(রুমান্টিক এলার্ট,অতিরিক্ত রুমান্টিক গল্প পছন্দ না তারা দূরে থাকুন)
#তুই_আমার_আসক্তি
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_তাসনিম_তালুকদার_বুশরা
কপি করা বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ❌
কেটে গেছে কয়েকটা দিন।আজ সুহা আর ইমারেনের বিয়ে।
যদিও আয়োজনটা খুব জাঁকজমকপূর্ণ নয়, তবুও ঘরভর্তি একটা আনন্দের হাওয়া বইছে। সুহার বাবা বারবার করে নেহারের পরিবারের সবাইকে বলে গেছেন যেন সকালের দিকেই চলে আসে, যাতে তাড়াহুড়ো না হয়। তাই সকাল থেকেই ঘরে অতিথিদের আসা যাওয়া, হাসির শব্দে এক প্রাণবন্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
নেহার স্নেহাকে একাধিকবার বলেছে,তুই একটু সাবধানে চলবি, ঠিক আছে? বেশি ঘোরা ফেরা করবি না।
যদিও নেহার নিজেই স্নেহার কাছেই থাকবে সারাক্ষণ, তবুও মনে একরকম ভয় কাজ করছে কারণ সে একদমই রিস্ক নিতে চায় না বেবিকে নিয়ে। স্নেহা হেসে বললো,আচ্ছা আচ্ছা, আমি তোকে কথা দিচ্ছি, বেশি হাঁটব না।
তারপর স্নেহা সুহা রুমে যায় সুহা স্নেহা কে দেখেই বলে উঠে,তুই আমাকে সাজিয়ে দে না দোস্ত! আমি তোর হাতেই সাজব।
স্নেহা মুচকি হেসে বললো,আমার একমাত্র বেস্টু যদি এমন আবদার করে, আমি কি আর না বলতে পারি?
বলে স্নেহার ঠোঁটে একটুখানি ভালোবাসার হাসি ফুটে উঠলো। তারপর ধীরে ধীরে সুহাকে সাজাতে শুরু করলো একেকটা গহনা, একেকটা ফুলের পিন, যত্নে, ভালোবাসায়, আর বন্ধুত্বের আবেগে।
ঘরে তখন হালকা আতর আর গোলাপের গন্ধ ছড়িয়ে আছে। আয়নার সামনে বসে সুহা মাঝে মাঝে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিচ্ছে, আর স্নেহা হাসতে হাসতে চুল ঠিক করে দিচ্ছে।
প্রায় এক ঘণ্টা পর সাজানো শেষ হলো। স্নেহা পেছনে দাঁড়িয়ে সুহার মুখের দিকে তাকালো চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙ, আর শরীর ভর্তি স্বর্ণের গহনা।
স্নেহার চোখে জল চিকচিক করলো।মাশাআল্লাহ, ধীরে বলে উঠলো সে, আমার জানটা কত সুন্দর লাগছে আজ কারো জন্য না লাগুক, কিন্তু আমার কাছে তুইই আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে।
সুহা হেসে বললো,আহ্ দোস্ত, তোকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ!
ঠিক তখনই দরজার বাইরে থেকে এক যুবক এসে বললো,আপুরা, নিচে ডাকছে বর এসে গেছেন।
স্নেহা দ্রুত বললো,আচ্ছা, আসছি!তারপর সুহার হাত ধরে বললো,চল, শুরু হোক তোর জীবনের নতুন অধ্যায়।
দু’জন একসাথে ধীরে ধীরে নিচে নামলো। সিঁড়ির প্রতিটা ধাপে সুহার গায়ে শাড়ির আঁচল দুলে উঠছে, গয়নার ঝিকিমিকিতে চারদিক আলোকিত হয়ে উঠছে। নিচে এসে দেখে, ইমরান সোফায় বসে আছে পরিপাটি পোশাকে, চোখে এক অচেনা উত্তেজনা আর ভালোবাসা মেশানো দৃষ্টি।
সবাইয়ের সামনে গিয়ে সুহাকে ইমরানের পাশে বসানো হলো। মুহূর্তটা যেন সময়ের ভেতর থমকে রইলো একপাশে স্নেহার চোখে গর্ব আর আনন্দ, আর অন্য পাশে সুহার চোখে লজ্জার পরত মাখানো এক মিষ্টি হাসি।
বিয়েটা খুব সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হলো।আশেপাশে হাসির রোল, দোয়া আর আশীর্বাদে ভরে উঠলো পুরো বাড়িটা। সোনালি আলোয় সাজানো উঠোনে সুহা আর ইমরানকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত, কিন্তু স্নেহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলো। ওর চোখে মিশে আছে আনন্দের আভা, আবার কোথাও একটুখানি ভাবনাও।
ঠিক তখনই নেহার পাশে এসে দাঁড়ালো।
মুখে দুষ্টুমি মেশানো হাসি, স্নেহার কানে মুখ নিয়ে বললো,আমাদের আবার বিয়ে হলে খারাপ হয় না বউ?
স্নেহা অবাক হয়ে নেহারের দিকে তাকালো। ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,আমাদের বাচ্চা হবে কিছুদিন পর, আর আপনি এখনো এসব বলছেন? অসভ্য লোক!
নেহার হেসে কাপড়ের কোণ দিয়ে মুখ ঢাকলো।
তাতে কি হয়েছে জান? বাচ্চা হওয়ার পর না হয় আবার করবো তারপর আবার বাসর রাত।
স্নেহার মুখ লাল হয়ে উঠলো। এক ঝটকায় নেহারের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে ঘুরে চলে গেলো সিঁড়ির দিকে।নেহার হেসে বললো,এই দেখো বউ,সাবধানে যেও, নইলে আমার বাচ্চার কিছু হয়ে যাবে!
স্নেহা আর কোনো উত্তর দিলো না। শুধু পেছনে ফিরে একবার তাকালো নেহারের মুখে এখনো সেই দুষ্টুমি ভরা হাসি।
বিয়ের কোলাহলের ভেতরেও তাদের ছোট্ট তর্কটা যেন এক টুকরো জীবন্ত ভালোবাসার প্রমাণ হয়ে রইলো।
~~
রাত এগারোটা।
বাড়ির সব কোলাহল, হাসি আনন্দের শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেছে। উঠোনের আলো কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর বিয়ের দিনের সেই ব্যস্ততা এখন কেবল ক্লান্তির নিঃশ্বাস হয়ে ছড়িয়ে আছে চারদিকে।
সব কাজের জামেলা মিটিয়ে অবশেষে ইমরান নিজের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজার সামনে এক মুহূর্ত থেমে গভীর নিঃশ্বাস নিলো আজকের রাতটা তার জীবনের এক নতুন শুরু।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।রুম ভরা ফুলের গন্ধ হালকা আলোয় মোমের দোলায় ছায়ারা নরম নাচছে দেয়ালে। খাটের কিনারায় বসে আছে সুহা গোলাপি শাড়িতে মোড়ানো, গলায় হার, মাথায় ওড়না টেনে রেখেছে লজ্জায়।
ইমরান রুমে ঢুকতেই সুহা মাথা নিচু করে খাট থেকে নামলো।ইমরান হালকা হেসে দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে বললো,আরে, উঠতে হবে না। বসো সারাদিন তোমার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে।
সুহা মুখ তুলে তাকালো চোখে ক্লান্তি থাকলেও মুখে একরাশ শান্ত হাসি।না বললো ধীরে,আমি আজকে অনেক খুশি। তাই এসব আমার কাছে কিছুই মনে হয় না।
ইমরান ঠোঁট কাপড়ে মুখ ঢেকে হেসে বললো,
তাই নাকি?
সুহা ধীরে ধীরে কথা বললো, কণ্ঠে মিশে আছে বিস্ময় আর আনন্দের আভা,হু আমি তো এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমাদের সত্যিই বিয়ে হয়ে গেছে। আর আপনি…আপনি এখন আমার স্বামী!
ওর চোখে ঝিকমিক করছিলো স্বপ্নের আলো।
আমার না কেমন জানি সবকিছু স্বপ্ন–স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
ইমরান মৃদু হেসে পাশে বসলো। তার দৃষ্টিতে অবাক হওয়ার ছাপ।আমাকে পেয়ে যে কেউ এতো খুশি হতে পারে, তা আমি কোনোদিন ভাবিনি,ইমরান ধীরে বললো।আমি তো একজন সাধারণ মানুষ, সুহা। আমার মধ্যে কি আছে বলো, যা তোমার কাছে এত মূল্যবান মনে হয়?
সুহা তার দিকে তাকালো চোখে নির্ভরতার দীপ্তি আর ভালোবাসার মায়া। ধীরে ধীরে বললো,
আমি আপনাকে শুধু ভালোবাসি না আপনার মধ্যে আমি পৃথিবীর সব শান্তি খুঁজে পাই। আর কি চাই বলুন তো?
তার কণ্ঠটা কাঁপছিলো।আমি আপনাকে শুধু ভালোবাসি না, আপনার মায়ায় আমি খুব বাজেভাবে জড়িয়ে আছি। মাঝে মাঝে মনে হয় আপনি ছাড়া আমি মরেই যাবো যেমন পানি ছাড়া গাছ মরে যায়।
সুহা এক নিঃশ্বাসে সব বলে ফেলে আবার ফিসফিসিয়ে বললো,আপনি আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না তো? বলুন?
তার হাত কাঁপতে কাঁপতে ইমরানের হাত খুঁজে পেলো।আর যদি আপনি চলে যান, তাহলে আমাকে মেরে ফেলে যাবেন কারণ আপনাকে ছাড়া আমি জীবন ভাবতেই পারি না।
ইমরান ধীরে ধীরে সুহার কাছে এগিয়ে এলো। রুমের বাতাস যেন হঠাৎ গাঢ় হয়ে গেলো, আর দু’জনার নিঃশ্বাস মিশে এক অদ্ভুত নীরবতা তৈরি করলো। সুহার হাতদুটো ওর কোলের উপর রাখা, হালকা কাঁপছে। ইমরান কাছে এসে নরম স্বরে বললো,
এই যে, আমি তোমার হাতটা ধরলাম।
কথার সাথে সাথেই ইমরান সুহার হাত ধরে নিলো, দৃঢ় অথচ কোমল স্পর্শে।
আর মরার আগে কোনোদিনও ছাড়বো না। না কখনো তোমাকে কাঁদতে দিবো। তুমি যতটা ভালোবাসা আমাকে দিয়েছো, আমি তোমাকে দ্বিগুণ ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
সুহা ইমরানের চোখের দিকে তাকালো। সেই চোখে অদ্ভুত এক নিরাপত্তার ছায়া, প্রতিশ্রুতির উজ্জ্বলতা। ইমরান একটু থেমে আবার বললো,
তুমি আর কখনো এসব মরার কথা বলবে না। আর যদি বলেছো তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে, মনে থাকবে তো?
কথার শেষে ইমরান ঠোঁটে একরাশ মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুললো, যেন হুমকির আড়ালে আদর।
সুহা কিছু বললো না। ওর বুকটা যেন এক অদ্ভুত শান্তিতে ভরে গেলো। কেবল নিঃশব্দে মাথা দোলালো উপর নিচে তার চোখে তখন প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস আর ছোট্ট এক শিশুর মতো ভরসা।
এরপর ইমরান সুহা কোমর শক্ত করে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো। সুহা কাঁপলে লাগলো। ইমরান কিছু ক্ষণ তাকিয়ে রইলো সুহার মুখের দিকে তারপর আস্তে করে সুহার উষ্ঠ দ্বয় নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো। এক হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে আর আপনার হাত দিয়ে সুহার শাড়ি খানা খোলে ফেললো। তারপর আস্তে আস্তে সুহা কে বেডে শুয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো। তারপর ইমরান সুহা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আর গোলাপি শাড়ি খানা ফ্লোরে গড়াগড়ি গেলো। অতপর একটি সুন্দর রাত।
চলবে…..!