মেঘের খামে…
পর্ব ৪৯
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
“আমার হবু বউ। আমার অর্ধাঙ্গিনী। আর যদি তাও আমাদের সম্পর্কের সার্টিফিকেট লাগে তাহলে মা কাজি ডাক দেও, আজই আমাদের বিয়ে হবে।”
মুরাদের এমন বাক্য শুনে মৃণা হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে রইলো। তার বুকের ভেতর ফরফর করে উঠলো। কেমন এক বিস্ফোরণ ঘটলো তার হৃদমাঝারে। ভয়, আতঙ্ক আশ্চর্য।
এরই মধ্যে কন্ঠ শোনা গেল, “অসম্ভব। আজকে মৃণার সাথে তোমার বিয়ে হবে। এটা নিতান্তই অসম্ভব। আমি থাকতে এটা হতে দিব না।”
মহুয়ার মুখে এই কথা শুনে সবাই আরও বড় ঝটকা খেল। এমনকি ফুপি ও সিনথিয়াও।
তারা সকলে যখন বিস্ময়ের ঘোরে তখন মহুয়া আবারও বলল, “মোহের বাচ্চাও ফট করে বিয়ে সেরে ফেলেছে। এখন মৃণাও। তোমরা কী চাও এই জীবনে আমার বান্ধবীদের বিয়ে ঠুসঠাস করে করে ফেলবে। আমি তাহলে মজা করবো কার বিয়েতে? তোমাদের বাচ্চাদের বিয়েতে? এর উপর আমার ভাইয়ের সাথে। আশ্চর্য! মানে আমার জীবনে কোনো অনুষ্ঠান হবে না? আমি নাচবো কার বিয়েতে? ধ্যুর ছাই। ভাল্লাগে না! এসব নাটক একদমই চলবে না। বিয়ে এই শুক্রবারে হবে। বড় অনুষ্ঠান সহ হবে।”
মুরাদ বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আর চারদিনে অনুষ্ঠানের সব করবে কে?”
“আমি আছি না?”
মুরাদ ভ্রু উঁচায়, “তোর মতো আইলসা এক বিয়ের সব কাজ করবে?”
“আমি কখন বললাম আমি করবো? আমি মানুষকে দিয়ে করাবো। এই কাজে তো আমি এক্সপার্ট। আজ বিয়ে করার চরম বিরোধিতা করছি আমি। আজ আমার বান্ধবীকে তোমাকে দিব না। শুক্রবার নিয়ে যেও।”
মহুয়ার মা’ও তাল মেলায় মেয়ের সাথে, “মহুয়ার বিয়ে দিবি না পাঁচ বছর। তাহলে কী এতবছর আমরা কোনো উৎসব করবো না। ধুমধামে বিয়ে হবে।”
ফুপি তো অসম্ভব বিস্ময়ে বলেন, “আমরা এখানে চলে যাচ্ছি আর তোরা বিয়ে নিয়ে গবেষণা করছিস? তাও আমাদের সামনে।”
মহুয়া তার কথা বাতাসে উড়িয়ে দেয়, “ফুপি আপনারা মোটেও আমন্ত্রিত না। তাই আপনাদের এইসব কথায় কান দেবার প্রয়োজন নেই।”
ফুপি রাগে গজগজ করতে করতে সিনথিয়াকে বলে, “দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আরও বেইজ্জতি করাবি? ব্যাগ গুছিয়ে চল। এখনই বাড়িতে রওনা দিবো।”
সিনথিয়া তখনও গালে হাত দিয়ে ছিলো। সে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো অজান্তেই। তারা সেখান থেকে ক্ষেপে গেল রুমে।
মহুয়া তো শব্দ করে হেসে দেয়। তার বাবার কাছে যেয়ে কাঁধে হাত রেখে বলে, “বাহ বাবা তুমি তো একবাক্যেই পুরো ফাঁটিয়ে দিলে। প্রমাণ করে দিলে আমারই বাবা।”
বাবা তার মাথায় চাটি মেরে বলে, “তোর মুখ বেশিই চলে। লাগাম দিবি। মৃণাকে নিয়ে এখন ঘুমুতে যা।”
বলে বাবা চলে গেলেন। মা বললেন, “মুখে না বললেও তোর বাবার মন খারাপ তো হয়েছে। আমি দেখে আসছি।”
“আচ্ছা দেখে আসো। পরে মন না ভালো হলে আমি তো আছি। সকালে চা’য়ে আড্ডা দিয়ে মন ভালো করে দিবো।”
তারা যাবার পর মৃণা শুধায়, “এ’কি করলেন আপনি মুরাদ ভাই? কিসের বিয়ে? কেমন বিয়ে? আপনি হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পাড়েন না। কোনো বিয়ে হবে না।”
“তুই বলেছিলি না তোর এই বাড়িতে কোনো অধিকার নেই। এখন আমার সমান তোর অধিকার আছে। তুই কোথাও যেতে পাড়বি না।”
“আমি এখানে থাকতে পাড়বো না। আর না আপনাকে বিয়ে করতে পাড়বো।”
“আর আমি তোকে এই বাড়ি ছেড়ে যেতে দেব না। তোর ইচ্ছা আমি সারাদিন তো চিন্তা ম’রি তাই না?”
“কী বলছেন এসব মুরাদ ভাই?”
মহুয়া প্রশ্ন করলো, “তুই আমাকে বলেছিলি তুই বিয়ের জন্য রাজি। বলেছিলি কি’না?”
“আমি তো…”
“হ্যাঁ কি না?”
“হ্যাঁ কিন্তু… ”
“তাহলে ফাইনাল। আগামীকাল না…না আগামীকাল না পুরশু আমরা বিয়ের শপিং এ যাচ্ছি। আমি এখনই মোহকে এই সংবাদ দিয়ে আসে। ও তো খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। এমনিতেই শালী আমার দুলুভাইকে পেয়ে আমাদের ভুলেই গেছে।”
মহুয়া দৌড়ে গেল।
সে যাবার পর মুরাদ তার সামনে বসলো হাঁটু গেড়ে। তাকাল তার দিকে, “কী সমস্যা? আমাকে তোর ভালো লাগে না? আমি কী খারাপ?”
“কী বলছেন আপনি মুরাদ ভাই? আপনি আমার দেখা শ্রেষ্ঠ পুরুষ।”
“তাহলে কী সমস্যা? মা বাবাও কত খুশি দেখেছিস। তুই তো চিন্তায় ছিলি তারা মানবে না।”
“আমি আপনার অযোগ্য মুরাদভাই। আমাদের কোনো মিল নেই। মানুষ হাসবে।”
“এমন নিচু মনের মানুষদের পরোয়া মুরাদ করে না। এই পৃথিবীতে আমি কেবল তোকে চাই। কিন্তু তোর উপর আমি জোর করবো না। এই সম্পর্ক নামের থাকবে। তোকে যেন আমি নিজের চোখের সামনে রাখতে পাড়ি। তোকে রক্ষা করতে পাড়ি। যেদিন তুই নিজেকে রক্ষা করার যোগ্য হবি ওদিন একবার বললেই তোকে মুক্ত করে দিবো। তুই… তুই অন্য যোগ্যকাওকে চাইলে তার হাতেও তুলে দিতে রাজি। তবে কেবল এই পৃথিবীতে। ওই পৃথিবীতে আমি আল্লাহর কাছে তোকে চেয়ে রেখেছি।” শেষ কথাটা বলতে যেয়ে গলা ধরে এলো মুরাদের। বুক কেঁপে উঠে। সে মৃণার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “তুই যতদিন না চাইবি এই সম্পর্ক আমি নিজের সীমানায় থাকবো আর যদি কখনোই আমাকে না চেয়ে থাকিস তাহলে চলে যাবি কিন্তু তোকে এমন বিপদে আমি আর পড়তে দিতে পাড়বো না। তোর উপর এমন বিপদ এসেছে লামিয়া যখন জানাল তখন আমার উপর দিয়ে কি গেছে তুই জানিস না। মনে হয়েছে আমার পৃথিবী উজাড় হয়ে গেছে। প্লিজ মৃণা, বিয়েটার জন্য রাজি হয়ে যা।”
.
.
ঈশা কল দিচ্ছিল মোহকে দুই তিনদিন ধরে। আজ ধরল কলটা। কথা বলছিল তারা। মোহ বলল,
“সরি আপু আমার জন্য তোমার বিয়ের সম্পূর্ণ ফাংশন টা নষ্ট হয়ে গেল।”
“পাগল তুমি? উল্টো আমার সরি বলা উচিত। আমি তোমাকে আমন্ত্রণ করেছিলাম আর এখানে এসে তোমার সাথে…” ঈশা গভীর নিশ্বাস ফেলে, “কারিম খারাপ আমি জানতাম। কিন্তু এত বাজে হবে এটা কখনো কল্পনাও করিনি। আমার ভাই নেই। একসময় ওকে ভাই ভেবেছিলাম এটা ভেবে আমার ঘৃনা আসছে। সমুদ্র একদম ভালো শিক্ষা দিয়েছে। নিজের চেহেরাও আয়নাতে দেখতে পাড়বে না।”
“মানে?” অবাক হয় মোহ।
“ওদিন সমুদ্র যখন ওর উপর হামলা করেছিল তখন গাড়ির কাঁচে ওর মুখ মে’রে দেয়। কাঁচ সম্পূর্ণ না ঢুকলেও অনেকখানি কেটে গেছে। আর হাতেও প্লাস্টার করা। হাত ভেঙে গেছে।”
মোহ উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করে, “ওরা উনার কোনো ক্ষতি করবে না-তো?”
“তুমি এখনো ওর চিন্তা করছো মোহ?” পড়ে এক গভীর নিশ্বাস ফেলে ঈশা।
“কী করবো আপু? ভালোবেসে তো ফেঁসে গেলাম আমি। না উনার সাথে থাকতে পাড়ছি আর না উনাকে ভুলতে পাড়ছি।”
“সমুদ্রও দুপুরে একই কথা বলল।”
মোহের কপাল কুঁচকায়। তার কন্ঠে খানিকটা ক্রুদ্ধতা বিদ্যমান, “উনার এক অবস্থা হবে কেন আপু? উনি কখনো তো আমাকে ভালোবাসে নি। ভালোবেসে অপরাধ করেছি আমি। তাইতো উনার দোষের শাস্তিটাও আমি পাচ্ছি।”
“তুমি নিশ্চিত ও কখনো ভালোবাসে নি?”
প্রশ্নটা শুনেই মোহের হৃদমাঝারে কেঁপে উঠে। তার কোমল হৃদয়খানায় সূক্ষ্ম ব্যাথা হয়।
তবুও সে শক্ত গলায় বলে, “আপনার মনে হয় ভালোবেসেছে?”
“ওর চোখে দেখতে পাও না?”
“সব মিথ্যে। উনার চাহনিতে যাবেন না, উনার ব্যবহার দেখে ভাববেন না উনি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। আমিও ভেবেছিলাম। চরম ভুল ছিলো।”
“তোমাকে ছাড়া ওর বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে গেছে। ওর অবস্থা করুণ হয়ে গেছে মোহ। ও অনেক কষ্টে আছে মোহ, ওর এমন অবস্থা একবার দেখেছি। আর দেখতে পাড়ছি না। তোমাকে বলতে পাড়ি না কিন্তু বন্ধুর জন্য অনুরোধ করতে পাড়ি, একবারের জন্য ক্ষমা করে দেও।”
মোহের গলা জড়িয়ে আসে, “তবুও তো একবারও তো বলে নি যে ভালোবাসে।”
“বললে ক্ষমা করে দিতে?”
“না, স্বস্তি পেতাম। অন্তত উনিও আমার মতো কষ্ট পাচ্ছে।”
“হয়তো আরও বেশি পাচ্ছে।”
“ভুল।”
ঈশা গভীর নিশ্বাস ফেলে, “ওর তো কষ্ট দ্বিগুণ হবার কথা, ও জানে নিজের ভুলে ও তোমাকে হারানোর পথে। পীড়া ও অপরাধ ওকে শেষ করে দিচ্ছে মোহ। একটু বারান্দায় যাও। আশেপাশে তাকালে একঝলক দেখতে পাবে। আমাকে জানাতে মানা করেছিল। তোমার খবর নিতে বলেছিল। গত তিনদিন ওর কথাতেই এতবার কল দিয়েছি।”
মোহের নিশ্বাস আটকে এলো। সে কোনো উওর দিলো না। সে সমুদ্রকে এই মুহূর্তে দেখতে চাইলো না।
ঈশা আবার জানাল, “সমুদ্র কারিমের ব্যবসায়ের খোঁজ নিচ্ছে। আমাকেও নিতে বলেছে। সবাইকে এই কাজে লাগিয়েছে।”
“কেন?”
“তোমার পক্ষ থেকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু সরাসরি তোমার নাম আসতে দিবে না। একথাও বলতে মানা করলো তবুও বলে দিলাম। আমার পেটে আবার কোনো কথা থাকে না। জানোই তো।”
একথায় খানিকটা হাসে মোহ।
শব্দ শুনে শান্তির নিশ্বাস ফেলে ঈশা, “তোমাকে হাসলে অনেক সুন্দর লাগে মোহ। কান্না করলে না। তোমার স্বস্তির জন্য এক কথা বলি?”
“বলুন।”
“সমুদ্রও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। হয়তো তোমার থেকে কম, হয়তো তোমার থেকেও বেশি। আজকের মতো কল রাখি। একটু বারান্দায় যেও। আমি কল দিলে একটু বারান্দায় যাবে। আমার বন্ধুটা নাহলে শেষ হয়ে যাবে মোহ। জানি, অনুরোধটা ভীষণ স্বার্থপর। তবুও বড় বোন হিসেবে এই অনুরোধ করছি।”
“রাখি আপু।”
ফোনটা রাখতেই দেখে মহুয়া কয়েকবার কল করে ফেলেছে। এতক্ষণ টের পাইনি। সাথে সাথে কল ব্যাক করল সে, “হ্যালো..”
“হ্যালোর বাচ্চা, দুলুভাইকে পেয়ে কী আমাদের কথা আর মনে পড়ে না? থাকিস কই তুই? এখনো চট্টগ্রাম থেকে আছিস নি?”
“এসেছি। তোকে কিছু বলার ছিলো।”
“তোর কথা পরে বলিস। আগে আমাকে বলে ঢাকায় এসে পৌঁছালে ম’রছোস কোথায়? জানিস তোর পিছনে কতকিছু হয়ে গেছে?”
মোহ চমকে যায়, “কী হয়েছে?”
“বিশ্বের সব কাহিনী ঘটে গেছে মেডামের খবর নেই।”
“তোর সাথে না মৃণার সাথে?”
“দুইজনেরই। মৃণারটা আপাতত গুরুত্বপূর্ণ বেশি।”
“কী হয়েছে?”
মহুয়া সব ঘটনা বিস্তারিত বলল মোহকে। শুনে প্রথমে মোহ ভড়কে যায় পড়ে চমকিত হয়, “মৃণার বিয়ে হচ্ছে! ঠিক বলছিস তো?”
“তো বলছি কী? এই শুক্রবারই করাবো। অনেক কাজ। কিন্তু আগামীকাল অন্য কাজ আছে।”
“বুঝে গেছি। আমারও শরীর জ্বলে উঠেছে ঘটনা শুনে। ওই ছেলেগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে তাদের নরক না দেখানো পর্যন্ত।”
“সেইম ফিলিংস জান।”
“শুক্রবারের আগেই মৃণাকে এই গিফটটা দিতে হবে। কোনো পর পুরুষ শরীরে হাত দিলে কতটা জঘন্য লাগে তা বুঝি। সারা শরীর ঘিনঘিন করে। মনে হয় আমি নিজেই নোংরা হয়ে গেছি। ইচ্ছে হয় শরীরের সে-ই অংশটা ছিঁড়ে ফেল দিতে।” বলে এক ঢোক মোহ। সেদিন কারিমের নোংরা স্পর্শের কথা মনে করে আবার ঘিন লেগে যায় তার।
ফোনের ওপাশ থেকে মহুয়া প্রশ্ন করে সন্দিহান ভঙ্গিতে, “তোর সাথে কী হয়েছে মোহ?”
মোহের ধ্যান ভাঙে, “আমার…না না আমি তো মৃণার কথা বলছিলাম।”
“মিথ্যা বলতে আসবি না আমার সাথে। বল।”
মোহ তাকে কারিমের কথাটা স্পষ্ট বলল। কিন্তু সমুদ্রের কথা কিছুই জানাল না। এত ঝামেলার মধ্যে আরেক চিন্তা সে মহুয়া আর মৃণাকে দিতে চায় না। তাই আপাতত এই কথাটা আড়াল করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। মৃণার বিয়ে শেষে জানাবে।
সবটা শুনে মহুয়া রাগে কটমট করতে করতে বলে, “কাঁধে আয়না কেন ভাঙলি মাথায় ভাংতি। একবারে উপরে উঠে যেত। দুলুভাই কই ছিলো? ছেড়ে দিলো কীভাবে ওই হারামিকে?”
মোহ খানিক সময় নেয় উওর দেবার জন্য। মিনমিনে স্বরে বলে, “উনিও না’কি মেরে হাস্পাতালে পৌঁছে দিয়েছে। মুখের অর্ধেকে কাঁচ লেগে গেছে। দাগ যাবে না সহজে। এছাড়া আমার নাম না আসুক এভাবে শাস্তি দেওয়ার উপায় খুঁজছে শুনলাম।”
মহুয়া গভীর এক নিশ্বাস ফেলে, শান্তির নিশ্বাস।
“এই নাহলে আমার দুলুভাই। তুই আর মৃণা এত ভালো জীবনসঙ্গী পেয়েছে এটা ভাবতেই আমি কত শান্তি পাই তোকে বুঝাতে পাড়বো না।”
মোহ এক ঢোক গিলে। বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে আসে তার। তার অচেনা বেদনার ঢেউ উপচে পড়ে বুকের সাগরে। সে খুবই কৌশলে সে বেদনা কন্ঠ থেকে লুকিয়ে প্রশ্ন করে, “তুইও তো পেয়েছিস। জাহান ভাই কত ভালোবাসে তোকে।”
মহুয়া ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে, “কাল আয় কাহিনী বলছি ওই বলদের।”
“আবার কী হয়েছে?”
“নয়টায় ক্যান্টিনে থাকিস। তার নাটকীয় কাহিনী শুনাবো।”
“আচ্ছা। মৃণার খেয়াল রাখিস। আমি ভার্সিটি থেকে তোর বাসায় যাব।”
“আবার জিগায় বিয়ে পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে তোর। আমি তো আন্ডাও বুঝি না কিছুর। রাখি তাহলে।”
“আচ্ছা।”
ফোন রাখার পর মোহ তাকাল বারান্দার দিকে। তার বুকের ভেতরটা ভার হয়ে আছে। সে নিজেকে বলতেছিল, কিছুতেই সেই বারান্দায় যাবে না। দেখবে না সে মানুষটার মুখশ্রী। অথচ এই বেহায়া মন, তার বারণ শুনলো না। তার দোষে ছুটে গেল সে৷ বারান্দায় দাঁড়িয়ে গ্রিলে হাত রেখে দাঁড়াল। তার চোখে চোরা ভঙ্গিতে খুঁজলো তার শ্যামসুন্দর পুরুষটিকে। যাকে চরমভাবে ঘৃণা করে সে। সরাসরি তাকে দেখতে পেল না। বাসার সামনে সে নেই। কিন্তু চোখের একটু নড়াচড়াতেই তার সন্ধান খুঁজে পাওয়া গেল। খানিকটা দূরে দাঁড়ানো সে। মাস্ক পরা। এতোতা দূরে থেকেও এক পলকেই সে চিনে ফেললে। তাকে দেখতেই বুকের ভেতর কেমন ভার হয়ে এলো। সাথেই উষ্ণতায় ভরে গেল। একপলক দেখেই চোখ সরিয়ে নিলো। মুখ ফিরিয়ে আবারও ফিরল তার রুমে। গালে আলতো হাত ছুঁলো। কখন ভিজলো বুঝে নি। কেন সে এমন পুরুষকে ভালোবাসলো যে তার হাজারো চোখের জলের কারণ?
.
.
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙে মৃণার। তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। শরীরের ব্যাথাটা একটু কমলেও উঠে বসতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ সে নিজ হাতে এক উষ্ণতা অনুভব করলো। পাশ তাকিয়ে দেখে মুরাদ মেঝেতে বসে তার হাত ধরে আছে। লাইট জ্বালানো থাকায় স্পষ্ট দেখল সে। বিছানায় মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেছে। সে আশ্চর্য হলো! মুরাদ সারারাত কী তার হাত ধরা ছিলো?
নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে সে মুরাদের দিকে। সে সবসময় ভাবতো তার ভাগ্যে ভালোবাসা নামক শব্দটা মাত্রা খুবই কম। অথচ এই মানুষটা তাকে এত ভালোবাসে! মানুষ কোনো আশা ছাড়াও কাওকে ভালোবাসতে পাড়ে?
সে ঝুঁকে মুরাদের চুলে আলতো হাত ছুঁয়ে দিলো। সাথে সাথেই তার বক্ষপিঞ্জরে কেমন একটা অনুভূতি পেল সে। খুশির অনুভূতি। নিজ অজান্তেই তার ঠোঁটের কোণে হাসি এঁকে উঠে।
.
.
মোহ ও মহুয়া আউটডোর ক্যান্টিনে বসেছিল। জাহান এলো তখন। শার্টের হাতা কণুই পর্যন্ত তুলে বসতে যাবে আর দেখে মোহ তার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন এখনই বোম্ব হয়ে ব্লাস্ট হবে। সে জোরপূর্বক হাসল, “অনেকদিন পর দেখা হলো তোমার সাথে।”
“হ্যাঁ, আর আমি তো শুনেছি এই অনেকদিনে আপনি অনেক ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমাদের কী ডিল হয়েছিল? আপনি বলেছিলেম ওকে একটু কষ্ট দিলে যা ইচ্ছা শাস্তি দিতে পাড়ি। সব মাথা পেতে নিবেন।”
জাহান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কিন্তু নিজের ওয়াদা তার মনে আছে। সে স্থির স্বরে বলে, “মনে আছে। যা ইচ্ছে শাস্তি দিতে পাড়ো।”
“তা তো দিবোই। আপনার শাস্তি হলো জলদি বলেন, এসব করার কারণ কী? মহু আমাকে সব জানিয়েছে। আপনাকে কে জোর করে এসব করাচ্ছে তা বলুন।”
মহুয়া চোখ বড় বড় করে তাকায় মোহের দিকে। তারপর কাঁধে চাপড় মেরে বলে, “সাব্বাশ দোস্ত। এইটা তো আমার মাথায় আসে নাই। কথা বের কর জলদি।”
জাহান বিরক্তি নিয়ে তাকায় মহুয়ার দিকে। শুধায়, “আমরা কী আগে মৃণার ব্যাপারটা সলভ করতে পাড়ি?”
মহুয়া ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে হেলান দেয় চেয়ারে। উওর দেয়, “হ্যাঁ এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতেও সময় কম। শুক্রবারের আগে সব করতে হবে।”
“কেন শুক্রবার কী?”
“বিয়ে।”
চমকে যায় জাহান। উঠে দাঁড়ায় সাথে সাথে, “বিয়ে? কার বিয়ে?”
“তোমার কাহিনীর জন্যও আমি টুস করে বিয়ে করে বসবো না। বসো তো। মৃণার বিয়ে।”
“কার সাথে?” জাহান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বসলো।
“আমার ভাইয়ের সাথে।”
“কী? তোমার ভাইয়ের সাথে মৃণার বিয়ে? ওয়াও, তোমার ভাই তো চালু জিনিস। বোনের বিয়ে দিবে না, নিজে ঠিকই বিয়ে সেরে নিবে।”
কথায় ক্ষেপে যায় মহুয়া, “তোমার এত বড় সাহস আমার ভাইয়ের ব্যাপারে এসব বলো। মাথা ফাঁটায় দিবো।”
মোহও তার পক্ষ হয়ে বলে, “আপনারও এনগেজমেন্ট। মুরাদ ভাই তাও তো নিজের প্রেমিকাকে বিয়ে করছে। আপনি তো তাও করতে পাড়লেন না। আপনারা পুরুষজাতই খারাপ। সারাজীবন সঙ্গ দিতে না জানলে স্বপ্ন দেখান কেন?”
“এই আমার ভাই আর দুলুভাই এত ভালো। এই হনুমান চেঁকামেঁকার জন্য সারা পুরুষ জাতে কলঙ্ক মাখবি না।”
জাহান বিড়বিড় করে বলে, “আমার সম্বন্ধীসাহেবেরও দোষ আছে। উনার পাঁচ বছরের পলিসির জন্য, নাহলে আগেই বিয়ে সেরে রাখতাম। না সে এই পলিসি করতো আর না এই ঝামেলায় ফাঁসতাম। ফাঁসানোর সময়ই দিতাম না।”
“এই বিড়বিড় করে কী বলছো?” মহুয়া জিজ্ঞেস করে।
“কিছু না। আমাকে বকা হলে আমরা মৃণার কথা বলি? ওকে জিজ্ঞেস করেছ? অন্যকেউ ছেলেগুলোকে দেখেছিল? তাদের কাছে যেয়ে খোঁজ নেওয়া যাবে।”
“ওদের গলিতে এক চা’য়ের দোকান আছে এখানে মহিলাটাই ওকে না’কি বাসায় পৌঁছে দিয়েছিল। এছাড়া যে রিকশা দিয়ে এসেছিল সে রিকশাওয়ালা মামাও দেখেছি।”
“তাহলে আমরা ওখানে দেখা না করে এখানে কী করছি? রিকশাওয়ালাকে তো চিনবো না। চা’য়ের দোকানে যাই। মহিলার সাথে কথা বলি।” মোহ জিজ্ঞেস করে।
“ঠিক বলেছ। তাহলে চলো জলদি যাওয়া যাক।” জাহান বলে।
তারা সকলে পার্কিং-এ যায়। মহুয়া স্কুটির কাছে গেলে জাহান জিজ্ঞেস করে, “স্কুটি দিয়ে কী করবা?”
“উড়োজাহাজ করে আকাশে উড়াবো। আমি মোহকে নিয়ে স্কুটি দিয়ে মৃণার বাসার সামনে যাব।”
“আমি ওর বাসা চিনি না’কি? একটু বুদ্ধি তো ইউজ করো। আর কত জায়গায় যেতে হতে পাড়ে! গাড়িতে বসো, গরমে শরীর খারাপ হয়ে যাবে পড়ে।”
“আমি গাড়িতে বসলে তোমার বাগদত্তা আবার মাইন্ড করবে না তো।”
জাহান গভীর নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে, “প্লিজ মেডাম আমার উপর দয়া দেখিয়ে গাড়িতে উঠে বসুন।”
মহুয়া প্রচুর ভাব নিয়ে গাড়িতে উঠলো। তার উঠার পর জাহান দেখে মোহও তার দিকে তাকিয়ে আছে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে। যেন কাঁচা চিবিয়ে খাবে। সে ভ্যাবাচেকা খেল। সে ভেবেছিল এই ফ্রেন্ডগ্রুপে কেবল একা মহুয়ার রাগ আছে। এখন দেখছে মৃণা বাদে দুইজনই আগুনের গোলা।
জাহান জোরপূর্বক হেসে মোহকে উঠতে বলে। মোহ চোখ ঘুরায়। উঠে বসে গাড়িতে। মহুয়া সিটে পা তুলে ঘুরে পিছনে তাকায়, “দুলুভাই এলো না কেন? তুই নিশ্চয়ই ঘটনাটা জানাস নি তাই না?”
তব্দা খেল মোহ। মহুয়াকে আপাতত কিছু জানাতে চাচ্ছে না সে। তাদের ঝামেলা শেষ হলে শান্ত মাথায় জানাবে। এখন নাহলে আরেক চিন্তায় ভুগবে তারা। সে আমতা আমতা করে বলে, “উনি একটু কাজে ব্যস্ত।”
“কাজে ব্যস্ত? কী এমন ব্যস্ত যে তার শালীসাহেবাদের জন্য একটুও সময় হয় নি। তুই নিশ্চিত কিছু বলিস নি। বললে দুলুভাই ঠিক আসতেন। আমিই কল দিচ্ছি।”
চমকে উঠে মোহ। সাথে সাথে বলে, “না না আমিই দিচ্ছি। তুই বস। আমি দিচ্ছি।” বলে তাড়াহুড়ো করে ফোন বের করে। তার এমন ব্যবহারে খটকা লাগে মহুয়ার। কিন্তু জাহানের কথায় তার ধ্যান ফিরে যায়, “এমন বান্দরনীর মতো ঝুলে না থেকে সোজা হয়ে বসো। সিটবেল্ট লাগাও।”
মহুয়া তার দিকে তাকায় সরু দৃষ্টিতে, “মুখ বেশি বেড়েছে না? সেলাই করে দিবো। বেয়াদ্দব হনুমান চেঁকামেঁকা।”
মোহ তাকাল তার ফোনের দিকে। ফোনটা বের করে পড়লো দ্বিধায়। কল দিবে সমুদ্রকে?
একপলক তাকাল মহুয়ার দিকে। এক থেকে দুই হলে এই মেয়ে সন্দেহ শুরু করবে। তারপর করবে গোয়েন্দাগিরি। আপাতত এসব জানানো যাবে না।
সে সমুদ্রকে কল দিতেই মুহূর্তও লাগে না কল ধরতে।
“মধু…মধু তুমি আমাকে কল দিয়েছ? সব ঠিক আছে? তুমি ঠিক আছো?”
মোহ স্বাভাবিক কন্ঠে বলার চেষ্টা করে, “আপনার অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ না থাকলে একটু আসতে পাড়বেন?”
“তুমি যেখানে বলবে আমি সেখানেই এসে পড়বো।”
“হ্যাঁ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মৃণার সাথে কয়েকটা ছেলে জোর জবরদস্তি করেছে। তাদেরকেই ধরতে যাব। মহুয়া আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিল। আমি আপনাকে এড্রেস পাঠাচ্ছি। আসতে পাড়বেন আপনি?”
“এক্ষুণি আসছি।”
.
.
মৃণা বিছানায় বসে ছিলো। অথচ তার দৃষ্টি বাহিরে। সে আনমনে তাকিয়ে থাকে জানালার ওপাড়ে।
“কী ভাবছিস?” ভারী পুরুষালী কন্ঠ ধ্যান টানে তার। দেখে মুরাদ এসেছে। তার হাতে খাবারের ট্রে।
“অফিসে যান নি?”
“তোকে এই অবস্থায় ছেড়ে আমি যাব?”
“আমি তো এখন ঠিকই আছি।”
“দেখতে পাড়ছি তা। দেখি ঠিক করে বস, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
“আমি খেতে পাড়বো।”
“তোকে কী আমি জিজ্ঞেস করেছি? বলছি।”
মুরাদ রুটির এক টুকরো ছিঁড়ে ডিম দিয়ে যত্নসহকারে মুখে তুললো মৃণার। মৃণা তা মুখে নিলো। কিন্তু তার দৃষ্টি একপলকও সরে না মুরাদ থেকে।
মুরাদ আচমকা খানিকটা কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, “কী দেখছিস? আজ বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে না’কি?”
মৃণা মৃদু হাসে, “ভাবছি।”
“কী ভাবছিস?”
“একটা মানুষ স্বার্থবিহীন কীভাবে অন্য মানুষের জন্য এত করতে পাড়ে?”
মুরাদের হাসি মলিন হয় মুহূর্তে। সে তাকায় মৃণার দিকে। গম্ভীরমুখে বলে, “আমি স্বার্থ ছাড়া কিছু করছি না ময়না। আমি চরম স্বার্থপর এক মানুষ।”
মৃণা এই কথায় অবাক হয়। কিন্তু কোনো প্রশ্ন করে না। তবে প্রশ্ন করার আগেই উওর দেয় মুরাদ, “তোকে চোখের সামনে এই কয়েক বছর দেখতে পাড়বো, তোকে নিজের বলে দাবি করতে পাড়বো, এটাই তো আমার স্বার্থপরতা। আমার ভালোবাসা বড্ড স্বার্থপররে ময়নাপাখি।”
চলবে…
মেঘের খামে…
পর্ব ৫০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
জাহানরা মৃণার বাসার সামনে যেয়ে পৌঁছায়। গলির সামনে দোকান পায়ও। চা’য়ের দোকানের মহিলাটিকে। তিনি জানায়, ছেলেগুলোর মুখ সে দেখে নি তবে রিকশাওয়ালাকে চিনেন। মাঝেমধ্যে তিনি চা পান করতে আসেন। রিকশাওয়ালার অপেক্ষায় তারা বসলো চা’য়ের দোকানে। সেখান থেকে আরও জানতে পারলো এই এলাকায় অনেক বখাটে ছেলে আছে। তাদের জন্য প্রায়ই মেয়েরা হয়রানির স্বীকার হয়।
এরই মধ্যে মহুয়া উঠলো। সে জানাল লামিয়ার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। এসে পড়বে জলদিই। জাহান দুইকাপ চা নিয়েছিল। এককাপ এগিয়ে দিলো মোহের দিকে। বসলো তার সামনের বেঞ্চে, “তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমি কেন এমন করছি?”
মোহ হঠাৎ এই কথোপকথন আসায় অবাক হয়। জাহান বলে, “আমিও তোমার সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।”
বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় সে জাহানের দিকে, “আমার সাথে?”
“হ্যাঁ, কারণ তুমি ও মৃণাই মহুয়ার কাছে থাকো। মৃণাকে এসব জানালে মহুয়া খুব জলদি বুঝে যেত। ওর থেকে কথা বেরও করে নিতো। মৃণা আবার একটু বেশি ইনোসেন্ট।”
“আপনি কী বলছেন আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
“মোহ, আই নিড ইউর হেল্প।”
“যা বলার সরাসরি বলুন। ওয়েট আপনি ওই মেয়ের সাথে কেন বিয়েতে রাজি হয়েছে তা বলতে চাইছেন?”
জাহান খুবই গম্ভীরমুখে তাকায় মোহের দিকে, “প্রথম থেকে বলি। প্রতিবছরের মতো এবারও এক্সাম শেষে আমি ট্রেনিং -এ গিয়েছিলাম। প্রতিবছর বাংলাদেশ ও আমেরিকাতে ট্রেনিং হলেও বাবা এবছর আমাকে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। রশ্মিরা অস্ট্রেলিয়াতেই থাকে। ওদের বাসায় থাকতে বললেও আমি পরিষ্কার মানা করে দেই। ট্রেনিং সেন্টারেই থাকা শুরু করি। এর মধ্যে বাবা এলো, আমাকে একদিন ডিনারে ডেকেছিল। আমিও যাই। কিন্তু যেয়ে দেখি সেখানে কেবল বাবা না, রশ্মির পরিবার ছিলো।। রাজও ছিলো।”
“এই রাজ কে?”
“রশ্মির বড় ভাই। উনিও বিজনেসম্যান। দেশ বিদেশে কারবার আছে। সে সুবাদে কিছু মাফিয়াদের সাথেও সম্পর্ক আছে।”
একথা শুনে কপাল কুঁচকায় মোহ, “আপনি কী এই ভয়ে রশ্মির সাথে বিয়েটা করছেন?”
জাহান কথাটা শুনে হাসে। চা’য়ে এক চুমুক দিয়ে বলে, “আমি এতও ভিতু নই। মহুয়া ভালোবাসার কথা পাশে রেখেও ওই লোক আমার মাথায় ব’ন্দুক ঠেকালেও আমি রশ্মিকে বিয়ে করতাম না।”
“তাহলে?”
“তো বাবা আমাকে একটা ভিডিও দেখায়। মা ছোটবেলায় আমাদের খেলার মাঝে বলেছিল বড় হলে আমাকে আর রশ্মিকে বিয়ে দিবে। কথাটা বোধহয় মজা করেই বলেছিল মা। কিন্তু আমার বাবার কাছে মা’য়ের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য রত্নের মতো মূল্যবান ছিলো। তাই সে আদেশই জারি করলো আমার বিয়ে রশ্মির সাথেই হবে।”
“আর আপনি রাজি হয়ে গেলেন?”
“অবশ্যই না। আমি পরিষ্কার মানা করলাম। আমার মা’য়ের জীবন ছিলো আমার ও আমার বোনের মধ্যে। মা’য়ে শ্রেষ্ঠ ইচ্ছা হলো আমরা দুইজনে সুখে থাকি। বাবাকেও কথাটা বুঝালাম। বললাম আমার জীবনে একজন আছে। যাকে জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসি। কিন্তু বাবা রেগে গেলেন। ক্ষেপে গেলেন বরাবর। আমাকে জানালেন রশ্মির সাথে বিয়ে না করলে রাজের সাথে জিনির বিয়ে দিবে। রাজের সাথে! যে কি-না জিনির থেকে তেরো বছরের বড়। যে নিতান্তই ভালো মানুষ নয়, বরং অহংকারী ও বাজে ধরনের কাজের রেকর্ডও আছে। যদিও আমার মনে হলো বাবা আমাকে জোর করার জন্য হুমকিটা দিয়েছে। আর যদি সত্যিও হয় তাহলে আমি থাকতে বিয়েটা কখনো হতে দিবো না।”
“তাহলে রাজি হলেন কেন?”
“মহুয়ার জন্য।”
“মহুয়ার জন্য?”
“আমি সেখান থেকে রেগে বেরিয়ে আসার পর রাজ আসে আমার পিছনে। আমাকে ওয়ার্নিং দেয় যদি আমি রশ্মির সাথে বিয়ে না করি তাহলে মহুয়ার ক্ষতি করবে। আর ও করতে পাড়ে। ওর এই পাওয়ার আছে। আর ব্যাকআপ হিসেবে শায়ানও আছে। ওর ফ্যামিলি অনেক পাওয়ারফুল। আর্থিক দিক থেকেও, রাজনৈতিক দিক থেকেও। রাজ নির্দয় মানুষ। মানুষের ক্ষতি করার আগে দুইবার ভাবে না। সে বাহিরের দেশে ক্ষমতাবান হলেও বাংলাদেশে দুর্বল হতে পাড়তো কিন্তু বাংলাদেশে মহুয়ার কোনো ক্ষতি করলে শায়ান তা সামলে নিতে পাড়বে। এর উপর আমার ব্যবসায়ের কতগুলো কাজ সামলাতেও এখনো আমার এত ক্ষমতা হয় নি। এখনো সব বাবার হাতে। আর বাবাই আমার বিপক্ষে। বাবা ছাড়া এসব ঠেকানো আমার পক্ষে সম্ভব না। মহুয়াকে পাওয়া থেকে, ওর সুস্থ থাকা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
মোহ বাকরুদ্ধ হয়ে তার কথা শুনে যায়। কিছু বলতে চেয়েও পাড়ে না।
জাহান আবারও বলে, “এজন্য আমি বলেছি এখন এনগেজমেন্ট করে রাখবো। পাঁচবছর পর বিয়ে করবো। আপাতত এইসব বলে ঠেকিয়েছি সবকিছু। যেন পড়ে সব আমার হাতে আসলে, আমি মহুয়াকে রক্ষা করার যোগ্য হতে পাড়লে ওর কাছে ফিরে আসতে পাড়ি।”
“আর ততদিনে যদি ও অন্যকাওকে ভালোবেসে ফেলে?”
জাহান হাসে এই কথায়, “আগে ভেবেছিলাম যেকোনো মূল্যে আমার মহুয়াকে লাগবে। ওর আমাকেই ভালোবাসতে হবে। কিন্তু যখন ওকে হারানোর কথা মনে হলো তখন বুঝলাম, ওকে পাওয়ার থেকে বেশি ওকে সারাজীবন খুশি দেখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওর হাসিটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা আমার সাথে হোক বা অন্যকারো সাথে।”
“আর আপনি কী করবেন?”
“অপেক্ষা ছাড়া কী করার আছে বলো? জীবনে একজনকে ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমি আবার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিনা।”
“কীসের অপেক্ষা?” কৌতুহল বশত প্রশ্ন করে মোহ।
“ওই শালার ম’রার। সত্তর বছর বয়সের বুড়ি দাদীমা হলেও তোমার বান্ধবীকে আমি বিয়ে করবো।”
উওর শুনে মোহ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। তারপর জোরে হেসে দিলো।
মোহ জিজ্ঞেস করে, “তো ভাইয়া আপনি এসব মহুয়াকে জানাচ্ছেন না কেন? ওকে না জানিয়ে আমাকে কেন জানালেন?”
“তোমার বান্ধবীকে তো চিনো, সে কারো কথা শুনবে না। সে যা ভালো মনে করবে, তাই করবে।”
“পয়েন্ট তো আছে।”
“আর তোমাকে বলছি কারণ ওর আশেপাশে যদি আমি থাকি তা শায়ান বা রাজের কানে গেলে ঝামেলা করতে পাড়ে। তুমি ওর সাথে থাকতে পাড়বে। আমি যখন পারবো না তখন ওর খেয়াল রাখা দায়িত্ব তোমার।”
“কেবল একটা মানুষের জেদের জন্য ওরা আরেকজনের ক্ষতি করতে রাজি? আল্লাহ খোদার ভয় নেই? এত নিকৃষ্ট মানুষ তারা! আপনি চিন্তা করবেন না। আমি থাকবো মহুয়ার সাথে।”
“ওকে কিছু জানিও না।”
“ঠিকাছে।”
এতক্ষণে মহুয়া এসে বসে মোহের পাশে। বলে, “ঘরে তালা দেওয়া। লামিয়া বোধহয় কলেজে গেছে।”
“মৃণার রুমমেট?” মোহ প্রশ্ন করল।
“হ্যাঁ। ও এখানে একা থাকে। মানে আরও দুইজন থাকে কিন্তু দুইটাই পুরো ফালতু। তাই ওরা হিসেবে আসে না। আমি ভাইয়াকে বলেছি কলেজ শেষে কোম্পানিতে ওকে একটা জব দিতে। বিয়ে উপলক্ষে আমাদের সাথে ওকেও নিয়ে যাব।”
সে সামনে তাকিয়ে জাহানকে দেখে বলে, “কী ব্যাপার মিস্টার ফিটনেস ফ্রিক? আপনার হাতে আজ চা’য়ের কাজ কীভাবে? এসব কী তোমার হাতে মানায়?” সে উঠে ফট করে জাহানের হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিলো।
জাহান ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। বলল, “তোমার চুমু খেতে মন চাচ্ছে ডিরেক্ট বললেও পারতে। ইনডিরেক্ট চুমু খাওয়ার উপায় খোঁজার কী দরকার?”
কথাটা শুনেই কাশি এসে পড়ে মহুয়ার। সে বুকে হাত ডলে তাকায় জাহানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে। আবার তাকায় মোহের দিকে, সে মিটিমিটি হাসছে।
মহুয়া পুণরায় চা’য়ের কাপ জাহানকে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “লাগবে না তোমার চা। তোমার চা তুমিই নেও।”
“ওহ তুমি চাও আমিও তোমাকে কিস করি?”
“ভালো হচ্ছে না কিন্তু। একবারে কেরোসিন দিয়ে চুলে আ’গুন লাগিয়ে দিব বলে দিলাম।” মহুয়ার কন্ঠে চরম বিরক্তি।
মোহ হাসছিল তাদের কান্ডে এমন সময় সমুদ্রের কল আসায় সে উঠে যায়। মহুয়াকে জানায়, “সমুদ্র এসেছে বোধহয়। তাকে নিয়ে আসছি।”
সে কল ধরে রওনা দিলো। সে সমুদ্রের সাথে কথা না বলে মহুয়ার সামনে আনতে পারে না। এই খুশির মহলে বিষাদের হাওয়া সে লাগতে দিবে না।
সমুদ্রের কথানুযায়ী সে এগোল। সমুদ্রকে দেখে তার হাসোজ্জল মুখখানা মলিন হয়ে গেল। সে সমুদ্রের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। জানায়, “আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আপনার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য ছিলো না। কিন্তু আমি আপাতত আমাদের বিচ্ছেদের কথা মহুয়া ও মৃণাকে জানাতে চাচ্ছি না। মৃণার বিয়ে মুরাদের সাথে এই শুক্রবার। তারপর আমি সুযোগ বুঝে জানাবো। আপনার সমস্যা না থাকলে আমরা কয়দিন হ্যাপি কাপল হবার নাটক করতে পারি?”
সমুদ্রের চোখেমুখে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি। সে ফট করে মোহের হাত ধরে নেয়, “অবশ্যই। আমি রাজি।”
হাত ছুঁতেই মোহের বুকের ভেতর উষ্ণ ঢেউ উপচে পড়ে। সে চোখ নিচে নামিয়ে তাদের হাতের দিকে দেখে। তার হাত ঝেড়ে সরিয়ে বলে, “আমরা নাটক করছি ক’দিনের জন্য। মোটেও ভাববেন না আমি আপনাকে কোনো সুযোগ দিচ্ছি।”
“তোমার কাছে থাকার কিছু মুহূর্তও আমার জন্য ঢের মধু।”
সমুদ্র আবার হাত ধরে তার। মোহ ছাড়াতে নিলে সমুদ্র বলে, “মহুয়া সন্দেহ করবে।”
মোহ ভাবল। তার দ্বিধাবোধ হলো, কিন্তু রাজিও হলো। সমুদ্র তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আঙুলের মাঝে আঙুল ডুবিয়ে দেয়।
মোহের কোমল হৃদয়খানা কেঁপে উঠলো। নিশ্বাস আঁটকে
গেল তার। সে আড়চোখে একবার সমুদ্রের দিকে তাকাল। সমুদ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কী গভীর দৃষ্টি! যেন এই দৃষ্টি দিয়েই তার সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে দিবে। বুকের বাঁ পাশে লুকানো তার বরফে জমে থাকা হৃদয়খানাও। কিন্তু তা সে হতে দিবে না। কিছুতেই না।
সে গভীর কাঁপানো নিশ্বাস ছাড়লো। যেন তার নিশ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছিল।
মহুয়া দেখল সমুদ্র ও মোহ আসছে। সে তো সমুদ্রকে দেখেই দৌড়ে গেল, “আরে দুলুভাই আপনার দেখি হ্যান্ডসামনেস দুই পার্সেন্ট কমে গেছে। আমার বান্ধবী কী আপনাকে বেশি প্যারা দিচ্ছে না’কি? আমাকে একবার বলেন, আপনার জন্য ওর জীবন প্যারাময় করে দিব।”
মোহ তার কথায় তাকায় অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে, “মীরজাফরও তোর মতো মীরজাফরগিরি করতে পারবে না।”
“আই নো আই নো। আমার থেকে অনেককিছু শেখার আছে সবার।” বলে তার কাঁধের চুলগুলো ভাব নিয়ে সরাল।
“এটা মোটেও প্রশংসা ছিলো না।” জাহান জানাল। তারপর সমুদ্রের সাথে হ্যান্ডশেক করে।
চারজন যেয়ে বসে চা’য়ের টঙে। সমুদ্র সবটা শুনে জানায় পুলিশে আগে দিয়ে রিপোর্ট করে রাখতে। অনেকক্ষণ বসে থাকে। কিন্তু রিকশাওয়ালার খোঁজ পায় না। অবশেষে শেষ বিকেলে মহুয়া তার নাম্বার দিয়ে যায় চা’য়ের দোকানের মহিলার কাছে।
লামিয়াও এসে পড়েছিল। মহুয়া তাকে মৃণার বিয়ের কথা জানায়। সে তো খুশিতে আধখানা। আর কি! ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে যায় লামিয়াকেও সাথে। সবাই গাড়িতে উঠে৷ কিন্তু মোহ উঠতে নিলে মহুয়া ধমক দেয় তাকে, “তুই কই আসছিস?”
“তোদের সাথে?”
“আমাই দুলুভাই কী তাহলে একা যাবে না’কি?”
“উ…উনার কাজ আছে। উনি অফিসে যাবে।”
মহুয়া কপাল কুঁচকায়। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দুই কোমড়ে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “দুলুভাই আপনার কাছে কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, না আপনার শালী সাহেবারা?”
“অফকোর্স তোমরা।”
“তাহলে আর কি? বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত কাজ ভুলে যান। আমাদের সাথেই থাকতে হবে।”
এই কথায় তো খুশি হয়ে যায় সমুদ্র। সে একপলক তাকায় মোহের দিকে। সে রাগে ফুঁসছে কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। মনে মনে হাজারো ধন্যবাদ দিলো মহুয়াকে। অথচ মুখে কেবল উষ্ণ হাসি রেখে মাথা নাড়াল।
“ভাইয়া আপনি মোহকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসুন। মুরাদ ভাইয়াও আপনাকে দেখল অনেক খুশি হবে।”
“কিন্তু উনার…”
“দুলুভাই মানা করেছে না তুই মানা করছিস কেন?”
মোহ আর কিছু বলে না। মোহ লামিয়াকে নিয়ে জাহানের গাড়িতে উঠে যায়। সমুদ্রও তার বাইকে উঠে। মোহের অপেক্ষা করে। মোহ রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় সমুদ্রের দিকে, “আপনি যেতে রাজি হলেন কেন?”
“তোমার সাথে সময় কাটানোর সুযোগ তো আর ছেড়ে দিবো না।”
“ফাজলামো করছেন আপনি আমার সাথে। আমি না পেরে আপনার থেকে সাহায্য নিয়েছি। আর আপনি সুযোগ নিচ্ছেন? মনে রাখবেন কোনো কিছুতেই আমি আপনাকে ক্ষমা করবো না।”
“আচ্ছা করো না। এখন উঠো।”
“আমি রিকশা নিয়ে আসছি। আপনি যান।”
“মহুয়া যদি দেখে নেয়?”
মোহ এই কথাতেই চুপ করে যায়। বাইকে উঠে বসে। পিছনে ধরলেও সমুদ্র বলে, “ভালো করে ধরে বসো। এদিকের রাস্তা ভালো না।”
“পড়ে নাহয় এক্সিডেন্ট করে ম’রে গেলাম। আপনার কী? আপনি বাইক চালান।”
একথা শুনে সমুদ্র পিছনে ফিরে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে, “মধু যা বলছো সবকিছু চুপচাপ সহ্য করছি। কারণ অপরাধ আমার। সব দোষ আমার। কিন্তু এমন কথা মুখ দিয়ে বের করলে ভালো হবে না বলে দিলাম। ধরে বসো।” এক প্রকার ধমক দিয়ে বলল সমুদ্র।
শেষ কথাটা এতটা জোরে বলে যে মোহ কেঁপে উঠে। চোখ ফিরিয়ে নিলেও তার কাঁধে হাত রেখে বসে।
সমুদ্র সে হাত ধরে টান দেয়, যেকারণে মোহ তার একবারে কাছে এসে পড়ে। মোহের হাত নিজের পেটের উপর এনে রেখে বলে, “ভালো করে ধরে বসো।”
মোহের হৃদস্পন্দন বাড়লো। নিশ্বাসের গতি বাড়ে বরাবর। আজ সে সমুদ্রের কাঁধে মাথা রাখে নি কিন্তু বাতাসের সাথে সমুদ্রের ঘ্রাণ পাচ্ছে সে তীব্র ভাবে। যে ঘ্রাণে সে মাতোয়ারা হতো সে ঘ্রাণে আজও তার মন দোললো কিন্তু নিজেকে সামলাতে শিখে নিচ্ছে সে। এত সহজে আজ দুর্বল হবে না।
.
.
মহুয়ার বাড়ির সামনে এলে লামিয়া নামে। মহুয়া জাহানকে এখনো সিটবেল্ট পরে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে, “তোমাকে কী আমন্ত্রণ দিতে হবে?”
“আমিও আসবো?”
“বিয়ে বাড়ি। দাওয়ার তো সবারই। এমনিতেও মৃণার ওই সাপের পরিবার তো আসবে না। ওর পক্ষ থেকে ওর ভাইবোনদের তো থাকতে হবে।”
জাহান তার কথার ইঙ্গিত বুঝলো। সে গাড়ি পার্ক করে তাদের সাথে গেল বাড়ির ভেতরে।
মহুয়ার বাবা, মা, ভাই ও মৃণা ড্রইংরুমেই বসেছিলো। গল্প করছিল। মৃণাকে দেখে লামিয়ে দৌড়ে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে, “তুমি ঠিক আছো আপু? শুনলাম তোমার না’কি বিয়ে। তাও মুরাদ ভাইয়ার সাথে! ওয়াও আমি কী খুশি হয়েছি জানো? তুমি খুশি না আপু? অফকোর্স তুমি খুশি হবে এত কিউট হাসবেন্ড পেতে যাচ্ছো।”
মহুয়া হেসে তাদের পাশে বসে, “বাহ নিজে প্রশ্ন করে নিজেই উওর দেওয়া হচ্ছে। ভেরি গুড।”
সবার কথার মাঝে মুরাদ তার চশমা ঠিক করে তাকায় জাহানের দিকে। তাকে এই প্রথম দেখছে। নার্ভাস দেখাচ্ছে তাকে ভীষণ। বারবার তার চোখ আটকাচ্ছে মহুয়ার দিকে। সে কিছু কথা বলার জন্য মুখ খুলে আবারও চুপ করে যাচ্ছে।
মুরাদ জিজ্ঞেস করে, “মিষ্টি তুই মেহমান এনে পরিচয় করাতে ভুলে গেছিস।”
মহুয়া তার মা বাবাকে প্রথমে লামিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর জাহানের পাশে যেয়ে দাঁড়িয়ে বলে, “ও হলো জাহান। আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র। আর….”
জাহান আড়চোখে তাকায় মহুয়ার দিকে। প্রেমিক বলে আবার পরিচয় দিবে না’কি! যার জন্য সে একটুইও প্রস্তুত না। তাও আবার ওর পরিবারের সাথে এই প্রথম দেখা। সম্পূর্ণ নার্ভাস হয়ে গেল জাহান। এসির ভেতরেও ঘামতে শুরু করলো।
মহুয়ার তার অবস্থা দেখে একটুও খারাপ লাগলো না। উল্টো ব্যাপারটা ইনজয় করছে সে। তারপর অবশেষে বলে, “মৃণার পাতানো ভাই। আমাদের কনেপক্ষ থেকে আসছে।”
অবশেষে জাহানের নিশ্বাস আসে। সে বড় করে নিশ্বাস ফেলে। সবাইকে সালাম দেয়। মহুয়ার বাবা-মা তার সাথে ভালোভাবে কথা বললেও মুরাদ তার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। মনে হলো সে কোনো ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। তাকে এভাবে যাচাই করছে। জাহান জোরপূর্বক হাসলো, “ভালো আছেন ভাইয়া?”
মুরাদ আরও ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে। তখন মহুয়া বলে, “ভাইয়া তোমার কিন্তু সম্বন্ধী হয়। সম্মান দেও।”
একথায় কক্ষের সকলের বিস্মিত দৃষ্টি আটকায় তার উপর। যেন চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।
মহুয়া শুধরায় তার বাক্য, “মৃণার ভাই তোমার সম্বন্ধী হবে না? তার বোনকে যদি না দেয় তাহলে বুঝে নিও।”
“ঠিক তো? কেবল মৃণার ভাই হিসেবে সম্বন্ধী তো? অন্য কিছু না?”
চলবে…