মৌয়ের সংসার পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
3

#মৌয়ের_সংসার (শেষ)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

মৌয়ের সংসার জীবন শুরু হয়। নতুন নতুন সবই রঙীন লাগে। মাস খানেক স্বপ্নের মতো কাটলো মৌয়ের। তবে তার শাশুড়ীর আচরণে মনে হয় সে তার চাকরি করা পছন্দ করছে না। যদিও সকালে ঘুম থেকে উঠে মৌ ঘরের সমস্ত কাজ করে দিয়ে যায়। দুপুরের কাজগুলো তার শাশুড়ীকেই করতে হয়। তবে সেটার জন্য মৌ পিয়াসের সঙ্গে একজন রাখার কথা বলছিলো। মানে কাজে সাহায্য করতে। তবে পিয়াস বারণ করে। তারা এত ধনী নয়। মধ্যমিত্ত পরিবার। এখানে এমনটা করা বেশ সৌখিন হয়ে যায়। মৌ তাই সকালে সব কাজ সেড়ে বিকালে এসেই বাকি কাজ করতে বসে। মাঝে যতটা তার শাশুড়ী করে সেটা বাদে আর কোন কাজে হাত দিতে দেয় না। বরং তার কাজের সময় সে শাশুড়ীকে শুধু তার পাশে বসে গল্প করতে বলে। মৌয়ের এসব বিষয় তার ভালোই লাগে। শাশুড়ী, বৌমার গল্পের মাঝে সম্পর্ক অনেকটা ভালো হয়ে ওঠে। তবুও কোথাও গিয়ে মৌয়ের চাকরি করা তার পছন্দ হচ্ছে না। এতদিন কথাগুলো পেটের মাঝে রাখলেও এবার রাখলো না তার শাশুড়ী। সে মৌয়ের সঙ্গে গল্প করার ফাঁকে বলে,“আমাদের সবকিছু তো ভালোই যাচ্ছে। তুমি বউ মানুষ। চাকরিটা না করলে হয় না।”

এটা শুনে মৌ তার দিকে শান্ত চোখে তাকায়। সে নরম গলায় বলে,“কেন মা? আমি তো চেষ্টা করছি চাকরির পাশাপাশি সংসারের সব দায়িত্ব পালন করার। আমার দায়িত্ব পালনে অবহেলা হচ্ছে বুঝি?”

“না তা নয়।
আসলে বউ মানুষ দশজনে দশ কথা বলছে। বিষয়টা ভালো লাগছে না।”
শাশুড়ীর মুখে এই কথা শুনে মৌ তার দিকে শান্ত চোখে তাকায়। ম্লান হেসে বলে,“লোকের মন জুগিয়ে চলা যায় না মা। আপনি যত ভালোই কাজ করেন না কেন? লোকে কথা শোনাবেই। এটা বন্ধ করা যায় না।”

“তুমি বড্ড বেশি কথা বলো। কিছু বুঝতে চাও না।”
এই কথা শুনে মৌ চুপ করে যায়। সে কিছু বলে না। তার শাশুড়ী বলে,“আমাদের সময়ে এত লেখাপড়া, এত চাকরি বাকরি ছিলো না। আমরা ভালো ছিলাম না। বেশ তো ছিলাম। আজকালকার মেয়ে ছেলেদের চাকরি ছাড়া চলে না।”
আরও নানান কথা বলে। তবে মৌ জবাব দেয় না। সে চুপচাপ শোনে। অতঃপর পিয়াস বাড়ি ফিরলে একা ঘরে মৌ শান্ত গলায় বলে,“আমি বিয়ের পর চাকরি করবো এটা তো তোমরা জেনেই বিয়ের জন্য এগিয়ে এসেছো, তাই না?”

“হ্যাঁ। হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
পিয়াস মৌয়ের কাধে হাত রেখে বলে। মৌ স্বাভাবিক গলায় বলে,“মা চাকরিটা পছন্দ করছে না। বিয়ের আগে তো এমন কথা ছিলো না। তাহলে এখন অপছন্দ করার কারণ কি?”

“আরে মায়ের কথা ছাড়ো তো।
মা আগের যুগের তো। সে এসব পছন্দ করে না। কিন্তু সমস্যা নাই। আমি মাকে বলেছি তোমাকে পছন্দ, তুমি চাকরি করবে। মা আমার পছন্দ জেনেই তো তোমাকে বউ বানিয়ে নিয়ে এসেছে। হ্যাঁ এখন হয়তো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। সমস্যা নাই তো। তুমি মাকে বলো কয়েক মাস যাক তারপর ছেড়ে দিবে। এভাবে একটা বুঝ দিয়ে দাও।”

“না।”
পিয়াসের কথা শুনে মৌ কিছুটা জোরেই বললো। পিয়াস অবাক হয়। মৌ আবার বলে,“মিথ্যা বুঝ দিতে পারবো না স্যরি পিয়াস। আমি তো কয়েক মাস পর চাকরি ছাড়বো না। তাহলে তাকে কেন মিথ্যা আশা দিবো?
সে এই আশা নিয়ে থাকবে যে আমি একটা সময় পর চাকরি ছেড়ে দিবো। তারপর যখন দেখবে এটা হচ্ছে না তখন তো তার রাগ দেখানো স্বাভাবিক৷ তার জোর করা স্বাভাবিক। কিন্তু আমি সেটা মানতে না পারলে হয়ে যাবে ঝগড়া। তারপর অশান্তি। একটা কথা শোনো পিয়াস, বড় বড় অশান্তি এরকম ছোট ছোট মিথ্যা বুঝ দিয়েই শুরু হয়। তাই এসব আমি পারবো না।”

একটু থেমে আবার বলে,“ছেলেদের একটা মূখ্য সমস্যা কী জানো? এই যে ছোটখাটো বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়। তারা এটাকে গুরুত্ব দেয় না। যেটা পরবর্তীতে বড় সমস্যা সৃষ্টি করে। সেজন্য সমস্যা ছোট হোক বা বড় সেটা যথা সময়ে শেষ করা ভালো। আমি চাকরি করবো এটা জেনেই তুমি বিয়ে করেছো। এখন তোমার মা আমাকে বাঁধা দিতে পারে না। আর সেটা নিয়ে কথা বললে আমি বেশি কথা বলছি এটা মনে হতে পারে না। দেখো সে আমার শাশুড়ী৷ আমার দ্বিতীয় মা। হ্যাঁ শাশুড়ী কখনো মায়ের জায়গা নিতে পারে না, বৌমাও মেয়ের জায়গা না। আমি নিতেও চাই না। তবে আমি তার কাছে বেয়াদবও হতে চাই না। আমি চাই আমি বেয়াদব আমি খারাপ সেটা আমার স্বামীই দেখুক। অন্যকেউ না। এজন্য অবশ্যই তোমাকে তোমার দেওয়া কথা রাখতে হবে। স্ত্রী হিসাবে যে সম্মান তোমার কাছে পাওয়ার সেই সম্মান দিয়ে, যে বিশ্বাস রেখেছি সেই বিশ্বাস রাখা তোমার দায়িত্ব। স্ত্রীকে রাজরানী করতে তাকে এত এত জিনিস দিতে হয় না। যথাযথ সম্মান আর সঠিক দায়িত্ব পালন করলেই হয়। সেটা করার জন্য এমন ছোট ছোট সব সমস্যা শুরুতেই সমাধান করতে হবে।
আশা করি আমার কথা তুমি বুঝেছো। এটা আমার বিশ্বাস৷ আমি যে বিশ্বাস নিয়ে তোমার হাত ধরেছি, এটা সেই বিশ্বাস।”

পিয়াস এতক্ষণ মৌয়ের কথা শুনলো। খুব মনোযোগ সহকারে। এটা দেখে মৌয়ের ভালো লাগে৷ সব স্বামীদের খুব সাধারণ সমস্যা হলো তারা বউকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে না শুনে ভাবে,“এটা রেডিও এমনি বাজবে। যাক বাজুক। আমি আমার কাজ করি।” এভাবে এড়িয়ে যায়। মনোযোগ দেয় না। এটা খুব খারাপ। এখান থেকেই দুজনার দূরত্ব তৈরি হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে পিয়াস সবসময় মৌয়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। এটা খুব ভালো লাগে মৌয়ের। এখানেই সে প্রমাণ পায়, সে যে জীবনসঙ্গী বাছাই করেছে সেটা ভুল নয়। তার সিদ্ধান্ত সঠিক। পিয়াস সব কথা বুঝে মৌকে জড়িয়ে ধরে বলে,“আমি মাকে বুঝিয়ে বলবো। এসব বিষয় নিয়ে যাতে আর কথা না বাড়ায়। সব মেনে নেয় যাতে।”

মৌ মাথা নাড়িয়ে বলে,“হ্যাঁ। তবে মাথায় রেখো মা যাতে তোমার কোন কথায় কোনভাবে মনে না করে তুমি তার দিকটা না ভেবে বউয়ের দিক বেশি ভাবছো। মা এবং বউ দুজনেই তোমার দায়িত্ব। আলাদা সময়ে দুজনকেই গুরুত্বপূর্ণ অনুভব করানো তোমার দায়িত্ব। আমি যেমন আমাকে গুরুত্বহীন ভাবা পছন্দ করবো না তেমন মাকেও না।”

“এজন্য তোমাকে এত ভালো লাগে।”
এটা বলে পিয়াস মৌয়ের কপালে চুমু দেয়। পিয়াসের সত্যি মৌয়ের এই গুনগুলো খুব পছন্দের৷ অন্যসব মানুষ পছন্দ না করলেও সে করে। কারণ সে তার চিন্তাধারা বুঝতে পারে। যেটা সমাজের একই নিয়মে চলে আসা মানুষজন বোঝার ক্ষমতা রাখে না। তাই তো স্পষ্ট কথা বলা বা নিজের অধিকার বুঝে নিতে চাওয়া মানুষদের দ্বারা শিক্ষিত হয়েও বেয়াদব বলে৷ তার শিক্ষায় এতটুকু বোঝার ক্ষমতা থাকে না। অবশ্য দোষ তাদের নয়। সমাজ ব্যবস্থাই এভাবে গড়ে উঠেছে।

____

সেদিনের পর পিয়াস তার মাকে খুব সুন্দরভাবে বোঝায় বিষয়টা। যদিও সে আগে ঘরে বসে মৌয়ের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছিলো কোন কথা বা কেমনভাবে বললে মা সেটা নেগেটিভ না নিয়ে পজেটিভ নিবে। মৌও তার ভাবনা অনুযায়ী সমাধান দেয়। অতঃপর শাশুড়ী কখনো মৌকে আর চাকরি ছাড়ার কথা বলেনি। মৌও তার সাধ্যমতো সংসারের সব দায়িত্ব নেয়। এটা তার ঘর। এখানে সবটা তাকেই করতে হবে। এসব সে জানে। তার মাকে দেখেছে, শত অবহেলাও কখনো নিজের দায়িত্বকে বোঝা ভাবেনি। যেটা মৌও ভাবতে চায় না।এভাবেই সুখে শান্তিতে মৌ এবং পিয়াসের সংসার এগিয়ে যায়। এখানে ভুল সবারই হয়। পিয়াসের, মৌয়ের, পিয়াসের মায়ের, বাবার সবার। তবে সব ভুলগুলো খুব সুন্দরভাবে সবাই শুধরে নিয়েছে। সবার মন যখন ভালো থাকে সেই সময়ে তার ভুলটা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয় অন্যরা। যাতে সে বুঝতে পারে। যার মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ভালো হয়ে ওঠে। সবার সঙ্গে সবার খুব সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে।

এরই মাঝে প্রতিবেশীর কথায় মৌয়ের শাশুড়ী আবারও একটু অন্য চিন্তায় মন দেয়। সবার কথা বউ তার চাকরির বেতন ছেলের হাতে তুলে দেয়।কিন্তু তার জানা মতে দেয় না। এটা নিয়ে শাশুড়ী মা পিয়াসকে ঘরে ডেকে শান্ত গলায় বলে,“এটা তো বৌমারই সংসার। তো তার বেতনটা এখানে দেওয়া উচিত নয় কি? আমাদের মধ্যবিত্ত সংসার। তোর একার টাকায় টানতে তো ভীষন কষ্ট হয়। তো বৌমাকে বল তার বেতনের টাকাটা তোকে দিতে।”

“না মা। এটা ঠিক হবে।
একটা কথা ভেবে দেখো, আজ মৌ চাকরি না করলেও কিন্তু এই সংসারটা আমার চালাতে হতো। আমার একার টাকাই চলতো। যেভাবে চালাতাম সেভাবে। তো ও চাকরি করে বলে আমার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে এমনটা তো নয়। এটা ভাবা উচিতই নয়। তাছাড়া ও চাকরি করছে। ওটা ওর টাকা। অবশ্যই ওর টাকা। ওখানে আমার অধিকার নাই। কিন্তু হ্যাঁ এই সংসার ওর। ওর সংসারের ঐ টাকায় অধিকার আছে। যেটা কিন্তু মৌ দেয়। মাস শেষে সংসার খরচ চালাতে যখন কষ্ট হয়, টাকা থাকে না পকেটে তখন মৌ আমার আড়ালে আমার মানিব্যাগে তার টাকা ভরে রাখে। এটা গত কয়েক মাস ধরেই হচ্ছে। এজন্যই আমি এখন আর মাস শেষে ভয়ে থাকি না। চিন্তায় থাকি না বাকি দিনগুলো কিভাবে চলছে? আমার চিন্তা দূর করতে আমার বউ যেটা ভালোবেসে করছে সেটাই কি যথেষ্ট নয়? যেটা ভালোবেসে পাওয়া যায় সেটা জোর করে চেয়ে কেন হারাবো বলো? শুধু শুধু সংসারে অশান্তি করার মানে হয় না। তাছাড়া বাকি যে টাকা মৌ জমাচ্ছে সেটাও কখনো না কখনো ও আমার এই সংসারেই ঢালবে। এজন্যই অবশ্যই আমাদের ওকে বোঝাতে হবে এটা ওর সংসার। ও এখানে শুধু বউ নয়। এই বাড়ির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পুরো বাড়িটা যার নিজের। তুমি ওকে সেই সম্মানটা দাও, দেখবে তোমার ওকে নিয়ে কোন আফসোস থাকবে না।”
পিয়াস কথা থামিয়ে মায়ের চোখের দিকে তাকায়৷ মা জবাব না দিয়ে চেয়ে আছে। অন্যদিকে পিয়াসকে ডাকতে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সমস্ত কথা মৌ শুনেছে। পিয়াসের সব কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ তার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। এটা অন্যরকম এক খুশির পানি। সে আনমনে বলে উঠে,“আমি পেরেছি।”

তার এই একটি শব্দের মাঝে অনেক কথা লুকিয়ে আছে। বিচক্ষণ মানুষ হলে অবশ্যই সব অজানা কথা বুঝে নিবে। মৌ সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায়। এরপরও অবশ্য পিয়াস তার মাকে বোঝায়। তার মা বুঝতে পারে সবটা। যদিও তার শাশুড়ী মনে কিঞ্চিৎ দ্বিধা বা রাগ মৌয়ের প্রতি জন্মায়ও। হিংসাত্মক মন বলে তার ছেলে তার একার আর নেই।

এভাবে সুখে দুঃখে দুইটা বছর কাটিয়ে দেয় মৌ তার সংসারে। হ্যাঁ এটা তারই সংসার। এরই মাঝে তার বন্ধু কাজলেরও তার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়। তার সঙ্গে এখনো মৌয়ের ভীষণ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে এই দুই বছরে মৌ পিয়াসকে তার বাবার বাড়ি নিয়ে সেভাবে আদর যত্ন করাতে পারেনি। এখানে অবশ্য মৌ আগেই বলে নিয়েছিলো, তার মা নেই। তাই পিয়াস সেই জামাই আদরটা পাবে না। এসব জেনেই পিয়াস তাকে বিয়ে করেছে। এসব নিয়ে তার আফসোস নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে মৌয়ের আফসোস হয়। তাই তো হুট করেই দুই মাসে একবার তাকে সারপ্রাইজ দেয়। নিজে হাতে বাজার করে পিয়াসের পছন্দের সব রান্না করে। পিয়াসও মৌয়ের এই আদর যত্ন সাদরে গ্রহণ করে। সে সেদিন খুব তৃপ্তি করে খায়। এসবের মাঝে হঠাৎ শাশুড়ী মা অসুস্থ হয়ে যায়। মৌ এবং পিয়াস তাকে নিয়ে হাসপাতাল ছোটাছুটি করে। অনেক পরীক্ষার পর জানা যায় তার জরায়ুতে টিউমার হয়েছে৷ সেটা অপারেশন করতে হবে। অপারেশন মানেই একটা ব্যয়বহুল খরচ। এখানে পিয়াস চিন্তিত হয়ে পড়ে। তার স্বল্প বেতনের চাকরি৷ সংসার খরচটাই হয় না। সেখানে টাকা জমানো বিলাসিতা। সে এখন এত টাকা পাবে কোথায়? ঠিক সেই সময়ে মৌ তার জমানো টাকা সমস্তটা বের করে পিয়াসের হাতে দেয়। পিয়াস অবাক হয়ে যায়। সেই সঙ্গে তার বাবা এবং বোনেরাও। তার বোনেরা তাদের স্বামীর কাছে অনুরোধ করে কিছু টাকা নিয়ে আসার চিন্তা করছিলো। তবে তার প্রয়োজন হয় না। মৌয়ের কাছে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা থাকায় অসুবিধা হয় না। তবে পিয়াস খুব অবাক হয়ে বলে,“হাতের সব জমানো টাকা দিয়ে দিচ্ছো। পরে অসুবিধা হবে না?”

“অসুবিধা কেন হবে?
মানুষ টাকা জমায় কেন? যাতে যেসময়ে লাগবে সেই সময়ে পাওয়া যায়। তো এখন লাগছে খরচ করবো না? আর পরে তো আবার জমাবো। তাই পরে অসুবিধা কেন হবে? আমার মা অসুস্থ, তার সুস্থতা এখন বেশি জরুরি। সেটা আগে দেখা উচিত। তাছাড়া পুরো সংসারটা আমার৷ সেটার ভালোর জন্যই তো সব টাকা জমানো। এখানে সুবিধা, অসুবিধা আসবেই বা কেন?”
মৌয়ের কথা শুনে পিয়াস মুচকি হাসে। সে জবাব দেয় না। মৌও কথা বাড়ায় না। সে বুঝে সমাজে তাদের মতো মেয়েদের সবাই শুধু স্বার্থপরই ভাবে। তারা ভাবে এরা নিজেদের জন্যই সব করে যায়। কিন্তু বিষয়টা এমন নয়। নিজের অধিকার বা পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ এটা নয় যে অন্যদের নিয়ে ভাবে না। এই ছোট কথাটিই সমাজকে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ পিয়াসের পরিবার এটা বুঝেছে৷ তার মায়েরও দুই বছরে যত অভিযোগ ছিলো মৌকে নিয়ে সেটা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়। অতঃপর তার অপারেশন হয়, সে সুস্থ হয়। মৌ নিজে অফিস ছুটি নিয়ে তার পাশে পড়ে থাকে। তার সমস্ত কাজ নিজে করে। যেখানে তার মেয়েরাও শ্বশুড়বাড়ি থেকে এসে দু’টো রাত পার করতে পারছিলো না তার সঙ্গে সেখানে মৌ অফিস বন্ধ নিয়ে পরে থাকে। এসবের পর মেয়েটাকে ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই। এরপরই মৌয়ের সংসার আরও বেশি পূর্ণতা পায়। সেই পূর্ণতা নিয়েই কেটে যায় পাঁচ বছর, অতঃপর দশ বছর। সংসারে নতুন সদস্য বাড়ে। দায়িত্ব বাড়ে। সব মিলিয়ে হাসি খুশি নিয়ে মৌয়ের সংসার খুব সুন্দরভাবে কেটে যাচ্ছে। মৌ এই সংসারে খুব খুশি। কারণ এটা তার সংসার। এখানে তাকে এক মূহুর্তের জন্যও মনে হয় না, এখানে সে শুধুমাত্র কাজ করার জন্যই আসছে৷ কাজ করা, স্বামীর চাহিদা মেটানোই তার কাজ নয়। এখানে সে যেমন তার দায়িত্ব পালন করে অন্যরাও করে। তাকে এখানে কেউ অসম্মান করার সুযোগ পায় না। সে সেই সুযোগ কাউকে দেয় না। তাই তো এটা তার সংসার। এই সংসারের বোঝা বা দাসী নয় সে। সে এই সংসারের গৃহিনী। যার দায়িত্ব কাজ করা। যেখানে কোন দাসত্ব নেই। এই দায়িত্বের মাঝেই সবাই তার যথাযথ সম্মানটা দেয়। সমাজের যে মানুষগুলো বলছিলো, মৌয়ের মতো বেয়াদবের সংসার হয় না তাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যুগ যুগ ধরে মৌদের সংসার এগিয়ে যাক। এই কামনা করে মৌয়ের সংসারের যাত্রার সমাপ্তি করলাম।

(সমাপ্ত)