(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)
#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা
কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌
নেহার দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে স্নেহার রুমের দরজার সামনে চলে এল। হাত তুলে দরজার পাতায় হালকা ঠাপ্পড় মারতে মারতে বললো, কন্ঠে অস্থিরতা আর ভেতরের আবেগ একসাথে ফুটে উঠছে,
নেহার: স্নেহা… প্লিজ, দরজা খোল। পাগলামি করিস না। তুই জানিস তো আমি তকে ভালোবাসি। আর আমি তরি থাকবো। আমার পরীক্ষা শেষ, তারপর খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে বলবো আমাদের সম্পর্কের কথা। আমাকে আর একটু সময় দে.. প্লিজ।
স্নেহা দরজা খোললো না, রুমের ভিতর থেকে কণ্ঠটি কান্না ভেজা, স্নেহা বললো,
স্নেহা: আপনি সময় সময় করতে করতে কত দিন নিলেন? আর কত সময় চাই আপনার…? নাকি ঐ রিমি কে আপনি বিয়ে করতে চান কোনটা? আপনি আমাকে ভালোবাসেনই না! আপনি একটা কাপুরুষ, যে বিয়ে করেছে অথচ ফ্যামিলি কে বলতে পারে না। আমি আর থাকবো না—এই বাড়ি থেকে চলে যাবো।
নেহারের চোখে রাগ আর গভীর আবেগ একসাথে ফুটে উঠল। কণ্ঠ শক্ত আর দৃঢ়,
নেহার: আমি কাপুরুষ নই, স্নেহা! আমি বলছি তো বলবো। শুধু একটা পরিস্থিতি দরকার। আর কোথাও যাবে না তুই। এই বাড়িতেই থাকবি। যদি এক পা এই বাড়ির বাইরে বাড়াস, আমি নিশ্চিত তোর পা ভেঙে ধরিয়ে দিবো।
এই কথাগুলো বলার পর নেহার থপথপ পা ফেলে নিজের রুমের দিকে এগোতে লাগলো।
দরজার ক্লিক শব্দেই স্নেহার ভেতরটা যেন ফেটে গেলো। সে বসে রইলো, কোমর বেঁকেছে, চোখে অজানা আতঙ্ক আর কান্নার ছাপ। হঠাৎ মনে হলো, পুরো পৃথিবী থেমে গেছে।
স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে বসে রইল। বুকের ভেতর যেন হাজার টন ভার চাপা। চোখে জল, হৃদয়ে অজানা ব্যথা সেখানে সে একা। জানে না সামনে কী অপেক্ষা করছে।
দূরে দূরে বাইরে, জানালা দিয়ে বাতাস ভেসে আসে, কিন্তু তার ভেতরের ঝড় থামার নাম নেনি।
~~
বিকেল পাঁচটা…!
স্নেহা ঘুম ভাঙলো ধীরে ধীরে। চোখ দুটো ফুলে আছে, যেন লালচে আভা ছড়িয়ে আছে কান্নার চাপে। অনেকটা সময় ধরে কাঁদতে কাঁদতে অবশেষে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। বিছানা থেকে নেমে সে ভারী পায়ে নিচে নামলো।
ড্রইং রুমে ঢুকতেই চোখে পড়লো—মা-বাবা আর ভাই সাকিব বসে আছে। চারপাশে পরিচিত, আপন গন্ধ। পাশে বসে আছে মৌসুমী খান আর আফজাল খান, হাসি মুখে আলাপ করছে স্নেহার পরিবার সঙ্গে। দৃশ্যটা দেখে হঠাৎই স্নেহার মনটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বুকের ভেতরে জমে থাকা ভার যেন মুহূর্তে একটু হলেও হালকা হলো।
সাকিব স্নেহা কে দেখে হেসে উঠলো,আরে বোন! আয়, তুই ঘুমিয়ে ছিলি, তাই ডাকিনি।
মা তহিদা রহমান হাত বাড়িয়ে ডাকলেন—আরে মা, আয় বস। আমার পাশে বস। তোকে দেখি না কত দিন হলো।
স্নেহা মৃদু হাসি দিলো। মায়ের পাশে গিয়ে বসতেই এক অদ্ভুত শান্তি নেমে এলো মনে। কতদিনের ক্লান্তি যেন এই এক মুহূর্তে ধুয়ে গেলো।
বাবা আহমদ রহমান গভীর সুরে বললেন—মা, আমরা ভাবছিলাম আজই তোকে নিয়ে যাবো। কয়েক দিন আমাদের কাছে থেকে আসবি। মনটাও ফ্রেশ হবে।
একটু থেমে তিনি যোগ করলেন—আর যদি নেহারের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়, তাহলে তো আর যেতে পারবি না। তখন তো এই বাড়িই থাকতে হবে তোকে।
বাবার কথায় স্নেহার বুক কেঁপে উঠলো। হাসির আড়ালে লুকিয়ে রাখা ব্যথা যেন আচমকাই ছড়িয়ে পড়লো ভেতরে। সে চোখ নামিয়ে ফেললো, ঠোঁটের কোণে জোর করে হাসি টেনে রাখলো, কিন্তু মনে মনে জানতো—এই কথাগুলো তার আত্মাকে আরও ঝড়ের ভেতর ছুঁড়ে দিলো।
ঠিক তখনই সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে নেহার গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো—আমি এই বিয়ে করবো না! তাহলে বিয়ে হবে কিভাবে?
ড্রাইনিং রুম যেনো মুহূর্তে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। সবাই তাকিয়ে রইলো নেহারের দিকে।
আমজাদ খান: কপালে ভাঁজ ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বললেন—বেশি বুঝিস না নেহার। আমরা রিমির মা-বাবাকে কথা দিয়েছি। তুই এখন না করিস কেনো? আর রিমি মেয়েটা সব দিক থেকেই পারফেক্ট। তাহলে না কেনো করিস?
নেহার: সোজা দাঁড়িয়ে, কঠিন অথচ ভেতরে লুকানো কষ্টের সুরে উত্তর দিলো—কারণ আমি বিয়ে করেছি। আর একজন পুরুষের একবারের বেশি বিয়ে করা উচিত নয়। তাই আমি আর বিয়ে করতে পারবো না।
তার এই স্বীকারোক্তির পর ঘর যেনো ঝড়ে উড়ে গেলো। সবাই হতবাক চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। মৌসুমী খান তো চমকে উঠে মুখে হাত দিলেন, আহমদ রহমান আর তাহিদা রহমান থম মেরে গেলেন, যেনো পৃথিবীর সব শব্দ নিঃশেষ হয়ে গেছে হঠাৎ।
শুধু সাকিবের ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি খেলে গেলো, হয়তো সত্যিটা ও আগে থেকেই বুঝেছিলো।
আর স্নেহা…! স্নেহার বুকের ধুকপুকানি যেনো দ্বিগুণ হয়ে উঠলো। ভয় আর অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠলো মেয়েটি। মনে হলো, এখনই যেনো কোনো বিস্ফোরণ ঘটতে যাচ্ছে, আর সেই বিস্ফোরণে ভেঙে যাবে তার ছোট্ট দুনিয়াটা।
আমজাদ খান: সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর চোখ কটমট করছে, গলায় বজ্রপাতের মতো গর্জন
আমাদের সাথে কি তুই মজা করছিস, নেহার? কিসের রিয়ের কথা বলছিস? আর কাকে বিয়ে করেছিস?
ড্রাইনিং রুমে উপস্থিত সবার নিঃশ্বাস যেনো আটকে গেলো। কেউ একটা শব্দও করতে পারছে না।
নেহার ধীরে ধীরে সবার দৃষ্টি এড়িয়ে এগিয়ে গেলো স্নেহার দিকে। তার মুখে কোনো ভয় নেই, শুধু দৃঢ়তা। গিয়ে স্নেহার হাতটা শক্ত করে ধরে টেনে দাঁড় করালো।
আমি স্নেহাকে বিয়ে করেছি। স্নেহা আমার বউ।
সাথে সাথে যেনো ঘরের দেয়াল কেঁপে উঠলো এই ঘোষণায়। মৌসুমী খান হতভম্ব হয়ে বসে পড়লেন, ওহি সৈয়দ মুখ চেপে ধরলেন, তার চোখে অবিশ্বাস।
স্নেহা ভয়ে কেঁপে উঠলো, হাতের তালু ঘামে ভিজে গেলো। নেহারের হাতে শক্ত করে ধরা থাকলেও, যেনো দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সে।
ঠিক তখনই আহমদ রহমান তীব্র বিস্ফোরণে বলে উঠলেন,তুমি কি পাগল হয়ে গেছো, নেহার? কী সব বাজে কথা বলছো!
কিন্তু নেহারের চোখে কোনো দ্বিধা নেই। বুক সোজা করে গলাটা উঁচু করে বললো—আমি একদম ঠিক বলছি। আমি স্নেহাকে বিয়ে করেছি।
পরের মুহূর্তে চড়—একটা সজোরে থাপ্পড় পড়লো নেহারের গালে। শব্দটা যেনো দেয়াল ভেদ করে প্রতিধ্বনিত হলো সারা ঘরে।
ড্রয়িংরুম মুহূর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। সবার চোখ বিস্ফারিত, কারো ঠোঁট কাঁপছে, কারো বুক ধুকপুক করছে। শুধু নেহারই স্থির দাঁড়িয়ে আছে, গালে লালচে দাগ ফুটে উঠলেও চোখে কোনো ভয় নেই।
স্নেহা কেঁদে ফেললো চুপিচুপি। ভয়, কষ্ট আর ভালোবাসার মিশ্রণে বুকটা জ্বলে উঠলো তার। মনে হলো, এ থাপ্পড় যেনো শুধু নেহারের গালে নয়, তার হৃদয়ের ওপরেও পড়েছে।
চলবে…..