(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)
#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_৪
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা
কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌
নেহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল আশিক আর ইমরান কে। বড় ছায়াযুক্ত গাছের নিচে তারা দুজনে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কারো কথার অপেক্ষায়। নেহার মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠে, সে তাদের দিকে দ্রুত এগোতে শুরু করে।
নেহার: কি খবর রে? তোরা দুজনই এতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
আশিক: চোখ চড়কগাছ করে তাকিয়ে বলল, সালা, তুই বল তো! কালকে রাতে কোথায় ছিলি? এতো মেসেজ দিলাম, ফোন করলাম, একটিও ধরলি না!
নেহার কিছু বলার আগেই ইমরান হঠাৎ করে বলল,
ইমরান: কোথায় আবার খোঁজ নিলাম দেখ, কালকে শালার বাসরঘরে ছিলো নাকি! বিয়ে করছে তো লুকিয়ে, আবার বাসরটাও লুকিয়ে না করে বসে!
নেহার ইমরানের কথা শুনে হালকা করে মুচকি হাসল। আশিক আর ইমরান একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল, নেহার কিছু জানাচ্ছে না, কিন্তু কথার আভাস দিয়ে খেলছে।
আশিক:বলে শালা! তোকে তো এখন মাটিতে পুতে ফেলা উচিত। আমরা তো এখনো সিঙ্গেল আছি, আর তুই কিভাবে বাসর করলি!তুই বন্ধু নামের মীরজাফর..!
ইমরান: হ্যাঁ, আমি ও একমত। এই অনাচার মেনে নেওয়া যায় না।
আশিক মুখ খানা কাঁদো কাঁদো করে বলে,
আশিক:এই নিয়ে আমরা আন্দোলন করবো। ডক্টর ইউনুসের কাছে যাবো আমাদের মতো সিঙ্গেল রেখে কিভাবে তুই এসব করতে পারলি?
নেহার ভুরু কুঁচকে হেসে উঠল,
নেহার: শালা, থাম তোদের ড্রামা! আমার তো এখন ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আজকে আর কোনো ক্লাস করবো না, কোথাও যেয়ে গিয়ে ঘুমাবো।
আশিক গম্ভীর মুখে গলা চড়াল,
আশিক:এ্যহ! আসছে দেখো! তুই বাসর করছিস আমরা তো আর করিনি। তাই আমরা ঘুমাবো না আর তুকেও ঘুমাতে দিবো না।
নেহার কিছু বলতে যাচ্ছিল, হঠাৎ তার চোখ পড়ল সামনের দিকে। লাল গোলাপ হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে এদিকে আসছে রিমি। নেহার মুহূর্তেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল, যেন কিছু দেখেনি।
ইমরান নেহাকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে খিকখিক করে উঠল,
ইমরান: দেখ, তর সর্দি পড়া সকিনা আসতেছে, তাও আবার লাল গোলাপ নিয়ে।
রিমির সারা বছর ঠান্ডা লেগে থাকে তাই এটা বললো ইমার।
নেহার মুখ তৎক্ষণাৎ গম্ভীর হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে নিচু স্বরে সে বলল,
নেহা:শালা, একদম মজা করবি না এই মেয়েটা নিয়ে। বউয়ের সাথে এরই মধ্যে অনেক ঝামেলা হয়েছে। এখন এই ঝামেলাটাকে কিভাবে বিদায় করবো তাই বল..!
ইমরান কাঁধ ঝাঁকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
ইমরান: আমরা কি জানি…? এসব তোকে সামলাতে হবে।
ততক্ষণে রিমি এসে নেহার সামনে দাঁড়াল। হাতে লাল গোলাপ। আশিক তৎক্ষণাৎ ফোন বের করে রাখল মুহূর্তটা যেন মিস না হয়। ঠিক তখনই রিমি গোলাপটা নেহার হাতে তুলে দিল, আর আশিক হাসিমুখে ছবি তুলে ফেলল।
নেহার খেয়ালই করে নি যে ওর বান্দর বন্ধুরা ছবি তুলছে। রিমি ফুলটা দিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে চলে গেল। কয়েক সেকেন্ড নীরব থাকার পর নেহার ঠান্ডা মুখে ফুলটা মাটিতে ছুঁড়ে মারল।
নেহার: আমাদের বিজনেস পার্টনারের মেয়ে বলে কিছু বলি না। নয়তো মেরে ফেলতাম।
আশিক আর ইমরান দুজনেই একে অপরের দিকে তাকাল। আশিক মুখ বাঁকিয়ে কিছু বলার আগেই ইমরান কৌতুকের স্বরে যোগ করল
ইমরান: তোর সংসার আগুনে জ্বলবে আজ রাতে, দেখিস…!
নেহার: বললো মানে…?
আশিক আর ইমরান এক মুহূর্ত নীরবে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর দু’জনের চোখ একে অপরের চোখে গিয়ে ঠেকল। ভ্রু নেড়ে হঠাৎ তারা একসাথে বলে উঠল,
আশিক ও ইমরান (একসাথে): তা রাতেই দেখবি! চল তুই না ঘুমাবি, তোকে ঘুমানোর ব্যস্ত করে দিই।
কথা শেষ হতেই তারা হেসে উঠে দু’পাশ থেকে নেহার হাত ধরে টেনে নিল। নেহার হতভম্ব হয়ে এদিক-ওদিক তাকাল। তাদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারল না।
কিছুটা বিরক্ত স্বরে নেহার বলল,
নেহার: তোরা আসলে কি বলতে চাইছিস?
কিন্তু আশিক আর ইমরান কোনো উত্তর দিল না। কেবল মুখে রহস্যময় হাসি রেখে টেনে নিয়ে চলল।
নেহার কিছু না বলেই চুপ করে রইল। কারণ সে জানে এই দু’জন সারাদিন ধরে বকবক করতেই থাকে। ওদের কথার মানে খুঁজতে গেলে নিজেকেই কষ্ট করতে হয়।তাই আর কথা বাড়ালো না।
চারপাশে তখন বাতাসে পাতার খসখস শব্দ, ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়েদের হাসাহাসি—সবকিছুর মাঝেই ওদের ত্রয়ী এগিয়ে চলল।
~~
রাত ঠিক নয়টা। শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো তখনো আলোতে ভরা, কিন্তু নেহার মন অস্থির। অফিস থেকে আজ একটু তাড়াতাড়িই বেরিয়ে পড়ল সে। কারণ, স্নেহা সারাদিন ফোন ধরছে না। কতগুলো মেসেজ পাঠানো হয়েছে—কোনো রিপ্লাই নেই।
নেহা হালকা উদ্বিগ্ন গলায় নিজের মনে বলল, আজব! সকালে পর্যন্ত তো সব ঠিকঠাকই ছিল। তাহলে হঠাৎ কী হলো?
চিন্তা যেন এক মুহূর্তও তাকে ছাড়ছিল না। অবশ্য দুপুরে মৌসুমী খানের সঙ্গে একবার ফোনে কথা হয়েছিল, কথা প্রসঙ্গে শুনেছিল স্নেহা ভালো আছে। কিন্তু তাহলে ফোনটা ধরছে না কেন? সেই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতেই থাকল।
অফিস থেকে ফিরে দরজা খুলে ভেতরে বাড়ি তে ঢুকেই নেহার সোজা প্রথম গন্তব্য হলো স্নেহার রুম। রুম খালি। চারপাশে পরিচ্ছন্ন বিছানা, হালকা বাতাসে পর্দার নড়াচড়া—কিন্তু স্নেহার কোনো চিহ্ন নেই।
হৃদয়টা কেমন যেন কেঁপে উঠল। দ্রুত পা ফেলে সে বারান্দার দিকে গেল। আর সেখানেই চোখে পড়ল স্নেহাকে দোলনায় চুপচাপ বসে আছে। আলো-অন্ধকার মিশ্রিত আবছা পরিবেশে তার মুখটা কেমন যেন নিস্তব্ধ, গম্ভীর।
রাতের হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছিলো। দোলনায় বসে থাকা স্নেহার চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে তার চোখের সামনে এসে পড়ছিলো। দূরে থেকে নেহার পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। স্নেহা চোখ না তুললেও, সে জানতো নেহার এসেছে—কারণ তার গায়ের পারফিউমের ঘ্রাণটা স্নেহার খুব ভালো করেই চেনা।
নেহা কণ্ঠে রাগ আর উৎকণ্ঠা মিশিয়ে বলল,
নেহা:কি প্রবলেম তর? সারাদিন ফোন ধরলি না, মেসেজেরও কোনো উত্তর নেই। আমার চিন্তা হয় না তোর জন্যে?
স্নেহা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো। উত্তর না পেয়ে নেহারের ধৈর্য ফুরিয়ে গেলো। হঠাৎ সে এগিয়ে এসে স্নেহার হাত শক্ত করে টেনে দোলনা থেকে তুলে দাঁড় করালো। তারপরে একহাতে স্নেহার কোমর জড়িয়ে ধরে কষে বললো,
নেহার: কি প্রবলেম তোর? কথা বলিস না কেনো?
এবার স্নেহার বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভ আর অভিমান বিস্ফোরিত হলো। তার চোখে জল এসে ভরে উঠলো, আর কণ্ঠে হাহাকার মিশে চিৎকার করে উঠলো,
স্নেহা: আপনি একটা খারাপ পুরুষ! ঘরে বউ থাকতে আরেক মেয়ের কাছ থেকে ফুল নেন? অসভ্য লোক, আমাকে ছেড়ে দিন!
বাতাসে দোল খাওয়া দোলনার শিকগুলো ঠুকরে উঠলো যেন স্নেহার এই কথাগুলোর সাথেই একসাথে প্রতিবাদ করছে। নেহার অবাক হয়ে স্নেহার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো—তার চোখে কেবল রাগ নয়, ভাঙা বিশ্বাস আর আহত ভালোবাসার ছাপও স্পষ্ট ছিলো।
চলবে…..