মেঘের খামে পর্ব-৫১+৫২

0
4

মেঘের খামে…
পর্ব ৫১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

মহুয়া শুধরায় তার বাক্য, “মৃণার ভাই তোমার সম্বন্ধী হবে না? তার বোনকে যদি না দেয় তাহলে বুঝে নিও।”
“ঠিক তো? কেবল মৃণার ভাই হিসেবে সম্বন্ধী তো? অন্য কিছু না?”

এমন অস্বস্তি পরিস্থিতি থেকে তাদের বের করে মোহ এবং সমুদ্রের আগমন। মুরাদ তো সমুদ্রকে দেখে প্রথমে অবাক হয়। তারপর একগাল হেসে এগোয় তার দিকে, “আরে সমুদ্র ভাই কেমন আছেন? চিনেছেন আমাকে?”
সত্যি বলতে সমুদ্র চিনলো না কতক্ষণ। কিন্তু মোহ একবার বলেছিল মহুয়ার ভাই তার কলেজে জুনিয়ার। তাই মাথায় জোর দিয়ে মনে করার চেষ্টা করলো।
মুরাদ জানাল, “আপনি ভার্সিটিতে থাকাকালীর আমরা এইচএসসি দিতাম। আপনি তখন টপ স্টুডেন্ট ছিলেন বলে আপনার থেকে হেল্প চেয়েছিলাম। আমাদের সব বন্ধুদের কম্পিউটার শিখিয়েছেন। এক্সামের দুইদিন আগে তো রাত জেগে আমাদের শিখিয়েছেন। মনে পড়েছে এইবার?”
“ওহ হ্যাঁ, কেমন আছো তোমরা?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাই। আপনি জানেন আপনি আমাদের কম্পিউটার শেখানোর পর আমাদের ইন্টারেস্ট এতো বেড়েছিল যে আমরা সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকতাম। তারপর অনেককিছু শিখেছি। আর কম্পিউটার দিয়েই আমাদের ব্যবসা শুরু হলো। ডিজিটাল মার্কেটিং করে উন্নতি হলো এতো। কিন্তু এর শুরুটা আপনিই করেছিলেন। আপনি প্রথমে এত সুন্দর মতো না শিখালে হয়তো আমাদের কখনো কম্পিউটারে এত ইন্টারেস্টই আসতো না। আমি নিশ্চিত আপনিও কম্পিউটার নিয়েই কোনো কাজ করছেন। আপনার কত আগ্রহ ছিলো কম্পিউটারের কাজে।”
সমুদ্র খানিকটা হেসে বলে, “গেইম ডিজাইন আর ডেভোলাপমেন্টের টুকটাক কাজ করি। একটা করেছিলাম চার বছর আগে। ওটা আমেরিকার এক কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তারপর আর এই কাজে তেমন ধ্যান দেই নি।” তারপর আড়চোখে তাকায় পাশে দাঁড়ানো মোহের দিকে, “এখন মিসেসের বলাতে আবার শুরু করেছি। নতুন গেইম ডিজাইনের কাজ চলছে।”
হঠাৎ মোহকে উদ্দেশ্যে এই কথা বলাতে সে লজ্জা পেয়ে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়। এই লোকের কথায় গলে পড়া যাবে না। সে মুরাদকে বলে, “কনগ্রেটস ভাইয়া বিয়ের জন্য। আপনাকে ওয়ার্নিং দেওয়া লাগবে না। আমি জানি আপনি মৃণার সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখবেন।”
মুরাদ তার গাল টেনে দিলো আদর করে। মোহ মৃণাকে দেখে এক দৌড়ে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। বলে, “কনগ্রেটস জান। তোর নতুন এই জীবন সুখে ভরপুর হবে দেখিস।”
মহুয়া মুখ লটকে ফেলে। হাল্কা করে মোহের পায়ে লাথি মেরে বলে, “আমাকে ছাড়া তোরা প্রেম দেখাচ্ছিস লজ্জা লাগে না?”
মোহ তার হাত ধরে টান মেরে তাকেও জড়িয়ে ধরে অন্যপাশ থেকে।

সমুদ্র মোহকে এমন হাসিখুশি দেখে শান্তির নিশ্বাস ফেলে। শেষ ক’দিন শুধু তার চোখে পানি দেখেছে সে। অথচ মোহের হাসি এই পৃথিবীতে তার সবচেয়ে বেশি পছন্দের।

মুরাদ তাকে মোহের দিকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে শান্তির নিশ্বাস ফেলে। মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে, “ভাই ভালোবেসে ফেলেছেন না’কি?”
“হুঁ?” সমুদ্রের ধ্যান ভাঙে।
“মোহকে ভালোবেসে ফেলেছেন?”
প্রশ্নটা শুনে সমুদ্র বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকায় মুরাদের দিকে।
মুরাদ বলে, “যখন দেখলাম মোহের বিয়ে আপনার সাথে হয়েছে তখন খুশির সাথে সাথে চিন্তিতও হয়েছিলাম। আপনি অনেক ভালো এটা সবাই জানে, কিন্তু আপনি যে অন্যকাওকে ভালোবাসতেন এই কথাটাও সবাই জানতো। মোহ আমার বোনের মতো তাই চিন্তা করছিলাম। যদিও মহুয়া বলেছিল আপনাদের মধ্যে আস্তে-ধীরে সব ঠিক হচ্ছে। কিন্তু আজ আপনার চোখে ওর জন্য ভালোবাসা দেখতে পারছি। ভালো লাগলো দেখে।”

সমুদ্র অবাক হয়। সে কী বলবে বুঝতে পারে না। নিসন্দেহে মোহ তার পৃথিবীর বড় এক অংশ। বলতে গেলে তার পৃথিবী। আজকাল সে যা করে তার জন্য করে, তার কথায় করে। তাকে ছাড়া ভেতরটা শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু কখনো সে ভাবে নি, সে কী মোহের প্রেমে পড়েছে?

মুরাদের কথায় আবার তার ধ্যান ভাঙে, “ভাই চলেন বসে গল্প করি।”
সমুদ্র মাথা নাড়ায়। তারা সোফায় যেয়ে বসলে সমুদ্র জাহানকেও ডাকে তার পাশে এসে বসার জন্য।
জাহান যেয়ে বসেও। সমুদ্র তার কাঁধে হাত রেখে বলে, “ওর সাথে তোমার দেখা হয়েছে না?”
“চিনেন ওকে?”
“হ্যাঁ। আগে দেখা হয়েছে। ভালো ছেলে। দায়িত্ববান আছে।”
“তাই না’কি?” মুরাদ জাহানের দিকে তাকায়। প্রশ্ন করে, “মহুয়াদের কলেজেই পড়ছো?”
“হ্যাঁ। সেভেনথ সেমিস্টারে আছি।”
সমুদ্র এর মাঝেই শুধায়, “মোহ বলেছিল তুমি না’কি পড়াশোনার পাশাপাশি বিজনেসও দেখো তোমার বাবার?”
“জ্বি ভাইয়া।”
“কী বিজনেস?” মুরাদ জিজ্ঞেস করে।
“ইভান এয়ারলাইন্স আমার বাবার। ওখানে বাবার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দেখি। আর ভার্সিটি বন্ধ থাকলে ট্রেনিং নেই ভাইয়া।”
“ওহ তোমার বাবার। তাও ভালো। গুড।”
মুরাদের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে জাহানের আরও ভয় লাগলো। এমনিতেই তার ভয়ে নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে। এমন ভয় তো নিজের বাবা থেকেও সে কখনো পায় নি।

সমুদ্র উল্টো তার প্রশংসা করে, “এই বয়সে এত বড় ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকাই অনেক বড় ব্যাপার।”
মুরাদ বলে, “ওর বাবা তো সব তৈরি করেই রেখেছিল। কোনো কাজ শুরু করতে যত কষ্ট সামলানো এতটা না। তবে মানতে হবে বড়লোক বাবার অনেক ছেলেরা আছে যে অহংকারী। কিন্তু তোমাকে এমনটা মনে হচ্ছে না। ভদ্র আছো।”
সমুদ্র আবারও বলল, “শুনেছিলাম তুমি না’কি কলেজের পর থেকেই টুকটাক ছোটখাটো কাজ করতে। কথাটা সত্যি?”
“জ্বি ভাইয়া, কলেজ থেকেই করতাম। কফিশপ, রেস্টুরেন্ট, শো রুমে জব করেছি। বাবা তখন আমাদের হাতখরচ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন যেন টাকা কামানো কত কষ্ট তা বুঝতে পারি। তারপর ভার্সিটির এক বছর পর বাবার সাথে কাজে ঢুকেছি।”
“এত ছোট বয়স থেকে? আমি তো এই বয়সে কেবল ঘুরতাম আর আড্ডা দিতাম। তাই না মুরাদ?”
মুরাদকে এইবার সন্তুষ্ট দেখা যায়। সে এই প্রথম হেসে জাহানকে বলে, “সত্যিই। তোমার বাবা ভালোভাই বড় করেছে তোমাকে। স্ট্রাগল না করলে অর্থের সম্মান করা যায় না। ভেরি গুড। বসো আমি চা নাস্তার ব্যবস্থা করে আসছি।”
অবশেষে নিশ্বাস এলো জাহানের। সে একপাশ দিয়ে সমুদ্রের দিকে ঝুঁকে বলে, “থ্যাঙ্কিউ সো মাচ ভাইয়া।”
“এত নার্ভাস হবার কিছু নেই। নরমাল বিহেভ করো। যদিও সবাই মনে হয় ধরতে পেরেছে কিছু একটা।”
“বলেন কী!”
“তাই তো মনে হচ্ছে।”
“শশুড়বাড়ি তাহলে অনেক ডেঞ্জারাস জায়গা। আসার পর থেকে আমার হার্টের অবস্থা খারাপ।”

সমুদ্র প্রথম বাসায় এসেছে এই উপলক্ষে তাকে জামাই আদর করা হচ্ছে জোরেশোরে। সাথে জাহানেরও খাতিরদারিরও কমতি রাখছেন না মহুয়ার মা। তাকেও মনে হচ্ছে যেন জামাই আদর করছেন। ঘরে খাবার করছেন আবার বাহির থেকেও এনেছে। দুইবার ট্রে ভর্তি খাবার আনার পর তৃতীয়বারও আনলো। মহুয়া এসে দেখলো তার মা ফল ও পুলিপিঠে নিচ্ছে। তা দেখে সে একটা নিতে গেলে মা তাকে সরিয়ে খবারের ট্রে তাদের সামনে দেয়। সমুদ্র ও জাহানকে জোর করে দেয়। সে যেতে নিলে মহুয়া মুখ ফুলিয়ে তার পিছু নেয়,
“আমাকে তুমি পুলিপিঠে দেও নি। আমার কত পছন্দের তুমি জানো না?”
“তোকে জামাইর আগে দিবো না’কি?”
“সমুদ্র ভাইয়ারটা তো বুঝলাম। ওই হনুমান চেঁকামেঁকা তোমাদের জামাই হলো কবে?”
“হবে ভবিষ্যতে। তাই না?”
মা তার দিকে তাকায়। ঠোঁটে দুষ্টুমি হাসি। কথাটা শুনেই মহুয়া থমকে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে সেখানেই। তার ফর্সা গাল দুটো লালচে হয়ে যায়।
“বাহ আমার মেয়েও লজ্জা পেতে জানে। আমি তো আগে জানতাম না। এজন্যই তখন শিকদার বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে শুনে এত ক্ষেপে গিয়েছিলি।” মা টিপ্পনী কেটে বলে।
মহুয়া আমতা-আমতা করে, “আ…আমার জন্য পুলি পিঠা রেখো। আমি যাই।”
“এই দাঁড়া। আমাদের কিন্তু ভালো লেগেছে। দেখতে কিন্তু একদম নায়কের মতো। পটালি কীভাবে?”
মহুয়া চোখ ঘুরিয়ে তাকায় তার দিকে, “ছয়মাস আমার পিছনে ঘুরেছে। আমি এখনো আধ একটু এক্সেপ্ট করেছি।”
মা তার কথা বিশ্বাস করলেন বলে মনে হলো না। তিনি বললে, “ফাঁপড় পরে মারিস। কিন্তু ছেলেটা ভদ্র আছে। ভালো লেগেছে। তাই বেচারার জন্য আফসোস লাগছে।”
“কেন?”
“তোকে সারাজীবন সামলাতে হবে যে।” বলে মা চলে যান।
মহুয়া হা করে তাকে চলে যেতে দেখে। ক্ষেপে গিয়ে বলে, “মা আমি তোমার মেয়ে। এসব বলতে লজ্জা লাগে না।”
“সত্যি বলতে লজ্জা লাগা উচিত না।”
.
.
সমাবেশ বসেছে। সকলে সোফায় বসা। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন বারে কোন অনুষ্ঠান হবে। আজ মঙ্গলবার। আগামীকাল সারাদিন শুধু শপিং এই যাবে। রাতে মেহেদী করবে তারা। পুরশু রাতে হলুদ করার সিদ্ধান্ত নিলো তারা। এই অনুষ্ঠানে কেবল তারাই থাকবে। বিয়ের অনুষ্ঠান হবে বড় করে। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কে কোন পক্ষে থাকবে। সবার আগে মোহ বলে, “আমি তো কনে পক্ষ।”
লামিয়াও বলে, “আমিও মৃণা আপুর সাথে।”
“অফকোর্স আমিও। আমি তো কনের বড়ভাই-ই।”জাহানো সাঁয় দেয়।
মুরাদ বলল, “সবাই তো মৃণার দলেই চলে গেল। মহু তুই তো আমার দলে তাই না?”
“আমার ভাই আর বেস্টফ্রেন্ড এর মধ্যে কী আমি চুজ করবো না’কি? আমি তো দুইদলেই।”
জাহান বলে, “এই সুবিধাপার্টি হওয়া চলবে না। একপক্ষে থাকতে হবে।”
“জ্বি না। আমি আমার মর্জি মতো দুই পক্ষেই থাকবো। কী করবে তুমি? আমি দুইপক্ষের সুবিধা গ্রহণ করবো।”
জাহান তো কিছু বলে না কিন্তু মুরাদ তার কাঁধে হাত রেখে তার কানে কানে বলে, “চুপচাপ আমার দলে আয়, নাহলে বিয়েতে একটা নতুন ড্রেস পাবি না।”
মহুয়া আকাশ ভেঙে পড়েছে এমন অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে।
“তোমার মনে হয় আমি লোভে পড়ে তোমার টিমে এসে পরবো?”
সে আবার সবার দিকে তাকায়। ঘোষণার ভঙ্গিতে বলে, “আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। আমি…” সে শক্ত করে মুরাদের বাহু ধরে বলে, “আমার ভাইয়ার টিমে।”
“ড্রামাবাজ।”

মহুয়া সমুদ্রের দিকে তাকায়, “ভাইয়া আপনি কার টিমে?”
জাহান উওর দেয় তার হয়ে, “এটা আবার প্রশ্ন করতে হয়। তার বউ এখানে সে ওই দলে যাবে না’কি?”
“তার শালীসাহেবা এখানে সে অবশ্যই আমার দলে আসবে। আসবেন না দুলুভাই?”
মহুয়া পাপিফেস করে তাকায় তার দিকে। এমন মুখ দেখে হেসে উঠে সমুদ্র, “অফকোর্স। আমার শালীসাহেবা যা বলে।” বলে কোকের গ্লাসে এক চুমুক দিলো। মহুয়া এসে বসলো তার পাশে। ফিসফিস কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “দুলুভাই ঠিক তো? শালীসাহেবা যা বলবে শুনবেন তো।”
“অবশ্যই।”
বলে সে আরেক চুমুক দিলো গ্লাসে তখনই মহুয়া বলে, “তাহলে জলদি করে আমাকে খালামণি বানিয়ে দিন।”
কথাটা শুনেই কাশি উঠে গেল সমুদ্রের। থামলোই না। মোহ দৌড়ে এসে তার মাথায় ও পিঠে হাত ডলতে লাগলো। আর বকুনি দিলো মহুয়াকে, “এমন কী বলেছিস তুই?”
সমুদ্রের কাশি কমলো। সে পানির গ্লাস নিয়ে এক ঢোকে সম্পূর্ণ গ্লাস খালি করলো। এরমধ্যে মহুয়া মোহের হাত টান দিয়ে বসাল তার ও সমুদ্রের মাঝে। তাকে জানিয়েই দৌড় দিলো থাপ্পড় খাওয়ার আগে।

মোহ কিছুক্ষণ বিষম খেয়ে তাকিয়ে রইলো মহুয়ার যাওয়ার দিকে। তারপর সত্যিই তাকে মা’রতে উঠলো। এর পূর্বেই সমুদ্র তার কোমরে হাত রেখে তাকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে।
মোহ তার দিকে তাকায় রাগান্বিত দৃষ্টিতে।
অথচ সমুদ্র তার দিকে তাকিয়ে নেই। সে মুরাদের সাথে গল্প করছে। আর তার পেটে কোমরে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। সবার মাঝে! মোহ দ্রুত তার ওড়না ঠিক করে নিলো। তারপর তার হাত সরানোর চেষ্টা করল। তার হাতে জোরে এক খামচিও দিলো। এত জোরে যে তার চামড়া নখে উঠে এসেছে। তবুও সমুদ্র তাকে ছাড়ে না। উল্টো আরও শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়।

মহুয়া এবার যেয়ে বসে জাহানের সামনের চেয়ারে। হেসে গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “তো শুনেন বেয়াই সাহেব…”
জাহান ভ্রু উঁচিয়ে তাকায় তার দিকে, “বলেন বেয়াইন সাহেবা।”
“আমাদের দল তো জিতে গেল। বরপক্ষে বেশি মানুষ আমার মা বাবা সহ।”
“তাই না’কি? সেটা আগামীকাল দেখা যাবে।”
“কীভাবে?”
“আগামীকালই দেখতে পাবেন বিয়াইন সাহেবা।”
“সে যাই হোক। আগামীকাল আমরা মেয়েরা শপিং এ যাবো। যেন এসে সুন্দর স্টেজ পাই।”
মুরাদ বলে, “সে-কি? তুই না বললি তুই সম্পূর্ণ বিয়ের কাজ দেখবি?”
“সে তো দেখবোই। তাই তো বললাম ভালো করে কাজ করবে।”
“আমার বিয়েতে আমাকে নিয়ে যাবি না?”
“তোমাদের আর কি শপিং? তোমাদের কে দেখবে? সবাই তো দেখবে আমাদের। তবে আমার দুলুভাই চাইলে আমি কেবল দুলুভাইকে নিয়ে যেতে পারি।”
মোহ সাথে সাথেই বলে, “আমাদের মেয়ের মধ্যে উনি কী করবে? এখানে সবাইকে সাহায্য করে দিবে।”
মুরাদ বলে, “আমিও কিন্তু তোর দুলাভাই-ই হচ্ছি। একটু তো সম্মান দিবি।”
“তোমার দলে আছি এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট সম্মানজনক।”

রাতে খাওয়ার পর আসলে তারা বসলো বিয়ের গবেষণা করতে। সমুদ্র ভেন্ডার, ভ্যানুউ, স্টেজ ডেকোরেশনের সব জোগাড় করে দিলো ফটাফট। তারপর বাসায় চলে গেল। সকালে জাহান ও সমুদ্র আসবে জানাল। লামিয়া ও মোহ তাদের সাথেই থেকে গেল।

সকালে সকাল মেয়েরা বের হলো শপিং এ আর ছেলেরা লেগে পরলো কাজে। সকাল থেকে ভারী ব্যস্ত গেল দিনটা। মেয়েরা শেষ সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে দেখে বাড়িতে লাইটিং লাগানো হয়েছে। দোতলার ছাদে স্টেজ লাগানো হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান যেহেতু বাহিরে হবে এখানেই তারা হলুদ ও মেহেদী করবে।

শরীরে সারাদিনের ক্লান্তি থাকলেও তৈরি হলো মেয়েরা। সকলে ভিন্ন ভিন্ন সেডের সবুজ রঙের পোশাক পড়েছে। লামিয়া ও মহুয়া কলাপাতা রঙের জামা পরেছে। মহুয়া লামিয়া ও তার জন্য ম্যাচিং করে কিনেছে। মোহ গাঢ় সবুজ রঙের আনারকলি পরেছে। আর কনে পড়েছে সোনালী পাড়সহ টিয়া রঙের শাড়ি। মোহ তাকে সাজাচ্ছিল। এরমধ্যে হঠাৎ করে মৃণা মোহের হাত ধরে নেয়। প্রশ্ন করে বসে, “মোহ আমি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি? মহুয়াকে জানাবি না।”
মোহ অবাক হয় হঠাৎ এই কথায়। সে পাশে বসে মৃণার, “সব ঠিক আছে তো?”
“বল তো, বিয়েটা করা কী ঠিক হচ্ছে?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“আমি মুরাদভাইকে ভালোবাসতে পাড়ছি না। আমি জানি উনি আমার জন্য এসব করছে। একারণেই মাঝেমধ্যে আরও অপরাধবোধ হয় আমার। মনে হয় আমি উনার সাথে অনেক বড় অপরাধ করছি।”
মোহ তার হাত ধরে বলে, “হয়তো করছিস। ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকে, কিন্তু থেকেও তার অন্তরটা থাকে অন্যকারো কাছে। ব্যাপারটা বেশ কষ্টকর। তবে ভাইয়া সব জেনেই তো বিয়েটা করছে তাই না? তারপরও তোকে চাইছে৷ নিজের করে চাইছে। ব্যাপারটা কষ্টকর হলেও এর মধ্যে একটা তৃপ্তি লুকানো। অন্তত মানুষটাকে সে নিজের বলে দাবি করতে পারে। কিন্তু একবার হারিয়ে গেলে…” মোহ কাঁপানো নিশ্বাস ফেলে। বলে, ” কেবল তুই ভাইয়াকে জেনেশুনে কষ্ট দিস না, বাকিটা ভাইয়ার উপর ছেড়ে দে।”
“আমি চেষ্টা করছি উনাকে ভালোবাসতে। পাড়ছি না।”
“কাওকে কি জোর করে ভালোবাসা যায়? পাগল! সময় এলে নিজেই ভালোবেসে ফেলবি।”
মোহ হেসে আবারও তাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
মৃণা জিজ্ঞেস করে, “সমুদ্র ভাইয়া পেরেছে তোকে ভালোবাসতে?”
প্রশ্নটা শুনে মোহের ঠোঁটের হাসি আস্তে-ধীরে মলিন হতে থাকে, “কী জানি! তুই নাহয় উনাকেই জিজ্ঞেস করিস।”
.
.
মহুয়া ছাদে এসে দেখে সেখানে এখনো কাজ চলছে। কেবল তারা ক’জন না, জাহানের দল পুরোটা এখানে এসে উপস্থিত। সকলে পাঞ্জাবি পরেছে। তাদের হঠাৎ এখানে দেখে প্রথমে অবাক হয় মহুয়া। হঠাৎ করে কানের কাছে ভারী কন্ঠ পায়,
“বিয়াইন সাহেবা বলেছিলাম না কনেপক্ষ ভারী বেশি হবে। আপনাদের থেকে দ্বিগুণ।”
মহুয়া পিছনে ফিরে তাকায়। দেখতে পায় জাহানকে। লাল রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। সাথে সাদা চুড়িদার। এক হাতে ঘড়ি পরা সিলভার রঙের। গাবলি কোঁকড়াচুলগুলো পিছন দিকে আছড়ান।
তাকে দেখে এই প্রথম বাকরুদ্ধ হয় মহুয়া। কথার পিঠে উলটো জবাব দেওয়ার কিছু পায় না। আজ কী অতিরিক্ত সুন্দর দেখাচ্ছে জাহানকে?

“এমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছো কেন? এটা তোমার বাসা। তোমার ভাই দেখলে আমাকে এই ছাদ থেকে ফিক্কা মারবে। ”
জাহানের কথা শুনে মহুয়া এক ভ্রু উঁচায়, “আমার ভাইকে কী গুন্ডা মনে হয় তোমার?”
“অফকোর্স তোমার ভাই। যতই ভদ্র, শালীন হোক। ভাই তো তোমার। করতেই কতক্ষণ?”
“পয়েন্ট তো আছে।” মহুয়া এক পা এগিয়ে এসে তার কাছে দাঁড়ায়। তার পাঞ্জাবির কলার আলতো আঙুলে ছুঁয়ে বলে, “আজ আপনাকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে বেয়াই সাহেব ইচ্ছে করছে মৃণা আর ভাইয়ার বদলে আমিই আপনাকে বিয়ে করে নেই।”
সে হাত কলার থেকে আলতো করে তার বুকে এনে থামায়। দেখে জাহানের হার্টবিট দৌঁড়াচ্ছে। সাধারণভাবে নয়, যেন কোনো প্রতিযোগিতায় ছুটেছে। এমন দ্রুত স্পন্দন কী স্বাভাবিক?

আচমকা জাহান তার হাত ধরে নেয়, “পাড়বে?”
মহুয়া অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে, “কী?”
“পাড়বে এখন আমাকে বিয়ে করতে?”
“তোমাকে আমি কেন বিয়ে করবো বলো? তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না। তাই না?”
মহুয়া জাহানের বুক থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। তারপর ভেংচি কেটে তার পাশ দিয়ে যায়। আর গুনগুন করে গান গায়,
“রসিক তেলকাজ্বালা, ঐ লাল কুরতাওয়ালা
দিলি বড় জ্বালারে পাঞ্জাবী ওয়ালা…”

জাহান হাসে তার গান শুনে। তারপর পিছনে ফিরে জিজ্ঞেস করে, “এই’যে বরের বোন, আপনি কার নামের মেহেদী লাগাবেন আজ রাত?”
মহুয়া পিছনে ফিরে৷ পিছন দিক থেকে হাঁটতে থাকে, “মোটেও আপনার নামের হবে না কনের ভাই। তার এত চিন্তার প্রয়োজন নেই।”
জাহানও তার দিকেই হাঁটতে থাকে, “আচ্ছা তাহলে কার নাম লেখাবেন আপনি মেডাম?”
তখনই ফোন বেজে উঠে মহুয়ার। সে ফোন দেখে। কপালে ভাঁজ পড়ে তার, “শায়ান!”
“কী?”
“শায়ান কল দিয়েছে।”
মুহূর্তে জাহানের মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে যায়। সে বলে, “কল ধরলে জানাবে না আমি এখানে। ওরা সবাই জানে আমি বাংলাদেশের বাহিরে গেছি আজ। বিয়ে শাদীর ব্যাপারে কিছু জানাবে না।”
“এতক্ষণে দেখো খবর চলে গেছে। ফুপি শ্রাবণীকে এতক্ষণ না বলে থাকতে পারবে? আর শ্রাবণী তো ওর ভাইয়ের বউ।”
“তাহলে আমার কথা ভুলেও জানাবে না।”
“তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন? এখন তো অবশ্যই জানাবো।”
“মহুয়া না…”
সে মহুয়াকে ধরতে গেলে মহুয়া উল্টো দৌড় দেয়। সে যেয়ে ধাক্কা খায় লামিয়ার সাথে। পরে যেতে নিলেই জাহান তার হাত ধরে টান দেয়।

লামিয়ার হাতে ছিল একটি ফুলের থালা। গোলাপ ফুলের পাপড়ির উপরে রাখা কতগুলো মেহেদীর কোণ।
থালা নিচে পড়ে শব্দ হয় বিকট আর ফুলের পাঁপড়িগুলো ভাসতে থাকে বাতাসে।

গোলাপ ফুলের পাপড়ির বর্ষণ হয় জাহান ও মহুয়ার উপর। তারা একে অপরের একদম কাছে। জাহানের হাত এখনো মহুয়ার পিঠে। তার দৃষ্টি স্থির তার মুখমন্ডলে। কোনো প্রসাধনী মাখা নেই তার মুখে। কিন্তু লাল রঙের ফুলের আলতো ছোঁয়া যেন তার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিলো। ঘোর লেগে গেল জাহানের। তার দৃষ্টি সরলো না, পলক পরলো না। সে হাত তুলে আলতো করে তার গালে আটকে থাকা পাঁপড়ি সরিয়ে তার চোখের নিচের তিলটায় আঙুল বুলায়। হিসহিসিয়ে বলে, “তোমাকে আজ সদ্য গোলাপ ফুলের মত লাগছে। স্নিগ্ধ আর সুন্দর।”

“কী হচ্ছে এখানে?” হঠাৎ উঁচু এক স্বরে ধ্যান ভাঙলো তাদের। জাহান তোকে সরিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। পাশে তাকিয়ে দেখতে পায় মুরাদকে। সাথে সাথে ঘাবড়ে যায়। জোরপূর্বক হেসে বলে, “ভাইয়া আসলে ও পড়ে যেতে নিয়েছিলো। তাই বাঁচালাম।”
মুরাদ সরু দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।
মহুয়া হঠাৎ বলে উঠে, “ভাইয়া মৃণার পক্ষ থেকে আসার জন্য আমার কয়টা বন্ধু ডেকেছি। সমস্যা হবে না-তো?”
“ওরা সকাল থেকে এখানে। বলল জাহানের ব্রাদার হয়। তুই তো দেখি এখন কথায় কথায় মিথ্যা বলিস রে মিষ্টি।” সে তাকায় আবার জাহানের দিকে, “আর কী মিথ্যা বলেছিস তুই?”

তখনই আগমন হলো মৃণার তাই ব্যাপারটা বাড়লো না। মুরাদের ধ্যান আটকে গেল তার উপর। সে দ্বীন দুনিয়া সব ভুলে গেল তাকে শাড়ি পরা দেখে। চোখ নড়লো না। তাকে স্টেজে নিয়ে বসালো মোহ। মহুয়া মুরাদের হাত টেনে তাকে নিয়ে গেল স্টেজে। মৃণার পাশেই বসাল। মেহেদীর এক কোণ নিয়ে বলল, “জলদি বলো তোমাকে কীভাবে মেহেদী দিব?”
মোহ মুখ বানাল, “তুই দিবি? স্কুলে তোর ড্রইং দেখে টিচাররা প্রজাপতিকে ভাবতো বল। তোর দ্বারা হবে না ভাই। আমাকে দে।”
তারপর সে মুরাদকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার হাতে কেবল মৃণার নাম লিখে দেই ভাইয়া?”
“বড় করে লিখে দিস। মৃণা না ময়না।”
“ময়না?” মোহ ও মহুয়া একসাথে প্রশ্ন করে।
মৃণারও দৃষ্টি তার দিকে। মুরাদ সবসময়ই তাকে মৃণার বদলে ময়না ডাকে ভুল করে।
মুরাদ তাকায় এবার তার চোখে, “হ্যাঁ, ও যখন আমার হয় না তখন ওর নাম মৃণা। আর আমার হয় তখন হয় আমার ময়না পাখি। এখন তো একবারে আমার হয়ে যাচ্ছে তাই আমার জন্য আজ থেকে ও কেবল আমার ময়নাপাখি।”

মৃণা অবাক দৃষ্টিতে তাকে তার দিকে। সে আজ বুঝল, যখন সে তন্ময়ের সাথে ছিলো তখন মুরাদ তাকে মৃণা বলে ডাকতো, আর যখন তন্ময়ের কাছ থেকে সরে আসতে চাইতো তখন ময়না। নামটা যে একান্ত তার দেওয়া।”

মোহ আর মহুয়া তাকাল একে অপরের দিকে। মিটি মিটি হেসে দুইজনে একে একে দুষ্টুমি করে গান গায়,
“মুরাদ ভাইয়ের ময়না পাখি কই রে কই?
মুরাদ ভাইয়ের পাখি সেজেছে আজ টিয়া,
আজ তার মেহেদী কাল তার বিয়া।
এই মহু কাল না পুরশু…
আজ যে মেহেদী পুরশু বিয়া,
কই গেল টিয়া?
মুরাদ ভাইয়ের ময়না পাখি উড়লো কই?
ময়না পাখি ছাড়া যে মুরাদ ভাইয়ের হৃদয় ব্যাকুল।”
মোহ থামলে মহুয়া বলে,
“আরে উড়বে কী করে বল তো? আমার ভাইয়ের পাখি তো, ছাড়বেই না। দেখি ভাইয়া জড়িয়ে ধরে রাখো তো।”
“এই তোরা দুই শয়তান আমার বউকে চুপচাপ পেয়ে মজা নিবি না তো।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ ময়নাপাখির মুরাদভাই আছে না? তার সাথে কি এখন আর মজা নেওয়া যাবে? ”
.
.
সারাদিনের ক্লান্তিতে বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না তারা। মেহেদী দিয়েই রুমে চলে গেল যার যার মতো। জাহান তিসানের সাথে তার বাসায় গেলেও সমুদ্রকে জোর করে এখানেই রাখলো। মোহ আর সমুদ্রকে একটা গেস্ট রুম দেওয়া হলো। সব মেয়েরা ভেবে রেখেছিল মেহেদী রাতে উঠাবে না। কিন্তু মোহ রুমে এসেই মেহেদী ধুঁয়ে ফেলে।
জামা-কাপড় চেঞ্জ করে বের হয় ওয়াশরুম থেকে। দেখে সমুদ্র বসে আছে। ফোনে কিছু করছে। তকে দেখেই ফোন রেখে উঠে এগিয়ে এলো তার কাছে। কিন্তু মোহ পাত্তা দিলো না। সে বিছানার পাশ থেকে একটি কমফর্টার নিয়ে নিচে বিছিয়ে দিলো।
সমুদ্র জিজ্ঞেস করে, “কী করছ?”
“দেখতে পারছেন না? বিছানা করছি। আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না।”
“মধু, আমরা কী সব ভুলে আগের মতো হতে পারি না?”
“আপনার কিছু ভুলার নেই। আর আমি ভুলতে পারবো না।”
“ঠিক আছে তাহলে আমি নিচে ঘুমাবো।”
“প্রয়োজন নেই। এখানে আপনি মেহমান।”

সমুদ্র বিছানায় বসে গভীর এক নিঃশ্বাস ফেলে। হঠাৎ হেসে বলে, “তোমার মনে আছে মধু? আমাদের বিয়ের রাতে তুমি আমাকে লাথি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছিলে। ”
মোহেরও হঠাৎ দৃশ্যটা মনে পড়ে হাসি এসে পড়ে।
“হ্যাঁ, পরের দিন আপনি আমাকে আইসক্রিম হিসেবে ঘুষ দিয়েছিলেন।”
“সেটা মোটেও ঘুষ ছিলো না।”
“একদম ছিলো।”
মোহ বলতে যেয়ে হেসে উঠে। হঠাৎ তার মনে পড়ে, সে কী করছে? সে সমুদ্রের সাথে স্বাভাবিকভাবে কি করে কথা বলতে পারে?

তার মুখের ভাব ভঙ্গি গম্ভীর্য হয়ে যায়। সে সমুদ্রের সাথে কোনো কথা না বলে যেয়ে লাইট বন্ধ করে দেয়। সমুদ্র বসে থাকে সেখানেই। অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে মোহের দিকপাণে। তারপর তার কাছে আসে। তাকে কোলে তুলে উঠিয়ে বিছানায় নেবার জন্য। সে ছুঁতেই মোহ সাথে সাথে তার হাত সরিয়ে নেয়। বসে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে, যা অন্ধকারে দেখা যায় না। তবে কন্ঠে স্পষ্ট ভেসে উঠে, “আপনাকে বলেছি না আমি নিচেই শোবো। কথা কানে যায় না? আপনি উপরে যেয়ে ঘুমান। খবরদার রাতে কোলে তুলে নেওয়ার চিন্তাও মাথায় আনবেন না।”
বলে মোহ শুয়ে পড়ে।

সমুদ্র কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজেও শুয়ে পড়ে মোহের পাশে। মোহকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
মোহ ক্ষেপে উঠে তখনই, “কী করছেন? ছাড়ুন, ছাড়ুন আমাকে।”
মোহ সমুদ্রের হাত তার পেট থেকে সরানোর চেষ্টা করলো।
সমুদ্র সাথে সাথে তাকে ঘুরিয়ে নেয়। এক তার কোমরে দিয়ে তাকে কাছে টেনে অন্যহাত ধরে তার চুলের ভেতর হাত ভরে নেয়। মৃদুস্বরে বলে, “প্লিজ এমন করো না মধু। তোমাকে বহুদিন পর এই বুকে পেয়ে স্বস্তি পাচ্ছি। আমার শূন্য হৃদয়টাকে এই শান্তি পেতে দেও। দেখো,” সে মোহের চুল থেকে হাত সরিয়ে তার হাত ধরে। বলে, “এই বুকের অবস্থা তুমিবিহীন কত করুণ। অনুভব করতে পারছো? তোমাকে বুকে না নিয়ে একটারাতও ঘুমে কাটে নি আমার। আমি জানি, তোমারও একই অবস্থা। আজ রাত নাহয় একটু শান্তির ঘুম দেও।”
বলে সে মোহের হাত ছেড়ে আবার তাকে আরও কাছে টেনে আনে। জোরে ধরে রাখে। হারাতে চায় না সে এই কন্যাটিকে। তার কাঁধে মুখ দিয়ে তার ঘ্রাণে বুক ভরে নেয়। অনুভব করে তার শার্ট ভিজে গেছে। মোহও কী তার গলায় তার চোখের উষ্ণ জল অনুভব করতে পারছে?

দু’টি মানুষ কত কাছাকাছি। হৃদয়জোড়া একে অপরের সাথে যুক্ত। অথচ দু’জনে কত দূরত্ব!

চলবে…

মেঘের খামে…
পর্ব ৫২
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

হলুদের রঙ লেগেছে আজ মহুয়ার বাড়িতে। চারদিকে গান বাজছে সে বিকেল থেকেই। উৎসবের আমেজ লেগে আছে বাড়িতে।

সকলে আজ হলুদ রঙের পোশাক পরেছে। মহুয়া পরেছে সারারা, মোহ লং আনারকলি এবং মৃণা জামদানী শাড়ি। আর সকল ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি। আজ জিনিকে দাওয়াত দেওয়ায় সে-ও এসেছ। ছাদে হৈ হুল্লোড় হচ্ছে।
স্টেজে বসে আছে মৃণা ও মুরাদ। নিচে নাচা-নাচি চলছে। সবার আগে এলো বরের বন্ধুরা। সাইদ ও রিয়াদ এসে নাচ দিলো প্রথমে। ‘আজ মেরে ইয়ার কি সাদি হে’ গানে। তারপর সবাই মোহকে জোর করে নাচ করার জন্য। কিন্তু সে কিছুতেই রাজি না। তার শরীর না’কি ভালো না। কেউ ব্যাপারটা ঘাটায় নি। কারণ ক’দিন ধরে সত্যিই মোহকে রোগা লাগছে। ঠিক মতো খাচ্ছেও না। তার না-কি ভালো লাগে না। গতকাল শপিংমলে যেয়েও মাথা ঘুরান দিলো মোহের। তারপর মহুয়া জোর করে তাকে খাবার খাইয়েছিল।

তাই এবার মহুয়া নিজে নামলো ডান্স ফ্লোরে।
গান বাজলো পিছনে,
‘ আজ হে সাগাই, শুন লাডকিকে ভাই,
যারা নাচকে হামকো দেখা,”
জাহান অবাক হয়ে যায়। মহুয়া সরাসরি তার দিকে তাকিয়েই গান, নাচ করছে। পিছন থেকে তিসান তার পিঠে ধাক্কা দিয়ে সামনে পাঠালো। আর সবাই শিষ বাজাতে শুরু করে।
জাহান তো ভয়ে ভয়ে তাকায় মুরাদের দিকে। মুরাদ প্রথম গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালেও পরে ইশারায় অনুমতি দেয়। আর জাহানের নিশ্বাস আসে।

‘ আজ হে সাগাই, শুন লাডকিকে ভাই,
যারা নাচকে হামকো দেখা,
কুড়িকে তারহা না সারমা,
কুড়িকে তারহা না সারমা।
হাই, তু মেরি গাল মান যা, তু মেরি গাল মান যা।’
জাহান মহুয়ার হাত ধরে নেয়। তার সাথে তাল মেলায় নাচে,
“সাবকো নাচাও,
নাচ নাচকে দেখাও আ মুজকো গালে সে লাগা,
সাবকো নাচাও,
নাচ নাচকে দেখাও আ মুজকো গালে সে লাগা,
তু মেরি গাল মান যা, তু মেরি গাল মান যা।’

মহুয়া যেয়ে লুকায় মোহের পিছনে। তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গানে মুখ নাড়ায়,
” কেহতি হে মেরি শাখিয়া, দিলমে চোর তেরে,
কিও হাত ধোকে এসে পিছে পাড়া হে মেরে?”
“শাখিয়ো সে আপনে কেহদো কে বিচমে না আয়ে
বান যায়ে মেরি শালী, জিজা মুজহে বানায়ে।”
জাহানও আসে তার সামনে মোহের দিকে তাকিয়ে তার সামনে হাত পাতলে মোহ নিজেই মহুয়ার হাত নিয়ে জাহানের হাতে দিয়ে দেয়। অথচ মহুয়া তার দিকে এভাবে তাকায় যেন তার সাথে অনেক বড় ধোঁকা করে দিয়েছে।

গানের শেষের দিকে মহুয়ার ডাকে সবাই আসে। একের পর এক গান ছাড়া হয়। আর সবাই নাচতে থাকে। বিশেষ করে জাহান ও মুরাদের বন্ধুরা। মেয়েদের মধ্যে মহুয়ার সঙ্গ দেয় কেবল জিনি।

সে সময় মোহ দাঁড়িয়ে ছিলো ছাদের পাড়ে। সমুদ্র এসে দাঁড়ায় তার পাশেই। বলে,
“তোমার বান্ধবীর বিয়ে, নাচলে না?”
মোহ একপলক তাকায় তার দিকে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
সমুদ্র আবার বলে, “ঈশার হলুদে যখন নেচেছিলে সেদিন তোমার মাঝে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। সব শূন্য মনে হচ্ছিল। মনে হলো তুমি আর আমি আছি এই এই জগৎ-এ।”

মোহ বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় সমুদ্রের দিকে। সে একবার বলেছিল এই কথা, যখন সে জবার প্রেমে পড়েছিল। তাহলে সমুদ্র কী তার? না, এসব সে আর ভাববে না। কিছুতেই না।

এই গান বাজনার মধ্যেই মোহ রেগেমেগে তার আনারকলি ধরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায় নিচে। এখানে থাকতে তার আর ভালো লাগছে না। দম আটকে আসছে। এদিকে সমুদ্রও তার পিছনে আসে। তাকে ডাক দেয় বারবার।

মোহ বিরক্তি নিয়ে বের হয়। তার মাথা ধরে গেছে। সে শান্তির জন্য নিচে, বাগানে এসেছিল। অথচ সমুদ্র এখানেও তার পিছনে এলো।
“কী? কী সমস্যা আপনার?” মোহ পিছনে ঘুরে জিজ্ঞেস করে।
“আমি কেবল তোমার সাথে কথা বলছিলাম।”
“আপনি কথা বলছিলেন না। আমার ক্ষত তাজা করছিলেন। আমি সে মুহূর্তটা ভুলতে চাই যে মুহূর্তে আপনার প্রেমে পড়েছিলাম আমি, যে মুহূর্তে আপনি আমার অপমান করেছেন, হাত উঠিয়েছেন আমার উপর। আমি আপনাকে ভুলতে চাই।”
“তুমি আমাকে ভুলে থাকতে পারবে?”
মোহের চোখে জল টলমল করে। হয়তো পারবে না। কিন্তু তার সাথে কী থাকতে পারবে?
সে তার দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাকায় অন্যপাশে। সাথে সাথে চমকে উঠে সে তিসানকে দেখে। সে কী তাদের কথা শুনে নিয়েছে?

তিসান তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। সে কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়। বাড়ির ভেতরে ঢুকতে নিলে মোহ আসে তার পিছনে, “তিসান ভাইয়া দাঁড়ান একটু।”
তিসান পিছনে ফিরে তাকায়।
মোহ তার সামনে এসে বলে, “আপনি কী সেখানে কিছু শুনেছেন?”
“কোন বিষয়ে?”
মোহ শান্তির নিশ্বাস ফেলে। যাক, তিসান তাহলে কিছু শুনতে পায় নি।
তখনই তিসান বলে, “তুমি তার প্রেমে পড়েছিলে এই আফসোসের না, সে তোমার উপর হাত তুলেছে তা নিয়ে।
উনি তোমার উপর ফিজিক্যাল এবিউস করতো? একথা মহুয়া জেনেও আস্তো রেখেছে কীভাবে? উল্টো এমন ভক্ত হয়ে ঘুরছে। এটাই ওকে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছি।”
“এমন কিছু না।”
“তুমি তাকে ডিফেন্ড করছ?”
“আমি উনাকে ডিফেন্ড করছি না। যা সত্যি তা বলছি। উনি আমাকে থাপ্পড়ও মারে নি কখনো। একবার অনেক বাজে পরিস্থিতি ক্রিয়েট হয়। রাগের মাথায় উনার হাত উঠে কিন্তু উনি থেমে যায়।”
“যদি পরেরবার থেমে না যায়?”
“আমার কাছেও আমার সম্মান সবচেয়ে বড়। তাই চলে এসেছি।”
“চলে এসেছ তাহলে উনি এখানে কী করছে?” অবাক সুরে প্রশ্ন করে তিসান।
“মৃণার বিয়ে আর জাহান ভাইয়া ও মহুয়ার মাঝেও ঝামেলা চলছে। ওদের এসব চিন্তায় জড়াতে চাই না। সময় হলে ওদের জানাব। এর মধ্যে আপনিও তাদের কিছু বলবেন না প্লিজ।”
“আচ্ছা বলবো না। কিন্তু একটা শর্তে।”
“কী?”
“আমাকে আজকের পর থেকে ভাইয়া বলে ডাকবে না।”
মোহ এবার বিরক্ত হয়। তিসান কি এখনো তাকে পছন্দ করে? সে বিবাহিত জানার পরও?

মোহ কিছুটা বিরক্তির স্বরে বলে, “ভাইয়া শুনুন, আমি সমুদ্রকে ছাড়লেও দ্বিতীয় বিয়ে করবো না। দ্বিতীয়বার কাওকে ভালোবাসবো না। আমি এই জীবনে একজনকেই ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। সে ভালোবাসার পরিণাম আমি দেখে নিয়েছি।”
মোহ সেখান থেকে যেতে নিলেই তিসান তার হাত ধরে নেয়। মোহ আশ্চর্য হয়ে তাকায় তার দিকে। কপাল কুঁচকে নেয়। তিসান সাথে সাথে তার হাত ছেড়ে দেয়, “সরি এভাবে হাত ধরার জন্য। আচ্ছা একজন ভুল করলে যে সবাই করবে তা তো নয়। আমি তোমাকে সব খুশি দিতে পাড়বো।”
“আমি বিবাহিত।”
“আর এই সম্পর্ক মূল্যহীন তাই না? এই সম্পর্কে তুমি থাকবেই না।”
“উল্টাপাল্টা কথা বলেন না। আপনার সাথে আমার ভালো করে পরিচয় হয় নি আপনি কীভাবে ভালোবেসেছেন আমাকে? রূপ দেখে? আমার বয়স হলে এই রূপে কিছুই থাকবে না। তখন কী করবেন?”
“আমি তোমাকে ভালোবাসা কখনো বন্ধ করবো না। বিলিভ মি।”
“কিন্তু আমি অন্যকাওকে কখনো আর ভালোবাসতে পাড়ব না। তাই এই কথা মস্তিষ্ক থেকে মুছে ফেলুন।”
.
.
মহুয়া নাচছিল এমন সময় তার ফোনে একটা কল আসে। আননোওন নাম্বার। সে সিঁড়িঘরে যেয়ে কল ধরে। গতকাল চা’য়ের দোকানের মহিলাটা কল করে তাদের আসতে বলেছে। মহুয়া ভেতরে যেয়ে জাহানকে টেনে নিয়ে আসে। তবে মুরাদ ও মৃণাকে কিছু জানায় না। নিচে এসে বাগানে সমুদ্রকে পেলেও মোহকে পায় না। তাকে কল দিয়ে আনে।

তারা চারজন জাহানের গাড়িতে উঠে রওনা দেয়। চা’য়ের দোকানের সামনে যেয়ে তারা দেখতে পায় এক মধ্যবয়সী লোককে। হাতে মাথায় ব্যান্ডেজ করা। মহুয়া এগিয়ে যেয়ে লোকটির সামনে যেয়ে সালাম দিয়ে বলে, “মামা আমি মহুয়া। ওদিন যে আপনি একটা মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছিলেন তার বান্ধবী। আমরা আপনাকে খুঁজছিলাম দু’দিন ধরে। কিন্তু আপনার অবস্থা এমন কেন?”
“কইয়ো না আম্মা, ওদিন আমার লাইগা ছেলেগুলা ওই মাইয়ারে ধরতে না পাড়ায় আমারে ধইরা বাইঁধা নিয়া যাইয়া খুব মা’রে।”
“তারপর আপনি এই অবস্থায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন?” মোহ প্রশ্ন করে।
“কী করুম আম্মা? না বাইর হইলে তো কালকেরতে পেটে খাওন জুটবো না। দিন আনি দিন খাই। আজ না আইলে কাল না খাইয়া মরতে হইবো।”
কথাটা শুনে মহুয়া আর মোহ দুইজনের মুখ ছোট হয়ে গেল।
জাহান বলল, “আপনি মৃণার যেভাবে সাহায্য করেছেন নির্দ্বিধায় আপনি ভালো ও সৎ মানুষ। আপনি পরে আমার সাথে দেখা করবেন। আপনার এত কষ্ট করা লাগবে না আর। এখন আপাতত আমাদের একটু সাহায্য করুন দয়া করে।”
“দয়া তো তুমি আমার উপর করলা আব্বাজান।” বলে সে হাত জোড় করতে গেলে জাহান বলে, “আপনি আমার বড় এমন করবেন না। কেবল ওই ছেলেগুলোর ঠিকানা জানলে আমাদের একটু নিয়ে চলুন। হিসাব বরাবর করতে হবে। চিনবেন তো?”
“চিনবো আব্বাজান। আমাকে যেখানে নিয়ে মারছিল ওইখানেই মনে হয় ওদের আড্ডা। আগেও কয়েকবার ওদের ওখানে দেখেছি।”

রিকশাওয়ালা মামার সাথে তারা গেল সেদিকে। একটি বাড়ির কাজ চলছে এমন জায়গা। জায়গাটার ভীতরে নীরব হলেও বাহিরে অনেক দোকান আছে৷ তাই সমুদ্র ও জাহান তাদের বাহিরে রেখে ভেতরে যেতে চায়। কিন্তু মহুয়া তো নাছোড়বান্দা। সে কারো কথা শুনে? সে মাতব্বরি করে সবার আগেই ঢুকে পড়ে।

জাহান মোহকে বলে, “তুমি এসো না। তুমি চাচার সাথেই থাকো এখানে। ওখানে কেমন লোক আছে আমরা জানি না।”
“কিন্তু আপনারা…”
“তুমি আসলে সেখানে তোমার খেয়াল রাখতে যেয়ে ঝামেলা বাড়তে পাড়ে।”
“মহুয়া?”
“তোমার বান্ধবীর তেজ দেখেই ওরা পালাবে। তোমার বান্ধবীর চিন্তা না করে বেচারা ওই বখাটে ছেলেদের কথা চিন্তা করো।”
মোহ হাসে তার কথায়, “মহুয়ার খেয়াল রেখেন ভাইয়া প্লিজ।”
“আমার জানের খেয়াল আমার জান থেকেও বেশি রাখবো।”

তারা ভেতরে ঢুকে। মোহ রিকশাওয়ালা মামার সাথেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তার নাম মামুন। মোহ তার পরিবারের কথাই জিজ্ঞেস করছিল। এরমধ্যে মোহের মাথা ঘুরান দিলো একটা। আজকাল সে খুব অসুস্থ অনুভব করছে। সে মামুন চাচাকে বলে গেল সামনের দোকানে। একটি পানির বোতল কিনে প্রথমে বোতল থেকে পানি পান করল তারপর মাথায় ঢাললো। এমন সময় একটা ছেলে দোকানে এসে বলে, “এই মামা দুই প্যাকেট সিগারেট দে। টাকা চান্দারতে কাইট্টা রাখবি।”
মোহ তার কথা শুনে তাকায় তার দিকে। লোকটার কথা শুনেই তার ভালো লাগলো না। সে টাকা পরিশোধ করে যেতে নিলে ছেলেটা তার সামনে এসে দাঁড়ায়,
“বাবারে বাবা এত সুন্দরী মাইয়া তো বাপের জন্মে দেখি নাই। টিভিতেও এমন সুন্দর মাইয়া নাই। এই মাইয়া তোর নাম কী’রে?”
মোহ তার দিকে প্রথম তাকায় কপাল কুঁচকে। তারপর কিছু না বলে চলে যেতে নেয়। কিন্তু ছেলেটা তার বাহু ধরে, “ওহ জানেমান তোর মতো মাইয়ারে ছাড়লে দশ জনম পস্তামু। পুরাই আগুন সুন্দরী। তোরা বেঁচলে তো টাকার বর্ষণ হইবো। কিন্তু আগে আমরা খাইয়া নিমু। ওস্তাদে খুশি হইয়া যাইবো।”
মোহ নিজেকে শান্ত রাখতে চেয়েছিল। এসব লোকের সাথে তর্কে জড়ানো উচিত না। কিন্তু তার এমন কথার ভাষা শুনে মাথায় আগুন ধরে গেল মোহের। তাকে পণ্য বলছে লোকটা? এক দুই না ভেবে কষিয়ে চড় মারলো তার গালে।
তার শরীর হঠাৎ এমন জোর কোথা থেকে এলো কে জানে লোকটা থাপ্পড় খেয়ে পিছিয়ে গেল।

লোকটা তার দিকে তাকায় অগ্নিবর্ণ চক্ষুতে। ক্ষোভে তার গা কাঁপছে, “তোর এত বড় সাহস? আজ তোকে কী করবো দেখ শুধু।”
মোহ দোকানদারের দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুখ অন্যদিকে করে নিয়েছে। এমন লোকদের দেখে আরও মেজাজ খারাপ হয় মোহের। সে বলে উঠে, “আপনার মেয়েকে এমনভাবে হ্যারেজ করার সময়ও আপনি এভাবেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েন। কাপুরুষ কোথাকার!”
মোহ সেখান থেকে যেতে নিলে আবারও ছেলেটার হাত ধরে ধস্তাধস্তি করতে শুরু করে। মোহ তার হাতের বোতলের পানি ছুঁড়ে মারে তার মুখে।
সেখান থেকে দৌড়ে যেতে নিলেই লোকটা তার পকেট থেকে ধাঁরালো ছুরি বের করে তার মুখের সামনে ধরে, “চুপচাপ আমার সাথে চল, নাহলে এখনই শেষ করে দিমু।”
.
.
গেইট খুলে মহুয়া ঢুকতেই দেখে বিল্ডিংয়ের সামনে চেয়ার পেতে ক্যারাম খেলছে তিনজন। মহুয়া পাশ থেকে একটা লোহার রড নিয়ে যায় তাদের দিকে।
একটা ছেলে তাকে দেখে বলে, “ভাই জীবনে এমন দৃশ্য আর দেখি নাই। কোনো মাইয়া নিজ থেইকা আমাদের কাছে আইতাসে।”
পাশের দুইজন তাকায় সামনের দিকে। মহুয়াকে দেখে একজন ভ্রু উঁচিয়ে বলে, “কিন্তু রড নিয়া আইতেছে কেন? এই মাইয়ারে কী আগে ধরছিলাম?”
“মনে তো হয় না।”

কোন কথা নেই বার্তা নেই মহুয়া এসেই এক ছেলের মাথায় বড দিয়ে জোরে বারি মারে। সাথে সাথে ছেলেটা চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যায়৷ মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে। বাকি দুইজন আঁতকে উঠে। দাঁড়িয়ে যায়। একজন হুঙ্কার দিয়ে উঠে, “শালী কে তুই?”
“তোগো জাহান্নামের টিকিট। তোদের সাহস কেমনে হয় আমার বান্ধবীর গা’য়ে হাত দেওয়ার?”
সে আবারও আরেকজনকে মারতে নিলে ছেলেটা রড ধরে নেয়।
“এবার?”
মহুয়া জোরে লাথি মারে তার হাঁটুতে।
“শালী তোরে…” আরেকজন মারতে আসলে মহুয়া তার হাতে থাকা ছু’রিটা দিয়ে তার গালে আঘাত করে বসে।

জাহান ও সমুদ্র এসেছে এতক্ষণে। এসেই এই অবস্থা দেখে জাহান বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার যদি একা এসে এখানে মারপিট করতে হয় তাহলে আমাদের আনলে কোন দুঃখে?”
“সিনেমা দেখার জন্য তো আনি নাই। এদের হাত রাখবো না অন্য মেয়ের গা’য়ে লাগানোর জন্য।”
এক ছেলে মহুয়ার দিকে তেড়ে আসলে জাহান তার হাত ধরে হাতই মুচড়ে দেয়।
মহুয়া চেয়ারে বসে আরাম করে, “যাক তোমার এই বডির কিছু তো ফায়েদা হলো।”
জাহান ও সমুদ্র দুইজনকে সামলাচ্ছে। আরেকজন তো মাথায় আঘাত লেগে পরেই ছিলো। মহুয়ার কিছু করার ছিলো না বলে সে বিরক্ত হচ্ছিল ভীষণ। সে লোকটির সামনে যেয়ে বসে। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা শুন, তোরা তো চারজন ছিলি। আরেকটা কই?”
ছেলেটা ব্যথা পাওয়ায় কোন উত্তরই দেয় না। মহুয়ার তো এবার রাগ উঠে যায়। সে ছুরিটা তার হাতে গেঁথে দেয়, “প্রশ্ন করতেছি কানে যায় না?”
ছেলেটা ব্যাথায় কুঁকড়ে যায়। আর্তনাদ করে উঠে।
“এই শালা আস্তে। কানের পর্দা ফেটে যাবে তো। বল আরেকজন কই? নাইলে আরেক হাতেও…”
“না না আপা…ওই ওই বাইরে..”
“কখন আসবে?”
“সিগা…রেট আন…তে…”
মহুয়া উঠে দাঁড়ায়। লোকটিকে লাথি মেরে বলে, “এরা তো ঠিকভাবে কথাই বলতে জানে না। মেয়ে উঠিয়ে কী করবে?”
সমুদ্র আরেকজনকে মাটিতে ফেলে বলে, “এদের কী করবো? পুলিশ ডাকবো?”
“মে’রে ফেললে কী গুনাহ হবে আমাদের? আই মিন এরা তো ভালো মানুষ না। কতগুলো মেয়ের দোয়া পেলে গুনাহ কেটে যাবে না?”
জাহান অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে, “তুমি মা’রার কথা ভাবছিলে?”
মহুয়া মাথা চুলকায়, “এটাই কথা ছিলো না?”

এমন সময় মামুন চাচা আসে দৌড়ে, “শুনো শুনো…ওই আম্মাডারে ওইদিনের এক পোলা ধরসে। যে ওইদিন রিকশারতে টেনে নামাইছিলো ওই আম্মাডারে।”
সমুদ্র সম্পূর্ণ কথাও শুনলো না। এক দৌড় দিলো। ভিড় জমে গিয়েছিল বাহিরে। সব ভিড় ঠেলে বের হলো।
.
.
সেখান থেকে দৌড়ে যেতে নিলেই লোকটা তার পকেট থেকে ধাঁরালো ছুরি বের করে তার মুখের সামনে ধরে, “চুপচাপ আমার সাথে চল, নাহলে এখনই শেষ করে দিমু।”
“তোর বাসায় মা বোন নেই?”
“নাই তো। আর মা বোন দিয়া কি করুম। কিন্তু তোর মতো আগুন সুন্দরীরে অন্যকাওরে দিতে মন চাইতেছে না। চল আমার সাথে। তোরে আমার কাছেই রাখুম। বিয়া করুম তোরে। কিন্তু লোভও লাগে। তোরে বেঁচলে টাকাও পামু কতডি। এক কাম করুম। আগে তোরে আমার কাছে রাহুম তার বিক্রি করুম। ভালা বুদ্ধি না?”
মোহ থু দিলো হাত মুখে, “তোদের মতো লোক ধরার আগে আমি মরে না যাই।”
মোহ তার হাতে হাতে জোরে কামড় দিলো একটা। লোকটা মোহের হাত ছেড়ে আরও রেগে উঠে। রাগে তার চোখ লালও হয়ে যায়। সে বলে, “তোর অনেক তেজ না। তোর তেজ আমি বাইর করতাছি।”
লোকটা ছুরি তুলে তার উপর। সে বড় ছু’রিটা দেখে মোহ স্তব্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তের জন্য মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যায়। হঠাৎ চোখের সামনে ছুরিটা আসার সে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠে। মুহূর্তে এক উষ্ণ আলিঙ্গন অনুভব করে সে।
চোখ খুলে দেখতে পায় সমুদ্র তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। সে দেখে তার বাহুতে আঘাত লেগেছে। সে আঘাতের চিহ্ন দেখে তার নিশ্বাস আঁটকে আসে। সে বড় চোখে তাকায় সমুদ্রের দিকে। সমুদ্র তাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার বুকের সাথে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তার মন শান্ত করতে।

“তোর শালা মরণের শখ জাগছে? এই মাইয়ারা আমার কাছে দে।” ছেলেটা আরেকবার আঘাত করতে যাবে আর সমুদ্র তার হাত ধরে নেয়। তার বুকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়। আবার কলার তুলে উচু করে বলে, “তুই জানিস ও কে? আমার বউ। আমার বউকে ছোঁয়ার সাহস তুই কোথা থেকে পেলি? আবার ওর উপর আক্রমণ করিস। মে’রেই ফেলবো তোকে আজ।”
একের পর এক ঘুষি মারতে শুরু করে। নিচে পড়ে গেলে আবার তুলে উঠিয়ে আবার মারে সে।

মহুয়া এসে এতক্ষণে মোহকে ধরেছে। অনুভব করে মোহ কাঁপছে। তার চোখে পানি। মহুয়া জিজ্ঞেস করে, “তুই ঠিক আছিস?”
“উনি… উনার হাতে অনেক জোরে লেগেছে।”
জাহান জিজ্ঞেস করে, “ভাইয়াকে কি থামাবো? ম’রে যাবে তো।”
“যাক। এরা বেঁচে থাকলে দেশে ময়লার স্তুপ বাড়বে।”
“মুরাদ ভাইয়ের বিয়ে তো। এখনই পুলিশ স্টেশনের চক্কর কাটতে চাইছি না। খারাপ ইম্প্রেশন পড়বে।”

এমন সময় পুলিশের গাড়ির শব্দ আসে। পুলিশের জিপ এসে উপস্থিত হয়।
.
.
সবে মাত্র মুরাদ এসেছে পুলিশ স্টেশনে। দেখে একটি বেঞ্চে বসে আছে মোহ আর মহুয়া। আর পাশেই দাঁড়ানো জাহান ও সমুদ্র। সে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় তাদের দিকে। মহুয়াকে বলে, “আমিও তো বলি তোরা হঠাৎ কোথায় গায়েব হলি? আমার বুঝা উচিত ছিলো তুই যেহেতু ওখানে নেই, কোনো এক কান্ড তো ঘটবে। কিন্তু মোহ তুইও? তুই তো একমাত্র বুদ্ধিমান ছিলি তিনজনের মধ্যে।”
“এই ভাইয়া এখানে অপমান করবে না।”
“চুপ। থাপ্পড় দিবো একটা। একতো ভুল করেছিস এর উপর মুখে মুখে তর্ক করিস।”

“ভাইয়া মহুয়া কোনো ভুল করে নি।” জাহান উওর দেয়। মুরাদ তাকায় জাহানের দিকে। বিরক্তি নিয়ে। জিজ্ঞেস করে, “তুমি বলছো বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের রাতে তোমরা জেলখানায় অথচ কোনো ভুল করো নি?”
“না।”
“তাহলে কী এখানে তোমাদের পুরস্কার দিতে আনা হয়েছে?”
“পুরস্কার দেবারই কথা ছিলো কিন্তু ওসি স্যার আবার ক্ষমতা দেখে অন্ধ হয়ে গেছেন।”
ওসি কন্সেটেবলকে বলেন, “এদের লকাপে ভর দেখি।”
মুরাদ থামায় তাকে, “ওয়েট স্যার আসলে ওরা ছোট তো ভুল করে ফেলেছে। এমনি কী করেছে এরা?”
“দেখেন..” সে কয়েকটা ছেলেকে দেখাল পাশের বেঞ্চে বসে থাকতো। এদের কী অবস্থা করেছে?”
মুরাদ তাকাল সেদিকে। দেখলো চারজন ছেলে। ঠিক চারজন দেখেই তার সন্দেহ হলো। সে কপাল কুঁচকে তাকাল।
ওসি বললেন, “বেচারাদের কী অবস্থা করেছে। আপনার বোন তো একজনের হাতে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে।”
“আমি একটু কাছে দেখতে পারি?”
“দেখুন।”
মুরাদ তাদের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। একেকজনের অবস্থা করুণ। মুরাদ মহুয়াকে প্রশ্ন করে, “এগুলোই কী ওই ছেলেগুলো?”
“তো কী? তোমাদের বিয়ের আগে ওদের শিক্ষা না দিলে আমি শান্তি পেতাম না। এই ভুড়িওয়ালা টাকলাকে সব বলেছি। কিন্তু সে উলটো এদের খাতিরযত্ন করছে।”
ওসি যখন বুঝে মহুয়া তাকে নিয়ে বলছে সে তার পেট ধরে ড্যাবড্যাব করে তাকায় মহুয়ার দিলে।
মহুয়া উল্টো তাকে ভেঙিয়ে দেয়।

মুরাদ তখনই একটাকে ধরে মা’রতে শুধু করে। এমনিতেই সকলের অবস্থা খারাপ। কেউ পালটে মারতে পারে না। উল্টো মার খেয়ে বেঞ্চে পরে থাকে। মুরাদ হাঁসফাঁস করছে। সেদিনের মৃণার কান্না, তার আঘাতের চিহ্নের কথা মনে করেই মাথায় আগুন জ্বলে উঠে তার। এরউপর অন্যকোনো ছেলে তাকে বাজেভাবে ছুঁয়েছে এই ব্যাপারটা কিছুতেই সহ্য হয় না তার। সে নিজের বুকের আগুন মিটাতে আরও মারতে শুরু করে লোকটিকে। আগুন কমেই না উল্টো দাউদাউ করে বাড়তে থাকে। তার মনে হয় এদের খু’ন নিজ হাতে না করলে এই বুকের আগুন নিভভে না।

অফিসাররা যেয়ে মুরাদকে ধরে। বিরক্তি নিয়ে বলে, “আপনাকে ডাকলাম ওদের বিচার দিতে। ওদের উপর কেস করছি না ওদের ভাগ্য। এখন দেখি উল্টো আপনিও তেমনটাই করছেন। দেখুন ওরা রাজনৈতিক দলের সদস্য ওদের থেকে দূরে থাকেন। দেনা-পাওনা করে ব্যাপারটা মিটমাট করে ফেলুন।”
মুরাদ তার দিকে তাকায় অবাক দৃষ্টিতে, “ও আমার হবু বউকে হ্যারেজ করেছে। তাকে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছে। খারাপ ভাষায় কথা বলেছে। ওদিন ও না বাঁচলে ওরা কি করতো কে জানে?”
মোহ তখন বলে, “ভাইয়া এই ছেলে আমার সাথে বেয়াদবি করছিল। তখন কথায় বলেছিল এরা মেয়েদের ধ’র্ষণ করে তাদের বিক্রি করে দেয়।”
মুরাদের রাগের গতি বাড়লো আরও। সে ওসির দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করে, “এখন আপনি কী বলবেন?”
“উনাদের একশন না নিয়ে জিডি করা উচিত ছিলো আমাদের কাছে। আমরা ব্যাপারটা দেখতাম।”
“আপনারা কেমন ব্যাপার দেখছেন তা তো দেখতেই পারছি। এখানে আপনার মেয়ে হলে কী করতেন?”
“আমার মেয়ে রাতে বাসা থেকে বের হয় না। মেয়েদের সামলে থাকতে হয়। সামলে না থাকলে তো এমন হবেই। অকারণে আপনারা এসবে জড়িয়েন না। আমি আপনাদের ভালোর জন্য।”
সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই মুরাদ তার নাকে একটা ঘুষি মা’রে। এত জোরে মারে যে র’ক্ত পড়া শুরু হয়ে যায়। সে নাকে হাত রেখে ক্ষুব্ধ স্বরে বলে, “এই হাকিম এদের লকাপে ঢুকা জলদি। অন ডিউটি অফিসারের উপর হাত তুলে। অন্য কয়টা মামলা ঠেসে দে।”
জাহান তখন বলে, “আমার ফোনটা দিন। কীভাবে কয়টা মামলা আপনার উপর ঠেসতে হয় তা দেখাচ্ছি।”

আরও কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর তাদের ধরে লকাপে ঢুকানো হচ্ছিল এমন সময় সেখানে এলো মুরাদের বাবা শায়ানকে নিয়ে।

শায়ান ভেতরে ঢুকতেই তার চোখ যায় সবার আগে মহুয়ার উপর। তাকে দেখে হাসলেও তার পাশের জাহানকে দেখে তার মেজাজ গরম হয়ে যায়। সে জানতো জাহান ঢাকার বাহিরে। তবুও সে নিজেকে সামলায়। যেয়ে সবার আগে চেয়ার টেনে বসে ওসির সামনে। পা’য়ের উপর পা তুলে বসে সামনের চেয়ারে।
ওসি তার নাকে রুমাল চেপে জিজ্ঞেস করে, “এই তুই আবার কে? যেমনে ঠাট করে বসেছিস মনে হচ্ছে তোর বাড়িঘর।”
শায়ান কিছু বলে না। একটা ফোন মিলিয়ে ওসিকে দেয়। সাথে সাথে সে দাঁড়িয়ে সালাম দেয় মাথায় হাত রেখে।
“আপনি শারাফ শিকদারের ছেলে বলবেন না স্যার? কী খাবেন স্যার আপনি?”
“আগে উনাদের ছাড়া হোক। আমার আত্নীয় হয়।”
“জ্বি স্যার এখনই ছেড়ে দিচ্ছি।”
ওসি কন্সটেবলকে বলে তাদের জিনিসপত্র দিয়ে দিতে। মহুয়া তখন উঠে এসে জিজ্ঞেস করে, “এই ভুড়িওয়ালা টাকলা নাকবোচা অফিসার এদের উপর মামলা না চাপালে চোখ তুলে মারবেল বানায় দিব ওয়ার্নিং দিলাম।”
শায়ান তার কথায় হাসে। তার দিকে তাকায় নরম চোখে, “তুমি চাও তাদের উপর মামলা হোক।”
“জানো না এরা কী করেছে! এরা…”
“জানার দরকার নেই। তুমি বলেছ তাহলে হবে।”
ওসির দিকে তাকালে সে সাথে সাথে বলে, “হবে হবে।”
“গুড।”

জাহান তার দিকে তাকায় অবাক দৃষ্টিতে। শায়ানের ব্যবহার সুবিধার ঠেকছে না তার কাছে। কিছু পরিকল্পনা করছে না-কি?

শায়ান উঠে দাঁড়ায়। মহুয়ার আঙুল ধরে আলতো করে, “চলো।”
ওসি বলে, “স্যার কিছু খাবেন না?”
“খাব।”
“কী খাবেন স্যার বলেন। এখনই আপ্পায়নের ব্যবস্থা করছি।”
“তোর চাকরি। আজকের কাজটা মোটেও ভালো করিস নি। দুইদিনে নতুন চাকরি খোঁজার ব্যবস্থা করে নে।”

চলবে…