তুই আমার আসক্তি স্পেশাল পর্ব

0
4

রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)

#তুই_আমার_আসক্তি
#স্পেশাল_পর্ব
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা

কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌

সন্ধ্যার আবছা আলোয় উঠোন ভিজে উঠেছে রিমঝিম বৃষ্টির ফোঁটায়। চারপাশে নীরবতার সঙ্গে মিশে আছে কেবল বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ। স্নেহা নীল শাড়ি পড়ে একা বসে আছে সাদের পুরোনো কাঠের দোলনায়। দোলনাটা বৃষ্টির ছিটে খেয়ে খসখসে হয়ে গেছে বটে, কিন্তু তার ছন্দে এক অদ্ভুত শান্তি আছে।

আজ তার মনটা অকারণেই অদ্ভুত ভালো। কেন ভালো স্নেহা নিজেও জানে না। হয়তো এই ভেজা সন্ধ্যার জন্য, হয়তো এই বৃষ্টির মায়াবী সুরের জন্য। হঠাৎই বুক ভরে উঠলো সুরে সুরে, নিজের অজান্তেই গুনগুন করে উঠলো,

রিমঝিম এ ধারাতে
চাই মন হারাতে,
এই ভালোবাসাতে
আমাকে ভাসাতে…!
এলো মেঘ যে এলো ঘিরে,
বৃষ্টি সুরে সুরে সোনায় রাগিনী।
মন সপ্ন এলোমেলো,
এ কি শুরু হলো—
প্রেমের কাহিনি….!

গান যেন বৃষ্টির সঙ্গে মিশে চারপাশে ছড়িয়ে পড়লো। স্নেহা চোখ বন্ধ করে গাইতে থাকে, মনে হয় পৃথিবীটা যেন থেমে গেছে এই মুহূর্তের জন্য।

ঠিক তখনই পেছন থেকে পরিচিত এক কণ্ঠ শোনা গেলো—আপনার যদি গান গাওয়া শেষ হয়ে থাকে, তাহলে নিচে চলুন। এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে কিন্তু জ্বর হয়ে যাবে।

চমকে উঠে স্নেহা পিছনে তাকাল। নেহার পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির ধারে।

স্নেহা ধীরে ধীরে দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ভেজা শাড়ির আঁচল কাঁধ বেয়ে ঝরে পড়ছে টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা। এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে হঠাৎই নেহার বুকে মুখ গুঁজে দিলো। অপ্রস্তুত নেহার থমকে গেলেও, পরক্ষণেই দু’হাত দিয়ে স্নেহাকে জড়িয়ে নিলো। দুজনেই ভিজে গেলো পুরোপুরি, তবু সে ভেজা মুহূর্ত যেন এক অন্যরকম উষ্ণতায় ভরিয়ে দিলো।

স্নেহা: মৃদু আবদারে ভেজা চোখ তুলে ফিসফিস করে বললো শুনুন না স্বামীজান, সবসময় তো আপনার কথামতো নিয়ম মেনে চলি যাতে অসুস্থ না হই। কিন্তু আজ… আজ চলুন না ভিজি আমরা দু’জন মিলে ভালোবাসার এই বৃষ্টিতে। তারপর না হয় জ্বর টাও মেনে নেবো। তার আগে অন্তত বৃষ্টি আর ভালোবাসা—একসাথে উপভোগ করি?

তার কণ্ঠে এক অদ্ভুত সরল আবদার, যেন শিশুর মতো নিষ্পাপ জেদ।

নেহার: কিছুক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো। স্নেহার চোখের ভেতর ভিজে সন্ধ্যার আলো মিশে অদ্ভুত দীপ্তি ছড়াচ্ছে। এত ভালোবাসা কি আর কেউ ফেরাতে পারে? মুচকি হেসে নেহা বললো—আচ্ছা, তবে বেশি সময় নয়।

স্নেহা চোখ মেলে শিশুর মতো খুশি হয়ে মাথা নেড়ে বললো,আচ্ছা!

তারপর হাত ধরে টেনে নিলো গেলো নেহার কে সাদের মাঝখানে। স্নেহা আর নেহার দুজন দাঁড়াতেই হঠাৎ যেন আকাশ আরও কাছে নেমে এলো। টুপটাপ ফোঁটা মিলিয়ে গেলো ঝমঝম বৃষ্টির স্রোতে।

মনে হলো প্রকৃতি নিজেই যেন তাদের হাতের মুঠোয় প্রেমের আশীর্বাদ দিয়ে বলছে,ভালোবাসো, আজ বৃষ্টিই তোমাদের সাক্ষী।

সেই মুহূর্তে চারপাশে শুধু বৃষ্টির শব্দ আর দুইজন মানুষের বুকের ধ্বনি। ভালোবাসার বৃষ্টি আর ভালোবাসার মানুষ—একসাথে এক অন্তহীন কাব্যের শুরু।

ঝমঝম বৃষ্টির ভেতর নেহার আর স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে একে অপরকে আঁকড়ে ধরে। চারপাশে যেন পৃথিবী থেমে গেছে, শুধু বৃষ্টির আর তাদের নিঃশ্বাসের শব্দ মিলেমিশে এক অদ্ভুত আবেশ তৈরি করছে।

নেহার স্নেহা কে ছেড়ে দিয়ে ওর ভেজা মুখটা দু’হাত দিয়ে তুলে ধরলো। বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে পড়ছে তার গাল বেয়ে। গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বললো তুই কিন্তু আমাকে বেপরোয়া করে দিচ্ছিস, স্নেহা। তোকে এভাবে দেখে নিজেকে ধরে রাখা বড্ডো দায় হয়ে যাচ্ছে রে জান।

স্নেহা মৃদু হেসে চোখে চোখ রাখলো। চোখের কোণে খেলে গেলো দুষ্টু ঝিলিক। কোমল কণ্ঠে বললো,আমি তো আপনার বউ হারাম তো না! তাহলে নিজেকে কেনো সামলাবেন শুনি? আপনি যখন ইচ্ছে আমাকে ভালোবাসতে পারেন, আদর করতে পারেন—আমি মন থেকে তা মেনে নেবো। আর জানেন যখন আপনি আমাকে ভালোবাসেন, আদর করেন আমি সেই মুহূর্তটা ভীষণ উপভোগ করি। কারণ সেটা আমার স্বামীর ভালোবাসা।

বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে উঠোন ভরে গেছে। ভিজে চুল কপালে লেগে আছে স্নেহার, ঠোঁটে লেগে আছে মিষ্টি হাসি। তার সেই হাসি দেখে নেহার অজান্তেই মুখে হাসি ফুটলো। মনে মনে বললো, এই মেয়েটা বড্ডো ভালো, কেমন সরলভাবে নিজের মনের কথা বলে ফেলে।

নেহার চাইলেও তো সবটা বলতে পারে না। সে জানে, সব পুরুষ তাদের অনুভূতি এত সুন্দরভাবে গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারে না। নেহার তাদেরই একজন। তাই শুধু নীরব দৃষ্টি নিয়েই চেয়ে থাকে স্নেহার দিকে।

স্নেহা হঠাৎ খেয়াল করলো, নেহার চুপচাপ তাকিয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে শান্ত সুরে বললো—কি হলো? এভাবে কি দেখছেন?

নেহার মৃদু হেসে উত্তর দিলো আমার বউটা যে কতো সুন্দর করে নিজের মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে, সেটাই দেখছি।

স্নেহা ভিজে চোখ মেলে আরও কাছে সরে এলো। তার ঠোঁটে খেলা করলো দুষ্টু এক হাসি। নরম কণ্ঠে বললো এই ভারি বর্ষণের মধ্যে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে মন্দ লাগছে না, জামাই জান।

নেহা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বললো তাই নাকি”

স্নেহা মাথা ঝাঁকিয়ে দৃঢ় সুরে বললো হু।

আকাশ জুড়ে তখন টানা ঝমঝম বৃষ্টি। চারপাশে কেবলই জলধ্বনি, যেন পৃথিবী এক বিশাল মায়ার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। সেই ভিজে আবেশের মাঝেই নেহার আস্তে করে স্নেহার মুখটা নিজের কাছে টেনে নিলো। পরক্ষণেই তার ঠোঁট জড়িয়ে ধরলো স্নেহার ঠোঁট।

স্নেহা চোখ দুটো ধীরে বন্ধ করে দিলো। বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে পড়তে লাগলো তাদের ভেজা মুখ বেয়ে, তবু সেই মুহূর্তে তারা আর কিছু টের পেল না। মনে হলো পৃথিবীর সব ভালোবাসা যেন একাকার হয়ে গেছে এই দু’জন মানুষের মাঝে।

কিছুক্ষণ পর স্নেহা হালকা করে পিছিয়ে এলো। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে গেছে, বুকের ভেতর ধ্বনি যেন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। নেহারও এগিয়ে গেলো দু’পা, তবে তার হাত ছাড়লো না। বরং স্নেহার পায়ের সাথে নিজের পা মিলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ভারি বর্ষণের তাল মিলিয়ে তাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়ে উঠলো।

নেহার এক হাত দিয়ে শক্ত করে স্নেহার কোমর জড়িয়ে রাখলো, অপর হাত ঢুকে গেলো স্নেহার ভিজে চুলের ভাঁজে। আঙুলগুলো আলতো করে জড়িয়ে নিলো চুলের ভেজা গন্ধ। আর স্নেহা আবেগে কাঁপতে কাঁপতে নেহারের ভেজা শার্টের কলার শক্ত করে খামচে ধরলো, যেন ওখানেই তার সমস্ত নিরাপত্তা।

সময়ের হিসেব তারা হারিয়ে ফেললো। বৃষ্টি ঝরতে থাকলো, আর তারা একে অপরের ভালোবাসার আবেশে ডুবে রইলো। অবশেষে দীর্ঘ আবেগঘন মুহূর্ত শেষে দুজনেই ধীরে ধীরে আলগা হলো। ঠোঁটে রয়ে গেলো হালকা হাসি, তবে নিঃশ্বাস এখনো ভারি।

দু’জনেই হাপাতে থাকে, যেন ভালোবাসার ঝড় তাদের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে। অনেকটা সময় নিয়ে তারা ধীরে ধীরে শান্ত হলো। কিন্তু তাদের চোখের ভাষায় স্পষ্ট এই বৃষ্টির দিনে তারা একে অপরকে শুধু আরও বেশি আপন করে নিলো।

বৃষ্টি তখনো নিরবচ্ছিন্ন ঝরছে। উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে নেহা আর স্নেহা। ভিজে সন্ধ্যার আলোয় তাদের দু’জনের ছায়া একাকার হয়ে গেছে।

নেহার স্নেহাকে আরও কাছে টেনে নিলো। দু’হাতের মুঠোয় স্নেহার কোমর শক্ত করে ধরে কাপল ঠেকিয়ে কণ্ঠে এক অদ্ভুত আবেগ নিয়ে বললো,তুই আমার জীবনে আসার পর থেকে আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সুন্দর হয়ে গেছে, স্নেহা। আমি এত শান্তি কোথাও পাই না, যতটা পাই তোর ভেতর।

স্নেহা হেসে নরম চোখে তাকালো নেহার দিকে। বৃষ্টির ফোঁটা তার ভিজে গালে ঝলমল করছে। মৃদু কণ্ঠে বললো—আপনি আল্লাহর দেওয়া নে’য়ামত নেহার ভাইয়া আপনি আমার সব।

নেহা হালকা ভ্রু কুঁচকে বললো,
ভাইয়া মানে…?

স্নেহা সাথে সাথে দাঁত দিয়ে নিজের জিহ্বা কামড়ালো, যেন নিজেকেই শাসন করছে। ছোট্ট কণ্ঠে বললো—সরি, জান…!

নেহার মুচকি হেসে ফিসফিস করলো—এর শাস্তি পেতেই হবে।

স্নেহা অবাক হয়ে নরম স্বরে বললো—মানে…?

নেহার আর কিছু বললো না। হঠাৎই দু’হাত দিয়ে স্নেহাকে কোলে তুলে নিলো। বৃষ্টির ভেতর হঠাৎ এই দৃশ্য যেন আরও স্বপ্নিল হয়ে উঠলো।

স্নেহা হকচকিয়ে গেলো, তার ভেজা চুল কাঁধ বেয়ে নেমে এল বৃষ্টির ফোঁটার সাথে মিশে। আবদারের সুরে বললো—কোথায় নিয়ে যাবেন…?

নেহার কোনো উত্তর দিলো না, শুধু গভীর চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে এগিয়ে চললো। বৃষ্টির ফোঁটা তাদের দু’জনের ভিজে শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে, আর চারপাশের নীরবতা যেন ভেঙে গেছে কেবল তাদের দু’জনের নিঃশ্বাসের শব্দে।

ঝমঝম বৃষ্টি তখনো নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়ছে। নেহার ধীরে ধীরে স্নেহাকে তুলে এনে সাদের মাঝখানে শুয়ে দিলো। বৃষ্টির ফোঁটা ভিজে চুল, কাঁধ এবং মুখে পড়ছে, আর চারপাশের বাতাস ভিজে আছে মাটির মিষ্টি গন্ধে।

নেহা নিজেও স্নেহার পাশে শুয়ে পড়লো। তার হাত দু’টি কোমর ঘিরে ধরে, আলতো হলেও শক্তভাবে জোরালো স্পর্শে বললো,বাসর করবো এখন, তোর শাস্তি এটা।

স্নেহা চোখে মৃদু হাসি নিয়ে নরম কণ্ঠে বললো এরকম শাস্তির জন্য আমি প্রস্তুত, জনাব।
তার চোখে, হাসিতে এবং নিঃশ্বাসে ছিলো ভরসা, ভালোবাসা আর একটুখানি দুষ্টু জেদ।

নেহার স্নেহার গলায় মুখ গুঁজে নিলো, আস্তে আস্তে ভালোবাসার ছোঁয়া ছড়িয়ে দিতে থাকলো সারা অঙ্গ। প্রতিটি স্পর্শে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে যেন তার ভালোবাসা ধীরে ধীরে স্নেহার শরীরে মিশে যাচ্ছিল। স্নেহা সেই ভালোবাসা গ্রহণ করলো, চোখে কিছুটা ঝলমল, ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি।

ভারি বর্ষণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের হৃদয়ের স্পন্দন একাকার হয়ে উঠলো। একে অপরের ভেতরের উষ্ণতা, আনন্দ এবং নিরাপত্তা তাদের চারপাশের সবকিছুকে ঢেকে দিলো। দু’জনের নিঃশ্বাস মিলেমিশে এক অদ্ভুত সিম্ফনি তৈরি করলো নীরব বৃষ্টির সুরে মোড়ানো, গভীর, অথচ শান্ত।

কিছুক্ষণ পর, যখন আবেগ কিছুটা শান্ত হলো, তারা দু’জনে ধীরে ধীরে আলগা হয়ে বসলো। চোখে চোখ রেখে একে অপরের জন্য নতুন প্রতিজ্ঞা করলো ভালোবেসে রক্ষা করার, একে অপরকে বুঝে নেওয়ার, এবং প্রতিটি মুহূর্তে একে অপরের কাছে থাকা।

বৃষ্টির শব্দ এখনও বাতাসে ভেসে চলেছে। সেই ভেজা রাতের প্রতিটি মুহূর্ত তাদের মনে অনন্তকাল ধরে থাকবে, যেন ভালোবাসার প্রথম আসল সাক্ষী হয়ে।

(এই পার্ট টা গল্পের সাথে মিল পাবেন না। এমনি লেখতে মন চাইলো তাই লেখলাম 💜)