(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)
#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_৫
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা
কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌
নেহার: কপাল কুঁচকে বললো,তোর কি মনে হয় আমি পরকীয়া করি? যদি এসব করতাম তাহলে তোকে এভাবে বিয়ে করতাম? তুই কি বুঝতে পারিস না আমি তোকে ভালোবাসি, স্নেহা?
স্নেহা: ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিলো,
তাহলে ওর কাছ থেকে ফুল নিলেন কেন? আমি তো স্পষ্ট করে বলেছিলাম না—ঐ মেয়ের থেকে একশো হাত দূরে থাকতে? আমি ইউনিভার্সিটিতে যাইনি, আর সেই সুযোগে আপনি ওর থেকে ফুল নিলেন! আচ্ছা, শুধু ফুলই? আর কি কি করেছেন, শুনি?
স্নেহার কণ্ঠে দহন, চোখে অবিশ্বাস। কথাগুলো আগুনের মতো গিয়ে পড়লো নেহারের বুকে।
নেহারের ভেতর রাগ উথলে উঠলো। নিজেকে সংযত করতে চাইলেও পারলো না। হঠাৎ স্নেহার বাহু শক্ত করে চেপে ধরলো। স্নেহা ব্যথায় চোখ বন্ধ করলো, কিন্তু ঠোঁট থেকে একটিও শব্দ বের হলো না।
নেহার: গর্জে উঠলো,তুই আমার সব! আমি বারবার বলি, তবুও তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না কেন? অন্য কাউকে বিশ্বাস করার প্রয়োজন পড়ে কেন তোর? আমি বলছি—ভালোবাসার প্রথম ধাপ হলো বিশ্বাস। আমাদের মধ্যে যদি সেই বিশ্বাস না থাকে, তাহলে এই ভালোবাসা টিকবে কিভাবে, স্নেহা?
স্নেহা যেন নিজের ভেতরের জ্বালা আর থামাতে পারলো না। চোখ লাল করে, কণ্ঠ উঁচু করে চিৎকার করে উঠলো
স্নেহা:তাহলে ফুলটা কেন নিয়েছেন…? কেন নিলেন বলুন!
নেহার মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হলো। তার দৃষ্টি কঠিন হয়ে উঠলো, নিশ্বাস ভারি হলো। হঠাৎ স্নেহার হাত ছেড়ে দিলো। চোখে রাগ, ঠোঁটে ঘৃণার রেখা। দাঁত চেপে ঠান্ডা কণ্ঠে বলে উঠলো
নেহার:নিয়েছি, ভালোই করেছি। থাক… তুই তোর সন্দেহ নিয়ে আমার সাথে আর কথা বলতে আসবি না।
তারপর, গটগট করে বেরিয়ে গেলো নেহার। যাওয়ার আগে দরজা শব্দ করে লাগালো,
দরজার শব্দে স্নেহার ছোট্ট দেহ খানা কেঁপে উঠলো।
স্নেহা নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বারান্দায়। চারপাশে শহরের আলো ঝলমল করছে, কিন্তু তার ভেতরে নামছে অন্ধকার। বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা, চোখে ভাসছে শুধু প্রশ্ন আর অশ্রু। বেশি করে ফেলছে…?!
~~
পরদিন ভোরের আলো ঘরে ঢুকতেই স্নেহা ধীরে ধীরে নিচে নামলো। স্নেহা নিচে নামতেই মৌসুমী খান ডেকে উঠলেন।
মৌসুমী খান: স্নেহার দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে বললেন,স্নেহা মা, নেহার তো অনেকক্ষণ আগে ইউনিভার্সিটি চলে গেছে। তুই একা যেতে পারবি?
স্নেহা: মাথা নীচু করে উত্তর দিলো,
পারবো মামি।
কণ্ঠটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো, কিন্তু ভেতরের কষ্ট লুকোনো গেলো না। এরপর সে একাই রওনা হলো ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
এটা তার জীবনের প্রথম দিন—যেদিন তাকে একা একা যেতে হচ্ছে। কারণ নেহার কখনোই ওকে একা ছেড়ে দেয়নি। সবসময় পাশে থেকেছে, হাত ধরে পথ দেখিয়েছে। আজ হঠাৎ চারপাশটা অচেনা আর ফাঁকা মনে হলো। রাস্তাগুলো যেনো ভারী, বাতাসও যেনো থমকে আছে।
স্নেহার মনে পড়লো গতকালের কথা। কাল কি বেশি বলে ফেলেছিলাম…?—এই প্রশ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিলো। কিন্তু পরমুহূর্তেই আরেকটা তীক্ষ্ণ সত্য মাথায় গেঁথে গেলো,নেহার সত্যিই ফুল নিয়েছিল।
~~
ইউনিভার্সিটির গেটে পা রাখতেই স্নেহার চোখ স্বাভাবিকভাবেই চলে গেলো ডানদিকের পুরনো গাছটার দিকে। কারণ সে জানে—নেহার, ইমরান আর আশিকের প্রতিদিনের আড্ডাখানা ওখানেই। শুধু ক্লাসের সময়টা বাদ দিলে, বাকি সময় গাছটার নিচেই তাদের খুনসুটি আর আড্ডা জমে ওঠে।
কিন্তু আজ দৃশ্যটা অচেনা লাগলো। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে শুধু ইমরান আর আশিক। নেহারের কোনো দেখা নেই। বুকের ভেতর কেমন হালকা ধাক্কা খেলো স্নেহা। মনে মনে ভাবলো—নেহার কোথায় গেলো? তবে কি ইচ্ছে করেই আসেনি? না কি আমার ওপর রাগ করেছে…? জিজ্ঞেস করবো নাকি… না থাক, যদি অন্য কিছু ভাবে
এই টানাপোড়েন ভেতরে চলতেই থাকলো, তবুও সাহস সঞ্চয় করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো তাদের সামনে।
স্নেহা: হালকা হাসি মুখে বললো,
আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাইয়ারা, কেমন আছেন?
ইমরান আর আশিক: একসাথে উত্তর দিলো,
ওয়ালাইকুম সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। আপনি কেমন ভাবি?
স্নেহা: মাথা নাড়লো,
“্আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি ভাইয়ারা।
কিন্তু এরপরে থেমে গেলো। গলায় যেনো শব্দ আটকে গেলো। অনেকক্ষণ আমতা আমতা করে অবশেষে ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করলো
স্নেহা:নেহার ভাই… কোথায়?
ইমরান ও আশিক একে অপরের দিকে তাকালো, তারপর ইমরানই উত্তর দিলো।
ইমরান: কপাল কুঁচকে বললো,জানিনা। ফোন ধরছে না, মেসেজও দিয়েছি—রিপ্লাই দিচ্ছে না। আপনাদের মধ্যে কিছু হয়েছে নাকি…?
ইমরানের প্রশ্ন শুনে স্নেহার বুক ধক করে উঠলো। ঠোঁট শুকিয়ে গেলো, উত্তর দেওয়ার মতো শক্তি হারিয়ে ফেললো সে।
তারপর,
স্নেহা: দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচু গলায় বললো,
কালকের ছবিটা দেখে আমি একটু রেগে গিয়েছিলাম। তারপর এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
আশিক:বললো,আরে ভাবি, ঐটা তো শুধু ফান করে দিয়েছিলাম! আর নেহার—ওরকম ছেলে আপনার মনে হয়? রিমি তো গায়ে পড়া মেয়ে, আপনি জানেনই। ফুল দেওয়ার সাথে সাথেই তো ফেলে দিয়েছে নেহার।
আশিকের কথা শুনে স্নেহার বুকটা কেমন হালকা হলো। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের ওপরই ভীষণ রাগ হলো। কেন এতটা না ভেবে, না শুনে হুদাই এতকিছু বলে দিলাম নেহারকে? কতোগুলো তীক্ষ্ণ কথা শুনিয়ে দিয়েছি…!
মনে হলো, নেহার নিশ্চয়ই রাগ করে অফিসে চলে গেছে। আর সেই জন্যই ফোনও ধরছে না, কারো মেসেজের উত্তরও দিচ্ছে না।
ভেতরে ভেতরে অপরাধবোধে ভেঙে পড়লো স্নেহা। আর দেরি না করে সিদ্ধান্ত নিলো—আজ আর ইউনিভার্সিটিতে থাকা যাবে না। কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত কাঁধে ব্যাগ খানা করে নিলো সে।
চোখ নামানো অবস্থায় গেট পেরিয়ে বেরিয়ে এলো ইউনিভার্সিটি থেকে। শহরের ভিড় ঠেলে পড়লো রিকশায় সোজা রওনা হলো নেহারের অফিসের উদ্দেশ্যে।
~~
অফিসের ব্যস্ত করিডর পেরিয়ে স্নেহা সোজা নেহারের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো। ওকে সবাই চেনে নেহারের ফুফাতো বোন হিসেবে—তাই কারও সাহস হলো না তাকে থামানোর। নীরবে তাকিয়ে রইলো শুধু।
কেবিনের কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো—নেহার মাথা নিচু করে গভীর মনোযোগে কিছু ফাইল দেখছে। কপালের ভাঁজে স্পষ্ট বোঝা যায় সে কাজে নিমগ্ন। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে মুখ তুললো, বিরক্ত হয়ে তাকালো সামনে।
কাউকে তো বলেছিলাম আসতে মানা… তবুও কে এলো?
কিন্তু পরমুহূর্তেই চোখে পড়লো স্নেহা। মুহূর্তের জন্য দৃষ্টি নরম হয়ে এলো, আবার কঠিন রাগে শক্ত হলো মুখটা। অবাকও হলো, আবার অভিমানী ক্ষোভে কিছু বললো না। শুধু এক ঝলক তাকিয়ে নিয়ে আবার চোখ নামিয়ে দিলো ফাইলের পাতায়।
স্নেহার বুক কেঁপে উঠলো। ধীরে ধীরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে থেমে দাঁড়ালো নেহারের সামনে। মাথা নিচু করে, আঙুল মুঠো করে মিনতি ভরা গলায় বললো,
স্নেহা:নেহার ভাই…আমি… আসলে.. রাতের জন্য.. আ’ম সরি। আমি ভুল করে ফেলেছি। প্লিজ, আমাকে মাফ করে দেন।
নেহার তার দিকে একবারও তাকাল না। সে শুধু নিজের মতো করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল, যেন স্নেহার কথাগুলো তার কাছে কোনো গুরুত্বই রাখে না।
স্নেহার কন্ঠ আরও কাঁপতে কাঁপতে উঠলো, চোখের কোণে জল জমে এলো।
স্নেহা: আমার কথা শুনেছ…? আমি সত্যিই সরি বলছি।
কিছুক্ষণ নেহারের চুপ থাকা যেন স্নেহার ভেতরের ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিল। আর সে এবার হঠাৎ কান্নার ভিড়ে ভেসে গেলো, হালকা হাহাকার ভেসে উঠলো।
স্নেহা: আমাকে… একবার মাফ করে দিন। আমি রাগের মাথায় ঐরকম ভুল করেছি। আপনি এভাবে চুপ করে থাকবেন না… প্লিজ।
নেহার তখন ধীরে ধীরে দাঁড়ালো। হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে বললো, কণ্ঠটা ঠাণ্ডা, অথচ দৃঢ়
নেহার: কেন এখানে এসেছেন…? আপনার সঙ্গে আমার আর কোনো কথা নেই। আপনি আপনার মতো… আর আমি আমার মতো। সেখানে বিশ্বাস নেই। আপাতত আমি এখানে আর থাকবো না। এখন চলে যান, বিরক্ত করবেন না।
স্নেহা কাতর চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছিল যেন সময়ই থেমে গেছে। নেহারের শব্দগুলো তার কানে বাজছিল—কঠোর, নীরব এবং অনমনীয়। সে বোঝেছিল, এই দূরত্বকে এক মুহূর্তেই ভাঙা সম্ভব নয়।
চলবে…..