মেঘের খামে পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
4

মেঘের খামে…
পর্ব ২৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

সকাল থেকে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য কাজ চলছে। একদিকে বাবুচ্চি খাবার রান্না করছে। অন্যদিকে স্টেজ বানানোর কাজ চলছে জোরেশোরে। বাসার ভেতরে বড়রা হলুদ, মেহেদী বাটছে। তোড়জোড়ে সব কাজ চলছে আর আমাদের মহুয়া উঠানে পাটি পেতে তার বিচ্ছুর দলের সাথে বসে লুডু খেলছে আর বাদাম খাচ্ছে।

মহুয়া, আঁখি, ওমর ও ফারুক খেলছে। আর জান্নাত মহুয়ার কোলে বসে তাদের খেলা দেখছে। ওমর চিটিং করে একটা গুটি ঘরে ঢুকিয়ে দিলে মহুয়া তাকে কয়টা বকা দিয়ে বিচ্ছুদলের কো-সর্দারের পজিশন থেকে সরিয়ে দেয়। এই শুনে ওমরের কান্নাকাটি দেখে মহুয়ার খেলা থেকে মন উঠে যায়। সে উঠে অন্যমাঠে গেলে তার দাদী ডাক দেয় তার কাছে। দাদী আজ সকালেই এসেছেন প্রিয় নাতনীর বিয়ে উপলক্ষে। সে পান চিবোতে চিবোতে মহুয়াকে ডাকে। মহুয়া পাশে এসে বসলে দাদী বলে, “মাইয়া এই খোলা চুলে হাঁটোস কে’রে?”

মহুয়া ভাব নিয়ে তার চুলগুলো কাঁধ থেকে ঝটকা মেরে সরিয়ে বলে, “আমার এত সিল্কি মিল্কি চুল দেখে তোমার হিংসা হচ্ছে দাদী?তোমার চুল সাদা হয়ে গেছে বলে এখন আমার চুল নিয়ে হিংসা করছ? চিন্তা করো না দাদী দাদুভাই তাও তোমার জন্যই পাগল।”
কথা বলতে বলতে মহুয়া দাদীর গায়ে ঢলে পড়লে দাদী তাকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। তারপর মহুয়ার মাথায় মেরে বলে, “এমন চাকুর মতো জিহ্বা চললে কে বিয়া করব তোরে? আমার তো আমার অন্যকোনো নাতনীরে নিয়া চিন্তা হয় না। সবডি কত ভালা, কত ভদ্র। কিন্তু তুই হইলি আস্তা জংলী। বেয়াদবগিরিতে ওস্তাদ। তোরে বিয়া দিমু কেমনে এই চিন্তায় আমি ম’রে যাই।”
“তুমি ম’ইরা গেলে আমার দাদারে এমন একটা ভালো বেডির লগে বিয়া দিমু বুঝলা দাদী।”
“এই মাইয়া তুই কইতে কি চাস? আমারে খারাপ কস তুই? তোর লাইগা চিন্তায় আমি ম’রি আর তুই আমার লগে বেয়াদ্দবগিরির করোস। সারাক্ষণ পোলাগো মতো চলাফেরা করলে কোন পোলা তোরে পছন্দ করব? মাইয়াগো নাজুক হইয়া থাকতে হয়।”

মহুয়া তার দাদীকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে, “আহা দাদী এভাবেই কি আমার দাদারে পটাইছিলা?”
দাদী তো তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়েই দেয়, “সর ছেমরি। লজ্জা শরমের মাথা খাইয়া বসছোস। দেহিস এমন থাকলে কোনো পোলাই পাবি না। কোনো পোলা তোরে বিয়া করব না।”
“আমি কি বিয়ে করার জন্য মরে যাচ্ছি না’কি? কেউ বিয়ে না করুক আমি একা ওয়ার্ল্ড ট্যুর দিব।”
“ছেমরি তুই একা ঘুরতে যাবি তাও বিদেশে? তোর আসলে লজ্জা শরম নাই। তোরে তো আরও জলদি বিয়া দিতে হইব। আজকে শাড়ি পইরা সুন্দর কইরা সাজবি। ভালা পোলা আইসা তোরে দেইখা পছন্দ করলে বিয়া দিয়া দিমু।”
মহুয়া তার কথায় মুখ বানায়, “আমি আর শাড়ি পরব? অসম্ভব।”
“তোরা সব বইনেরা একরকম শাড়ি পরবি।”
“আমি পরবো না।”
“পরবি না মানে তোর বাপও পরবো।”
“তাহলে আব্বুকে পরাও। দাঁড়াও ডেকে আনছি।” বলে উঠে যেতে নিলে দাদী তার হাত ধরে টেনে আবার বসায়, “কি করলে পরবি কো।”
“পাঁচ হাজার টাকা দেও। তাইলে পরবো।”
“কী লোভী মাইয়া! ছিঃ! পাঁচশো টাকা দিমু।”
“চারহাজার।”
“একহাজার।”
“আচ্ছা যাও তোমারও না আমারও না। তিনহাজার। একটা চুম্মাও সাথে ফ্রী দিব।”
“লাগবো না তোর চুম্মা। যা। শাড়ি পরে সুন্দর কইরা সাজলে দিমু। সারাজীবন পোলাগো মতো শার্টে নাইলে সাদাসিধা কামিজেই দেখছি। আমিও দেখি আমার নাতনীরে সাজলে কেমন লাগে।”
মহুয়া লেনদেন সেরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “শাড়ি তো পরব কিন্তু বিয়ের কথা বলবা না। আমার বিয়ের পিছনে লাগলে দাদারে আরেকটা সুন্দরী খুঁইজা দিব।”
“বদমাইশ মাইয়া তুই দাঁড়া।”
মহুয়া তো আর তার হাতে আসে না। এক দৌড়ে পালায়।

সন্ধ্যাতেই শ্রাবণীদের বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়। মেহমান আসতে শুরু করে। তবে দুইটা রুম বন্ধ থাকে। একরুমে শ্রাবণী তার বান্ধবীদের সাথে সাজছে। অন্যরুমে সব মেয়ে কাজিনরা একসাথে সাজগোজ করছে। বলতে গেলে মহুয়া ও আঁখি ছোট এবং বড় সবাইকে সাজিয়ে নিজেরা সাজতে বসেছে সবে। কিন্তু এতক্ষণে ছেলেপক্ষ এসে পড়েছে। তাদের ছাড়াই ছেলেপক্ষকে স্বাগতম করা হলো। কিন্তু এতে আঁখির কোনো দুঃখ নেই। সে তো এই প্রথম তার প্রিয় মহুয়া আপুকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে সাত আসমানে উড়ছে।

কমলা রঙের শাড়ি বাঙালি রীতি অনুযায়ী পরেছে মহুয়া। তার সব বোনদের মতোই। সাথে কমলা রঙের চুড়ি, সোনালী গয়না, দু’হাতে অল্প করে মেহেদী দেওয়া, ছাড়া চুলগুলো পিঠ পর্যন্ত আসে। কপালে লাল রঙের টিপ আর সাধারণ মেকাপ। মহুয়া নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখে চিনতে পাড়ে না কিছু মুহূর্তের জন্য। সে তো উৎসুক হয়ে আঁখিকে বলে ছবি তুলতে। মৃণা ও মোহকে পাঠাবে। তার প্রথম শাড়ি পরা বলে কথা। এদিকে তাদের ডাক পরছে বারবার। অনুষ্ঠান শুরু হবে। আঁখি তবুও মহুয়ার ছবি তুলতে লেগে যায়। তাকে পোজও দেখায়।

মহুয়ার ছবিগুলো অনেক পছন্দ হয়। ফোন হাতে পেয়েই মোহ ও মৃণাকে পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। ওপারে মা দরজা ধাক্কাতে থাকে। মহুয়া ওদিকে তাকানোর কারণে মৃণার পরিবর্তে জাহানকে ছবি পাঠিয়ে দেয়। ফোনের দিকে তাকিয়ে নিজের করণীয় কাজ দেখে তার মাথায় হাত। সে দ্রুত ডিলিট করে। কিন্তু জাহানের মেসেঞ্জারেও কি ডিলিট হয়েছে না’কি সে বুঝতে পাড়ে না। তবে এই নিয়ে বেশি ঘাটে না সে। বের হয়ে যায় আঁখির সাথে বাহিরে। ভেবেছিল মা’য়ের কাছ থেকে অনেক বকা খাবে কিন্তু মা তাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জড়িয়ে ধরে, “আমার মেয়ে এত সুন্দরী আমি তো জানতামই না। কী মিষ্টি লাগছে তোকে! আমার কত শখ ছিলো আমার মেয়ে হলে সারাক্ষণ পুতুলের মতো সাজিয়ে রাখব।কিন্তু তুই আমার স্বপ্নে পানি ঢেলে সারাক্ষণ শার্ট প্যান্ট পরে ভাইয়ের সাথে ঘুরতি। আজ থেকে তোকে আমি এমন পুতুলের মতো সাজিয়ে…”
মহুয়া তার কথা কেটে বলে, “দাদী শাড়ি পরার জন্য তিনহাজার দিছে। তুমি প্রতিদিন পরাতে চাইলে তোমাকে আমি একশো টাকার ডিসকাউন্ট দিতে পাড়ি।”
মা তার দিকে নিরাশাজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “তুই ভালো হবি না?”
মহুয়া মাথা নাড়ায়। না।
মা ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে তাকে বাহিরে পাঠান।

উঠানে মানুষের গিজিমিজি। এই গিজগিজ এর মধ্যে মহুয়ার চোখ খুঁজে কেবল একজন মানুষকেই। তার দাদীকে। তার থেকে টাকা যে নিতে হবে। সামনেই দেখে তার দাদী আরেক বয়স্ক মহিলার সাথে গল্প করছে। সে খালি পা’য়েই শাড়ি ধরে দ্রুত দৌড় দেয় তার দাদীর কাছে। টাকা পাওয়ার জন্য তার হাত চুলকাচ্ছে।

মহুয়া দৌড়ে যেতে নিলেই ধাক্কা খায় এক আগুন্তকের সাথে। পড়ে যেতে নিলে লোকটি তার হাত ধরে নেয়। সামনে তাকিয়ে দেখে লোকটি আর কেউ নয়, শায়ান। তাকে দেখেই মহুয়ার মেজাজ চরম পরিমাণে বিগড়ে যায়। সে মুখ খোলার পূর্বেই শায়ান তার হাত ছেড়ে দেয়। সাথে সাথে ঠাস করে মাটিতে পড়ে যায়। সে তো হতবাক। কি হয়েছে বুঝে উঠার আগেই মহুয়া দেখে শায়ান তার দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের হাত মুছে নিচ্ছে। যেন সে কোনো ময়লা জিনিস। এই ঘটনা দেখেই তো তার মাথায় আগুন উঠে যায়। সে উঠে নিজের কাপড় ঝেড়ে রেগেমেগে তাকায় শায়ানের দিকে। অগ্নি দৃষ্টিতে।
“ইচ্ছা করে আমাকে সামনে এসে ফেলেছ?”
শায়ান চোখ ঘুরায়, “ভুল করেও তোমাকে ছোঁয়ার আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
মহুয়া মুখ বানিয়ে তার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে। বিড়বিড় করে বলে, “শালা ভন্ড!”
“এই মেয়ে কী বললে তুমি?”
মহুয়া তাকে পাত্তা না দিয়ে তার দাদীর কাছে যায়। দাদীর পাশে যেয়ে বসে, “দাদী… ও দাদী দেখো আমাদের ডিল অনুযায়ী শাড়ি পরেছি। এখন টাকা বের করো।”

মহুয়ার দাদী চোখ রাঙায়। কিন্তু মহুয়া তার টাকা ছাড়বে না’কি? সে মুখ ফুলিয়ে বলে, “দাদী আমার টাকা মারার চিন্তাও করবে না। ডাইরেক্ট দাদারে বিয়ে দিয়ে অন্য দাদী নিয়ে আসবো।”
মহুয়ার দাদী শরমে মুখ ঢেকে নেয়। অথচ তার সামনে বসা বয়স্ক মহিলা ঠোঁট টিপে হাসে। তাকে চিনতে পাড়ে না সে। যতক্ষণ না পর্যন্ত তার পিছনের চেয়ার থেকে পূর্ণি একদিক থেকে মাথা বের করে বলে, “দাদী তোমাকে বলেছিলাম না ভাবির একটা কিউট বোন আছে যে অনেক ফানি। এই আপুটাই।”
শায়ানের দাদী হাসতে হাসতে মহুয়াকে তার পাশের চেয়ারে বসার জন্য ডাকে। মহুয়া ভদ্রতার খাতিরে তার পাশে বসে সালাম দেয়।
মহুয়ার দাদী বলেন, “বেয়াইন ওর কথায় কান দিয়েন না। এই নাতনীটা আধা পাগল।”
মহুয়া সরু চোখে তার দাদীর দিকে তাকায়। তার কিছু বলতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু মেহমানদের সামনে তা গিলে নিলো।

“আমার কাছে তো অনেক মজার মানুষ লাগলো।” শায়ানের দাদী মহুয়ার থুতনিতে হাত রেখে তাকে দেখল। পিছনের হলুদ বাতিতে তাকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে৷ সে মুগ্ধ হয়ে বলল, “আপনি সব নাতনীই অনেক সুন্দর। কিন্তু এর মুখে মায়া বেশি। কী নাম তোমার মণি?”
প্রশংসা শুনে তো মহুয়ার তাকে সাথে সাথে ভালো লাগলো। সে একগাল হেসে বলে, “মহুয়া।”
“মহুয়া। বেশ সুন্দর নাম তো। একদম তোমার মতো সুন্দর। এই শাড়িতে তোমাকে আরও সুন্দর লাগছে।”
“থ্যাঙ্কিউ দাদু। জানেন আমার তো শাড়ি পরা পছন্দই না। দাদী তিনহাজার টাকার ঘুষ দেওয়ার পর পরেছি।”
বলে ঠোঁট টিপে হাসে।
মহুয়ার দাদীর তো মাথায় হাত। এই মেয়ের মুখ মাঝেমধ্যে সেলাই করে দিতে মন চায়।
পূর্ণি তো একথা শুনে হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। সে চেয়ার টেনে বসে মহুয়ার পাশে। তার হাত ধরে বলে, “কিউটি আপু তোমাকে আমার এত্তগুলা পছন্দ হয়েছে। তুমি যেমন কিউট, তেমন মজার। আর তোমাকে আজ এই সাজে অনেক সুন্দর লাগছে।”

“বান্দরনী যতই সাজুক বান্দরনীই লাগে।” পিছন থেকে এহেন বাণী আসায় মহুয়া পিছনে তাকায়। শায়ানকে দেখে রীতিমতো তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। সে সরু চোখে তাকায় তার দিকে, “কাকে বান্দরনী বললে?”
“যার গা’য়ে লেগেছে তাকে।” শায়ার তার দাদীর পিছনে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে তাকায় মহুয়ার দিকে, “দাদী তুমি না বলো বান্দরের গা’য়েই খোঁটা দিলে কাঁটা লাগে।”

মহুয়া মুখ ঝামটাল, “পৃথিবীর সবকথা না বুঝলেও এই কথা তো ভালো করেই বুঝবে। নিজে বান্দর যে।”
“মহু চুপ কর।” দাদীর ধমক খেয়েও মহুয়া শায়ানকে ভেঙিয়ে উঠে যেতে নেয়।
কিন্তু শায়ান যেতে দিবে কই? সে সুযোগ পেয়ে আরও বলে, “একটু প্রশংসা পেয়ে ভেবো না সবাই সত্যি বলছে। ছোট বেলায় স্বপ্নে একবার ভূত দেখেছিলাম। একদম ডিট্টো কপি লাগছে।”
মহুয়া পিছনে তাকিয়ে কোমরে হাত রেখে বলে, ” তোমার স্বপ্নে পেত্নী এসেছিল? পেত্নী কেন এসেছিল জানো? কারণ তুমি আস্তো এক রাক্ষস। ব্যাটা খাক্ষস! রাক্ষসের বউ তো পেত্নী হবেই।”
“ইউ…” শায়ান দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে। কিন্তু রাগে মাথায় কোনো কথা আসছে না। সে দাঁতে দাঁত ঘেঁষে কটমট করছে। মহুয়া আবারও বিজয়ী হয়ে খুশি হয়। সে চুলগুলো ঝটকা মেরে সরিয়ে বকে, “মহুয়ার থেকে তর্কে বিজয়ী হওয়া মুশকিলই নয়, অসম্ভব।”

পূর্ণি তো উৎসুক দৃষ্টিতে সব দেখছিল। শায়ানকে এভাবে চুপ করে যেতে দেখে সে উৎসুক কন্ঠে বলে, “ভাইয়া মহুয়া আপু তো আসলেই গ্রেট। তোমার মুখও বন্ধ করিয়ে দিল। জন্মের পর এই প্রথম এই আশ্চর্যজনক ঘটনার সাক্ষী হলাম আমি।”
শায়ান রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। সাথে সাথে পূর্ণি সামনে তাকায়। সে মুখের উপর হাত দিয়ে বসে। আর একটা কথা বললে তার কপালে শনি আছে নিশ্চিত।

মহুয়া আঁখির কাছে ফেরত গেলে। সেখানে আজিজও দাঁড়িয়ে ছিলো। তাকে দেখে হেবলার মতো হা করে তাকিয়ে আছে। মহুয়া তাকে পাত্তা দিলো না। এড়িয়ে গেল।
কিন্তু সে মহুয়ার পিছু ছাড়ল না। উল্টো আরও কাছে এসে বলল, “মহু তোকে তো দেখি আজ কমলাবানু লাগছে পুরো। আমার চোখের পলকই নামছে না।”
“তাহলে চোখে মরিচ ঢুকায় রাখেন। খুলবেই না।”
“এমন বলিস কেন? তোকে আমি কত পছন্দ করি জানিস না?”
মহুয়া তার দিকে তাকায় বিরক্তি নিয়ে। তারপর হঠাৎ হাসে, “আপনাকেও তো আমি অনেক পছন্দ করি আজিজ ভাই।”
কথাটা শুনে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে আজিজের, “সত্যি?”
“তো নয়তো কী? মুরাদ ভাইয়ের পর আপনিই তো আমার একমাত্র বড়ভাই। নিজের ভাইকে কোন বোন না পছন্দ করে বলেন।”
কথাটায় আজিজের মুখ লটকে যায়। সে মুখ কালো
করে বলে, “মহু তুই জানিস আমি কি বলতে চাচ্ছি।”
আঁখি পরিস্থিতি দেখে মহুয়া হাত ধরে বলে, “আপি চলো আমরা শ্রাবণী আপুকে হলুদ দিয়ে আসি। দুইজনে দু’পাশে বসে ছবি তুলবো।”
তারা যেতে নিলে আজিজ মহুয়ার হাত ধরে নেয়, “মহু আমি চাকরিটা পেলে মা’য়ের সাথে আমাদের বিয়ের কথা বলব।”

মহুয়া তার দিকে তাকায়। এমন রাগী দৃষ্টিতে তাকায় যে আজিজ নিজেই তার হাত ছেড়ে দেয়। মহুয়া তার চোখে চোখ রেখেই বলে, “আপনার কী আমাকে বোকা মনে হয় আজিজ ভাই?”
তার দৃষ্টি দেখেই আজিজ পিছিয়ে যায়। মহুয়া গম্ভীরমুখে বলে, “আপনার মনে আছে যখন আমার বাবার চাকরি চলে গিয়েছিল তখন আপনাদের গ্রামে এসেছিলাম। ফুফুর সাহায্যের জন্য। আপনি আপনার বোনদের জন্য চকোলেট এনেছিলেন। তা দেখে আমিও খাওয়ার জেদ করেছিলাম। আপনি তখন আমার দিকে তাকিয়ে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, এগুলোর অভ্যাস না করতে। ক’দিন বাদে দুমুঠো ভাতও খাওয়া কিসমতে জুটবে না। যেন এ-সব খাওয়া শুধু স্বপ্নেই দেখি। নাহলে রাস্তায় বসে মানুষের কাছে চাই। আপনার বাবার দয়ায় দুই বেলা মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছি এটাতেই যেন খুশি থাকি।
সেবার আপনারা সবাই আমাদের পরিবারের পরিস্থিতির উপর হেসেছিলেন। কেবল আঁখি ছাড়া। একারণে ওকে ছাড়া আপনাদের সবাইকে আমি চরম পরিমাণের ঘৃণা করি। আপনাদের দু’মুখী স্বভাব দেখলেও আমার ঘৃণা লাগে। আর আমার হাত ধরার সাহস তো ভুলেও করবেন না। বড় ভাইও মানবো না, সোজা হাত কেটে দিব।”

মহুয়া আঁখির হাত ধরে তার ইচ্ছা অনুযায়ী শ্রাবণীর কাছে হলুদ দিতে নিয়ে আসে। তার কাছে আঁখি ভীষণ আদরের। তার মনে আছে সেদিন আজিজের কথা শুনে যখন মহুয়া কষ্টে কাঁদছিল। তখন ছোট আঁখি তার কাছে এসে তার জন্য নিজের অর্ধেক চকোলেট দিয়ে তার কোলে বসে তার চোখের পানি মুছে দেয়। স্মৃতিটা মনে করে সে হেসে তাকায় আঁখির দিকে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

শ্রাবণীকে হলুদ দিয়ে এসে মহুয়া দেখে সিনথিয়া শায়ানের সাথে ঘেঁষে বসে কথা বলছে। যদিও শায়ানের তার প্রতি বেশি ইন্টারেস্ট দেখা যায় না। তারপরও সিনথিয়া যেন তার উপর বারবার ঢলে পড়ছে। মহুয়া একবার ভাবে সিনথিয়াকে মানা করবে। শায়ান লোক তো ভালো না। কিন্তু পড়ে এই খেয়াল বাদ দেয়। সে কিছু বললে উল্টো সিনথিয়া নিজেই সবার সামনে কাহিনি করবে। তাকে দোষারোপ করবে। তার নিজের মন অনুযায়ী যা ইচ্ছা করুক। মহুয়া খেয়াল করে শায়ান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে যখন থেকে তাদের দেখছে তখন থেকেই। এই লোকটা আবার কী কাহিনী ঘটাবে!

শায়ান চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মহুয়াকে দেখছিল। তাকে একটা শিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত শায়ানের হৃদয়ের আগুন নিভতে পাড়বে না। এর উপর সিনথিয়ার উপর তার ভীষণ বিরক্তি লাগছে।এমন গা’য়ে পড়া মেয়ে তার চরম অপছন্দের। এদের কেবল ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলতেই তার ভালো লাগে। সে ভালো করে জানে এরা কেউ-ই তাকে পছন্দ করে না। সবাই তার অর্থ অথবা তার চেহেরা দেখে কাছে আসতে চায়। তারা নিজে নিজেকে সমর্পণ করলে তার গ্রহণ করতে সমস্যা কী?

হঠাৎ তার মাথায় এক বুদ্ধি আসে। সে এবার সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে মিথ্যে হাসি এঁকে তার থুতনিতে হাত রেখে বলে, “সো তোমার নাম সিনথিয়া রাইট? তোমাকে তো আজ সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে জানো?”
সিনথিয়ার সম্পূর্ণ মুখ লাল হয়ে যায়। সে চোখ বড় বড় করে তাকায় শায়ানের দিকে। শায়ান তাচ্ছিল্য হেসে তাকে ছেড়ে বলে, “কিন্তু আমি তোমার এই সৌন্দর্যে ধ্যান দিতে পাড়ছি না। আফসোস। আমার মন আজ খুব অশান্ত। ” বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“কেন? কী হয়েছে? আপনি আমাকে বলুন। আমি আপনার মন শান্ত করতে সাহায্য করব।” বলে সে শায়ানের হাত ধরে।
“তোমার ওই কাজিনটা আমাকে এই দুইদিন সবার সামনে অপমান করেছে। যেখানে আমার চাচারাও আমার সামনে উঁচু স্বরে কথা বলতে পাড়ে না সেখানে সামান্য একটা মেয়ে আমার সাথে জোর গলায় কথা বলে। ব্যাপারটা আমার ইগোতে লেগেছ।” শায়ান সিনথিয়ার দিকে তাকায়, “ওকে কান্না করতে দেখতে চাই। পাড়বে?”
সিনথিয়া অবাক হয়ে যার তার কথা শুনে। সে দ্বিধাবোধ করলে শায়ান তার দিকে ঝুঁকে এসে মৃদুস্বরে বলে, “কামঅন আমার জন্য তুমি এতটুকু করতে পাড়বে না?”

শায়ানকে এত কাছে দেখে সিনথিয়ার মুখ পুরো লাল হয়ে যায় লজ্জায়। সে বলে, “পাড়বো। অফকোর্স পাড়বো। এমনিতেও আমারও ওকে পছন্দ না। এমন ভাব দেখায় যেন কোনো দেশের রাণী। আচ্ছা আপনি আগামীকাল কী করছেন? আমরা কোথাও ঘুরতে যেতে পাড়ি?”
“আজকের পারফরম্যান্স দেখে বলতে পাড়বো।”
শায়ানের ফোন বাজে হঠাৎ। সে ফোন বের করে নাম দেখেই একগাল হাসে। সিনথিয়া তা দেখে অবাক হয়ে যায়। দুইদিন ধরে সে শায়ানকে দেখছে। আগেও দেখেছে শ্রাবণীর বাহানায়। কিন্তু এই হাসি কখনো দেখেছি। তার হাসি সাধারণত কেমন শীতল থাকে। এখন এখনোর হাসিটা একদম ভিন্ন। হাসির সময় তার চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। কৌতূহলবশত হাসিটির সূত্রপাত খুঁজে সে ফোনের দিকে তাকায়। একটি নামই ভেসে উঠতে দেখে, Roshni….
.
.
হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সন্ধ্যায়। এখন বাজে রাত এগারোটা। হলুদের পর রাদিনদের বাসার বড়রা ও মেয়েরা এখনো উঠানে আছে। নাচ গান চলছে। এখন সিনথিয়া নাচ করছে। মহুয়া আঁখির সাথে বসে নাচ দেখছিল। অনেকক্ষণ পর ফোন বের করল সে। দেখল পঁচিশটা মিসকল। সে দেখতে যাবে কে কল দিয়েছে তার আগেই আবারও কল এলো জাহানের। সে এতগুলো কল দেখে মাথায় হাত দিলো। অর্থাৎ জাহান তার ছবি দেখেছে। সে কি ভাববে তাকে বারবার রিজেক্ট করার পরও ছবি দিচ্ছি তাকে! তবুও মহুয়া তাকে বুঝানোর জন্য কল ধরল। কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই ওপাশ থেকে জাহান বলে, “আমি তোমার ফুপির বাসার কাছের দোকানটাতে আছি। জলদি আসো। তোমাকে দেখব।” বলে ফোন কেটে দেয়।

মহুয়া থতমত খেয়ে যায় তার কথা শুনে। তার কি কান বাজছে? এই পাগল লোক কি বলল? সে এখানে আছে? মহুয়াকে কিছুক্ষণ ফোনের দিকে এভাবে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁখি বলে, “আপু সব ঠিক আছে তো?”
মহুয়া উঠে দাঁড়ায়, “আঁখি আমার সাথে আয় তো।”
“আমরা কোথায় যাচ্ছি আপু?”
“মুশিবতকে দেখতে। কাওকে বলবি না এই ব্যাপারে বুঝলি?”

শ্রাবণীদের উঠান পাড় হয়ে দুই মিনিটের রাস্তা। মহুয়ারা যেয়ে দেখে দোকানের অপরপাশে জাহান ও তিসান দুইটা বাইক নিয়ে দাঁড়ানো। মহুয়া আঁখিকে নিয়ে তাদের দিকে যাবার সময় আঁখি বলে, “আপু… এই দুইজনের সাথে দেখা করতে এসেছ? দুইজন কি হ্যান্ডসাম আপু! এরা তো নায়কদের মতো দেখতে। বিশেষ করে সাদা শার্টের ভাইয়াটাকে তো একদম একশন ফিল্মের নায়কের মতো লাগে।”
“কচুর নায়ক লাগে, হনুমান কেঁচরমেঁচরের মতো লাগে পুরো।”
“আপু এদের কেউ কি তোমার বয়ফ্রেন্ড?”
মহুয়া চোখ রাঙায় তার দিকে। আঁখি বলে, “আপু প্লিজ এদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করো। আমি এত হ্যান্ডসাম দুলাভাই পেয়ে সব বান্ধবীকে দেখালে তারা জ্বলবে।”

তাদের এগিয়ে আসতে দেখে তিসান তার দিকে ছুটে এসে সামনে দাঁড়ায়, “সিসফ্রেন্ড অবশেষে তুমি আসলে। এবার বিচার করো, জাহানের বাচ্চা আমাকে লিটিলারি গানপয়েন্টে এনেছে। আমরা তো ওর রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তোমার ছবি দেখে কতক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে এই শালায় লাথি দিয়ে বলে তোমাকে সামনে দেখবে। আমি তো ওর কথায় থতমত খেয়ে যাই। অস্থির হয়ে নিজেও আড়াই ঘন্টা বাইক চালিয়ে এসেছে, আমাকেও জোর করে বেঁধে নিয়ে এসেছে।”
তিসান পাশে দেখে জাহান নেই। সে পিছনে তাকায়। জাহান আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। থমকে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে আগের স্থানেই।

মহুয়া বিরক্তি নিয়ে জাহানের সামনে। সে রাগান্বিত স্বরে বলে, “তুমি এখানে কেন এসেছ? এভাবে কেউ আসে? আর তুমি ঠিকানা পেলে কোথায়? এখন আমার সাথে তোমাদের দেখলে আমার কোনো ঝামেলা নেই কিন্তু আমার মা বাবা নরম মনের মানুষ। তাদের আত্নীয়রা কিছু বললে উওরও দিতে পাড়বে না।”
জাহান কিছু বলে না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকে বারবার দেখে। চোখের পলকও ফেলে না।
মহুয়া আরও বিরক্ত হয় এতে, “এমন ঘুরঘুর করে না দেখে কিছু বলবে?”
জাহান এক’পা সামনে এসে তার সামনে দাঁড়ায়। তার চুলগুলো আলতো ছুঁয়ে গভীর দৃষ্টিতে ছুঁয়ে দেয় তাকে। মৃদুস্বরে বলে, “আমাদের বিয়েতে ঠিক এভাবেই সাজবে জান?”
তার এই দৃষ্টি দেখে এক মহুয়া এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। তার হার্টবিট স্তব্ধ হয়ে যায়। সে সাথে সাথে জাহানের গাল ধরে তার মুখ অন্যদিকে করে বলে, “বেশরম মানুষ অন্যদিকে তাকাও।”
জাহান হেসে আবারও তাকায় তার দিকে। জিজ্ঞেস করে, “কেন? তুমিও কি আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছো?”
“স্বপ্নে দেখো।”

আঁখি মহুয়ার পাশে এসে তার হাত ধরে উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘আপু এটাই কি আমার হবু দুলাভাই।”
“এই হনুমান তোর কোনো দুলাভাই টাই না।”
“হ্যাঁ আমিই তোমার হবু দুলাভাই।” জাহান বলে।
“আহা দুলাভাই আপনি কি হ্যান্ডসাম।”
মহুয়া আবারও রেগে যায়, “বলেছি না তোর কোনো দুলাভাই না।”
“ওর কথায় পাত্তা দিও না। ও জানে না, কিন্তু আমি শিউর আমিই তোমার দুলাভাই।”
“এত হ্যান্ডসাম দুলাভাই পেয়ে তো আমি আমার বান্ধবীদের সামনে শো অফফ করবো।”
মহুয়া অনেকক্ষণ ধরে দীর্ঘ নিশ্বাস নেয়। নিজের মাথা ঠান্ডা করে। তারপর গভীর নিশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় আঁখিকে বলে, “এখানে মানুষ বেশি কোথাও যেয়ে কথা বলা যাবে?”
“পিছনের রাস্তা দিয়ে ছাদে যেতে পাড়ো আপু। ছাদের পিছনের সাইডে গেলেও কেউ দেখবে না। আসো আমি নিয়ে যাই।”

আঁখি তাদের পিছনের জঙ্গলের দিকে থেকে নিয়ে যায়। আঁখি আগে দিয়ে যেয়ে রাস্তা ক্লিয়ার কি-না দেখে তাদের ইশারা দিয়ে ডাকে। তারা ছাদের কাছে উঠলে জাহান তিসানকে ইশারা দেয় থাকার জন্য। তিসান থেকে যায়। সাথে আঁখিকেও রাখে। আঁখি তো একগাল হেসে জিজ্ঞেস করে, “ভাইয়া সত্যিই কি মহু আপি প্রেম করছে ওই ভাইয়ার সাথে? আপু আমাকে তো কিছু বলে নি।”
“জাহান তোমার আপুর পিছনে পড়ে আছে।”
“বলেন কি এত হ্যান্ডসাম ভাইয়া আপুর পিছনে পড়ে আছে। অবশ্য আমার আপু এত কিউট, যেকেউ তাকে পছন্দ করবে।”
“তুমিও অনেক কিউট।”
আঁখি তো প্রশংসা শুনে আকাশে উড়ে। সে-ও প্রশংসা ফিরিয়ে দেয়, “আপনিও অনেক হ্যান্ডসাম ভাইয়া। নায়ক হওয়ার মতো হ্যান্ডসাম।”
“আমি মডেলই।”
আঁখি চোখ বড় বড় করে বলে, “সত্যি ভাইয়া? এজন্যই চেনা লাগছিল। তাহলে নিচে গেলে একটা ছবি তুলবেন আমার সাথে? প্লিজ। আমি আমার বান্ধবীদের দেখাব।”
“আচ্ছা।”
“ভাইয়া আমি দরজায় কান লাগিয়ে শুনি আপু আর ওই ভাইয়া কী কথা বলছে?”
“দুইজনে জানলে তো আমার ভর্তা করে দিবে।” তারপর কিছু ভেবে বলে, “হলাম ভর্তা। চলো কান লাগাই।”

দরজার ওপাড়ে মহুয়া জাহানের হাত ধরে এক সাইডে এনে রাগে ফুলে দুই কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
“এখানে কী তোমার?”
জাহান এক লাফে বর্ডারে উঠে বসে, “এখানে আমার জান। আর এভাবে করো না। এমনিতেই তোমাকে দেখতে আজ বউ বউ লাগছে। এভাবে বকলে বিবাহিত ফিল হবে।”
“ফালতু কথা বাদ দিয়ে এটা বলো তুমি এখানে কেন?”
“তোমার ছবি দেখে আমার হার্টবিট থেমে গেল। চালু করতে এসেছি, নাহলে আজ মরেই যেতাম।”
“কিন্তু ঠিকানা কই পেলে? আমি এখানে কীভাবে জানলে?”
“মৃণা নাম্বার জোগাড় করে কল করেছি।”
“মৃণার কেন বলল? মোহের কথা বললে আমি তাও বুঝতাম।”
“মৃণা আমার পাতানো বোন।”
“কবে থেকে?”
“রবিবার থেকে।”
মহুয়ার হাত কপালে চলে গেল, “আমি ভাবতাম আমিই বড় পাগল তুমি তো দেখি আরও বড় পাগল। এখন এসেছ কী করবে?”
“তোমাকে দেখে নিয়েছি। একটুপর চলে যাব।”
“এখানে আসতে ঢাকা থেকে আড়াই ঘন্টা লাগে। পাঁচমিনিট দেখার জন্য পাঁচঘন্টার জার্নি করার মতো পাগল মানুষ আর দেখিনি।”

“দোষ কিন্তু আমার না লাভ।” জাহান লাফ দিয়ে আবারও মহুয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। মহুয়া হঠাৎ তাকে সামনে আসতে দেখে পিছিয়ে যায়। জাহান আবারও সামনে এগিয়ে তার হাত ধরে, “প্রেমের জন্য তো মানুষ জীবন দিয়ে দেয়। এটা তো সময় মাত্র। আচ্ছা তোমার কী এখনো মনে হচ্ছে আমি প্রেমের নাটক করছি?”
জাহান মহুয়ার হাতটা তার বুকের বাঁ পাশে রাখে। তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়। মৃদু অথচ ভারী স্বরে বলে, “তাহলে আমার হৃদয়ের স্পন্দন শুনো, কেবল তোমার নাম নিচ্ছে।”
মহুয়া পিছিয়ে যেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। হাত সরাতে নিলে জাহান তার বুকের সাথে তার হাত চেপে ধরে, “তোমার কী আজ অস্বস্তি লাগছে না লজ্জা?”
মহুয়া জোর করে তার হাত সরিয়ে নিয়ে বলে, “বিরক্ত করো না।”

জাহান ছাদের মৃদু আলোয় তাকে দেখে। হলদে আলোয় কমলা রঙে তাকে একদম সূর্যোস্তের আকাশের মতো দেখাচ্ছে। স্নিগ্ধ, মনোহর, যার থেকে চোখ সরানো দায়। আলোয় মহুয়ার গালে হাল্কা গোলাপি রঙও দেখতে পায় জাহান। এটা বাস্তব না তার কল্পনা সে জানে না।

আচমকা জাহান মহুয়াকে ঘুরিয়ে তার কোমর ধরে তাকে ছাদের বর্ডারে বসিয়ে দেয়। মহুয়া ভড়কে যায়। বকুনি দেয় তাকে, “এই হনুমান চ্যাঁকামেঁকা করছটা কী তুমি? ভেবো না ছু’রি এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই বলে যা ইচ্ছা করবে। একবারে চোখ উঠিয়ে মারবেল খেলব।”

জাহান তার দু’পাশে হাত রেখে তার দিকে তাকায় ভালো করে, “জান চলো একটা বাজি লাগাই।”
“বাজি? কীসের বাজি?”
“আমাদের খেলা মনে আছে? তুমি ছিলে তিন। আজ আমি ছয় এ আসলাম। যেদিন তুমি আমার প্রেমে পড়বে সেদিন এই খেলা শেষ হবে। তবে অবশেষে যদি তুমি আমার হও তুমি হারবে। আর না হলে আমি।”
মহুয়া কপাল কুঁচকায়, “এখানে বাজি ধরার কি হলো?”
“তোমার পরাজিত হওয়াটা সবচেয়ে বেশি অপছন্দের তাই না? আমিও দেখতে চাই আমি যেমন তোমায় ভালোবেসে হেরে গেছি, তুমিও কী আমায় ভালোবেসে হার মানতে পাড়বে না’কি? এছাড়া যে হারবে সে বিজয়ীর একটি শর্ত পূরণ করবে।”
মহুয়া দ্বিধাবোধ করলে জাহান বাঁকা হাসে। তার দিকে ঝুঁকে তার কাছে আসে। মহুয়া পিছে ঝুঁকে খানিকটা। তার মনে হয় জাহান তাকে কিস না করে বসে। তাই ঠোঁট ভাঁজ করে অস্পষ্ট স্বরে বলে, “খবরদার কিসমিস করবা না।”
জাহান তার কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে। হাত মুখের সামনে আসা চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। কানের কাছে মুখ নিয়ে আলতো স্বরে বলে, “তুমি দ্বিধাবোধ করছ কেন? জান মেনে নেও, তুমিও জানো তুমি শেষে আমার প্রেমে পড়বে।”

চলবে….

মেঘের খামে…
পর্ব ২৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

জাহান তার কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে। হাত মুখের সামনে আসা চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। কানের কাছে মুখ নিয়ে আলতো স্বরে বলে, “তুমি দ্বিধাবোধ করছ কেন? জান মেনে নেও, তুমিও জানো তুমি শেষে আমার প্রেমে পড়বে।”

মহুয়া এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হলেও ঘাবড়ায় না। সে জাহানের কাঁধে হাত রেখে তাকে সরিয়ে বলে, “একটা কথা ঠিক বলেছ আমার হেরে যাওয়া পছন্দ না। এখন তো আরেকটা কারণ পেলাম তোমার প্রেমে না পড়ার।”
জাহান হাসে, “প্রেমে পড়াটা খুব সহজ কিন্তু পড়ার পর তোমার মনকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। তুমি খুবই জলদি বুঝবে।”
জাহান নিজের পকেট থেকে একটি লাল রঙের ফুল বের করল। তা মহুয়ার কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলল, “এখন পার্ফেক্ট লাগছে।”
কিন্তু মহুয়া তা পরে থাকে না। খুলে নেয়। তবে ফেরত দেয় না জাহানকে। হাতে রাখে। বলে, “আমার ফুল পছন্দের না। এবার তোমার হয়ে গেলে যাও তো।”
“উঁহু আরেকটু। তোমাকে দেখে মন ভরে নি।”

মহুয়া ঢোক গিলে তার কথা শুনে। তার দৃষ্টি সুবিধার না। এই দৃষ্টি দেখে কিছু মুহূর্তের জন্য তার হৃদয়ের স্পন্দন থেমে গিয়েছিল। তাই সে জাহানের চোখের উপর হাত রেখে বলে, “দেখতে হবে না। বিদায় নেও।”
জাহান তার হাত ধরে নিজের চোখের সামনে থেকে সরায়। সে হাতে আলতো চুমু খেয়ে নেয়। মহুয়া সাথে সাথে তার হাত পিছিয়ে নেয়। জাহানকে সরিয়ে নামতে নেওয়ার পূর্বেই জাহান তাকে কোলে তুলে নামায়, “জলদি এসো জান। তোমার অপেক্ষায় থাকবো।”

তারা ছাদের দরজা খোলার পর দেখে আঁখি ও তিসান দুইজনই দরজায় কান লাগিয়ে আছে। দরজা খোলার পর জাহান ও মহুয়াকে দেখতেই তারা সাথে সাথে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তিসান তাদের ভালোমতো দেখে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “দুইজনের গাল এমন লাল হয়ে আছে কেন? ব্লাস করছিস কেন এমন? কি করেছিস তোরা?”
মহুয়া আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সে তাড়াহুড়ো করে বলে, “কথা বলেছি। কী করব? সব এই শাড়ির দোষ। শাড়ির কারণে গরমে এমন লাগছে।”
“কিন্তু এখন তো শীতকাল।”
“শাড়ি পরেছ কোনোদিন? এর ঝামেলা তুমি কেমনে বুঝবা? না’কি শাড়ি পরিয়ে দেখাব গরম লাগে না’কি!”

জাহান মুখে হাত দিয়ে তার কথায় হাসে। আঁখি তো উৎসুক হয়ে তার সাথে কথা বলতে থাকে। এই সুযোগে তিসান মহুয়ার হাত ধরে তাকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে আসে৷ তারপর আকুতি করে বলে, “সিসফ্রেন্ড আমার এখানে আসার কারণ কেবল জাহান বলার কারণে না। ওকে তো এখানে আমি একা আসতেই দিতাম না। জাহান যদি জানে শায়ান এখানে আছে তাহলে সমস্যা হয়ে যাবে। এখান থেকে যাবেই না। জাহান এই জায়গার নাম শোনার পর আমাকে জিজ্ঞেস করেছে শায়ান এখন কোথায় আমি মিথ্যে বলেছি। কিন্তু মুহিবকে কল দিয়ে জানতে পাড়লাম রাদিন ভাইয়ার সাথেই তোমার বোনের বিয়ে। প্লিজ মহুয়া জাহানকে বলো না, আমাকে জ্যান্ত কবর দিবে।”
“আমারও মুশিবত পালার শখ নেই। বলব না। আমি এই ব্যাপারটা আগেই ধাঁচ করেছি। এজন্যই ছাদে এনেছি তাড়াতাড়ি।”
“আর শায়ানের কথা চিন্তা করো না। ওর দাদী এখানে আছে, তোমার সাথে কিছু করবে না। ওর বাবা ও দাদীকেই কেবল মানে ও। আর…থাক বাদ দেও।”
“আরে চিন্তা করো না ব্রোফ্রেন্ড। আমি তো আর কোনো অবলা মেয়ে নই যার রক্ষা লাগবে। ও কিছু করলে আমিও ছাড় দিব না। সো রিলেক্স।”
সে তিসানের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়। হঠাৎ পিছন থেকে ভারী কন্ঠ আসে, “এখানে কি করছ?”

তিসান মহুয়ার পিছনে জাহানকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিসানের কাঁধে রাখা মহুয়ার হাত। তিসান সাথে সাথে পিছিয়ে বলে, “ভাই তোকে বলেছি তো ও আমার বোন। সিস্টার হয়। এমন লুক দেওয়া বন্ধ কর।”
“আচ্ছা কি কথা বলছিলি?”
“বলছিলাম তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব করিয়ে আমার জীবনে ছয়ফুটের মুশিবত আনিয়ে দিয়েছে আবার। যখন তখন পাগলামি উঠে তোর।”
“তাই না?”
জাহান তার কাঁধে হাত রেখে বলে। তারা নিচে নামে। জঙ্গলদিয়ে যাওয়ার আগে জাহান বলে, “আড়াল থেকে অনুষ্ঠানটা দেখে আসি? আমি আগে গ্রামের বিয়ে দেখি নি।”
মহুয়া সাথে সাথে না করে, “আমার আত্নীয়রা দেখলে সমস্যা হবে। কথা হবে।”
জাহান তার কথায় ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, “জেরিন মহুয়া কারো কথায় ভয় পাবে। ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না।” “আমাকে বললে তো সমস্যা নেই। মা বাবাকে কটু কথা শুনাবে। বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি চলো তো।”
সে জাহানের পিঠে হাত রেখে তাকে তাড়া দেয়। জাহানরা হাঁটতে শুরু করে। মহুয়া জিজ্ঞেস করে, “এমনি তুমি বাইক কবের থেকে চালানো শিখলে?”
উওর দেয় তিসান, “আমরা তো আঠারো বছর বয়স থেকেই বাইক চালাই। আগে তো আমরা তিনজন মিলে রাতে রেসও করতাম। তোর মনে আছে জাহান তখন র…” জাহান তার দিকে কঠোর স্থিরদৃষ্টিতে তাকায়। তিসান সাথে সাথে নিজের মুখ বন্ধ করে নেয়।

জাহান পিছনে তাকিয়ে মহুয়ার দিকে উষ্ণ হাসি দেয়, “তুমি উঠবে?”
“আমি তো শিখবো। আমার বাইক চালানোর যে শখ, কিন্তু ভাইয়া তো দিবে না। অনেক রিকুয়েষ্ট এর পর বাবা স্কুটি কিনে দিয়েছে। আমার পিংকিকে যেটাকে তুমি ডিংকি করে দিয়েছ।”
“আর তুমিও তোমার পিংকির বদলে আমাকেও তো এই উপহার দিয়েছ।”
জাহান নিজের গালে কাঁটা দাগে হাত বুলায়। যদিও দেড় মাসের মতো হয়েছে তবে দাগটা এখনো সম্পূর্ণ যায় নি। হাল্কা বুঝা যায়। মহুয়ার সেদিন বিন্দু পরিমাণ খারাপ না লাগলেও আজ একটু খারাপ লাগে। তার জন্য জাহানের সুদর্শন এই মুখে একটা দাগ লেগে গেছে৷ ভাবটা মাথায় আসতেই সে দাঁড়িয়ে পড়ে। সে এই কী ভাবলো মাত্র? জাহানকে সুদর্শন ভাবলো? তার নিশ্চিত মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এই হনুমান চেঁকামেঁকাকে কীভাবে তার সুদর্শন লাগতে পাড়ে?

সে আঁখির হাত ধরে বলে, “আঁখি যেয়েই এই শাড়ি চেঞ্জ করতে হবে। এই শাড়ি পড়ে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।”
“কী হয়েছে আপু? তোমাকে কত সুন্দর লাগছে।”
মহুয়ার কিছু বলার আগেই তিসান তার থেকে বিদায় নেয়। সে ও জাহান বাইকে উঠে। মহুয়া তাকায় জাহানের দিকে। সে হেলমেট হাতে নিয়ে তার দিকে আবারও আগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কেমন গভীর, মুগ্ধ দৃষ্টি। যে দৃষ্টি এসে যেন ছুঁয়ে দিলো মহুয়াকে। তার বুকের ভেতরের হৃদপিন্ডটায় উষ্ণতার ছড়াছড়ি হয়ে গেল। হঠাৎ জাহান চোখ টিপ মেরে হেলমেট পরে নেয় সে। বাইক স্টার্ট দেয়।

মহুয়া বাসায় এসে আর অনুষ্ঠানে বসে না। সে শাড়ি পরিবর্তন করে ঘুমিয়ে পড়ে। বাহিরে তখনও নাচ গান চলছে। কিন্তু মহুয়া আর সেদিকে ধ্যান দিতে পাড়ে না। তার মন কেন যেন লাগছে না।

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে মধ্যরাত হয়। সকলে ঘুমায় ফজরের পড়ে। অনুষ্ঠান শেষরাত পর্যন্ত হওয়ায় আজিজ শায়ানদের তাদের বাসায় থাকতেই অনুরোধ। শায়ানও রাজি হয়ে যায় নিমিষে। সে একবার রাজি হলে সবাই রাজি। তাই শায়ানরা সবাই এখানে থেকে যায়।

মহুয়াও এক লম্বা ঘুম দেয়। উঠে সকাল এগারোটায়। উঠে হেলেদুলে একঘন্টা মোবাইল চালিয়ে উঠে যায় গোসল করতে। হঠাৎ জোরে চিৎকার শোনা যায়।

শায়ানরা ঘুম থেকে উঠেছে একটু আগে। শ্রাবণীর মা নাস্তার আয়োজনও করেছেন বিশালভাবে। মেয়ের শশুড়বাড়ির মানুষ বলে কথা। পরোটা, ভাজি,ডিম, বুটের ডাল, মাংস, হালুয়া, আরও কত কি! তিনি নিজে খাবার বেড়েও দিচ্ছিলেন। অথচ খাবার খাওয়ার সময়ই চিৎকার এলো।এর মাঝেই হৈচৈ শুরু হলো।
মুহিব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “সকাল সকাল গলা ফাটাচ্ছে কে?”
শায়ান হেসে বলে, “আমি তো ভেবেছিলাম নাটকটাই মিস করতে হবে।”

ফুপি দৌড়ে যেয়ে পাশের রুমে দেখে মহুয়া চিৎকার চেঁচামেচি করছে। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যেখানে ঝামেলা, ওখানে মহুয়া। ফুপি জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে? সকাল সকাল এমন চিল্লাচিল্লি করছিস কেন? বাহিরে মেহমান আছে তো।”
আঁখি মহুয়ার পাশেই বসেছিল। সান্ত্বনা দিচ্ছিল মহুয়াকে। সে মা’য়ের প্রশ্ন শুনে বলে, “মা আপুর চুলে কে যেন রাতে চুইঙ্গাম লাগিয়ে দিয়েছে।”
এতক্ষণে শায়ানরাও এসে পড়েছে নাটক দেখতে।

মহুয়া মুখ ফুলিয়ে কাঁদোকাঁদো চোখ দিয়ে তার চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। তার মা’ও সাহায্য করছে। কিন্তু তার চুলের অবস্থা খারাপ। একাধিক চুইঙ্গাম লাগানো তার চুলে। তার ফুপিও দেখে বলে, “কোনো বাচ্চা হয়তো রাতে দুষ্টুমি করেছে।”
মহুয়া ফুপির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উলটে প্রায় কেঁদেই দিবে বাচ্চাদের মতো। তার চুল তার ভীষণ পছন্দের ছিলো। এতবছর সে ছেলেদের মতো ছোট চুল রাখলেও দুইবছর ধরে চুল বড় করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। আর এখন চুলের এই অবস্থা দেখে তার বাচ্চাদের মতো কাঁদতে মন চাইছে।
কিন্তু ফুপির দিকে উপরে তাকিয়ে সে কিছু বলতে যাবে এর আগেই দেখে শায়ান হাতে একটি চুইঙ্গামের প্যাকেট নিয়ে তা মুখে দিয়েছে। তার দিকে কেমন করে বিজয়ীর হাসি এঁকে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে তার বুঝতে বাকি থাকে না এই কাজ কার। রাগে তার শরীর জ্বলে উঠে। চোখে পানি ভাসলেও তা আর পড়তে দেয় না।

শ্রাবণী বলে, “ফারুক আর ওমরকে কোক আনতে পাঠিয়েছি। কোক দিলে না’কি চুইঙ্গাম তাড়াতাড়ি ছুটে যায়।”
দাদীও বকে মহুয়াকে, “কইসিলাম তোরে চুল এমন ঘুরিস না। চুল ঝটকায়া যেই ভাব নিতি, দেখসোস নজর লাইগা গেছে।”
শায়ানও সায় দেয় তার কথায়, “ঠিক বলেছেন দাদী। বেশি ভাব নিলে নজর তো লাগবেই।”
মহুয়া রাগে, ক্ষোভে তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর উঠে তেড়েমেরে যায় পাশের রুমে। ড্রয়ের খুলে খুঁজতে থাকে। মহুয়া অন্য রুম থেকেই উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করে, “আঁখি কাঁচি কই?”
কথাটা শুনে তো সবাই হতবাক হয়ে যায়। ফুপি তো মহুয়ার মা’কে জিজ্ঞেস করে নেয়, “তোর মেয়ে কী আসলেই পাগল?”
শায়ান তাদের কথা শুনে বুঝে নেয় মহুয়া কি করতে যাচ্ছে। সে দ্রুত পাশের রুমে যায়। দরজা পর্যন্ত যেতেই দেখে মহুয়া কাঁচি হাতে নিয়েছে। সে উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে ডাক দেয়, “এই মেয়ে কাঁচি রাখো।”
মহুয়া তার দিকে তাকায় অগ্নি দৃষ্টিতে। তার চোখ সিক্ত। রাগে সে এখনো কাঁপছে। তার সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে রাগে। এত জোরে ঠোঁট কামড়ে রেখেছে যে র’ক্ত বের হয়ে গেছে। তার কথার উওরে সে কাঁপানো কিন্তু কঠিন স্বরে বলে, “তুমি তো এটাই চাইতে তাই না?”
আর সে একবারে তার অর্ধেক চুল কেঁটে নেয়।

এতক্ষণে সবাই অন্যরুম থেকে এসে তার হাত থেকে কাঁচি নেয়। তার মা, দাদী তো তাকে বকতে শুরু করে। কিন্তু মহুয়া সিক্ত চোখে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শায়ানের দিকে। যদি পাড়তো এই মুহূর্তে তাকে ভস্ম করে দিতো।

শায়ান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। রাতে সিনথিয়া যখন বলেছিল মহুয়ার সবচেয়ে প্রিয় তার চুল। সে-ই চুলে সিনথিয়া চুইঙ্গাম লাগিয়ে এসেছে তখন তার কিছু মনে হয় নি। ভেবেছিল অন্তত একদিনের জন্য মহুয়াকে অসহায় দেখতে পাড়বে। তার চোখে অসহায়ত্ব দেখার অপেক্ষায় ছিলো । তারপর আস্তে-ধীরে সে চুইঙ্গাম উঠেই যাবে। অথচ মহুয়া এভাবে চুলই কেঁটে ফেলবে সে কল্পনাও করতে পাড়ে নি। এর থেকে বড় কথা সে সিক্ত চোখেও এক ফোঁটাও অসহায়ত্ব ছিলো না। ছিলো ক্ষোভ। কিন্তু সে তো মহুয়ার চোখে ক্ষোভ দেখতে চায় নি। তার মন মহুয়ার চোখে অসহায়তা দেখতে ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিল। কল্পনা অনুযায়ী কিছু না হওয়ায় শায়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে সাথে সাথে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। তার পিছনে তার ভাই, বন্ধুরাও বেরিয়ে যায়।

মহুয়া নিজেই তার সম্পূর্ণ চুল কাঁধ পর্যন্ত কেঁটে ফেলেছে। তার মন আর মেজাজ দু’টোই খারাপ। সেদিন সারাদিন কিছু খায়নি, কারো সাথে কথা বলেছি, বাড়ি থেকেও বের হয় নি।
.
.
মোহ ও সমুদ্র সকালে এসে পড়েছিল কক্সবাজার থেকে। সমুদ্র এসেই ঘুম। মোহ আর ঘুমায় নি। সে তার শাশুড়ীর সাথে গল্প করল, তার সাথে খাবার রান্না করতে সাহায্য করল, ঘুরেফিরে এসে মন ভালো থাকায় চকোলেট ব্রাউনিও বানাল। সন্ধ্যায় যখন মোহ তার শাশুড়ী ও শশুড়ের সাথে ব্রাউনি খেতে খেতে গল্প করছিল তখন জনাব সমুদ্র উঠেন ঘুম থেকে। মুখ ধুঁয়ে এসে দেখেছে বাহিরে মোহ তার বাবা মা’য়ের সাথে গল্প করছে। মোহের সাথে তার বাবা মা’কে ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে। অনেক বছর পর এই বাসায় এত হাসির শব্দ শুনছে সে। কিন্তু তাকে দেখে তার বাবা মা চুপ হয়ে যায়।

সমুদ্র এসে মোহের পাশে বসে টেবিল থেকে একপিস ব্রাউনি উঠিয়ে বলে, “মধু একটু চা বানিয়ে আনবে। মাথা ব্যাথা করছে খুব।”
মোহ তার দিকে তাকায় সরু চোখে, “আপনি খালি পেটে চা আর ব্রাউনি খাবেন?”
“খেলাম। তো কি হয়েছে?” সে ব্রাউনিতে কামড় দিয়ে চোখ বড়বড় করে বলে, “এটা তো অনেক মজার। কোথা থেকে কিনেছ মা?”
তার মা জোরপূর্বক হাসে, “মোহ বানিয়েছে।”
সমুদ্র উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় মোহের দিকে, “তাহলে তো একদিন পর পর বানিয়ে দিতে হবে আমাকে। আমার বাহিরের ব্রাউনিও মিষ্টি লাগে বেশি। তোমরটা একদম পার্ফেক্ট।”
মোহ মনে মনে হাসে। আটাশ বছরের পুরুষ আট বছরের বাচ্চার মতো উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মোহ বলে, “এই’যে আপনি জিম করেন, এগুলো খেলে তো সব জিমে করা কষ্ট শেষ।”
“কেন? আমার বডি না থাকলে কী তুমি আমার সাথে আর ফ্রেন্ডশিপ রাখবে না?”
মোহ তার কথায় থতমত খেয়ে যায়। নিজের বাবা মা’য়ের সামনে কেউ এভাবে বলে? সে লজ্জা পেয়ে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আমি চা নিয়ে আসছি।”

সে উঠে রান্নাঘরে যেয়ে পানি বসিয়ে তাদের রান্নাঘর থেকে উঁকি দিয়ে দেখে। সমুদ্রের মা বাবা এতক্ষণ তার সাথে কত হাসিমুখে কথা বলছিলেন। তাদের হঠাৎ কী হলো?

রাতে সমুদ্রের মা বাবা খেতে বসলে মোহ সমুদ্রের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে রুম থেকে। তাকে খেতে বসিয়ে মোহ নিজেও বসে। আর বলে, “আমি আসার পর আমরা সবাই তো একসাথে খেতে বসিনি। আজ সবাই একসাথে খাব। আমাদের বাসাতেও সবাই একসাথে খেতে বসে।”
সমুদ্রও তেমন কিছু খায় নি দেখে মানা করে না। মোহ তার প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়। মোহ জিগ্যেস করে, “আংকেল আপনার না হাই প্রেশার থাকে সবসময়? আপনি এত গরুর মাংস খাচ্ছেন কেন?”
সমুদ্রের মা বললেন, “তোমার আব্বু তো কথাই শুনে না আমার। বাবা ছেলের সবচেয়ে পছন্দের খাবারই গরুর মাংস।”
“কিন্তু এতে তো আপনারই বেশি কষ্ট হবে।”
সমুদ্রের বাবা হাসলেন, “আচ্ছা আমার মেয়ে বলেছে তাহলে খাবো না। আমি তো অনেক খুশি। আমার একটা মেয়ের কত শখ ছিলো। এত বছর পর পূর্ণ হলো।”
মোহ বড় করে একগাল হাসলো।

“মাংস দিয়ে মুগডাল, এটা তো আগে খাই নি। অনেক মজা হয়েছে।” সমুদ্র খাবার মুখে দিয়েই বলে।
সমুদ্রের মা ছোট করে বললেন, “মোহ রান্না করেছে এটা।” তারপর মোহের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, “সত্যিই অনেক মজা হয়েছে। আমি তো মাংস বেশি খাই না। তারপরও আমার অনেক ভালো লেগেছে।”
মোহ এবার নিশ্চিত হয় সমুদ্রের সাথে তার মা বাবার কিছু একটা তো হয়েছে। সমুদ্রের মা বাবা তার সাথে এত কথা বলছেন, হাসছেন অথচ সমুদ্রের সাথে বিশেষ কথা বলছেনই না। তবে এখনই সে এই বিষয়ে প্রশ্ন করে না।

মোহ সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কাল কখন বের হবেন?”
“বের হবো? কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“আমরা না, আপনি। আপনি কাল থেকে অফিসে যাবেন না? আরও কয়দিন ছুটি নিয়েছেন?”
প্রশ্নটা শুনে সমুদ্রের মা বাবার চেহেরায় কেমন ভয় প্রকাশ পায়। আর সমুদ্র অবিকল বলে, “আমি তো অফিসে যাই না।”
মোহ মাত্র নিজের প্লেটে খাবার বাড়তে নিয়েছিল। সমুদ্রের উওর শুনে অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে, “অফিসে যান না মানে? আপনাকে তো এতদিন বাসা থেকে কাজ করতে দেখলাম না।”
“কারণ আমি কিছু করি না।”
“কিছু করেন না মানে? আপনার না নিজের বিজনেস আছে?”
সমুদ্রের মা তাড়াহুড়ো করে বলল, “এটা সত্যি। অফিস ওটা ওরই। কিন্তু ও বসে না। ওর আগের বিজনেস পার্টনাররা আছে। ওর জায়গায় ওর বাবাই সব দেখে নেয়।”
মোহ কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। সে সমুদ্রের দিকে তাকায় অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে। অথচ সমুদ্র নির্দ্বিধায় খেয়েই যাচ্ছে। তাকে দেখে মোহ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “শুনেছিলাম আপনার গেইমিং ডিজাইনার। ওটারই অফিস আছে। আপনি বলেছিলেন এটা আপনার ছোটবেলার স্বপ্ন। আপনি আপনার স্বপ্নও ছেড়ে দিয়েছেন?”

হঠাৎ সমুদ্র স্থির হয়ে যায়। সে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। সবসময় হাসিখুশি থাকা সমুদ্র আজ কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় মোহের দিকে, “আমার লাইফে কি চলছে না চলছে তোমার জানার দরকার নেই। আমি কি ছেড়েছি এত তোমার মাথা ব্যাথা করার দরকার নেই।”
“দরকার নেই? অবশ্যই আছে। আপনি আমার স্বামী। আমার স্বামী কিছু না করে বাসায় বসে নিজের বয়স্ক বাবার পরিশ্রমে খায় তা আমি কীভাবে মানবো?”
সমুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, “এই সম্পর্ক কেবল নামমাত্র। তুমি কী একথা ভুলে গেছ? আমার বিষয়ে নাক গলাতে আসবে না মধু। আমার এটা চরম অপছন্দের। ”
বলে সে প্লেটে নিজের হাত ধুঁয়ে উঠে যেতে নিলে মোহও উঠে দাঁড়ায়। সে রাগান্বিত স্বরে বলে, “আপনি একথা বললেই তো হবে না। আপনার বাবা আপনার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার জন্য এই বয়সে আপনার অফিসে যেয়ে কাজ সামলাচ্ছে।”
সমুদ্রের মা মোহকে থামানোর চেষ্টা করে, “মোহ মামণি, প্লিজ চুপ করো। থামো।”
কিন্তু মোহ তো কথাটা কানেই তুলে না। সে আবারও বলে, “আপনি জানেন না আপনার আব্বু অসুস্থ থাকে। এরপরও আপনার জন্য এই বয়সে উনার কাজে যাওয়া লাগছে। লজ্জা লাগা উচিত আপনার।”
সমুদ্র রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। একঝটকায় তার সামনে রাখা টেবিলে থাকা খাবারগুলো হাত দিয়ে নিচে ছুঁড়ে মারে। কাঁচ ভাঙার শব্দে রুমে সজোরে শব্দ হয়। মোহ দেখে মেঝেতে ভাঙা কাঁচের সাথে তরকারি পড়ে আছে।

মোহ যেন আজ এই সমুদ্রকে চিনতেই পাড়ছে না। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মেঝের দিকে। সমুদ্র সেখান থেকে চলে যেতে নিলে মোহও তার পিছনে যায়। দরজার কাছে যেয়ে হাত ধরে নেয়, “এসব কী সমুদ্র? আপনি এত বাজে ব্যবহার করছেন কেন? এই দুই সাপ্তাহে আপনাকে দেখে আমি এক মুহূর্তের জন্য ভাবি নি যে আপনার ব্যবহার এত বাজে হতে পাড়ে।”
সমুদ্র মোহের হাত ঝটকায় সরিয়ে তার বাহু ধরে নেয় শক্ত করে। তার চোখে চোখ রেখে উচ্চস্বরে বলে, “দেখে নেও তাহলে। আমি এমনই। আর আমি এমনই থাকবো। আর খবরদার আমার উপর অধিকার জমাতে আসবে না। তুমি আমার আসল বউ না। বুঝেছ তুমি?”
তার মা এসে মোহের পাশে দাঁড়ায়। মোহের বাহু ছাড়াতে চেয়ে বলে, “সমুদ্র ছাড় বলছি। মেয়েটা ব্যাথা পাচ্ছে তো।”

সমুদ্র রাগান্বিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মোহের দিকে তাকায়। তোর তার দিকে তাকিয়ে আছে। অপলক। চোখ সিক্ত চোখের এক ফোঁটা জল তার নরম গালে ছুঁইয়ে গেল। তখনই হঠাৎ সমুদ্রের মাথায় ধরা আগুন নিভে যায়। তার হৃদয়ের মাঝে একফোঁটা অশান্তি বিরাজ করে। সে নিজের হাতের মুঠো থেকে মোহের বাহু ছেড়ে তার গালের জল মুছতে নিলে মোহ তার হাত সরিয়ে দেয়। তার মুখে একরাশ অভিমান ও দুঃখ। সে মুখও ফিরিয়ে নেয় সমুদ্র থেকে।

সমুদ্র মোহের দিকে কিছুমুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।
.
.
রাত তখন বাজে সাড়ে দশটা। বাড়ির সবাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছে। গতকালের ক্লান্তি। এর উপর আগামীকাল তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। কিন্তু ছাদে চলছে আরেক আয়োজন। রিয়াদ বাদে সবাই আছে সেখানে। আজিজ মদের আয়োজন করেছে। যদিও আকাশ ডাকছে তাই ছাদে থাকা একটা রুমে সব বোতল নিয়ে রেখেছে। সবাই সেখানে আড্ডা দিচ্ছে। শায়ান একটি বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাদের কোণে। ফোনে কথা বলছে।
“তুই চিন্তা করিস না রশ্মি, আমি সব সামলাচ্ছি। তোর এখানে এত চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। তুই যা চাস, তাই পাবি। তুই আপাতত তোর শরীরের দিকে ধ্যান দে।”
ফোনের ওপাশ থেকে শোনা যায় চিকন মেয়েলী কন্ঠ, “শায়ান তুই সত্যি বল জাহান কারো সাথে নেই তো? ও ফেসবুকে এমন প্রেমের কথা লিখছে কেন?”

এমন সময় বৃষ্টি শুরু হয় হাল্কা হাল্কা। ভেতর থেকে শায়ানকে মুহিব ডাকতে আসলে শায়ান রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালে সে দৌড়ে পালায়। সে আবারও মিষ্টি স্বরে রশ্মিকে বলে,
“ওর কবি হতে মন চাচ্ছে এজন্য। তুই এসবে পাত্তা দিস না-তো। আমি বলেছি তো, আমি সব সামলে নিব। জাহান কেবল তোরই হবে। আমার উপর তোর ভরসা নেই?”
“তোর উপর আমার নিজের থেকেও বেশি ভরসা আছে কিন্তু জাহান…”
“ব্যাস আমার উপর ভরসা রাখলেই হবে। আমি তোকে জাহানের সাথে বিয়ে দেওয়াবো। তুই এখন যেয়ে ঘুমা, নাহলে ঘুম কম হলে তোর খারাপ লাগবে।”
“আচ্ছা তুইও ঘুমিয়ে যা। গুড নাইট।”
“গুড নাইট এঞ্জেল।”

শায়ান ফোন থেকে বোতল ঠোঁটে লাগিয়ে এক ঢোকে কতগুলো ম’দ খায়। তারপর একবার নিচে তাকিয়ে ভেতরে যেতে নিলে দেখে একটি ছায়া ঘর থেকে বের হচ্ছে। মেয়েলী ছায়া। আজিজ তো বলেছিল সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তাহলে এই মেয়ে মধ্যরাতে বৃষ্টির মধ্যে কী করে?

শায়ান এবার ছাদের বর্ডারে কণুই রেখে ভালো করে দেখে মেয়েটিকে। মেয়েটি এদিক ওদিক তাকিয়ে ডানদিকের দিকে যায়। সেখানে অনেকগুলো গাছ লাগানো। বাহির থেকে বাগানের উপরের বাতি জ্বলায়। নিচে ঝুঁকে প্রথমে মাটিতে কিছু রাখে। তারপর বাগানের ও এককোণা থেকে একটি মাঝারি বাক্স খুলে। সেখান থেকে একটি সাদা ও বাদামি রঙের বিড়ালছানা বের করে। বিড়ালছানাটি কোলে তুলে দাঁড়াতেই মেয়েটার মাথার কাপড় পড়ে যায়। হলুদ বাতির আলোয় দেখা যায় কাঁধ পর্যন্ত চুল থাকা একটি মেয়েকে। একটু ঘুরতেই মুখখানার দর্শন পায় শায়ান। মহুয়াকে স্পষ্ট দেখতে পায়। মুখে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জল ছুঁয়ে যাচ্ছে। চুল ভিজিয়ে দিচ্ছে। সে বিড়াল ছানাটিকে উপরে তুলে একগাল হাসে। হাসিটিতে তার চোখদুটো বন্ধ হয়ে যায়। তারপর চুমু খায় বিড়ালটিকে। নিচে রেখে মাছের টুকরো সামনে দিয়ে একটি ছাতা খুলে তার উপর রাখে। অথচ নিজে ভিজেই যাচ্ছে। সে বাচ্চাদের উৎসুক দৃষ্টিতে বিড়ালটিকে খেতে দেখে।

বৃষ্টির জোর বাড়ে। হাওয়া দ্রুত হয়। মেঘের খামে পাঠানো এই বৃষ্টি আরও ছুঁয়ে যায় মহুয়াকে। সে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে উপরে তাকায়। দুইহাত মেলে পাখির ন্যায় অনুভব করে এই মধ্যরাতের মেঘের উপহারকে। তার চুল মুখে এসে লেগে থাকে।

শায়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে দৃশ্যটা। তার ঠোঁটের কোণে আপনা-আপনি কখন হাসি এঁকে উঠেছে সে নিজেও জানে না।

বৃষ্টি থামে কিছুক্ষণেই। অল্পসময়ের জন্য বৃষ্টির আগমন। মহুয়া বৃষ্টি থামার আগেই চলে যায় ভেতরে। তার বিড়ালছানাকে খাইয়ে। তাকে আবারও বাক্সের ভেতরে রেখে চলে যায়। শায়ানও চলে যায় ভেতরে। তার ভাই বন্ধুদের কাছে।

মধ্যরাতে যখন সবাই নেশায় ধুঁত তখন শায়ানের এখানে আর ভালো লাগছিল না। আজ তার মদ ধরতেও ভালো লাগছে না। সে নিচে যায়। বাগানের শেষের কোণে যেয়ে বাক্সটা তুলে বের করে সে বিড়ালছানাটিকে। বিড়ালটি তাকে দেখেই মেও মেও করতে শুরু করে। শায়ান হাসে, সে বিড়ালছানাটিকে কোলে নিয়ে বলে, “তুই দেখি তোর মালিকের মতোই জংলী। দেখতে না দেখতেই তেড়ে আসছিস। আমার কিন্তু এমন রাগী বিড়াল আর মানুষ পছন্দ না বুঝেছিস? তোর মালিককে তো চরম অপছন্দের। নিজেকে কী ভাবে বল? এত রাগ, এত জেদ কেন এই মেয়ের? আমার কাছে আকুতি করলেই তো আমি আর জ্বালাতাম না। কিন্তু না, ম্যাডামের তো আমার সাথে লড়াই করতে মজা লাগে। আচ্ছা সে যাই হোক, তোর তো মনে হয় ঘর নেই। আমার সাথে যাবি?”
বিড়ালটার থেকে শব্দ ছোট হয়ে এলে শায়ান তা সম্মতি হিসেবে মেনে নিজের বাইকে উঠে বসে। একহাতে ধরে বিড়ালছানাটিকে। তারপর রওনা দেয় তার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

চলবে…

মেঘের খামে…
পর্ব ২৭
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

রাত সাড়ে এগারোটা, সমুদ্র রাগ করে বাসা থেকে বের হলে। ভাবে হয়তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ভোরে বাসায় যাবে, নাহয় পরেরদিন। কিন্তু আজ একঘন্টার মধ্যে তার কেমন অস্থির লাগে। বারবার মনে পড়ে সে কত শক্ত করে মোহের হাত ধরেছিল, তার উপর চিল্লিয়েছিল, তার চোখের জলের কারণ হয়েছিল। তবে মোহ তো বলেছিল সে সহজে কান্না করে না। অর্থাৎ সে এত ব্যাথা দিয়েছিল যে তার জন্য মোহ কান্না করেছে। এসব ভাবতেই সমুদ্রের মন উদাসী হয়ে যায়। মাথাও ব্যাথা হয়ে যায়। সে আর থাকতে না পেড়ে আড্ডার মাঝখানেই উঠে পড়ে।

বাসায় এসে চাবি দিয়ে লক খুলে সমুদ্র ভেতরে আসে। সব লাইট বন্ধ। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। সমুদ্র নিজের রুমের দিকে এগোয়। রুমের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে ভয়ে কতগুলো ঘন নিশ্বাস ফেলে। মোহ বোধহয় অনেক রেগে আছে। প্রতিবার তো তার কোমড় ভাঙে এবার সম্পূর্ণ তাকেই না ভেঙে দেয়।

গভীর নিশ্বাস ফেলে সমুদ্র রুমে ঢুকে সাহস জোগাড় করে। তবে রুমে ঢুকে দেখতে বিছানায় পায় না সে মোহকে। মোহ কী রাগ করে চলে গেল না’কি? এত রাতে যাবে? সমুদ্র চিন্তায় পড়ে যায়। সে রুমে ঢুকে দেখে খাটের ওপাশে মোহ নিচে ঘুমাচ্ছে। সমুদ্র তার সামনে যেয়ে হাঁটু গেড়ে বসে। ডাক দেয় তাকে, “এই মধু…মধু…”

মোহ ঘুমে নড়ে-চড়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে অন্যদিকে দিকে। সমুদ্র গভীর নিশ্বাস ফেলে, “সরি মধু, আমার রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। মাফ করে দেও। রাগ করো না প্লিজ।”
তবে সমুদ্র বুঝে যে মোহ রাগ থেকে বেশি অভিমান করেছে। রাগ করলে সে বিছানা ছাড়তো না। প্রয়োজনে তাকে লাথি মেরে ফেলে দিতো। অভিমান করাতেই সে বিছানা ছেড়ে নিচে শুয়েছে।

সমুদ্র মোহকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল। তাকে শুইয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়লো। আলতো করে মোহের গাল টেনে বলে, “এমনি কান্নার সময় তোমাকে একদম বাচ্চার মতো দেখা যায়। অনেক কিউট। কিন্তু তোমার চোখে কান্না মানায় না।”
সে হেসে মোহের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজেও ঘুমাতে যায়। এমন সময় মোহ ঘুরে তার কাছে চলে আসে। তার বুকের কাছে। আর তার উপর হাত দিয়ে পিঠের গেঞ্জি ধরে নেয়।

সমুদ্র প্রথমে এতে অস্বস্তিবোধ করলেও ড্রিমলাইটে তার মুখখানা দেখে তার অস্বস্তি একপাশে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। একসময় নিজেও তলিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে।

স্বভাবতই ফজরের আযানের শব্দে উঠে যায় মোহ। মিটিমিটি করে চোখ খুলে। কিন্তু এত দ্রুত তার ঘুম ভাঙে না। তবে প্রথমেই তার নাকে পুরুষালী মাতালো ঘ্রাণ এসে লাগে। সে ঘ্রাণেই মোহের ঘুম কেটে যায়। সে চোখ খুলে দেখে সে সমুদ্রের বুকের মাঝারে।

মোহ কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। কেবল সে নয়, তার হৃদয়ও। মোহ দেখে সমুদ্র তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ঘুমুচ্ছে। কিন্তু সে তো নিচে ঘুমিয়েছিল!

আপাতত এসব কথা ছেড়ে সে সমুদ্রের দিকে তাকাল। তার কপাল থেকে ঠোঁট পর্যন্ত আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো তাকে। ছুঁয়ে নিজেই কেঁপে উঠে। সে হাত স্লাইড করে আনে সমুদ্রের গলায়। গেঞ্জিটা একটি টেনে নিচে করতেই দেখা যায় ছোট কালো গোলাকার তিলটার। এই তিলটা তাকে এত আকর্ষণ করছে কেন? ইচ্ছে করছে তিলটার উপরে গভীর এক চুমু খেতে। ভাবনাটা মাথায় আসতেই মোহ হাত সরিয়ে নেয়। নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। নিজেকে সংযত করে সমুদ্রকে ডাক দেয়, “এই’যে শুনছেন? দেখি ছাড়ুন আমাকে। হাত সরান।”

ছাড়া তো দূরের কথা, সমুদ্র ঘুমের তালে এবার তাকে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
মোহের যেভাবে নিশ্বাস আটকে আছে, সে নিশ্চিত মা’রা যাবে আজ। সমুদ্রের ঘ্রাণ তাকে মাতাল করে দিচ্ছে। তার ছোঁয়ায় মোহ নিশ্বাস নিতে ভুলে যাচ্ছে। অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর মোহ ঘড়ি দেখে। ফজরের নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। তাই সে সমুদ্রকে আবারও ডাকে। অনেকক্ষণ পর সমুদ্র ঘুম ঘুম চোখে তাকায় তার দিকে। তাকে ছাড়ার জায়গায় উল্টো আরও শক্ত করে ধরে বলে, “মধু ঘুমাও। ডাকছ কেন সকাল সকাল?”
“আমি নামাজ পড়বো। ছাড়ুন।”
সমুদ্র উওর না দিলে মোহ আবার তাকে ঘুম থেকে উঠায়, “ছাড়ুন বলছি।”
“তুমি এতো নড়াচড়া করো কেন? কত আরামে ঘুমাচ্ছিলাম। ধ্যুর!”
সমুদ্র তাকে ছেড়ে অন্যপাশে ঘুরে যায়।
মোহ তো থতমত খেয়ে তাকিয়ে থাকে। একতো গতকাল তার উপর চিল্লিয়েছে, আবার কাছে এভাবে জড়িয়ে ঘুমিয়েছে, আবার তার উপর নিজেইবিরক্ত হচ্ছে। তার সাহস দেখে মোহ অবাক না হয়ে পাড়ে না। তার তো রাগে ইচ্ছে করে সমুদ্র এক লাথি দিয়ে নিচে ফেলে দিতে। কিন্তু সে নিজেকে মনে করায় সে সমুদ্রের উপর রাগ করেছে। তাকে ছোঁয়া তো দূর, কথাও বলবে না।

সে রাগে ফুলে উঠে যায় বাথরুমের দিকে। ওযু করে নামাজ পড়ে এককাপ চা বানিয়ে রুমে এসে দেখে সমুদ্র সেখানে নেই। সে বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়ে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায়। চা’য়ে চুমুক দিয়ে তাকায় বাহিরের দিকে। সূর্যোদয়ের মুগ্ধকর দৃশ্যের সাথে চা’য়ের সঙ্গটা তার ভালোই লাগে। এমন সময় আর পিছনে কেউ এসে দাঁড়ায়। সে আভাস পায় সমুদ্রের আসার। কিন্তু সমুদ্র কোনো কথা বলে না। মোহও তার দিকে ফিরে তাকায় না।
চা খাওয়া শেষে সে সমুদ্রের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে সমুদ্র তার হাত ধরে নেয়। মোহ পিছনে ফিরে তাকায়। কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “কি সমস্যা?”

সমুদ্র এক হাত দিয়ে তা কান ধরে ভীত স্বরে বলে, “সরি।”
“নিজের সরি নিজের কাছে রাখেন। কথা বলতে আসবেন না আমার সাথে।”
মোহ তার হাত ছাড়িয়ে যেতে নিলে সমুদ্র তার সামনে এসে দাঁড়ায়, “সরি তো মধু। দেখো আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না। আমি কি বলি, কি করি কোনো ধ্যান থাকে না। সরি গো, আর হবে না।”
“সরি বলছেন কেন? কে হই আমি আপনার? আপনি তো বললেন এটা নামমাত্র বিয়ে। এবার আমি রাগ করি, কথা না বলি এতে কী আসে যায়?”
“বললাম তো সরি। তুমি বললে আমি কান ধরে উঠবস করব।”
“করুন।”
“সিরিয়াসলি তুমি আমাকে দিয়ে উঠবস করাবে?”
“না করলে বলেছেন কেন?”
“আচ্ছা আচ্ছা করছি।”
সমুদ্র কান ধরে বসতে নিলে মোহ তাকে এড়িয়ে চলে যায়।
সমুদ্র বুঝতে পাড়ে মোহকে মানানো এতটাও সহজ হবে না।
.
.
আজ শ্রাবণীর বিয়ে। সকাল থেকেই কাজে সবাই ব্যস্ত। সকাল এগারোটায় একটি গাড়ি এসে থামে বাড়ির সামনে। মুরাদ এসেছে। তার আসার খবর শুনে মহুয়া বের হলে দেখে সব আত্নীয়রা তার আশেপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। মহুয়া এই অবস্থা দেখে মুখ বানিয়ে ভেতরে যেয়ে আবারও মোবাইলে গেইম খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ-সব আত্নীয়দের মতলব তার জানা আছে। তারা একসময় তাদের আর্থিক অবস্থার কারণে তাদের বাসায়ও ডাকতো না। কত অপমানিত হতে দেখেছে তার মা, বাবা আর ভাইকে। অথচ এখন তাদের ভালোবাসা উতলে পড়ছে। বিশেষ করে তার ভাইয়ের উপর। এখন যে তার দ্বারা সবার কাজ সেরে যায়।

মুরাদ খানিকক্ষণ পর এসে বসে মহুয়ার পাশে, “মিষ্টির বাচ্চা তোর কী নিজের ভাইয়ের কথা একটুও মনে পড়ে নি? তিনদিন ধরে তোকে না দেখে আমার খাওয়া দাওয়া উঠে গেছে আর আমি এসেছি একটু দেখা করতেও এলি না।”
“তোমার ফুফু চাচারা আর কাজিনদের জন্য জায়গা পেয়েছি?” মহুয়া বিরক্তি নিয়ে ফোন রাখে একপাশে, “ভাইয়া আমি বুঝি না তারা আমাদের সাথে এতকিছু করেছে তারপরও তুমি তাদের সাপোর্ট করো কীভাবে? তোমার র’ক্ত জ্বলে না?”
মুরাদ মহুয়ার হাত ধরে তার ছোট বোনটাকে বুকে ভরে আগে নিজের নিশ্বাস ফিরিয়ে আনে। মেয়েটাকে তার বোন থেকে বেশি নিজের সন্তানের মতো পেলেছে সে। যত রাগ করে, বকে,শাসন করে কিন্তু তাকে দূরে রেখে থাকতে পাড়ে না। তারপর আদুরে সুরে বলে, “বাবা মা’য়ের জন্য করি। তারা এতে খুশি হয়।”
“এরা দু’মুখো সাপ ভাইয়া। আবার যদি আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়, দেখো ঠিক আগের মতো নালার কীটার মতো ব্যবহার করবে।”
“সেসব দিন আর কখনো তোকে দেখতে হবে না। তোর ভাই বেঁচে আছে।”
মহুয়া মুরাদের বুক থেকে উঠে তার দিকে তাকিয়ে হেসে মাথা নাড়ায়।

এমন মুহূর্তে মুরাদের চোখে পড়ে মহুয়ার কাঁটা চুল। সাথে সাথে সে চোখ বড় করে নেয়, “তোর চুল…চুল এতটুকু হয়েছে কীভাবে? ”
“হলুদের দিন ঘুমিয়ে ছিলাম উঠে দেখি কোন শয়তানে চুইঙ্গাম লাগিয়ে দিয়েছে।”
“কী! কার এত বড় সাহস? আমি এখনই যেয়ে ফুপিকে জিজ্ঞেস করছি যে আমাদের দাওয়াত দিয়ে এখানে…”
মহুয়া তাকে থামায়, “ভাইয়া এই বিষয়টা আমি নিজে দেখবো। তুমি চিন্তা করো না। যে এই কাজ করেছে সে উচিত শিক্ষা পাবে।”
“ঠিকাছে। কিন্তু কেউ তোকে কিছু বললে আমাকে বলবি। তোর সাথে একবারও খারাপ ব্যবহার করলে আমি আর সম্পর্কের মান রাখব না।”
“তোমার মনে হয় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে আমি তাদের ছেড়ে দিব?”
“এই নাহয় আমার বোন।”
“এসব বাদ দেও ভাইয়া। মৃণাকে আনো নি কেন?”

প্রশ্নটা শুনে মুরাদের মন ও মেজাজ দুইটাই খারাপ হয়। সে মুখ বানিয়ে বলে, “তোর বান্ধবী যা বুঝার দরকার তা বুঝে না, যা বুঝার দরকার নেই তা দুইলাইন বেশি বুঝে।”
“হেঁ?” মহুয়া মাথা চুলকায়।
“কিছু না। ওকে বলেছিলাম। আসবে না।”
“ওকে তো আমি পড়ে দেখে নিব। আচ্ছা ভাইয়া তুমি রিলেক্স করো। আমার একটা মিটিং আছে আমি আসছি।”
“ওরে বাবা কী ব্যস্ত মানুষ! তোর কী মিটিং আছে শুনি?”
“আছে আছে। পড়ে বলছি।”

পুকুরপাড়ে মহুয়ার বিচ্ছুদলের বিশেষ চার সদস্যকে ডাকা হয়েছে। আঁখি, ফারুক, ওমর, শারমিন। ওরা সবাই নয় বছর থেকে চৌদ্দ বছরের। বাকি সবগুলো পিচ্চি পোলাপান। মহুয়া ললিপপ খেতে খেতে বলে, “আমি নিশ্চিত আমার চুলে চুইঙ্গাম লাগানোর কাজ করেছে শায়ান। কিন্তু আঁখি বলছে ও মেয়েদের রুমেই ঢুকে নি। তাহলে কে করতে পাড়ে?”
ফারুক বলে, “আপা কোনো বাচ্চা পোলাপান তো করবোই না। আমরা সবাই তো আপনার ভক্ত। কোনো বাচ্চারে একশোটা চকোলেট দিলেও আপনার বিরুদ্ধে যাইবো না।”
ওমরও একমত হয়।
আঁখি বলে, “বড়রা বাদ। কেউ এটা করবে না। মেয়েরা থাকে। শ্রাবণী আপু, তার বান্ধবীরা আর সিনথিয়া আপু। শ্রাবণী আপু আর তার বান্ধবীরা যেহেতু আপির রুমেই ঘুমিয়েছিল তাহলে… ”
“সিনথিয়া।” মহুয়া বলে। তার মনে পড়ে সে শায়ানের সাথে সে সিনথিয়াকে হলুদের রাতেই ফ্লাটিং করতে দেখেছিল।
শারমিনও জানায়, “আপি আমি না ওদিন আপুকে অনেকগুলো চুইঙ্গাম খেতে দেখেছি। ব্যাপারটা তখন মাথায় আসে নি।”

সে তার বিচ্ছুদলের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোরা আমার আদর্শে বড় হচ্ছিস। প্রাউড অফ ইউ। এত সুন্দরমতো সব বের করলি। এদের একজনকেও আমি ছাড়বো না, আমার সিল্কি সিল্কি মিল্কি মিল্কি চুল।” বলে এক মুহূর্তের জন্য কান্নার ঢঙ করে তারপর গম্ভীরমুখে তার বিচ্ছুদলকে বলে, “তোরা আমার কথামতো কাজ করবি। এদের দুইজনের একটাকেও ছাড়বো না।”
.
.
দুপুরে বিয়ের আয়োজন করা হয় সেখানের সেন্টারে। বিয়ের থেকেও বেশি হৈচৈ হয় শায়ানের বাবার উপস্থিতিতে। সে গ্রামে না থাকলেও তার নামডাক অনেক। বিয়ে ভালোভাবে শেষ হয়ে বিদায়ের সময় আসে। শ্রাবণী ও রাদিনকে সবার আগে গাড়িতে উঠানো হয়। শ্রাবণীর সাথে যাওয়ার কথা ছিলো সিনথিয়া ও আঁখির। কিন্তু আঁখি জেদ ধরে সে মহুয়াকে নিয়েই যাবে। কিন্তু মহুয়া মানতে নারাজ সে যাবেই না। এটা তাদের পরিকল্পনায় ছিলো আঁখি তাকে শায়ানদের বাসায় নেবার জন্য জোর করবে। কিন্তু আচমকা পূর্ণিও তাকে ধরে বসে। তাকে নিয়ে বাসায় যাবেই। পূর্ণির এমন আবদারে ফুপি নিজেই তাকে বলেকয়ে পাঠায় আঁখি ও সিনথিয়ার সাথে। অর্থাৎ তার পরিকল্পনার প্রথম ধাপ পূর্ণ হয়।
দ্বিতীয় ধাপের জন্য রাতের অপেক্ষা।

শিকদার বাড়িটা পুরনো কিন্তু বিশাল বড়। আগেরকালের বাড়ির মতো চারদিকে রুম আর মাঝখানটা আঙ্গনা। আঙ্গনায় একটি চৌকি ও কতগুলো মোড়া রাখা। পাকা করা মেঝেতে আলপনা আঁকা। বাড়ির একপাশে বড়সড় গাছপালা ফলের তার পাশে পাকা করে পুকুর। মহুয়া এর আগেরবারও বাহির থেকে বাড়িটা দেখেছিল। তার পছন্দ হয়েছিল বেশ। ভেতরে দেখার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ ছিলো না। আজ বাড়ির ভেতর ঢুকে এসব দেখে তার মনে হচ্ছে কোনো পুরনোদিনের সিনেমার স্ক্রিনে এসে পড়েছে।

শায়ানের বাড়িতে মহুয়া পূর্ণি আর দাদীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। শায়ানের বড় দুই বোনের সাথেও কথা বলেছে সে। এর মধ্যে আঁখি বাড়িতে গিয়েছিল তাদের কাপড় আনার জন্য। পূর্ণি তাকে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরায়। সবার রুম চিনিয়ে দেয়। তার রুমে এনে বসায় তাকে। উৎসুক কন্ঠে বলে, “আপু আমরা আজকে এক রুমে ঘুমাব ওকে? আপু তুমি ভাইয়ার ভার্সিটিতে পড়ো না? আগে দেখা হয়েছিল বুঝাই যায়। কীভাবে দেখা হয়েছিল?”
“তোমার ভাই ক্যাম্পাসে বাইক চালাচ্ছিল। আমার এক্সিডেন্ট করার জন্য তার হাত চুলকাচ্ছিল।”

পূর্ণি জোরপূর্বক হাসে তার কথায়। আমতা-আমতা করে জিজ্ঞেস করে, “শায়ান ভাইকে তোমার ভালো লাগে না?”
“ভালো? ওই শয়তানের হাড্ডির মধ্যে ভালো লাগার মতো আছে কি? ওকে দেখছে আমার ইচ্ছে হয় চুল টেনে ছিঁড়ে দেই। বান্দর ক্যাটক্যাটা, টিকটিকির ডিম, রাক্ষসের বাপ খাক্ষস একটা।” বকেটকে মন শান্ত হয় মহুয়ার।
কিন্তু পূর্ণি তার ভাইকে সাধু প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগে, “আপু ভাইয়াকে একটু কঠিন মনে হয় কিন্তু ভাইয়া সত্যি ভালো। আমাদের অনেক আদর করে। তার এমন কঠোর হওয়ার নাটক করতে হয়। ছোটবেলায় তো ভাইয়া অনেক দুষ্টুমি করতো। তোমার কারণে এখন যেমন সবাই হাসে তেমন ভাইয়াও ছিলো। কিন্তু সময় আর পরিস্থিতি মানুষকে পালটে দেয়। ভাইয়া যা সহ্য করেছে তার পর কোনো মানুষই স্বাভাবিক থাকতে পাড়ে না।”
“এমন কী সহ্য করেছে তোমার ভাই?”
এই প্রশ্নে পূর্ণি চুপ করে যায়। সে কিছুটা দ্বিধাবোধ করে বলে, “ভাইয়া এসব কাওকে জানাতে চায় না। হয়তো আমারও বলা উচিত হবে না।”
মহুয়া ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে মাথা নাড়ায়। কিন্তু সে ঠিকই মনে মনে ভাবে, “তোমার ভাই কত খারাপ কেবল তুমি জানো না। তার জঘন্য কথাগুলো আমি তোমাকে বলব না, নাহলে তোমার সরল মনটা ভেঙে যাবে।”

কিছুক্ষণ পর আঁখি আসে ব্যাগ নিয়ে। একটা ব্যাগে তার ও মহুয়ার জামা এনেছে একদিনের জন্য। মহুয়া জিজ্ঞেস করে, “আমার কথামতো জিনিস এনেছিস?”
আঁখি আশেপাশে তাকায়, “পূর্ণি আপু কোথায়?”
“নিচে গেছে। রিয়াদ ভাইয়াকে বাসরঘরে ঢোকার আগে গেইট ধরবে। তুইও যা। কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি ফ্রেশ হয়ে আসবো।”
আঁখি ব্যাগ থেকে একটি পলিথিন বের করে দিয়ে সাবধান করল, “আপু তোর হাতে যেন না লাগে।”
আঁখি যাবার পর মহুয়া চুপি চুপি বের হয়। তারা দোতলায় ঘরে আছে। দুই রুম বাদেই শায়ানের কক্ষ। সে দরজা খুলে রুমে ঢুকে নিঃশব্দে। যদিও সবাই এই মুহূর্তে নিচে। রিয়াদের রুমের সামনে। শায়ানও তাহলে এখন আসবে না। এই সুযোগে শায়ানের রুমে যেয়ে তার স্যুটকেস বের করল। একটি স্যুটকেস থাকায় চিনতেও অসুবিধা হলো না। পূর্ণি তাকে বলেছিল, বিয়ে বাড়িতে সবাই রুম শেয়ার করলেও শায়ান কিছুতেই সাথে থাকেনা। তাই নবাবজাদা একা এক রুম দখল করেছে। সে স্যুটকেস খুলে পলিথিন থেকে নিজে অস্ত্র বের করল। বিছুটি পাতা। তা দেখে শয়তানি হাসি দিলো। সে পলিথিন হাতেও পেঁচিয়ে নিয়েছে। সে পাতা শায়ানের প্রতিটি পোশাকে মেখে দিলো। খুব গর্বিত স্বরে বলল,”এবার বুঝবে ব্যাটা আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসার ধান্দার পরিণাম।”

মহুয়া বিছুটি পাতাসহ পলিথিন ফেলে দিলো বারান্দা দিয়ে। তারপর গুনগুন করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। নিজের মনের খুশিতে লাফাতে লাফাতে হাঁটতে যেয়ে দরজায় ধাক্কা খেলো কারো সাথে। যে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “ভাই অন্ধ না’কি? দেখে…”
সামনে শায়ানকে দেখে আর বাক্য সম্পূর্ণ করতে পাড়ল না।
শায়ান তার দিকে চেয়ে আছে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে, “তুমি আমার রুমের সামনে কি করছো?”
মহুয়া ভরকে যায়। চোরের ন্যায় ধরা পড়ায় সে ঘাবড়ে বুঝতে পাড়ে না কি করবে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বড় গলায় বলে, “নাচছি দেখছ না?”
“না। দেখাও। আমি দেখব।”
“হেঁ?” মহুয়া মাথা চুলকায় তার কথা শুনে। তারপর বিরক্তির সুরে, “মানে হাঁটছিলাম আরকি। ঘরটা ভালো।লেগেছে বলে হেঁটে দেখছিলাম।”
“আমার রুমের ভেতরেও?”
“আমি কী জানি না’কি এটা তোমার রুম? তোমার রুম জানলে তো আমি আশেপাশেও ঘেঁষতাম না রুমের। তুমি যে হাওয়ায় থাকো সে হাওয়াতেও আমার এলার্জি আছে।”
মহুয়া মুখ ঝামটে পাশ দিয়ে যেতে নিলে শায়ান তার হাত ধরে নেয়। বলে, “আমার সাথে আসো।”
“এই হাত ছাড় বলছি। আমি তোর সাথে কোথাও যাব না। তোর উপর আমার দুই পয়সার বিশ্বাস নেই৷ ছাড়তে বলেছি না? ছাড়।”
কিন্তু শায়ানের তার কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে মহুয়ার হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে থাকে ছাদের দিকে। এদিকে মহুয়া ধস্তাধস্তি শুরু করলে শায়ান বিরক্তি নিয়ে বলে, “এই চুপচাপ চলো তো। তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে নিব। তোমার মধ্যে আমার দুই পয়সার ইন্টারেস্ট নাই। এখন বেশি নড়াচড়া করলে কোলে তুলে নিব।”
“এহ আসছে। আর আমি চুপচাপ বসে আঙুল চুষবো? হাত পা ভেঙে দিব একদম।”

তারা ছাদে এসেও পড়ে। শায়ান মহুয়াকে ছাদের কোণে এক বড় বক্সের কাছে নিয়ে আসে। তার হাত ছেড়ে দেয়।
মহুয়া তাকে ছেড়ে বক্সের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বিড়ালটা বক্সের মধ্যে। সে বিড়ালছানাটা দেখে খুশিতে আধখানা। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাক্সে না পেয়ে কতক্ষণ সে খুঁজেছে একে। সে বিড়ালটিকে কোলে তুলে বলে, “আরে আমার বিল্লুভাই তুমি তাহলে এখানে?”
শায়ান তার হাসিটি দেখে মৃদু হাসলেও নামটা শুনে মুখ বানায়, “এটা কি নাম? আর ইউ সিরিয়াস?”
“আগে তুমি বলো, আমার বিড়াল তোমার কাছে কীভাবে?”
শায়ানের গতরাতে কথা মনে পড়ে। মহুয়ার হাসিটা তার চোখে ভাসে। তবে এই ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে সে বলে, “রাতে আসার সময় দেখি বৃষ্টিতে ভিজছিল। তাই নিয়ে এসেছি।”
“তাহলে আমাকে দেখাতে আনলে কেন?”
“এখন তুমি দেখবা কী না? নাহলে যাও, বের হও।”
“এহ এটা আমার বিল্লুভাই। আমি যাব কেন? তুমি যাও।”
“এটা আমার বাড়ি।”
“তো?”
“তো মানে?”
মহুয়া ছাদে করা একটি এটেচড বেঞ্চে বসে, “মানে আমি এখানে মেহমান। আমাকে জোর করে আনা হয়েছে। তুমি ভাগাতে পাড়বে না।”
শায়ান তার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়, “তোমার সাথে ঝগড়া করার মতো এনার্জি আমার আজ নেই। তুমি ঢাকায় যাওয়ার সময় তোমার বিড়াল নিয়ে যেও।”
এটা শুনতেই মহুয়ার তার দিকে তাকায়। তারপর দাঁত কেলিয়ে হেসে তাকায় শায়ানের দিকে।

কপাল কুঁচকে যায় শায়ানের। হাসিটা তার স্বাভাবিক লাগছে না। আর মহুয়া তার দিকে তাকিয়ে হাসবে এই ভ্রম সে পালে না।
মহুয়া কাঁচুমাচু করে বলে, “আমার ভাইয়ার বিড়াল থেকে এলার্জি আছে৷ সো প্লিজ তুমি রাখবে?”
মহুয়ার এই মিষ্টি কথা শুনে শায়ানের মাথা ঘুরান দিলো। সে দ্রুত মহুয়ার পাশে বসে তার মাথায় হাত দিয়ে দেখে, “এই পেত্নী তোমার কী জ্বর এসেছে? না’কি মাথার তার ছিঁড়ে গেছে? আমার সাথে এত সুন্দরভাবে কথা বলছো কীভাবে?”
মহুয়া ঘিনঘিন ভাব নিয়ে তার হাত সরিয়ে দেয়। বলে, “বিল্লুভাইয়ের জন্য মাখন মারছিলাম। এখন নিবে কি-না বলো?”
“ওকে ওকে নিব। বাট ওর নাম পাল্টাতে হবে।”
“কেন? বিল্লুভাই কত সুন্দর নাম।”

শায়ান নিজের মাথায় হাত রাখে অবশেষে নিরাশ হয়ে। সে ভাবতো এই মেয়ে এত ফালতু কথা বলতে পাড়ে, এখন দেখে এত ফালতু নামও রাখতে পাড়ে।
শায়ান বলে, “আমি একে বাসায় নিয়ে যাব। একটা সুন্দর নাম রাখতে হবে। তুমি চাইলে দেখা করতে আসতে পাড়ো।”
“আমি তোমার বাসায় যাব? নো, নেভার। তোমার উপর দুই পয়সার ভরসা নেই।”
“এই মেয়ে ফালতু কথা বলবা না। একতো তোমার উপর আমার শুধু জাহানের জন্য ইন্টারেস্ট ছিলো। শায়ান শিকদারের কিছু রীতিনীতি আছে। আর আমি কোনো মেয়ের সাথে জোর করে ফিজিক্যাল হই না। মেয়েরা নিজে আমার কাছে আসে। আসলে আমি মানা করবো কেন?”
“নিজের ফিউচার ওয়াইফের জন্য। আল্লাহ ব্রেন দিলে তা ইউজও করতে হয়। কোনো মেয়েই চাইবে না যে তার স্বামী তার আগে একশোটা মেয়ের সাথে প্রেম পিরীতি করেছে। সব মেয়েই লয়াল হাসবেন্ড চায়। এমন করলে তোমাকে বিয়ে করলে তোমার বউয়ের জীবন শেষ হয়ে যাবে।”
শায়ান তার দিকে তাকায় এবার গম্ভীর দৃষ্টিতে, “বউ?” শায়ান তাচ্ছিল্য হাসে, “এই মেয়ে জাতি হচ্ছে সবচেয়েবড় বিশ্বাসঘাতক। তারা বিশ্বাস বলতে কী বুঝে? যেখানে স্বার্থ দেখে সেখানে সব ছেড়ে চলে যায়। তা নিজের অংশই হোক না কেন!”

সে মুহূর্তে শায়ানের চোখের সামনে ভেসে উঠে এক অন্ধকার রুম। চারদিকে ঘুটঘুটে আঁধার। বিছানার একপাশে হাত ভাঁজ করে বসে আছে ছোট একটি ছায়া। কাঁপছে। চোখে পানি ভাসছে। বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু কেউ আসে না। কারও দেখা পায় না।

চলবে…