(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)
#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_২
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা
কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌
রাত নয়টা বাজছে। ডাইনিং টেবিলে সবাই একসাথে বসেছে। আলো মৃদু, হালকা খোঁচা খোঁচা আলোয় কনকনে হালকা ছায়া পড়ছে। কিন্তু আজকার নীরবতা স্নেহার মুখের দিকে যেন আরো গভীর হয়ে এসেছে। আফজাল খান, নেহারের বাবা, খেয়াল করলেন স্নেহা থেমে থেমে খাবার ছুঁছে। ভ্রু দ্বয় একটু চড়কায় উঠে গেল।
আফজাল খান: কিরে স্নেহা! মা তর কি হয়েছে? খাবার খাচ্ছি না কেন? শরীর খারাপ নাকি? ডাক্তার ডাকবো নাকি? তাঁর কণ্ঠে টেনশন আর চিন্তার মিশ্রণ। নাকি খাবারটা ভালো লাগছে না?
মৌসুমী খান,নেহারের মা তিনি তাকালেন স্নেহার দিকে,আবিষ্কার করলেন স্নেহার দেহভঙ্গি। নেহারও কৌতুহল নিয়ে তাকাল। স্নেহা কিছুটা লাজুক, কিছুটা উদাস হয়ে বলল
স্নেহা: না মামা, আমি ঠিক আছি। খাবারও ভালো লাগছে কিন্তু এখন খেতে মন করছে না। পরে খাবো। আমি উপরে যাই।
নেহার: ঝাপসা কণ্ঠে, কিন্তু শক্তভাবে বলল, খাবার খেয়ে তারপর উপরে যাবি। নয়তো তোর খবর আছে।
স্নেহার চোখে একটা অদ্ভুত উত্তেজনা আর বিরক্তি মিশে গেল। এই মানুষটি সব সময় শুধু বক কিন্তু যখন দরকার পড়ে তখন ঠিকই কাছে আসে। ওনার জন্যই তো আজ আমি চিন্তায় খেতে পারছি না, আর ওনি বকছেন…?
মাথা নিচু করে, গাল ফুলিয়ে, স্নেহা চুপচাপ চামচটা ধরল। ছোট ছোট কামড়ে কামড়ে খাবার মুখে ঢোকানো শুরু করল।
মৌসুমী খান: আদর মিশানো কণ্ঠে বললেন, মা, তর জন্য অন্য কিছু এনে দিই? যদি এগুলো খেতে তোর মন না চায়।
স্নেহা: হালকা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে বলল, না, না মামি। আমি এগুলো দিয়েই খেতে পারব। আর খাবারও পছন্দ হয়েছে।
তারপর স্নেহা তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করল এবং উপরে চলে গেল। তাঁর পদক্ষেপগুলোতে ছিল এক ধরনের দ্রুত চলার উদ্যম, যেন সব চিন্তা-মুহূর্তগুলো উপরে উঠার সাথে সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে।
নেহার বসে রইল, চিন্তায় ভরা চোখে স্নেহার দিকে তাকিয়ে বইলো। আজকে ওর কাছে আসবে তখন যেনে নিবে মেয়েটার হঠাৎ কি হয়েছে..!
~~
নিজের রুমে ঢুকতেই স্নেহার ফোন বাজতে লাগল। স্ক্রিনে সাকিবের নাম দেখেই স্নেহার ঠোঁটে অদ্ভুত এক হাসি ফোটে উঠল। তাদের ভাই-বোনের সম্পর্কটা সত্যিই মধুর খুনসুটি, ছোটোখাটো ঝগড়া, আর সঙ্গে সঙ্গে গভীর ভালোবাসা। মাঝে মাঝে ঝগড়া হলেও, ভালোবাসার বন্ধন সবসময় শক্ত।
স্নেহা: ফোন ধরল, মৃদু হাসি কণ্ঠে বলল,কেমন আছো, ভাইয়া? আর আমাকে ভুলে গেলে না। এখন আর আগের মতো ফোন দাও না, একটা মেসেজও দাও না দিনে।
সাকিব হাসল একটু মুচকি, একটু আদরের সঙ্গে। স্নেহার এই ছোট্ট অভিমানের টুইটগুলোই তাকে সব সময় মন ভরিয়ে দেয়। সে জানে, তার ছোট্ট পরি সবসময় একটু অভিমানের ছোঁয়া নিয়ে আসে।
সাকিব: স্নেহার প্রতি আদর আর স্নেহের মিশ্রণ কণ্ঠে বলল।ঠিক আছে, সরি ছোট্ট পরি। আর কখনো এমন হবে না। আমি সারাদিনে একবার হলেও ফোন করবো তোকে।
স্নেহা: হেসে বলল,আচ্ছা।তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,মা, বাবা কেমন আছেন, ভাইয়া?
সাকিবের: কণ্ঠে মৃদু আনন্দের সুর, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছেন। আর তুই কেমন আছিস? ঐ বাড়িতে কি তোর ভালো লাগছে, নাকি চলে আসবি?শেষের কথাগুলো তিনি মজার ছলে বললেন। কারণ ও জানত, তার ছোট্ট পরি স্নেহা নেহার কে অনেক ভালোবাসে, তাই নেহারকে ছেড়ে আসার কথা ভাবতেই পারবে না।
স্নেহার বুকটা ধক করে উঠল।কিভাবে নেহারকে ছেড়ে যাব?মনে মনে এ ভাবনা ঘুরেফিরে এল।
স্নেহা: বলল,না না, ভাইয়া। আমার এখানে ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। তোমরা আমাকে নিয়ে টেনশন করো না।
সাকিব: হেসে বললো আচ্ছা, কারণ সে জানতো স্নেহা ঠিক এমনটাই উত্তর দেবে।তারপর সাকিব বললো,আচ্ছা, তাহলে এখন রাখছি,সাকিব শেষ করলেন।
স্নেহা: হেসে বলল,আচ্ছা, ভাইয়া এবং ফোন রেখে দিল।
ফোনের সংযোগ শেষ হতেই স্নেহার মুখে হালকা হাসি, মন ভরে গেছে ভালোবাসা আর ছোট্ট অভিমানের মিশ্রণে। এই ছোট্ট মুহূর্তটাই তার দিনের সবচেয়ে মধুর মুহূর্ত হয়ে উঠল।
~~
রাত তখন বারোটা।
চারদিকে নিস্তব্ধতা, শুধু জানালার বাইরে রাতের হাওয়া হালকা শব্দ তুলে বইছে। ঘুমের ঘোরে স্নেহা হঠাৎ টের পেল ওর গলায় যেন কারো ঠোঁট ছুঁয়ে আছে। ভিজে ভিজে অনুভূতি, যেন শিরদাঁড়া বেয়ে শিহরণ নেমে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিল, নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু আচমকাই তীব্র ব্যথার মতো একটা কামড় লাগতেই স্নেহা চমকে উঠে আহ্! বলে চিৎকার করল।
চোখ খুলতেই দেখল, একদম মুখের সামনে নেহার। চোখে বিরক্তির ছাপ, ঠোঁটে অদ্ভুত এক অভিব্যক্তি।
নেহার:কি প্রবলেম স্নেহা? এভাবে চিৎকার করছিস কেন?কণ্ঠে নেহারের বিরক্তি, যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝেই বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে।
স্নেহার ঘুম একেবারেই কেটে গেল। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে এটা তো নেহারের রুম! অথচ সে তো নিজ রুমেই ঘুমোতে গিয়েছিল। মাথা ঝাপসা হয়ে আসছে।
স্নেহা: আ… আমি এখানে কেন? আমি তো নিজের রুমে ঘুমিয়েছিলাম…স্নেহার গলা কেঁপে উঠল।
নেহার ধীরে ধীরে ঠোঁটে বাকা হাসি ফুটিয়ে তুলল। তার দৃষ্টি গভীর, তীক্ষ্ণ, যেন ভেতরটা ভেদ করে যাচ্ছে। স্নেহার বুক কাঁপছে, মনে হচ্ছে এই হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে এমন কিছু, যা সে কল্পনাও করতে পারেনি।
নেহার: ধীরে হাত বাড়িয়ে দিল। আঙুলগুলো স্নেহার পেটের উপর দিয়ে হালকা করে সরে গেল, একেবারেই অনায়াস ভঙ্গিতে। কণ্ঠে রহস্য মাখা সুর,তুই কি ভেবেছিলি, স্নেহা? তুই নিজের রুমে লুকিয়ে থাকলেই আমি তোকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারব না…?
স্নেহার নিঃশ্বাস আটকে গেল। মাথার ভেতর হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে সে এখানে এলো কিভাবে? নেহারের চোখে কেন এই অদ্ভুত দৃষ্টি?
স্নেহা: ভয়ে ভয়ে ফিসফিস করে বলল,নেহার ভাই আসলে কখন যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, জানিই না।
নেহার: তার চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বলল,
আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন চুপ থাক আমাকে তোকে একটু আদর করতে দে।
স্নেহা: দুষ্টু হাসি ফোটাল ঠোঁটে,
দেইখেন, আবার সুন্দর বনে গুল সাপ ঢুকে পড়লে বমি না করে বসি, তাহলে কিন্তু আপনারই বিপদ।
নেহার: হেসে উঠল বাকা ভঙ্গিতে বললো, আপনার স্বামী এতোটাও নরমাল নয়, মিসেস নেহার খান।
স্নেহা :চোখ সরু করে তাকিয়ে বলল,
তাই নাকি…?
নেহার:অবশ্যই,গভীর দৃঢ়তায় জবাব দিল নেহার।
তারপর আর কথা না বাড়িয়ে হঠাৎই স্নেহার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। অপ্রস্তুত হলেও স্নেহাও ধীরে ধীরে তাল মেলালো। মুহূর্তের আবেশে নেহার যেনো আরও উন্মাদ হয়ে উঠল। কিছুক্ষণ পর ঠোঁট আলগা করে গলায়, গায়ে মৃদু চুম্বন ছড়িয়ে দিল। স্নেহা নিজেকে সামলাতে পারছিল না আঙুল দিয়ে পিছনার চাদর খামচে ধরল শক্ত করে।
কিছুক্ষণ থেমে নেহার আবার তার চোখের গভীরে তাকাল। কণ্ঠে কাঁপা উত্তেজনা, অথচ গভীর মুগ্ধতা
নেহার:জানিস, তোর মধ্যে এমন কি আছে
যে তোকে দেখলেই আমি মাতাল হয়ে যাই?
স্নেহা: ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসি দিল,মুভির ডাইলোক পরে হবে আগে আদর করে নাও। নাকি তোমার এনার্জি শেষ?
নেহার থমকে গেল। এই মেয়েটা আসলে কি বলছে? এতদিন ভেবেছিল স্নেহার পক্ষে ওকে সামলানো সহজ হবে না। তাই ইচ্ছে করেই দূরে থেকেছে। অথচ আজ সেই স্নেহাই সামনে আছে অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এর মাঝেই স্নেহা ফিসফিস করে আবার বলে উঠল,Fucking hurry up… I can’t wait anymore.
নেহারের ঠোঁটে বাকা হাসি ফুটল। চোখে এক অদ্ভুত আগুনের ঝলক।আমিও দেখব, জান তোর ভেতরে কতটা এনার্জি আছে।
চলবে…..