#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#২৫
“তূর্য বারান্দায় বসে কাজ করছে৷ হাতে ধোয়া উঠা গরম কফির কাপ। সায়রা রুমে নেই। নিচে গিয়েছে। সামর্থ্য বেগমকে টুকটুকিকে দেখাতে। তূর্য এই বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে মহা বিরক্ত। এদিকে সায়রা ওটাকে কোলে নিয়ে ঘুরে। তূর্য কাজ করছিলো তখনই দেখলো সায়রা রুমে ঢুকে বিছানা ঠিক করছে। তূর্য ভেবেছে হয়তো বিড়ালের বাচ্চাটাকে নিচে রেখে এসেছে। তূর্য ঘড়িতে সময় দেখলো
সাড়ে এগারোটা বাজে। তূর্য ল্যাবটব রেখে রুমে এলো। সায়রা অলরেডি শুয়ে পড়েছে। তূর্য আড় চোখে তাকালো। আজ এলো লক্ষি মেয়ের মতো শুয়ে আছে৷ তাও চাদর মুরি দিয়ে। তূর্য লাইট অফ করে যেই নিজের জায়গায় শুতে যাবে তখনই মিউ মিউ করে শব্দ হলো। তূর্যর বুঝতে বাকি নেই কিছু। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো। রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো। সায়রা টুকটুকিকে চেপে ধরে অপরাধীর মতো চেয়ে আছে। তূর্য বললো ”
_তুমি এটাকে আমার বিছানায় এনে ঘুম পারাচ্ছো। নামাও এটাকে এক্ষনি।
_নাহ্। ও আমার সাথে থাকবে। আপনার জায়গায় তো যায়নি।
_বিড়ালের পশম দিয়ে পুরো বিছানা ভরে যাবে। নামাও জলদি।
“সায়রা ছোট ছোট করে তাকালো তূর্যর দিকে। কোনো কথা না বলে টুকটুকিকে পাশে রেখে শুয়ে পড়লো। টুকটুকি ও সায়রার গায়ের সাথে লেগে শুয়ে আছে। সায়রা বললো ”
_আমার ওর পশমে কোনো সমস্যা নেই।ভুলে যাবেন না এই অর্ধেক কিন্তু আমার জায়গা।
“সায়রা আর তাকালো ও না। তূর্য অসহায়ের মতো চেয়ে আছে। কিছু বলতে ও পারছে না। অর্ধেক বিছানা একেবারে নিজের নামে লিখে নিয়ে গেছে। তূর্য গিয়ে লাইট অফ করে দিলো। বিছানায় ঘুমাতে ও ভয় লাগছে৷ না জানি কখন বিড়ালের বাচ্চাটা গায়ের উপর এসে পড়ে। এটা কি মানুষের বাচ্চা যে শুয়ে থাকবে। তূর্য নিজেী জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। মাঝে বালিশ। আরেক পাশে সায়রা উল্টো দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে।
তূর্য কখন ঘুমিয়েছে জানেনা৷ হুট করেই তূর্য অনুভব করছে ওর উপরে ভারি কিছু আছে৷ তূর্য ঘুমের ঘোরে ই বুঝার চেষ্টা করলো। হাত দিতেই তূর্য সঙ্গে সঙ্গে চেয়ে ফেললো। বুকের কাছে গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। দেখলো সায়রা ওর উপরে এসে ঘুমিয়ে আছে৷ পায়ের উপর পা তুলে দিয়েছে৷ বুকের কাছে মাথা রেখে টি শার্ট চেপে ধরে আড়াম করে ঘুমাচ্ছে। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে সায়রাকে সরিয়ে দিতে চায়লো। কিন্তু সায়রা না সরে উল্টো আরো পা দিয়ে চেপে ধরছে। উমউম করে শব্দ করে তূর্যর বুকের মধ্যে ঢুকে যেতে চায়ছে। তূর্য পড়েছে বিপাকে। এই মেয়ে তাকে শান্তিতে বাচতেই দেবে না। মেরে ফেলে তবে শান্তি পাবে। এখন যে এই মেয়ে এসব করছে তূর্য যদি সেম করে। তখন তূর্যর দিকে চেয়েই বলবে। আপনি একটা
অসভ্য লোক। তূর্যর ইচ্ছে করলো সায়রাকে ডেকে দেখাতে। সায়রাকে এবার ঠেলে নিজের থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে মাঝে একটা বালিশ রেখে দিলো। সায়রা ঘুমে কপোকাত অবস্থা। তূর্য সায়রার দিকে ফিরে শুয়ে সায়রার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। কি কিউট লাগে মেয়েটা ঘুমালে। ঠোঁট জোড়া বাচ্চাদের মতো করে রেখেছে। তূর্যর খুব ইচ্ছে করলো গালটা টিপে দিতে। বউ তো তার। কিন্তু এটা করা তূর্যর সাথে যাচ্ছে না। তূর্য উঠে সায়রার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো। আর ঘুম হলো না রাতে ”
“এদিকে জেরিনের সাথে নাফিসের ফোনআলাপ চলছে। নাফিস যতোরকম উপায়,আছে সব বলে ফেলেছে জেরিনকে পটাতে গিয়ে। জেরিন সব বুঝে ও না বুঝার ভান করে আছে৷ জেরিনের নাফিসকে ভালোলাগে না বিষয়টা এমন নয়। এমন লম্বা। কিউট ছেলেকে কার না ভালোলাগবে। সব থেকে বড় যেইটা জেরিনের ভালোলাগে তা হলো নাফিসের মধ্যে মানুষকে হাসানোর একটা গুন আছে। নাফিস অনেক বুঝিয়ে ও যখন বুঝাতে পারলো না। তখন হতাশ হয়ে বললো ”
_তুমি চাও কি কটকটি কও তো আমারে ?
“জেরিন আবার খুব কোরিয়ান ড্রামা দেখে কিনা। মনটা শুধু ওমন রোমান্টিক ছেলে চায়। তাই নাফিসকে একটা ভিডিও পাঠালো। নাফিস সেটা দেখলো। যেখানে একটা কোরিয়ান ছেলে আর মেয়ে। ছেলেটার কোরিয়ান ভাষায় চেং চুং করে কি যেনো বলছে। এরপর হাটু গেড়ে বসেছে। নাফিস ছেলে মানুষ তার এসব দেখার ধৈর্য নেই। নাফিস ফোন কানে নিয়ে ফের বললো ”
_তুমি এসব চাও ?
_হু।
“নাফিস একটু সময় নিয়ে বললো ”
_এসব চেং চুং ভাষা আমি পারি না। শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কয়টা কথা বলবো শুনবে ?
“জেরিন খুব উৎসাহী হয়ে বললো ”
_বলুন।
_দেখো প্রিয়, দুনিয়াতে বোকা*দা হওয়ার অনেক উপায় থাকা সওে ও আমি তোমার সাথে প্রেম করে ই বোকা*দা হতে চাই।
“কথাটা জেরিনের কানে যেতেই রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেলো। এতো অসভ্য কিভাবে হয় মানুষ। জেরিন ভেবেছিলো হয়তো নাফিস কোনো কবিতা বলবে৷ বা প্রেমের দুটো কথা বলবে। রাগে দুঃখে জেরিন বললো ”
_ইতর একটা। তোর প্রেম করা লাগবে না। যাহ্ দূর হ।
“কথাটা বলেই জেরিন কল কেটে দিলো। নাফিস ভেবে পেলো না কি হলো। সে খাটি সত্য কথা বলেছে৷ প্রেম করে মানুষ কি হয়। বোকা*দা। সে নিজের ইচ্ছায় তা হতে চেয়েছে। নাফিস বিষয়টা মজা করে বললে ও জেরিন খুব সিরিয়াস নিয়েছে৷ নাফিসের সব কয়টা কল গুনে গুনে কেটে দিচ্ছে । নাফিস এদিকে মুখ চেপে শুধু হাসছে। সে তে মিথ্যা কিছু বলেনি। সত্যি বলেছে। এতে তার কি দোষ”
“তূর্য সকাল সকাল উঠে জিম করছে। মাঝে হাঝে সে হাঁটতে ও বের হয়। অতো সকালে কেউ থাকে ও না রাস্তায়। এদিকে সায়রা টুকটুকির জন্য ঘুম থেকে উঠেই নিচে দুধ আনতে গেছে। এসে রুমে কোথাও পাচ্ছে না। সায়রা দুধের বাটি রেখে পুরো রুম খুজলো। বারান্দায় ও খুজলো। নেই। নিচে থেকে সে মাএ ই এসেছে। তাহলে গেলো কোথায় ?
সায়রা রুম থেকে বের হলো। পাশেই তূর্যর জিম করার রুম। সায়রা দেখলো দরজাটা খোলা। সেখানে চলে যায়নি তো। সায়রা রুমের কাছে গিয়ে উকি দিতেই দেখলো তূর্য বড় বড় কি যেনো হাত দিয়ে তুলছে আর নামাচ্ছে। সায়রা চেয়ে রইলো উঁকি দিয়ে। কিন্তু তূর্যর সামনে একটা বড় আয়না। পুরো রুমটার চারদিক ই কাচের। তূর্য দরজা দিয়ে সায়রাকে উঁকিঝুঁকি দিতে দেখে পেছন ফিরে চেয়ে বললো ”
_ওইভাবে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছো কেনো ?
“যাহ্ ধরা ই পড়ে গেলো। সায়রা গালে হাসি টেনে রুমের ভেতরে ঢুকলো। তূর্য দাড়িয়ে আছে। সায়রা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। এতো এতো মেশিন রাখা৷ কোথায় গিয়ে লুকিয়েছে ওই টুকটুকি। সায়রা যে দিকে তাকাচ্ছে তূর্য ও সেদিকে তাকাচ্ছে। তূর্য বললো ”
_কি খুজছো এইভাবে ?
_কই কিছু না তো। আমি তো দেখতে এলাম কি করে জিম করেন আপনি।
_কিহ্?
_না মানে, রুমটা দেখতে এলাম।
“তূর্য কেমন সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে বললো ”
_কেনো ? এটা কি পার্ক বানিয়েছি আমি।
“সায়রা তূর্যর কথা কানে নিচ্ছে না। হুট করে সায়রা দেখলো টুকটুকি একটা মেশিনের নিচে গিয়ে বসে আছে। সায়রার মুখে হাসি ফুটলো। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো ”
_ওই তো পেয়েছি।
“কথাটা বলে দৌড়ে গিয়ে টুকটুকিকে নিয়ে এলো। তূর্য এবার বুঝলো এভাবে উঁকিঝুঁকি দেওয়ার কারন। সায়রা তূর্যর পাশ দিয়ে যেতে নিলে তূর্য সায়রার ওরনা টেনে ধরলো ”
_তোমার এই বিড়ালের বাচ্চা কি তুমি ফেলবে না ?
_কক্ষনো না।
_আমি কিন্তু ফেলে দিয়ে আসবো।
“সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে হেসে বললো ”
_আপনি ভয় পান। আপনি ওকে ধরতেই পারবেন না।
“তূর্য নাক ফুলালো। অপমান করা হচ্ছে। সায়রা ওরনাটা তূর্যর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো। তূর্য বুঝে পায় না। এই মেয়ে তাকে ভয় পায় না কেন।
একটা বললে চারটা উওর দেবে৷ তূর্য কিছু বলতে ও পারে না কেন ? কেন?”
“সায়রা আর তূর্য এক সাথেই বের হয়েছে। টুকটুকিকে চুমকির কাছে দিয়ে গেছে। আজ আর সায়রা রিকশা নেয়নি। তূর্য ই নামিয়ে দিয়েছে। এরপর নিজেও অফিসে গিয়েছে ”
“নাফিস আজ অফিসে তাড়াতাড়ি এসে আর পার্কিং বাইকের উপর বসে আছে। জেরিন যে রাগ করেছে। ওর রাগ ভাঙাতেই হবে। এমনই মেয়ে পটে না তাকে দিয়ে। নাফিস ঘরিতে সময় দেখলে নয়টা এিশ। এমন সময় জেরিন ঢুকলো গেট দিয়ে। নাফিসকে দেখে আরো রাগ বাড়ছে জেরিনের। সে গিয়ে সোজা লিফটের সামনে গিয়ে দাড়ালো। নাফিস ও এসে জেরিনের পেছনে দাড়ালো। জেরিন একটএ সরে গিয়ে দাড়ালো। নাফিস ও জেরিনের আরো কাছে গিয়ে দাড়ালো। এখানে ওরা ছাড়া ও আরো অনেক মানুষ আছে। জেরিন বিরক্ত হয়ে উল্টো দিকে হাটা ধরলো। নাফিস ও পিছু নিলো ”
_আরেহ্ ওইদিকে কোথায় যাচ্ছো ?
_জাহান্নামে। আমার পিছু নিবেন না।
“কে শুনে কার কথা। জেরিন লিফট রেখে সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। সচারাচর কেউই সিড়ি দিয়ে উঠে না। জেরিন আগে আগে উঠেছে নাফিস পিছে পিছে উঠছে আর গান গাইছে ”
_ও জেরিন ও জেরিন রে তুই অপরাধী রে। আমার যত্নে গড়া ভালেবাসা দে ফিরাইয়া দে,,,,,।
“জেরিন শুনছে ই না। সিড়ি দিয়ে উঠেই যাচ্ছে। নয় তালায় সিড়ি বেয়ে উঠতে গেলে জান বেরিয়ে যাবে। জেরিন ফিরে ও তাকাচ্ছে না। নাফিস দ্রুত এসে জেরিনের পাশাপাশি এসপ বললো ”
_জেরিন শুনো। তোমার ডেডিকে আমার শশুর বানাবো। তাও তুমি রাগ কইরো না। ওওওও জেরিন।
“জেরিন থেমে গেলো। নাফিস একটু খুশিই হলো। জেরিন নাফিসের দিকে ঘুরে বললো ”
_আপনি আমার সামনে থেকে যাবেন। নাকি লাথি মারতে হবে।
“নাফিস ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো ”
_আমার পশ্চাত কি এগিয়ে দেবো প্রিয়।
_উফ, সরুন তো আপনি। বিরক্তি কর।
“জেরিন ফের যেতে নিলেই নাফিস জেরিনের হাত টান দিয়ে জেরিনকে পাশের দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। জেরিন চোখ বড় বড় চোখ করে চেয়ে আছে। নাফিস বললো ”
_কথা শুনো না কেন ? মানলাম একটা ভুলভাল কথা বলে ফেলেছি এর জন্য তুমি এমন করবে।
“জেরিন রাগে ফুঁসছে। ওমন একটা কথা বলে এখন বলছে ভুলভাল কথা। জেরিন নাফিসকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ”
_ওটা ভুলভাল কথা?
_আচ্ছা ওটা আর বলব না। অন্য টা বলি।
_কিচ্ছু বলতে হবে না। গেলাম আমি।
“জেরিন চলে গেলো। নাফিস হতাশ হয়ে চেয়ে রইলো। কাল রাতে মনে মনে একটা ছড়া বানিয়েছে। ভেবেছিলো এটা বললে নিশ্চিত জেরিন পটে যাবে। কিন্তু মেয়েটা দাম ই দিলো না ”
“তূর্যর নিজের কেবিনে ছিলো। রুহানি এলো তখন। হাতে একটা ফাইল। রুহানি আজকাল তূর্যর কেবিনে কম আসতে পারে। তূর্য ওকে আলাদা কিছু কাজ দিয়েছে। নতুন কিছু ড্রেস ডিজাইন। ড্রেস গুলো অনেক এক্সপেন্সিভ। দামি দামি স্টোন এর মধ্যে। যেগুলো বিদেশে তূর্যর কোম্পানি কে প্রোমট করার জন্য বানানো হবে।
তূর্য ইশারায় রুহানিকে বসতে বললো। রুহানি বসলো। চেয়ে রইলো তূর্যর দিকে। তূর্য কাজ শেষ করে রুহানিকে বললো ”
_এখন বল।
“রুহানি ফাইলটা এগিয়ে দিলো। সাথে ফোন থেকে কিছু স্টোন এর ছবি বের করে তূর্যকে দেখালো ”
_আমি চাচ্ছি হোয়াইট আর রেড গাউনের মধ্যে রুবি প্লাস পার্ল ব্যবহার করতে। এতে ড্রেস এক্সপেন্সিভ সাথে গর্জিয়াস ও হবে৷
“তূর্য মনোযোগ দিয়ে ড্রেস দুটোর ডিজাইন দেখছে। মন মতো ই বলা চলে। তূর্য বললো ”
_যা প্রয়োজন সব ইউজ করতে পারিস। জাস্ট আউটলুক সুন্দর হওয়া চাই৷ মান হওয়স চাই।
“রুহানি খুশি হলো। ওর আইডিয়া তূর্যর পছন্দ হয়েছে। তূর্য নিজের ঘড়িতে সময় দেখলো। এরপর উঠে দাড়ালো বের হওয়ার জন্য। রুহানি তূর্যকে কোথাও যাবে দেখে বললো ”
_মিটিং এ যাচ্ছিস ? আমি ও সঙ্গে যাই?
“তূর্য থেমে গেলো৷ রুহানির দিকে চেয়ে বললো ”
_মিটিং এ যাচ্ছি না। ইট’স পারসোনাল।
“কথাটা বলে তূর্য বের হয়ে গেলো। আজ সঙ্গে নাফিসকে ও নিলো না। এদিকে রুহানি ভাবছে তূর্যর পারসোনাল কি কাজ এই অফিস টাইমে৷ আজকাল তূর্য হুটহাট অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছে বিষয়গুলো রুহানির নজরে পড়েছে ”
“সায়রাকে তূর্য নামিয়ে দিয়ে ই বলে গিয়েছিলো একা না যেতে। তূর্য গাড়ি নিয়ে গেলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। রাস্তা আরেক পাশে গাড়ি দাড় করালো। ঘড়িতে দেখলো দুটো বাজতে এখনো পাঁচ মিনিট বাকি। তূর্য গাড়িতে বসেই চেয়ে রইলো গেটের দিকে। মনে মনে ভাবলো এই বয়সে তার বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসার কথা। সে এসেছে ভার্সিটিতে তার বউকে পিক করতে। এমন সময় তূর্য দেখলো সায়রা হেঁটে হেঁটে আসছে। তূর্য চোখ ফেরাতে ও পারলো না সায়রা রোডের কাছে এসে দাড়াতেই কোথা থেকে একটা গাড়ি সায়রার একেবারে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সায়রা ছিটকে গিয়ে পড়লো কিছুটা দূরে। তূর্য এই দৃশ্য দেখে৷ সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে ছুটে রাস্তা পার হয়ে সায়রার কাছে এলো। সায়রা পিচঢালা রাস্তায় পড়েছে। তূর্য সায়রার সামমে এসে বসে পড়লো। সায়রার হাত ধরে টেনে তুলতে তুলতে বললো ”
_ব্যথা পেয়েছো? কোথায় লেগেছে ? পায়ে ব্যথা পেয়েছো ? দেখে চলতে পারো না। চোখ কোথায় থাকে,,, ।
“তূর্য রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। এক দমে কথাগুলো বসে গেলো। সায়রা চেয়ে আছে তূর্যর দিকে। তূর্যর সেদিকে মন নেই। সে সায়রার হাতে পায়ে দেখে ব্যাস্ত কোথাও লেগেছে কিনা। দেখলো সায়রার ডান হাতের কুনোয় ছিলে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। হাতের তালু ও অনেকএা কেটে গেছে। তূর্য তাড়াহুড়ো করে পকেট থেকে সাদা রুমালটা বের করে চেপে ধরলো হাতে। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_আর কোথাও লেগেছে ? উঠতে পারবে ?
“সায়রা দেখলো আশেপাশের মানুষ ওদের দেখছে। সায়রা আস্তে করে বললো ”
_পারবো। আর কোথাও লাগেনি।
“তূর্য চেয়ে দেখলো গাড়িটা চলে গেছে। রাগে তূর্যর মাথা ফেটে যাচ্ছে। সায়রাকে টেনে তুললো। সায়রার ব্যগটা ও নিজের হাতে নিয়ে নিলো ”
_চলো ডক্টর এর কাছে যেতে হবে।
“সায়রা হা করে তাকালো। এইটুকু কাটার জন্য কে ডক্টর এর কাছে যায়। সায়রা বললো ”
_ডক্টর এর কাছে যেতে,,,,।
_একটা চর দিয়ে সবগুলা দাত ফেলে দেবো। চুপচাপ যাবে।
“সায়রা চুপ করে রইলো। তূর্য গাড়ির কাছে এসে নিজেই গাড়ির দরজা খুলে দিলো। নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো। হুট করেই ঝুকে গেলো সায়রার দিকে। সায়রা কিছু বলার আগেই দেকলো সিট বেল্ট বেঁধে দিচ্ছে। এরপর পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বললো ”
_রুমালটা ভালো করে চেপে ধরে রাখবে।
_এইটুকু কাটা নিয়ে কে হসপিটালে যায় ?
“তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে। সামনের দিকে চেয়েই বললো ”
_আর কেউ না যাক তুমি যাবে। এইটুকু কাটা থেকে কতো কিছু হতে পারে জানো।বড় বড় রোগ ও হতে পারে। ইনফেকশন থেকে ক্যান্সার হতে পারে।
“সায়রা আবুলের মতো চেয়ে রইলো। কি বলছে এই লোক। কতো হাত কেটে গেলো। ঔষধ ও লাগায়নি কখনো৷ আর এইটুকুতে ক্যান্সার হয়ে যাবে।
তূর্য এলো একটা সরকারি হাসপালে। আপাতত এটাই কাছে পেয়েছে। এখন দুপুর সময় হওয়াতে রোগীর সংখ্যা ও কম। তূর্য হাটছে পেছনে সায়রা। সায়রার ইচ্ছে করছে দৌড়ে চলে যেতে। এইটুকু কাটা নিয়ে যদি ডাক্তার কে দেখায় নিশ্চয়ই তারা হাসবে। সায়রার হাত কেটেছে দেখে একজন বললো ইমারজেন্সিতে যেতে। ওরা সেখানে গেলো। তূর্য এসব হাসপাতালে আসে না কখনোই। একটা রুমের ভেতরে গিয়ে দেখলো দুটো মেয়ে। ওদের কে দেখে মেয়ে দুটো বললো ”
_কি হয়েছে স্যার ?
“তূর্যর পেছনে সায়রা দাড়িয়ে ছিলো। সায়রার হাত ধরে টেনে এনে মেয়েটার সামনে দাড় করিয়ে দিলো
সায়রার হাতের দিকে ইশারা করে বললো ”
_হাত কেটে গেছে। পরিস্কার করে বেন্ডেজ করে দিন। আর হে, ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণের ঔষধ দেবেন।
“মেয়েটা সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_দেখি ম্যাম রুমালটা সরান।
“সায়রা রুমালটা সরালো। মেয়েটা দেখলো একটু জায়গা ছিলে গেছে। রক্ত বের হচ্ছে। তালুতে কেটেছে বেশি। তবে সচারাচর এইটুকু কাটা নিয়ে কেউ আসে না হাসপাতালে। মেয়ে বললো ”
_এইটুকু কাটার জন্য বেন্ডেজ,,,, ।
“মেয়েটা কথাটা শেষ ও করতে পারলো না। তূর্য এমনভাবে মেয়েটার দিকে তাকালো যেনো চোখ দিয়ে ই ভস্ম করে দেবে। মেয়েটা একটা ঢোক গিলো। এরপর বললো”
_করে দিচ্ছি। বসুন ম্যাম।
“সায়রা গিয়ে বসলো। তূর্য দরজায় সামনে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা সায়রার হাতে বেন্ডেজ করতে লাগলো। আরেকটা মেয়ে একটু পর পর তূর্যর দিকে তাকাচ্ছে আর মিট মিট করে হাসছে। সায়রা বিষয়টা খেয়াল করলো। এর মধ্যে তূর্যর একটা ফোন এলে তূর্য বাইরে গিয়ে দাড়ালো। মেয়ে দুটো তখন সায়রাকে বললো ”
_উনি কি আপনার হাজবেন্ড ?
“সায়রা হু হা কিছু ই বললো না। চুপ করে আছে। মেয়েটা বললো ”
_আপনার কপাল কিন্তু ভালো। এতো সুন্দর বর আবার কেয়ারিং,,, ।
“সায়রা হালকা হেসে বললো ”
_আপনার ভালো লেগেছে বুঝি ?
_না না । তা বলিনি।
_বললে ও সমস্যা নেই। আসলে উনি আমার বেয়াই।
“কথাটা শুনে আরেকটা মেয়ে খুশি হয়ে গেলো। সায়রাকে বললো ”
_আপনার বিয়াই কি বিয়ে করেছে ?
_নাহ্। মেয়ে খুজছি। পেলেই বিয়ে করিয়ে দেবো।
“সায়রার কথা শুনে মেয়েটার মনে লাড্ডু ফুটলো।মেয়েটা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তূর্য এসে ঢুকলো। ততক্ষণে বেন্ডেজ ও হয়ে গেছে। তূর্যকে দেখে মেয়েটা বললো ”
_নিন আপনার বিয়াইনের হাতের বেন্ডেজ হয়ে গেছে।
“তূর্য ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে চেয়ে বললো ”
_হোয়াট রাবিশ, সি ইজ মাই ওয়াইফ।
“তূর্যর কথা শুনে মেয়েটা হা হয়ে গেলো। সায়রার দিকে তাকালো। সায়রা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তূর্য সায়রার হাত ধরে নিয়ে চলে এলো। এই মেয়ে সব জায়গায় গিয়ে ঝামেলা পাকায়। তূর্য সায়রাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো ”
_আমি তোমার বেয়াই হু ?
“সায়রা মাথা নিচু করে বললো ”
_আরেহ্ মেয়েটা আপনাকে পছন্দ করেছিলো।
“সায়রাকে তূর্য গাড়িতে বসিয়ে দিতে দিতে বললো”
_সতীনের সাথে ঘর করার এতো সখ আগে বললেই পারতে। হাজারটা এনে দিতাম। ইডিয়েট।
“সায়রা ভেংচি কাটলো। সায়রার বয়েই গেছে সতীনের ঘর করতে। কোনোদিন সতীন আসার চেষ্টা করলে সায়রা তার চুল ছিড়ে হাতে ধরিয়ে দেবে। এদিকে তূর্য ভাবছে অন্য কথা। আজ যখন সায়রাকে গাড়িটা এসে ধাক্কা দিলো। তূর্যর বুকটা কেঁপে উঠেছিলো। শুধু মনে হচ্ছিলো। যাই হয়ে যাক সায়রা যেনো ঠিক থাকে। সায়রার যেনো কিছু না হয়। তূর্য বারবার আড় চোখে সায়রাকে দেখছে। এই মেয়ের সব কিছু তাকে আকৃষ্ট করছে প্রতিনিয়ত”
“অফিসে ব্রেক চলছে। সবাই সবার মতো কেন্টিনে খাওয়া দাওয়া করছে। জেরিন একা গিয়ে বসলো একটা টেবিলে। আজ কতোদিন সায়রা আসে না। একা একা লাগে। এরমধ্যেই কোথা থেকে নাফিস এক প্লেট পাস্তা নিয়ে এসে জেরিনের অপর পাশে বসে পড়লো ”
_আপনি এখানে এসেছেন কেনো ?
_ওমা, তুমি যেখানে আমি সেখানে সে কি জানো নাাাা।
_চলে যাবো কিন্তু এখন।
_আচ্ছা আর গান গাইবো না। এতো রেগে থাকলে হয় বলো। রাগটা একটএ কমাও।
_আপনার মতো ফোর টোয়েন্টি লোক আমি এর আগে দেখিনি।
“নাফিস পাস্তা মুখে দিয়ে চাবাতে চাবাতে বললো ”
_তুমি আরো অনেক কিছু ই দেখোনি। আস্তে আস্তে দেখবে সোনামুনি।
“কথাটা বলেই চোখ মারলো। জেরিন কিছু বলল না। চুপচাপ খাচ্ছে। নাফিস হুট করেই বললো ”
_আচ্ছা তোমার বাপ তোমারে এখন কি বিয়ে দিবে না ?
_কেনো ?
_না মানে, আমার বাসার বুয়াটা অনেক ফাজিল। একদিন এলে দশদিন আসে না। তাই ভাবছিলাম বিয়ে করে একটা পারমানেন্ট বুয়া,,,,,।
“নাফিস আর বলতে পারলো না। জেরিন বাঘের মতো চেয়ে আছে দেখে চুপ করে উঠে চলে যেতে যেতে বললো ”
_এই বাঘীনি বিয়ে করলে আমার কপালে ভাত জুটবে না রেহ্।
চলবে,,,,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#২৬
“কাল থেকে সায়রার অফিসে জয়েন করার কথা। এদিকে সে হাট কেটে বেন্ডেজ করে বসে আছে। তূর্য ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফের অফিসে চলে গিয়েছে। সামর্থ্য বেগম ও এসব দেখে সায়রাকে নিষেধ করে দিয়েছে কোনো কাজে হাত না লাগাতে। সায়রা রুমে এসে সাওয়ার নিয়ে শুয়ে ঘুমিয়েছে। আর উঠেনি।
তূর্য একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে৷ রুমে আসার আগে টুকটুকিকে চুমকির পাশে দেখে এলো। তাহলে এই বিড়াল পাগলি মেয়েটা কোথায়। তূর্য রুমে এসে দেখলো পুরো রুম অন্ধকার। তূর্য রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দিলো। দেখলো সায়রা বিছানায় গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। তূর্য দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে কিছু সময় সেখানেই দাঁড়িয়ে সায়রার দিকে চেয়ে রইলো। এক সময় তূর্য কল্পনা ও করতো না সে বিয়ে করবে৷ কোনো মেয়ে তার ই ঘরে তার ই বেডে এভাবে ঘুমাবে।
তূর্য এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে। হাতের ব্লেজার টা বিছানায় রেখে সেখানে বসলো। কেনো যেনো চোখ ই সরাতে ইচ্ছে করছে না৷ কাল রাতে ও খুব ইচ্ হয়েছিলো সায়রার গালটা টেনে দিতে। আজ নিজের অজান্তে ই তূর্য সায়রার গালে এর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতেই সায়রা নড়েচড়ে উঠলো। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে উঠে চলে যেতে নিতেই সায়রা চোখ পিট পিট করে তাকালো। দেখলো তূর্য আয়নার সামনে দাড়িয়ে টাই খুলছে। সায়রা এদিক ওদিকে চেয়ে বললো ”
_আপনি আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন ?
“তূর্য আয়নার দিকে চেয়ে। সেখানে থেকেই সায়রাকে দেখা যাচ্ছে গাল ফুলিয়ে আবুলের মতো তূর্যর দিকে চেয়ে আছে। তূর্য হালকা হেসে বললো ”
_সাড়ে সাতটা বাজে। তোমার কাছে তাড়াতাড়ি মনে হচ্ছে ?
“সায়রা গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। তূর্য সায়রার দিকে ফিরে চেয়ে ফের ওয়াসরুমে চলে গেলো।
যখন তূর্য বের হলো দেখলো সায়রা আবার শুয়ে পড়েছে। তূর্য আর ডাকলো না। সে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো। সামর্থ্য বেগম এর ও শারীর ভালো নেই। তিনি শুয়ে পড়েছেন। চুমকি এখনো বসে বসে টিভি দেখছে। ওর পাশে টুকটুকি। তূর্য আর ডাকলো না। কফি বানানোর জন্য নিজেই রান্না ঘরে যেতে নিলেন চুমকি ডাকলো ”
_ভাইজান কফি লাগবো ? দাড়ান আমি বানায় দিতাছি।
“কথাটা বলে চুমকি দৌড়ে এলো। চুমকির পিছু পিছু টুকটুকি ও আসছে। তূর্য একটু সরে দাড়ালো। চুমকি কফি বানিয়ে এনে তূর্যকে দিয়ে বললো ”
_ভাইজান, ভাবী কি আর উঠে নাই ঘুমে থিকা ? সারাদিনে কিছু ই তো খাইলো না।
“তূর্য ভ্রু কুচকে চেয়ে বললো ”
_সারাদিনে কিছু ই খায়নি?
_নাহ্।
_আচ্ছা তুই খাবারটা একটু বেড়ে দে।
“চুমকি খাবার বেড়ে দিলো। তূর্য সেটা নিয়ে রুমে এসে দেখলো সায়রা ওয়াসরুমে থেকে বের হয়েছে সবে। তূর্য বিছানার উপর খাবার রেখে বললো ”
_তুমি নাকি কিছু ই খাওনি সারাদিন ?
_নাহ্। এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
“তূর্য কফির কাপ আর ফোন নিয়ে বারান্দায় যেতে যেতে বললো”
_এখন খেয়ে নাও ।
“তূর্য বারান্দায় গিয়ে বসেছে। কিন্তু নজর সায়রার দিকে। এদিকে সায়রার ডান হাতে বেন্ডেজ। কি করে খাবে ও। একটা চামচ ও আনেনি। সায়রা খাবারের দিকে চেয়ে বসে রইলো। তূর্য দেখলো কিছু সময়। এরপর উঠে এসে বিছানায় সায়রার সামনে বসে প্লেটটা হাতে তুলে নিয়ে সবজি দিয়ে মাখাতে শুরু করলো। সায়রা হা করে চেয়ে আছে। যে নিজে চামচ দিয়ে সব খায় সে হাত দিয়ে ভাত মাখাচ্ছে। তূর্য ভাত মাখিয়ে সায়রার মুখের সামনে ধরলো। সায়রা চুপচাপ খেলো। তূর্য সামন্য হেঁসে বললো ”
_এভাবে চেয়ে আছো কেনো ? হাত দিয়ে খাওয়াচ্ছি বলে ?
_হু।
“তূর্য আর কিছু বললো না৷ কয়েক কোলমা খেতেই সায়রা বললো আর খাবে না। তূর্য জোড় করলো না।
তূর্য হাত ধুয়ে এসে আবার বারান্দায় চলে গেলো। সায়রা ও রুমে বসে থেকে বিরক্ত। তাই নিজেও গেলো বারান্দায়। তূর্য বসে আছে। হাতে একটা বই। সায়রা গিয়ে দাড়ালো। এ বাসায় আসার পর ও সায়রা এই বারান্দায় তেমন আসেনি। কারন তূর্য এটাকে তার কাজের জায়গা বানিয়ে রাখে। সায়রা দেখলো এখান থেকে পুরো শহর বোধহয় দেখা যায়।
সায়রা সামনে চেয়ে আছে। আর তূর্য সায়রার দিকে ”
“নাফিস সেই কখন থেকে জেরিনকে কল করে যাচ্ছে। জেরিন ধরছে ই না। পনেরোটা কলের সময় জেরিন কল রিসিভ করলো। নাফিস সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো ”
_কটকটি, আমার ফোন ধরো না কেননননন ?
_কেন ধরবো আমি আপনার ফোন?
_এখনো রাগ করে আছো ?
_ইস, আমার লুতুপুতু টা। এমন ভাবে কথা বলছে যেনো কতো বছরের প্রেম আমাদের।
“নাফিস অল্প হেসে বললো ”
_সম্পর্ক এখন নেই। কিন্তু হতে কতক্ষন বলো।
_জীবনে ও হবে না।
_তুমি পটে গেলেই হবে।
“জেরিন হেসে বললো ”
_ওমন ভাবে প্রেম নিবেদন করলে আমি কেন৷ কোনো মেয়েই পটবে না।
“নাফিসের খুব ইগোতে লাগলো কথাটা৷ তাকে দিয়ে মেয়ে পটবে না মানে৷ সে পটিয়েই ছাড়বে ”
_তুমি ই পটবে। শুধু একটু সময় যেতে দাও৷
_চেষ্টা করে ও লাভ হবে না।
_আচ্ছা একটা কথা বলি শুনবে ?
“জেরিন আগেই বললো ”
_না না আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।
_আরে শুনোই না৷ ভালো কথা বলবো।
“জেরিন একটু ভাবলো। তবুও বিশ্বাস করতে পাড়ছে না। তবুও বললো ”
_আচ্ছা বলুন। যদি কোনো উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন আজ। তাহলে খবর আছে আপনার।
_আরেহ্, আগে শুনবে তো।
_আচ্ছা বলুন ।
“নাফিস এতোটা সময় শুয়ে শুয়ে কথা বলছিলো। এবার একটু উঠে বসলো। দুটো কাশ দিলো গলা পরিষ্কার করে বললো ”
_তেতুল গাছের তেতুল খাইতে ভারি টক। জেরিন তোমাকে আমার বউ বানাবো এটাই আমার সখ।
“জেরিন আজ আর রাগতে পারলো না। উল্টো হেঁসে ফেললো। নাফিস ও হাসলো। যাক মেয়েটার রাগটা তো পড়েছে। এরপর আবার চললো কথাট ধুম ”
“রাতে সায়রা নিচে গিয়ে টুকটুকিকে নিয়ে এলো। তূর্য সেই যে ল্যাবটব নিয়ে বসেছে। সায়রা নিজের জায়গায় টুকটুকিকে নিয়ে বসে আছে। তূর্য উঠে রুমে এলো। আজ আর কিছু বললো না। তূর্য নিজের সব কিছু গুছিয়ে রেখে যেই না বিছানার দিকে ফিরলো। ওই সময় ই টুকটুকি বিছানায় বমি করে দিলো। বিড়ালের বমি। তার মধ্যে দুধ খাইয়েছিল। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। রাগে তার এখন শরীর কাঁপছে। চিৎকার করে চুমকিকে ডাকতে লাগলো। সায়রা নিজেও ভয় পেয়ে গেছে। চুমকি নিচে থেকে দৌড়ে এলো। সায়রা এগিয়ে এলো তূর্যর দিকে ”
_আপনি রাগবেন না প্লিজ। আমি বিছানা পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
“তূর্য শুনলো না সায়রার কথা। চুমকিকে উদ্দেশ্য করে বললো ”
_এটা বিড়ালের বাচ্চা এক্ষনি নিয়ে যা এই রুম থেকে। তোর কাছে ও রাখবি না।
“তূর্য রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। সায়রা চুপ করে দাড়িয়ে আছে। ও তো বিড়াল। ও কি বুঝে কিছু। সায়রা দিতো সব পরিষ্কার করে। তূর্য রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বললো ”
_এই বিড়ালের বাচ্চা এ বাড়িতে যেনো না দেখতে হয়।
“কথাটা বলে তূর্য বেড়িয়ে গেলো। সায়রা থ মেরে দাড়িয়ে আছে। চুমকি রুমের ভেতরে ঢুকলো। বিছানার উপর থেকে টুকটুকিকে তুলে নিলো। সায়রার দিকে চেয়ে আস্তে করে বললো ”
_ভাবী,,,!
_নিয়ে যাও। ওকে ফেলে দিয়ে আসো।
“সায়রার কেন যেনো অনেক কষ্ট হচ্ছে। তূর্য সুন্দর করে বলতে পারতো। দরকার হলে রুমেই আনতো না বিড়ালের বাচ্চাটাকে। চুমকি বেরিয়ে গেলো। সায়রার আগে ঠিক করলো এই লোকের বিছানা টিক করে দেবে। সে নিজেও তার এই বিছানায় ঘুমাবে না। সায়রা আগে নতুন চাদর বের করলো। বিছানা গুছিয়ে পুরো রুম ক্লিন করলো। এরপর দরজা চাপিয়ে দিয়ে সোজা নিচের গেস্ট রুমে চলে এলো। থাকবেই না ওই লোকের সাথে। এমন খুঁতখুঁতে। সায়রা ওই ঘরপ থাকে বলে ও মনে হয় ওই লোকের সমস্যা। শুধু মুখে বলতে পারে দাদীর জন্য। সায়রা গেস্ট রুমপ এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। টুকটুকিকে কি চুমকি সত্যি ই ফেলে দিয়েছে।
বমি করেছে। নিশ্চয়ই গুরো দুধ পেটে হজম হয়নি। সায়রা ওইভাবে ই শুয়ে রইলো ”
“তূর্য বাইরে থেকে এসে সবে নিজের ঘরে ঢুকেছে। রুম পুরো গুছগাছ করা থাকলেও সায়রার দেখা মিললো না৷ নতুন চাদর সহ রুমে রুমফ্রেশনার ও দেওয়া হয়েছে। তূর্য ওয়াসারুম চেক করলো। বারান্দায় গেলো সায়রা কোথাও নেই। এতো রাতে এই মেয়ে গেলো কোথায় ? তূর্য এমনিই বিরক্ত। একবার মন চাইলো গিয়ে শুয়ে পড়তে। যাক যেখানে খুশি। পরমুহূর্তেই আবার তখনকার রাগের কথা মনে পড়লো। তূর্য রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো। রাত বাজে সাড়ে এগারোটা। তূর্য সামর্থ্য বেগম এর ঘরে গেলেন। রুমে সামর্থ্য বেগম ছাড়া কেউ নেই। এর মধ্যে দেখলো চুমকি রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছে। তূর্য ওকে দেখে বললো ”
_তোর ভাবীকে দেখেছিস ?
_নাহ্ তো ভাইজান দেহি নাই।
“তূর্য এবার পড়লো মহা বিপদে। এই মেয়ে কি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলো নাকি একটা বিড়ালের দুঃখে। তূর্য হুট করেই দেখলো গেস্ট রুমের দরজা চাপানো। সচারাচর এটা বাইরে থেকে বন্ধ থাকে। তূর্য বুঝলো মহারানী দুঃখে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তূর্য সোজা চলে গেলো গেস্ট রুমে। সায়রা এক কাত হয়ে শুয়ে কাঁদছে। মূলত তূর্যর এতো ভালো ব্যবহার এর পর ওমন করাটা সায়রাকে কষ্ট দিচ্ছে। তূর্য বুঝলো সায়রা কাঁদছে। তূর্য নিজোও মানে সে একটু বেশি করে ফেলেছে। তূর্য বিছানায় পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললো ”
_এভাবে মরা কান্না কাঁদছো কার জন্য ?
“সায়রা চমকে গিয়ে উঠে বসলো। তূর্যর দিকে চেয়ে দ্রুত চোখ মুছলো। নাক মুখ লাল হয়ে গেছে একেবারে। তূর্যর এবার দুঃখ ও লাগছে সাথে হাসি ও পাচ্ছে। এমন ভাবে কাঁদছে মনে হচ্ছে তূর্য ওকে আধঘন্টা পিটিয়েছে। তূর্য হাসি চেপে রেখে বললো ”
_কি হলো। তোমার জামাই মেরেছে তোমাকে নাকি।
“সায়রা এবার রেগে গেলো। বিছানা থেকে উঠে এসে তূর্যর সামনে দাড়িয়ে বললো কাঁদতে কাঁদতে বললো ”
_আপনি কি মনে করেন বলুন তো নিজেকে। আমি মানুষ নই। আপনার চাকরি করি বলি যা তা ব্যবহার করবেন। কেনো আপনি আমার টুকটুকিকে ফেলে দিলেন? কেনো বলুন ? পরিষ্কার করে দিয়েছি আপনার রুম। আমি ও থাকবো না আর। যান গিয়ে শান্তিতে ঘুমান এবার।
“কথাগুলো বলতে দেড়ি তূর্য আচমকাই সায়রাকে পাজা কোলে তুলে নিলো। সায়রা অবাক হয়ে তূর্যর কাছে থেকে ছাড়া পেতে চাইলো। তূর্য ছাড়লো না। এদিকে রুম থেকে বের হতেই এ দৃশ্য চুমকি দেখে ফেললো। আড়াল থেকে দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে। সায়রাকে তূর্য কোলে করে একেবারে রুমে এনে বিছানায় নিয়ে ফেললো। পরপর সায়রা দিকে চেয়ে বললো ”
_তুমি ও এই রুমে থাকবে। তোমার টুকটুকি ও থাকবে। এনে দিচ্ছি তোমার টুকটুকিকে। এই রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তোমার পা ভেঙে গুঁড়ো গুড়ো করে ফেলবো।
“কথাটা বলে তূর্য বেরিয়ে গেলো। বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে গেলো । সায়রা ওভাবেই বিছানায় বসে রইলো। তূর্য ওকে কোলে করে নিয়ে এলো এই রুমে ভাবতেই সায়রার জান শুখিয়ে যাচ্ছে। তূর্য ফিরে এলো মিনিট পাঁচেক পর। একটা মাঝারি আকারের খাঁচার মধ্যে বিড়ালটাকে নিয়ে। সায়রা খাঁচার মধ্যে টুকটুকিকে দেখে খুশি হয়ে ছুটে এলো। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো ”
_খবরদার ওকে খাঁচা থেকে বের করবে না। ও ওখানেই থাকবে।
“সায়রা অসহায়ের মতো চেয়ে রইলো তূর্যর দিকে। এ কেমন জুতা মেরো গরু দান। সায়রাকে ওমন করে চেয়ে থাকতে দেখে তূর্য হাটু গেড়ে বসলো। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_এনে তো দিয়েছি। এখন আবার ওমন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকবে না। তুমি অসুস্থ। কাল থেকে অফিসে ও যাবে। এখন ঘুমাও।
“সায়রা টুকটুকির দিকে তাকালো৷ এরপর বললো ”
_তখন কি আপনি খাঁচা আনতেই গিয়েছিলেন ?
_হু।
“সায়রা মুচকি হাসলো। সে খুশি হয়নি এমন নয়। খুব খুশি হয়েছে। তূর্য তাকে এতোটুকু ইম্পরট্যান্ট ভাবে যে সায়রার রাগ তূর্যকে কাবু করেছে। তূর্য উঠে গিয়ে শুয়ে পড়লো নিজের জায়গায়। একটু পড়ে অনুভব করলো সায়রা ও রুমের বাতি নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু আজ আর মাঝে বাকিশ দিলো না। তূর্য মনপ মনে ভাবলো রোজ বালিশ দিয়ে ও এই মেয়েকে আটকে রাখা যায় না। তূর্যর উপর এসে চেপে বসে। আজ না জানি কি করে ”
“মাঝরাতে তূর্য দেখলো যা ভেবেছিলো তাই। সায়রা তার বুকের মধ্যে। গলার উপর দিয়ে হাত দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। কতোরাগ তূর্য নিজেকে কনট্রোল করেছে। এই মেয়ের হাত ঠিক কোথায় কেথায় যায় যদি এই মেয়ে জানতো। আজ আর তূর্য সায়রাকে সরালো না। উল্টো সায়রাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। সায়রার চুলে থেকে অন্য রকম একটা ঘ্রান আসছে। তূর্য নিজের সঙ্গে যতোবারই সায়রাকে চেপে ধরছে সায়রার কাটা হাতে চাপ লেগে কপমন একটা আওয়াজ করে উঠছে। তূর্য চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রাখলো। আর কতো সয্য করবে। কতোদিন সয্য করবে। এভাবে তূর্যকে তিলেতিলে মারা হচ্ছে কেনো ? তূর্য যেদিন কনট্রোল হারিয়ে ভুলভাল কিছু করে বসবে সেদিন।
তূর্য এক মনে এসব ভাবে তো আরেক মনে ভাবে তারা কোনো স্বাভাবিক সম্পর্কে নেই। এটা একটা ডিল মাএ। আবার এই পুচকে মেয়ে নিজের দেওয়া শর্ত রোজ নিজেই ভাঙে। এমন জীবন কেনো ? তূর্য চেয়ে রইলো সায়রার মুখের দিকে। মুখের উপর পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে তূর্য একটা অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করলো। সায়রার কপালে গভীর এক চুমু খেলো। লোভে পড়ে নাকি দূর্বল হয়ে তূর্য জানে না। সায়রা এখন তার। সে এটাই মানে। এই মেয়ে তার বউ ”
“সকালে সায়রা তাড়াতাড়ি উঠেছে। আজ থেকে অফিস যেতে হবে। তূর্য হাঁটতে বের হয়েছে। সায়রা আগে টুকটুকিকে খাবার দিলো। খাঁচা থেকে বের করলো না। সায়রা নিচে গিয়ে দেখলো চুমকি নাস্তা বানাচ্ছে। সায়রা গিয়ে চা বসালো। চুমকি সায়রাকে দেখছে আর মুচকি হাসছে। সায়রা কয়েকবার খেয়াল করে ও জিজ্ঞেস করলো না। কি ভেবে হাসছে কে জানে।
সায়রা চা বানিয়ে তূর্যর জন্য কফি ও বানালো। তূর্য ততক্ষণে ফিরে রুমে চলে গেছে। সায়রা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আগে রুমে গিয়ে কফি রেখে আসলো। এরপর আবার নিচে নামলো। সামর্থ্য বেগম ও এসেছেন নাস্তা করতে। সায়রা সামর্থ্য বেগমকে নিজেই নাস্তা তুলে দিলো। সামর্থ্য বেগম সায়রার হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো ”
_কিরে, কাল রাতে কি হয়েছিলো তোদের ? আমার নাতী কি করেছিলো হু ?
“কথাটা বলে সামর্থ্য বেগম মুচকি হাসতে লাগলেন। সায়রা বুঝলো না সামর্থ্য বেগম কি করে জানলো কাল কিছু হয়েছে। সায়রা বললো ”
_নাহ্ কিছু হয়নি তো। কি হবে?
“সামর্থ্য বেগম একটু এগিয়ে এসে কেমন করে যেনো হেঁসে বললো ”
_মনোমালিন্য হয়েছিলো বুঝি। আমার নাতী টা কি খুব বেশি জ্বালায় হু ? গেস্ট রুমে চলে এসেছিলি কেনো ?
“সায়রা এবার বুঝলো। এ কথা হয়তো চুমকি বলেছে। সায়রা মাথা নিচু করে বসে রইলো। যেনো জানে এরপর কি বলবে সামর্থ্য বেগম ”
_কাল রাতে নাকি আমার নাতী কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেছে। এতো রাগ করতে হয়। মরদ মানুষ। তাগড়া যুবক এহন ও৷একটু বেশি তো করবো ই। একটু সইতে পারস না।
“সায়রা সামর্থ্য বেগমের কথার মানে বুঝতে পেরে থ মেরে বসে আছে। কি বলছে। ঝগড়া হলো বিড়াল নিয়ে । তিলকে তাল বানিয়ে দিচ্ছে ”
_দাদি আপনি যা ভাবছেন তা নয়। বিড়াল নিয়ে,,,,
“সায়রা কথা শেষ করতে পারলো না৷ সামর্থ্য বেগম থামিয়ে দিয়ে বললেন ”
_বুঝি আমি। এই সময় আমি ও পার করে এসেছি।
“কথাটা বলেই তিনি হাসলেন। দোষ ওনার ও নয়। আগের মানুষ এমনই। এর মধ্যে তূর্য একেবারে রেডি হয়ে এসে টেবিলে বসলো। সায়রা বসে চুপচাপ খাচ্ছে
সামর্থ্য বেগম তখন তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললো ”
_ও তূর্য কাল রাতে,,,,।
“সামর্থ্য বেগম এইটুকু বলতেই সায়রা সঙ্গে সঙ্গে খাবার রেখে উঠে দাড়ালো। সামর্থ্য বেগম এর দিকে চেয়ে বললো ”
_আমি রেডি হয়ে আসি। অফিসে যেতে হবে তো।
“সায়রা দ্রুত পায়ে চলে গেলো উপরে। সামর্থ্য বেগম হাসলেন। মেয়েটা বোধহয় লজ্জা পেয়েছে। সামর্থ্য বেগম এবার তূর্যর দিকে তাকালো। তূর্য খাচ্ছে। সামর্থ্য বেগম কথাটা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বললেন”
_বলছিলাম কি সায়রা তো এখনো ছোট। তুই ওর থেকে কতো বড়। একটু খেয়াল তো রাখতে পারিস।
“তূর্য ভ্রু কুচকে সামর্থ্য বেগম এর দিকে চেয়ে বললো ”
_আর কিভাবে খেয়াল রাখবো ?
_নাহ্, দেখবি ওর কোথায় সমস্যা হয়৷ কিছুতে কষ্ট হয় কিনা। নতুন নতুন সমস্যা হয় কতোরকম। একটু রয়ে সয়ে,,,,।
“সামর্থ্য বেগমের কথা তূর্য ধরে ফেললো। এই মেয়ে কি দাদীকে এসব বলে বেড়াচ্ছে। তূর্যর আর খাওয়া গলা দিয়ে নামলো না । সায়রা ও ততক্ষণে রেডি হয়ে এসেছে। তূর্য আগে বের হলো। সায়রা সামর্থ্য বেগমের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। তূর্য গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছিলো সায়রার। সায়রা দেনামনা করে গাড়িতে উঠে বসলো। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে সায়রার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকালো। সায়রা নিজেও ও বুঝলো না সে আবার নতুন করে কি করেছে। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_তুমি দাদিকে কি বলেছে এসব হু ?
_আমি আবার কি বললাম দাদীকে?
“তূর্য কিছুসময় সায়রার দিকে চেয়ে হুট করেই নিজের সিট থেকে সায়রার সিটের দিকে ঝুকে গেলো। সায়রা ও ওর মাথাটা একটু পিছিয়ে নিলো। তূর্য বললো ”
_কিছুই বলোনি তুমি। তোমার নাকি কি সমস্যা হচ্ছে। কষ্ট হয় নাকি অনেক। আমি রয়ে সয়ে করছি না কিছু হু,,,,, ।
“তূর্যর কথা শুনে সায়রা লজ্জায় শেষ। ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে নেমে ছুটে পালিয়ে যেতে। ইস, কি সব কথা। এসব শুনে ও পাপ। সায়রা বললো ”
_আপনার ভুল হচ্ছে আমি এসব,,,,।
“তূর্য আরো একটু ঝুঁকে গেলো সায়রার দিকে। আরেকটু হলে সায়রার উপরেই পরে যাবে বোধহয়। সায়রা গুটিশুটি হয়ে চেয়ে আছে তূর্যর চোখের দিকে। তূর্য কেমন অন্য রকম কন্ঠে বলে উঠলো”
_যেদিন আমি কিছু করবো। একটু ও রয়ে সয়ে করবো না। রয়ে সয়ে করার ব্যাপারটা ই আমার মধ্যে নেই। আ,ম ওয়াইল্ড। এন্ড আই লাইক হার্ড রোমাঞ্চ।
“কথাটা বলেই তূর্য চোখ মারলো। এরপর সরে এলো নিজের জায়গায়। সায়রার প্রান পাখি আর একটু হলেই উড়াল দিতো। তূর্য গাড়ি স্টার্ট দিলো। সায়রা ভয়ে চুপচাপ হয়প বসে আছে৷ কাদের খপ্পরে পরেছে সে। দাদী নাতী দুটোই পাগল হয়ে গেছে। সাথে সায়রাকে ও পাগল বানিয়ে দিচ্ছে ”
“সারা রাস্তা সায়রা চুপ করে ছিলো। আজ কতোদিন পড়ে অফিসে এসেছে। তূর্য গাড়িটা অফিসের গেটের সামনেই থামালো।সায়রা কিছু না বলেই নেমে গেলো। তূর্য গাড়ি নিয়ে ভেতরে চলে গেলো পার্কিং এ রাখতে। সায়রা ও ভেতরে গেলো। তখনই নাফিস বাইক নিয়ে ঢুকলো। সায়রাকে দেখে বাইক থামিয়ে বললো ”
_আরেহ্ সায়রা খাতুন। ওয়েলকাম টু এসএসটি এলিগেনস।
“সায়রা নাফিসের কথায় হাসলো। তূর্য গাড়ি রেখে এদিকেই আসছিলো। নাফিস আর সায়রাকে হেঁসে হেসে কথা বলতে দেখে এগিয়ে এলো। সায়রা নাফিসকে এমন বাইক হেলমেট কাঁধে ব্যাগ নেওয়া অবস্থায় দেখে বললো ”
_আপনাকে একেবারে বাইকারদের মতো লাগছে। ওই যে ভিডিওতে দেখায় না ওমন।
“নাফিস হেঁসে বললো ”
_তোমার কি তাহলে বাইকার ছেলে পছন্দ সায়রা খাতুন ?
“সায়রা হালকা হেসে বললো ”
_ভীষণ।
_তাহলে চলো তোমাকে একদিন বাইকে করে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাবো। যাবে ?
“নাফিস এ কথা বলতেই তূর্য সেখানে হাজির হলো। সঙ্গে কেশে ও উঠলো। সায়রা আর নাফিস দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। নাফিস বাইকে থেকে নেমে তূর্যকে বললো ”
_গুড মর্নিং স্যার।
_মর্নিং। চলো যাওয়া যাক।
“তূর্য হুট করেই নাফিসের ঘারে হাত রেখে গলা পেচিয়ে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। তখন আবার জেরিন এলো। সায়রাকে দেখেই চিৎকার করে এক দৌড়ে এসে সায়রাকে জড়িয়ে ধরলো। জেরিনের চিৎকার শুনে তূর্য নাফিস দুজনেই পেছন ফিরে তাকালো। জেরিন সায়রাকে জড়িয়ে ধরে আছে দেখে নাফিসের অন্তর কেঁদে উঠলো মনে মনে বললো ”
_এভাবে দৌড়ে এসে তো আমাকে ও জড়িয়ে ধরতে পারে। হু।
“এদিকে নাফিসের গলা পেচিয়ে ধরেই লিফট এর জন্য দাঁড়ালো তূর্য। নাফিস বললো ”
_স্যার আপনি কি ঠিক করেছেন আমার ঘারটা মটকে দেবেন ?
_তুমি আমার বউকে নিয়ে ফুচকা খেতে যাবে নাফিস?তা কবে যাবে?
“কথাটদ বলে তূর্য এমনভাবে নাফিসের দিকে তাকাল। নাফিস বেচারা বুঝলো সে ফেঁসে গেছে। তবুও এক গাল হেঁসে বললো ”
_নাহ্ স্যার। ওটা তো মজা করছিলাম। সায়রা খাতুন তো আমার ছোট্ট বোন। এখন আপনার বউ। আমার ভাবী। ছেড়ে দেন স্যার। আর বলবো না।
“তূর্য হেসে ফেললো। ছেড়ে দিলো নাফিসপর গলা। দুজনেই সুন্দর করে দাড়ালো। এর মধ্যে সায়রা আর জেরিন ও এলো। চারজন এক সাথেই লিফট এ উঠলো। সায়রার পেছনে তূর্য দাড়িয়ে। সায়রার চুলে বেনী করা। সাদা ড্রেস এর সঙ্গে নীল রঙের ওরনা। তূর্য সায়রার মাথার উপর দিয়ে। এতটা লম্বা তূর্য যতটা সময় সায়রার পেছনে দাঁড়িয়ে রইলো শুধু সায়রার বোনীর দিকে নজর দিতে লাগল
এই মেয়ের সব ই সুন্দর ”
চলবে,,
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#বোনাস_পর্ব
“সায়রা আজ অনেকদিন পর অফিসে। নিজের ডেস্কে। পাশে জেরিন বকবক করেই যাচ্ছে কি কি হয়েছে এই কয়দিন অফিসে । এদিকে রকিব এসে সায়রাকে কিছু নতুন ফাইল দিয়ে গেলো। সায়রা সেগুলো দেখতে লাগলো। সব নতুন নতুন ডিজাইন।
বড় কোনো প্রজেক্ট হবে মনে হয়। সায়রা ফাইলগুলো দেখলো। এবার সাইন করাতে হবে। সায়রা যেই তূর্যর কেবিনের দিকে গেলো। তখনই রুহানি ও এলো। দু’জন মুখোমুখি হয়ে গেলো। সায়রার দিকে রুহানি কখনোই ভালো দৃষ্টিতে তাকায় না। কেমন চোখ গরম করে তাকালো সায়রার দিকে। যেনো সায়রাকে অফিসে দেখে মহা বিরক্ত সে। সায়রাকে পাশ কাটিয়ে
কেবিনের ভেতরে চলে গেলো। সায়রা ও ফাইলগুলো নিয়ে গেলো। তূর্যর কেবিনে তখন নাফিস ছিলো। সায়রা আর রুহানিকে এক সাথে দেখে নাফিসের তূর্যর জন্য ভারী আফসোস হলো। তূর্য নিজে ও তাকালো। রুহানি আগে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। সায়রা ফাইল হাতে দাড়িয়ে আছে দেখে নাফিস উঠে গিয়ে সায়রাকে বসতে বলে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। সায়রা বসলো না দাড়িয়ে রইলো। তার ও কাজ।
রুহানি দুটো বক্স বের করে তূর্যর সামনে রাখলো। একটাতে লাল রঙের স্টোন চকচক করছে। আরেকটাতে পার্ল সাদা রঙের। তূর্যকে এগুলো দেখিয়ে রুহানি উঠে চলে আসতে নিতে গিয়ে ও থেমে গিয়ে বললো ”
_তুমি এতোদিন পড়ে কোথায় থেকে উদয় হলে ?
“সায়রা এমনিতে ভদ্র। তবে অপমান নিতে পারে না সে। রুহানির ঢং করা দেখলে একেবারে গা পিওি জ্বলে যায়। তবুও কিছু করার নেই। সায়রা বললো ”
_ছুটিতে ছিলাম।
“রুহানি বেরিয়ে গেলো। তূর্য কাজ করছিলো তাই রুহানি আর সায়রার দিকে খেয়াল করেনি। সায়রা গিয়ে ফাইলগুলো এগিয়ে দিলো। তূর্য একবার তাকালো সায়রার দিকে। মখটা কেমন মলিন হয়ে আছে। অফিসে ঢোকার সময় ও তো কতো খুশি ছিলো। এখন আবার কি হলো ? ফাইল সাইন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সায়রা ফাইল নিয়ে বের হয়ে গেলো। তূর্যর আশেপাশে যতো থাকবে রুহানি এটা নিয়ে বাজে কথা ছড়াবে ”
“তূর্য নাফিসকে নিয়ে বের হলো ব্রেক এর সময়। কি না কি ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।
তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে। নাফিস চুপচাপ বসে আছে কোথায় যাচ্ছে কিছু ই জানে না। একটু পড়ে গাড়ি এসে থামলো একটা বাইকের শো রুমের সামনে। নাফিস চেয়ে আছে। তূর্য নামলো। সঙ্গে নাফিস ও ”
_এখানে এলাম কেনো স্যার ?
_বাইকের শো রুমে মানুষ কেনো আসে?
_বাইক কিনতে।
“তূর্য কিছু বললো না। ভেতরে গেলো। নাফিস ও সঙ্গে গেলো। দুই বছর আগে এখান থেকেই নাফিস বাইক কিনেছিলো। তূর্য ই কিনে দিয়েছিলো। তূর্যর বাইক কোনো কালেই পছন্দ না। তার গাড়ি পছন্দ। তূর্য শো রুমে ঢুকে বাইক দেখতে লাগলো। নাফিস ভীষণ বাইক প্রেমি। এখন আবার ইচ্ছে করছে আরেকটা বাইক কিনতে। কিন্তু এমন অপচয় সম্ভব না। তূর্য বাইক দেখে দেখে একটা আর ওয়ান ফাইভ ইয়ামাহা। পছন্দ করলো। কালো রঙের। নাফিসের ও একই বাইক। নাফিস বললো ”
_আপনি সত্যি ই বাইক কিনবেন স্যার ?
_হু।
_কিন্তু আপনার তো বাইক পছন্দ না। তাহলে ?
“তূর্য বিল পে করছিলো। বিল দিয়ে বাইকের চাবিটা নিয়ে নাফিসের দিকে চেয়ে বললো ”
_মাঝে মাঝে কিছু অপছন্দের জিনিস ও নিজের কাছে রাখতে হয়৷
“নাফিস বুঝলো ডাল মে কুছ তো কালা হ্যায়৷ না হলে যেই লোক এতো টাকা থাকার পর ও কখনো বাইকের সখ করেনি। আজ দশ মিনিটের মধ্যে এতো টাকার বাইক কিনে নিলো। পর মুহূর্তে ই নাফিসের মনে পড়লো সকালের কথা। তূর্য কি কিছু শুনেছিলো নাকি কে জানে। যাওয়ার সময় তূর্য গাড়ি নিলো না৷ একজনকে কল করে দিলো সে এসে গাড়ি বাড়িতে পৌঁছে দেবে। তূর্য বাইকে উঠলো। তার এই এতো বছরের জীবনে তার কেনো যেনো কখন ও বাইকের সখ হয়নি৷ গাড়ির সখ ছিলো কিনেছে। তূর্যর পেছনে নাফিস উঠে বসলো। যাক এবার দুজনে মিলে বাইক চালাবে। নাফিস তো খুশি ”
“সারাদিন চলে গেলো। অফিস ছুটি হলো। আজ বোধহয় কপালে শনির দশা ছিলো। রুহানি কিছুতেই তূর্যর পেছন ছাড়ছে না। সায়রা আর জেরিন আগে থেকেই লিফট এর সামনে দাড়িয়ে ছিলো। একটু পরে নাফিস তূর্য আর রুহানি এলো। রুহানিকে তূর্যর সাথে এমন করে আসতে দেখে সায়রা চেপেচুপে দাড়ালো।
রুহানি ও সায়রাকে দেখে আরো তূর্যর সাথে ঘেঁসে দাড়ালো। যদিও তূর্য বারবার সরে দাড়াচ্ছে। এদিকে নাফিস রুহানির উপর মহূ বিরক্ত। মনে মনে বকেই যাচ্ছে। এই শেওরা গাছের ভূতটা কেন সব জায়গায় এসে হাজির হয় কে জানে।
লিফট খুললো। সায়রা জেরিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে আগে গিয়ে ভেতরে দাঁড়ালো। এরপর নাফিস ঢুকলো। সে জেরিনের সামনে দাড়ালো। রুহানি আর তূর্য ও ঢুকলো। কিন্তু তূর্য রুহানির পাশে দাড়ালো না। একটু পিছিয়ে গিয়ে সায়রার পাশে দাড়ালো। সায়রা সঙ্গে সঙ্গে একটু চেপে দাঁড়াতে গেলেই তূর্য সায়রার ওরনা হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখলো যেনো সরে যেতে না পারে। সায়রা ও কম যায় না। কয়েকবার ইশারা করে ওরনা ছাড়তে বললেও তূর্য তাকালোই না৷ সায়রা এবার ইচ্ছে করে তূর্যর হাতে খামচি মেরে দিলো। তূর্য তাতে ও ছাড়লো না ওরনা।
নিচের তালায় এসে লিফট খুলতেই তূর্য সায়রার ওরনা ছেড়ে দিয়ে ভদ্রলোক এর মতো বের হলো। সায়রা আর জেরিন ও বের হলো।
রুহানি নিজের গাড়ির সামনে দাড়িয়ে বললো ”
_তোর গাড়ি কোথায় তূর্য ? বাসায় যাবি কি করে ?
“তূর্য আর যাই হোক এই রুহানির আজাইরা পেচাল নিতে পারে না। এদিকে সায়রা ও গেটের দিকে চলে যাচ্ছে। তূর্য বললো ”
_গাড়িতে একটু সমস্যা হয়েছে। আমি চলে যাবো। তুই যা।
_কিন্তু কি করে যাবি ?
“নাফিস এবার এগিয়ে এলো। এক গাল হেঁসে রুহানিকে বললো ”
_কেনো আমি আছি না। আমার বাইকে করে যাবে। আপনি চলে যান ম্যাডাম।
“তূর্য বারবার গেটের দিকে তাকাচ্ছে। রুহানি ওর গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। এদিকে জেরিন চলে গেছে। সায়রা একা দাড়িয়ে আছে। নাফিস ও নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো। তূর্য এবার বাইকে উঠলো। এক টানে একেবারে সায়রার সামনে এসে বাইক থামালো
সায়রা কিছুটা পিছিয়ে গেলো। তূর্যকে বাইকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো। তূর্য ইশারায় উঠতে বললো বাইকে ”
_বাইক কেনো ? আপনার গাড়ি কোথায় ?
_বেঁচে দিয়েছি।
_গাড়ি বেঁচে বাইক কিনেছেন?
“তূর্য ভ্রু কুচকে সায়রাকে জিজ্ঞেস করলো ”
_আমাকে এতো ফকির মনে হয় তোমার ?
_তাহলে হঠাৎ বাইক যে,,,, ।
_ইচ্ছে হলো তাই। এবার কি উঠবে। বাড়ি যেতে হবে না।
“সায়রার মাথায় কিছুই ঢুকলো না। বাইকে উঠলো। তূর্যর কাঁধে আস্তে করে হাত রাখলো। তূর্য সামান্য হাসলো। এরপর ই বাক টান দিতেই সায়রা ঝুঁকে পড়লো তূর্যর দিকে। এর জন্য ই তূর্য হেসেছিলো। সায়রা ভালো করে ধরে বসলো । চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু ওরা দেখলো না ওদের দিকে কারো নজর এতোটা সময় টিকে ছিলো। কেউ ওদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো ”
“বাড়ি পৌঁছে তূর্যর বাইক কেনার খবরটা সামর্থ্য বেগম এর কানে যেতেই তিনি তূর্যকে ডাকলেন নিজের রুমে। সায়রা তখন ফ্রেশ হতে গেছে। তূর্য সামর্থ্য বেগম এর রুমে এসে সামর্থ্য বেগম এর গাল টেনে দিলো ”
_কি হয়েছে বুড়িন।এতো জরুরি তলব । আরেকটা বিয়ে করতে বলবে নাকি।
“কথাটা বলেই তূর্য হাসলো। সামর্থ্য বেগম বললেন”
_তুই নাকি বাইক কিনেছিস ?
_কিনলাম তো।
_গাড়ি থাকতে বাইক কেনো ?
“তূর্য সামান্য হাসলো। এরপর যা বললো সামর্থ্য বেগম নিজেও হতবাক হলেন”
_বউয়ের বাইক পছন্দ তাই।
“সামর্থ্য বেগম এবার নাতীর দিকে চেয়ে হেসে বললেন ”
_এমা, তুই দেখি বউ পাগল হয়ে যাচ্ছিস।
_তোমার জন্য ই তো বুড়ি। এবার বোঝো ঠেলা।
_আমি ঠেলা বুঝবো না। আমি তো এটাই চাইছিলাম।
“তূর্য কিছু বললো না। তাকে একটু বাইরে যেতে হবে।
তূর্য বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলো। সামর্থ্য বেগম নাতীর দিকে চেয়ে রইলেন। সায়রা আসার পর থেকে তার নাতীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তূর্য এখন কথায় কথায় বিরক্ত হয় না৷ তূর্যকে এখন হাসতে দেখা যায়। সায়রার সাথে খুনসুটি লেগেই থাকে। সামর্থ্য বেগম এর বিশ্বাস ছিলো সায়রার উপর। ওই মেয়ে ই পারবে তূর্যকে তূর্যর মতো করে সামলাতে ”
“তূর্য ফের রুমে এলো গাড়ির চাবি নিতে। দরজা চাপানো ছিলো। তূর্য দরজা হালকা খুলতেই দেখলো সায়রা আয়নার সামনে দাড়িয়ে নাচছে। ঢং করছে তার গুনগুন করে করে গান গাইছে ”
“মন ভাসাইয়া প্রেমের সম্পানে ”
“মন থাকে রে তোমার সন্ধানে ”
“আগুন জ্বালাইয়া মনের লন্ঠনে”
“আছো লুকাইয়া, তুমি কোন খানে”
“নয়ন ও ঘুরাইয়া খুজি, তোমারে তোমারে”
“শেষ বার যখন দরজার দিকে ফিরে তোমারে বলতে গেলো। ওমনেই দেখলো তূর্য দরজার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সায়রা লজ্জায় সঙ্গে সঙ্গে চুপ হয়ে গেলো। এদিকে ওর গায়ে ওরনা নেই। সায়রা তাড়াতাড়ি বিছানার উপর থেকে ওরনাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো। তূর্য মুখ চেপে হেসে বললো ”
_আরেহ্, থামলে কেনো ? ভালোই তো লাগছিলো। প্লিজ কন্টিনিউ।
“সায়রার লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। না জানি কখন থেকে দেখছিলো। সায়রা রেগে গিয়ে বললো ”
_দেখুন সাদমান শাহারিয়ার তূর্য, এটা কিন্তু ঠিক না। আপনি,,,
“সায়রা পুরো কথাটা শেষ ও করতে পারলো না। তূর্য সায়রার দিকে এগিয়ে এসে সায়রার সামনে দাড়িয়ে বললো ”
_হোয়াট ডিড ইউ সে। সে ইট এগেইন।
“সায়রা তূর্যর চোখের দিকে তাকালো। কেমন করে যেনো চেয়ে আছে সায়রার দিকে। চেয়ে থাকুক তাতে কি সায়রা ভয় পায় নাকি। সায়রা ফের বললো ”
_সাদমান শাহারিয়ার তুর্য ।
“তূর্য মুচকি হেসে ফের বললো ”
_সেই,ড এগেইন।
“সায়রা এবার একটু নড়বড়ে হয়ে গেলো। বারবার নাম বলতে বলছে কেনো। সায়রা ফের বললো ”
_সা,,সাদমান,,, । আপনার সমস্যা কি বলুন তো ?
“তূর্য এবার শব্দ করে হেঁসে ফেললো। সায়রা তাকে ভয় পাচ্ছে। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”
_ভয় পাচ্ছো তুমি?
_ভয় কেনো পাবো। আপনি বাঘ না ভাল্লুক।
“তূর্য এবার সায়রার দিকে ঝুকে বললো ”
_আমি সাদমান শাহারিয়ার তুর্য। এন্ড হোয়েন ইউ সেইড, সাদমান শাহারিয়ার তূর্য। আই লাইক ইট। প্লিজ অলওয়েজ কল মি লাইক দ্যাট।
“কথাটা বলে তূর্য সায়রার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো গাড়ির চাবি নিতে। সায়রা থ মেরে দাড়িয়ে রইলো। এই লোকের হয়েছে। কি। আজকাল কেমন কোমন করে যেনো কথা বলে। সায়রার বুকে কাঁপন ধরে যায়। এতো নেশা কেনে এই বজ্জাত লোকটার কন্ঠে।
সায়রার এসব ভাবনার মাঝেই তূর্য পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো ”
_নাচটা এখন কন্টিনিউ করতে পারো। আমি আর দেখবো না।
“দরজার কাছে গিয়ে পেছন ফিরে বললো ”
_কিন্তু খেয়াল রেখো। ওরনাটা যেনো জায়গায় থাকে।
“কথাটা বলে তূর্য বেরিয়ে গেলো। শেষ এর কথা দ্বারা কি বুঝালো সায়রার বুঝতে সময় লাগলো না। ছি ছি। ভারী অসভ্য লোক। মুখে লাগাম নেই একটু ও ”
“সায়রা আর সামর্থ্য বেগম এর সঙ্গে খেতে বসেছে। তূর্য একটু আগে ফিরেছে৷ রুমে গেছে ফ্রেশ হতে। সায়রা টুকটুকিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। নিচে এসে খাঁচা থেকে বের করে দিয়েছে। যাতো ঘুরে বেড়াতে পারে। বিড়াল কি আর খাচায় করে পালা যায়। কিন্তু এটা তূর্যকে কে বুঝাবো।
সায়রা আর সামর্থ্য বেগম খাচ্ছে। আর টুকটাক কথা বলছে। এমন সময় তূর্য এলো ফোনে কথা বলতে বলতে। এসে চেয়ার টেনে বসলো। কলটা কেটে ফোনটা রাখতেই সামর্থ্য বেগম বলে উঠলো ”
_কোথায় যাওয়ার আছে নাকি তোর ?
_হু। এখন না। সামনের মাসের শেষ এর দিকে।
_আজ কয়,তারিখ ভুলে যাচ্ছিস ? মোহনগঞ্জ যেতে হবে না।
“তূর্য থেমে গেলো। এই একটা জায়গার নাম শুনলে তূর্য কেমন যেনো হয়ে যায়। এদিকে সায়রা চেয়ে আছে। মোহনগঞ্জ। এটা আবার কোথায় ?
তূর্য বললো ”
_এখনো দশদিন বাকি আছে।
_এবার সময় নিয়ে যেতে হবে। আমার সঙ্গে জাফরের কথা হয়েছে। সেই হিসেব করেই সময় বের করবি।
_আমি একদিনের বেশি থাকছি না।
_একদিন তো সব কাজেই চলে যাবে। বিয়ে জাফরের মেয়ের। তুই কখনো যাস না। কি মনে করে ওরা।
“সায়রার ওদের কথা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ৃএই জাফরটা আবার কে? কার বিয়ে। তূর্য কেন যেতে চাইছে না। সামর্থ্য বেগম আবার বললেন”
_তুই বিয়ে করেছিস। ওদের তো হক আছে তোর বউ দেখার। বিশ তারিখ সন্ধায় যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।
_যা ভালো মনে হয় করো।
” তূর্য অর্ধেক খেয়ে ই উঠে চলে গেলো। সায়রার আর সাহস হলো না কিছু জিজ্ঞেস করার। সামর্থ্য বেগম নিজেই বললো ”
_মোহনগঞ্জ এর কথা শুনেই ওর মন খারাপ হয়ে যায়। এভাবে আর কতোদিন চলবে কে জানে।
_মোহনগঞ্জ কি আছে দাদী ?
_তূর্যর সব কিছু। ওর শৈশব আছে মোহনগঞ্জ এ। আমার এ একটা ভিটা ছিলো মোহনগঞ্জ এ৷ যাচ্ছিস তো। সব দেখতে পাবি। শুধু দেখবি ও যেনো কয়েকদিন থাকতে রাজি হয়।
“কথাটা বলে সামর্থ্য বেগম চলে গেলেন। সায়রা বসে রইলো। মোহনগঞ্জ এ তূর্যর সব আছে। তারমানে মোহনগঞ্জ এ তূর্য বড় হয়েছে। গ্রামের বাড়ি তূর্যর। দেকে তো মনেই হয়। খুব শহুরে বাবু মনে হয়। সায়রা ও যাচ্ছে মোহনগঞ্জ। সব রহস্য বের করে ছাড়বে এবার। ওই গোমরামুখোর পেছনে আসল কারন কি সায়রা জানবেই”
চলবে,,,