#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৪৩
“রাতের বারোটা বাজে। তূর্য নাফিসকে ওর বাসায় ই যেতে দেয়নি। ধরে নিয়ে এসেছে। আর সোজা বলে দিয়েছে। জেরিনকে তুলে আনতে।
এ কথা শুনে সায়রা পারে না খুশিতে দুটো লাফ দেয়। এখন থেকে দুজন তাহলে একসাথে থাকতে পারবে।
এদিকে নাফিস ওদের দেখছে আর অবাক হচ্ছে। এতো খুশি এরা নাফিসের জন্য। যেকোনো রিস্ক নিতে প্রস্তুত।
নাফিসের জন্য বরাদ্দ করা রুমে নাফিস এসে পড়লো। মনে মনে ঠিক করলো জেরিনকে আনতে পারলে আর একা থাকবে না। এ বাসায় ই থাকবে।
নাফিস রুমে গিয়ে জেরিনকে কল করলো। না জানি মেয়েটা কেঁদেকেটে সব ভাসিয়ে দিয়েছে। নাফিস কল করলো। সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে জেরিন ফিসফিস করে বললো ”
_হ্যালো।
_এমনে কথা বলতেছো কেন?
_বাবা বলেছে আপনার সাথে কথা না বলতে। জোড়ে বললে যদি শুনতে পায়। তাই।
“এই কথা শুনে নাফিসের আরো রাগ বাড়লো। বললো ”
_ওয়েট আমি আধা ঘন্টা পড়ে কল দিচ্ছি।
“কথাটা বলেই নাফিস কল কেটে দিলো। জেরিনের এমনিই মনের মধ্যে কষ্ট এখন তো নাফিস ও কল কেটে দিলো। আরো কান্না পেলো ওর৷ এই বুঝি নাফিসকে হারিয়ে ফেললো। এদিকে আধা ঘন্টা সময় ও যাচ্ছে না। পাক্কা আধা ঘন্টা পড়ে জেরিনের ফোনে কল এলো। জেরিন রিসিভ করতেই নাফিস বলে উঠলো ”
_মুসিবতের বেটি।
_কোথায় আপনি ?
_তোমার বাসার গলির মোড়ে।
“জেরিন অবাক হয়ে গেলো। এতো রাতে এখানে এসেছে কেন নাফিস ”
_এতো রাতে এখানে।
_একটা কথা জিজ্ঞেস করি তোমারে কটকটি?
_করেন।
_তুমি ভালোবাসো তো আমারে ?
“জেরিন যেনো থমকে গেলো। ভালোবাসে মানে কি। অনেক ভালোবাসে জেরিন নাফিসকেম।এই লোক কি এতোদিনে এটা ও বুঝলো না। জেরিন বললো
_নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসি।
_এক জীবন কাটাতে পারবে না আমার সঙ্গে ডাল ভাত খেয়ে ?
_দিব্বি পারবো।
_তাহলে চলে এসো। এখনি। আমি অপেক্ষা করছি।
” জেরিন অবাক হয়ে বললো ”
_এখনি ?
_হু। হয়তো এখন। নয়তো কখনো না। আর হারামে থাকতে চাই না। আমি আর আধ ঘন্টা এখানে দাড়াবো। তোমার ওই মুসিবত বাপের সব ফেলে রেখে আসবে।
“জেরিন কি করবে বুঝতে পারছে না। এটা এতো বড় সিদ্ধান্ত। অথচ সময় আধঘন্টা। কিন্তু জেরিন তো নাফিসকে ছাড়া ও থাকতে পারে না৷ জেরিন বললো ”
_আসছি। একটু সময়,দিন। গোছগাছ করে নেই।
_একটা সুতা ও আনবে না। শুধু পরনের ড্রেসটা ছাড়া। আমি গলির সামনে আছি। এসো।
“নাফিস কল কেটে দিলো। জেরিনের দুঃখ হলো। তার এতো সুন্দর সুন্দর জামা। সব রেখে চলে যাবে। তার যেই হিটলার বাপ। তাকে তো জীবনে ও আর এই বাড়িতে উঠাবে না। গেলো জেরিনের জামাগুলো।
জেরিন একবার দরজা খুলে দেখলো বাইরে কেউ আছে কিনা। দেখলো নেই। ওর বাবার ঘরের দরজা ও বন্ধ। জেরিন শুধু ওরনা আর ফোনটা হাতে নিয়ে বের হলো। মেইন দরজা খোলার আগে একবার পেছন ফিরে তাকালো। বুকটা কেমন কাঁপছে। তবুও জেরিন বেরিয়ে গেলো। পরিবার একদিন হয়তো মেনে নিবে। কিন্তু আজ নাফিসকে হারালে সারাজীবন আফসোস করে বাঁচতে হবে। জেরিন বের হলো। রাত অনেক। তবে আলো জ্বলছে বাসার সামনে রাস্তায়। জেরিন গেট দিয়ে বের হয়ে একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলো নাফিস বাইকের উপর বসে আছে। জেরিনকে আসতে দেখে নাফিস বাইকে থেকে নেমে এগিয়ে এলে জেরিন দৌড়ে গিয়ে নাফিসকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। নাফিস বুঝতে পারলো জেরিন ভয় পাচ্ছে। এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভয়,লাগার ই কথা৷ নাফিস জেরিনকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বললো ”
_মুসিবতের বেটি৷ তোমার মুসিবত বাপের জন্য কান্না করতাছো৷ নিমু না কিন্তু। কান্না থামাও।
_ওদের আর কখনো দেখতে পারবো না নাফিস৷ ওরা আমাদের মেনে নেবে না।
_কে বলেছে নেবে না। বিয়ে করেই বেবি নিয়ে নিবো। এরপর বেবি নিয়ে আসলে তোমার বাপ কেন সবাই রাজি হয়ে যাবে। কেঁদো না।
“নাফিস বাইকে উটে বসলো। জেরিন পেছনে বসলো। নাফিস ভাবলো এতো রাতে কাজি অফিস খোলা থাকবে না। তাই জেরিনকে নিয়ে সোজা তূর্যর বাড়িতে গেলো।
বাড়ির সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে নাফিস তূর্যকে কল করলো। তূর্য তখন সায়রাকে বুকে নিয়ে শুয়ে ছিলো। হুট করে কল আসায় ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নাফিসের কল। কল রিসিভ করতেই নাফিস বলে উঠলো ”
_নিচু নামুন স্যার। দরজার সামনে মেয়ে ভাগিয়ে এনে দাড়িয়ে আছি।
“তূর্যর মুখে হাসি ফুটলো। সায়রা তখন তূর্যর দিকে চেয়ে। তূর্য বললো ”
_ওয়েল ডান। ওয়েট করো আসছি।
“তূর্য কল কাটলে সায়রা তূর্যর বুকে থেকে মাথা তুলে বললো ”
_কি হয়েছে ?
_নাফিস জেরিনকে তুলে এনেছে। নিচে দাড়িয়ে আছে ওরা।
“এ কথা শুনতে দেরি সায়রা এক লাফে উঠে বসে পড়লো। ভাগিয়ে বিয়ে। জীবনে অনেক শুনেছে। কখনো দেখা হয়নি। তাও জেরিন আর নাফিসে। সায়রা নেমে গেলো বিছানা থেকে। তূর্য বললো ”
_এমন করছো কেনো ?
_আরেহ্ জলদি নিচে চলুন। বিয়ে দেখবো।
“বলে সায়রা দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। পিছে পিছে তূর্য ও যাচ্ছে। এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গেলো। তূর্য পেছন থেকে বারবার বলছে ”
_পাখি এভাবে ছুটোছুটি করো না। পরে যাবে। থামো।
_আসুন আপনি।
“সায়রা শুনলো না। সিড়ি দিয়ে নেমে আগে গিয়ে দরজা খুললো। খুলেই দেখলো জেরিন আর নাফিস দাড়িয়ে। সায়রা জেরিনলে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনেই জড়িয়ে ধরে রইলো ”
_আহ্ এসে পড়েছিস। এখন থেকে এক সাথে থাকবো। অনেক মজা হবে।
“ওদের এভাবে দেখে তূর্য আর নাফিস হা করে চেয়ে রইলো। এদের দেখে মনে হচ্ছে দুজন প্রেমিক প্রেমিকাকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাফিস বললো”
_স্যার আমাদের ও কি হাগ করা উচিত না ?
_মনে তো হচ্ছে । চলো করি।
“কথাটা বলে তূর্য ই নাফিসকে জড়িয়ে ধরলো। এবার সায়রা আর জেরিন চেয়ে আছে। ওদের কোলাকুলি শেষ হলে সবাই ভেতরে এলো। সামর্থ্য বেগমকে ও ডাকা হলো। সবাই বসেছে গোল হয়ে। এখন কি করা যায়। এতো রাতে কাজি পাবে কোথায়। তার মধ্যে জেরিনের বাপ যদি পুলিশি ঝামেলা করে। নাফিস বললো ”
_ওর বাপ সিউর ঝামেলা করবে। সিউর।
“তূর্য বললো ”
_তার আগে বিয়ে হয়ে যাবে। এরপর সোজা কক্সবাজার। ঝামেলা করে ও লাভ হবে না।
“সবাই ভ্রু কুঁচকে বললো ”
_কক্সবাজার ?
_হু। বিয়ে করবে৷ কিছুদিন ঘুরবে না তা কি করে হয়৷।
ভোর বেলায় কাজি নিয়ে আসবো। বিয়ে হবে এরপর সোজা ঢাকা ছাড়বে।
“নাফিস বললো ”
_বমি একা যাচ্ছি না। আপনি ও যাবেন স্যার। সবাই যাবো। ট্যুর ও হয়ে যাবে।
“তূর্য একটু ভাবলো। এরপর বললো ”
_যাওয়া যায় কিন্তু। ওকে ডান। ভোরে রওনা হবো তাহলে।
“এ কথা শুনে সায়রা যেনো পাড়ছে নাচতে শুরু করবে। কিন্তু সামর্থ্য বেগম বলে উঠলো ”
_আমি যাচ্ছি না। তোরা যা।
“এবার সবাই এক সাথে সামর্থ্য বেগম এর দিকে তাকালো। সামর্থ্য বেগম কাচুমাচু হয়ে বললো ”
_আমার পায়ের ব্যথা। আমি নড়তে ও পারবো না। তা ছাড়া তোরা চলে গেলে বাড়িতে তালা দিতে হবে। ছোট নাতবউর বাপে আসলে আপ্যায়ন করবে কে।
“সামর্থ্য বেগম এর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। তবুও তূর্য অনেকবার বললো। গাড়িতে করেই তো যাবে। কি এমন হবে৷ কিন্তু সামর্থ্য বেগম যেতে রাজি হলেন না। তাই আর জোড় করলো না কেউ।
তিনি নিজের ঘরে চলে গেলেন। এবার সমস্যা হলো বাকি রাতটুকু নিয়ে। জেরিন এখন শুবে কোথায়? রুম আছে তবুও সায়রা বলপ বসলো ”
_জেরিন বাকি রাতটুকু আমার সাথে থাকবে।
“সায়রার এমন কথা শুনে তূর্য ভ্রু কুঁচকে ফেললো। বউ তার কি বলছে। তূর্য ঘুমাবে কোথায়। বউ ছাড়া ই বা কি করে ঘুমাবে। তার বউ তাকে কিসপর শাস্তি দিতে চায়ছে। তূর্য বললো ”
_তাহলে আমি কোথায় থাকবো ?
_কেন নাফিস ভাইয়ার সাথে।
_এমন করো না বউ। আমার ঘুম হবে না।
“কথাটা বলে তূর্য সায়রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নাফিস তূর্যর হাত ধরে ফেললো। বললো ”
_আমার সাথে থাকুন স্যার। যাও সায়রা তোমরা গিয়ে ঘুমাও।
“সায়রদ আর জেরিন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলে তূর্য চেচিয়ে বলে উঠে ”
_সাবধানে বউ।
“জেরিন এই দুঃখের সময় ও শুধু মুখ চেপে হাসছে। এতো পাগল মানুষ হয়।
নাফিস তূর্যর হাত ধরে রেখেছে। তূর্য অসহায় চোখে চেয়ে রইলো। বউটা তার মিরজাফর। এতোটা সময় কি সুন্দর বুকে শুয়ে ছিলো। এবার। তূর্য এবার নাফিসের দিকে চেয়ে বললো ”
_তোমার বউটা কেন আমার বউরে নিয়ে ভাগলো ?
_আমার বউ ভাগছে নাকি আপনার।
_আমার বউ তো ছোট। এতো কিছু বুঝে নাকি।
“তূর্যর কথা শুনে নাফিস হা করে চেয়ে আছে। বলে কি। সায়রা নাকি ছোট। নাফিস বললো ”
_আসলেই অনেক ছোট আপনার বউ। কয়দিন পর মা ও হয়ে যাচ্ছে।
“তূর্য এবার নাফিসের রুমে ঢুকে বিছানায় বসতে বসতে বললো ”
_কতো আদর করে পালি জানো। তুমি বুঝবো না এসব।
“নাফিস ও তূর্যর পাশে এসে বসে বললো ”
_কেন বুঝবো না ?
_এখনো তো বিয়েই করো নাই। বাসর করবা। এরপর বাচ্চা। তখন বুঝবা বউ কতো আহ্লাদ করে পালতে হয়।
_আপনি বউ পাগল হয়ে গেছেন স্যার।
_তুমি ও হয়ে যাবা। শুধু কালকের রাতটা আসতে দাও।
“নাফিস ভ্রু কুচকে বললো ”
_দিনের বেলা কি দোষ করলো ?
_ধুর বলদ। শুভ কাজ রাতেই করতে হয়। তা ছাড়া আমি ও যাচ্ছি । তোমার বেশি সুখ আমার সয্য না ও হতে পারে।
“নাফিস এবার বলে উঠলো ”
_তাহলে আপনি থেকে যান।
_স্বার্থপর।
“এদিকে সায়রা আর জেরিন পাশাপাশি শুয়ে গল্প করছে। জেরিন কাঁদছে। সায়রা বুঝালো। সায়রা নিজেও সব ছেড়ে পড়ে আছে। এটা ই মেয়েদের জীবন। ভোর হলেই জেরিনের নাম জুড়ে যাবে নাফিসের নামের সঙ্গে। সায়রা এবার একটু মজা করে বললো ”
_তাড়াতাড়ি বাবু নিয়ে নিবি কিন্তু।
_তুই কখন ভেবেছিলি বেবির কথা ?
“সায়রা থেমে গেলো। ও তো কিছুই ভাবেনি৷ হুট করে জানতে পেরেছে। সায়রা বললো ”
_আমি ভাবিনি। ভাবার আগেই শুনি বেবি আসছে।
“জেরিন এবার আস্তে করে বললো ”
_ফিলিংস কেমন রে ?
_কাল তো বিয়ে হচ্ছে ই। কাল রাতেই টের পাবি কেমন ফিলিংস।
_জীবনে ও না। অন্তত এক মাস সময় দিতে হবে আমাকে।
“জেরিনের কথা শুনে সায়রা হেঁসে ফেললো। বললো ”
_এক মাস তো দূর। একদিন সময়,দেয় কিনা দেখ।
_কেন দিবে না। আমি বিয়ে করা বউ৷ পালিয়ে তো আর যাবো না।
_বিয়ে করা বউ বলেই দেবে না সময়। যদি দেয় আমাকে এসে বলিস তুই। আবার তোদের প্রেম এর বিয়ে।
“জেরিন এবার একটু চিন্তা করে বললো”
_তোদের তো এমনিই বিয়ে। তোকে সময়,দিয়েছিলো ?
_একদিন ও না।
“জেরিন এবার ঠাট্টা করে বললো ”
_এর জন্য ই তোর বেবি এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।
_তোর ও হবে।
“সারারাত কারো চোখে ঘুম নেই। তূর্য একজনকে দিয়ে সকাল সকাল কাজি ডাকালো। জেরিন আর সায়রা নিচে নামলো। সামর্থ্য বেগম এলো। সায়রা জেরিনকে ওর থেকে একটা লাল শাড়ি পড়িয়েছে। গয়না অর্ধেক দিয়েছে জেরিনকে। কিন্তু নাফিস সেই নিজের লুকেই আছে। দুজনকে পাশাপাশি বসানো হলো। কাজিকে সব বলা হলে দেনমোহর ঠিক করা নিয়ে বললো”
_দেনমোহর কতো ধরবো ?
“নাফিস ঠিক ই করে নিয়েছে ওর জমানো যতো আছে তার আধা বলবে। কিন্তু তার আগেই তূর্য বলে উঠলো ”
_দশ লাখ ধরুন।
“নাফিস চেয়ে বললো ”
_স্যার দশ লাখ ?
_চুপ। বিয়ের নতুন বর ৃএতো কথা বলতে হয় না৷
“দশ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হলো নাফিস আর জেরিনের। সকাল ভোরে। সায়রা মিষ্টি আনলো ফ্রিজ থেকে। সবাইকে খাওয়ালো। কিন্তু নিজে খেতে পারলো না। বিয়ে শেষ হতেই তূর্য বললো ”
_উপড়ে গিয়ে গোছগাছ করো। আটটার মধ্যে বের হবো।
“সায়রা আর জেরিন উপড়ে গেলো। নাফিস ঘরে এসে বললো ”
_আমার জামাকাপড় সব বাসায় রেখে এসেছি।
_কিনে নিও। জেরিনের জন্য ও কিনতে হবে।
_টাকা উঠাতে হবে তাহলে।
“তূর্য কিছু বললো না। শুধু নাফিসের দিকে এগিয়ে এসে হাতে একটা ক্রেডিট কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো ”
_এখানে যা আছে খরচ করো। কাবিনের টাকা পুরোটা দিয়ে দিবে। খবরদার মাফটাফ এর ধারে কাছে ও যাবে না৷
“নাফিস অবাক হয়ে বললো ”
_এতো টাকা আমি,,,।
_তোমার বিয়ের উপহার। বড় ভাই হয়ে ছোট ভাইয়ের বিয়েতে কিছু দেবো না নাকি৷ রেডি হও৷ আমি ও রেডি হয়ে আসছি।
“তূর্য বেরিয়ে গেলো। নাফিস চেয়ে রইলো। ওর কাছে ও জমানো টাকা আছে। এতোদিন জমিয়েছে। কিন্তু এখন সব ই তূর্য দিচ্ছে। তবুও নাফিস ঠিক করলো নিজের জমানো টাকা ও তুলবে কিছু। জেরিনকে উপহার দেওয়ার জন্য ”
“সায়রা টুকটাক সব গুছিয়ে নিচ্ছে। সায়রার রুমেই জেরিন রেডি হচ্ছে। তূর্য এসে দরজার টোকা দিলো। সায়রা ভেতর থেকেই বললো ”
_কে ?
_তোমার একমাত্র জামাই। দরজা খোলো বউ।
“সায়রা এসে দরজা খুলে দিয়ে দরজার সামনেই দাড়ালো। বললো ”
_কি চাই ?
_আপাতত রেডি হবো তাই জামাকাপড় হলেই হবে।বাট রাতে অফকোর্স তোমাকে চাই।
“জেরিন ভেতরে ছিলো তূর্যর এ কথা শুনে বেচারি
চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইলো। সায়রা বললো ”
_কি বলছেন। ভেতরে জেরিন আছে।
_আমি খারাপ কি বললাম।
_আমি জামাকাপড় দিচ্ছি দাড়ান।
_ভেতরে ও যেতে পারবো না ?
“তূর্য এ কথা বলতেই জেরিন বেরিয়ে এলো। সায়রাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো ”
_আমি নিচে যাচ্ছি।
“জেরিন চলে গেলো। তূর্য সায়রাকে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েই জড়িয়ে ধরলো সায়রাকে। যেনো কতো জনম সায়রা দূরে দিছো। তূর্য বললো ”
_আহা বউকে জড়িয়ে ধরলে ও কতো শান্তি ।
_এই পাগল লোক। এসব কি হচ্ছে ?
_কি হচ্ছে। কাল রাতে বান্ধুবিকে পেয়ে আমায় ফেলে চলে এলে। আমি ভালো তাই রাগ করলাম নাহ্।
__আজকে ও বান্ধুবিকে নিয়ে ই থাকবো।
_ইশ, নাফিসের জিনিস তোমার কাছে কেন থাকবে। আজ রাতে ওদের মধ্যে কতো কিছু হবে।
_হে সবাই তো আপনার মতো।
_সবাই আমার মতো না বলো। আমি ভালো ছেলে তাই তোমাকে কতো ছাড় দিয়েছি। ভুলে গেলে সেই কথা বউ।
“সায়রা চোখ বড় বড় করে চেয়ে বললো ”
_কিহ্। আপনি ছাড় দিয়েছেন। নাকি এক রাতেই আমার হাড্ডিসহ গুড়িয়ে দিয়েছেন।
_চুপ বউ। এসব বলে না। স্বামীর আদর চুপ করে নিতে হয়৷
_অসভ্য লোক।
_এখন জামাকাপড় দাও। রেডি হই।
“জেরিন নিচে এসে দেখলো নাফিস সোফায় বসে আছে সাথে সামর্থ্য বেগম। নাফিস জেরিনের দিকে তাকালো। জেরিন সায়রার মতো গোল ড্রেস পড়ছে। কালো রঙের। ফর্সা শরীরে বেশ মানিয়েছে। সাথে হাতে চিকন চুড়ি গলায় চেইন৷ নাকে ছোট্ট একটা নাকফুল। এ সব কিছু ই সামর্থ্য বেগম দিয়েছে। বেশ বউ বউ লাগছে জেরিনকে। সামর্থ্য বেগম জেরিনকে কাছে ডাকলেন পাশে বসিয়ে বললেন”
_নাতবউ দুটো পেয়েছি আমি৷ একেবারে চাঁদের মতো সুন্দর।
“পরপর জেরিনকপর হাত ধরে বললো ”
_কোনো চিন্তা করিস না। তোর বাপ আর কি করবে। ঘুরবি মন খুলে। আর সায়রার মতো একটা খুশির খবর ও যেনো বাড়ি ফেরার পর পাই হু।
“সামর্থ্য বেগম যখন এ কথা বলছে তখন তূর্য আর সায়রা ও নিচে নেমে এসেছে। নাফিস সঙ্গে সঙ্গে কেশে উঠলো। জেরিন ও খানিক লজ্জা পেলো। তূর্য ঠোঁট চেপে হাসছে। এবার ফাঁসবে নাফিস। সে আর সায়রা অনেজ শুনেছে এসব।
সামর্থ্য বেগম এর কাছে থেকে বিদায় নিলো ওরা। বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো। তূর্য আর সায়রা সামনে নাফিস আর জেরিন পেছনে বসার কথা থাকলে ও জেরিন আর সায়রা ইচ্ছে করেই পেছনে বসলো। তূর্য খুশিই হলো। নাফিস বেটা কক্সবাজার যারার আগে আর বউকে পাচ্ছে না৷ নাফিস গাড়িতে উঠে বসতেই তূর্য বললো ”
_বেস্ট অফ লাক নাফিস। দাদির কথা যেনো সত্যি হয়।
“বলেই হাসলো তূর্য। নাফিস বললো ”
_আপনি ও মজা নিলেন স্যার।
_নাহ্। দোয়া করলাম। তো চলো যাওয়া যাক।
_ওকে।
“গাড়ি ছাড়লো। দুই জোড়া শালিক চললো তাদের গন্তব্যে। একান্তে সময় কাটাতে।
এদিকে জেরিনের বাবা সকাল থেকে মেয়েকে না পেয়ে দিশেহারা। জেরিনের ফোনে বারবার কল করে বন্ধ বলছে। তিনি ধরেই নিয়েছে নাফিস তার মেয়েকে অপহরণ করেছে। বাধ্য হয়ে তিনি থানায় ছুটে গেলো। এদিকে। সাদমান শাহারিয়ার তূর্য যেহেতু গার্জেন ছিলো তাই ওর ঠিকানা বের করলো। এরপর পুলিশ নিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলো।
সামর্থ্য বেগম তখন বসার ঘরেই ছিলেন। তার পায়ের ব্যথা। পায়ে একজন তেল মালিশ করে দিচ্ছিলো। এমন সময়,সদর দরজায় বেল বাজলো। সামর্থ্য বেগম চুমকিকে ডেকে দরজা খুলে দিতে বললো। চুমকি দরজা খুলতেই দেখলো দুজন পুলিশ আর একজন লোক দাড়িয়ে আছে। চুমকি ভয় পেয়ে সামর্থ্য বেগম কে ডেকে বললো ”
_দাদী পুলিশ আয়ছে দেহি।
“সামর্থ্য বেগম পায়ে তেল মালিশ করা মহিলাটাকে চলে যেতে বললো। চুমকিকে বললো ওদের ভেতরে আসতে দিতে। জেরিনের বাবা তাড়াহুড়ো করে ঢুকলো ভেতরে। সামর্থ্য বেগমকে দেখেই বললো ”
_আপনার নাতী কই ? ডাকেন ওদের। আমার মেয়ে অপহরণ করছে ওরা।
“সামর্থ্য বেগম চেয়ে রইলো। পুলিশের মধ্যে একজন বললো ”
_তূর্য আর নাফিস । ওনারা ওনার মেয়ে জেরিনকে অপহরণ করেছে বলে দাবী করছে। আর এই বাড়িতে এনেি নাকি রেখেছে। আমরা বাড়িটা খুজে দেখবো।
_আমার নাতী দুইডার একটা ও বাড়িতে নাই। কাল ই ওরা শহরের বাইরে ঘুরতে চলে গেছে।
“জেরিনের বাবা এবার বলে উঠলো”
_মিথ্যা কথা। কাল সন্ধায় ও ওরা আমার বাসায় ছিলো।
_আরেহ্ ওখান থিকা আসার পর আপনি মাইয়া দিবেন না দেইখা ছোট নাতীর মনটা খারাপ আছিলো। তাই ঘুরতে গেছে।
আর ওনার মাইয়া যদি অপহরণ ই করার হইতো তাইলে কি আর বিয়ার প্রস্তাব নিয়া যাইতাম নাকি।
“পুলিশ এবার জেরিনের বাবাকে বললো ”
_এই মহিলা যা বলছে তা কি ঠিক ?
_কিছুটা ঠিক। কিন্তু আমার মেয়ে কই যাবে তাহলে।
_দেখুন গিয়ে আপনার সাথে রাগ করে কোথাও চলে গেছে। হেনস্তা করলেন আমাদের ।
“কথাটা বলে পুলিশ বেরিয়ে গেলো। সামর্থ্য বেগম ঠোঁট কামড়ে হাসলো। জেরিনের বাবা হতাশ। এটা কি হলো। মেয়ে তার গেলো কই। কোথায় খুজবে এখন। কাল রাতে ও তো ঘরে ছিলো। কাল যদি ওরা ঘুরতে চলে যায় তাহলে তার মেয়ে কই ”
চলবে,,
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত)
#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৪৪
“ওরা কক্সবাজার পৌঁছালো দুপুরের দিকে। সারা রাস্তা জেরিন আর সায়রার বকবক শুনে শুনে নাফিস আর তূর্যর মাথা খারাপ। এরা বাড়িতে একসাথে থাকলে কি করবে কে জানে। কক্সবাজার এসে ওরা আবার আরেক ঝামেলায় পড়লো। আগে থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে আসেনি। তাড়াহুড়ো করে এসেছে তাই৷ তূর্য বললো সে সব ম্যানেজ করে নিবে।
সুন্দর একটা রিসোর্ট দেখে তূর্য সেখানেই দুটো রুম বুক করলো। রিসোর্ট এ এসে ও সায়রা আর জেরিন হাত ছাড়ছে না৷ এবার নাফিস সায়রাকে বললো ”
_বইন আমার এবার আমার বউরে একটু ছাড়ো। সঙ্গে নিয়া যাই।
“সায়রা হেসে ফেললো। জেরিন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো । তূর্য বললো ”
_বউপাখি বেচারার বউটারে একটু দাও। না হলে একটু পড়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবে।
“সায়রা নাফিসের হাতে জেরিনের হাত তুলে দিয়ে বললো ”
_নিন আপনার বউ দিয়ে দিলাম।
_খুবই উপকার হইলো বিশ্বাস করো। বউ ফিরায় দিলা তাই আজ আমি তোমারে এল ব্যাগ আচার কিনে দিবো যাও।
“নাফিসের কথা শুনে সায়রা খুশি হলে ও পর মুহুর্তে ই তূর্য বললো ”
_হে, এমনিই বমি করে ভাসায় আবার আচার খেয়ে আরো বমি করুক। তুমি তোমার বউ নিয়ে বিদায় হও৷
“তূর্য সায়রাকে টেনে নিয়ে চলে গেলো ওদের রুমের দিকে। নাফিস আর জেরিন দাড়িয়ে। নাফিস জেরিনের হাত ধরে রুমের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললো ”
_চলো মুসিবতের বেটি। রুমে চলো। আমি ভীষণ হট হয়ে আছি।
“নাফিসের কথা শুনে জেরিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। হট হয়ে আছে মানে। এই লোকের এমনিই মাথা খারাপ। রুমে এসে নাফিস শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো। জেরিন চেয়ে রইলো। দরজাটা বন্ধ করেই জেরিনের দিকে তাকালো। জেরিনের যেনো আত্মা উড়ে যাচ্ছে। নাফিস ঠোঁট কামড়ে হাসলো। পরপর জেরিনের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। জেরিন পিছিয়ে যেতে লাগলো। বললো ”
_কি হয়েছে ? এভাবে এগুচ্ছেন কেনো ?
_তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো সুইটি ?
_থামুন।
“নাফিস থামলো না। উলটো জেরিনের হাত ধরে টান দিয়ে এনে জেরিনকে ওর বুকের উপর ফেললো। জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। বলে উঠলো ”
_শক্ত করে জড়িয়ে ধরো না সুইটি। হালাল হওয়ার পর প্রথম আলিঙ্গন। আহা। পরানটায় কেমন সুখ সুখ লাগছে।
“জেরিন হেঁসে ফেললো। একটা পাগল লোককে ভালোবেসেছে ও। জেরিন নিজেও ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নাফিসকে। হালাল যে সত্যি ই সুন্দর তা জেরিন টের পাচ্ছে। আগে কতো জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হতো। কিন্তু এতো জড়াজড়ি ওরা কখনোই করেনি। নাফিস ও কখনো এসব নিয়ে বলেনি কিছু। নাফিসের সোজা কথা ছিলো। হালাল হতে হবে। আজ নাফিস কথা রেখেছে। আজ তারা হালাল। চাইলেই এখন জেরিনের নাফিসের সঙ্গে লেপ্টে থাকতে পারে। নাফিস ছাড়লো জেরিনকে বললো ”
_যাও কটকটি ফ্রেশ হয়ে নাও গিয়ে। রেস্ট নিতে হবে।
_আপনি আগে যান।
_চলো এক সাথে যাই।
“কথাটা বলেই নাফিস চোখ মারলো। জেরিন কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো। নাফিস শব্দ করে হেসে বললো ”
_ভয় পেলে ?
“জেরিন কিছু বললো না। নাফিস এগিয়ে এসে জেরিনের কোমর জড়িয়ে ধরে দাড়ালো। জেরিনের চোখে চোখ রেখে বললো ”
_ভয় পেলে হবে না সুইটি। বউ হয়ে গেছো। এবার উহু আহা শুনছি না আমি। মাইন্ড ইট। ওকে।
“কথাটা বলে নাফিস ওর জামাকাপড় বের করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। জেরিন বিছানায় গিয়ে চুপ করে বসে রইলো। এই জেরিন আগে নাফিস একটা কথা বললে ও দশটা বলতো। আজ কেন যেনো শুধু লজ্জা আর ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে যখন তখন নাফিস ছুয়ে দিবে ওকে। কি করে এই লজ্জা সইবে জেরিন।
নাফিস একেবারে সাওয়ার নিয়ে বের হলো। বের হয়ে দেখলো জেরিন সবকিছু গুছিয়ে রাখছে। জেরিন নাফিসের শব্দ পেয়ে পেছন ফিরে চেয়ে দেখলো নাফিস তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে। পড়নে শুধু একটা টাউজার। এতে করে নাফিসের বডি দৃশ্যমান। জেরিন একবার চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো৷
বিষয়টা খেয়াল করলো নাফিস। তার কটকট করা প্রেমিকা বউ হয়ে যাওয়ার পর কেমন লাজুকলতা হয়ে গেছে। এই মেয়ে কি বুঝে না নাফিসের মনে ও মাথায় কি কি চলছে৷ নাফিস যখন ধৈর্য ভেঙে জেরিনের সামনে নিজেকে তুলে ধরবে এই মেয়ে তো মরেই যাবে মনে হচ্ছে।
নাফিস বললো ”
_যাও সাওয়ার নিয়ে আসো কটকটি। ঘুমাবো৷
_আচ্ছা । আপনি ঘুমান তাহলে।
“জেরিন নাফিসের পাশে দিয়ে ওয়াসরুমে যাওয়ার সময় নাফিস বলে উঠলো ”
_জলদি করো সুইটি। তোমার বুকে ঘুমাবো।
“জেরিন একবার নাফিসের দিকে চেয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। এই লোকের কথা আজ এমন লাগছে কেন। কেমন আফিমের মতো নেশা ময় কন্ঠ। জেরিনকে কি মেরেই ফেলবে নাকি কে জানে।
জেরিন সময় নিয়ে ই বের হলো। বের হয়ে দেখলো নাফিস রুমকে হিমঘর বানিয়ে রেখেছে। এসির পাওয়ার কতোতে দিয়ে রেখেছে কে জানে৷ জেরিন দেখলো নাফিস আধশোয়া হয়ে ফোন দেখছে। জেরিন আস্তে আস্তে হেটে এসে নাফিসের পাশে বসলো। নাফিস ফোনটা রেখে জেরিনকে নিজের কাছে টেনে নিলো। নাফিস জেরিনকে স্পর্শ করতেই জেরিনের শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। নাফিস জেরিনকে কাছে টেনে নিয়ে ওকে নিয়ে ই শুয়ে পড়লো। উপরে সাদা রঙের চাদরখানা টেনে দিলো। জেরিন বরফের ন্যায় ঠান্ডা হয়ে আছে। নাফিস জেরিনকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললো ”
_প্যানিক করো না। এগুলো নরমাল। আমি ই তো ছোব তোমায়। নিঃশ্বাস ফেলো। নরমাল হও প্লিজ।
“নাফিস জেরিনকে বুঝানোর জন্য বললে ও জেরিনের শরীর অনবরত কাঁপছে। নাফিস শক্ত করে জেরিনকে জড়িয়ে ধরে রেখে ফের জেরিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ”
_নরমাল হও জান। মাএ তো জড়িয়ে ধরেছি। তাতেই এ অবস্থা হলে বাসর করবো কি করে।
“জেরিন এবার বললো ”
_চুপ।
_কেন ভয়,লাগছে আমাকে ? বিশ্বাস করো কিচ্ছু করবো না এখন। শুধু ঘুৃমাবো একটু।
_তাহলে ঘুমান । তবুও অসভ্য কথা বন্ধ করুন।
“নাফিস এবার জেরিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো ”
_তাহলে তোমার বুকে ঘুমাতে দাও৷ প্লিজ জান।
“কথাটা বলে নাফিস একটু উঠলো। সায়রার গায়ে ওরনা ছিলো। ওরনাতে হাত দিতে ই জেরিন বাঁধা দিয়ে বললো ”
_আরেহ্ কি করছেন।
_চুপ। এখন থেকে আমার কাছে থাকলে ওরনা রাখবে না। এভাবে ই থাকবে।
“কথাটা বলেই নাফিস জেরিনের ওরনাটা নিয়ে নিলো। এক সাইডে ওটা রেখে জেরিনের বুকে এসে বাচ্চাদের মতো করে শুয়ে পড়লো। জেরিনের হাত টেনে নিয়ে নিজের মাথায় রাখলো। বুঝালো যাতে হাত বুলিয়ে দেয়,।জেরিন এবার একটু নরমাল হলো।
নাফিসের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নাফিস বলে উঠলো ”
_জানো মুসিবতের বেটি। যখন তোমার সঙ্গে প্রেম করতাম ভাবতাম এমন একটা সময় কবে আসবে৷ তোমার বুকে আমি ঘুমাবো৷ তুমি আমার চুলে হাত বুলিয়ে দেবে। আজ সেই দিন। আজ আমি সত্যি ই আড়াম করে ঘুমাবো।
“জেরিন শুধু নাফিসের কথা শুনেই যাচ্ছে। ইশ, লোকটা কতো কিছু ভেবেছে। আর জেরিন কিনা ভয় পেতো নাফিস ওকে ছেড়ে যাবে ভেবে।
এদিকে নাফিস জেরিনকে জড়িয়ে ধরেছে। জেরিন বারবার নড়াচড়া করছে শুধু। নাফিস একটা সময় ঘুমঘুম কন্ঠে ই বলে উঠলো ”
_বিশ্বাস করো জান পেন্ট এর নিচে আন্ডারওয়ার পড়িনি৷ তোমার এভাবে নড়াচড়া আমায় ডিসটার্ব করছে ভীষণ।এখনি বেইজ্জত কইরো না প্লিজ। নড়াচড়া বন্ধ করো। ঘুমাতে দাওওওও ।
“জেরিন শুরুতে নাফিসের কথার মানে না বুঝলে পড় মুহুর্তে ই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো৷ কি অসভ্য লোক। একটু ও লজ্জা নেই। আবার এসব বলছে নিজের মুখে ”
“সায়রা লম্বা জার্নি করায় অনেকটা বেহাল অবস্থা । উঠে ফ্রেশ ও হতে চায়ছে না। তূর্য তাই আগে গেছে সাওয়ার নিতে। কাল রাতে বেচারার ঘুম হয়নি৷ সায়রা ওইভাবে ই বিছানায় শুয়ে আছে৷ পা দুটো ব্যথা করছে। যতো দিন যাচ্ছে সায়রার শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে কেমন যেনো। তূর্য সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখলো সায়রা চিৎপটাং হয়ে শুয়ে আছে৷ তূর্য এসে বসলো পাশে। সায়রার মাথায় হাত রাখলো। সায়রা চোখ বন্ধ করে আছে। তূর্য বললো ”
_পাখি। উঠো এবার। সাওয়ার নিয়ে আসো ভালো লাগবে।
_নাহ্। আমার ভীষণ পায়ে ব্যথা হচ্ছে।
“তূর্য ভ্রু কুঁচকালো। সারা পথ গাড়িতে করে এসেছে। তাহলে পায়ে ব্যথা কেন। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে সায়রার পায়ের কাছে বসলো। সায়রার পা হালকা ফুলে উঠেছে। এটা ও প্রেগন্যান্সির সময়,অনেকের হয়ে থাকে। তূর্য সায়রার পায়ে হাত দিতেই সায়রা লাফিয়ে উঠলো। বললো ”
_কি করছেন আপনি৷ পা ছাড়ুন।
_চুপ করো। দেখি পা দেখি।
_না তূর্য। ঠিক হয়ে যাবে।
“তূর্য শুনলো না। সায়রার পা টেনে নিলো। তূর্যর হাত বড়। সায়রার পা এইটুকু। তূর্য হাত বুলাতে লাগলো। কেমন অস্থির দেখালো তূর্যকে। সায়রা হুট করেই পা ছাড়িয়ে নিয়ে তূর্যকে জড়িয়ে ধরলো। তূর্য অবাক। এই মেয়ের কখন কি হয় তূর্য বুঝতে পারে না। সায়রা তূর্যকে জড়িয়ে ধরে আবার তূর্যর গালে হাত রেখে তূর্য গালে চুমু খেলো। তূর্য অবাক। যে মেয়েকে ছুঁতে গেলে লজ্জায় মুখ লুকায় এখনো। সেই মেয়ে আজ চুমু খেয়ে যাচ্ছে। সায়রার কি যে হলো কে জানে। তূর্যর সারা মুখ জুড়ে চুমু খেলো। বিশেষ করে ঠোঁটে। তূর্য সুযোগ পেয়ে ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো না। এই মুহুর্তে নিজেকে কনট্রোল করা যাচ্ছে না। তূর্য বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সায়রার হাত ধরে থামালো। বললো ”
_আমাকে সিডিউস করতে চাইছো বেইবি। নাকি আমার আদর নিয়ে একেবারে এক সঙ্গে সাওয়ার নেওয়ার ফন্দি করছো হু ?
“সায়রা মুচকি হেসে তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরলো। বললো ”
_হে জনাব। আপনাকে সিডিউস করতেই চাইছি।
_আমাকে উস্কে দেওয়ার পরিনাম তো তোমার জানা বউ। পরে তুমি ই আমায় অপবাদ দিয়ে বসে বসে কাঁদবে ।
_ওটা তো আপনি আমায় ব্যথা দেন বলে কাদি। আদর করলে কি কাঁদতাম নাকি।
“তূর্য এবার সায়রার কোমর জড়িয়ে ধরলো। কেমন নেশালো দৃষ্টিতে চেয়ে বললো ”
_আমি তোমায় ব্যথা দেই ? আদর করি না ?
“সায়রা ঠোঁট বাঁকা করে বললো ”
_নাহ্।
_যে আদরে ব্যথা নেই সে আদর আদর ই না রে বউ। একজন আসল পুরুষ পাওয়ার খুশিতে তোমার আমাকে চার বেলা আদর করতে দেওয়া উচিত ।
“সায়রা এবার ভ্রু কুঁচকে বললো ”
_আপনি কিভাবে আসল পুরুষ ?
_এই যে আমার একটু আদরেই তুমি কাঁদো। চিৎকার করো। আসল পুরুষ না হলে কি এমন হতো।
_ইশ, চুপ করুন।
_আদর করতে ইচ্ছে করছে রে বউ।
“সায়রা ছিটকে সরে গেলো। তূর্য সায়রার ওরনা চেপে ধরে বললো ”
_একটু বউ প্লিজ ।
_ছাড়ুন আমি সাওয়ার নেবো।
_বউ না আমার তুমি। প্লিজ একবার। একটু।
“সায়রা শুনলো না। পাগলকে বলেছে পাগলামি করো না। সায়রা জামাকাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে যেতে যেতে বললো ”
_সাদমান শাহারিয়ার তুর্য। আপনি আসল পুরুষ না। আপনি একজন ভন্ড পুরুষ ।
_রাতে বোঝাবো বউ। আমি কি পুরুষ। আমার ভেতরের সব পুরুষ-সওা আজ তোমায় একসাথে দেখাবো। বি রেডি হানি।
“সায়রা সাওয়ার নিয়ে বের হলো অনেকটা সময় নিয়ে। এসে দেখলো তূর্য সামর্থ্য বেগম এর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছে। সায়রা ও এসে কথা বললো। সামর্থ্য বেগম জেরিনের বাপের কথা জানালো। তূর্য বললো এসব আর নাফিসকে না জানাতে। বিয়ে করে ঘুরতে এসেছে। এসব টেনশন দেওয়ার দরকার নেই।
কথা শেষ হলে দেখলো সায়রা গিয়ে বিছানায় বসে আছে। চুল দিয়ে পানি পড়ছে। তূর্য উঠে গিয়ে সায়রার সামনে দাড়ালো। এই মেয়ে তূর্যকে পাগল করে ছাড়বে। তূর্য একা তোয়ালে হাতে নিয়ে সায়রার চুল মুছতে লাগলো আর বললো ”
_বিশ্বাস করো তোমার এমন খামখেয়ালির জন্য বেবির যদি কিছু হয় না। তোমাকে তুলে আছাড় মারবো। তুমি কি ছোট বাচ্চা বলো তো।
_আমার ভালোলাগে না কিছু। শুধু খিদে পায়।
_এই যে এখনি খেতে যাবো।
_নাফিস ভাইয়াদের কল দিন।
_দিচ্ছি।
“তূর্য বুঝলো সায়রার মুড অফ থাকার কারন। সায়রার খিদে পায় কিন্তু খেলে ও তা পেটে রাখতে পারে না। গড়গড় করে বমি করে দেয়।
তূর্য আর সায়রা বের হলো। রিসোর্টে খাবে না। একটু দূরে একটা রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে যাবে।
তার আগে নাফিসকে কল করলো। নাফিস বললো ওরা ও যাবে। আসছে।
তূর্য আর সায়রা দাড়িয়ে রইলো রিসোর্ট এর গেটের কাছে। এখান থেকে আর গাড়ি নেওয়ার দরকার নেই। হেটেই যাবে। তূর্য শক্ত করে সায়রার হাতটা ধরে রেখেছে। সায়রা কি কি খাবে তার লিস্ট বলে যাচ্ছে। অথচ তূর্য জানে এর মধ্যে থেকে কিছু ই সায়রা খেতে পারবে তো দূর গন্ধ ও নিতে পারবে না।
একটু পড়ে নাফিস আর জেরিন এলো। নাফিসকে দেখে মনে হচ্ছে গভীর ঘুম থেকে উঠে এসেছে। চোখ মুখ ফুলে আছে। নাফিস এসে ই বললো ”
_কি সায়রা খাতুন৷ মুখটা শুকনা লাগছে কেন ?
_খিদে পেয়েছে ম্যাডাম এর। চলো।
“ওরা চারজনে হাঁটতে শুরু করলো। বেশি দূরে নয় রেস্টুরেন্ট। তূর্য শক্ত করে সায়রার হাত ধরে রেখেছে। তবু বারবার বলছে ”
_সাবধানে বউ। দেখে হাটো।
_আপনি তো হাত ধরে রেখছেন ই।
_তবুও। কোলে তো আর নেইনি। সাবধানে হাটো।
“নাফিস ও জেরিনের হাত ধরে রেখেছে। মনে মনে ভাবছে সায়রার বেবি হবে। তূর্য মনে হচ্ছে আরো কেয়ারিং হয়ে উঠেছে। নাফিস যে কবে বাপ হবে। বউটা যেনো রাজি হয়ে যায় বেবির জন্য৷
ওরা এসে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো৷ সায়রা আগেই বললো সে ভাত খাবে। ভীষণ খিদে পেয়েছে তার। নাফিস আর জেরিন ও তাই৷ শুধু তূর্য আলাদা করে কয়েক রকমের সালাদ সাথে রুটি নিলো ।
খাবার আসতে দেরি হলো সায়রা খেতে শুরু করলো। তূর্য মুচকি হেসে বললো ”
_আস্তে ধিরে খাও বউ। সবাই রেখে চলে গেলেও তোমার বর এখানে ই বসে থাকবে তোমার জন্য ।
“তূর্যর এ কথা শুনে জেরিন মনে মনে বললো। কি কিউটব।নাফিসটা এমন করে বলে না কেন।
সবাই গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ করলো। এরপর বের হলো। এবার আর সায়রা তূর্যর সাথে নেই। সামনে সামনে জেরিনের সঙ্গে যাচ্ছে। দুজনে গল্প করছে আর হাঁটছে। নাফিস আর তূর্য পেছনে পেছনে। দু’জন পুরুষ চেয়ে আছে তাদের জীবনসঙ্গিনীর দিকে। নাফিস আর তূর্য এক সময় একা এক সঙ্গে হেটেছে আর গল্প করেছে। আজ তারা দুজনেই পরিপূর্ণ। তাদের শখের নারীরা তাদের সাথে। নাফিস বললো ”
_জীবনটা কেমন মনে হচ্ছে স্যার ?
_পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।
“দুজনেই এক সঙ্গে হাসলো। সন্ধা নেমে এসেছে। এবার একটু গরম গরম চা খাওয়া দরকার ্ওরা চললো চা খেতে ”
“চা খেয়েই ওরা আবার রিসোর্টে ফিরে এসেছে। গাড়ি নিয়ে যায়নি। সায়রার পায়ে ব্যথা হতে পারে বেশি হাটলে। রিসোর্টে ফিরতে ফিরতে সাতটা বেজে গেলো। রাতের খাবার খেয়েই এসেছে। তাই টিক করলো আবার রুমে গিয়ে রেস্ট করবে। কয়েকদিন তো আছে ঘোরা যাবে মন মতো। সায়রা জেরিনের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। তূর্য যেতে যেতে নাফিসকে বললো ”
_বেস্ট অফ লাক।
“তূর্য চলে গেলো। নাফিস জেরিনকে বললো ”
_চলুন ম্যাডাম রুমে যাই ।
_কেন এখন আবার ঘুমাবেন ?
_হু। চলো যাই।
“রুমে চলে এলো জেরিন আর নাফিস। রুমে এসে নাফিস শব্দ করে দরজা বন্ধ করলো। জেরিন পেছন ফিরে তাকালে নাফিস হাত ধরে টান দিয়ে জেরিনকে দরজার সঙ্গে চেপে ধরলো। জেরিনে ভয় পেয়ে নাফিসকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলো। নাফিস হাতটা ও চেপে ধরলো। বললো ”
_এবার কোথায় পালাবে মুসিবতের বেটি।
_ছাড়ুন।
_পারবো না। পারলে ছাড়িয়ে নাও।
“জেরিন ছুটাছুটি করলো। কিন্তু নাফিসের শক্তির সঙ্গে কি আর পারবে। শেষে শান্ত হয়ে গেলো। নাফিস হেসে বললো ”
_কি হাওয়া শেষ।
_এমন করছেন কেন ?
_বুঝো না কেন ?
“নাফিসের দৃষ্টি কেমন যেনো লাগছে। মনে হচ্ছে বেচারা অনেক কষ্টে নিজেকে কনট্রোল করে রেখেছিলো। জেরিন বললো ”
_না বুঝি না।
_তাহলে চলো বুঝাই। আমি যে অধৈর্য হয়ে আছি জান।
_তো আমি কি,,, কি করবো?
“নাফিস জেরিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ”
_আমাকে শান্ত করবে। অনেক উহু, আহা, শুনেছি। এবার অন্য কিছু শুনতে চাই তো জান।
“জেরিন বললো ”
_কি শুনতে চান ?
“নাফিস ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো ”
_বললে লজ্জা পাবে। চলো করে দেখাই।।
_সরুন। ইতর লোক।
_আজ কোনো সরা,সরি নেই। আজ শুধু কাছে আশাআশি হবে।
“নাফিস কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। জেরিন চোখ নামিয়ে নিলো। কিন্তু আজ যে নাফিস তা শুনবে না। নাফিস জেরিনের চোয়াল ধরে মুখখানা উঁচু করলো। কেমন করে যেনো বললো ”
_তুমি কি আরো ওয়েট করাতে চাও৷ বুঝো না আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। একটু আদর দাও না কেন ?
_আমার,,,, আমার ভয়,লাগে।
_ভয়,দূর করে দেবো তো জান। একবার সায় দাও। কসম একটু ও ব্যথা দেবো না।
“জেরিন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো ”
_নাফিস,, একটু সময়,,।
_বিশ্বাস করো তুমি না চাইলে কিচ্ছু হবে না৷ কিন্তু আমি শেষ হয়ে যাবো। বুঝো একটু জান আমার।
“জেরিন তবুও নিজেকে সিটিয়ে নিচ্ছে। নাফিস বুঝলো হয়তো জেরিন চাচ্ছে না এসব। তাই সঙ্গে সঙ্গে ডিস্টেন্স রেখে দাঁড়ালো। জেরিন এমনটা আশা করেনি। নাফিস জোড়ে জোড়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেললো। জেরিনের দিকে তাকালো। জেরিন দেখলো নাফিসের চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে। নাফিস ঢোক গিললো৷ পরপর বললো ”
_রেস্ট নাও। আমি একটু আসছি হু।
_কোথায় যাবেন ?
“নাফিস হালকা হেসে জেরিনের কপালে চুমু খেলো একটা। পরপর বললো ”
_একটু সময়,দাও। এখনি আসছি।
“নাফিস বের হয়ে গেলো রুম থেকে। জেরিন অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। নাফিস কি রাগ করলো। জেরিন তো নিষেধ করেনি। জেরিনের ভয়,লাগে৷ সে কি আগে এমন অবস্থায় পড়েছে নাকি। জেরিনের কান্না এলো। নাফিস কোথায় চলে গেলো।
জেরিন দরজা দিয়ে বাইরে তাকালো। কিন্তু নাফিসকে দেখা যাচ্ছে না৷ জেরিনের কান্না এলো। কেন ওমন করতে গেলো। ভয় লাগছিলো তবুও নাফিসকের অস্থিরতা কেন বুঝলো না। জেরিন দরজার পাশেই বসে রইলো।
নাফিস এলো ঠিক পনেরো মিনিট পর। দরজা খোলার শব্দ হতেই জেরিন উঠে দাড়ালো । নাফিস জেরিনকে দেখে অবাক। এই মেয়ে কি কাঁদছে। নাফিসের বুকটা মুচড় দিয়ে উঠলো। জেরিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো ”
_কাঁদছিলে কেন ?
“নাফিস এগিয়ে যেতেই জেরিন এসে নাফিসের বুকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারতে লাগলো। আর বলতে লাগলো ”
_এই ইতর লোক। অসভ্য লোক। আমাকে এভাবে ফেলে চলে গেলেন কেন। জবাব দিন কেন কেন ? থাকবো না আমি আপনার সাথে। বাপ মা সব ফেলে এসেছি। আমাকে আজই ফেলে চলে গেলেন না। থাকবো না তো আমি।
“নাফিস কিছু বলছে না। হুট করেই জেরিন নাফিসের বুকের উপর হামলে পড়লো৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বললো ”
_আমি একটু ভয় পেয়েছি। তাই বলে ফেলে চলে যাবেন আপনি। শয়তান লোক। দিয়ে আসুন আমাকে ঢাকা। থাকবো না আমি আপনার সাথে ।
_বন্দি হয়ে গেছো। যাবে কোথায় ? আর চলে না গেলে কি করে হতো। তুমি ই তো ভয় পাচ্ছিলে।
“জেরিন কাঁদতে কাঁদতে বললো ”
_তাই বলে চলে যাবেন ?
_বিশ্বাস করো জান। নিজেকে অনেক কষ্টে কনট্রোল করেছি। তোমার কান্নারত মুখ দেখে লোভ লাগছে আমার এখন। প্লিজ থামো।
“কিন্তু জেরিন থামলো না। নাফিস এবার ধমক দিয়ে বললো ”
_চুপ মুসিবতের বেটি। কান্না করতে নিষেধ করছি না।
“জেরিন এবার ঠোঁট ফুলালো। নাফিস চোখ বন্ধ করে ফেললো। বলে উঠলো ”
_ধৈর্য দাও খোদা। মেরেই ফেলবে এই মেয়ে আমাকে।
“জেরিন নাফিসকে আরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নিজেই নাফিসের বুকে চুমু খেলো একটা। নাফিস এবার জেরিনের দুই গালে হাত রেখে বললো ”
_তখন নিষেধ করলি কেন বল আমারে ? এখন আবার মারতে চাস কেন আমারে ? সয্য হইতাছে না জেরিন। মইরা যাবো আমি। কসম।
“নাফিস হুটহাট কেমন করে যেনো কথা বলে। এই যে এখন ও বলছে। জেরিনের ভীষণ ভালো লাগে এমন করে নাফিস কথা বললে। জেরিন বললো ”
_আমার ভয়,লাগে বলেছি৷ নিষেধ তো করিনি৷
_এহন তুই নিষেধ করলে ও শুনতেছি না৷ তোরে আমার চাই৷ এখন ই।
“কথাটা বলেই জেরিনের দুই গালে হাত রেখে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। জেরিন ছটফট করতে লাগলো৷
নাফিস পাগলের মতো চুমু খাচ্ছে জেরিনের ঠোঁটে। ধিরে ধিরে পিছিয়ে যাচ্ছে ওরা জেরিন টের পাচ্ছে। একটা সময় ওইভাবেই নাফিস জেরিনকে নিয়ে নরম তুলতুলে বিছানায় পড়লো। তবুও নাফিস জেরিনের ঠোঁট ছাড়লো না। জেরিন বোধহয় কিছু বলতে চায়। তাই বারবার ঠেলছে। নাফিস বুঝতে পেরে ঠোঁট জোড়া ছাড়লো। জেরিন হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ”
_আপনি,, আপনি তখন স্মোক করতে গিয়েছিলেন ?
_হু।রাগ করে না জান। স্মোক না করলে নিজেকে শান্ত করতে পারতাম না।
“জেরিন নাফিসকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চায়লো। নাফিস বুঝলো আকাম একটা করে ফেলেছে সে। নাফিস জেরিনের হাত বিছানার সঙ্গে চেপে ধরে বললো ”
_সরি তো জান। আর খাবো না৷ প্লিজ। তোমাকে খাবো এখন থেকে।
_সরুন আপনি৷ স্মোক করে নিজেকে শান্ত করেছেন না। আবার আমার কাছে কেন ?
“নাফিস কয়েকটা ঢোক গিলে বললো ”
_আরে,ইয়ার বুঝো না কেন ? পুরুষ মানুষ তো আমি৷
_সরুন আপনি। আমি কিচ্ছু বুঝবো না।
_আর খাবো না। কসম।
“জেরিন রাগে নাফিসের বুকের মধ্যে কামড় বসিয়ে দিলো। নাফিস সয্য করে নিলো। একটানে জেরিনকে নিজের কোলের উপরে এনে বসালো। জেরিন নাফিসের গলা জড়িয়ে ধরলো। নাফিস জেরিনের দিকে চেয়ে জেরিনের সারা মুখে চুমু খেলো। বললো ”
_এখন ভয় কমেছে ?
“জেরিন কিছু বলতে পারলো না। নাফিস জেরিনের গায়ের ওরনাটা টেনে ফেলে দিলো। জেরিনের ঘন নিঃশ্বাস। নাফিস এবার জেরিনের পিঠে হাত দিয়ে জেরিনের জামার চেইনটা এক টানে খুলে ফেললো। জেরিন নাফিসকে সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরলো। জেরিন বললো ”
_প্লিজ নাফিস। প্লিজ ।
_আজ আমি প্লিজ নাফিস শুনতে চাই না জান। আজ তোমার মুখে সুখের গোঙানির আওয়াজ শুনতে চাই। প্লিজ বাঁধা দিও না। জাস্ট স, কিল মি নাফিস।
“পরপর নাফিস জেরিনের জামায় হাত দিলো। জেরিন চোখ বন্ধ করে ফেললো। কি হচ্ছে এসব। এমন অনুভূতি কেন। নাফিস আগে মজা করে বলতো এসব। আজ সত্যি ই নাফিস এসব করছে। এটাই বুঝি পূর্নতা। নাফিস জেরিনের গলায় মুখ ডুবালো। জেরিনকে নিয়ে ই শুয়ে পড়লো। নাফিসের হাতের ছোঁয়া গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। জেরিন ছটফট করছে। নাফিস তবুও ছাড়ছে না। একটা মুহুর্তে জেরিন উপলব্ধি করলো নাফিস তাকে আবৃত করছে৷ নাফিস নিজেও ব্যাকুল। জেরিনের কানের কাছে মুখ এনে হিসহিসিয়ে বললো ”
_একটু কষ্ট হবে৷ কেঁদো না জান। প্লিজ। আমার জন্য এইটুকু সয্য করে নাও৷
“পরপর জেরিন শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নাফিসকে। জেরিনের হাতের নখগুলো বোধহয় বিঁধে গেলো নাফিসের পিঠে। তবুও নাফিস জেরিনের মুখের দিকে চেয়ে রইলো। জেরিনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছে৷ নাফিস আস্তে করে বললো ”
_বেশি কষ্ট হচ্ছে জান। থেমে যাবো ?
“জেরিনের ইচ্ছে করলো এই মুহুর্তে নাফিসের মাথায় বারি দিতে। সব শেষ করে এখন বলছে থেমে যাবে। জেরিন শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নাফিসকে। নাফিস শান্ত হলো একটু। ইশ, এই কষ্টটা তো পাওয়ার ই ছিলো। তবুও জেরিনের গালে গভীরভাবে চুমু খেলো। পরপর বলে উঠলো ”
_প্রো*টেকশন নেইনি জান। বলেছিলাম বিয়ের রাতেই বেবি নিবো। আমি বেবি চাই ।
“জেরিন এবার তাকালো নাফিসের দিকে। নাফিস স্থির। জেরিন ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো ”
_আপনি চাইলে আমি ও চাই।
_তাহলে কেঁদো না লক্ষি কেমন।
“জেরিন এবার নিজের সব শক্তি দিয়ে খামছে দিলো নাফিসের পিঠে। নাফিস ফের ভালোবাসতে লাগলো তার প্রেয়সীকে। জেরিন কাঁদলে ও আর বাঁধা দিলো না। নাফিস তো নাছোড়বান্দা। জেরিনের দেনমোহর ওর জন্য আনা উপহার কিছুই দেয়নি। অথচ মেয়েটাকে যন্ত্রনাময় ভালোবাসায় ডুবিয়ে মারছে ”
“তূর্য একটু বাইরে গিয়েছিলো। সায়রা বিছানায় বসে বসে টিভিতে মিউজিক ভিডিও দেখছে। তূর্য এসে দরজা বন্ধ করে একবার তাকালো সায়রার দিকে। সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”
_কোথায় চলে গিয়েছিলেন ?
_জরুরি কল এসেছিলো বউ।
“তূর্য আগে নিজের শার্ট খুললো না। এরপর ওয়াসরুমে চলে গেলো।সায়রা চেয়ে ছিলো তূর্যর দিকে। সিনেমার নায়কের থেকে তার বর কোনোদিক থেকে কম না৷ তূর্য একেবারে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। হাত মুখ ধুয়ে। রাত তখন দশটার কাছাকাছি। বের হতেই কানে গানের আওয়াজ এলো৷ টিভির দিকে তাকাতেই দেখলো ইমরান হাশমির গান দেখছে তার বউ। সায়রা টিভির দিকে চেয়ে আছে। তূর্য মুচকি হাসলো৷ এরপর ধিরে ধিরে বিছানায় উঠে এসে সায়রার পাশে বসলো৷ বললো ”
_বউ।
“সায়রা কেঁপে উঠলো। ও বসে বসে কি যেনো ভাবছিলো। তূর্য বললো ”
_হুট করে ইমরান হাশমির গান শুনছো৷ প্রেম প্রেম পাচ্ছে ?
_ছি ছি। আমি তো অন্য কথা ভাবছিলাম।
“কথাটা বলে সায়রা টিভি বন্ধ করতে নিবে তূর্য বাঁধা দিলো। বন্ধ করতে দিলো না। উল্টো সায়রার পা ধরে টান দিয়ে ওকে পুরো শুইয়ে দিয়ে নিজেই সায়রার দিকে ঝুঁকে রইলো। সায়রার এক হাতের ভাজে হাত পুড়ে দিয়ে চেপে ধরলো ”
_তোমাকে দেখলে কেমন আদর আদর পায়৷ তুমি ই কিউট। নাকি আমি ই হট হয়ে থাকি বুঝতে পারি না।
“সায়রা তূর্যর চোখের দিকে চেয়ে রইলো। লোকের মতলব ভালো ঠেকছে না। সায়রা বললো ”
_আমি ই কিউট। এবার সরুন।
“তূর্য মুচকি হেসে বললো ”
_সরবো বলে ধরেছি নাকি।
_এমন করবেন না। আজকে ছাড়ুন।
_এখন তো তুমি সুস্থ বউ। এমন করে না৷
“সায়রা এখন এসবে অভ্যসত হয়ে গেছে৷ তাই নিজেই তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরলো। তূর্য সায়রার নাকে নাক ঘসে একটু নিচের দিকে নেমে গেলো। সায়রার জানে এখন তূর্য কি করবে। তূর্য সায়রার পেটের কাছে থেকে জামা সরিয়ে সেখানে চুমু খেতে লাগলো। সায়রা সুড়সুড়ি তে কেঁপে উঠলো। তূর্য গভীরভাবে একখানা চুমু খেয়ে বললো ”
_প্রিন্সেস তোমার মাম্মাম আমাকে তোমার অজুহাত দেখিয়ে আদর করতে দিতে চায় না। আমার যে কষ্ট হয় তা তোমার মাম্মাম বুঝে না৷
“সায়রা হেঁসে বললো ”
_ আপনার প্রিন্সেস শুনতে পাচ্ছে বুঝি ?
_অবশ্যই পাচ্ছে ।
_আমি আপনার কষ্ট বুঝি না তাই না। এমন মিথ্যা।
“তূর্য এবার উঠে এসে সায়রার মুখোমুখি এলো। সায়রার দিকে চেয়ে বললো”
_চুপ। বুঝো তুমি আমার কষ্ট ? এই যে এখন কষ্ট হচ্ছে ।
_আপনার এই কষ্ট এই জীবনে ও ফুরাবে না অসভ্য লোক।
_যতোকাল ফুরাবে না,ততোকালই তুমি সুখের সাগরে ভাসবে বউ।
“সায়রা তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরলো ”
চলবে,,,