশ্বাস করবে সায়রা ইচ্ছে করে এমন করেছে।
রুহানি থামলো না সে আবার বললো ”
_তুই কিছু বলবি না। এখনো চুপ করে থাকবি। এসব মেয়েরা অভিনয় করে ফাঁদে ফেলে। তুই এদের চাল বুঝবি না তূর্য ।
“তূর্য কিছু বললো না। হেটে নিজের ঘরে চলে গেলো।রুহানি ও গেলো সঙ্গে। সায়রার তাকানোর সাহস হলো না তূর্যর দিকে৷ ওরা যেতেই সায়রা দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। জেরিন ও পিছু পিছু গেলো। দাড়িয়ে রইলো শুধু নাফিস৷ হয়তো কিছু জিনিস সে শুনবে বা জানবে তাই। সে অনেকটা সময় তূর্যর রুমের সামনেই দাঁড়িয়ে রইলো৷ কয়েক মিনিট বাদে রুহানি বের হয়ে এলো। রুহানির মুখ দেখে নাফিস কিছু আন্দাজ করলো। সে যা ভেবেছে তার উল্টো কিছু ই ঘটেছে তূর্যর রুমে ”
চলবে,,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#১৩
“পরেরদিন সকালে সবাই রেডি হয়ে বের হলো। ফেরার পালা এবার। সায়রা রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে৷ সামনের সমুদ্রর দিকে চেয়ে৷ কাল ওখান থেকে চলে আসার পর সায়রা আর ঘুমাতে পারেনি। সায়রার কাছে তার আত্মসম্মান সব চেয়ে বড়। অথচ তাকে কিভাবে নিচে নামানো হালো। সায়রার ভাবনার মাঝেই
জেরিন ডাকলো ”
_সায়রা। চল বের হবে এখন সবাই।
_হু। আসছি।
“সায়রা আরো একবার চেয়ে দেখলো। এরপর রুমে এসে ব্যাগটা নিয়ে বের হলো। রুমের চাবি রকিবের কাছে জমা দিতে গেছে জেরিন। সায়রা হেঁটে বের হতে যাবে তখন ই সামনে পড়লো তূর্য। সে ও রুমের দরজা বন্ধ করে নের হচ্ছে। সায়রা তূর্যকে দেখেই মাথা নিচু করে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো বাইরে। তূর্য ও বের হলো পিছু পিছু। সব কাজ শেষ করে সবাই হেটেই পৌছালো চেয়ারম্যান ঘাটে। সেখান থেকে ফেরিতে করে টেকনাফ। সায়রা এর মাঝে একবার ও তূর্যর আশেপাশে ও পড়েনি।
লম্বা একটা জার্নি শেষে করে টেকনাফ থেকে বাসে উঠলো ওরা দুপুর দুইটায়। তূর্য এবার নাফিসের পাশে গিয়ে বসলো। সায়রা একেবারে আলাদা আলাদা বাসে উঠেছে। তূর্য বিষয়টা খেয়াল করলো৷ নাফিস ও কাল থেকে চুপ।
রুহানি নিজের মতোই চলছে ”
“প্রায় রাত বারোটার দিকে অবশেষে বাস এসে থামলো ঢাকায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক রাত। অনেকের গার্জেন টসে নিয়ে গেছে অনেককে। সায়রা নামলো বাস থেকে
তূর্য আগেই লোক ঠিক করে রেখেছিলো যাতে গাড়ি নিয়ে আসে সাথে নাফিসের বাইক ও।
সবাই সবার মতো চলে গেলো। জেরিনকে ও জেরিনের ভাই এসে নিয়ে গেলো। জেরিনকে বিদায় দিয়ে দাড়িয়ে রইলো সায়রা৷ এতো রাতে কি করে বাড়ি ফিরবে।
আরেক দিকে রুহানি ও তার ড্রাইভারকে কল করে আনিয়ে সে বাড়ি চলে গেছে৷ তূর্য একবার সায়রার দিকে চেয়ে নাফিসের কাছে গেলো ”
_নাফিস।
_জি স্যার।
_দাদিকে নিয়ে বাসায় যাও। আর বাইকের চাবিটা দাও।
“নাফিস একটু দূরে সায়রাকে হেটে যেতে দেখে বুঝলো যা বুঝার। বাইকের চাবিটা তূর্যকে দিয়ে। গাড়ি নিয়ে সে চলে গেলো। তূর্য বাইকে উঠে সোজা গিয়ে বাইক থামালো সায়রার সামনে। কোনে কিছু না বলে সোজা বললো ”
_বাইকে উঠো।
“সায়রা বললো ”
_কেনো ?
“তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে শান্ত কন্ঠে বললো ”
_গুম করে দিবো না আমি তোমাকে। বাসায় পৌঁছে দিবো। বাইকে উঠো।
_লাগবে নাচ।আমি একা যেতে পারবো।
_আচ্ছা তাই, এই রাতের ঢাকা সম্পর্কে বোধহয় ধারনা নেই তাই না। আজকে এখানে একা ছেড়ে দিলে কাল সকালের ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে তুমি।
“সায়রা ঠিক করলো সে কিছুতেই তূর্যর বাইকে উঠবে না। পরে এসব নিয়ে ও তাকে অপমান করা হবে৷ তাই সে বললো ”
_হলে হবো। আপনি যান। আমি একাই যেতে পারবো।
“তূর্যর রাগ বাড়ছে। কাল রাত থেকে তার মেজাজ খারাপ। তার মধ্যে এই মেয়ের ঢং। আর নিতে পারছে না তূর্য। দাঁতে দাঁত চেপে বললো ”
_কাল একটা দিয়েছিলাম না। আজ চারটা দেবো। বাইকে উঠো। (শেষের কথাটা রাগ দেখিয়ে বললো তূর্য)
“সায়রা ধমক খেয়ে চুপসে গেছে। এতো রাতে বাড়ি ও ফিরতে পারবে না। সায়রা বাইকে উঠে বসলো। তবে তূর্যকে ধরলো না৷ পেছনে ধরে বসে রইলো। তূর্য বাইক টান দিতেই সায়রা হুমরি খেয়ে পরলো তূর্যর উপর। তূর্য মুচকি হাসলো। পাকনামি করার ফল তো এই মেয়ের পাওয়া উচিত। সায়রা ঠিকানা বলে দিলো। এরপর আর একটা কথা ও বললো নাচ।তূর্যর কাধে হাত রাখতে ও হাত কাঁপছে তার। বাইক এতো স্পিডে চলছে সায়রার মনে হচ্ছে সে উড়ে যাবে। না হলে আজকেই তার জীবনের শেষ দিন হবে।
বিশ মিনিটের মধ্যে ই সায়রার বাড়ির সামনে এসে বাইক থামলো। সায়রা সোজা বাইক থেকে নেমে হেঁটে চলে গেলো গেটের দিকে। তূর্য অবাক হলো। সাহায্য করলো এই মেয়ে ভদ্রতা ও কি জানেনা৷ একটা ধন্যবাদ তো দিতে পারতো। তূর্য বাইক ঘুরাবে তখনই গেট খোলার আওয়াজ কানে এলো। তূর্য ফিরে তাকালো সেই দিকে। একজন মহিলা গেট খুলে দিয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গে অকথ্য ভাষায় কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলো সায়রাকে। কথাগুলো তূর্যর কানে গেলো
মনে মনে ভাবলো এটা কি সায়রার মা। মা হলে কি এসব ভাষায় কথা বলতে পারতো নিজের মেয়ের সাথে ”
“রাতে তূর্য বাড়ি ফিরে লম্বা একটা সাওয়ার নিলো। মনে শুধু তার একই চিন্তা। সাওয়ার নিয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ফোন হাতে নিলো। চিন্তা দূর করা দরকার। না হলে ঘুম হবে না। তূর্য ফোন নিয়ে এই দুদিনের তোলা ছবিগুলো দেখতে গ্যলারিতে ঢুকতেই চোখে পরলো সেদিন রাতে তোলা সায়রার ছবিগুলো। সামর্থ্য বেগমের সাথে হেঁসে হেসে কথা বলছিলো। সাদা রঙের জামাচসাথে কপালে ছোট্ট টিপ। তূর্য জুম করে করে সায়রার চোখ মুখ খুব ভালো করে দেখলো। একি কোনো রহস্যময়ী নাকি৷ একটার পর একটা ছবি দেখতে দেখতে গেলো ভিডিও অপশনে। সেখানে গতকালের ছেঁড়াদ্বীপে করা ভিডিওগুলোর একটা ক্লিক করতেই ভিডিওর মধ্যে সায়রাকে দেখা গেলো। পাথরের উপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটছে। বাতাসে লম্বা চুলগুলো উড়ছে। হুট করেই তূর্যর মনে পড়লো সায়রার দেওয়া সেই ঝিনুকের কথা। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে এলো। সেদিন রিসোর্ট এ ফুীে ব্যাগে রেখে দিয়েছিলো ঝিনুকগুলো। ব্যাগের একটা ছোট্ট খুপে পেলো ঝিনুকগুলো। সেগুলো হাতে নিয়ে অনেকটা সময় চেয়ে রইলো। এরপর উঠে গিয়ে একটা শিশি এনে তার ভিতরে পানি ভরে ঝিনুকগুলো ঢুকিয়ে রাখলো। শিশিটার দিকে চেয়ে থেকে বিড়বির করে বললো”
_তোমার উপর আমার ভীষণ কৌতুহল হচ্ছে মেয়ে। আমি তোমাকে জানবো। পুরোটা জানবো। তোমাকে এতো সহজে ছাড়ছি না আমি ।
“একদিন ছুটির পর অফিস শুরু হলো। সায়রা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে এখন থেকে কথা কম বলবে। বিশেষ করে তূর্যর সাথে। দরকার হলে তূর্যর আশেপাশে ও যাবে না। তাই অফিসে এসেই সুন্দর মতো কাজে মন দিয়েছে।
তূর্য অফিসে ঢুকে কেবিনে যাওয়ার আগে একবার সায়রার ডেস্কের দিকে চেয়ে এরপর গেলো।
সায়রা ফাইল রেডি করেও চুপচাপ বসে আছে। যাবে না সে তূর্যর কেবিনে। কিন্তু কাকে দিয়ে ফাইল পাঠাবে সে। একটু পরেই হাজির হলো নাফিস। এসেই বললো”
_সায়রা খাতুন৷ কেয়া হাল চাল হে আপকা?
“সায়রা নাফিসের কথার উওর না দিয়ে বললো ”
_একটা কাজ করে দিতে পারবেন আমার ?
_কী কাজ ?
“সায়রা অভিনয় করে পা চেপে ধরে রেখে বললো ”
_পায়ে ভীষণ ব্যথা। তূর্য স্যারকে একটু এই ফাইলগুলো দেখিয়ে এনে দিবেন।
“নাফিস সায়রার এগিয়ে দেওয়া ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বললো ”
_আচ্ছা দেখিয়ে আনছি।
“নাফিস চলে গেলো তূর্যর কেবিনে। সায়রা মহা খুশি। তূর্যর সামনে সে যাবে না। কি করে যাবে সে। এতো অপমান তাও ওই মানুষটাকে জরিয়ে”
“তূর্য কাজ করছিলো। নাফিস গিয়ে ফাইলগুলো এগিয়ে দিতেই তূর্য মাথা তুলে তাকালো। নাফিস এক গাল হাসি দিয়ে চেয়ে রইলো এমনভাবে যেনো সে নিজের প্রেমিকার দিকে চেয়ে আছে। তূর্য ফাইলগুলোর দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো ”
_কার এগুলো ?
_সায়রা খাতুনের।
“তূর্য নাফিসের দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো ”
_তাহলে তুৃমি নিয়ে এসেছো কেনো? এ কাজের জন্য তোমাকে বেতন দেই আমি।
_আমার কি দোষ। আমি তো একটু পরোউপকার করছিলাম। সায়রা খাতুনের পায়ে ব্যথা তো তাই,, ।
“তূর্য একবার বাইরে তাকিয়ে দেখলো সায়রাকে। দিব্বি জেরিনের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। তূর্য যা বুঝার বুঝে ফেললো মুহুর্তে ই। মুখে ডেভিল হাসি টেনে ফাইলগুলো পুনরায় নাফিসের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো ”
_নাফিস।
_জি স্যার।
_আমার মতো একটা ইয়াং ছেলে তোমার মতো একটা দামরা পিএ নিয়ে ঘোরে। বিষয়টা কেমন না।
“নাফিসের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এ লোকের মাথায় আবার কোন ভুত চেপেছে কে জানে । নাফিস অসহায় গলায় বললো ”
_কার শাস্তি আমাকে দিবেন স্যার। এ তো অবিচার আমার উপর। এই বিচার আমি মানি নানানানা,,,,,।
“তূর্য হেঁসে বললো ”
_না মানলে ও মানতে হবে। তোমার তো খুশির হওয়ার কথা প্রমোশন হবে তোমার।
“সঙ্গে সঙ্গে নাফিসের চেহারার ভঙ্গি বদলে গেলো। হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো”
_আগে বলবেন তো। তা কোন পদের প্রমোশন হচ্ছে?
“তূর্য দাঁড়ালো চেয়ার ছেড়ে। এরপর এসে নাফিসের পাশে এসে ওর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো ”
_তুমি হবে আমার প্রধান পিএ৷ কিন্তু আমার আরেকজন ছোট খাটো পিএ দরকার। যে শুধু আমার কাজের জন্য নিয়োজিত থাকবে।
_কিন্তু সেটা কে?
“তূর্য বাইরে সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_সায়রা আজমীর।
“নাফিস চমকে তাকালো তূর্যর দিকে। তূর্য মুচকি হাসলো। যে হাসিতে নাফিস রহস্য পেলো৷ কিন্তু সায়রার জন্য ভারী দুঃখ পেলো। মেয়েটার পা টা বোধহয় এবার একেবারে ই যাবে। তূর্য নাফিসকে বললো ”
_যাও গিয়ে তোমার সায়রা খাতুনকে খবরটা দিয়ে এসো। সাথে ওর ডেস্কে একটা বেল লাগালোর ব্যবসথা করো।
_বেল দিয়ে কি হবে?
_আমি বারবার ডাকবো গিয়ে।
“নাফিস বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। সায়রা কাজ করছিলো। একটা ছোট বেল নিয়ে সেটা সায়রার ডেস্কের উপর রাখতেই সায়রা তাকালো নাফিসের দিকে ”
_এটা কি? বেল। এটা কেনো লাগনো হচ্ছে ?
_তোমাকে যমে ধরেছে সায়রা খাতুন।
_কোন যম ?
_সাদমান শাহারিয়ার তূর্য ।
_কি হয়েছে খুলে বলুন তো?
_তোমার প্রমোশন হয়েছে।তুমি এখন থেকে তূর্য স্যার এর পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট।
“কথাটা শুনে সায়ার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। পাশ থেকে জেরিন ও অবাক হয়ে চেয়ে আছে”
_ পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মানে ?
_মানে হলো এখন থেকে তুমি তূর্য স্যার এর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরবে। অফিসের তার যতো কাজ আছে সব তুমি ই করবে সায়রা খাতুন।
_অসম্ভব। আমি চাই না এই প্রমোশন। স্যারকে গিয়ে বলুন।
“নাফিস সোজা হেটে চলে যেতে যেতে বললো ”
_তুমি গিয়ে বলো। আমি পারবো না৷। আমি এখন একটু মন ভরে ভিডিও গেম খেলতে পারবো।
“নাফিস চলে যেতেই সায়রা ধপ করে বসে পড়লো চেয়ারে। পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হলে তাকে তূর্যর কাজ করতে হবে শুধু। তার তাতে তাকে সাথে সাথে থাকতে হবে। জেরিন কিছু একটা বলতে নিতেই ডেস্কে থাকা বেলটা বেজে উঠলো। জেরিন হেসে বললো ”
_তোর নতুন ডিউটি শুরু হয়েছে। যা যা।
“সায়রার রাগ হচ্ছে। হুট করে এমন একটা পদে তাকপ বসানোর কারন কি ? যেখানে নাফিস অলরেডি আছে
সায়রা উঠে গেলো তূর্যর কেবিনে। তূর্য দুই পকেটে হাত দিয়ে সোজা বাইরের দিকে চেয়ে আছে। সায়রা কেবিনে ঢুকে তূর্যকে উল্টা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। আস্তে করে পেছনে গিয়ে দাড়ালো ”
_স্যার।
“তূর্য ঘুরে তাকালো সায়রার দিকে। সায়রা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ”
_এতো সময় লাগে আসতে। এমন কচ্ছপের গতিতে চলো নাকি ?
“সায়রা কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। তূর্য হেটে টেবিলের কাছে এসে টেবিল থেকে একটা কাগজ নিয়ে সায়রার দিকে বাড়িয়ে দিলো ”
_তোমার প্রমোশন লেটার। নাফিস নিশ্চয়ই বলেছে তোমাকে সব ।
_জি স্যার বলেছে কিন্তু আমি,,,,,।
_বেশি কথা আমার পছন্দ নয়।
_স্যার আমি,,,,,,।
“তূর্য এবার ও শুনলো না কথা। তার আগেই বললো ”
_একটু পরে আমার মিটিং আছে। যাও গিয়ে নাফিসের কাছে থেকে সিডিউল নিয়ে এসো। ফাস্ট ।
“সায়রার কথা শুনলো ই না তূর্য। সায়রা বের হয়ে এলো কেবিন থেকে। এ কথা রুহানির কানে গেলেই আবার সায়রাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা বলবে। এর মধ্যে ই রুহানিকে দেখা গেলো তূর্যর কেবিনে ঢুকতে। সায়রা কাগজটা নিয়ে নিজের ডেস্কে এসে বসে পড়লো। নাফিস কোথায় আছে কে জানে৷ কি করে সিডিউল নিবে সে এখন ”
“রুহানি তূর্যর কেবিনে ডুকেছে। সে খবর পেয়ে এসেছে যে সায়রাকে তূর্য নিজের পিএ বানিয়েছে ”
_এসব কি হচ্ছে তূর্য? তুই পাগল হয়ে গেছিস । মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?
“তূর্য রুহানির উপর বিরক্ত। বিশেষ করে সেদিনের পর থেকে। তূর্য রুহানির দিকে তাকালো না। এটা দেখে রুহানির রাগ আরো বাড়লো ”
_তুই যা করছিস তা ঠিক না তূর্য । ওই রাস্তার মেয়ের কিসের যোগ্যতা,,,,।
“তূর্য আর সয্য করলো না। টেবিলের উপর হাত দিয়ে বারি দিলো একটা। দাঁড়িয়ে গিয়ে হেঁটে এলো রুহানির সামনে।।রুহানির চোখে চোখ রেখে বললো ”
_ঠিক এই কারনে তোকে আমার পছন্দ না। সেদিন ও তোকে আমি বুঝিয়েছি। তুই কখনো ঠিক হবি না।
“তূর্য বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। রুহানির চোখে পানি। তূর্য বের হতেই দেখলো সায়রা আসছে এদিকেই সাথে নাফিস । তূর্যকে দেখেই সায়রা বললো ”
_স্যার সিডিউল,,,,।
_সময় নেই আমার এসব দেখার।
“তূর্য হেঁটে চলে যাচ্ছে। সায়রা বলদের মতো চেয়ে রইলো। নাফিস ওকে ইশারায় তূর্যর পিছু পিছু যেতে বললো। সঙ্গে একটা ফাইল ধরিয়ে দিলো। সায়রা দৌড়ে নিচে গেলো। তূর্যকে সে দেখলো আগে আগে হেঁটে গাড়ির দিকে যাচ্ছে। সায়রা পেছনে আছে এটা না দেখেই বললো ”
_একটা ও বেশি কথা বলবে না। চুপ করে গিয়ে ব্যাক সিটে বসো।
“সায়রা তাই করলো। চুপ করে গিয়ে পেছনের সিটে বসে রইলো। গাড়ি আজ ড্রাইভার চালাচ্ছে। তূর্য সামনেই বসলো। সায়রা পেছনে চুপ করে ফাইল কোলের উপর নিয়ে বসে রইলো। গাড়িতে রেডিও চলছে। এফএম। তূর্যর রাগ হচ্ছে। সে চোখ দুটো বন্ধ করে বসে আছে। হুট করেই এফএম এ কারো রিকোয়েস্ট এ গান বাজানো হলো। বেজে উঠলো গানটা। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে তাকাতেই ওর চোখ আগে গাড়ির সামনে থাকা ছোট্ট আয়নাটার দিকে গেলো। সেখানে সায়রার মুখটা দেখা যাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। চুপ করে। তূর্য চোখ সরালো না। পারলো ও না বোধহয়। গানটা বাজতেই লাগলো”
Tu Hi Yeh Mujhko Bata De
Chaahoon Main Ya Na
Apne Tu Dil Ka Pata De
Chaahoon Main Ya Na
Itna Bata Doon Tujhko
Chaahat Pe Apni Mujhko
Yoon Toh Nahin Ikhtiyaar
Phir Bhi Yeh Socha Dil Ne
Ab Jo Laga Hoon Milne
Poochhoon Tujhe Ek Baar,
Oh Tu Hi Yeh
Mujhko Bata De
Chaahoon Main Ya Na
Mm, Apne Tu
Dil Ka Pata De
Chaahoon Main Ya Na”””
“গানটা তূর্যর এক সময় খুব পছন্দের ছিলো। এরপর সময় চলে গেছে এখন আর সময় হয় না এসবের জন্য। তবে আজ এই গান আর এই মুহুর্তে কেমন অন্যরকম লাগছে ”
চলবে,,,