(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)
#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা
কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌
বিকেলের দিকে স্নেহাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। সকালের সেই উত্তেজনা শোক কান্না সবকিছু মিলেমিশে এখন এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে রূপ নিয়েছে। বাচ্চার কথা শোনার পর সবাই ধীরে ধীরে মেনে নিয়েছে এই সম্পর্ককে।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই ইমরান, আশিক আর সুহা ছুটে এসেছে। তিনজনই দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে সরাসরি স্নেহাকে দেখতে গেল। তবে ঢুকতেই আফজাল খানের মুখোমুখি হয়ে গেল তারা।
সুহা কোনো রকম ওনাকে সালাম দিয়ে উপরে চলে গেলো
কিন্তু আফজাল খান গম্ভীর মুখে ওদের দুই জন কে বললো, তোমরা দুই নেহারের এত কাছের বন্ধু, তোমার জানো যে নেহার বিয়ে করেছে? তাহলে আমাকে কেনো কিছু জানালে না?
দুই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কেউ কিছু বললো না। তারা মনে করলো বন্ধুর জন্য এই টুকু বকা খাওয়া যায়।সত্যিই, এই মুহূর্তে আফজাল খানের বকা কারোরই মনে লাগেনি।
কিছুক্ষণ পর সবাই নেহারের রুমে জড়ো হলো। নেহার স্নেহার পাশে বসে আছে, আর স্নেহা ক্লান্ত মুখে হলেও এক অদ্ভুত শান্তি নিয়ে বসে আছে। রুমের ভেতর হাসি-ঠাট্টার স্রোত বইছে।
হঠাৎ সুহা হেসে উঠে বলল, আমি তো ভাবতেই পারছি না ভাই, তুই আমাকে এত তাড়াতাড়ি এত বড় সু-সংবাদ দিবি। যাই হোক আগেই বলে রাখি তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেব। ঠিক করেই নিলাম।
নেহার: মুচকি হেসে বলল,শালিকা, তুমি ভুল বলছো। আমার ছেলে নয় বরং মেয়েই হবে।
সুহা সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় করে উত্তর দিল,
মোটেও না! ছেলেই হবে আমি জানি। হু!
স্নেহা দু’জনের কথায় বিরক্ত হয়ে বলল,
এই হয়েছে, এবার থামো। আল্লাহ যাই দেন, সুস্থ আর ভালো থাকলেই হলো। আচ্ছা, তুই আর ইমরান ভাই কবে বিয়ে করছিস, বল তো?
প্রশ্নটা শুনে সুহার মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। সে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,আমি তো চাই বিয়ে করতে। কিন্তু ঐ যে লোকটা বিয়ে করতে চাই না। আজাইরা লোক জানিস? মনে হয় এখন আর আমায় ভালোও লাগে না কে জানে, হয়তো দুই-একটা অপশন আছে অন্য কোথাও।
ইমরান’ তখন হেসে মাথা নাড়ল।আরে সুহা, এসব কেন ভাবছো? আমার আগে রেজাল্ট বের হোক, তারপর একটা চাকরি পাই। তার পরেই আমি প্রস্তাব নিয়ে যাবো। তোমার মা বাবা কি তোমাকে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দেবে?
নেহার: গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল,আচ্ছা, তাহলে আমার অফিসেই তুই জয়েন কর। আর আশিক, তোকে-ও বলছি যদি তুই অন্য কোথাও জয়েন করিস, তাহলে আমাদের আর তেমন দেখা হবে না। আমি চাই না, আমরা আলাদা হয়ে যাই।
আশিক: ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে উত্তর দিল,তুই কিন্তু কথাটা খারাপ বলিসনি। তাহলে আমরা একসাথে থাকতে পারব। কিন্তু দুঃখ একটাই তোরা সবাই মিঙ্গেল, আর আমি একা সিঙ্গেল।
আশিকের কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
তখনই সুহা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,তাহলে তো হয়েই গেলো! আজকে রাতে আমাদের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যাবেন আপনি।
ইমরান: হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করল,আজকে মানে?
সুহা: সঙ্গে সঙ্গে ইনোসেন্ট মুখ করে নেহারের দিকে তাকাল। নেহার মজা পেয়ে বলল,আরে, মেয়েটা যখন বলছে, তখন চল আজকেই যাই। আর তুই তো বেকার না, তাই না?
ইমরান তোতলাতে লাগল, কিন্তু…
সুহা: হাত নেড়ে দৃঢ় স্বরে বলল,কোনো কিন্তু না! আজকে মানে আজকেই।
সবাই আবারও হেসে উঠল। ইমরান লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে বলল,আচ্ছা ম্যাডাম… আপনার হুকুম মানতেই হবে।
রুম ভরে উঠল এক অদ্ভুত আনন্দে বন্ধুত্ব, প্রেম আর মজার রসিকতায়। মুহূর্তটাকে দেখে মনে হচ্ছিল,এরা শুধু বন্ধু নয় আসলে একে অপরের জীবনের অপরিহার্য অংশ।
~~
রাত আটটা…!
সুহাদের ড্রয়িংরুমে এক অদ্ভুত পরিবেশ। ঘরে নিঃশব্দ বাতাস, শুধু দেয়ালঘড়ির টিকটিক শব্দটা যেন বাড়িয়ে দিচ্ছে সবার উত্তেজনা।
সোফার এক পাশে পাশাপাশি বসে আছে তিন যুবক নেহার, ইমরান আর আশিক। আর তাদের সামনে গম্ভীর মুখে বসে আছেন সুহার বাবা কুদ্দুস সাহেব।
এই আকস্মিক আগমনে তিনি খানিকটা অবাক। চা আসার আগেই তাঁর চোখ তিনজনের মুখ ঘুরে ঘুরে পরখ করছে।উপরে সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুহা—চুপচাপ, মুখে আতঙ্কের ছায়া। মনে মনে ভাবছে, আল্লাহ, যদি বাবা না করে বসে, তাহলে তো সব শেষ!
ড্রাইনিং ভেতর নীরবতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেন কেউ নিঃশ্বাস নিলে শব্দ শোনা যায়।
অবশেষে সেই নীরবতা ভেঙে নেহার গলা পরিষ্কার করে বলল,আংকেল, আমি নেহার খান। আপনি হয়তো চিনবেন আমাকে।
কুদ্দুস সাহেব এক ভুরু তুলে বললেন,
হুঁ, তোমাদের খান পরিবারের নাম তো সবাই চেনে। তোমাদের বিজনেসও বড়। তা বলো, কি মনে করে হঠাৎ আজ এলে?
নেহার: ভদ্র হাসি দিয়ে উত্তর দিল,আসলে, আমার ভাইকে দিয়ে আপনার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। আশা করি, আপনি ফিরিয়ে দেবেন না।
কুদ্দুস একটু অবাক হয়ে চশমা নামিয়ে তাকালেন,
তোমার ভাই? কিন্তু আমার জানা মতে তো তোমার কোনো ভাই নেই!
নেহার: এক সামান্য হেসে বললো,সব কি মায়ের পেটের ভাই হতে হবে আংকেল? কিছু কিছু বন্ধু ভাইয়ের থেকেও বেশি হয়।তার চোখে ছিল দৃঢ়তা, ঠোঁটে সামান্য কাঁপন। তারপর একটু থেমে শান্ত স্বরে বললো,আপনি বলুন, আমার ভাইয়ের সাথে আপনার মেয়ে বিয়ে দিবেন কিনা?
কুদ্দুস সাহেব একটু চমকে তাকালেন নেহার দিকে। মুখের ভাঁজে বিরক্তির ছায়া।
তা কোন বন্ধু তোমার?” কুদ্দুসের কণ্ঠে অবিশ্বাস।
নেহার মৃদু হাসল, তারপর পাশে বসা ইমরানের হাত ধরে বলল,ও… ইমরান। বর্তমানে আমার অফিসে কাজ করে। আশা করি আপনার তাতে কোনো আপত্তি নেই।
ড্রাইনিং যেন মুহূর্তেই ভারী হয়ে গেল। কুদ্দুসের মুখে কঠিন ভাব, চোখে ঠান্ডা আগুন।
একটা চাকরিয়ে আমার মেয়ে সখ পূর্ণ করতে পারবে? তাঁর কণ্ঠে তুচ্ছতা।
ইমরান: ধীর ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াল, চোখে অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস।আপনার মেয়েকে দিয়েই দেখুন, পারি কিনা বলল সে শান্ত গলায়।
কুদ্দুস একবার ইমরানকে একবার নেহার কে দেখলেন। তারপর ঠোঁট শক্ত করে বললেন
তোমার কে কে আছে পরিবারে?
ইমরান সোজা হয়ে উত্তর দিল,
শুধু মা আছেন।
কুদ্দুসের কণ্ঠ এবার কিছুটা নরম হলো।
আচ্ছা, তোমার মা কে নিয়ে এসো। ওনার সাথে কথা বলবো আমি।
উপরতলা থেকে সবকিছু দেখছিল সুহা। মুখটা কেমন যেন সাদা হয়ে গেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছিল, এখনই কান্না ভেঙে পড়বে।এতো তাড়াতাড়ি ওর বাবা মেনে নিবে তা কখনোই ভাবে নি।
ইমরান একবার তাকালো উপরের দিকে, হয়তো টের পেয়েছিল তার চাহনি। ঠোঁটের কোণে এক মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,
আচ্ছা।
তারপর চুপচাপ দরজার দিকে হাঁটা দিল। নেহার আর ইমরান একসাথে বেরিয়ে গেল, আর পেছনে রইলো ঘরের নীরবতা যেন দেয়ালগুলোও কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু কেউ শুনছে না।
চলবে…….!