ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-৩৭+৩৮

0
2

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৩৭

“সময় চলে যায় তার গতিতে। বেশ কয়েকদিন চলে গেছে মাঝে। সায়রা আর তূর্যর সংসার সুন্দর মতোই চলছে। দুজনে একসাথে অফিস করছে। সঙ্গে তূর্যর দুষ্টুমি তো আছেই। সায়রা মায়ায় পড়ে যায় তূর্যর। বারবার। এই মানুষটা ই সায়রার ভালো থাকার কারন হয়ে উঠেছে আজকাল। সঙ্গে সামর্থ্য বেগম তো আছেন ই। সায়রা ইদানীং তার বাড়িতে ও গিয়েছে কয়েকবার তার বাবাকে দেখতে। যদিও কোকিলা বেগম সায়রার সাথে কথা বলেন না৷ সায়রা নিজে ও বলে না। তূর্য একজন লোক ঠিক করে দিয়েছে। তিনি ই সায়রার বাবার দেখাশোনা করেন।
তূর্য সায়রাকে চোখে হারায়। কোথাও একা যেতে দেয় না। তূর্যর মনে ভয় ”

“সায়রা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই সাওয়ার নিয়েছে। তূর্য তখন ও ঘুমে। সায়রা ডাকেনি৷ এই নিয়ে তূর্য গাল ফুলিয়ে রাখবে৷ এমনটা ই করে এই তূর্যটা সয়রার সাথে। সাওয়ার এক সঙ্গে নিতে হবে। সায়রা ও মেনে নিয়েছে। কিন্তু আজ আর ডাকেনি৷ সায়রার শরীরটা ভালো লাগছে না। কয়েকদিন ধরেই কেমন অস্থির অস্থির লাগে।
সায়রা ওয়াসরুমে থেকে বের হয়ে ই দেখলো তূর্য বিছানায় বসে আছে। সায়রা বের হতেই চোখাচোখি হলো। সায়রা জানে এখনই গাল ফোলাবে। সায়রা অপরাধীর মতো বের হয়ে এসে বিছানায় উঠে তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরে বসলো। তূর্য চেয়েই আছে। সায়রা আহ্লাদ করে বলে উঠে ”

_সরি। আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন,,,,,।

“সায়রা পুরো কথাটা শেষ ও করতে পারলো না। তূর্য সায়রাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সোজা উঠে গেলো। বললো ”

_খবরদার অজুহাত দেখাবে না। আই হেইট দিস।

“সায়রা বুঝলো পাগল এবার ক্ষেপেছে। সায়রা বিছানা থেকে নামলো। তূর্যকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে পিঠে মাথা রাখলো। তূর্য খালি গায়ে। সায়রা তূর্যর সারা বুকে হাত বুলাতে বুলাতে বললো ”

_অজুহাত দিচ্ছি না। আপনি না আমার দুষ্ট বর। রাগ করবেন না। আর এমন হবে না।

“তূর্য নিজেকে শক্ত করে দাড়িয়ে থেকে বললো ”

_আমার সাথে সাওয়ার নিতে ভালো লাগে না তাই বলো। আর বলবো না। দরকার নেই এসবের৷

“কথাটা বলে তূর্য সায়রার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তূর্য জানে সায়রা এবার কেঁদে ফেলবে। তূর্য এতোটাও রাগ করেনি যতোটা সে দেখাচ্ছে। তবুও সায়রার এই আহ্লাদ দেখার জন্য হলেও তূর্য এইটুকু করছে। তূর্য নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কয়েক কদম সামনে গিয়ে দাড়ালো। সায়রা এগিয়ে যেতে নিয়ে ওর মাথা ঘুরে উঠলো। সায়রা পড়ে যেতে নিলো। তূর্য দেখলো সায়রা কেমন ঢলে পড়তে যাচ্ছে। মাথা চেপে ধরেছে। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে সায়রাকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরলো। নিজে বিছানায় বসে সায়রাকে কোলের উপর বসিয়ে দিলো ”

_পাখি, ঠিক আছো ? কথা বলো৷ আমি রাগ করিনি তো আমি তো মজা করছিলাম। তুমি কি মাথায় চাপ নিচ্ছো? তাকাও ময়না। কি হয়েছে?

“সায়রা এক হাতে মাথা চেপে ধরে রেখেছে। তূর্যর কথা ওর কানে যাচ্ছে। কিন্তু শক্তি পাচ্ছে না কিছু বলার।কয়েকদিন ধরে এমন করে মাথা ঘুরে উঠে। মনে হয় দিন দুনিয়া অন্ধকার দেখছে৷ গলায় কেমন দলা পাকিয়ে আসে। কিন্তু তূর্যকে সায়রা বলেনি। এই লোক যেই পাগল। এসব জানলে সব মাথায় তুলবে৷ সায়রা ধিরে ধিরে তাকালো তূর্যর দিকে। তূর্য কেমন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সায়রাকে তাকাতেই সায়রা দুই গালে হাত রাখলো তূর্য। অধৈর্য কন্ঠে বলো উঠলো ”

_তুমি কি অসুস্থবোধ করছো জান? বেশি কষ্ট হচ্ছে ? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমায় ? আমি কি বেশি কিছু করে ফেলেছি। চলো ডক্টর এর কাছে যাই। এখনি।

“সায়রা চেয়ে রইলো তূর্যর দিকে। তূর্যর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। কেমন অধৈর্য। সায়রার একটু মাথা ঘুরেছে তাই। সায়রা অবাক হয়। এতো ভালোবাসা ও তার নসিবে ছিলো বুঝি। একসময় জ্বর এলল সায়রা একা পড়ে থাকতো নিজের ঘরে। কেউ দেখার ছিলো না ওকে। আজ সামান্য মাথা ঘুরায় এই মানুষটা এমন করছে। এদিকে সায়রাকে কিছু না বলতে দেখে তূর্য আরো অধৈর্য হয়ে উঠলো ”

_কথা বলো না কেন ? পাগল হয়ে যাবো আমি। কি হয়েছে তোমার ? জান প্লিজ বলো আমায়। আচ্ছা ডক্টর কাছে চলো। ডক্টরকে বলো৷ প্লিজ চলো।

“সায়রা এবার আস্তে করে বললো ”

_কিছু হয়নি আমার। শান্ত হোন আপনি। মাথা ঘুরছে একটু ।

_তুমি খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করছো না তাই না ? কতো বলি একটু হেলদি ফুড খাও পাখি। শোনো না তুমি আমার কথা।

_ইস, কে বলেছে আমি খাই না৷ আপনি এতো চিন্তা কেন করছেন ? ঠিক আছি তো আমি। অফিস আছে না। যান ফ্রেশ হোন।

“তূর্য সায়রার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। মেয়েটা বরাবর চাপা স্বভাবের। কিছু হলে ও বলতে চায় না। তূর্য খেয়াল করলো সায়রার মুখটা কেমন শুখিয়ে গেছে। তূর্য হিসেবে সারাদিন সায়রার সাথেই থাকে। তাহলে অনিয়ম টা হচ্ছে কোথায় ? পরপর তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে আস্তে করে বললো ”

_বউ।

_বলুন।

_আমি রোজ তোমার কাছে আসায় কি ভীষণ কষ্ট হয় তোমার ? তোমার মুখ শুখিয়ে যাচ্ছে কেন? কয়েকদিন আগে ও তুমি এমন ছিলে না। কি হয়েছে বলোনা জানপাখি ?

“তূর্যর কন্ঠ কেমন যেনো শুনালো। লোকটা এতো আকুতি করছে। অথচ সায়রা নিজে ও বুঝতে পারছে না ওর সাথে কি হচ্ছে। এই যে সায়রা চেয়ে ও বলতে পারছে না সায়রার মুখের রুচি উধাও হয়েছে কয়েকদিন। খাবার ভালোলাগছে না। পছন্দের গরুর মাংসা ও সায়রা সয্য করতে পারছে না। এসব সায়রা তূর্যকে বলেনি। সে কিছু আন্দাজ করছে তা ও বলেনি। তূর্য চিন্তা করবে। সায়রা আগে নিজে বুঝুক। এরপর তার পাগলকে বুঝাবে।
সায়রা তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরলো এবার। গালে চুমু খেলো। কিন্তু তূর্যর মধ্যে পরিবর্তন দেখা গেলো না। সে বারবার বলছে ডক্টর এর কাছে যেতে। সায়রা জানে তূর্যর আজ ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। সায়রা ও যাবে। তাই সায়রা বললো ”

_আজ না। শুক্রবার যাই।

_মাথা ঘুরছে আজ। আজ ই যাবো।

_নাহ্। আজ মিটিং আছে। ভুলে গেলেন। আমি ঠিক আছি তো। চলুন অফিসে যেতে হবে,,,,,,।

_তুমি যাবে না।

“সায়রা অবাক হয়ে তাকালো। বললো ”

_কেন ?

_তুমি রেস্ট করবে। প্লিজ জানপাখি। আমি জাস্ট মিটিংটা শেষ করে চলে আসবো। তুমি বাসায় থাকো।

_ছুটি দিচ্ছেন ?

“তূর্য সায়রার এই কথায় আবুল হয়ে গেলো। বলে কি এই মেয়ে। তূর্য সায়রার কোমর জড়িয়ে ধরে আরো কাছে নিয়ে এলো। পরপর বললো ”

_অফিসের মালিককে কি ছুটি দেওয়া যায় ?

_ইস, অফিের মালিক তো আপনি।

_আর আমি মানেই তো তুমি।

“সায়রা হেসে ফেললো। একটা পাগল লোকের সংসার করছে সায়রা। যাকে সামলাতে গিয়ে বেগ পেতে হয় সায়রাকে। একটা সময় ছাড়া তূর্য সায়রার সব কথা মেনে নেবে৷ যা বলবে তাই। নিজের সব কিছু দিয়ে রেখেছে সায়রার কাছে। কিন্তু শুনবে না যখন তূর্য উওেজিত হয়। সায়রাকে নিজের কাছে টানে। এই একটা সময় সায়রা উপলব্ধি করে তূর্যকে থামানো অসম্ভব। ওর পাগলামিতে সায় দিতেই হবে৷
তূর্য ডেস্পারেট,। কথা মানতে চায় না৷ পাগলামি করে বসে। সায়রা কিছুদিন সামলাতে পারেনি তূর্যকে। কেঁদেছে বসে বসে। তূর্য বুকে টেনে নিয়ে তখন হাজারটা চুমু খেয়েছে। সায়রা কাঁদতে কাঁদত যখন বলতো ”

_আপনি এতো পাগল কেন তূর্য ? সফট করে কেন ছুতে পারেননা ?

“তূর্য হেসেছে। সায়রাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বুকের সঙ্গে মিশিয়েছে। সায়রা যেনো একটা বাচ্চা তূর্যর কাছে। তূর্য সায়রার চোখে চোখ রেখে বলেছে ”

_আমি সফট করে ছুলে তোমায় ফিল করতে পারিনা জান। প্লিজ কেঁদো না। রোজ এই সময়টুকুতে সামলে নাও আমায়। বাকি সময়টা আমি তোমায় সামলাবো। প্রমিস।

“সেই থেকে সায়রা আর কিছু বলেনি। সায়রার পাগলামি তূর্য অনায়াসে সয়ে যায়। তাহলে সায়রা কেন পারবে না তূর্যকে এই মুহুর্তে সইতে। এসব কথা মনে পড়ে সায়রা মুচকি হাসে। এতো সুখ সইবে তার কপালে। এই পাগল মানুষটাকে হারিয়ে ফেলবে না তো সায়রা।
সায়রার ভাবনার মাঝে তূর্য তুরি বাজালো সায়রার সামনে। সায়রা চমকে উঠলো। তূর্য বললো ”

_এতো কি ভাবছো ?

“সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে হুট করেই তূর্যকে জড়িয়ে ধরলো। একেবারে শক্ত করে। তূর্য নিজেও ধরলো। সায়রা কেন যেনো কেঁদে ফেললো আজ। তূর্য অবাক হলো। হুট করে বউ তার কদছে কেন । তবুও কিছু জিজ্ঞেস না করে চুপ করে জড়িয়ে ধরে রইলো। সায়রার কেন যেনো ভয়,লাগছে । তূর্য আস্তে আস্তে সায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ”

_কি হয়েছে আমার বউয়ের ? কাঁদছো কেনো ?

“সায়রা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো ”

_আপনি কখনো আমায় ছেড়ে যাবেন না তো। আমার ভীষণ ভয় হয় তূর্য। আমি অভাগা। কপালে সুখ সয় না যে আমার।

“তূর্য এবার সায়রাকে ছাড়িয়ে সুন্দর করে বসিয়ে গালে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে বললো ”

_কই যাবো আমি আমার বউকে রেখে। তুমি যে আমার অভ্যেস মায়াবতী। তোমায় ছাড়া আমি থাকবো কি করে। এসব ভেবে কেউ কাঁদে বোকা।

_আমি আপনাকে ভালোবাসি তূর্য ।

“তূর্য এবার থমকে গেলো। বউ আজ আগ বাড়িয়ে সব বলছে। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে থেকে কিছুসময় পর সায়রাকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। সায়রা তূর্যর উপরে। ভেজা চুলগুলো তূর্যর মুখের উপরে গিয়ে পড়লে তূর্য তা পরম যত্নে সরিয়ে দিলো। সায়রার মাথার পছনে হাত দিয়ে সায়রার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে এলো। অনেকটা কাছে এসে বললো ”

_আমি ও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি মায়াবতী।

“পরপর সায়রার ঠোঁট জোড়া চলে গেলো তূর্যর দখলে। বেশি সময়ের জন্য নয়। তবে কম নয়। তূর্য যতক্ষন না ছাড়লো সায়রা ও কিছু বললো না। উপভোগ করতে লাগলো তূর্যর ছোয়া। তূর্যর অভ্যাস এমন হুটহাট চুমু খাওয়া। যেখানে সেখানে চুমু খেয়ে বসবে। সায়রা এটাকে বেশ উপভোগ করে। তূর্য একটা পাগল। আর সায়রা রোজ তাকে সামলে যাচ্ছে ”

“তূর্য সায়রাকে অফিসে যেতে দিলো না। রেস্ট করতে বললো। সায়রা নিজে ও যেতে চাইছিলো না৷ মনের মধ্যে তার অন্য কিছু ঘুরছে। তার আন্দাজ যদি সত্যি হয়ে যায়। সায়রা কি করবে। কি করে বলবে তূর্যকে। তূর্য যদি এসবের জন্য প্রস্তুত না থাকে।
তূর্য একটু দেড়ি করে অফিসে গেলো। সায়রা গেটের কাছে গিয়ে এগিয়ে দিয়ে এলো। তূর্য বারবার বলে গেলো সায়রা যেনো রেস্ট করে।
তূর্য অফিসে যাওয়ার পর সায়রা সামর্থ্য বেগম এর কাছে গিয়ে বসেছে। চুমকি তখন সায়রাকে খাওয়ার জন্য ডিম সিদ্ধ এনে দিলো। সায়রা একটু মুখে দিতেই কেমন গা গুলিয়ে বমি এলো। সায়রা দৌড়ে চলপ গেলো ওয়াসরুমে। সামর্থ্য আর চুমকি অবাক হয়ে বসে রইলো। এই মেয়ের হলো কি।
সায়রা একটু পর বেরিয়ে এলো। সামর্থ্য বেগম জিজ্ঞেস করলো ”

_কিছু হয়েছে তোর ?

_না দাদী। সকালে কিছু খেতে ইচ্ছে করে না৷

_যা রুমে গিয়ে একটু রেস্ট কর।

“সায়রা চলে এলো রুমে। শরীর দূর্বল লাগছে। রুমে এসে শুয়ে রইলো সায়রা কিছু সময়। কতো কিছু মাথায় আসছে। কখন বিকেল হবে৷ শান্তি লাগছে না৷ সায়রার হাত আপনাআপনি ই পেটের কাছে চলে গেলো। ইস। যদি সত্যি ই এমন হয়। তূর্যর অংশ কি সত্যি ই ওর মধ্যে বেড়ে উঠছে নাকি এমনিতেই এমন হচ্ছে।
দুপুর পেরিয়ে বিকেল হলো। সায়রা ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তূর্য এর মধ্যে কয়েকবার সায়রাকে কল করেছে। সায়রা উঠে ফোন হাতে নিতেই দেখলো তূর্যর কয়েকটা কল। সাথে লাস্ট একটা মেসেজ পাঠিয়েছে আরো সতেরো মিনিট আগে ”

“আমি মিটিং এ যাচ্ছি। ফোন ধরছো না৷ দাদি বললো তুমি ঘুমিয়েছো। ঘুমাও বউ। আমার ফিরতে একটু লেট হবে। টেক কেয়ার জানপাখি”

“সায়রা মেসেজটা দেখে মুচকি হাসলো। এরপর বিছানা থেকে নেমে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেলো। লম্বা সময় নিয়ে সাওয়ার নিলো। এরপর রুমে এসে তৈরি হয়ে নিলো। বের হবে৷ হসপিটালে যাবে। যা সন্দেহ করছে তা সিউর হওয়া দরকার। সায়রা তূর্যকে ও বলেনি কিছু। সুন্দর করে রেডি হয়ে সায়রা বের হলো। নিচে নামতে ই দেখলো চুমকি। চুমকি সায়রাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো ”

_কই যাইবেন ভাবী ?

_আমার একটু কাজ আছে। দাদীকে বলো। আমি সন্ধার আগে ই চলে আসবো।

“চুমকি মাথা নাড়লো। সায়রা বের হলো। আজ রিকশায় করে যাবে। বাসার কিছুটা সামনে হেটে গিয়ে রিকশা নিতে হলো। সায়রা যখন হাটছিলো ওর মনে হলো ওকে কেউ দেখছে। সায়রা কয়েকবার পেছন ফিরে ও তাকালো। তেমন কেউ ই নেই। সায়রার যতোটা সময় হাটলো মনে হতে লাগলো কেউ পেছন পেছন আসছে। ফলো করছে। সায়রা একটা রিকশা পেয়ে তাতে উঠে পড়লো। সায়রা হয়তো খেয়াল করলে দেখতো পেছনে আরেকটা রিকশায় ও কেউ উঠেছে। আর সেটা সায়রার পেছন পেছন ই চলছে ”

“তূর্য মিটিং এ৷ বেশ বিজি৷ আর ফোন ধরার ও সময় পায়নি। মিটিং এ রুহানি নাফিস সবাই আছে। কয়েকদিন পর জাপানে একটা শো তে তূর্যর কোম্পানি থেকে ড্রেস নেওয়া হবে। সেটা বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করবে। সেখানে তূর্য ও যাবে। কিন্তু ড্রেস এর কাজ সব রুহানি করেছে। তাই রুহানিকে ও যেতে হবে। কিন্তু তূর্যর এখন আর যেতে ইচ্ছে করছে না। যদিও বিষয়টা প্রোফেশনাল। তবুও। তূর্য ভাবলো সায়রাকে ও সঙ্গে নেবে। ঘোরা ও হয়ে যাবে কাজ ও হয়ে যাবে।
এদিকে রুহানি চেয়ে আছে তূর্যর দিকে। তখনি রুহানির ফোনে মেসেজ এলো। রুহানি লুকিয়ে মেসেজটা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে তূর্যর দিকে তাকালো। তূর্য কাজে বিজি৷
রুহানি হাসলো। অবশেষে তার কাজ হচ্ছে ”

“সায়রা এসে হসপিটালে ঢুকলো। গাইনী বিভাগের ডক্টর দেখাবে। গিয়ে দেখলো তেমন সিরিয়াল নেই। যেহেতু ডক্টর বসে ই বিকেলে। সায়রা সিরিয়াল দিয়ে বসলো। অপেক্ষা করতে হবে। বুকটা কেমন কাপছে। একা একা এসেছে। তূর্য সামর্থ্য বেগম কাউকেই জানায়নি।
একটু পড়ে সায়রার সিরিয়াল এলো। সায়রা ভেতরে ঢুকলো।
ডক্টরকে সবটা বলার পড়ে তিনি দুটো টেস্ট ধরিয়ে দিলেন। সায়রা চাইলেই পারতো বাসায় বসে টেস্ট করতে। কিন্তু করেনি। যদি ভুল হয়। দুটো টেস্ট করিয়ে সায়রা আবার বসে রইলো। রিপোর্ট সোজা ডক্টর এর কাছে যাবে।
সায়রা ওয়েট করলো কিছু সময়৷ এরপর ফের ডাকা হলো সায়রাকে। সায়রা গিয়ে বসলো। ডক্টর রিফাত সুলতানা সায়রার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন”

_সায়রা আজমীর।

_জি৷

_আপনার রিপোর্ট দুটো দেখলাম। আলহামদুলিল্লাহ পজিটিভ এসেছে। আপনি ছয় সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট।

“সায়রা থমকে গেলো। ছয় সপ্তাহ। সায়রা প্রেগন্যান্ট। ওর মাঝে সত্যি ই তূর্যর অংশ বড় হচ্ছে । সায়রার খুশিতে কান্না এলো। একা একা এমন খবর। ইশ,তূর্য যদি থাকতো। কখন যে বলবে।
ডক্টর সায়রাকে কিছু ঔষধ লিখে দিলো। এক মাস পর আবার দেখা করতে বললো।
সায়রা রিপোর্ট হাতে বের হলো ডক্টর এর কেবিন থেকে। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে এখনি তূর্যকে বলতে। তূর্য নিশ্চয়ই খুশি হবে। কতোটা হবে ?
তূর্যর একটা পরিবার এর নেশা। ওই পাগল লোকটা যখন জানবে তার রক্ত সায়রার গর্ভে। সায়রা ব্যাগে থেকে ফোন বের করলো। তূর্যকে কল করলো। রিং হচ্ছে। রিং হতে হতে কলটা কেটে গেলো। সায়রা আবার কল করলো। এবার হাঁটতে হাঁটতে হসপিটাল থেকে বাইরে চলে এলো। রিকশার জন্য দাঁড়ালো। কখন বাড়ি যাবে। সামর্থ্য বেগম কে জানাবে৷ তূর্য ফোন কেন তুলছে না।
হুট করেই সায়রার সামনে কোথা থেকে একটা গাড়ি এসে থামলো। ভেতর থেকে হুড়োহুড়ি করে চারজন লোক নেমে সায়রাকে টেনে গাড়িতে তুলতে লাগলো।
সায়রা হতবাক। এরা কারা। লোকগুলোর মুখ ঢাকা। সায়রাকে তারা টেনে তুলতে গিয়ে সায়রার হাত থেকে ফোনটা ছিটকে কোথায় যেনো পড়ে গেলো। তখন তূর্যর নাম্বার এ ডায়াল করা কল।
সায়রাকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হলো আড়ালে। ফোনটা আর ফাইলগুলো পড়ে রইলো কোনো এক কোনায়। যেখানে পড়েছে ফোন সেখানে কারো খুজে পাওয়ার ও কথা নয়।
এদিকে তূর্যর ফোন বাজছে৷ কিন্তু তূর্য কেবিনে নেই। রুহানি কোনো কাজে তখন কেবিনে এলো। সায়রা কল দেখে সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখলো। যাতে এই শব্দ তূর্যর কানে না যায়।
রুহানি তূর্যর কেবিন থেকে বেরিয়ে আগে কল করলো কাউকে। কলটা রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটা ই বাক্য”

_পাখি এখন আমার কব্জায়। চলে আসবেন ম্যাডাম। দেখে যাবেন।

“রুহানি কলটা কেটে দিলো। অবশেষে যা চেয়েছে সে তাইলো হলো। এবার কি হবে ? তূর্য যখন জানবে তার সায়রাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন। ইস রুহানি এই দৃশ্য দেখতে চায়। খুব করে চায় ”

“তূর্য নিজের কেবিনে এলো সঙ্গে নাফিস। এখন বাড়ি যাবে। কেবিনে এসে ফোন হাতে নিতেই দেখলো সায়রার কল। দুটো কল করেছে। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে কল ব্যাক করতে করতে অফিস থেকে বের হলো। মেয়েটার শরীর ভালো নেই। হয়তো তূর্যর কথা মনে পরছে। কিন্তু রিং হতে হতে কল কেটে গেলো। রিসিভ হলো না। লিফট এ উঠে আবার কল করলো। নাফিস
তূর্যকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করলো ”

_কি হয়েছে স্যার ? কোনো সমস্যা ?

_সায়রা কল করেছিলো। এখন আর কল ধরছে না

_ওহ্। হয়তো দাদীর সাথে হবে। আপনি তো বাড়িতে ই যাচ্ছেন।

_হবে হয়তো।

“তূর্য কল কেটে ফোন পকেটে রেখে দিলো।
গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো তূর্য। বউটা না জানি তার উপর অভিমান করে বসে। কাল একবার ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবে ভাবলো সায়রাকে। মেয়েটা অসুস্থ হলে ও বলবে না।
যাওয়ার পথে মাঝ রাস্তায়,গাড়ি থামিয়ে তূর্য দুটো লাল গোলাপ কিনে নিলো। মেয়ে মানুষ গোলাপ পছন্দ করে। সায়রা ও বেশ পছন্দ করে। লাল গোলাপ।
তূর্য বাড়ি ফিরলো তখন অলরেডি আটটা বাজে। সদর দরজায় কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুললো চুমকি। তূর্যকে দেখেই বললো ”

_ভইজান দেহি একলা। ভাবী কই ?

“তূর্য ভেতরে ঢুকছিলো। চুমকির কথা শুনে থেমে গেলো। বললো ”

_ভাবী কই মানে ? সায়রা কোথায় ? বাসায় নেই ?

_নাহ্ তো। ভাবীতো সেই বিকালে বাইর হইছে। আমি ভাবছি আপনার লগে আইবো।

“সায়রা বিকেলে বের হয়ে গেছে মানে। কোথায় গেছে ? একটু আগেই তো সায়রা তাকে কল করেছিলো। তূর্য বললো ”

_কোথায় গেছে ? বলেনি কিছু ?

_কইলো কাজ আছে। সন্ধার আগে বাড়ি ফিরবো।

“তূর্য এবার থমকে গেলো। বুকটা কেঁপে উঠলো৷ এই মেয়ে গেছে কোথায়। বাপের বাড়ি। সেখানে ও তূর্যকে ছাড়া যায়নি। তাহলে আজ কি একাই গেলো। তূর্য চুমকির দিকে চেয়ে বললো ”

_শোন দাদীকে এসব বলিস না৷ আসছি আমি।

“তূর্য সঙ্গে সঙ্গে আবার দৌড়ে এলো গাড়ির কাছে। রাত বাজছে আটটার বেশি। এই মেয়ে কই আছে। তূর্য ছুটলো সায়রার বাড়ির দিকে। তবুও মনে তার এক অজানা ভয়। সায়রা যেনো থাকে ওখানে। তূর্য এক হাতে ড্রাইভ করছে অন্য হাতে বারবার কল করছে সায়রাকে। আবার অভিমান করেনি তো। এবার জদি অভিমান করে কোথাও যায় না। তূর্য ওই মেয়ের খবর করে ছাড়বে। ভালোবাসে বলে কি মাথায় উঠে নাচবে নাকি। তূর্যর গাড়ির হ
গতি অনেক। সায়রাকে না দেখা পর্যন্ত মনে শান্তি হবে না ”

“সায়রার বাসার সামনে এসে তূর্য গাড়ি থামালো। দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে গেটের সামনে গিয়ে হাত দিয়ে বাড়ি দিতে লাগলো। ধৈর্য নেই তার। কোকিলা বেগম দৌড়ে এসে গেট খুললেন। তূর্য ওনার দিকে একবার চেয়েই বললো ”

_সায়রা কোথায় ? আমার বউ কোথায়?

_সায়রা কোথায় মানে ? সায়রা এখানে আসেনি তো।

_সায়রা আসেনি মানে। ও এখানে আসা ছাড়া কোথায় যাবে। সরুন আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিন।

“কোকিলা বেগম সরে দাড়ালো। তূর্য পুরো বাড়ি খুজলো। সায়রার রুমটা ও খুজলো। সায়রা নেই। এবার তূর্যর টনক নড়লো। তাহলে সায়রা যাবে কেথায়? কোকিলা বেগম বুঝলো সায়রাকে হয়তো পাচ্ছে না। তূর্য যখন গেট দিয়ে বের হবে কোকিলা বেগম পেছন থেকে বলে উঠলো ”

_বউকে পাচ্ছো না। দেখো কি গিয়ে ওই মেয়ে কার সাথে,,,,

“কোকিলা বেগম পুরো কথাটা শেষ ও করতে পারলো না । তূর্য হিংস্র চোখে চায়লো তার দিকে। আঙুল তুলে শুধু বললো ”

_আমার বউয়ের নামে একটা বাজে কথা বললে। জিভ টেনে ছিড়ে রেখে দিয়ে যাবো।

“কোকিলা বেগম ঢোক গিললেন। তূর্য বেরিয়ে গেলো। এবার কোথায় যাবে ? তূর্যর মনোবল ভাঙছে। সায়রার ফোনে কল করলে রিং হচ্ছে। তূর্য উপায় না পেয়ে নাফিসকে কল করলো। নাফিস তূর্যর কল দেখে রিসিভ করতেই তূর্য ব্যাকুল কন্ঠে বলে উঠলো ”

_সায়রাকে আমি পাচ্ছি না নাফিস৷ পাচ্ছি ওকে।

“নাফিস ও হতবাক। সায়রা যাবে কোথায়। নাফিস বললো ”

_আপনি কোথায় আছেন ? আমি এখনি আসছি।

“তূর্য বললো। এরপর গাড়িতে গিয়ে বসলো। বারবার সায়রার ফোনে কল করছে। একটা মুহুর্তে মনে হলো লোকেশন কেন চেক করছে না তূর্য। সঙ্গে সঙ্গে লোকেশন চেক করলো তূর্য। পপুলার হাসপিটাল এর আশেপাশে দেখাচ্ছে। ওখানে সায়রা কি করছে ? ডক্টর এর কাছে গেছে কি। তূর্য নাফিসকে মেসেজ করে ওখানে আসতে বললো। তূর্য ফের গাড়ি নিয়ে ছুটলো।
নাফিসের বন্ধুর বড় ভাই পুলিশে জব করে নাফিস তাকে বলে রাখলো। এরপর এলো লোকেশনে।
তূর্য ও তখন পৌছেছে। দুজনে মিলে পুরো হসপিটাল খুজলো। কোথাও নেই সায়রা। তূর্য ঘেমে উঠেছে। বুকটা কেমন যেনো করছে। কাকে কাকে যেনো কল করছে তূর্য। বারবার বলছে ”

_যে কোনো মূল্যে আমি আমার বউকে আমার সামনে চাই।

“এরপর হসপিটাল থেকে দুজনে বেরিয়ে এলো। তূর্যর পা আর চলছে না। শক্তি পাচ্ছে না। নাফিস বললো ”

_স্যার ছবি দেখাই। হসপিটালে লাস্ট লোকেশন। কেউ না কেউ তো দেখবে।

“তূর্য সেখানের একটা চেয়ারে বসে পড়লো। চোখ মুখ অন্ধকার লাগছে। সায়রার কি কোনো বিপদ হয়েছে। ওই মেয়ের কিছু হয়ে গেলে তূর্য বাঁচবে না।
নাফিস হসপিটালের ভেতরে গিয়ে সায়রার ছবি দেখাতে লাগলো। তূর্য মাথা চেপে ধরে বসে বসে বিরবির করতে করতে বললো ”

_কোথায় আছে জানপাখি। কেনো এতো টেনশন দিচ্ছো আমায়। প্লিজ সেইভ থেকো। আমি মরে যাবো তোমায় ছাড়া। বুকটা ভীষণ খালি লাগছে। কোথায় আছে তুমি আমার জানপাখি কোথায়?

“কয়েক মিনিট পড় নাফিস দৌড়ে এলো। তূর্যর পাশে এসে দাড়িয়ে বললো ”

_একজন নার্স ছবি দেখে বললো বিকেলে নাকি একবার দেখেছে সায়রাকে হসপিটালে।

“তূর্য চমকে তাকালো। শেষ বিকেলে দেখেছে। সায়রা ওকে কল করেছে সন্ধার একটু আগে। নাফিস বললো ”

_এখন কি করবো ?

_পুরো শহর খুজবো। মানুষ লাগাও নাফিস৷ আমার বউকে আমার চাই।

“নাফিস তূর্য অনেকটা সময় এক সঙ্গে। তূর্যর কলকাঠি সব না নাফিসের জানা। নাফিস কাউকে কল করলো। লোক পাঠাতে বললো। সায়রার একটা ছবি পাঠিয়ে দিলো। যেভাবেই হোক খুজে পেতেই হবে।
তূর্য গাড়িতে উঠে বসলো। নাফিস ও এলো। তূর্য গাড়ি চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য এমন এমন জায়গায় যাওয়া যেখানের কথা সায়রা একবার হলে ও তূর্যর কাছে বলেছে ”

“এদিকে রুহানি নিজের বাড়িতে বসে। মদের গ্লাস হাতে। তার লোকগুলো তূর্যকে ফলো করছে। আর সেই আপডেট রুহানি পাচ্ছে। ইস বেচারা। বউয়ের উপর এতো দরদ। রুহানির জন্য কখনো তো কিছু করেনি। জ্বলছে রুহানি।
রুহানি যেতো সায়রাকে একটু দেখতে। কিন্তু আজ মনটা টানছে না। আজ রাতটা সায়রার অন্য রকম কাটুক। একেবারে এতো কিছু মেয়েটা হজম করতে পারবে না। তার উপর তূর্য নেই। তূর্য আর থাকবে ও না। সায়রা একা হয়ে যাবে। একেবারে একা। যেই জীবন রুহানির পাওয়ার কথা তা সায়রা পেয়েছিলো। এবার রুহানি পাবে।
রুহানির জিনিস এ হাত বাড়ানোর ফল এবার সায়রা টের পাবে। ভীষণ ভাবে। কথাগুলো ভেবেই রুহানি হাসে। খুব হাসে নিজের উপর ”

চলবে,,

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৩৮

“সেই রাতে আর সায়রাকে কোথাও খুজে পাওয়া গেলো না। তূর্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। কোথাও বাদ রাখেনি খোজা। সায়রা যেখানে যেখানে যেতো ওই সব জায়গা খুজেছে। কোথাও নেই। তূর্য মানুষ লাগিয়েছে। নাফিস পুলিশে খবর দিয়েছে। শেষ এ ওই রাতে পুলিশ জানালো একটা রাত অপেক্ষা করতে। যদি ফিরে আসে। না হলে কাল যা করার করবে৷ কিন্তু তূর্য তা মানতে নারাজ। তার একটা ই কথা আজ ই যা করার করতে হবে। সায়রা বিপদে আছে। শেষে নাফিস অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। তূর্য একাই আবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। নাফিস এভাবে তূর্যকে একা ছাড়তে পারবে না। তাই নিজেও বাইক নিয়ে ছুটলো তূর্যর পিছু। তূর্য গাড়ি এনে থামালো একটা ফাঁকা রাস্তায়। গাড়ি থেকে নেমে
দাড়ালো। বড্ড হাসফাস লাগছে। ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। সায়রা কই আছে। কেমন আছে? তূর্য কিচ্ছু জানেনা। অথচ রাতের এখন দুটো প্রায়।
আজ পূর্নিমা। আকাশের চাঁদটা জ্বল জ্বল করছে। তূর্যর ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। পুরুষ নাকি কাঁদে না৷ আজ তাহলে গলাটা জরিয়ে আসছে কেন তূর্যর। কেন মনে হচ্ছে বুকটা খালি। এখন তো অনেক রাত। সায়রার এখন তূর্যর বুকে মিশে থাকার কথা। কাল ও তো ছিলো। তূর্যর মিষ্টি ছোয়ায় লতিয়ে যাচ্ছিলো মেয়েটা। আজ নেই কেন। তূর্যর পা ভেঙে এলো। দু পা দিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লো তূর্য। তখনি নাফিস এলো। তূর্যকে এভাবে বসে পড়তে দেখে এগিয়ে আসতে যাবে। দেখলো তূর্য কেমন আকাশের পানে চেয়ে মৃদু চিৎকার করে বলতে লাগলো ”

_কোথায় আছো তুমি আমার মায়াবতী। আমি তো পাচ্ছি না তোমায়। বুকটা ফেটে যাচ্ছে যে আমার। কেমনে আজ আমি বাড়ি ফিরবো। আমি তো গোলাপ নিয়েছিলাম। দিতে কেন পারলাম না তোমায়। আমি কেমনে বাড়ি ফিরবো পাখি। কাল ও তো ছিলে আমার এই বুকে। আজ নাই কেন ? সবাই বলছে অপেক্ষা করতে। জানো পাখি আমার একটু ও অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না। আমার যে তোমাকে এক্ষনি চাই। কোথায় আছে তুমি।
ওই যে সামর্থ্য বেগম। ওনাকে কি জবাব দেবো আমি। কেমনে বলবো আমি পাইনি তোমাকে।

“তূর্য কথাগুলো বলছে আর ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। নাফিস থমকে দাড়িয়ে আছে। যেই তূর্যকে কেউ কখনো দমাতে পারেনি। সেই তূর্য এভাবে কাঁদছে। সায়রা কোথায় আছে। ও যেনো সুস্থ থাকে। তূর্যর জন্য হলেও থাকে। নাফিস এগিয়ে গেলো। সয্য হচ্ছে না আর। গিয়ে তূর্যর পাশে নিজেও হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। তূর্যর কাধে হাত রাখতেই তূর্য বলে উঠলো ”

_ও নাই কেন নাফিস ? কে নিয়ে গেলো আমার সুখ। আমি তো কারো ক্ষতি করিনি। ওর যদি কেউ ক্ষতি করে দেয়। আমি মরে যাবো। ও ছাড়া,কিচ্ছু নাই আমার।

“নাফিস কি বলবে কিছু ই বুঝতে পারছে না। তূর্য ফের বললো ”

_কসম, ওর গায়ে যদি কেউ ফুলের টোকা ও দিয়ে থাকে না। আমি খুন করে দেবো। ওকে যদি আমার থেকে কেউ দূরে সরাতে চায়। আমি সত্যি ই খুন করে দেবো।

_শান্ত হোন। পেয়ে যাবো। কিচ্ছু হবে না সায়রার। বাড়ি চলুন। দাদী এখনি ঘুমায়নি।

_নাহ্। আমি আমার বউ ছাড়া বাড়ি ফিরবো না৷ কিসের জন্য ফিরবো। রোজ যখন যাই ওর হাসি মুখটা দেখি। আজ কিসের জন্য যাবো। আমি ওকে নিয়েই বাড়ি ফিরবো। দরকার হলে সব তছনছ করে ফেলবো। সব।

“সেই রাতে তূর্য সত্যি ই বাড়ি ফিরলো না। নাফিস ও ফিরলো না। এদিকে সায়রাকে খোজা এখনো চলমান। পুলিশ ও খুজছে ”

“একটা ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর। সায়রাকে চেতনা নাসক ঔষধ দেওয়া হয়েছিলো গাড়িতে। সবে সায়রার জ্ঞান ফিরলো। সায়রা কিছু চোখে দেখতে পাচ্ছে না। এতোটাই অন্ধকার। কিন্তু অনুভব করতে পারছে ওর দু হাত পা ও শরীর একটা চেয়ারের সঙ্গে বাধা। যেখানে ও বসে আছে। সায়রা এতোটা সময় অচেতন ছিলো। এখনো মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। কোথায় আনা হয়েছে ওকে? কারাইবা এনেছে ? তূর্য কোথায়? তূর্যর কথা মনে হলো সায়রার। এখন অনেকটা সময় চলে গেছে। তূর্য কি সায়রাকে না পেয়ে খুজছে। সায়রা তো ফিরতে পারেনি। তূর্য সায়রাকে ভুল বুঝবে না তো। সায়রাকে কেনো তুলে এনেছে।
এমন সময় দরজা খোলার শব্দ হলো। দরজা খুলতেই শুনতে পেলো। পুরুষ মানুষের কন্ঠ। সায়রা চুপসে গেলো। অন্তরটা কেপে উঠলো।
তখন রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। সায়রা দেখলো দুটো পুরুষ। তাও মুখে রুমাল বাঁধা। একজন আবার সায়রাকে দেখে চিৎকার করে বললো ”

_বস। মাইয়ার ফিরছে।

“সায়রা ভয়ে সিটিয়ে আছে। বস কে৷ তখনই দরজা দিয়ে একজন লোক ঢুকলো। লুঙ্গি পড়নে। হাতে জলন্ত সিগারেট। মুখে কেমন হাসি। সায়রা মানুষটাকে দেখে চেয়ে রইলো।এটা তো অনিক এহসান। হে সায়রা চিনতে ভুল করেনি। কিন্তু চেহারা কেমন পাল্টে গেছে। চুলগুলো বড় বড়। দাড়ি গোফ গজিয়েছে। কেমন পাগলের মতো। তবুও সায়রা চিনেছে। অনিক এক হাতে লুঙ্গি উঁচিয়ে ধরে সায়রার সামনে আরেকটা চেয়ার নিয়ে কেমন অদ্ভুত ভঙ্গিতে বসলো। সায়রা ভয় পেয়ে চেয়ে আছে দেখে হেসে বললো ”

_কি ম্যাডাম। ভয় পাইতাছেন? আপনারে কতো কইছি ভয় পাইয়েন না।এহন ও ভয় কাটে নাই৷

“কথাটা বলে আরো বিশ্রি করে হাসলো অনিক। সায়রা বললো ”

_আপ,,আপনি। আপনি আমাকে তুলে এনেছেন কেনো ?

_আহা। ম্যাডাম দেহি সোজা পয়েন্ট এ আইতে চায়। তুলছি সে অনেক কারন। আগে আপনারে একটু দেহি।

_কেন তুলেছেন আমায় ? কি করেছি আমি ?

_আপনে তো অনেক কিছু ই করছেন। যেমন আমার মনটা কাইরা নিয়া উড়াল দিছেন। ইস কি হাহাকার।

“সায়রা অবাক হয়ে চেয়ে আছে। মনের মধ্যে ভয়৷ কিন্তু অনিককে সে চেনে তো। এই লোককে কতো ভালো মনে করতো সায়রা। সায়রা ভেতরে ভয় পেলে ও উপরে তা দেখালো না। সায়রা বললো ”

_এসব কি বলছেন।

“অনিক হাতের সিগারেটটায় শেষ একটা টান দিয়ে ফেলে দিলো। ধোয়া উড়ালো ঠিক সায়রার মুখের সামনে। সায়রার নাড়িভুড়ি উল্টে এলো৷ কি বিশ্রি গন্ধ। বমি এলো ভীষণ। তবুও নিজেকে শক্ত করলো। অনিক বললো ”

_অবাক লাগতাছে না ম্যাডাম। আসলে দোষ আপনার বুঝলেন। আপনার সব তে বড় দোষ হইলো আমার লগে দেহা হওয়া। আমি মানুষটা ভালা না। তয়, আপনারে যহন দেখলাম। যে ধান্দায় আপনার কাছে গেছিলাম। ওই ধান্দা আর রইলো না। আপনার এই চেহারা। চোখ। ইস, কি যে মায়া।

“কথা বলতে গিয়ে অনিক একটু থেকে হুট করে সায়রার গাল চেপে ধরলো। শক্ত করে। সায়রা হটাৎ এমন হওয়াতে থমকে গেলো। ভয়ে বুকটা কাপছে। অনিকের দৃষ্টি পরিবর্তন হলো ”

_কিন্তু আপনে কি করলেন। বড়লোক ব্যাডা পাইয়া গলায় ঝুইলা পড়লেন৷ ছ্যাহ্। মানলাম আপনের লগে আমার প্রেম আছিলো না। কিন্তু আমার আপনেরে মেলা পছন্দ আছিলো। অন্য কারো লগে আপনেরে দেইখা যেই আগুন ডা লাগলো বুকে।

“অনিক এমনভাবে সায়রার গাল চেপে ধরেছে সায়রার চোখে পানি চলে এসেছে। অনিক এবার হেসে বললো ”

_কিন্তু, কিন্তু, কিন্তু। এখন আর ওই বাল নাই। ধান্দায় চলি এহন। ট্যাকা পয়সা নাই। আপনে দেখলাম সোনার ডিম পাড়া হাস। একজন আপনারে উঠায় আনতে দিলো কিছু। হুনাম আবার আপনি নাকি স্বামীর দুলালি। কয়েক কোটি দিলেই ছাইড়া দিমু। পাক্কা।

“সায়রার চোখে পানি দেখে অনিক গালটা ছেড়ে দিলো। সায়রা চোখ বন্ধ করে ফেললো। মনে পড়লো অনিকের সঙ্গে প্রপ্রথম দেখার কথা। এসব করা লোকটা এতো নিখুঁত অভিনয় করলো। সায়রা টের ও পায়নি। কিন্তু এখন। তূর্য। ওরা আবার তূর্যর কোনো ক্ষতি করবে না তো।
ততক্ষণে অনিক উঠে দাড়িয়েছে। ছেলে দুটোকে উদ্দেশ্য করে বললো ”

_ওই ম্যাডামরে একটু পানি দে। আর ওই বান্দির বাচ্চা আহে না কে। ফোন দে ওইডারে। ধইরা আনছি কাম শেষ।

“কথাটা বলতে বলতে অনিক বেরিয়ে গেলো। সায়রা বুঝলো সঙ্গে আরো কেউ আছে। অনিক যাওয়ার পর সায়রাকে পানি দেওয়া হলো। কিন্তু সায়রা তা খেলো না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো। একটু সাহায্য চাইলো। তূর্যকে দেখতে খুব ইচ্ছে করলো। ফিরতে পারবে তো সায়রা তূর্যর কাছে। তূর্যযে বাবা হতে যাচ্ছে। তূর্যর অংশ সায়রার মধ্যে যে বেড়ে উঠছে। তূর্যকে সায়রা কি তা জানাতে পারবে। তখন কেন যে ফোনটা ধরলো না লোকটা। সায়রা যদি এখান থেকে না ফিরে। তূর্য। সায়রা আর ওকে দেখতে পাবে না। সায়রার ভীষণ কান্না পেলে। ভীষণ ”

“এদিকে পুলিশ অনেক খুজে সায়রার ফোনের হুদিস পেলো। সেটা ওই হসপিটালের আশেপাশে ই আছে। এ খবর পেয়ে তূর্য আর নাফিস ছুটলো সেখানে।
ওরা পৌঁছে দেখলো পুলিশ ফোন খুজছে। আশেপাশে সব জায়গায়। ফোনটা পেলে ও যদি কিছু পাওয়া যায়। ফোনের লোকেশন এখানে ই দেখাচ্ছে। কিন্তু সায়রা যেহেতু নেই। তাই পুলিশ আর সমস্যায় পড়লো।
অবশেষে দেখলো ফোনটা এক কোনায় বড় বড় ঘাসের মধ্যে পড়ে আছে উল্টো হয়ে। ওখানে ডাকা হলে নাফিস দৌড়ে এগিয়ে গেলো। সঙ্গে তূর্য ও। পুলিশ দেখালো ফোনটা। এটাই কি সায়রার ফোন কিনা। তূর্য দেখলো। এটা সায়রার ফোন। তূর্য ই কিনে দিয়েছিলো। তূর্য তড়িৎ গতিতে ফোনটা হাতে নিলো। সেখান থেকে চলে আসার পড়ে একটা ফাইলে তূর্য পাড়া দিয়ে চলে এলো।তূর্য একবার তাকালো ও ফাইলটার দিকে। আবার ফোনের দিকে চেয়ে চলে এলো।
ফোনে লক নেই। পুলিশ বললো আগে কল লিস্টে যেতে। সেখানে সব তূর্যর কল।
অন্য কারো কল নেই। এতে ও সুবিধা হলো না। তূর্যর এবার ইচ্ছে করছে সব আছড়ে ভেঙে ফেলতে। পুলিশ তূর্যকে বললো ”

_ভেঙে পড়বেন না। অবশ্যই খোজ পাওয়া যাবে।

“কিন্তু তূর্যর মন তা মানছে না। পর মুহুর্তে ই তূর্যর মনে পড়লো সায়রার ফেসবুকের কথা। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে ঢুকলো। ইনবক্সে যেতেই দেখলো অনিক এহসান আইডি থেকে অসংখ্য মেসেজ। কিন্তু সায়রা সিন ও করেনি। লাস্ট একমাসে কতো থ্রেট দিয়ে মেসেজ। তুলে নিয়ে আসবে। মেরে ফেলবে। এসব। তূর্য হতবাক হয়ে গেলো। এই অনিক এহসান কে। আইডিতে ঢুকলো। কিন্তু কোনো ছবি নেই।
তূর্য এবার আরো ঘাঁটতে লাগলো মেসেজ। সঙ্গে নাফিস ও এসব দেখে হতবাক। পুলিশকে ও দেখানো হলো। উপরের কয়েকটা মেসেজ পড়ে তূর্য যা বুঝলো এটা সেই লোক যাকে সায়রার সঙ্গে একবার বাস স্টপে কথা বলতে দেখেছিলো। এরপর আরো একবার কোনো এক চিপা গলিতে ঢুকতে দেখেছিলো। তূর্য সবটা পুলিশকে খুলে বললো। পুলিশ এই ফেসবুক আইডি ঠিক কোথায় থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে তা জানতে দেখতে বললো কাউকে কল দিয়ে।
তূর্যর চোখ দুটো লাল আকার ধারন করলো। এ যদি কোনোভাবে সায়রার হারানোর পেছনে থাকে৷ মেরে ফেলবো তূর্য ”

“এই রাতে রুহানি বের হলো গাড়ি নিয়ে। ঘুম আসছ না৷ ভেবেছিলো কাল যাবে। কিন্তু সায়রাকে এমন অসহায় অবস্থায় একবার দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। রুহানির সব কেড়ে নিয়েছে ওই মেয়ে। রুহানি এমনিই ছেড়ে দেবে। দরকার হলে গুম করে দেবে।
রুহানি গিয়ে পৌছালো সেই ডেরায়। এতো রাতে। গাড়ি রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে রেখে এলো।
এসে দেখলো ডেরার বাইরে এখনো বাতি জ্বলছে। কয়েকজন ছেলে পেলে ও আছে। কেরাম খেলছে। এত রাতে ও। হাতে মদের বোতল তো কারো হাতে সিগারেট। অনিককে দেখলো। অনিক রুহানিকে দেখেই বিড়বিড় করে বকা ছুড়লো। রুহানি টাকা তো দিয়েছে ওকে। কিন্তু কেন যেনো অনিক রুহানিকে পছন্দ করছে না। রুহানিকে দেখে বললো ”

_আরেহ্। আইয়া পড়ছেন। আহেন আহেন। আপনের মাল বহায় রাখছি।

“রুহানি খুশি হলো। ভেতরে যেতে নিলো অনিক ও পিছু নিলো। রুহানি বললো ”

_আমি একা যাবো। এটা আমার ম্যাটার।

“অনিক থেমে গেলো। তার কাজ টাকার। একলা যাইক না হইলে দুকলা। তার কি ”

“সায়রা এখনো একই ভাবে। গলা শুখিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সারাদিন না খাওয়া।
নিজের জন্য চিন্তা নেই। কিন্তু ভেতরে যে আরেকজন আছে।
এমন সময় আবার দরজায় শব্দ হলো। সায়রা তাকালো সে দিকে। অনিক আসবে হয়তো। ওই বিশ্রি লোকটা এবার সামনে এলে মুখ বরাবর থুথু ছুড়বে সায়রা ঠিক করলো।
কিন্তু দরজা খুলে যে ঢুকলো তাকে দেখে সায়রা ফের অবাক হলো। সাথে একটা ধাক্কা খেলো। রুহানি।
রুহানি এখানে। তাহলে কি তখন অনিক ওর কথা ই বলছিলো। রুহানি এসব করিয়েছে।
রুহানি সায়রার দিকে চেয়ে কেমন করে যেনো হাসলো। সায়রা শক্ত চোখে চেয়ে রইলো। রুহানি এসে সায়রার সামনে থাকা চেয়ারটা টেনে বসলো। সায়রা তখন ও চেয়ে আছে। রুহানি বললো ”

_অবাক হলে। আশা করোনি না। না করার ই কথা। তারপর বলো সরাপ্রাইজ টা কেমন লাগলো ?

“বলেই রুহানি হাসলো শব্দ করে। রুহানির গা থেমে কেমন মদের গন্ধ আসছে। সায়রা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। রুহানি সায়রা দিকে চেয়ে বললো ”

_কাজ টা ঠিক করোনি সায়রা আজমীর । একদম ঠিক করোনি।

_কি করেছি আমি ? আর আপনি ই বা কি করছেন?

_তুমি কি করেছো তুমি জানো না ? আমার কাছে থেকে আমার সব কেড়ে নিয়েছো। আমার সুখ শান্তি সব। আমি ও কেড়ে নেবো। দেড়টা মাস ধরে অপেক্ষা করছিলাম এই দিনের।

_আপনার থেকে আমি কিছু ই নেইনি৷ আপনার মাথায় সমস্যা আছে।

“সায়রার এমন ত্যাজ নিয়ে কথা বলা রুহানির পছন্দ হলো না একটু ও। উঠে দাঁড়ালো রুহানি। কাছে এসে গাল চেপে ধরলো সায়রার। হিংস্র হয়ে উঠলো রুহানি ”

_তুই আমার সব কেড়ে নিয়েছিস। আমি পাগল হে। তুই করেছিস এসব। নষ্ট মেয়ে। তোকে আমি ছেড়ে দেবো ভেবেছিলি ।

“সায়রার হাত বাঁধা। তাও করলো কি রুহানির মুখ বরবাদ থুথু ছিটিয়ে দিলো। রুহানি সায়রার গাল ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। রাগে ফুসছে রুহানি। এতো ত্যাজ এই মেয়ের।সায়রা বললো ”

_আমার কিছু হলে তূর্য ও তোকে ছেড়ে দেবে না। তুই একটা পাগল। উন্মাদ।

“রুহানি এবার তেড়ে এসে সায়রার গলা চেপে ধরলো। সায়রাকে পারছে না চেয়ার উল্টে ফেলে দিতে। পরপর রুহানির চোখ গেলো সায়রার হাতে। হিরের রিংটা। রুহানি গলা ছেড়ে সায়রার হাতের দিকে হাত বাড়ালো। রিংটা টেনে হাত থেকে খুলতে চাইলো। সায়রা হাত মুঠোয় করে ফেললো ”

_খোল। এটা আমার রিং। তূর্য এটা আমাকে দিতো। তুই নিয়েছিস। এটা আমার। এটা তোর হাতে থাকতে পারে না। খোল এটা। মেরে ফেলবো আমি তোকে।

_মেরে ফেললো ও তুই এই রিং পাবি না। এটা আমায় ভালোবেসে তূর্য দিয়েছে। এটা আমার৷

“রুহানি সায়রার হাতে পারছে না ক্ষত বিক্ষত করে ফেলতে। রুহানির বড় বড় নখের আচর এ কেটে যাচ্ছে সায়রার হাত। তবুও হাতের মোট খুলছে না।
রুহানি রাগে ফেটে যাচ্ছে। এক তো মদ খেয়ে তাল সামলাতে পারছে না। তার উপর এতো কিছু। কিন্তু সায়রা কিছুতেই এই রিং নিতে দিবে না। এটা তূর্যর দেওয়া। নিজ হাতে পরিয়ে দিয়েছে তূর্য। সায়রার শরীরে শক্তি নেই। রুহানি সায়রার গলা চেপে ধারায় আরো শক্তি হারিয়েছে ”

“অনিক বাইরে দাড়িয়ে কেরাম খেলছিলো তখন ও। তখনই ওর আইডিতে কেউ একটা লিংক পাঠালো।
অনিকের ফোন আরেকজনের কাছে থাকায় সে সেই লিংক এ ঢুকে । কিন্তু তেমন কিছু ই পায় না। ছেলেটা আবার ফোনে বাউল গান শুনতে থাকে।
এদিকে কোনোভাবেই যখন অনিকের লোকেশন ট্রেক করা যাচ্ছে না। তখন নাফিস এই বুদ্ধিটা খাটিয়েছে।৷ তবে জিরো পারসেন্ট আশা রেখে। কাউকে না জানিয়ে। জদি কিছু জানা যায়৷ এখনো কেউ ই জানেনা এসব অনিক করিয়েছে কিনা। কিন্তু নাফিস যখন দেখলো লোকেশন ট্র্যাকিং করা যাচ্ছে। তখন দোড়ে আগে পুলিশের কাছে গেলো। তূর্য তখন এদিক ওদিক কল করছে। নাফিস দৌড়ে পুলিশের কাছে গিয়ে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো ”

_স্যার আমার মনে হচ্ছে আমি লোকেশন পেয়ে গেছি। এই দেখুন৷।

“তূর্যর কানে এ কথা যেতেই তূর্য দৌড়ে এলো। পুলিশ দেখলো আসলেই লোকেশন দেখাচ্ছে। কিন্তু এভাবে কি করে করলো। নাফিসকে বললো “.

_এটা কি করে হলো ?

_আসলে এটা একটা বাটপারি পদ্ধতি। কিন্তু এখন তো উপায় নেই৷ চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিলাম হয় কিনা৷ কিডন্যাপার মনে হচ্ছে তেমন বড় মাপের নয়৷

” এদিকে তূর্য অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে। এতো সময় নেই তার৷ পুলিশের হাত থেকে ফোনটা থাবা দিয়ে নিয়ে নিলো। পুলিশরা ও এতক্ষনে বুঝো গেছে এই লোক পাক্কা বউ পাগল।
তূর্য দেখলো লোকেশন দেখাচ্ছে এক বস্তিতে। হে। ওখানে বস্তি । তূর্য চেনে ওই জায়গায়। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিলো গাড়ির দিকে। এক মিনিট অপচয় করার সময় তার নেই এখন। অলরেডি বারো ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে সায়রা মিসিং।
তূর্য গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে একা। ওর পেছনে পুলিশের গাড়ি। নাফিস বাইকে। তূর্য পাড়ছে না উড়ে যেতে। যদি পারতো তাই করতো। মনে মনে শুধু বলতে থাকলো ”

_প্লিজ জান সেইফ থেকো। আমি আসছি। আমি আসছি তোমাকে নিতে।

“এদিকে রুহানি সায়রার গলা চেপে ধরে পারছে না মেরে ফেলতে। সায়রা হাত পা বাঁধা। রুহানি যেইভাবে৷ সায়রাকে আক্রমন করছে। তাতে সায়রা শুধু মনে মনে বলছে পেটে যেনো আঘাত না লাগে। ওখানে যেনো কিছু না হয়।
রুহানি যে ওর হিতাহিতজ্ঞান হারিয়েছে তা ওর আচরনেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এতো কিছুর পর ও সায়রা যখন হাতের মোঠ খুললো না। তখন রুহানি ফের বসে পড়লো চেয়ারে

_তোর অনেক ত্যাজ না। তোকে তো সবে গুম করেছি। তোকে আমি খুন ও করবো।

” সায়রার শরীরে শক্তি নেই আর। কথা ও আসতে চাচ্ছে না গলা দিয়ে। তবুও বললো ”

_তূর্য জানলে তোকে ছাড়বে না। বিশ্বাস কর৷ ছাড়বে না।

“রুহানি এবার পাগলের মতো হেসে উঠলো ”

_তূর্যকে কে বলবে ? তুই বলবি? তোকে বাচিয়ে রাখলে না বলবি।

“সায়রার চোখ মুখ ভেঙে আসছে৷ এর মাঝে রুহানি একটা কাজ করে বসলো। আশেপাশে চেয়ে দেখলো ছোট ছোট কাঠের টুকরো পড়ে আছে। সেখানে থেকে একটা কাঠের টুকরো তুলে আনলো। সায়রা যখন চেয়ে দেখলো রুহানির হাতে কাঠের টুকরো। ওকে আঘাত করতে এগিয়ে আসছে। তখন একটা মুহুর্তের জন্য ভাবলো আজ ও শেষ। রুহানি এসে সায়রার হাত বরাবর কাঠের টুকরো দিয়ে বাড়ি দিলো। সায়রা চিৎকার করে উঠলো। রুহানি আরো একবার বাড়ি দিলো। সায়রা চিৎকার করলো।
এদিকে বাইরে বসে কেরাম খেলায় বিজি অনিক। তার এসবে মাথা ব্যথা নেই। টাকা পেয়েছে তার তাতেই চলবে। এখন রুহানি মারুক যা খুশি করুক। শুধু জানটা বাচিয়ে রাখলেই হবে। রুহানির স্বামীর কাছে থেকে ও বড় অংকের টাকা নিতে হবে মুক্তিপন হিসেবে ।
রুহানি সায়রার চুলের ঝুটি চেপে ধরলো৷ কাঠের টুকরোটা থুতনিতে ঠেকিয়ে বললো ”

_ছেড়ে দে তূর্যকে। অনেক দূরে চলে যা। মারবো না তোকে। তুই চিনিস না আমায়। তূর্যকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি। সব।

“সায়রা রুহানির দিকে চেয়ে বললো ”

_মরে যাবো। তবুও ছাড়বো না। যে আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে তাকে আমি মরে গেলে ও ছাড়বো না।

“রুহানির রাগ এই পর্যায় এতো বাড়লো যে কাঠের টুকরো দিয়ে সায়রার মাথায় আঘাত করে বসলো। গলগল করে রক্ত বেরিয়ে এলো সায়রার মাথা থেকে। এমন সময় বাইরে থেকে কেমন আওয়াজ এলো। রুহানি কিছু আন্দাজ করার আগেই একবার সায়রার দিকে তাকালো। যা হবে হবে। সায়রাকে ও বাঁচতে দেবে না। এই ভেবে আবার কাঠের টুকরোটা দিয়ে বাড়ি দিতে নিলেই দরজা জোড়ে শব্দ হলো। দরজা খুলে গেলো। রুহানি দেখলো তূর্য দাড়িয়ে। হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো রুহানির দিকে। চেয়ারে হাত পা বাঁধা সায়রা প্রায় অজ্ঞান। মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে নিচে পড়ছে। রুহানির হাত থেকে কাঠের টুকরোটা পড়ে গেলো। তূর্য দৌড়ে এসে রুহানিকে ধাক্কা দিয়ে এতো জোরে ফেললো যে রুহানি ছিটকে গিয়ে দূরে পড়লো। তূর্য সায়রার কাছে যেতেই সায়রা একটু তাকালো। অস্পষ্ট স্বরে বললো ”

_তূ,,,তূর্য ।

“তূর্য তাড়াহুড়ো করে সায়রার হাতের বাঁধন খুলছে। হাতের অবস্থা ও খারাপ। পায়ের বাধন খুললো। এদিকে রুহানি ফের এগিয়ে আসতে নিলে নাফিস এসে রুহানিকে চেপে ধরলো। রুহানি উন্মাদের মতো চিৎকার করছে।
তূর্য সেদিকে ফিরে ও দেখছে না। সায়রার বাঁধন খুলতেই সায়রা লুটিয়ে পড়লো তূর্যর বুকে ”

_পাখি এইতো আমি চলে এসেছি৷ কিচ্ছু হবে না তোমার। কিচ্ছু হতে দেবো না। সব সোধ তুলবো আমি জান। তোমার কসম। চোখ খোলা রাখো জান।প্লিজ। আমার জন্য।

“তূর্য সায়রাকে কোলে তুলে নিলো। এখন সবার আগে দরকার সায়রার চিকিৎসা। কাউকে তো তূর্য ছাড়বেই না । বাইরে যখন ওরা আসছিলো পুলিশ দেখে অনিকসহ ওর লোকেরা দৌড় দিয়েছে। এটা এতোটাই ভেতরের রাস্তা যে পুলিশ এখনো অনিককে খুজছে। এদিকে তূর্যর ঠিক করা লোকগুলো ও চলে এসেছে। রুহানি চিৎকার করছে। কয়েকজন মিলে রুহানিকে চেপে ধরলো। তূর্যর শুধু একবার পেছন ফিরে চেয়ে বললো

_ওকে ওই চেয়ারটায় বেধে রাখবি। আমি নিজ হাতে ওর শাস্তি দেবো। ও যেনো পালাতে না পারে।

” কথাটা বলে তূর্য সায়রাকে কোলে নিয়ে ই বেরিয়ে গেলো। সায়রা র শক্তি নেই শরীরে। ভার ছেড়ে দিয়েছে পুরো। শুধু মুখে বিড়বিড় করে বলছে ”

_তূর্য,,, তূর্য,, বাচ্চা ।

“তূর্য বুঝতে পাড়ছে না সায়রার কথা। নাফিস এলো সঙ্গে তূর্যর। গাড়ি নাফিস ড্রাইভ করছে। তূর্য পপছনে উঠলো। সায়রাকে নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরে রইলো। সায়রার মাথার রক্ত তূর্যর শার্ট এ এসে লাগলো। সায়রা তূর্যর হাতটা ধরলো। তূর্যর আজ নিজেকে সব থেকে বেশি অসহায় লাগছে। এদিকে ফজরের আজান পড়ছে চারদিকে। তূর্য সায়রার গালে হাত রাখলো”

_আর একটু পাখি। এই তো এসে পড়েছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। সব। আমি আছি তো জান। আর একটু সয্য করো। আমি কাউকে ছাড়বো না। যে যে আঘাত করছে তোমায় কাউকে না। তোমায় ছুয়ে বললাম। তুমি ঠিক থেকো শুধু।

“সায়রাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। এতো সকালে তেমন ডক্টর ও হসপিটালে নেই। কিন্তু তূর্য সেসবে তোয়াক্কা করলো না। দায়িত্বরত একজন ডক্টর এসে সায়রাকে দেখলো। সায়রা তখন পুরোপুরি জ্ঞান হারিয়েছে। উনি সায়রাকে দেখলেন৷ মাথা কিছুটা কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তার তেকে বেশি হাতের অবস্থা খারাপ। কিন্তু এখন তো ডক্টর নেই। লোকটা বললো ”

_রোগীর অবস্থা দেখে ক্রিটিকাল মনে হচ্ছে। এখন তো ডক্টর নেই৷ আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারি।

“তূর্য সায়রার হাত চেপে ধরে রেখেছে। লোকটার মুখে এমন কথদ শুনে তাকালো লোকটার দিকে ”

_বেস্ট চিকিৎসা লাগবে। ডক্টরকে ডাকুন৷ কল করুন।

_কিন্তু এখন তো,,,, ।

“লোকটা কথা শেষ করার আগেই তূর্য বলে উঠলো ”

_ডক্টর ডাকুন। এক্ষনি৷ যা লাগবে দব দেবো। ডক্টর ডাকুন।

“লোকটা দুটো নার্সকে সায়রাকে নিয়ে যেতে বললো। রক্ত মুছিয়ে দিতে বললো। সায়রাকে নিয়ে যাওয়া হলো। তূর্য ধপ করে এবার চেয়ারে বসে পড়লো। গায়ে রক্ত লেগে আছে। নাফিস এসে পাশে বসলো। তূর্যর হাত কাপছে। নাফিস বললো ”

_চিন্তা করবেন না স্যার। ঠিক হয়ে যাবে সব।

“তূর্য সময় নিয়ে বললো ”

_রুহানিকে আটকে রেখেছে তো।

_হুম। আমার মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে গেছে স্যার।

_আমার বউটা একটু সুস্থ হোক। আমি ওর কলিজা মেপে দেখবো। কসম।

“নাফিস চেয়ে রইলো। তূর্য সারাদিন ওর সঙ্গে ছিলো। সারারাত পাগলের মতো খুজলো সায়রাকে। এখনো চুপচাপ বসতে পারছে না।
একটু পড়ে দেখলো ডক্টর এসেছে দুইজন। তারা ঢুকলো কেবিনে। তূর্য বাইরে দাড়িয়ে আছে। অনেকটা সময় নিয়ে মহিলা ডক্টর বেরিয়ে এলো। তূর্যকে দেখে বললো ”

_আপনি পেশেন্ট এর হাজব্যান্ড?

_জি।

_ওনার এই অবস্থায় এসব হলো কি করে। উনাকে তো এখন ডক্টর প্রোপার ট্রিটমেন্ট ও দিতে পারবে না।

“তূর্য ভ্রু কুঁচকালো। বললো ”

_মানে। ট্রিটমেন্ট কেনো দেওয়া যাবে না ?

_আপনি জানেনা। উনি প্রেগন্যান্ট। তাও ছয়,সপ্তাহের। উনার উপর দিয়ে কি গেছে সেটা উনি জানে। ভাগ্য ভালো পেটে কোনো আঘাত পায়নি৷ এ অবস্থায় উনাকে অনেক ঔষধ ও দেওয়া যাবে না। বেবির ক্ষতি হবে।

“তূর্য মিনিট খানিকের জন্য একটা শব্দে থেকে গেলো। সায়রা প্রেগন্যান্ট। সায়রা প্রেগন্যান্ট । তূর্য যেনো নিজের কান কে ও বিশ্বাস করতে পারছে না। এই মেয়ে কি করে ফেলেছে। তূর্যর অংশ গর্ভে ধারন করে বসে আছে। কেউ জানেনা। এই মেয়ে নিজেও কি জানেনা। তূর্য বাপ হবে। অথচ এই খবর সে এভাবে পাচ্ছে। এখানে দাড়িয়ে। তূর্য কি খুশি হবে৷ কি করবে তূর্য। সায়রাকে ভীষণ জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। তূর্য আশা করেনি৷ নাহ্। করেছে। বহুবার করেছে। তাই তো যতোবারই কাছে গিয়েছে কখনো সায়রাকে কিছু খেতে ও বলেনি। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সব হয়ে যাবে। ইস, তূর্যর কান্না পাচ্ছে। আফসোস হচ্ছে । বাপ হওয়ার খবর কেউ এভাবে পায়। বউটা তার অসুস্থ। কতো কষ্ট ই না সয়েছে। পর মুহুর্তে তূর্যর চোখের সামনে ভেসে উঠলো রুহানির কাঠ হাতে সায়রাকে মারতে যাওয়ার দৃশ্য। সেই মুহুর্তে নাফিস কাঁধে হাত রাখলো। তূর্য নাফিসের দিকে চেয়ে নাফিসকে জড়িয়ে ধরলো ”

_আমি কেমন বাপ নাফিস। আমি এমন পরিস্থিতিতে আমার বাপ হওয়ার খবর পাচ্ছি। আমার বউটা তাকাতে পারছে না। যদি না যেতে পারতাম৷ ও আমার সন্তান আমার পাখিকে মেরে ফেলতো। আমি ওকেই মেরে ফেলবো। কসম আমি রুহানির কলিজা টেনে ছিড়ে ফেলবো।

“নাফিস তূর্যর অবস্থা বুঝতে পারছে। এই মানুষটার এটা পাওয়ার ছিলো না৷ রুহানি এমনটা কেন করতে গেলো। তূর্য কতো কিছু জানে ওর সম্পর্কে। কতোভাবে ও তূর্যর ক্ষতি করতে চেয়েছে৷ নিজের কব্জায় নিতে কতো কৌশল খাটিয়েছে। তূর্য কিছু বলেনি। বন্ধু বলে চুপ থেকেছে। আজ কি বাড়াবাড়ি করে ফেললো না রুহানি৷ এটা করা ঠিক হয়নি। এবার তূর্যর এর বিচার করা উচিত। নিজ হাতে করা উচিত ”

চলবে,,,