মেঘের খামে পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
5

মেঘের খামে…
পর্ব ৩৪
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

মোহের ঘুম ভাঙে আজ দেরিতে। চোখ খুলে নিজেকে পায় সমুদ্রের বাহুডোরে। আজকাল ঘুম থেকে উঠেই সবার পূর্বে সে ঘ্রাণ পায় সমুদ্রের। চোখ খুলেই তার মুখ দেখে। নিজেকে আবিষ্কার করে তার বাহুডোরে। কেমন শান্তি লাগে তার বুকের মাঝারে। ঘুম ভালো হয়। মনটা শান্ত থাকে। আর তার ঠোঁটের কোণে এঁকে থাকে হাসি। তবে সে বুঝতে পাড়ে না সমুদ্র কী তাকে ইচ্ছা করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় না’কি ঘুমের তালে!
কেননা ঘুমানোর সময় কখনো সমুদ্র তাকে ধরে না।

মোহ আলতো করে ছুঁয়ে দেয় সমুদ্রের মুখ, “শুনছেন? ছাড়ুন। সকাল হয়ে গেছে।”
সমুদ্র তো তাকে ছাড়লই না। উলটো টেনেটুনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। মোহের ব্যাপারটা মোটেও মন্দ লাগলো না কিন্তু সে তবুও সমুদ্র থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করল। এতে সমুদ্র চোখ খুলে বিরক্তি নিয়ে বলল, “এমন নড়াচড়া করছ কেন? শান্তিমতো ঘুমুতেও দিবে না না’কি?”
“কোলবালিশ এনে রাখবেন। কোলবালিশ ধরে ঘুমিয়েন।”
“কোলবালিশ তোমার মতো নরম না’কি?”
কথাটা শুনে মোহের মুখ লাল হয়ে গেল। ড্যাবড্যাব করে তাকায় সমুদ্রের দিকে। লোকটার ঘুম ভাঙে নি নিশ্চিত। ঘুমের ঘোরে নিলজ্জের মতো কথাবার্তা বলছে সে।

মোহ এবার জোর দিয়ে সমুদ্রকে সরাতে চাইলে সমুদ্র তাকে জড়িয়ে ধরে তাকে উপরের দিকে তুলে। তার মুখোমুখি করে। তারপর নিমিষেই জিজ্ঞেস করে, “পানি থেকে উঠানো মাছের মতো এত ছটফট করছ কোন দুঃখে?”
লোকটা তো জানে না মোহের এই মুহূর্তে পানি থেকে উঠানো মাছের মতো ম’রে যাবার অবস্থা।
এজন্যই তো সে কাতড়াচ্ছে এভাবে। সে স্পষ্ট টের পাচ্ছে সমুদ্রের হাতের অবস্থান তার কোমড়ে। তার পিঠে। সে চোখ লুকানোর চেষ্টা করল বারবার। ব্যর্থ হলো। সমুদ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে একটানা, কপাল কুঁচকে । যেন তার ঘুম ভাঙিয়ে বিশাল বড় অপরাধী করে ফেলেছে সে।

সমুদ্র অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে, “তোমার সাথে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে। তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমালে আমার ঘুম হয় তাও। এখন নয়দিন তোমাকে ছাড়া আমি কীভাবে ঘুমাব? কীভাবে থাকবো বলো?”
কথার ধরণ এমন যেন তাকে কত ভালোবাসে। বাহিরের কেউ শুনলে ভাববে বউ পাগল। অথচ বউ -ই মনে করে না। ভালোবাসা তো দূরের কথা। এমন আহ্লাদী গলায় কথা শুনে মোহের মেজাজ বিগড়াল। সে আজ বুঝল। রাতে দুইটায় বাড়ি আসা ছেলে আজকাল নয়টায় এসে কীভাবে উপস্থিত হয়! তাকে কোলবালিশ ভেবে রেখেছে লোকটা?
রাগে ফুঁসে উঠে সে। তারপর ঠেলা দেবার চেষ্টা করলে সমুদ্র তাকে ধরে আবার ঘুমানোর ধান্দায় লেগে যায়। এজন্যই এমন আহ্লাদী কন্ঠ হয়েছিল তার।

মোহ এবার রেগেমেগে আগুনে গোলা হয়ে যায়। সমুদ্র থেকে ছাড় পেতে তার উন্মুক্ত ঘাড়ের দিকে চোখ যায় তার। বিশেষ করে গলার বামপাশের নিচ অংশে থাকা তিলের দিকে। এই তিলে চুমু খাবার ইচ্ছে তার হাজারোবার হয়েছে। হাজারোবার ইচ্ছে দাবিয়ে। আজও দাবালো। তবে চুমুর বদলে একটা জোরে কামড় বসাল সে অংশে।
সাথে সাথে সমুদ্র তাকে ছেড়ে হড়বড়িয়ে উঠে বসে। কামড় দেওয়া অংশে হাত রেখে বিরক্তি নিয়ে তাকায় মোহের দিকে, “এটা কী হলো?”
“সোজা আঙুলে ঘি না বের হলে আঙুল বাঁকাতেই হয়।”
সে ভেংচি কেটে উঠে গেল। তার খোঁপা করা চুল খুলে দিলো। যা ছড়িয়ে গেল তার পিঠ ভরে। আলমিরা থেকে জামা ও তোয়ালে নিয়ে গেল বাথরুমে।

মোহ গোসল করে বের হয়েও দেখল সমুদ্র এখনো বিছানায় শুয়ে মোবাইল টিপছে। সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিল। হঠাৎ সমুদ্র উঠে বসে প্রশ্ন করে, “একটা ছেলে ছিলো না যার সাথে তোমাকে মডেলিং এর জন্য বলেছিল। জাহানের ফ্রেন্ড।”
“তিসান ভাইয়ার কথা বলছেন?”
“জাহান থেকে ওর খোঁজ নিয়েছিলাম। মডেলিং করে না’কি! দেখতে সুন্দর আছে। ভালো ভার্সিটিতে পড়ে। আবার ফ্যামিলিগত ভালো ব্যবসা আছে।”
মোহ হাসে, “এত খোঁজ নিচ্ছিলেন কেন? ঘটকালি করবেন না’কি?”
” তাইতো ভাবছি।”
“কার ঘটকালি করবেন ভাইয়ার সাথে?”
“তোমার।”
উওরটা শুনে মোহের ঠোঁটের কোণে লাগা গাঢ় হাসি মিটে যায়। সে অবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকায় সমুদ্রের দিকে। সমুদ্র বলে, “ও তোমার দিকে গতকাল যেভাবে তাকিয়ে ছিলো, নিশ্চিত তোমাকে পছন্দ করে।”

মোহ দাঁতে দাঁত পিষল। নিজের বউয়ের সাথে অন্য পুরুষের কথা ভাবতেও তো তার ঘিন লাগা উচিত৷ না ভালোবাসুক, কিন্তু তার বিবাহিত স্ত্রী তো। নিজের অধিকার সম্পর্কেও কি অবগত না সে?

মোহ চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ফেলে। আবারও হাসল। রাগ উঠলো তার। এই লোককে আজ ছাড় দিবে না সে। বহুত দিয়েছে। লোকটা শুধরায় নি। এখন বুঝাবে এসব ভাবনার পরিণতি। সে যেয়ে বসলো সমুদ্রের সামনে। চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল৷, “আমি তো ব্যাপারটা ভাবিই নি। আর চারমাস পর যখন আমরা ডিভোর্স নিব তখন তো আমার জন্য নতুন কাওকে বিয়ের জন্য দরকার তাই না?”
“এক্সাক্টলি। এজন্য তিসানকে কালকে দেখছিলাম। তোমার ভালো লাগলে আরও খোঁজ নিব।”
“ছিঃ! আমি তাকে ভাইয়া ডেকেছি। আমি ভাইয়া ডাকলে মন থেকে তাকে ভাই মানি। ভাবতেও ঘিন লাগে।”
“আচ্ছা বলো তাহলে তোমার কেমন ছেলে লাগবে? আমি খুঁজবো তোমার জন্য।”

মোহ বিছানায় পা তুলে বসে। কোলে বালিশ নিয়ে, গালে হাত রেখে ভাবনার ভঙ্গিতে বসে। প্রথমদিকে শুরু করে যা সে সবসময় তার বাবাকে বলতো, “দেখতে যেমনই হোক চলবে, আমাদের থেকে আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো হবে না, শিক্ষিত হতে হবে…”
“ওয়েট আর্থিক অবস্থা ভালো হবে না? কেন?”
“সবাইকে এটা বুঝানো লাগে। দেখেন আমরা এভোব মিডেলক্লাস রাইট? আমাদের জীবনযাত্রার মান আলাদা। যারা বেশি বড়লোক তাদের জীবনযাত্রার মান আলাদা। এডজাস্ট করতে কষ্ট তো হবেই আর ঝামেলা হয় এসব বিয়েতে। এছাড়া আমি চাই আমার স্বামী কর্মঠ হোক। কর্মঠ পুরুষরা যেভাবেই হোক নিজের সংসার চালাবেই। আর সাফল্যের উঁচুতে থাকবে এমন একটা মানুষের থেকে একসাথে আমার স্বামীর সাথে তার ও আমার সাফল্যের সিঁড়িতে উঠাটা বেশি সুন্দর না?”
সমুদ্রের মুখখানা ছোট হয়ে যায়৷ সে চোখ নামিয়ে নেয়। কথাটা শুনে তার মুখের ভঙ্গি এমন পরিবর্তন হলো কেন মোহ বুঝল না। সে তো আসল কথাই এখনো বলতে শুধু করে নি। সমুদ্রকে সোজা করা বাক্যগুলো বলার পূর্বে কয়েকটা স্বাভাবিক কথা বলার প্রয়োজন ছিলো। তার মুখ ভোঁতা করার কথা তো সে এখন বলবে।

মোহ হাসল। তারপর কল্পনার জগতে হারানোর ভঙ্গিতে বলল, “আমার একজন স্বামী লাগবে যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে।”
“অফকোর্স।”
“আমার অনেক ভালো বন্ধু হবে।”
“যেকোনো সম্পর্কে তা প্রয়োজন।”
“আমার সাথে সূর্যোদয় দেখবে, হাজারো গল্প করবে, ফুল দিবে, আমার সাথে আইস্ক্রিম খাবে। আমরা হানিমুনে সাগরের জগতে নিয়ে যাবে। আমরা সকালে নামাজ পড়ে সে বিচে ঘুরতে যাবো, তার কাঁধে মাথা রেখে ঢেউয়ের গুঞ্জন শুনব, সাগরপাড়ে তার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে নাচবো।”
সমুদ্র তার কথা কেটে বলে, “এসব তো আমাদের করা জিনিস। এসবের জন্য তো আমিই আছি। নতুন কিছু বলো।”
“তখন তো আপনার জায়গায় অন্যকেউ থাকবে তাই না? তখন কি আর আপনার সাথে আমার দেখা হবে?”

কথাটায় সমুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু মুহূর্তের জন্য। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মোহের দিকে, “তুমি আমার সাথে আর দেখা করবে না?”
“কোন স্বামী নিজের এক্স-হাসবেন্ডের সাথে দেখা করতে দিবে বলুন?”

কথাটায় যেন বজ্রপাত এসে পড়লো সমুদ্রের মাথায়। সমুদ্রের এমন মুখ দেখে মোহের হাসিতে গড়াগড়ি খেতে মন চাইল। কিন্তু সে সামলায় নিজেকে। আরও বলে ভাবান্তর ভঙ্গিতে, “অবশ্য এটা ঠিক যে আপনার সাথে আমার এগুলো দৈনন্দিন রুটিন। কিন্তু আমার স্বামীর সাথে তো আরও যোগ হবে। যেমন আমি তার সাথে আহ্লাদী করে কথা বলতে পাড়বো, সে যখন অফিসে যাবে তার টাই বেঁধে দিব, যখন আমার কাছে থাকবে সারাক্ষণ তার বুকে মুখ লুকিয়ে রাখবো, সে আমাকে আদর করে দিবে, আমার ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে মাতাল হবে, সারাক্ষণ আমার চোখে চোখ ডুবিয়ে রাখবে, আমার খুশির জন্য সে সব করবে, মাঝেমধ্যে দুষ্টুমি করবে, টুপটাপ করে হঠাৎ চুমু খাবে। আরও কত কি!”

কথাটা শেষ হতেই আচমকা সমুদ্র তার হাত ধরে নেয়। মোহও তাকায় তার দিকে। এক ঢোক গিলে, “আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
সমুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ঘন ঘন নিশ্বাস তার। শ্যামলাবর্ণ কেমন লালচে হয়ে গেছে। সে বিছানায় হাঁটু গেড়ে বসে তার দিকে এগিয়ে বলল, “তোমার এসব প্রেমের উপন্যাস পড়া বন্ধ। এসব পড়ে পড়ে মাথায় গোবর ঢুকেছে। এসব কোন ধরনের কথা-বার্তা?”
“আজব তো এমন রেগে যাবার কী আছে? সব স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কই এমন। এখন আপনি অন্যকাওকে ভালোবাসেন কিন্তু অন্যকেউ তো আমাকে ভালোবাসবে। আমাকে আদর করবে, জড়িয়ে ধরবে, ছুঁবে, চুমু খাবে। এ-সব তো স্বাভাবিক।”
কথাটা বলে মোহ যেন আগুনে কেরাসিন ঢেলেছে। সমুদ্রের রাগ দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। হঠাৎ তার তেড়ে আসায় মোহ ভয়ে পিছাতে যেয়ে উল্টো পড়ে যায় বিছানায়। উঠতে যেয়ে দেখে সমুদ্র ঠিক তার উপরে একহাত দিয়ে ভর দিয়ে আছে। সে ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলল। সে কী বেশি বেশি ফেলেছে? সমুদ্র এমন করছে কেন?
সে আমতা-আমতা করে জিজ্ঞেস করে, “আপনি এমন করছেন কেন? আমি তো যাস্ট আমার ফিউচার হাসবেন্ডের….”
“আমি তোমার হাসবেন্ড ননসেন্স।”
মোহ তার কথা শুনে তার দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অর্থাৎ তার ডোস আসলে কাজে দিয়েছে। একটু বেশিই দিয়েছে কী? যতই না ভালোবাসুক, নিজের অধিকার অন্যকেউ নিবে এটা কোনো মানুষ সহ্য করতে পাড়ে না। লোকটা মুখে যত বলুক অন্যকারো সাথে বিয়ে দিবে। বিয়ের পর তার সব অধিকারের সাথে যে সম্পূর্ণ মোহকেও সে হারাবে এই অনুভূতিটা এতক্ষণ সমুদ্রের ছিলোই না।

মোহ তার রাগ দেখে প্রথমে ভয় পেলেও এই প্রতিক্রিয়া দেখে তার হাসি পায় এবার। সে সমুদ্রের রাগ শান্ত করবার স্থানে উলটো ক্ষেপায় তাকে,”ওটা তো আর চারমাসের জন্য। ভাববেন আমরা রুমমেইট। আর শুনেন জড়িয়ে ধরবেন না তো আমাকে। আমার ভবিষ্যতের হাসবেন্ড জানলে কষ্ট পাবে কি-না! আমাকে তো কেবল সে এভাবে বুকে ভরে রাখতে পাড়বে। এখন দূরে সরেন, আমাকে শুধু সে-ই ছুঁতে পাড়বে আর চুমু খেতেও।”
সমুদ্র আচমকা তার মুখ একদম কাছে নিয়ে আসে, “চুমু খাওয়ার অনেক শখ জেগেছে তোমার?”

মোহ উওর দেবার অবস্থাতেও নেই। সে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে সে। এক ঢোক গিলে মৃদুস্বরে বলে, “আপনিই তো বিয়ের কথা বলছিলেন।”
“তাই বলে তুমি আমাকে তোমার জীবন থেকে মুছে ফেলার কথা কীভাবে ভাবতে পাড়লে মধু? এই দেড় মাসের প্রতিটা দিন আমরা একসাথে কাটিয়েছি। তোমার জন্য কী আমাকে তোমার জীবন থেকে মুছে ফেলা এতই সহজ?”
মোহ এবার গলা ভারী করল, “আপনি আমার কে হন যে মুছতে পাড়বো না?”
প্রশ্নটায় হতবাক হয়ে যায় সমুদ্র। সে তেজি গলায় উওর দেয়, “আমি কে হই তুমি জানো না?”
“না।” মোহ তার চোখে চোখ রাখে।
“আমি তোমার হাসবেন্ড হই ড্যামইট।” বলে সে বিছানায় ঘুষি মারে।
কিন্তু মোহ চোখের পলকও ফালায় না। উলটো রসিকতার ভঙ্গিতে বলে, “সত্যি? আপনার তা মনে আছে? কোন স্বামী নিজের বউকে অন্যকারো হতে বলে। আর বললে এটাও বুঝে রাখেন, আপনাকে যেদিন আমি ছেড়ে যাব সেদিন আমার উপর আপনার কোনো অধিকার থাকবে না। আপনার সব অধিকার অন্যকারো হয়ে যাবে। সম্পর্ক শেষ হলে অধিকার থাকে না। এখন সরুন।”

মোহ সমুদ্রের কাঁধে হাত রেখে তাকে সরাতে চায়। কিন্তু মোটেও পাড়ে না। উল্টো সমুদ্র তার ভার ছেড়ে দেয় মোহের উপর। তার কোমরে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে বলে, “মধু জানো, ঈশা ও লামিনের সাথে আমার বন্ধুত্ব চৌদ্দ বছরের হবে। অথবা এর থেকেও বেশি। ওদের সাথে আমি মাসখানিক কথা না বলে থাকতে পাড়ব কিন্তু আমার এই মুহূর্তে মনে হলো তোমার সাথে একদিন কথা না বলে আমি থাকতে পাড়ব না। তুমি এই কয়েকদিনে আমার জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলে কীভাবে মধু?”

ঘাড়ে সমুদ্রের উষ্ণ নিশ্বাসের ছোঁয়া মোহের শিরায় শিরায় কাঁপিয়ে তুলল। সমুদ্রের এই গভীর ছোঁয়ার কল্পনাও সে করে নি। সে আলতো করে হাত ডুবাল সমুদ্রের চুলে। বলল, “মধু ডাকতে ডাকতে আমার আসল নাম ভুলে গেছেন? আপনাকে মোহমায়ায় জড়িয়ে নিয়েছি আমি।” বলে হাসে সে নিজে নিজে। তারপর আবার বলে, “আসলে বিয়ের বন্ধনটাই এমন। অচেনা একটা মানুষের মায়ায় নিজ অজান্তেই জড়িয়ে যায়।”
“আমার মায়ায় জড়িয়েছ?”
“কী মনে হয়?”
“আচ্ছা অন্যকারো সাথে বিয়ে হলেও কী তার জন্য এমন মায়া হতো তোমার?”
“হয়তো। হয়তো আরও কম। হয়তো আরও বেশি।”
উওর শুনে সমুদ্র একবারের জন্য মুখ তুলে তাকায় মোহের দিকে, ” হয়তো বেশি?”
তার অপছন্দটা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলো সে। ছোট একটা কামড় দিলো মোহের গলার ভাঁজে।
ব্যাথায় ও আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো মোহ। তার দম আটকে আসে। সমুদ্র তাকে ছেড়ে বলে, “আমাকে গলায় কামড়ের দাগ বসিয়ে দিয়েছ। আমি তো ব্যাথাও দেই নি।”
মোহ ধীর স্বরে বলে, “সমুদ্র…প্লিজ।”

সমুদ্র মুখ তুলে একবার দেখল মোহের দিকে। সে বন্ধ চোখ, লালচে হওয়া মুখ দেখে সে থমকে গেল। তার এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয় নি সে বেশি করে ফেলেছে। কিন্তু সে করে ফেলেছে। এই প্রথম মোহকে জড়িয়ে ধরায় সে নিজেই লজ্জা পেল তার মুখ দেখে। সে সাথে সাথে উঠে বসল। নিজের ঘাড়ে হাত বুলিয়ে চুরি করে তাকায় মোহের দিকে। মোহও উঠে বসেছে কিন্তু তার দিকে তাকায় নি। তার দৃষ্টি নিচে। ঠোঁট কাঁপছে, আঙুল দিয়ে খেলছে সে। সমুদ্র দ্রুত সেখান থেকে উঠে গেল। বারান্দায় যাবার সময় মোহ মৃদুস্বরে বলল, “আজকে আমি মহুয়াদের বাসায় যাব ভার্সিটি থেকেই।”
“আমিও বাসায় চলে যাব।”
মোহ মাথা নাড়ায়। সে আড়চোখে তাকায় সমুদ্রের দিকে, “তাহলে আজ আপনার ঘুম আসবে?”
সমুদ্র আবার লজ্জা পেয়ে যায়। সে পকেট থেকে সিগারেট বের করে যায় বারান্দায়।

মোহ ঠোঁট টিপে হাসে। তার গলায় সমুদ্রের কামড় দেওয়া অংশে হাত রেখে আবার শুয়ে পড়ে। মুচকি হাসে। আবার নিজেই লজ্জা পেয়ে বালিশ দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়।
.
.
কাজের সময়টা যেন দ্রুত বেশি দৌড়ায়। মুরাদের সাথে নওশিন ও মৃণা এসেছে। মৃণা আসতে না চাইলেও মুরাদের অর্ডার সে মানা করতে পাড়ে না। তারা এসেছে প্রধানত এডের থিম, বাজেট ও কতটুকু ড্রিসটিবিউট হবে তা সিদ্ধান্ত নেবার জন্য। মিটিংরুমে আইডিয়াগুলা প্রেজেন্ট করছিল নওশিন। মুরাদরা যখন কোম্পানি শুরু করে তখন থেকেই নওশিন মুরাদের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। তখন সে ভার্সিটিতে পড়তো এখন কোম্পানির বেস্ট ইমপ্লয়ী। একদম কম্পিউটারের মতো নিখুঁত কাজ। কাজ থাকলে তার দিন দুনিয়ার খবর থাকে না আর। এত পছন্দ তার কাজ করা। এখনো কেমন কম্পিউটারের মতো কথা বলে যাচ্ছে। মৃণা তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার থেকে এইকয়দিনেই অনেককিছু শিখতে পেড়েছে মৃণা। আরও শিখতে চায়। কিন্তু তার মনে হলো মিটিংরুমে একজোড়া দৃষ্টি তাকে ছাড়ছে না। সে তাকাল তন্ময়ের দিকে। চোখে চোখ পড়লে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

মিটিং শেষে একটা আইডিয়া ভীষণ পছন্দ হলো ইশরাত ও তার স্বামীর। তারা সেটা ফাইনাল করলো। মুরাদের কোম্পানির কাজে তারা সন্তুষ্ট। তারা জানে মুরাদরা সব কাজ পার্ফেক্ট করবে তার চিন্তা হচ্ছে তার বোনকে নিয়ে৷ উল্টাপাল্টা কি না বললে বা করলেই হলো।

মিটিং শেষে ইশরাত উঠে হ্যান্ডশেক করে মুরাদের সাথে। বলে, “আমরা আপনাদের কাজের সাথে অনেক খুশি। আশা করি জলদি কাজ শেষ হবে। রাত হয়ে গেছে। ডিনার করে গেলে আমার ভালো লাগবে।”
“নো থ্যাঙ্কিউ। এখনো এতরাতও হয় নি। এছাড়া… ” মৃণার দিকে ইশারা করে বলল, “ম্যামকে আমানত হিসেবে নিয়ে এসেছি৷ আমার দুই বোন উনার অপেক্ষা করছে বাসায়। আরেকটু দেরি হলে আমার খবর আছে।”
মৃণা লজ্জা পেয়ে যায় তার কথায়। ক্লায়েন্টের সামনে একটা বাহানা দিলেই তো হতো।

তন্ময় হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, “মৃণা আপনার সাথে আপনার বাসায় যাবে?” তার কন্ঠে বিরক্ত, চোখ জিগাস্যুক।
“কেন কোনো সমস্যা?” মুরাদ কেমন কৌতুকি হাসি দেয়।
কপাল কুঁচকায় মৃণা। এখানে তাকে নিয়ে এত কথা উঠছে কেন?
নওশিন বলে, “মুরাদ স্যার আপনারা যান। আমি ম্যামকে তার পছন্দ হওয়া আইডিয়া আবার শুনাব আর বুঝাব।”
ইশরাত অবাক হয়, “আমি তো বুঝেছি।”
“আপনাকে আবারও বুঝাব। যেন পড়ে কোনো সমস্যা না আসে। যা চেঞ্জ করতে চান চেঞ্জ করবেন।”
মুরাদ হাসে, “নওশিনের আবার কাজ পার্ফেক্ট না হলে নিশ্বাস আসে না। ও তাহলে আপনার সাথে থাকুক। আপনি আপনার পছন্দ অপছন্দ ওকে জানিয়েন।”
“ওকে।”

মুরাদ মৃণাকে নিয়ে চলে যায়। নিচে গাড়ি পর্যন্ত যেয়েই নওশিনের কল আসে তার কাছে। জানাল সে মিটিংরুমে প্রয়োজনীয় কিন্তু ভুলে গেছে। মৃণা দেখল তার মোবাইল ও সিডিউলের ডায়েরি দুটোই ওর কাছে। তাহলে কী ভুলে আসলো?

মৃণা মুরাদকে বলল, “নওশিন আপু কল করেছিল। উপরে যেতে হবে একটু। আমি একটু আসছি।”
“আমি তাহলে বাহিরে গাড়ি বের করছি। সেখানেই আসিস।”
মাথা নাড়ায় মৃণা। গ্যারেজ থেকে রওনা দিয়ে আবার ভেতরে যায় অফিসের। মিটিংরুমের সামনে যেয়ে দরজা খুলে। ভেতরে ঢুকতেই তার হাতের ব্যাগটা নিচে পড়ে যায় বিস্ময়ে। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে। সে শব্দে তন্ময় বুশরাকে ছেড়ে তাকায় দরজার দিকে। সাথে সাথে তার গলা জড়িয়ে থাকা হাত দুটোকে সরিয়ে দিলো। তাকে কোল থেকে উঠানোর চেষ্টা করল। প্রথম কয়বার মুখ খুললেও কথা বের হলো না। অবশেষে বহু কষ্টে বলল, “তুমি যেটা ভাবছিলে তেমন কিছু না।”
বুশরা হেসে তার গালে হাত রেখে বলল, “এত ডিফেন্ড করার কী আছে জান? আমরা রিলেশনে আছি। একটু কিস করা তো স্বাভাবিকই তাই না?”
আবার মৃণার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এখানে কেন?”
“আমি? আমি এখানে….” মৃণার সে মুহূর্তে কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছিল। যতই সে বলুক, সে মুভ অন করার চেষ্টা করছে কিন্তু এত বছরের অনুভূতি তাকে চরম পরিমাণে গ্রাস করেছে৷ সে অনুভূতি জল হয়ে তার অজান্তেই বয়ে পড়ল। সে বহু কষ্টে বলল, “নওশিন আপু বলেছি এখানে কিছু ভুলে গেছি।”
“এখানে কিছুই নেই। এখন আমাদের ডিস্টার্ব না করে যাও।”
মৃণা হাঁটু গেড়ে বসে কাঁপানো হাতে তুলল তার ব্যাগ ও ফোন। সে একপলক তাদের দিকে তাকিয়ে অরায় দৌড়ে বের হলো।

সে যেতেই তন্ময় বুশরাকে সরাতে চায় শক্তি দিয়ে। তা দেখে বুশরা ক্ষেপে যায়, “তুমি এমন রিয়েক্ট করছ কেন? ”
তন্ময় রাগান্বিত স্বরে বলে, “ও কান্না করছে।”
“তো? আমি ওকে এই দৃশ্য দেখানোর জন্যই এখানে আনিয়েছি।”
তন্ময় এই কথায় প্রথমবার রেগে যায় তার উপর । ধাক্কা দিয়ে সরায় বুশরাকে। আর উঁচু স্বরে বলে, “হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কী করে এমন বাজে কাজ করার? তোমার জন্য ও আমার সাথে কথাও বলে না। এরপর তো আমার চেহেরাও দেখতে চাইবে না।”
বুশরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক দৃষ্টিতে। তন্ময় এই প্রথম তার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলছে। তার রাগ উঠলো। সে আরও দ্বিগুণ গলায় বলল, “আমি তো তোমার হেল্প করছিলাম ড্যাম ইট। তুমি আমাকে বলো নি ও তোমার পিছনে পড়ে আছে কতবছর ধরে। তোমাকে বিরক্ত করছে। তাহলে তোমার সাথে কথা না বললে তোমার খুশি হওয়া উচিত তাই না?” সে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় তন্ময়ের দিকে, “তুমি আমাকে কী মিথ্যা বলেছ?”

তন্ময় তারদিকে তাকিয়ে আবার দরজার দিকে তাকায়। তারপর বলে, “তোমার সাথে আমি পড়ে কথা বলছি।”
বলে সে দৌড়ে গেল মৃণার পিছনে।

মুরাদ দাঁড়িয়ে ছিলো গাড়িতে হেলান দিয়ে। সে দেখল মৃণা আসছে। তবে তাকে স্বাভাবিক দেখাল না। সে বারবার হাত দিয়ে গাল মুছছে। দৌড়ে আসছে।

মৃণা তার সামনে আসলে দেখে সে কাঁদছে। তার মাথা নিচু থাকলেও তা স্পষ্ট বুঝা যায়। সে মুরাদের সামনে এসে দাঁড়ায়, মাথা উঁচু করে না। বলে, “ভাইয়া চলেন।”
মুরাদ তাকে থামায়। থুতনিতে হাত রেখে তার মুখ উঁচু করে। তার চোখের পানি স্পষ্ট দেখে রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। সে দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “কেউ তোকে কিছু বলেছে।”
মৃণা ডানে বামে মাথা নাড়ায়। বলে নি।
“তাহলে কাঁদছিস কেন?”
মৃণা উওর না দিলে মুরাদ এবার জোর গলায় জিজ্ঞেস করে, “কাঁদছিস কেন বলবি না আমি ভেতরে যেয়ে খোঁজ নিব। তুই বলবি না তাইতো?”
মুরাদ যেয়ে চাইলে মৃণা তার হাত ধরে। আরও বেশি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে, “আমি ওকে মনে করতে চাই না মুরাদ ভাই। প্রতি মুহূর্ত নিজেকে মনে করাই তন্ময় আমার না, অন্যকারো। আমি সত্যিই ভেবেছিলাম আমি ওর ভালোবাসা পিছনে ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছি। অথচ আজ… এই মুহূর্তে ওকে বুশরা আপুর সাথে দেখে আমার বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠেছে। স্বাভাবিক তারা সম্পর্কে আছে। কিস করতেই পাড়ে। কিন্তু আমি তা মানতে পাড়ছি না কেন মুরাদ ভাই? আমার কেন কষ্ট হচ্ছে? আমি কান্না করতে চাই না। কিন্তু আমার চোখ দিয়ে বারবার জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি এখন আর ওকে ভালোবাসতে চাই না। আমি আর কারো জন্য কাঁদতে চাই না। আমি কী করব মুরাদ ভাই আমি কী করব?”

মুরাদ তার কথা শুনে ধ্যান সহকারে। সে মৃণার কাঁধের পিছন দিক দিয়ে দেখতে পায় তন্ময় তাদের দিকে দৌড়ে আসছে। তার দৃষ্টি সরু হয়। ক্ষুব্ধ হয়। সে একবার ভাবে আজ এই ছেলেকে আধমরা করবে। সে তার ভালোবাসার দাবি ছেড়েছিল তার ময়নার খুশির জন্য। ময়নার খুশি ছিলো এই ছেলের মধ্যে। অথচ এই ছেলেটা তাকে চোখের জল ছাড়া কিছু দিয়েছে? এখন কান্না করিয়ে আবার কেন আসছে? আবারও তার চোখের জলের কারণ হতে শতদিনের জন্য? অসম্ভব! সে থাকতে ব্যাপারটা অসম্ভব।

মুরাদ একবার হাত মুঠো করে তাকে মারার জন্য। সামনে এগোতে নেয় মৃণাকে ছেড়ে। হঠাৎ তার মাথায় অন্যকিছু আসে। সে ঘুরে আবারও মৃণার কাঁধ ধরে। আচমকা তাঁকে ঘুরিয়ে গাড়ির সাথে তার পিঠ ঠেকায়। এক হাত রাখে তার কাঁধের পাশে, গাড়িতে। অন্য হাত তার গালে রেখে মৃদুস্বরে বলে, “তাহলে আমাকে ভালোবাসবি আজ থেকে।” তারপর তার দিকে ঝুঁকে একদম কাছে এসে পড়ে।

তন্ময় দৌড়ে আসতে যেয়ে থেমে যায়। সামনের দৃশ্যটা দেখে সে থমকে দাঁড়ায়। তার পা যেন জমে গেছে বরফের মাঝে। তাইতো প্রাণপণ চেষ্টা করেও নড়তে পাড়ে না৷ তার মনে হলো কেউ তার হৃদয়ের ভেতরে ঢুকে সবচেয়ে মূল্যবান ও অবহেলিত রত্ন চুরি করে নিয়েছে। কেননা সে সবসময়ই জানতো এই রত্নটিকে যতই অবহেলা করুক সে, অবশেষে রত্নটি কেবল তার কাছেই থাকবে। কিন্তু আজ তার চোখের সামনে অন্যকেউ সে রত্নটিকে গভীরভাবে ছুঁয়ে দিয়েছে তা সে কল্পনাও করে নি। সে নিজের বুকের বাঁ পাশে হাত রাখে। আচ্ছা মৃণারও কি তাকে ও বুশরাকে চুমু খেতে দেখে এতই কষ্ট হয়েছিল যতটা তার এই মুহূর্তে মুরাদের সাথে মৃণাকে দেখে হচ্ছে।
প্রতিশোধ নিচ্ছে তার কাছে মৃণা? তাকে কষ্ট দেবার জন্য অন্য পুরুষকে চুমু খাচ্ছে? কেবল তার থেকে প্রতিশোধের জন্য?

মৃণা বুঝে উঠার সময়ও পায় না। মুরাদ আচমকা তাকে ধরে ঘুরিয়ে গাড়ির দিকে তার পিঠ ঘুরাল। তার গালে হাত রেখে মৃদুস্বরে কিছু একটা বলল। যা সঠিক শুনল বলে তার মনে হলো না। সে কথা বুঝে উঠার পূর্বেই সে ঝুঁকে কাছে এলো। তার ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে তার ঠোঁট আঙুলের অপরপাশে লাগল। তবুও খানিকটা ছোঁয়া পেল সে নরম ঠোঁটের। এক মুহূর্তের। সে ছোঁয়াতে তার দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কেঁপে উঠে। তার মস্তিষ্ক স্তব্ধ হয়ে যায়। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিয়ে তাকায় মুরাদের দিকে। তার চোখদুটো বড় বড় হয়ে যায়।

মুরাদ যখন তাকে ছেড়ে সোজা দাঁড়ায় তখনও মৃণা চোখ বড়বড় করে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। মুরাদ তার গালে বুড়ো আঙুল আলতো করে বুলিয়ে বলে, “তুই তন্ময়কে কিস করতে দেখে কষ্ট পেয়েছিলি। তোর দ্বারা ওঁকেও কষ্ট পাওয়ার সুযোগ করে দিলাম।’
মৃণা তার কথা শুনে তার দিক থেকে নিজের বিস্মিত দৃষ্টি সরায় আর দেখতে পায় তন্ময়কে দাঁড়িয়ে থাকতে একস্থানে। স্তব্ধ হয়ে।

তবুও এই মুহূর্তে মৃণার সেদিকে ধ্যান গেল না। সে আবারও তাকাল মুরাদের দিকে। এই মুহূর্তে মুরাদের কাছে আসার সে মুহূর্ত বাদে তার মস্তিষ্কে আর কিছুই আসছে না। তার সম্পূর্ণ ব্রেন ব্লাঙ্ক হয়ে গেছে। মুরাদকে সে চিনে ছোট থেকে। মহুয়ার বড় ভাই। সেই সুবাদে মৃণাও তাকে ভাইয়া ডাকতো। মুরাদ তাকে সবসময় বকাতে রাখলেও সে জানে মুরাদ সবসময়ই তার ভালো চায়। কিন্তু এই ভালো চাওয়া থেকে মুরাদ তার এত কাছে আসবে, তার প্রথম কিস তার নামে করবে এই কথা সে এই জীবনে কল্পনাও করে নি। মুরাদকে সে কখনো অন্য নজরে দেখেই নি।

তার ভাবনার ছেদ পড়ে মুরাদের কন্ঠে, “গাড়ীতে উঠে বস। ওই ছেলের দিকে তাকাবিও না।”
মুরাদ গাড়ির অন্যপাশে যেয়ে দরজা খুলে বলে। কিন্তু মৃণার তো সেদিকে ধ্যানই নেই। সে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে সে আঙুল দেখে ধ্যান সহকারে। এক মুহূর্তের জন্যও মুরাদের ঠোঁটের ছোঁয়া তার ঠোঁটে লেগেছে তা ভাবতেও কেমন গা শিউরে ওঠে তার।
এমন সময় আবারও মুরাদের কন্ঠ শোনা যায়, “কী বলেছি কানে যায় নি তোর?”
সে তার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয় ভেতর থেকে।

মৃণা এবার গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু মুরাদের দিকে তাকানোর সাহস পায় না। তার চোখে বারবার ভাসছে খানিক সময়ে আগের দৃশ্যটা । মুরাদের এত কাছে আসাটা। যেতোটা কাছে আজ পর্যন্ত তন্ময়ও আসে নি তার। অন্যকোনো পুরুষ আসে নি। সে আজ পর্যন্ত ভাবে নি যে মুরাদের পাশে তার এতটা অস্বস্তি লাগবে, সংযত থাকা লাগবে, লজ্জা লাগবে, নিশ্বাস আটকে আসবে তার।
সে আড়চোখে একবার মুরাদের দিকে তাকাতেই চোখ বন্ধ করে নেয়। সাথে সাথে আবারও আগের ঘটনাটা তার চোখে ভাসে।

সারারাস্তা তারা চুপ থাকে। এক গভীর নীরবতা স্থির করে দু’জনের মাঝে। কিন্তু তাদের বাসার গলি কাছে এসে পড়েছিল। মৃণা আর চুপ থাকতে পাড়ল না। সে জিজ্ঞেস করেই নিলো, “আপনি এমন কেন করলেন মুরাদ ভাই?”
“কেমন?”
“ওই যে…ওই…”
“বল।”
“আপনি জানেন আমি কি জিজ্ঞেস করছি। এটা উচিত হয় নি। তন্ময়কে দেখানোর জন্য হলেও। আমাদের সম্পর্ক তো ভিন্ন। আমি আপনাকে আর ওভাবে দেখতে পাড়ব না।”
বাড়ির একটু সামনে মুরাদ আচমকা গাড়ি থামায়। নিজের সিটবেল্ট খুলে তাকায় মৃণার দিকে। তার সিটের একপাশে হাত রেখে মৃণার দিকে ঝুঁকে আসে। সে বলে, “তাহলে আজ থেকে অন্যভাবে দেখ।”
মুরাদের চোখের দিকে এর আগে ধ্যান যায় নি মৃণার। তার তাকানো আজ কেমন, অন্যরকম। যেন তাকে চাইছে। যা দেখে মৃণার নিশ্বাস আটকে এলো। না, এমনটা অসম্ভব। মুরাদ মহুয়ার ভাই। একজন সুদর্শন পুরুষ, সফল ব্যবসায়ী। মুরাদ তাকে পছন্দ করা তো দূর, তার প্রতি আকর্ষণ হবে এটা কল্পনা করাও তার চরম বোকামি হবে। তাদের মধ্যে প্রতিটা দিক থেকে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

চলবে…

মেঘের খামে…
পর্ব ৩৫
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“তাহলে আজ থেকে অন্যভাবে দেখ।”
মুরাদের চোখের দিকে এর আগে ধ্যান যায় নি মৃণার। তার তাকানো আজ কেমন, অন্যরকম। যেন তাকে চাইছে। যা দেখে মৃণার নিশ্বাস আটকে এলো। না, এমনটা অসম্ভব। মুরাদ মহুয়ার ভাই। একজন সুদর্শন পুরুষ, সফল ব্যবসায়ী। মুরাদ তাকে পছন্দ করা তো দূর, তার প্রতি আকর্ষণ হবে এটা কল্পনা করাও তার চরম বোকামি হবে। তাদের মধ্যে প্রতিটা দিক থেকে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

মৃণা এক ঢোক গিলে আমতা-আমতা করে বলে, “আমি সে মুহূর্তটা স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাব মুরাদ ভাই। আমি জানি আপনি আমার সাহায্য করতে চেয়েছেন। আমার কান্না দেখে করেছেন। কিন্তু আপনার দয়া আমার আর প্রয়োজন নেই।” বলে সে সিটবেল্ট খুলে যেতে নিলে মুরাদ তার হাত ধরে নেয়।
মৃণা অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। মুরাদ জিজ্ঞেস করে, “আমি তোকে চুমু…না টেকনেকালি চুমু খাওয়া হয় নি। কিন্তু আরেকবার এই দয়া শব্দটা তোর মুখে আনলে নেক্সটটাইম চুমু খাওয়ার সময় আর মাঝখানে আঙুল থাকবে না। তখন বুঝবি আমি তোর উপর দয়া করছিলাম না অন্যকিছু। তুই কিছুই বুঝিস না? মানুষ এতই বোকা হয়? আমি তোর উপর দয়া দেখিয়ে না, তোর চোখে অন্য ছেলের জন্য জল দেখে জ্বেলাসিতে এই কাজ করেছি।”
মুরাদের কথা শুনে মৃণার চোখ বড় হয়ে যায়। তার মাথায় কথাটা ঢুকল ঠিকই কিন্তু সে মানতে চাইল না। সে হাত মোচড়িয়ে বলল, “মুরাদ ভাই আপনি উল্টাপাল্টা বকছেন। আপনার কী জ্বর এসেছে?”
মুরাদ মৃদুস্বরে বলে, “তখন কী বলেছিলাম শুনিস নি?”

মৃণার মনে পড়ে। মুরাদ বলেছিল, “তাহলে আমাকে ভালোবাসবি আজ থেকে।”
সে বড় বড় চোখে তাকায় মুরাদের দিকে। মুরাদ তাকে ভালোবাসে? অসম্ভব। এমনটা হওয়া সম্ভবই নয়। তাদের মাঝে কোনো দিক থেকে মিল নেই। না সৌন্দর্যে, না অর্থে আর না সাফল্যে। তার তো কোনো পরিবারই নেই। সে কীভাবে মুরাদকে ভালোবাসবে? মহুয়া কী ভাববে? মহুয়ার বাবা মা কী ভাববে তাকে নিয়ে? তার এই একটা পরিবারও সে হারাতে পাড়ে না।

সে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মুরাদের দিকে তাকিয়ে তার হাত দিয়ে মুরাদের হাত ছাড়ায়। তারপর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তার দিকে পালায় সেখান থেকে।

মৃণা এক দৌড়ে আসে বাসার ভেতরে। দরজার সামনে এসে থামে। কলিংবেল দিলে মহুয়ার মা এসে দরজা খুলে। বলে, “অবশেষে আসার সময় পেলি? তোর কথা ছিলো না শুক্রবার ও শনিবার এখানে থাকার?”
“জিনিসপত্র গুছানোর কাজ ছিলো আন্টি। আপনার শরীর ভালো?”
“শরীর ভালো। মন ভালো না। তোর অভ্যাস হয়ে গেছে। ঘরে অন্যকেউ তো সময় নিয়ে কথাও বলে না আমার সাথে। আচ্ছা তুই এখন ছাদে যা, মহুয়া যদি জানে তোকে আটকে রেখেছি, অকারণে চিল্লাবে। মোহও অপেক্ষা করছে। কিন্তু এই শুক্রবার সম্পূর্ণ আমার সাথে কাটাবি ঠিক আছে?”
মৃণা মাথা নাড়ায়। তার সে যায় ছাদে। যেয়েই দেখে মোহ আর মহুয়া সেখানে নতুন ঘর বাঁধার পরিকল্পনা করছে। চাদর বিছিয়ে বালিশ, ল্যাপটপ নিয়ে শুয়ে মুভি দেখছে। পাশে আছে চিপ্স, কোক, কাপ নুডুলস, চকোলেট আর একটা কেকও এনেছে তারা।

সে এগিয়ে যেয়ে তাদের পাশে বসে। জিজ্ঞাসা করে, “তোরা কী এখানেই ঘর বাঁধার প্লানিং করছিস না’কি?”
মোহ তাকে দেখে উঠে বসে, “আজ রাতে এখানেই ঘুমাব। আর আকাশ দেখবো।”
“সাথে ড্রামাও। একমাস হয়ে গেল আমরা এত সময় কাটাই না একসাথে। তুই অফিসে ব্যস্ত হয়ে গেলি আর মোহ বিয়েতে। আর আমি…ওহ আমি তো সারাক্ষণ আজাইরাই থাকি।” মহুয়া বলে।
মোহ মৃণার কাঁধে হাত রেখে বলে, “মৃণু তোর মনে হয় না আজকাল আমাদের মহু তার স্বভাবের বিরোধে যেয়ে মাঝেমধ্যে লজ্জা পায়?”
“তুইও খেয়াল করেছিস? আমি তো গতকাল ক্যাফেতে দেখে ভেবেছি আমি স্বপ্ন দেখছি।”
“আজ তুই তো জলদি অফিসে রওনা দিয়েছিলি। তারপর কি হয়েছে জানিস? ভার্সিটি থেকে আসার সময় জাহান জিজুর সাথে দেখা হয়েছিল। সে বেলির মালা দিয়েছিল দুইটা। আচ্ছা মৃণু কারো তো ফুল একদমই পছন্দ ছিলো না। কেউ তাকে ফুল দিলে তোকে বা আমাকে দিয়ে দিতো। তাহলে আজ এতঘন্টা পরও পড়ে আছে কেন?”
বলে মোহ তার হাতের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। মৃণাও তার হাতের দিকে তাকায়। মহুয়া এবার উঠে বসে। বিরক্তি নিয়ে বলে, “তোরা কি শুরু করেছিস? মালা অকারণে ফেলে দিলে নষ্ট হবে একারণে… ”
মোহ সাথে সাথে হাত ধরে নেয়, “তাহলে দে। আমি একটা নিব আর আর মৃণা একটা।”
মহুয়া সাথে সাথে সে হাত পিছিয়ে তার পিঠের দিকে নিয়ে যায়।
মোহ আর মৃণা দুইজনে একসাথে হেসে দেয়।
মহুয়া বিরক্ত হয়ে বলে, “মজা করিস না-তো।”

মহুয়া এবার ধরে মোহকে। মোহ মজা নিতে এসেছিল তার সাথে তাহলে সে কী ছেড়ে দিবে না’কি!
সে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে তাকায় মোহের দিকে। মোহ তার হাসি দেখেই এর পিছনের মতলব বুঝে যায়।
মহুয়া বলে, “আচ্ছা বেইবি আমার ভাগ্না বা ভাগ্নি আসবে কবে তা বলো।”
তার কথা শুনে তো মোহের মুখ লাল হয়ে যায়। সে তার কাশিও উঠে যায়। সে তাকাতেও পাড়ে না আর মহুয়ার দিকে। যা দেখে তো বেশ মজা পায় মহুয়া। সে উঠে এসে ঘেঁষে বসে মোহের পাশে। বলে, “ওহ হো লাল টমেটো হয়ে গেছিস দেখছি। ভাইয়ার আদরের কথা মনে পড়ে গেছে না’কি?”
মোহের তখন অনুভূতি হয় সমুদ্র কীভাবে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ছিল। তার সম্পূর্ণ শরীর কেঁপে উঠে সে অনুভূতিতে। তবে সে নিজেকে সংযত করে মুহূর্তেই। বলে, “উনার সাথে আর প্রেম। বদমাইশ লোকটা কী বলে জানিস? গতকাল তিসান ভাইয়াকে না’কি আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে। তার আমার জন্য তিসান ভাইয়াকে ভালো লেগেছে। এসব কোনো স্বামী বলে? আর তিসান ভাইয়া আমার দিকে একটানা কেন তাকিয়ে থাকবে আজব!”
মহুয়া তার কথায় জোরপূর্বক হাসে। তারপর মাথা চুলকে বলে, “ওহ তোকে বলা হয় নি। তিসান তোকে পছন্দ করতো। তোর বিয়ে যেদিন হয় আমার সাথেই ছিলো। তোর বিয়ের খবর শুনে দেবদাস হয়ে গিয়েছিল একদম।”
“আমাকে পছন্দ করতো? কবে থেকে?” মোহ অবাক হয়।

মৃণা তাদের কথার মাঝে বলে, “এটা তো গুরুত্বপূর্ণ না।” মৃণা আবার তাকায় মোহের দিকে। সে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “সমুদ্র ভাইয়া তোর জন্য তিসান ভাইয়াকে পছন্দ করেছে? এর মানে কী?”
“হয়েছে কি…”
“তুই কী এই সম্পর্কে খুশি মোহ?” মৃণার এমন গম্ভীর কন্ঠ শুনে মোহ আর মহুয়া অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। তার কন্ঠে কিছুটা রাগও বিদ্যমান। এত বছরে তারা মৃণার কন্ঠ এক মুহূর্তের জন্যও এমন রাগ অনুভব করেনি। তার সৎ মা’য়ের এত অত্যাচার বা তন্ময়ের অবহেলার বেলাতেও না।
মোহ অবাক সুরে জিজ্ঞেস করে, “সব ঠিক আছে তো মৃণু?”
“আমার তো এটা তোর কাছে প্রশ্ন। সব ঠিক আছে? দেখ মোহ, এখনো সময় আছে। যে সম্পর্কে ভিত্তি নেই সে সম্পর্ক এগোনোর আগেই পিছিয়ে যা।”
মহুয়া রেগে উঠে তার কথায়, “তোর মাথা ঠিক আছে? কী আজেবাজে বকছিস?”
“আমি ঠিকই বলছি। সমুদ্র ভাইয়া ভালো মানুষ হতে পাড়ে, কিন্তু ভালো স্বামী হতে পাড়ে কি-না জানি না।”
“তুই ভাইয়াকে না চিনে এই কথা কীভাবে বলতে পাড়িস?”
“কারণ আমি এই কষ্ট ভোগ করে এসেছি। তুই যাকে ভালোবাসিস সে অন্যকাওকে ভালোবাসলে সে অনুভূতিটা আমাদের ভেতরটা শূন্য করে দেয়।”
এইবার মহুয়া একটু চুপ থাকে। তারপর মৃদুস্বরে বলে, “তোর আর মোহের ব্যাপারটা আলাদা। তন্ময় সবসময় তোর থেকে কেবল চেয়ে এসেছে। পরিবর্তে কোনো অনুভূতি ফিরিয়ে দেয় নি। তুই ওর জন্য কেবল কষ্ট পেয়েছিস কিন্তু ভাইয়া মোহের চোখের পানি সহ্য করতে পাড়ে না। আর সবচেয়ে বড় কথা ওদের বিয়ে হয়েছে। মোহ বলেছিল, যে মুহূর্তে ও কবুল বলেছে সে মুহূর্ত থেকেই ভাইয়ার প্রতি এক মায়া কাজ করেছে। ভাইয়ারও তো তেমনই।”
“আর যদি তার আগের প্রেমিকা এই সম্পর্কের মাঝে হাজির হয় তখন?”
মোহ মৃণার দিকে তাকায় ভীত দৃষ্টিতে। মৃণা বলে, “তন্ময়ও তো আমার সাথে ছিলো কিন্তু বুশরা আপু আসার পর….”
মহুয়া বিরক্তি নিয়ে এবার উঁচু স্বরে বলে, “আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ কর মা। তোর আর মোহের সিচুয়েশন এখানে এক না। তোদের বিয়ে হয় নি তাই ওই ছেলে বুশরার কাছে সাথে সাথেই ফিরে গেছে আর মোহের বিয়ে হয়েছে। তারা একটি পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ। তোর হঠাৎ কি হয়েছে? ভাইয়ার যে আগে একটা সম্পর্ক ছিলো তা তো আমরা জানতাম। অথচ এতদিন একটা প্রশ্নও তুলিস নি। আজ এমন জেদ করছিস কেন? তুই তো কখনো একটা কথা এত বাড়াস না।”

মৃণা চোখ নামিয়ে নেয়, “অফিস প্রথম যুক্ত হবার পর মুরাদ ভাইয়ার এক বন্ধু তাদের একজন সিনিয়রের কথা বলেছিল যে তার প্রেমিকাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। পাড়ে না চাঁদও পা’য়ের কাছে এসে দেয় এমন। কিন্তু মেয়েটা টাকার জন্য অন্যকাওকে বিয়ে করে। তবুও সে না’কি তার প্রেমিকার নামে এখনো একটা কথাও শুনতে পাড়ে না। গতকাল আমাদের ছবি দেওয়ার পড়ে মুরাদ ভাই কল দিয়ে আমাকে বলেছিল তাদের সে সিনিয়র ভাই ছিলো সমুদ্র ভাইয়া। এরপর থেকে আমার এতটা অস্থির লাগছে। আমি সারারাত এই চিন্তায় ঘুমাতে পাড়ি নি। আমি কষ্ট সহ্য নিয়েছি চুপচাপ, কিন্তু তোরা কেউ সে কষ্ট পাবি তা আমার সহ্য হবে না। এরপর তুই যখন বললি সমুদ্র ভাইয়া তোকে তিসানের সাথে….” বলতে বলতে নিজেই ফুঁপিয়ে কান্না করে দিলো মৃণা মুখে হাত দিয়ে। তাকে দেখে মোহ খানিকটা হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে, “পাগল একটা। এত চিন্তা করিস না। আমি খুশি আছি উনার সাথে।”
মহুয়াও আফসোসের নিশ্বাস ফেলে। তারপর এক লাফ দিয়ে এসে তাদের জড়িয়ে ধরে। তবে তার এই দুঃখভরা মহল একটুও ভালো লাগলো না। সে কাতুকুতু দিতে শুরু করল মৃণাকে। কিছুক্ষণেই মৃণা কান্না ভুলে হাসতে শুরু করল।

মোহ তাদের থামিয়ে বলল, “তোরা পুরা কথা শুনবি? উনি তো বলেছিল আমার জন্য না-কি তিসান ভাইয়া ভালো হবে। আমি কী কম না’কি? আমি উল্টো ডোস দিয়েছি।”
মহুয়া ক্ষেপানো গলায় বলে, “তোর লজ্জা লাগে না আমার দুলাভাইকে মারোস?”
“আরে ধ্যুর তোর দেওয়া মাইরের ডোস না। কথার ডোস দিয়েই ঠিক করে দিয়েছি। উল্টো তার সাথে তাল মিলিয়ে অন্যকারো সাথে বিয়ের কথা বলতেই লোকটা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।”
“এই নাহয় আমার বান্ধবী।”
মহুয়া আর মোহ হাইফাইভ দেয়। মৃণা জিজ্ঞেস করে, “তার মানে ভাইয়া তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।”
“হয়তো না, কিন্তু তার পৃথিবীতে আমি এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছি।”

এমন সময় কল আসে সমুদ্রের। মোহ তার কল দেখে অবাক হয়। কল ধরে বলে, “আপনি এখন কল দিচ্ছেন যে? সব ঠিক আছে?”
“মহুয়ার বাসাটা ঠিক কোন দিকে বলোতো? আমি গলির আশেপাশে কোথাও আছি।”
“কী? আপনি এখানে কেন এসেছেন?”
“আরে বলো তো। আর একটু নিচে আসো।”
“আচ্ছা আসছি।”
মোহ উঠতে নিলেই মহুয়া তাকে ধরে, “কই যাচ্ছিস?”
“সমুদ্র এসেছে। নিচে যাচ্ছি।”
“ওহ-হো… দুলাভাইয়ের তোমাকে ছাড়া কী মন বসছে না জান? কিন্তু তাকে বলে দেও আজ তোমাকে পাবে না। আজকে আমরা তোমাকে চুরি করে নিয়েছি। কিসমিসও খেতে পাড়বে না।”
মোহ চোখ বড়বড় তাকায় ফোনের দিকে। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত রাখে। চোখমুখ কুঁচকে বকুনি দেয় মহুয়াকে, “ভাই উনি ফোনেই আছে। মুখ সামলে তো রাখ একটু।”

মোহ নিচে নামতে নামতে সমুদ্রকে ঠিকানা বলে। গেইটের সামনে এসে দেখে সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। হাতে বড় একটা ব্যাগ। মোহ তার সামনে যেয়ে জিজ্ঞেস করে, “হঠাৎ এখানে এলেন যে?”
সমুদ্র মাথা চুলকায়, “সব তোমার দোষ। রাতে তোমার সাথে আইস্ক্রিম খাওয়ার অভ্যাস করিয়ে তুমি আজ নেই। তো আমি কী করব? বাসায় তোমার আমার জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে যেয়ে তোমার নাম ডাকছিলাম। পড়ে মনে পড়ল তুমি তো এখানে। তাই তোমার সাথে আমার শালীসাহেবাদের সাথেও কিছু স্নাক্সস এনেছি।”
মোহ হাসে ঠোঁট টিপে। আজকের ডোসটা মনে হয় একটু বেশিই কাজে দিয়েছে। সে বলে, “আচ্ছা এনেছেন। এখন তাহলে দিয়ে যান।”
“চলে যাব?” সমুদ্র অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে।
“ভেতরে আসবেন?”
“না, অনেক রাত হয়েছে। অন্য একদিন।”
“তাহলে?”
“তাহলে,” সে ব্যাগ থেকে দুইটা আইস্ক্রিম বের করে বলে, “আমার আইস্ক্রিমগুলো এখনো আছে।”
মোহ হাসে তার কান্ড দেখে, “সে আমারটা আমার বান্ধবীদের সাথে খাব।” সে একটা আইস্ক্রিম নিয়ে তা খুলে এক কামড় দিয়ে তা ফেরত দেয় সমুদ্রকে।

উপর থেকে মৃণা ও মহুয়া ছাদের বর্ডারের কাছে লুকিয়ে দেখছিল তাদের। মৃণা ফিসফিস করে তাকে জিজ্ঞেস করে, “আমরা এভাবে চোরের মতো তাদের দেখছি কেন? আর আমি ফিসফিস করে কথা বলছি কেন?”
“আরে রোমেন্টিক সিন এভাবে লুকিয়েই দেখতে হয়। তুই বুঝবি না দেখ। তারা আইস্ক্রিমে ইন্ডিরেক্ট কিসমিস করছে।”
“কিশমিশ তো খায়, করে কীভাবে?” মৃণা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। আর মহুয়া তার দিকে তাকায় বিরক্তির দৃষ্টিতে, “ভাই তোর জামাইয়ের কিসমত চরম লেভেলের খারাপ হবে তুই জানিস? এজন্যই এত বছরে তোর কিসমিস খাওয়া হলো না।”
“না আমি তো বাদাম কিশমিশ খেয়েছি আগে।”
মহুয়া এবার বিরক্ত হয়ে তার মাথায় চাটি মারল, “চুম্মার কথা বলতেছি গাঁধি। চুম্মা খাইসোস আগে? আগামী পাঁচবছতেও খাওয়া তো হবে না। দেখে মন ভড়ে নেয়।”
মৃণার তার কথা শুনে আজ রাতের ঘটনা মনে পড়লো তার মুরাদের সাথের। সাথে সাথে তার হাত চলে গেল তার ঠোঁটে। মুরাদের ছোঁয়ার অনুভূতি হতেই তার সম্পূর্ণ গা শিউরে ওঠে। মুখখানা গরম হয়ে যায়।

মুরাদ ছাদে এসে দেখে তাদের এভাবে লুকিয়ে নিচে দেখতে দেখে অবাক হয়। ধীর পা’য়ে এগিয়ে তাদের পিছনে যায়। যেয়ে নিচে উঁকি মেরে দেখে মোহ আর সমুদ্রকে। তাদের লুকিয়ে এই প্রেমের গল্প দেখতে দেখলে সে হঠাৎ জোরে বলে উঠে, “লজ্জা লাগে না অন্যের প্রেম দেখতে নিলজ্জ কোথাকার!”
তার আকস্মিক কন্ঠে মহুয়া ও মৃণা দু’জনে ভয়ে লাফিয়ে উঠে। কত ধ্যান সহকারে তারা নিচের দৃশ্য দেখছিল!
মহুয়া বুকে হাত দিয়ে বলে, “হোয়াট ভাইয়া ভয় পেয়ে গেছি।”
“নিচে এভাবে লুকিয়ে কী দেখিস?”
“তুমিই তো বললে প্রেম দেখি। প্রেম-ট্রেম তো করি না, একটু দেখেই মন ভরি।”
মুরাদ তার কান মলা দিয়ে বলে, “পড়াশোনার খবর নেই প্রেম করতে এসেছে। আর দশবছর আগে প্রেমের কথা ভাববিও না।”
এহেন কথায় মহুয়া অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকায় মুরাদের দিকে, “দশ বছর? তখন আর প্রেম করে কী করবো সন্ন্যাসিনী হয়ে যাব নে একবারে।”
“ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া। তোর মাথায় এমন বুদ্ধি আসতে পাড়ে বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“বিরক্ত করো না তো ভাইয়া। যাও দেখি। লাইভ রোমেন্টিক সিন দেখতেছি। তাও বান্ধবীর। এমন সুযোগ কে ছাড়ে?” বলে আবারও সে নিচে তাকায়।
“অফিসের কাজ আছে তোর বান্ধবী কে নিয়ে যেতে এসেছি।”
“যাও।”
মৃণা চোখ বড় করে তাকায় তার দিকে। আবার মুরাদের দিকে। আজকের ঘটনা মনে করে সে একা মোটেও যাবে না। সে মহুয়াকে ধরে, “মহু তুইও সাথে আয়।”
মহুয়া তো মোহের উপরের আসার অপেক্ষায় কেবল। উপরে তার সাথে মজা নিবে। এই সুযোগ ছেড়ে সে অফিসের বোরিং কাজের কথা শুনবে? তার মাথা তাঁর এতটাও ছিঁড়ে নি। সে বলে, “আমি তোদের অফিসের কথা শুনে কী করব? যা তো।”
“মহু…” মৃণা অসহায় গলায় ডাকে তাকে।

মুরাদ তার বোনকে হাড়ে হাড়ে চিনে। সে এই সময় মোটেও যাবে না তাদের সাথে। যেখানে কাজ আছে, সেখানে মহুয়া নেই।
মুরাদ মৃণার হাত ধরে তাকে উঠে, “তাড়াতাড়ি চল। আমার এত সময় নেই।”
মুরাদ মৃণার হাত টেনে তার সাথে নিয়ে যায়। মহুয়া তো সেদিকে তাকায়ই না। সে ব্যস্ত এই মুহূর্তে ভীষণ। মৃণার দিকে তার ধ্যানই নেই।
.
.
“তাহলে আমি এবার যাই?” মোহ সমুদ্রের হাত থেকে ব্যাগটা নিতে গেল। আর আচমকা সমুদ্র তার হাত ধরে নেয়। একটানে তাকে বুকে ভরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তার কাঁধের ভাঁজে মুখ গুঁজে গভীর নিশ্বাস নেয়,
“তোমাকে আর তোমার ঘ্রাণকে অনেক মিস করব। তোমার ঘ্রাণে আমার শান্তির ঘুম হয় ভীষণ।”
মোহ স্তব্ধ হয়ে যায় কতসময়ের জন্য। সে ফিরে ধরতেও পাড়ে না। সে আজ পর্যন্ত সমুদ্রের ঘ্রাণে হারিয়েছে। সমুদ্রও যে তার সুবাসে হারায় তা-তো সে জানতো না।

সমুদ্র আবারও প্রশ্ন করে, “তুমি কী সময় শেষ হলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে মধু?”
“আপনি কী চান?”
সমুদ্র তাকে আরও শক্ত করে ধরে একথায়, “তুমি যেন সারাজীবন আমার সাথে থাকো।”
“আপনি আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে চাইলে আমি আপনার পাশে থাকবো। যতদিন আপনি অন্যপুরুষের সাথে আমার বিয়ে না করাতে চান আরকি। তখন তো আর আপনার সাথে আইস্ক্রিম খাওয়া হবে না।”
একথায় সমুদ্র তাকে ছেড়ে দেয়। তার দিকে তাকায় রাগান্বিত দৃষ্টিতে। মোহ উল্টো হেসে দেয় তার মুখ দেখে।
“আমার দুর্বলতার উপর হাসছো?”
“আমি আপনার দুর্বলতা?”
সমুদ্র মৃদু হাসে, “আগামীকাল রাতে তোমার বাসার সামনে আইস্ক্রিম নিয়ে আসবো। কল দিলে বের হবে।”
“না, একদম হবো না।”

সমুদ্র কপাল কুঁচকায়। মোহ দুষ্টু হেসে উওর দেয়, “আগামীকাল থেকে অন্তত পাঁচ ঘন্টার জন্য হলেও অফিসে যাবেন। বসে থাকতে হলেও যাবেন। নাহলে আমি আপনার সাথে দেখা করব না। মিথ্যে বলার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। আমি আংকেলকে কল দিয়ে খোঁজ নিব।”
“তুমি আমাকে ব্লাকমেইল করছো? ভাবছো আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পাড়ব না?”
“থাকেন তাহলে। অফিসে না যাওয়া পর্যন্ত আপনার সাথে কথা, দেখা, আইস্ক্রিম খাওয়া সব বন্ধ। আমি আসবো না তো ওই বাসায় আপনি অফিসে না গেলে।”
“মধু বেশি করছো এখন।” সমুদ্র রাগান্বিত স্বরে বলে।
মোহ তো তার রাগকে পাত্তাই দেয় না। সে চলে যেতে নিলে সমুদ্র না পেড়ে বলে, “আচ্ছা যাব কিন্তু পাঁচ ঘন্টা না। তিনঘণ্টার জন্য।”
“ভেবে দেখেন। পাঁচঘন্টার জন্য অফিসে থাকলে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দিব, নাহয় ছুঁতেও দিব না।”
এবার সমুদ্র সত্যিই বিরক্ত হয়,”একটু বেশি করছ না? আচ্ছা, ঠিকাছে।”
মোহ তো খুশিতে লাফিয়ে উঠে। দৌড়ে এসে পা উঁচু করে টুপ করে তার গালে চুমু খায়। তারপর একগাল হেসে তাকায় তার দিকে। সমুদ্র অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে।

তার তাকানো দেখে মোহ ভাবে সে অতিরিক্ত করে ফেলেছে কি-না! হঠাৎ এমন করাটা হয়তো তার উচিত হয় নি। সে দ্বিধাবোধ করে বলে, “সরি।”
সমুদ্র উল্টো তার বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে, “মধু তুমি জবার মতো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না-তো?”
প্রশ্নটা শুনে মোহের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। এবার জবার প্রতি ঈর্ষায় না, সমুদ্রের কন্ঠের অসহায়ত্বের ছোঁয়ায়। তার একবার ইচ্ছে হয় সে তার সাথে আজীবন থাকার পরিবর্তেও দাবি করবে ভালোবাসার। কিন্তু সে পাড়লো না। কারণ সে নিজেও জানে সমুদ্র থেকে সে বেশি দুর্বল এই সম্পর্কের প্রতি। সমুদ্রকে ছাড়া থাকাটাও তার কল্পনায় আসে না।
“কখনো না।” মোহের উওরে যেন নিশ্বাস ফিরে সমুদ্রের। সে শেষবারের মতো তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুক শান্ত করে। তারপর তাকে ছেড়ে যায় বাইকের কাছে। যাবার সময়ও বারবার দেখে সে মোহকে। হাসে সে, কখনো কী সে ভেবেছিল এই পিচ্চি মেয়েটা একসময় তার জীবনের এত বড় অংশ হয়ে যাবে।
.
.
মুরাদ মৃণাকে রুমে এনে তার হাত ছাড়ে অবশেষে। মৃণা তার দিকে তাকায়ও না। তাকে জিজ্ঞেস করে, “কী কাজ আছে?”
মুরাদ তাকে একটা ফর্ম দিয়ে বলল, “আমাদের অফিসের কাছেই একটা মিউজিক সেন্টার আছে। তুই ভার্সিটি থেকে ওখানে যাবি। তারপর অফিসে আসবি। এটা অফিসের কাজের অংশ। অফিসই ফান্ড করবে।”
“গান শেখা অফিসের কাজের অংশ?” মৃণা এবার সত্যিই বিরক্ত মুরাদের উপর।
“হ্যাঁ।”
“কীভাবে?”
“এই’যে দেখ এই এডে মিউজিক নলেজ লাগছে। যার জ্ঞান আমাদের মধ্যে কারও নেই। থাকলে এডিশন মেম্বার বাহির থেকে আনা লাগতো না। আমাদের কত টাকা বেঁচে যেত।”
“তাহলে অন্য কাওকে শেখান। আমি করব না।”
মৃণা মুড়িয়ে কাগজটা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। তা দেখে মুরাদের মেজাজ খারাপ হয়। সে আঙুল দিয়ে চশমা ঠিক করে কপাল কুঁচকে তাকায় মৃণার দিকে। সে একপা এগোল মৃণার দিকে, “ভালো করে কথা বলছি দেখে কী ভালো লাগছে না তোর?”
মৃণা পিছিয়ে যায়, “মুরাদ ভাই…”
“ভাই?” মুরাদ তার কথা কাটে। আবার আরেক পা এগিয়ে যায়। মৃণা আরেকটু পিছিয়ে এদিক ওদিক তাকায়। কিন্তু মুরাদের সাথে চোখ মেলায় না। সে দ্বিধাবোধ করে বলে, “হ্যাঁ আপনি আমার মুরাদ ভাই। আর আপনার কী মনে হয় আমি এত বোকা যে বুঝবো না আপনি এইখানে আমাকে কেন ভর্তি করাচ্ছেন?”
“কেন?”
“কারণ আপনি চাচ্ছেন আমি আমার গান শেখার ইচ্ছাটা পূরণ করি। আমার কোনো ইচ্ছা যেন অপূর্ণ না থাকে। কিন্তু সরি মুরাদ ভাই, আমি আপনার দয়া আর নিতে পাড়বো না।”
“দয়া?” মুরাদ তাচ্ছিল্য হাসে। সে এক টানে মৃণাকে দেয়ালের সাথে তাকে চেপে ধরে। তার চোখে চোখ রেখে গম্ভীরমুখে বলে, “এত বুঝদার হয়ে গেলে এটা বুঝতে পাড়িস না কেন যে কত ভালোবাসি তোকে আমি! এখন থেকে না, তুই যখন ষোড়শী বয়সী রমনী তখন থেকে আমি এই হৃদয়ের চিঠিতে তোর নাম লিখে রেখেছি। তোর যোগ্য হবার জন্য আমি এই পর্যায়ে এসেছি। যেন তোকে কোনো কষ্ট পেতে না হয়, তোর কোনো স্বপ্ন অপূর্ণ না থাকে, তোকে পরিশ্রম না করতে হয় তাই আমি পরিশ্রম করেছি। দিনরাত পরিশ্রম করেছি। আমার সবকিছু তো তোদেরই। মা, বাবা, মহু আর তুই ছাড়া আর কে আছে আমার? আমার সব তো তোদেরই। তোর নিজের জিনিস নিতে দয়া মনে হবে কেন? আমার অর্থ তোর নেওয়া জায়েজ। আমি অনেক বছর আগে থেকে মনে মনে তোকে বিয়ে করে নিয়েছি। আমার হৃদয়ের দিকে থেকে তুই আমার বউ।”
মৃণা হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে তার কথা শুনে। তার মুখ দিয়েও কোনো কথা বের হয় না বিস্ময়ে।

মুরাদ তার এমন হতবাক মুখ দেখে হাসে। তার গালে হাত বুলিয়ে বলে, “সত্যি বলছি ময়না পাখি তোকে অনেক ভালোবাসিরে আমি। সেটা তো তুই ওই ফালতু ছেলেকে ভালোবেসেছিলি বলে তোর খুশির জন্য নিজ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম। এখন তোকে পাবার সুযোগ আমি মোটেও ছাড়বো না। যদি তো আমার অর্থ নেওয়া এখনো জায়েজ মনে না হয় তাহলে তৈরি থাক, শীঘ্রই তোকে বিয়ে করে নিজের কাছে নিয়ে আসবো। তখন এই বাড়িতে থাকা অথবা আমার তোর ইচ্ছাগুলী পূরণ করাটা দয়া লাগবে না।”
মৃণা তার কথার উওর দিতে পাড়ে না। কিছুক্ষণ হতবাক দৃষ্টিতে মুরাদের দিকে তাকিয়ে থেকে হুঁট করে তার হাতের নিচের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায়।

মুরাদ তার কান্ড দেখে হাসলেও রাগান্বিত স্বরে বলে, “এই থাম ফাজিল। না থামলে এক থাপ্পড় দিবো।”
মৃণা এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে বলে, “আপনার থাপ্পড় খাওয়া আপনার কাছে থাকা চেয়ে এই মুহূর্তে বেশি সহজ।” বলে আবারো দৌড়ে পালায় মৃণা।
তাকে দেখে মুরাদ হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তার চশমাটা খুলে গভীর নিশ্বাস ফেলে, “অবশেষে এতবছরে মনে লুকিয়ে রাখা কথাটা আমার মুখে আসলো। এখন শেষ কথাটা কবে সত্যি করবি ময়না? কবে আমার বউ হবি তুই?”

মৃণা দৌড়ে ছাদে এসে দেখে মহুয়া ও মৃণা শুয়ে আছে। আকাশের দিকে আঙুল তুলে কি যেন করছে। সে গভীর নিশ্বাস ফেলে। দৌড়ে এসে হাঁপিয়ে গেছে। সে কী মহুয়াকে কথাগুলো জানাবে? না, ওর প্রতিক্রিয়া কেমন হয় কে জানে? মুরাদ হয়তো এমনিই কথাগুলো বলেছে। তা আর মাথায়ও আনবে না মৃণা। তার কিছু কথার জন্য সে এত কষ্টে পাওয়া একটা পরিবার হারাতে পাড়ে না।

মহুয়া তাকে দেখে বলে, “কাজ শেষ? মিস করে দিলি মোহকে এতক্ষণ যে পঁচিয়েছি। সরি মোহ না তো দুলুভাইয়ের মধু।” বলে হাসলে মোহ কয়েকটা মার বসায় তার হাতে। মহুয়া মৃণার জন্য মাঝখানে জায়গা করে বলে, “এদিকে আয়।”
মৃণা যেয়ে তাদের মাঝে শোয়। জিজ্ঞেস করে, ” কি করছিলি?”
“তোর মনে নেই আমরা আগে কী করতাম? আকাশের মেঘগুলো কি আকৃতি নেয় তা দেখছি। দেখ ওটা খরগোশের মতো।” মহুয়া একটা মেঘ আঙুল দিয়ে দেখাল।
মোহ বলে, “আর ওটা দেখ লাভ শেপের মতো লাগছে।”
“তোমার তো মনে এখন প্রেম প্রেম চলে তাই সব লাভ শেইপেরই দেখছ।”
“একবার তুই জাহান ভাইয়ের প্রাপোজ এক্সেপ্ট করে দেখ তোর সাথে কি করি আমি। সব প্রতিশোধ নিব। আচ্ছা ওটা দেখ আমাদের তিনজনের মতো দেখায় না?”
“ছিঃ! কেঁইচ্চার মতো লাগে।”
মহুয়ার কথায় মোহ উঠে তাকে মারতে শুরু করলে মৃণা থামায় তাদের। তাদের শান্ত করে তাদের দুই হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে, “আচ্ছা আমরা আগামী পনেরো বছরে কী এমনই থাকবো?”
“ইনশাআল্লাহ যেন থাকি।” মোহ বলে।
মহুয়া তার কথায় চেতে যায়, “যেন থাকি? না থাকলে তোদের এই ছাদের থেকে লাথি মেরে ফিক্কা মাইরা ভূতের সাথে বটগাছে ঝুলায় রাখমু।”

চলবে….

মেঘের খামে…
পর্ব ৩৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

চারমাস পর……

শিকদার বাড়ির জোরেশোরে কাজ চলছে। শায়ান এসে দেখে একদিকে ফলমূলের ডালা বাঁধা হচ্ছে। অন্যদিকে মিষ্টি। দাদী দ্রুত তলব দিয়েছিল শায়ানকে। শায়ান আড্ডার মাঝে মুহিবকে নিয়ে আসলো। দাদী তো আর সহজে তাদের কল দিয়ে আসতে বলে না। তাও একবার কল দেয় নি, দিয়েছে সাতবার। তাই ভীষণ চিন্তায় এসেছিল শায়ান। এসে দেখে চিন্তার কোনো কারণ তো নেই-ই উলটো উৎসব চলছে যেন। শায়ান আসলে দাদীর কোলে শুয়ে পড়ে রীতিমতো। দাদী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে উলটো তাড়া দেয় তাকে, “এখন এসেছিস? জলদি যেয়ে গোসল করে তৈরি হয়ে নে। আর এই কালাকুলা জামা পড়বি না। পূর্ণি তোর জন্য আকাশী জামা এনেছে ওটা পরবি।”
“কেন? আমার বিয়ে না’কি?”
কথাটা তো বলেছিল সে মজা করেই। কিন্তু কে জানতো দাদী বলে উঠবে, “বিয়ে তো না কিন্তু বিয়ের প্রস্তুতির জন্যই যাচ্ছি।”
এহেন কথায় শায়ান উঠে বসে হড়বড়িয়ে। দাদীর দিকে তাকিয়ে বলে, “কী যা তা বলছ দাদী?”
“যা তা কী? দেখতে যাচ্ছি মেয়ে। সব ঠিক হলে কথা পাঁকা করে আসবো।”
“অসম্ভব আমি যাব না। তুমি জানো দাদী, বিয়ে শাদীর ইচ্ছা আমার নেই।”

“তোমাকে কি জিজ্ঞেস করা হয়েছে? বলা হয়েছে।” শায়ান তার বাবাকে এখানে দেখে আরও চমকে যায়। তার বাবা সহজে বাসায় আসেন না। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলে আসে কিছু সময়ের জন্য। আবার চলে যান। এমনকি রাদিনের বিয়ে ও বৌভাতের জন্যও এসেছিলেন অল্প সময়ের জন্য। আর কোথাও যেতে হলেও আসেন না। আজ এসেছেন মানে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
শায়ান নিজের বাবার সামনে সহজে কথা বলে না। তাও মানা করার চেষ্টা করল, “বাবা আমার পড়াশোনা তো…”
“তোমার পড়াশোনার দিকে কত ধ্যান আছে আমি জানি। এই যুক্তি দিতে আসবে না। এছাড়া তোমার ফাইনাল শেষেই কাবিন হবে আর মেয়ের পড়া শেষ হলে উঠিয়ে আনবো। বিয়ে হলে বউয়ের সঙ্গ পেয়ে যদি শুধরাও, নাহলে স্বভাব চরিত্র হচ্ছে তো মা’য়ের মতোন।”
কথাটা শুনে শায়ানের হাতের মুঠো শক্ত করে বন্দী হয়ে গেল। সে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে শারাফ শিকদার হুকুমের স্বরে বলেন, “জলদি তৈরি হও। আম্মা যা পরতে বলেছে তাই পরবে।”

শায়ান উপরে চলে যায়।
.
.
অপরদিকে মহুয়ার বাসায়ও তামঝাম চলছে। কত রকমের রান্না! শ্রাবণীদের শশুড়বাড়ির দাওয়াত। তাই শ্রাবণীও আজ সকালে এই বাসায় এসেছে। মহুয়ার তো সকাল থেকে সব স্বাভাবিকই লাগছিল কিন্তু যখন তার মা আর ফুফু জোর করে তাকে সিনথিয়ার সাথে সাজতে পাঠালো তখন তার ব্যাপারটা সুবিধার ঠেকলো না।

প্লেট সাজাচ্ছিল টেবিলে ফুপি ও শ্রাবণী। মহুয়ার মা রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত। ফুপির মেজাজ সকাল থেকে চিটচিটে। সে আশেপাশে কাওকে না দেখে জিজ্ঞেস করেই নেয়, “তুই এমন করলি কেন?”
শ্রাবণী প্রশ্নে অবাক হয়, “কী করলাম মা?”
“এতবড় ঘরে নিজের বোনকে না দিয়ে ওই বেয়াদব মাইয়ার প্রস্তাব দেওয়ার কি ছিলো?”
“প্রথমত মা, দাদীর মহুয়ার জন্য প্রেম উথলে পড়ছে। সে সিনথিয়াকে নিতো না। আর দ্বিতীয়ত আমিও সিনথিয়াকে ওই শায়ানের সাথে দিতাম না। রাদিন বাদে দুই ভাইয়ের চরিত্রে দোষ আছে। শুনেছি রাত অন্য মেয়েদের সাথে কাটায়।”
“বলিস কী!”
“নাহলে আমি সিনথিয়ার বদলে ওকে দিতে বলতাম? মেয়েদের সাথে কাটায়, মদ খায় সব বাজে স্বভাব। ওর মা’য়েরও স্বভাবে দোষ ছিলো। যার সাথে বিয়ে হবে তার জীবন বরবাদ। এখন আমার পরিকল্পনা শুনো, মহুয়াকে যেহেতু দাদীর এত পছন্দ হয়েছে আর শারাফ আংকেলও সম্পূর্ণ ঘর ও বিজনেস চালায়। মহুয়ার সাথে বিয়ে হলে মামা মামীকে বলে মহুয়ার দ্বারাই সব রাদিনকে দেওয়াব। সম্পূর্ণ ব্যবসাও। শায়ান আর কী করবে? ওর তো এসবে মনই নেই।”
“পরিকল্পনা তো ভালো কিন্তু মহুয়ার মতো মেয়ে তোর পরিকল্পনায় চলবে না। আস্তো এক বেয়াদব।”
“ওইটা বিয়ে হোক তারপর দেখো আমি কি করি। আর এসব না হলেও ওর পাখনা তো কাটবে। ওরে দেখলে মনে হয় মেঘে উড়ে বেড়ায় সারাক্ষণ।”

কলিংবেল বাজলে শ্রাবণী দৌড়ে যেয়ে দরজা খুলে। শায়ানরা এসেছে। মহুয়ার মা, বাবা, ফুফাও আসে কুশল বিনিময় করতে। তারা সোফায় বসে। চা নাস্তা দেওয়া হয় প্রথমে।
শায়ান তো প্রথমে বুঝতেই পাড়ছিল না মহুয়ার ফ্যামিলিরা তাদের দেখতে আসা মেয়ের বাড়িতে কেন! তারপর হঠাৎ তার মাথায় টনক নড়লো, মেয়ে দেখতে তাদের বাসায় এসেছে মানে? মেয়ে কী তাহলে সিনথিয়া বা মহুয়ার মাঝে একজন?
আগে জানলে বাসা থেকেই পালিয়ে যেত সে।

শায়ান দেখে শ্রাবণী ও সিনথিয়া মহুয়াকে নিয়ে আসছে। আকাশী রঙের একটি কামিজ পরেছে সে। হাল্কা সাজগোজ করা। রূপালী রঙের ছোট গয়না পরা। চোখে নীল কাজল দেওয়া। শ্রাবণী বারবার তার মাথায় কাপড় দিচ্ছে আর মহুয়া বিরক্তি নিয়ে সরাচ্ছে। তাকে দেখে চোখ কপালে উঠে গেল শায়ানের। মেয়েটার সাথেই কী তার বিয়ে না’কি? সে মাথায় হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে, “এই মেয়ে আমার জন্য সেজেছে? অসম্ভব। আমার জন্য সাজার আগে যে সাজিয়েছে তাকে ভূত বানিয়ে দিতো। হিসাবনিকাশ করে বুঝা যায় এই পাগল মেয়েটা জানেই না যে তাকে আমার জন্য দেখতে এসেছে। এখনই বোম্ব ফাঁটবে।”

পূর্ণি তো দৌড়ে যেয়ে সিনথিয়াকে সরিয়ে মহুয়াকে ধরে আনলো। মহুয়াকে বলল, “আপু তোমাকে একদম পুতুলের মতো লাগছে।”
“আরে ধ্যুর বলো না জোর করে এসব ঝুপঝাপ পরিয়ে দিয়েছে।”
মহুয়া সবাইকে সালাম দিয়ে শায়ানের দাদীর কাছে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।
“কী খবর দাদী? আপনি দেখি দিনদিন সুন্দরী হয়ে যাচ্ছেন রহস্য কী?”
“তুমি।”
“হেঁ?” মহুয়া কিছু বুঝল না। মাথা চুলকালে তার মা হাতে মেরে মাথায় কাপড় দিয়ে দেয়।
দাদী বলেন, “আজকাল চিন্তামুক্ত আর খুশি থাকি তো এজন্য বোধহয় চেহেরায় শান্তি আসছে। আর আমার খুশি কারণ তুমি বোন।”
ফুপিও বলে, “আমাদের মহুয়া তো এমনই। সবার চিন্তা মুক্ত করে দেয়।”
তার ফুপির মুখে তার নামে প্রশংসা শুনে মহুয়া তো ভয় পেয়ে যায়। কিছু একটা তো ঝামেলা চলছে। কিন্তু ধরতে পাড়ছে না।

শারাফ শিকদার তাকে ডাক দেন। তার পাশে এসে বসতে বলেন। মহুয়ার মা’ও তাকে খোঁচা মেরে বলে যেয়ে বসতে। মহুয়া যেয়ে বসে তার পাশে। হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছেন আংকেল?”
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?”
“ভালো নেই আংকেল।”
“কেন?”
“আংকেল বলেন না পুরো বিশ দিন ধরে এক্সাম দিয়েছি। এত বই দেখতে দেখতে আমার মাথার ভেতরে জমা বুদ্ধিগুলোতে ইলেক্ট্রিক শক লেগে ব্লাস্ট হয়ে গেছে।”
তার কথায় হেসে দেয় শারাফ শিকদার। যা দেখে পরিবারের সকলে অবাক হয়ে তাকায়। তাকে সহজে শব্দ করে হাসতে দেখা যায় না। বিশেষ করে শায়ানের তা দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত তার বাবা তার দিকে মৃদু হাসেও নি অথচ মেয়েটাকে এত আদর করছে!

শারাফ শিকদার মহুয়ার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “তো মামণি তোমার পড়াশোনা পছন্দ না?”
“আমার তো চরম এলার্জি আছে। কিন্তু কি করব? ভাইয়ার জন্য পড়তে হয়।”
“তাহলে কী করবে? বিয়ে করবে?”
মহুয়ার মনে হলো এনিয়ে বিনিয়ে এই কথা আসছে কেন আংকেল? ব্যাপারটা সুবিধার ঠেকল না।
তাই সে বলল, “না থাক বিয়ে থেকে তাও পড়া ভালো আছে। ঝামেলা কম। পড়াশোনা থেকে বিয়েতে এলার্জি বেশি আছে আমার।”
“চুপ কর মহুয়া।” শ্রাবণী তাকে চোখ রাঙায়।
মহুয়া ভাবে, “এই ছাগলী চোখ রাঙানোর আর মানুষ পায় না। আমাকে চোখ রাঙাতে এসেছে। ” তাই সে ইচ্ছা করে জোর গলায় বলে, “আপু তোমার চোখে কোনো সমস্যা হয়েছে এমন বড় বড় হয়ে আছে কেন?”
সবাই একসাথে তার দিকে তাকাতেই শ্রাবণী লজ্জা পেয়ে গেল।
তবে শারাফ শিকদার সেদিকে ধ্যান দিলেন না। সে জিজ্ঞেস করে, “আমাদের পরিবার তোমার কেমন লাগে?”
মহুয়া আবার ভাবে মুখের উপর যদি বলে ‘ভালো লাগে না’ তাহলে তার মা তাকে বকে বকে কান দিয়ে রক্ত বের করবে৷ তাই সে বলল, “ভালো।”
“তাহলে আমাদের পরিবারের লক্ষ্মী হয়ে আসবে?”
“মানে?”
“আমার একমাত্র ছেলে শায়ানের জন্য তোমার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।”
মহুয়া কিছু মুহূর্ত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। সে ভেবেছিল কিছু একটা ঝামেলা তো আছে কিন্তু এই বান্দরের জন্য তার বিয়ের প্রস্তাব এনেছে এটা সে মানতে নারাজ।
সে আবার দেখে শায়ানকে। আজ এই প্রথম তাকে কালো বাদে অন্যকোনো রঙ পরতে দেখেছে। চোখের রঙের সাথে মিলিয়ে আকাশী শার্ট পরেছে সে। তাকে দেখতে আসার জন্য শায়ান নিজের রূপ পরিবর্তন করে ভদ্র সেজে এসেছে? বান্দর যতই সুন্দর সাজুক, থাকবে তো বান্দরই। ভাবতেই হাসি পেয়ে গেল তার।

শায়ানও তার দিকে তাকিয়ে আছে রাগান্বিত দৃষ্টিতে। সে ঠিকই ধরতে পাড়ছে এই পাগল মেয়েটা তাকে দেখে কী ভেবে হাসতে পাড়ে!

মহুয়া মনে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে তাকায় শারাফ শিকদারের দিকে, “সরি আংকেল কিন্তু আমি বিয়ে করতে পাড়ব না।”
এমন সরাসরি উওর শুনে শারাফ শিকদারের হাসি নিভে গেল। এমনকি দাদী ও পূর্ণির মুখ মলিন হয়ে গেল৷
আর শায়ান এবার হাফ ছেড়ে শান্তিতে হেলান দিলো সোফায়।

“কেন বোন? তোমার কী আমাদের ভালো লাগে নাই?” দাদী নরম সুরে জিজ্ঞেস করে।
“না না দাদী আপনারা অনেক ভালো। কিন্তু… ” মহুয়া তাকাল শায়ানের দিকে। শায়ানও তার দিকে তাকাল ভ্রু উঁচিয়ে। একবার সে ভাবল বলে দিবে যে শায়ানের তার প্রতি ব্যবহার কেমন ছিলো কিন্তু তার তিসানের বলা কথাগুলো মনে পড়ে তাই আর বলল না। যদি সত্যিই শায়ানের বাবা তার খেয়াল না রাখে তাহলে এইসব জানার পর যদি কোনো শাস্তি দেয়? এর উপর তিসান বলেছিল ছোটবেলায় তার পরিবারের কেউ-ই তার ক্ষতির চেষ্টা করেছে। যদি তার বাবা ও দাদীর চোখে শায়ান নেমে যায়। এরপর যদি আবারও সে লোকেরা ক্ষতির সুযোগ পায় তাহলে অকারণে সারাজীবন তাকে বদদোয়া দিবে এই রাক্ষসের বাপ খাক্ষস। তাই সব চিন্তা করে সে বলল, “কিন্তু দাদী আমার ভাই আমাকে পাঁচবছর আগে বিয়ে দিবে না।”

মহুয়ার ফুপি বলে, “মেয়েদের জীবনই তো এইটা বিয়ে করতেই হবে। মুরাদের সাথে আমরা কথা বলবো।”
মহুয়া একগাল হেসে তাদের দিকে তাকায়, “তাই না? ঠিকাছে মুরাদ ভাই আসুক। ওহ ভাইয়া তো জানে না যে আমাকে দেখতে আসার জন্য এত আয়োজন হয়েছে তাই না?”
তার কথায় মহুয়ার মা, বাবা, ফুপি সবাই ভয় পেয়ে যায়। আসলেই তারা জানায় নি ব্যাপারটা মুরাদকে।
দাদী বলেন, “এখন তো কাবিনের কথা বলছিলাম। পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠান করে আমাদের সাথে যাবে।”

মহুয়া দ্রুত উঠে তার কাছে যেয়ে বসে। তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “আরে দাদু বুঝেন না কেন? পাঁচ বছর পর আপনার আর দাদার মতো প্রেম করে বিয়ে করবো।”
কথাটা শুনে দাদী শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে তাকায় তার দিকে, “তুমি কীভাবে জানলে যে আমার আর ওর দাদার…” লজ্জায় সম্পূর্ণ কথা বলতেও পাড়ে নি দাদী। মহুয়া তাকায় পূর্ণির দিকে। পূর্ণি সাথে সাথে বলে, “আমি আবার কী অঘটন ঘটালাম?”
দাদী সেদিকে তেমন ধ্যান না দিয়ে বলেন, “তুমি তাহলে আগে পাঁচ বছর আমার নাতির সাথে প্রেম করো তারপর বিয়ে দিব নে তোমাদের।”
কথাটা শুনে মহুয়া মুখ বানায়। বিড়বিড় করে বলে, “এই বান্দরের সাথে প্রেম করার চেয়ে আমি জঙ্গলের আসল বান্দরের সাথে প্রেম না করি?”

শায়ানের দাদী বলে, “তোমরা আলাদা যেয়ে একটু কথা বলে দেখো। যাও।” সে আবার মহুয়ার মা’য়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমাদের কোনো সমস্যা নেই তো?”
“না না খালাম্মা কী বলেন? এসব তো এখন স্বাভাবিক। মহুয়া যা, শায়ান বাবাকে দোতলার বারান্দায় নিয়ে যা।”
মহুয়া রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় তার মা’য়ের দিকে। উঠে তার সামনে দিয়ে যাবার সময় বলে, “মুরাদ ভাইয়া এসে নিক, স্বাভাবিক অস্বাভাবিক সব বুঝাবে।”
শায়ানকে তখনও বসে থাকতে দেখে শারাফ শিকদার বলেন, “তোমাকে কি আমন্ত্রণ পত্র দিতে হবে যাবার জন্য? ”
শায়ান বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মহুয়ার পিছনে যায় শায়ান দোতলার বড় ব্যালকনিতে। সেখানে যেয়েই সোফায় বসে পড়ে। বিরক্তি নিয়ে বলে, “মেয়ে তুমি জানলে পর্বতে যেয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যেতাম। তাও বিয়ের জন্য আসতাম না।”
“তুমি সন্ন্যাসী হবা? গতরাতে কয়টা মেয়ের সাথে পুচুপুচু করেছ?”
“এই পুচুপুচু আবার কী? আর কোনো মেয়ের সাথেই না। আজকাল মেয়েদের প্রতি ইন্টারেস্ট আসছে না।”
মহুয়া চোখ দুটো বড় বড় করে নেয়, “মেয়েদের প্রতি ইন্টারেস্ট আসছে না? তাহলে ছেলেদের… ”
এতেই ধমক দেয় শায়ান, “এই মেয়ে মাথায় উল্টাপাল্টা কোনো খিঁচুড়ি পাঁকাবে না বলে দিলাম। কারো প্রতিই আমার ইন্টারেস্ট নেই। কাওকে ধরতেও বিরক্ত লাগে।”
“তোমার দুঃখ কথন পড়ে শুনবো। আগে বলো আমার কুকি, মার্শম্যালো আর ক্রিমপাফ কেমন আছে?”
“সকালে তিনজনে খেলছিল। ভিডিও করে রেখেছি।”
শায়ান পকেট থেকে ফোন বের করতেই মহুয়া দৌড়ে এসে তার পাশে বসে। উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় তার ফোনের দিকে।

শায়ান ভিডিওটা ছেড়েছিল। মহুয়া তার পাশে বসে দেখছে উৎসুক দৃষ্টিতে। মহুয়া তার হাত থেকে মোবাইলটা নেওয়ার সময় তার হাত লাগে শায়ানের হাতে। এক মুহূর্তের জন্য কেবল। কিন্তু এই এক মুহূর্তটা শায়ানের ভেতর কেমন অস্থির করে তুলে। সে তাকায় মহুয়ার দিকে। ভিডিও দেখে তার মুখে কী হাসি!
তার হাসি দেখে শায়ানেরও মুখে হাসি এঁকে এলো। পা’য়ের উপর পা তুলে বসেছিল সে। সে পা নামিয়ে নড়ে চড়ে বসে। একবার তাকায় মহুয়ার দিকে। মহুয়া তখনও ব্যস্ত। তার এক হাত সোফায় রাখা। শায়ান তার হাতের পাশে হাতটা রাখে হাল্কা হাত ছোঁয়। এই সামান্য ছোঁয়ায় তার মনে কেমন অস্থির হয়ে বসে। হৃদপিণ্ডটা ছটফট করতে শুরু করে। শায়ান অবাক দৃষ্টিতে তাকায় তাদের হাতের দিকে। তার এমন লাগছে কেন? সে কতগুলো মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে অথচ তার এমন কখনো অনুভূতি হয় নি। আর আজ এই মেয়ের একটুখানি ছোঁয়াও তার ভালো লাগেছে!

এর আগেও ছুঁয়েছিল সে মহুয়াকে অথচ তখন ক্ষোভ ছাড়া এই হৃদয়ে কিছু আসে নি। না কোনো অনুভূতি, না কোনো অনুতাপ। তাহলে এখন এমন মনে হচ্ছে কেন? সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে না’কি?

মহুয়া ভিডিও দেখা শেষে হেসে তাকায় শায়ানের দিকে, “দেখো কি কিউট লাগছে ওদের তিনজনকে?”
শায়ান মোবাইলের দিকে তাকায়ও না। তার দিকে তাকিয়েই বলে, “হুম, লাগছে তো।”
“এই পাঁচ বছর আমার ক্রিমপাফকে তোমার কাছে রাখো শুধু।”
“তারপর?”
“তারপর আমি বিয়ে করে আমার ক্রিমপাফকে আমার সাথে যৌতুক হিসেবে নিয়ে যাব। কিন্তু কুকি আর মার্শম্যালো তো ওকে মিস করবে তাই না? আবার ক্রিমপাফও তাদের মিস করবে।” চিন্তিত দেখাল মহুয়াকে।
কথাটা শুনে শায়ান বিড়বিড় করে বলে, “তুমি চাইলে তিনজন সারাজীবন একসাথে থাকবে।”
মহুয়া তাকায় তার দিকে, “কিছু বললে?”
শায়ান সাথে সাথে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরক্তি প্রকাশ করে, “তোমার সাথে থেকে আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। তোমার মতো।”
“এই লোক তোমার আবার হঠাৎ কোন পাগলে কামড় দিলো।”
“কামড় না খামচি। তুমি খামচি দিয়েছিলে না গ্রামে থাকতে? তার দুইদিন পর থেকে পাগলের সিমট্রম দেখতে পাড়ছি। পাগল কুত্তা কামড় দিলে যেন রোগে ধরে পাগল তুমি খামচি দেওয়াতে রোগে ধরেছে।”
মহুয়া রাগে আবারও খামচি দিয়ে বসে শায়ানের হাতে। দিয়েই দৌড় মারে তাকে ধরার আগে।

শায়ান রাগে তাকে ধরার জন্য হাত বাড়ালেও দৌড় মারলে আর উঠে না। কিছুক্ষণ আগে নিজের কথা মনে করে মনে মনে নিজেকে শাঁসালো। তারপর ভাবল, “এই মেয়ের কাছে থাকাটাই বিপদের। সারাজীবন তো দূরের কথা। তাই সে বলল, ” নিচে গেলে আবার বিয়ের কথা তুললে কী করবে?”
“আরে প্যারা নেই, আমার মুরাদ ভাই আসবে জলদিই। সে আসলে আমার বিয়ের কথা উঠানোর সাহসই কেউ করতে পাড়বে না।”
“শিকদার পরিবারের নাম শুনে সবাই দুই মিনিটে রাজি হয়ে যায়। আমাদের নাম, খ্যাতি, অর্থের অভাব নেই। কে নিজের মেয়ে বোনকে আমাদের ফ্যামিলিতে দিতে মানা করবে? এর উপর তোমার এত কান্ডের পর তোমার আর আমার ফ্যামিলি যে আমাদের উপরে পাঠাল তুমি বুঝতে পাড়ছ না সবাই কতটা গম্ভীর এই বিয়ে নিয়ে?”
“মিস্টার বান্দর ক্যাটক্যাটা টেক আ চিলপিল। আমার মুরাদ ভাই নাম খ্যাতিতে মানে না। সে নিজে পরিশ্রম দিয়ে নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। আর এমন দায়িত্ববান আর পরিশ্রমী কারো কাছেই আমার বিয়ে দিবে। আর এমনিতেও পাঁচ বছর আগে ভাইয়া আমার বিয়ের কথা তুলতেও দিবে না। তাই তোমার সাথে আমার বিয়েটা অসম্ভব।”
কথাটা শুনে শায়ান একটু হতাশ হলো কী? কেমন লাগলো তার। এই উওরটা সে শুনতে চাইলেও শুনে ভালো লাগলো না।
.
.
ফাইনাল শুটিং এর সময়ই কাজ থেকে পিছিয়ে যায় বুশরা ও তন্ময়। একারণে অনেককিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে। এডের জন্য নতুন মডেল খোঁজা হচ্ছে। হয়তো এডের স্ক্রিপ্টও পরিবর্তন হবে এই সিদ্ধান্তে। জরুরি তলবে এই মিটিংটা হয় শুক্রবারে। সময় বেশি নেই, কিন্তু কাজের অভাব নেই। যদিও তন্ময় আসে না , তবে বুশরা মিটিং শেষে তাকে থামায়। যদিও মুরাদও মৃণাকে একা ছাড়ে না। ক’দিন আগে আজেবাজে বকছিল মেয়েটা মৃণাকে। এরপর সে মোটেও একা ছাড়বে না মেয়েটাকে। তাই সে চেয়ার টেনে বসেই রইল।

বুশরা বারবার দেখল মুরাদকে। অপেক্ষা করল তার যাবার। কিন্তু তার কোনো ভাবভঙ্গি নেই। উল্টো তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
বুশরা না পেড়ে তার সামনেই মৃণার সাথে কথা বলল। প্রথমেই বলল, “তুমি ভাবলে না এই প্রজেক্ট থেকে আমি আর তন্ময় কেন পিছিয়ে গেলাম?”
মৃণা তার দিকে তাকাল। কিন্তু তার দৃষ্টি মোটেও জিজ্ঞাসুক ছিলো না। তবুও বুশরা জানাল, “আমার আর তন্ময়ের ব্রেকাপ হয়ে গেছে। আমিই ছেড়েছি ওকে। আর…আর..” বুশরার যেন খুবই কষ্ট হলো শব্দটি মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে, “সরি।”
এবার মৃণার দৃষ্টি জিজ্ঞাসুক হলো।
বুশরা বলল, “তন্ময় আমাকে বলেছিল ও তোমাকে ভালো বন্ধু মনে করে কিন্তু তুমি ইচ্ছা করে ওর কাছে যাবার চেষ্টা করো। ও না’কি তোমাকে বারবার মানা করেছে তাও ওর জীবনে দখল দেও। আমি এটাই জানতাম। তাইতো সেদিন তোমাকে দেখে বারবার তোমাকে অপমান করছিলাম। তখন তোমাকে চরিত্রহীনা ভেবে আমি নিমিষেই তোমাকে অপমান করে ফেলেছিলাম। কিন্তু পড়ে তন্ময় ওদিন রাগের মাথায় সব সত্যিটা বললে আমি বুঝতে পাড়ি আমি কত বড় ভুল করেছি। আমার ভুল ছিলো তাই ক্ষমা চাইছি। এখন দেখো যদি তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমাকে বলে যে আরেকটা মেয়ে মানা করার পরও তার সাথে ঘেঁষে বেড়ায় তোমার তো রাগ লাগবেই, ক্ষোভও উঠবে। তখন মেয়েটাকে অপমান করতেই চাইবে তুমি তাই না?”
মৃণা তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মাথা নাড়িয়ে বলে, “কখনো না। সম্পূর্ণ কথা না জেনে আমি কাওকে অপমান করবো না। কখনোই না।”
বুশরা তার উওরে বোধহয় তব্দা খেয়ে যায় সে। খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে বলে, “যাই হোক মাফ না চাইলে আমার মনটা ভারী লাগতো তাই চেয়ে নিয়েছি। মাফ করা, না করা তোমার ব্যাপার।”

বুশরা চলে যাবার পর মুরাদ চেয়ার থেকে উঠে আসে। পাশের টেবিলে ঝুঁকে বসে তার পকেটে হাত রেখে বলে, “ওয়াও ভালোই উন্নতি করছিস তাহলে।”
মৃণা এদিক ওদিক তাকাল। আজকাল মুরাদের আশেপাশে আসতেও তার অস্বস্তি লাগে। একারণে সেদিনের পর থেকে সুবিধাজনক দূরত্ব বজায় রাখছে মৃণা। এড়িয়ে চলছে। সে কিছুতেই মানতে রাজি না যে মুরাদ ভাই তাকে ভালোবাসে। মুরাদ ভাইয়েরও ভুল হতে পাড়ে। সে ভুল ভাবতে পাড়ে। তার ভুল অনুভূতি হতে পাড়ে।

মৃণা মুখ খুলল কিছু বলার জন্য। কিন্তু কোনো কথা বের হলো না। সে কিছু না বলেই যেতে নেয়। মুরাদ তার হাত ধরে নেয়, “আজকাল তুই আমার সাথে বেয়াদবি করছিস? আমি তোর সাথে কথা বলছি আর তুই আমার ফিরে না তাকিয়ে এভাবে মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছিস। কয়েকমাস ধরে তোর এমন গা ছাড়া ব্যবহার দেখছি।”
মৃণা চোখ নিচে রাখল। মিনমিনে গলায় বলে, “এমন কিছু না।”
“এমন না হলে তুই আমার দিকে তাকাস না কেন? আমার মনের কথা তোকে জানিয়েছি বলে এখন আমাকে শাস্তি দিতে চাস?”
মৃণা চকিতে তাকায় তার দিকে, “শাস্তি কেন দিব মুরাদ ভাই।”
“সে-তো তুই জানিস। সবার সাথে স্বাভাবিক, আমাকে দেখলেই তোর মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। তোর চোখে আমার উপর আটকায় না।”
“মুরাদ ভাই আপনি আমার কাছে অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন। কিন্তু সেসব কথা শোনার পর থেকে আমার মনে হয় আমাদের দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। এসব কথা ভুলেও কারো কানে গেলে আমি আর আপনাদের বাসার কাওকে মুখ দেখাতে পাড়ব না। জীবনে খুব অল্প সল্প সম্পর্ক আছে। খুব অল্প মানুষ ভালোবাসে। এই অল্প ক’টা মানুষকে দূরে সরিয়েন না মুরাদ ভাই।”
মুরাদ প্রথমে খুব ধ্যান সহকারে শুনে তার কথা। মৃদু হেসে তার হাত ধরে বলে, “সে অল্প মানুষগুলোর মাঝে আমি যে তোকে সব’চে বেশি ভালোবাসি ময়না। তার কি?” মুরাদ উঠে সোজা হয়ে তার সামনে দাঁড়ায়। মৃণার হাতটা তার বুকের বাঁ পাশে রেখে বলে, “আমাকে বিশ্বাস না হলে আমার হৃদয়ের স্পন্দন বেহাল অবস্থা দেখ। তুই যতক্ষণ আমার চোখের সামনে থাকিস, যত সময় তোকে আমি কল্পনা করি, প্রতিটা মুহূর্ত এই হৃদয়ের অবস্থা এমন করুণ হয়ে থাকে। তোর সবার জন্য মায়া লাগে। আমার এই হৃদয়ের জন্য তোর একটুও মায়া লাগছে না ময়না?”
মৃণা তাকায় তাদের হাতের দিকে। কতটা বেমানান দেখাচ্ছে একে অপরের সাথে। তাহলে তারা কীভাবে একে অপরকে পরিপূর্ণ করতে পাড়ে? এই পার্থক্য কি মুরাদের চোখে পড়ে না?

মৃণা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল, “আপনি বাসায় যান মুরাদ ভাই। আপনাদের বাসায় তো মেহমান এসেছে।”
“তুই আসবি না? আজ কিন্তু শুক্রবার। মহুয়া তোর খবর করে দিবে। আমার সাথে চল।”
“না, আজ না। আজ মেহমান অনেক আপনাদের বাসায়। আমার অস্বস্তি লাগবে।”
“আয় তাহলে তোকে বাসায় দিয়ে আসি।”
“লাগবে না মুরাদ ভাই।”
“লাগবে কি, লাগবে না, তোকে জিজ্ঞেস করিনি। চল।”
মুরাদ মৃণার হাত ধরে তার গাড়ির দিকে নিয়ে যায়। আর বলে, “চিন্তা করিস না, একদিন তোকে ভালোবাসার মতো অসংখ্য মানুষ থাকবে। যা তুই গুণতেও পাড়বি না। তখন কেবল আমাকে ভুলে যাস না।” শেষ কথাটা বলে মুরাদ পিছনে ফিরে হাসে।

মৃণা তার কথায় অবাক হলেও তার হাসিটি দেখে সে বিস্ময় ভুলে যায়। মুরাদের হাসিটা এত মুগ্ধকর সে আগে খেয়াল করে নি তো!
.
.
মহুয়া শায়ানের সাথে বসে গল্প করছিল ছাদে। এমন সময় সে দেখতে পায় মুরাদের গাড়ি। আর সে লাফ দিয়ে বলে, “ভাইয়া এসে পড়েছে। আর দশ মিনিট, তারপর বিয়ের কথাও ক্যান্সেল হয়ে যাবে।” সে শান্তির নিশ্বাস ব্যালকনির বর্ডারে উঠে বসে।

শায়ান সাথে সাথে দৌড়ে আসে তার কাছে। হাত ধরে টান দিয়ে নিচে নামায়। ধমকে উঠে, “তুমি কি আসলে পাগল? মাথার স্ক্রু ঢিলা? এইখানে কে উঠে বসে? একবার পড়ে গেলে হয়তো হাত পা ভাঙবে, নয়তো সম্পূর্ণ তুমি ভেঙে যাবে।”
“ওহ, তুমি আমার চিন্তা করছো না’কি?” সে শায়ানের গাল টেনে বলে। শায়ান মহুয়ার সে হাতে থাপ্পড় মারে। রাগান্বিত স্বরে বলে, “পড়ে টড়ে মরলে সবাই আমাকে এসে ধরবে। এই টেনশন করছি।”
মহুয়া মুখ বানায়, “শয়তান শায়ান বলে কথা।”
শায়ান এক হাসি দিয়ে বলে, “তুমি তাহলে শয়তানদের রাণী।”
মহুয়া জিহ্বা বের করে ভেঙিয়ে দেয় তাকে। তারপর নিচে রওনা দেয়।
শায়ান তার যাওয়া দেখে নিজের গালে হাত ছুঁয়ে দেয়। একটু আগে যে গাল টেনে দিয়েছিলো মহুয়া।
তখনই মহুয়ার কন্ঠ শোনা যায়, “এই বান্দর ক্যাটক্যাটা আসবে না’কি এখানেই বাসা বাঁধার প্লান করছো।
” তোমার সাথে একছাদের নিচে থাকলে দুইদিন পর পাবনার পাগলখানায় শিফট করতে হবে।”
শায়ানও তার পিছন দিয়ে নিচে যায়। যেয়ে দেখে আসলেই মুরাদ এসেছে। তাদের বিয়ে নিয়ে কথা শোনার পর মুরাদ পরিষ্কার মানা করে দিয়েছে। জানিয়েছে, পাঁচ বছর আগে তার বোনের বিয়ে হবে না। যখন সে নিজে চাকরি করে সেটেল্ড হবে তখন সে নিজের পছন্দে বিয়ে করবে। অবশ্যই ছেলে যদি তার বোনের যোগ্য হয়। যদি তখন মহুয়ার শায়ানকে পছন্দ হয় তাহলে ওদের বিয়ে হতে পাড়ে। কিন্তু তাকে কোনো পারিবারিক প্রেশার দিয়ে বিয়ে করানো যাবে না।

শায়ানের পরিবারও বিষয়টি ঘাটায় নি তেমন। সবারই পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পাড়ে। আর মহুয়ার ভাই সবার আগে তার বোনের কথা চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক। উল্টো দাদী ও শারাফ শিকদার মহুয়ার ভাইয়ের বোনের প্রতি এত আদর দেখে খুশি হন। দাদী তো বলেই ফেলে, “আমার ভাইজানও একদম তোমার মতো ছিলো। বাপ ছিলো না তো। একদম বাপের মতো আমাকে আলগায়া রাখতো।”
তাই এতকিছুর পরও তারা হাসিমুখে কথা-বার্তা বলে।রাতের খাবারের পর চলে যায়। সবাই এই বিয়ে না হওয়াতে বিশেষ দুঃখী না হলেও একজন ভীষণ প্রভাবিত হয়েছে। তাইতো গাড়িতে মাথা ঠেকিয়ে বারবার গভীর নিশ্বাস ফেলছে পূর্ণি। শায়ান তার পাশে বসেই গাড়ি চালাচ্ছিল। তাকে দেখে সে নিজেই বিরক্ত হয়। এত দুঃখ তো তারও নেই। সে বিরক্ত হয়ে বলেই ফেলে, “তুই এমন করছিস কেন? বিয়ের কথা খারিজ হয়েছে। ম’রি নি আমি।”
পূর্ণি উওর দেয় না। আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

তার ফোন বেজে উঠে কিছুক্ষণের। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে জিনি কল দিয়েছে। তারা একই ক্লাসে পড়ে। কলেজ এক না হলেও কোচিং এক। সে ফোন ধরে আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মৃদুস্বরে বলে, “বল।”
“তোর কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? সব ঠিক আছে?”
“কিছুই ঠিক নেই রে। তুই বল, কিছু লাগবে?”
জিনি এইবার চিন্তিত সুরে বল, “নোটসের ছবির জন্য কল দিয়েছিলাম। কিন্তু তোর হঠাৎ কি হলো?”
“তুই বুঝবি না।”
“ভাই প্রেম তো করোস না যে ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছিস। ঢঙ না করে বল তো কি হয়েছে।”
পূর্ণি হঠাৎ কান্নার ভান করে জোরে বলে উঠে, “দোস্ত মহুয়া ভাবি আগামী পাঁচ বছর আর আমার ভাবী হবে না রে….”
শায়ান এবার সম্পূর্ণ বিরক্তি নিয়ে তাকায় তার দিকে।

“হেঁ? কী হইসে? তোর ভাইয়ের বিয়ের জন্য তুই কাঁদছিস?” জিনি ফোনের ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করে। আসলেই অবাক হয়ে।
“তুই কী করে বুঝবি? তুই তো মহুয়া আপিকে চিনিস না। আপু এত জোস, এত মজার, এত কুল। আমি কত প্লান করেছিলাম জানিস? আমি তো লিস্ট করে রেখেছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছরে বিয়েই হবে না। ততদিনে তো বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দিবে। তাহলে আমি উইশলিস্ট কীভাবে সম্পূর্ণ করব?”

শায়ান তখন পাশ থেকে বলে, “পাঁচ বছর পড়েও হবে না।”
এই কথায় পূর্ণি মুখ ফুলিয়ে তাকায় তার দিকে। পরিবর্তে শায়ান চোখ রাঙিয়ে তাকালে সাথে সাথে সোজা হয়ে বসে। কাঁদোকাঁদো গলায় বলে, “রাখি দোস্ত। কষ্ট শেয়ার করে মন হাল্কা হলো। নোটসের ছবি পাঠিয়ে দিব নে।”
“এক মিনিট দাঁড়া। নাম কী বললি? মহুয়া? শায়ান ভাই, তিসান ভাইদের ভার্সিটিতে যে পড়ে। ”
“হ্যাঁ, কেন?”
“এমনিই। আচ্ছা রাখি।”

ফোন রাখার পর জিনিকে বেশ উৎসুক দেখা যায়। সে মহুয়া নামক মেয়েটার উপর আগে থেকেই বিরক্ত ছিলো। যখন থেকে শুনেছিল তিসানের সাথে তার সম্পর্ক আছে সে তখন থেকেই। এর উপর একদিন তার ভাই মেয়েটার জন্য বকলো। এখন তাদের সামনে মেয়েটার কুকীর্তি তো ফাঁস করতেই হবে।

সে নেচে নেচে গেল ব্যাকইয়ার্ডে গেল। দেখল তিসান ও জাহান বাস্কেটবল খেলছে। তিসান জাহান থেকে বল নেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। জাহান কোনোমতেই তার হাতে বল আসতে দিচ্ছে না। শেষমেশ জাহানই বাস্কেটে বল মেরে গোল করল। আর জিনি হাত তালি দেয় জোরে৷

হাত তালির শব্দে দুইজনে তাকায়। তিসান জিনিকে দেখে জিজ্ঞেস করে, “আরে জিনি তুমি কখন এলে?”
“এলাম মাত্রই। একটা নিউজ দিতে এসেছি। বিশেষ নিউজ আপনার জন্য। ”
“আমার জন্য? কী নিউজ?”
জিনি একগাল হাসে। হাতদুটো পিছনে নিয়ে দুলতে দুলতে বলে, “কয়েকমাস আগে আপনাদের ভার্সিটিতে এসে আপনার সাথে একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। মনে আছে?”
“মহুয়া?”
“হ্যাঁ মহুয়া।”
জাহান বল নিয়ে খেলছিল। তার ধ্যান ছিলো সেদিকেই। জিনির মুখে হঠাৎ মহুয়ার কথা শুনে সে তাকায় সামনের দিকে। আগ্রহ আসে তার কথাটা শোনার। সে এগিয়ে যেয়ে জিজ্ঞেস করে, “মহুয়ার কথা আবার তুই কীভাবে জানলি? আর কী জানলি?”
“জানি জানি। জিনি সব জানে। যে মেয়ের জন্য তুমি আমাকে বকা দিয়েছিলে সে মেয়ের সাথেই শায়ান ভাইয়ার বিয়ের কথা চলছে।”
কথাটায় কপাল কুঁচকে যায় জাহানের, “হোয়াট রাবিশ! কী ফালতু কথা বলছিস?”
“ফালতু না সত্যি। সে প্রথমে তিসান ভাইয়ার সাথে সম্পর্কে ছিলো, এরপর তোমার সাথে ঘুরলো এখন শায়ান ভাইয়ার সাথে বিয়ে করছে। পূর্ণি নিজে আমায় বলল।”

জাহান বলটা ধরে এত জোরে ফিক্কা মারল যে জিনি তো ভয়ে লাফিয়ে উঠে। তার হাতের মুঠো বন্ধ হয়ে যায়। হাতের রগ কাঁপতে থাকে। সে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় জিনির দিকে, “আমি কোনোভাবে যদি জানতে পাড়ি তুই আমার সাথে এত জঘন্য মজা করেছিস তাহলে তোর অবস্থা অনেক খারাপ হবে।” বলে এক মুহূর্তও সেখানে থাকে না। রাগে হনহনিয়ে চেয়ার থেকে নিজের জ্যাকেট নিয়েই বের হয়ে যায় সে। তিসান সামনে এসে তাকে থামায়, “দোস্ত একটু কথা তো শুন…”
জাহান তার কলার ধরে চোখ দিয়েই শাঁসায়,”আমার মাথায় আগুন জ্বলছে। একটা কথাও মুখ দিয়ে বের করবি না।” তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।

তিসান তো মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জিনি ভীত সুরে জিজ্ঞেস করে, “তিসান ভাইয়া আমি কি কিছু ভুল বললাম?”
তিসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “ভুল তো বলেছ বটে কিন্তু কি করার। যেমনে রাগে বের হয়েছে মহুয়াই একে ঠিক করতে পাড়বে।”
“কিন্তু আপনার পরিবর্তে ভাইয়া রাগ হচ্ছে কেন? মেয়েটা তো আপনার গার্লফ্রেন্ড। ”
“এ কথা তোমায় কে বলল।”
“ভার্সিটি থেকে শুনেছি।”
তিসান গভীর নিশ্বাস ফেলে। জিনির দুই কাঁধে হাত রেখে তাকে সোজা দাঁড় করায়। বলে, “শুনো মহুয়াকে কেবল জাহান ভালোবাসে। আমার জাহানের সাথে ঝামেলা ছিলো বলে ওকে জ্বালানোর জন্য নাটক করেছিলাম কিন্তু মহুয়া আমার বোনের মতো বুঝলে? আর মহুয়াই তো আমার ও জাহানের মধ্যে সব ঠিক করল। তাই ওকে নিয়ে ভুল ধারণা রেখো না। ঠিকাছে?”
অর্ধেক কথা তো জিনির কানেই ঢুকে না। তার সম্পূর্ণ ধ্যানই তিসানের মধ্যে। তিসান তার কাঁধে হাত রেখেছে এই অনুভূতিতেই তার মন নেচে উঠলো। সে যখন অনুভূতিটা অনুভব করে বোকার মতো হাসে, তখনই তার টনক নড়ে। সে আচমকা বলে উঠে, “জাহান ভাইয়া মহুয়াকে ভালোবাসে? কবে? কেমনে? কীভাবে?”
.
.
মহুয়া উপরে এসে তার ওড়না খুলে রাখে। হাতের রিং খুলতে খুলতে বকতে থাকে সবাইকে। একতো তাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছে। এর উপর নিচে কথা কাটাকাটি হয়েছে একঘন্টা ভরে। মাথা ধরিয়ে দিয়েছে তার। এর উপর এতকিছু পরিয়ে দিয়েছে তাকে।

মহুয়ার এই মুহূর্তে প্রচুর বিরক্ত লাগে। সে কানেরদুল খুলতে নিলেই ফোন বাজে। সে ফোনের কাছে যেয়ে দেখে জাহান কল দিচ্ছে। সে ঘড়ি দেখে। রাত বাজে এগারোটা পনেরো। এখন কল দিয়েছে কেন?
সে কল ধরে বলে, “হ্যালো…”
“নিচে আসো। রাইট নাউ।”
জাহানের এমন হুকুমের কন্ঠ শুনে মহুয়ার কপাল কুঁচকায়। রাগও উঠে তার। সে উল্টো ক্ষেপে যেয়ে বলে, “মামার বাড়ির আবদার? বললেই আমি ঠ্যাং ঠ্যাং করে এসে পড়বো। এত রাতে ডাকছ কেন?”
“শুনেছি তোমার বিয়ের কথা চলছে শায়ানের সাথে। শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। এখন কী তোমাকে চিনে ডাকার আমন্ত্রণ নিয়ে উপরে আসবো?”
একথা শুনে মহুয়া দেবে যায়। জাহান যদি তার বিয়ের কথা শুনে তাহলে নিশ্চিত এটাও প্রশ্ন করবে যে শায়ানের বাড়ির লোকেরা তাকে চিনে কীভাবে? এক ঢোক গিলে সে। এই খবর জাহানের কানে গেল কীভাবে?

চলবে….