ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-২৭+২৮

0
2

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#২৭

“দেখতে দেখতে সময় যাচ্ছে। সায়রা এই বাড়িতে এসেছে অনেকদিন হতে চললো। ইদানীং সায়রার মনে হয় এটা ই তর বাড়ি। জীবনে সে যে যত্নের অভাববোধ করে এসেছে তা এখানে সে পাচ্ছে।
সায়রা ঘুম থেকে উঠে আগে টুকটুকির কাছে গেলো।
তূর্য নেই৷ হয়তো হাটতে বেরিয়েছে। সায়রা রুমে এসে
ফ্রেশ হয়ে আবার নিচে যাচ্ছে তখনই দেখলো তূর্য উপরে উঠছে। সায়রা তাড়াহুড়ো করে নামছিলো। ব্রেক করতে না পেরে পা পিছলে পরেই যাচ্ছিলো তূর্য দেখতে পেয়ে দ্রুত এসে হাত চেপে ধরলো। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_অন্ধ তুমি। এখান থেকে পড়ে গেলে মুখের নকশা বদলে যাবে। ইডিয়েট।

“তূর্য সায়রাকে ছেড়ে দিয়ে দাড়ালো। পাশ কাটিয়ে চলে গেলো উপরে। সায়রা গেলো সামর্থ্য বেগমের কাছে ”

“তূর্য রুমে এসে জামাকাপড় নিয়ে সাওয়ার নিতে যাবে ওমন সময় বিছানার উপরে রাখা সায়রার ফোনটা বেজে উঠলো। তূর্য ভাবলো গিয়ে দেখবে কে কল করেছে। কিন্তু ততক্ষণে কল কেটে গেছে৷ পরপর আবার কল বেজে উঠলো। সায়রা রুমে নেই। তূর্য বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো হোম নামে সেভ করা নাম্বার থেকে কল। তূর্য ভাবলো কলটা ধরবে কিনা৷ পর মুহুর্তে ই কল কেটে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে আবার কল এলো। এবার তূর্য কলটা ধরে ফোনটা কানের কাছে নিতেই কিছু অকথ্য ভাষায় গালি শুনলো ”

_এই হারামজাদি, ফোন ধরিস না কেন। কোন মা*গী পাড়ায় গিয়ে ঠায় নিয়েছিস৷ নাকি ওই বড় লোক বসের সঙ্গে আছিস। এতো বললি মাস শেষে টাকা দিবি। আর যেনো তোকে কল না করি। তোর বাপ যে বিছানায় পরা। তার চিকিৎসার টাকা কে দেবে। জলদি টাকা পাঠা৷ আমার হাতে টাকা নেই৷

“কথাগুলো তূর্যর কানে যেতেই তূর্যর পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। এটা সায়রার মায়ের কন্ঠ। কেউ নিজের মেয়েকে এভাবে বলতে পারে কখনো। তূর্য আর কিছু শুনলো না৷ রাগে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে। সায়রা কেন এসব সয্য করছে। এইটুকু বয়সে চাকরি, টিউশনি পড়াশোনা। সব কিছু তূর্যর মাথায় ঘুরছে।
তূর্য ফোনটা রেখে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেলো। সাওয়ার এর নিচে দাড়িয়ে আছে৷ বারবার কানে শুধু একটা কথাই বাজছে। সায়রা তার বউ। সায়রাকে কেউ এভাবে বলতে পারে না। তূর্য সাওয়ার নিয়ে বের হয়েই দেখলো সায়রা কফি নিয়ে এসেছে তূর্যর জন্য।
সায়রাকে দেখেই ফের ওই কথাগুলো মনে হলো। ইচ্ছে করছে সায়রাকে সামনে বসিয়ে সব জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু তার আগে ওই মহিলার একটা বিহিত তূর্য করবে। তূর্য সায়রার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_নাস্তা করেছো ?

“সায়রা নিজের জামাকাপড় বের করছিলো। রেডি হবে অফিসে যাওয়ার জন্য। তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_মাএ ই করে আসলাম।

“তূর্য আর কিছু বললো না। সায়রা রেডি হতে চলে গেলো। এর মাঝে তূর্য ও তৈরি হয়ে নিলো। সায়রা ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে চুলে বেনী করতে লাগলো। তূর্য সায়রার ঠিক পেছনে দাড়িয়ে টাই বাঁধছে। দুজনেই আয়নার দিকে চেয়ে। তূর্য সায়রাকে দেখছে শুধু আড় চোখে চেয়ে।
দুজনে এক সাথেই বের হলো অফিসের জন্য। বাইকে। তূর্য বাইক চালাচ্ছে আর লুকিং গ্লাসে বারবার সায়রাকে দেখছে। তূর্য কেনো যেনো নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না। নাফিসকে আগেই টেক্সট করে দিয়েছে। অফিসের থেকে কিছুটা আগেই সায়রা নেমে গেলো। তূর্য বাইকেই বসে আছে দেখে সায়রা জিজ্ঞেস করলো ”

_যাবেন না ?

“তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে সায়রাকে ইশারায় একটু কাছে ডাকলো। সায়রা একটু কাছে এসে দাড়াতেই তূর্য সায়রার ওরনার কোনা টেনে নিয়ে নিজের মুখ মুছলো। রোদের মধ্যে ঘেমে গেছে। সায়রা কিছু বলার আগেই তূর্য বললো

_যাও এখন।

_আপনি যাবেন না ?

_একটু কাজ আছে।

” সায়রা আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। হেটে চলে গেলো। এর মধ্যে নাফিস ও চলে এলো। তূর্য কিছুটা নাফিসকে মেসেজ করেই বলেছে। নাফিস আসতেই আবার ওরা রওনা হলো। তূর্যর শরীরটা এখনো রাগে কাঁপছে ”

“আধ ঘন্টার মধ্যে সায়রাদের বাসার সামনে এসে বাইক থামালো দুজনে। নাফিস আজ তূর্যকে দেখে ভয় ই লাগছে। পুরো ঘটনা সে জানেনা। শুধু একটা মেসেজ সঙ্গে যেতে হবে। সেটা পেয়েই চলে এসেছে।
জানে ও না এটা কার বাড়ি। নাফিস বাইক থেকে নেমে বললো ”

_স্যার এটা কার বাড়ি ?

_এটা আমার শ্বশুর বাড়ি । আর এসেছি শ্বাশুড়িকে একটু আপ্যায়ন করতে।

“নাফিস হেসে বললো ”

_শ্বাশুড়ি না আপনার আপ্যায়ন করবে স্যার। আপনি কেন করবেন ?

“তূর্য কিছু বললো না। গেটের মধ্যে হাত দিয়ে বারি দিলো। একবার দিতেই কোকিলা বেগম এসে গেট খুলে দিলেন। গেট খুলেতেই তূর্যকে দেখে তিনি থমকে গেলেন। এই ছেলে এখানে কেনো এসেছে? টাকা চাইতে নয়তো। কোকিলা বেগম তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_তুমি এখানে।

_চিনতে পেড়েছেন। আমি তো ভেবেছিলাম মনে থাকবে না। যাক ভালোই হলো।

“তূর্য ইশারায় কোকিলা বেগমকে গেট থেকে সরে দাঁড়াতে বললেন। কোকিলা বেগম ভয়ে ভয়ে সরে দাড়ালেন। তূর্য বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। নাফিস ও ঢুকলো। নাফিস কোকিলা বেগমের দিকে চেয়ে আছে। এটা মহিলা নাকি পালোয়ান বোঝা মুশকিল।
তূর্য গিয়ে বসার ঘরের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে
বসলো। কোকিলা বেগমকে ও ইশারা করে বললো ”

_বসুন। বসে কথা বলি।

_আসলে, তুমি তো তোমার টাকা টা ই চাইতে এসেছো। ওই টাকা সায়রা নিয়েছে। ওই মেয়ে এখন গা ঢাকা দিয়েছে। এক মাস হলো। বাড়ি নেই ওই মেয়ে।

“তূর্য একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললো ”

_কোথায় গেছে তাহলে আপনার মেয়ে ?

“কোকিলা বেগম এ কথা শুনে নাক ছিটকে বললেন ”

_ওই মেয়ে আমার না। আমি ওর মা নই৷

“নাফিস পাশ থেকে বলে উঠলো ”

__তাহলে ওর মা কে ?

_ওর মায়ের নাম শান্তি। মরে গেছে। আমি ওর সৎ মা।

“তূর্য এই পর্যায় দাড়ালো। কোকিলা বেগমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো ”

_সৎ মা হলে ও কি। এক মাস ধরে মেয়েটা কোথায় আছে ? সেই খবর নেই আপনার কাছে ?

_নাহ্ নেই।

_সকালে আপনিই কল করেছিলেন না সায়রাকে ?

“তূর্যর কথা শুনে কোকিলদ বেগম ভরকে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন”

_তুমি কি করে জানলে ?

_টাকার জন্য কল করেছিলেন৷ কতো টাকা চাই আপনার ?

_কেনো তুমি দিবে নাকি ?

“তূর্য তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো ”

_ধরুন দিলাম। তবে এর বিনিময়ে আপনাকে ও একটা কাজ করতে হবে।

_কি কাজ ?

_আপনি সায়রাকে কল করে এখানে ডাকবেন এক্ষনি। ও আসবে। আর আপনি ওর পা ধরে বসে থাকবেন। মাফ চাইবেন। ঠিক ততক্ষণ বসে থাকবেন। যতোক্ষন না আমার বউ আপনাকে মাফ করে।

“তূর্যর মুখে আমার বউ কথাটা শুনে কোকিলা বোগম কেমন করে তাকালেন। বলে উঠলো ”

_বউ মানে। ওই মেয়ে কি তোমাকে ফাঁসিয়েছে। ওই মেয়ের চরিএ খারাপ,,,,,,,,,, ।

“কথাটা আর শেষ করতে পারলো না। তূর্য গলা চেপে ধরলো কোকিলা বেগমের। গলা চেপে ধরে নিয়ে সোজা দেয়ালের সঙ্গে ঠেকিয়ে ফেললো। তূর্যর চোখ অগ্নিরুপ ধারন করেছে। সকাল থেকে ওইসব কথা শুনে এমনেই মাথা খারাপ ছিলো। তূর্য কোকিলা বেগমের দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো ”

_একেবারে চুপ। আমার বউয়ের চরিএ নিয়ে কোনো প্রশ্ন না। সায়রা আজমীর বউ হয় আমার৷ ওর চরিএ নিয়ে কথা বললে মাটিতে পুতে রেখে যাবো।

“কোকিলা বেগমের গলা ছেড়ে দিলো তূর্য। কোকিলা বেগম নিজের গলা ধরে চেয়ে রইলো তূর্যর দিকে। তূর্য রাগে ফুঁসছে। এদিকে নাফিস হতবাক। এমন রাগতে সে তূর্যকে কখনো দেখেনি। কোকিলা বেগম তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।

_বেশি কথা বললে আপনার এই বালের বাড়ি আমি বোম মেরে উড়িয়ে দেবো। এখনো সময় আছে৷ কল করুন সায়রাকে।

_আমি ওই মেয়ের পা ধরবো না। কক্ষনো না।

“তূর্য এবার শব্দ করে হাসলো। কোকিলা বেগমের দিকে চেয়ে বললো ”

_তাহলে জেলের ভাত খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিন।
আপনি আমার বউকে না জানি কবে থেকে এমন করে জ্বালাচ্ছেন। আপনার কল রেকর্ড আমি পুলিশের কাছে দেবো। নাফিস পুলিশকে কল করো।

“কোকিলা বেগম এই কথা শুনে দৌড়ে এসে তূর্যর পায়ের কাছে বসে পড়লো। আকুতি করতে করতে বললো ”

_আমি সায়রার পা ধরবো। মাফ চাইবো। যা বলবে তাই করবো৷ পুলিশ ডেকো না।

_ভেরি গুড। যান কল করুন।

“কোকিলা বেগম ভয় পেয়েছে। কল রেকর্ড পুলিশে দিলে তিনি ফেসে যেতেন। কোকিলা বেগম ফোন নিয়ে আসলেন। সায়রাকে কল করা হলো। তূর্য ই বলে দিলো কি বলতে হবে৷ কোকিলা বেগম ও তাই বললেন। সায়রা আসছে। তূর্য আবার গিয়ে সোফায় পা তুলে বসলো। নাফিস এতোটা সময় শুধু দেখে গেছে কি হচ্ছে। তূর্যকে সায়রার জন্য লড়তে দেখে নাফিস খুশি হলো। কোকিলা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। তূর্য এবার বললো, ”

_মাথায় হাত দিয়ে বসে না থেকে মেয়ের জামাই এসেছে৷ একটু শরবত ও তো খাওয়াতে পারেন। ভন্ড শ্বাশুড়ি।

“তূর্যর কথা শুনে নাফিস হেসে ফেললো। কোকিলা বেগম রাগে ফুসছে।
এদিকে সায়রাকে বলা হয়েছে ওর বাবার অবস্থা ভালো নয় বাড়ি আসতে। সায়রা এই অফিস টাইমে বেরিয়ে গেছে। সোজা রিকশাহ্ নিয়ে বাড়ির রাস্তায় এসে নামলো। তাড়াহুড়ো করে বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়লো তূর্যকে। পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। পাশেই নাফিস বসে। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে আছে। সায়রা কিছু বুঝে উঠার আগেই কোকিলা বেগম এসে সায়রার পায়ের কাছে পড়লো । সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে আছে৷ কি হচ্ছে এসব৷ কোকিলা বেগম সায়রার পা ধরে বলতে লাগলো ”

_ও সায়রা। আমি তোর কাছে আর কহনো কিছু ই চামু না। আমারে মাফ কইরা দে। আমার ভুল হয়েছে।

“সায়রা চোখ তুলে তূর্যর দিকে তাকালো।তূর্য সঙ্গে সঙ্গে চোখ মারলো। সায়রা কি করবে বুঝতে পারছে না। হুট করে এসব কি হচ্ছে। কোকিলা বেগমের উপর সায়রার রাগ অনেকদিনের৷ কিন্তু এই মুহুর্তে সায়রা নিজের পা কোকিলা বেগমের থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো ”

_উঠুন। এসব ঢং আমার ভালো লাগে না। মাফ করে দিয়েছি আপনাকে।

“কোকিলা বেগম ওইভাবেই বসে রইলো। কিন্তু তূর্যর কাছে বিষয়টা ভালো লাগলো না। এমন সুযোগ পেয়ে মাএ এক মিনিটের মধ্যে কেউ মাফ করে দেয়। বোকা বউ তার।সায়রার রাগ লাগছে। এসব করতে তাকে এখানে আনা হয়েছে। সায়রা গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো। তূর্য ও পিছু পিছু যেতে নিয়ে কোকিলা বেগমের সামনে এসে থেমে গিয়ে বললো ”

_এবারের মতো বেচে গেলেন আপনি৷ আমার বউয়ের মনটা বড় তাই মাফ করে দিলো। আমি হলে ইহকালে ও করতাম না৷

“কথাটা বলে তূর্য ও বেরিয়ে গিয়ে সায়রার পিছু নিলো। সায়রা ধেইধেই করে হেটে চলে যাচ্ছে। তূর্য দৌড়ে গিয়ে সায়রার ওরনা টেনে ধরলো। সায়রা থেমে গেলো। তূর্য বললো ”

_এই মেয়ে। আমাকে রেখে চলে যাচ্ছো কেনো ?

“সায়রা তূর্যর দিকে ফিরে চেয়ে বললো ”

_আপনি এসব কেনো করলেন ?

“তূর্য হাসলো একটু। এরপর সায়রার দিকে এগিয়ে এলো। সায়রার সামনে দাড়িয়ে বললো ”

_সকালে তোমার ফোনে কল এলো। ধরলাম। সঙ্গে সঙ্গে কিছু অকথ্য ভাষায় তোমার ওই ভন্ড মা গালি দিলেন। আমার বউকে গালি। আবার অসম্মান। এটা আমি সয্য করতে পারি কি করে বলো। একটু ও সয্য হলো না। ভাগ্য ভালো গলা চিপে মেরে ফেলেনি।

“কথাটা বলতে বলতে তূর্য বারবার নিজের হাতে সায়রার ওরনা পেচিয়ে আবার খুলছে। সায়রা তূর্যর হাত থেকে ওরনাটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো ”

_তবুও কাজটা আপনি ঠিক করেননি।

_ও ম্যাডাম। আমি সাদমান শাহারিয়ার তুর্য। আমার বউকে অসম্মান করে কেউ পার পেয়ে যাবে।নোপ। নেভার।

_আমি আপনার কোন কালের বউ ?

“তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে চোখ মেরে বললো ”

_আজীবন কালের।

“সায়রা হাটা ধরলো। তূর্য ও পাশে পাশে হাঁটছে। সায়রা একটা সময় দাড়িয়ে গেলো। তূর্যর সামনে দাড়ালো। তূর্য কেমন নিরব হয়ে চেয়ে আছে। সায়রা অন্য দিক মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো ”

_অনেক ছোট বয়স থেকে এসব সয্য করছি আমি। কেউ কখনো আমার পাশে দাড়ায়নি৷ কেউ ছিলো না আমার। মা মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিটা দিন আমার জন্য জাহান্নাম হয়ে উঠেছিলো৷ কাউকে পাইনি আমি । সবাইকে উনি বলে বেড়ালো আমার চরিএ খারাপ। আমি চেয়ে ও কখনো প্রতিবাদ করিনি। জানিনা আপনি কি করেছেন বা কি বলেছেন যার কারনে সে আজ আমার পায়ে এসে পড়েছে৷ কিন্তু বিশ্বাস করুন উনাকে আমার ঘৃণা লাগে৷ উনি আমার মায়ের জীবনটা ও শেষ করে দিয়েছে। শুধু বাবার জন্য আমি কিছু বলিনি৷ সব মুখ বুজে সয়ে গেছি৷

“কথাগুলো বলতে গিয়ে সায়রা ভীষণ কাদলো। দু চোখ লাল হয়ে গেছে। গাল বেয়ে অনবরত পানি পড়ছে৷ তূর্য একটু এগিয়ে গিয়ে সায়রার দুই গালে হাত রাখলো। বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে গালের পানি গুলো মুছে দিলো। সায়রার চোখে চোখ রেখে গভীর কন্ঠে বললো ”

_হুস, চুপ। কাদবে না। আমি তোমার অতীত পরিবর্তন করতে পারবো না৷ ওই কষ্টগুলো ও কমিয়ে দিতে পারবো না। তখন তোমার সঙ্গে কেউ ছিলো না। এখন আমি আছি৷ সব সময় থাকবো । বিশ্বাস করতে পারো সায়রা আজমীর। সাদমান শাহারিয়ার তূর্য কখনো কথার খেলাপ করে না কিন্তু ।

“সায়রা চেয়ে রইলো তূর্যর দিকে। তূর্য ও চেয়ে আছে সায়রার দিকে। এমন সময় নাফিস পেছন থেকে এসে কেশি দিলো। সায়রা তূর্য দুজনেই একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। তূর্য নাফিসের দিকে তাকালে নাফিস বললো ”

_এখন কি যাবো স্যার।

“তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_বাইক নিয়ে আসছি।

“সায়রার বাসার সামনে বাইক রাখা ছিলো। তূর্য আর নাফিস বাইক নিয়ে এলো। সায়রা তূর্যর বাইকে উঠে বসলো। নাফিস ওদের একসাথে দেখছে আর আজকের ঘটনার কথা চিন্তা করছে৷ যেভাবে তূর্য ওই মহিলার গলা চেপে ধরে ছিলো। মেরেই ফেলতো আজ। কিন্তু নাফিসের মাথায় ঢুকছে না এই তূর্য এমন বউ পাগল হয়ে যাচ্ছে কি করে৷ বউয়ের গালে হাত দিয়ে পানি মুছে দিচ্ছে। আহা। কবে জেরিন একটু কাঁদবে। নাফিস ও এভাবে একটু এভাবে চোখটা মুছে দিবে ”

“তূর্য সায়রাকে নিয়ে সোজা অফিসে এলো। সায়রার আজকে বারবার শুধু তূর্যকে দেখছে। তখন বলা তূর্যর কথাগুলো মনে করছে৷ লোকটা কি আসলেই তার সাথে আছে৷ কিন্তু কতোদিন থাকবে ? সারাজীবন তো থাকবে না৷ সায়রা আগে আগে হাটছে৷ তূর্য পেছন পেছন। তূর্যর পেছনে আবার নাফিস। মাএ দুপুর বারোটা। আশেপাশে কেউ নেই। তূর্য হাটছে সায়রার ওরনা ধরে৷ কিন্তু সায়রা তা খেয়ালই করেনি। নাফিস এই দৃশ্য দেখে পেছন থেকে গান গাইতে শুরু করলো ”

“আচলে বান্ধিয়া রাখিবো গো তোমারে ”
“আচলে বান্ধিয়া রাখিবো ”

“নাফিসের এই গান শেষ হলো লিফটে উঠে। সায়রা তখন খেয়াল করলো তূর্য ওর ওরনা চেপে ধরে আছে। সায়রা ওরনা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ছাড়লো না তূর্য। তাকালোই না সায়রার দিকে। সায়রা ভেবে পায় না ওর শাড়ির আশল। ওরনা চেপে ধরে রেখে তূর্য কি সুখ পায়। সেই ওরনা গিয়ে ছাড়ে জনসম্মুখে এসে ”

“সন্ধায় তূর্য আর সায়রা এক সঙ্গে বাড়ি ফিরলো। সামর্থ্য বেগম বসে ছিলো বসার ঘরে। সায়রা আর তূর্যকে দেখেই তিনি কাছে ডাকলেন। তূর্য এগিয়ে গেলো। সায়রা নিজের জায়গায় দাড়িয়ে আছে। তূর্য বুঝলো কি নিয়ে কথা হবে। তূর্য তাই আগেই বললো ”

_যা খুশি বলো। একদিন এর বেশি আমি থাকছি না।

“সামর্থ্য বেগম এ কথা শুনেই রেগে গেলেন ”

_ওটা তোমার মামার বাড়ি। কম হলেও তিনদিনের জন্য যেতে হবে।

_আমার অফিসে কাজ আছে।

_কোনো কাজ নেই। ওই অফিসের মালিক তুই। তিন দিনের জন্য ছুটি দিয়ে দে অফিস।

“সামর্থ্য বেগমের কথা শুনে তূর্য হা করে চেয়ে আছে। কারন ছাড়া তিনদিনের ছুটি ”

_পাগল হয়ে গেছো তুমি। তুমি জানো ওখানে আমার ভালোলাগে না।

_আমি সব জানি। কিন্তু এবার বিষয়টা ভিন্ন। নতুন বউ নিয়ে যাবো। আর তোর যাওয়ার ডেট অনুযায়ী তোর বড় মামা তার মেয়ের বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে।

“তূর্য মহা বিরক্ত। মোহনগঞ্জ গেলে ই তার নানা স্মৃতি মনে পড়বে। যে গুলো তাকে পীড়া দেবে৷ তূর্য কাউকে বোঝাতে পারবে না সেসব।কিন্তু প্রতি বছর ওই নিদিষ্ট একটা দিনে তূর্য না চাইলেও তাকে যেতে হবে। ওখানে তূর্যর জীবনের একটা অংশে দাফন করে এসেছে। অভিমান ই সই। কিন্তু তাতে তূর্য নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসে। তূর্য এবার উঠে দাড়ালো ”

_রুমে যাচ্ছি।

“সামর্থ্য বেগম এবার ও হতাশ হলেন প্রতিবারের মতো। কবে যে তূর্য এসব থেকে বের হবে। তূর্য চলে গেলে সামর্থ্য বেগম সায়রাকে ইশারা করলো তূর্যর সঙ্গে যেতে। সায়রা তূর্যর পিছু পিছু গেলো। তূর্য রুমে ঢুকে এসি ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে দু হাত পেছনে রেখে মাথা উপর দিকে দিয়ে বসে আছে। সায়রা রুমে ঢুকে কাঁধের ব্যাগটা রেখে তূর্যর পাশে আস্তে করে বসলো। কিছু বলার সাহস ও হচ্ছে না৷ তবুও বললো ”

_আপনার কি খারাপ লাগছে ?

_অনেক।

_মোহনগঞ্জ যেতে চাইছেন না কেনো ?

“তূর্য কেমন করে যেনো হাসলো। পরপর বললো ”

_যেখানে তুমি তোমার সব কিছু ফেলে আসবে। যেখানে গেলে তোমার মন অস্থির হবে। সেখানে গিয়ে তিনদিন কাটানো কি ঠিক বলে মনে হয়৷

“সায়রা চেয়ে রইলো তূর্যর দিকে। তূর্য ওইভাবে ই কিছু সময় বসে থেকে উঠে চলে গেলো। সায়রা থ মেরে বসে রইলো। মোহনগঞ্জ তো তূর্যর মামার বাড়ি।তূর্যর মায়ের মোহনগঞ্জ। তূর্যর মা নেই৷ তাহলে কি এই কারনেই তূর্য বেশি সময়ের জন্য সেখানে যেতে চায় না। সায়রা এসব ভেবে ওভাবেই বসে রইলো ”

“নাফিস বারান্দায় বসে বসে জেরিনের সাথে কথা বলছে। হুট করেই নাফিস বললো ”

_তুমি কখনো কাঁদো না কেন?

“নাফিসের কথা শুনে জেরিন আবুল হয়ে গেলো। কার সাথে থাকে সে। কি প্রশ্ন করে। জেরিন বললো ”

_এটা কেমন কথা। কাঁদতে যাবো কেন আমি৷

_কাঁদবে না কেন। তুমি একটএ কাঁদবে। আমি তোমার চোখের পানি মুছে দেবো৷

_সিনেমা দেখেছেন বুঝি

_জি না। বাস্তবে দেখেছি৷

_কিহ্।

_কবে তুমি আমার সামবে কাদবে জেরিন৷ বলো না৷

_আপনার মাথার তাড় ছিড়ে গেছে৷ পাগল বেটা।

_চুপ মসিবতের বেটি৷ কালকেই তুই আমার সামনে কাদবি কথা শেষ।

“জেরিন হতাশ। নাফিস যে একটু পাগলা তা সে জানে৷ কিন্তু এমন পাগল কে হয়৷ এসব কি বলে। কাদবে কেন জেরিন৷ কোন মসিবতে পড়লো কে জানে ”

চলবে,,

_
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#২৮

“সামর্থ্য বেগম তূর্যকে বলে দিয়েছে। তিনদিনের জন্য অফিস ছুটি দিতে। এসব অফিসের ঝামেলা যেনো না থাকে। সকালে খাবার টেবিলে ও সামর্থ্য বেগম বারবার বললেন একই কথা। আজ সন্ধায় মোহনগঞ্জ এর উদ্দেশ্য রওনা হবে ওরা। তূর্য হু হা কিছু ই বলছে না৷ সায়রা চুপ। সে এই দাদী নাতীর মধ্যে আর কি বলবে।
তূর্য বাইক কেনার পর থেকে সায়রাকে নিয়ে অফিসে গেলে বাইকে করেই যায়৷ আজ ও বাইকে করে যাচ্ছে। তূর্য হেলমেট পড়ে। পড়নে শুধু একটা সাদা রঙের শার্ট গলায় টাই৷ অথচ ব্লেজার ঝুলছে সায়রার হাতে। জ্যামের মধ্যে এসে থেমে আছে৷ সায়রা এদিক ওদিকে দেখছে। হুট করেই ওর চোখ পড়লো এক চেনা মুখে৷ ভালো করে খেয়াল করে দেখলো রাস্তার আরেক পাশে অনিক৷ হে সায়রা চিনতা ভুল করেনি৷
অনিক ই দাড়িয়ে। সায়রার দিকে ই চেয়ে আছে সে।
তাও এক ধ্যানে৷ সায়রা চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার তাকালো। অনিক এখনো চেয়ে। মনে হচ্ছে ওকে আর তূর্যকে অনিক তার মস্তিস্কে গেঁথে নিচ্ছে।
সায়রা আবার চোখ সরিয়ে নিলো। কেনো যেনো অনিকের এমন চাহনি সায়রার ভেতরে ভয়ে সৃষ্টি করলো। লোকটাকে সে চিনেই কতোদিন। এমন করে দেখার কি আছে। সায়রা তূর্যর কাঁধে হাত রাখা। সে আরো শক্ত করে ধরলো। তূর্য বুঝতে পেরে সায়রার পায়ের কাছে হাত রেখে হালকা ঘার ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো ”

_কি হয়েছে ?

_নাহ্ কিছু না। জ্যাম ছাড়ছে না কেন ?

_কেনো ? রোদের তাপ বেশি লাগছে ?

“সায়রা কিছু বললো না। এর মধ্যে রাস্তা ক্লিয়ার হলো। তূর্য বাইক টান দিলো। সায়রার এখনো চোখ পড়লো সেইদিকে। অনিক এখন আর নেই৷ সায়রার অনিককে দেখে হঠাৎ ভয় লাগছে কেন? আগে তো লাগতো না।
সায়রা চুপ রইলো। আজকাল সব কিছুতে ভয় হচ্ছে তার৷ সুখ হারানোর ভয়। তূর্যর আর সামর্থ্য বেগম এর যত্ন হারানোর ভয়। না চাইতে ও যে আজকাল তূর্য তার ভরসা হয়ে উঠছে। সেটা না জানুক তূর্য তাতে কি৷ এমন করে তো কেউ পাশে থাকেনি সায়রার৷ সে যতোই নিজেকে কঠোর করে রাখুক। তার ভেতরের নারী সওা রয়েছে।
তূর্য রাস্তায় রোদ বেশি বলে বাইকের স্পিড বাড়ালো।
অফিসের সামনে এসে বাইক থামালে। সায়রা নামলো। তূর্যর দিকে ওর ব্লেজারটা এগিয়ে দিয়ে অফিসের ভেতরে চলে গেলো ”

“অফিসে এসে সায়রা নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলো। ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো। কয়েকদিন সায়রা ফেসবুকে ই ঢুকেনি৷ মেসেজ ও দেখেনি৷ আজ ফোন হাতে নিতেই রকিব এসে বললো সায়রা যেনো নিজের কাজগুলো তাড়াতাড়ি করে নেয়। তূর্য অফিসে এসেই বলেছে তিনদিনের ছুটি দেওয়া হবে। যার যা কাজ বাকি আছে বিকেল চারটার মধ্যে শেষ করে জমা দিতে।
সায়রা ফোনটা ব্যাগে রেখে কাজে মন দিলো। জেরিন এদিকে তাড়াহুড়ো করছে। বেচারির অনেক কাজ জমে আছে।
সায়রা কাজ করতে করতে ওর মাথা থেকে বাকি দুনিয়ার চিন্তা সব বেরিয়ে গেছে ”

“রুহানি তিনদিনের ছুটির কথা শুনে তূর্যর কেবিনের দিকে যাচ্ছিলো। কেবিনের ভেতরে গিয়ে দেখলো তূর্য নিজে ও ভীষণ বিজি৷ রুহানি বসলো। পরপর বললো ”

_তিনদিনের জন্য অফিস নাকি ছুটি দিয়েছিস?

_হু৷

_হটাৎ! কেনো জানতে পারি ?

_মোহনগঞ্জ যাচ্ছি । তাই।

“রুহানি থামলো। এ বিষয়ে সে অবগত তাই আর নতুন করে কিছু বললো না। উঠে চলে আসতে নিতেই রুহানি একটা জিনিস খেয়াল করলো। তূর্য যেখানে বসে সেখান থেকে বাইরে তাকালে সোজা সায়রার ডেস্ক দেখা যাচ্ছে। সায়রা কাজ করছে মাথা নিচু রেখে। রুহানি একবার তূর্যর দিকে তাকালো। তূর্য কি সায়রাকে দেখে তাহলে ? এমনি ই রুহানির মনে সারাকে নিয়ে শুরু থেকে ভয় ঢুকে আছে৷ রুহানি বের হয়ে এলো কেবিন থেকে। নিজের কেবিনে যেতে যেতে শুধু চেয়ে রইলো সায়রার দিকে। এই মেয়ে না তার আর তূর্যর মধ্যে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় ”

“ব্রেক টাইম হলো। সায়রা একটানা বসে কাজ করেছে। কোমর ধরে গেছে। জেরিনের ও একই অবস্থা। দু’জনেই দুজনের হাত ধরে চলে গেলো কেন্টিনে। খাবার নিয়ে দুজনে বসলো একটা টেবিলে৷ জেরিন বারবার শুধু বলছে তূর্য স্যার হঠাৎ কেনো ছুরি দিলো। কিন্তু সায়রা কারনটা জানা সওে ও বলতে পারছে না। শুধু হা হু করছে৷ হুট করে ওদের দুজনের মধ্যে ওদের ই কলিগ আবির এসে ওর প্লেট নিয়ে বসতে বসতে বললো ”

_হায়,সায়রা। হায় জেরিন। তোমাদের তো আজকাল পাওা ই পাওয়া যাচ্ছে না।

“জেরিন আর সায়রা আবিরের আগমনে খুশি না হলে ও উপরে উপরে দেখালো খুশি৷ জেরিন এক গাল হেসে বললো ”

_আমাদের পাওা দিয়ে তুমি কি করবে ?

_আরে বাবা আমরা এক সাথে কাজ করি। এক সাথে হাসি মজা করবো এটাই তো।

“আবির খেতে খেতে কথা বলছে। সায়রা আর জেরিন পারছে না উঠে যেতে।
এমন সময় তূর্য আর নাফিস এলো কেন্টিনে। ভেতরে ঢুকতেই দেখলো সায়রা আবির এর সাথে কথা বলছে৷ আবির খুব হাসছে। তূর্য এমন করে চেয়ে রইলো যেনো সে কোনো চিল। তার শিকারকে নিশানা করছে। রাগে শরীরটা জ্বলে উঠলো তূর্যর। এসব হচ্ছে। নাফিস ও পেছনে দাড়িয়ে রাগে ফুঁসছে। এই আবিরটা অনেক বার বেড়েছে।
তূর্য আর দাড়ালো না সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে এলো কেন্টিন থেকে। নাফিস ও বের হয়ে এলো। তূর্য ফোন বের করে সায়রার নাম্বারে কল করলো।
সায়রা হটাৎ তূর্যর কল পেয়ে কলটা ধরে কানে নিতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো ”

_আপনার হাসি ঠাট্টা শেষ হলে একটু আসবেন সায়রা আজমীর ম্যাডাম। বের হবো।

_কিন্তু আমি তো,,,,।

_দুই মিনিটের মধ্যে আমার সামনে এসে দাঁড়াবে ।

“কথাটা বলেই তূর্য কল কেটে দিলো। সায়রার সব কিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো। জেরিন বললো ”

_কি হলো তোর ?

_তুই থাক আমাকে স্যার এর সঙ্গে মিটিং এ যেতে হবে৷

“কথাটা বলেই সায়রা হাত ধুয়ে দৌড়ে বের হয়ে এলো কেন্টিন থেকে। তূর্য আর নাফিস তখন লিফট এর সামনে দাড়ানো। সায়রা তূর্যর কেবিনের দিকে যেতে গিয়ে দেখলো তূর্য লিফট এর ওখানে সায়রা ওর ব্যাগ নিয়ে এসে তূর্যর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো। তূর্য সায়রার সামনে দাড়িয়ে। হাত পেন্টের পকেটে ঢোকানো। সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_চলুন।

“সায়রা এখনো হাঁপাচ্ছে। নাফিস এখনো দাড়িয়ে। হুট করেই তূর্য সায়রার হাত চেপে ধরলো। সায়রা চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইলো। নাফিসের দিকে চেয়ে তূর্য বললো ”

_আমি আর আসবো না। অফিস ছুটি হওয়া পর্যন্ত একটু সামলে নিও।

_ওকে স্যার৷। সাবধানে যাবেন।

“তূর্য হাসলো। সায়রার হাত এখনো ছাড়েনি। সায়রা সেই ধরেছে থেকে মুচরামুচকি করেই যাচ্ছে। হাত ছাড়াতেই পারছে না। লিফটে উঠে ও হাত ছাড়লো না। আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ”

_আহ্। হাত ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি তো।

“তূর্য সায়রার হাত তবুও ছাড়লো না৷ উল্টো আরো চোখ গরম করে বললো ”

_চুপ থাকো। রাগ বাড়ছে কিন্তু আমার৷।

_আমি আবার কি করেছি ?

“তূর্য এবার হুট করেই লিফট এর সঙ্গে সায়রাকে মিশিয়ে ফেললো। সায়রা ভয় পেয়ে গেলো। হুটহাট এই লোক সায়রাকে শুধু চেপে ধরছে কেনো কে জানে। তূর্য সায়রার চোখে চোখ রেখে বললো ”

_তুমি অন্যদের সাথে একটু বেশিই হাসাহাসি করছো না ? ভুলে যেও না তুমি কিন্তু আমার বিয়ে করা বউ৷ তুমি শুধু হাসবে আমার সামনে। আরেকবার কারো সঙ্গে রসিয়ে রসিয়ে কথা বলতে দেখলো ঠোঁট দুটো সেলাই করে দেবো। ইডিয়েট।

“তূর্য সায়রাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে দাঁড়ালো। সায়রা ওভাবেই দাড়িয়ে আছে। তূর্য হুটহাট আজকাল তার উপর অধিকার ফলাচ্ছে। সায়রা চেয়ে ও কিছু বলতে পারছে না। এর মধ্যে লিফট ও খুলে গেলো। তূর্য আগে বের হলো। সায়রা পিছে পিছে৷ তূর্য বাইক এনে সায়রার সামনে দাড় করালো। সায়রা উঠে বসলো।
এখনো অনেক রোদ বাইরে৷ তূর্য পেছন ফিরে সায়রার দিকে চেয়ে ইশারায় ওরনা দিয়ে মাথা ঢাকতে বললো। সায়রা তাই ই করলো। কোথায় যাচ্ছে সে জানেনা৷ তূর্য কখনো আগে থেকে বলবে না কোথায় যাবে। সায়রা ও কখনো জিজ্ঞেস করে না। সে এই টুকু বিশ্বাস করে তূর্য কখনো তার ক্ষতির কারন হবে না। তূর্য ওমন মানুষ ই নয় ”

“তূর্য এসে বাইক থামালো একটা শপিং মলের সামনে। বাইক রেখে দুজনে ভেতরে ঢুকলো। চারদিকে শুধু দোকান আর দোকান৷ তবে লোক সংখ্যা খুবই কম। সায়রা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ধিরে ধিরে হাঁটছে। তূর্য পুরুষ মানুষ সে কি আর থেমে থাকবে। তূর্য আগে আগে চলে যাচ্ছে দেখে সায়রা দৌড়ে গিয়ে তূর্যর সঙ্গে সঙ্গে হাটঁতে লাগলো।
তূর্য একটা দোকানে ঢুকলো৷ সায়রা দেখেই বুঝলো এই দোকানের জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোয়া হবে৷
পুরুষ মানুষের সব জিনিস ই পাওয়া যায় এই দোকানে৷ তূর্য সায়রাকে বারবার থেমে যেতে দেখে সায়রার হাত টেনে নিয়ে এলো নিজের কাছে।
তূর্য সায়রার পিছু পিছু হাঁটছে। দোকানের বেশিরভাগ সেলসম্যান মেয়ে। কেমন শার্ট পেন্ট পড়ে আছে।
সায়রা দেখলো তূর্য শাট দেখছে৷ কয়েকটা হাতে ও নিয়েছে। সবগুলোই সাদা রঙের। হেটে গিয়ে ব্লেজার দেখছে সেগুলো আবার কালো রঙের। সায়রা শুধু দেখে যাচ্ছে। এই সব সাদা শার্ট আমার কিনবে নাকি এই লোক । আর কতোগুলো সাদা শার্ট নেবে। সায়রা এবার তূর্যর পাশে এসে ফিসফিস করে বললো ”

_সব সাদা ই কেনো নিচ্ছেন?

_সাদা আমার পছন্দ তাই।

_আপনার অলরেডি অনেকগুলো সাদা শার্ট আছে৷ আবার ও নিয়েই যাচ্ছেন৷ একটু ভিন্ন রঙের কিছু ট্রাই করুন।

“তূর্য ভ্রু কুঁচকে সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_কেনো ? সাদাতে আমায়,দেখতে ভালোলাগে না?

_তা কখন বললাম। সাদা ছাড়াও পৃথিবীতে আরো অনেকগুলো রঙ আছে। সব সাদাই কেনো পড়তে হবে৷

“তূর্য সায়রার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। যেই সেকশনে বিভিন্ন রঙের শার্ট রাখা সেখানে নিয়ে গিয়ে দাড় করিয়ে দিয়ে বললো ”

_নাও। তোমার পছন্দের শার্ট নেবো আজ।

“সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে থেকে বললো ”

_সত্যি ।

_সন্দেহ আছে ?

“সায়রা হাসলো। এরপর শার্ট দেখতে লাগলো। সুন্দর সুন্দর কয়েকটা শার্ট নিলো। তূর্য দেখছে শুধু সায়রার পেছনে দাড়িয়ে। দোকানের লোকগুলো ও চেয়ে আছে৷ তূর্য এই দোকান থেকেই সব সময় শপিং করে। তূর্যর নিজের কোম্পানির জিনিস ও এখানে আসে। এখানকার সকলে তূর্যকে চেনে। তারাও অবাক হচ্ছে। তূর্য কখনো কারো পছন্দে তো দূর কেউ কোনো কিছু সাজেস্ট করলে ও তূর্য সেটা নেয় না৷
সায়রা মন মতো কয়েকটা শার্ট নিয়ে তূর্যর দিকে ফিরে বললো ”

_এগুলো ট্রায়াল দিয়ে দেখুন।

“তূর্য শার্টগুলো সায়রার হাত থেকে নিয়ে বললো ”

_ ট্রাইয়াল দিতে হবে না।

“পরপর সেলসম্যান এর হাতে শার্টগুলো দিয়ে বললো ”

_এইগুলো প্যাক করে দিন।

“সেলসম্যান মেয়েটা শার্টগুলো নিয়ে চলে গেলো। তূর্য র হাতে এখন ব্লেজার সেটা সায়রাকে দেখিয়ে বললো ”

_কালো ব্লেজার এ নিশ্চয়ই ই ভালো লাগে আমায়।

_এটাও ভিন্ন রঙের নেওয়া যায়।

“তূর্য হেসে ফেললো। এবার ও সায়রাকে পছন্দ মতো নিতে বললে সায়রা তাই করলো। শার্ট আর ব্লেজার নিয়ে ওরা দোকান থেকে বের হলো। দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে। আশেপাশে অনেক মেয়েদের ড্রেসের দোকান। তূর্য সেদিকে যেতে নিলে সায়রা বললো ”

_আবার কোথায় যাচ্ছেন ?

_সঙ্গে এসো।

“সায়রা তূর্যর পিছু পিছু গেলো। এখানে সব মেয়েদের ড্রেস। তূর্য দোকানে থাকা একটা মেয়েকে বললো সালোয়ার কামিজ দেখাতে। মেয়েটা যেসব ড্রেস দেখাচ্ছে সেসবের দাম দেখে সায়রার চোখ কপালে। তূর্যর শার্ট এর কোনয়,ধরে টেনে বললো ”

_এগুলো কেনো দেখছেন৷ অনেক দাম। চলুন।

_চুপ করে থাকো।

“সায়রা চুপ করে বসে রইলো। তূর্য নিজেই পছন্দ করে সায়রার জন্য কিনে নিলো। এরপর শপিং মল থেকে বের হলো। এবার বাড়ি যাওয়ার পালা। কিন্তু তূর্য এখনো দুপুরের খাবার খায়নি৷ সায়রাকে ও টেনে এনেছে। তাই তূর্য আগে একটা রেস্টুরেন্টে গেলো।
আজ রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর সায়রা চুপচাপ বসে আছে। না জানি আজ আবার কোন সালাদ খেতে হয়
একজন ওয়েটার এসে ম্যনু দিয়ে গেলো। তূর্য আজ আর,সায়রার দিকে এগিয়ে দিলো না। নিজেই খাবার অডার করলো। একটু পড়ে খাবার দিয়ে গেলে সায়রা দেখলো সায়রার জন্য খিচুড়ি, বেগন ভাজা, সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা সহ একটা প্লেটার। তূর্য নিজের জন্য শুধু গ্রিল চিকেন অডার করেছে। সায়রা ভেবেছিলো আজ ও বুঝি সালাদ ই খেতে হবে ”

“তূর্য আর সায়রা বাড়ি পৌছালো বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। সামর্থ্য বেগম নিজের ঘরে। তার জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে হাসিনাকে দিয়ে। এক বছর পর আবার যাচ্ছে সেই চিরচেনা গ্রামে। তূর্য আর সায়রা এসে ই আগে সামর্থ্য বেগম এর ঘরে গেলেন। সামর্থ্য বেগম দুজনকেই রুমে যেতে বললেন। সব গুছিয়ে নিতে ও সময় লাগবে। রুমে এসে তূর্য বসে রইলো। সায়রা বললো ”

_আপনার কাপড়গুলো গুছিয়ে দেবো আমি ?

_দাও।

“কথাটা বলে তূর্য ওয়াসরুমে চলে গেলো সাওয়ার নিতে। সায়রা তূর্যর ওয়ারড্রপ খুলে নিজের মতো করে জামাকাপড় বের করতে গিয়ে একেবারে নিচের খুপে একটা ছবি পেলো। ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা। তার কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলে। এটা তো তূর্যর মায়ের ছবি। যার বড় একটা ছবি সামর্থ্য বেগম এর ঘরে দেখেছিলো। তাহলে এই বাচ্চাটা কি তূর্য। সায়রা দেখলো ছবির পেছনে খুব ছোট ছোট করে অনেক কিছু লিখা। সায়রা পড়তে যাবে তখনই ওয়াসরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। সায়রা সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা জায়গা মতো ঢুকিয়ে রাখলো। তূর্যর জামাকাপড় হাতে নিয়ে এসে বিছানায় রাখলো। তূর্য চুল মুছতে মুছতে বের হয়েছে। সায়রাকে দেখে বললো ”

_বাকিটা আমি করে নিতে পারবো। তুমি রেডি হয়ে নাও।

“সায়রা কিছু বললো না। চুপচাপ কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। মনের ভেতর ভীষণ কৌতূহল হচ্ছে। ওই ছবির পেছনে কি লেখা আছে। তা জানার জন্য । কিন্তু কি করে পাবে আবার ওই ছবি। ওটা তো এমন জায়গায় রাখা সায়রা সব সময় সুযোগ ও পাবে না। সায়রার মস্তিস্কে ওই ছবি ই ঘুরতে লাগলো ”

“সব গুছিয়ে সন্ধা সাতটার দিকে বের হলো ওরা। চুমকিকে ছুটি দেওয়া হয়েছে তিনদিনের। হাসিনা সামর্থ্য বেগম এর সাথে যাচ্ছে। তূর্য একটু আগে ব্যাগ নিয়ে নেমে গেছে। সায়রা এখনো রুমে। তূর্য নেমে যেতেই সায়রা ওই ছবিটা বের করার জন্য ওয়ার ড্রপ খুললো। ছবিটা বের করে নিজের ব্যাগে রেখে দিলো।
এরপর বের হলো। গাড়ি তূর্য ড্রাইভ করবে৷ তূর্যর পাশে সায়রা বসলো। পেছনে হাসিনা ও সামর্থ্য বেগম।
মোহনগঞ্জ অনেক দূরের পথ। যেতে বহু সময়। তূর্য গাড়ি স্টার্ট দিলো। আবার এক বছর পর। সে যাচ্ছে তার সব থেকে প্রিয় মানুষটার কাছে। তার সব স্মৃতির কাছে। আগেরবার তূর্য একাই গিয়েছিলো৷ একদিন থেকে চলে এসেছে। এবার সঙ্গে তার বউ। নতুন বউ৷
তূর্য জানে সেই মানুষটা বেঁচে থাকলে আজ হয়তো ভীষণ খুশি হতো।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে। শহর পেরিয়ে যাচ্ছে। তূর্যর চোখ সামনের দিকে স্থির থাকলে ও একটু পর পর ই পাশে তাকাচ্ছে। সায়রা সিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। সেই সকালে উঠেছে। চোখ দুটো ভেঙে আসছে তার। একটা সময় পর তূর্য দেখলো সায়রা ঘুমের কারনে সিট থেকে মাথা পড়ে যাচ্ছে। তূর্য এক হাত দিয়ে সায়রার মাথার নিচে হাত দিয়ে রাখলো।
আরেক হাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। একটু পরপর ই চোখ যাচ্ছে আজ সায়রার দিকে৷ এই মেয়েটাে তূর্যর ভীষণ আপন লাগে। নিজের লাগে। সায়রা পাশে থাকলে এখন আর তূর্যকে একাকিত্ব চেপে ধরে না।
রাতে রুমে যাওয়ার আগে মনে হয় না তূর্য রুমে গিয়ে একা হয়ে যাবে। ওই কয়েকটা বই তার সঙ্গী হবে। তূর্য জানে এখন সে তার রুমে ফিরলেি এই মেয়েটাকে দেখবে। যে ভুলভাল একটা কাজ করে বসবে। যাতে হয়তো তূর্য অজান্তেই হেসে ফেলবে নয়তো রেগে যাবে”

চলবে,,