তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব-২৯

0
2

#তুমি_অজান্তেই_বেঁধেছ_হৃদয়
#পর্ব_২৯
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
একটি নতুন সকালের শুরু। অনুর সকাল সকালই ঘুম ভেঙে গেছে। সে আড়মোড়া ভেঙে পাশে তাকাতেই দেখতে পেল, রায়ান উপুড় হয়ে ঘুমুচ্ছে। ওর উন্মুক্ত শরীর দেখে গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে লাল হয়ে গেল অনুর গাল দুটো। কী লজ্জা যে লাগছে! ভাগ্যিস রায়ান এখন জেগে নেই। নাহলে অনুকে আরো লজ্জা দিত। রায়ান ওঠার আগেই অনু উঠে গিয়ে গোসল করে নিল। সে শাড়ি পরতে পারে না। তাই নিজের রুমে গিয়ে স্নিগ্ধাকে ডাকল।

স্নিগ্ধা এলো হাসিখুশি চেহারা নিয়ে। অন্যদিনের তুলনায় আজ তাকে একটু বেশিই স্বতঃস্ফূর্ত লাগছে। অনুর হাতে মেরুন রঙের একটা জামদানি শাড়ি। শাড়িটা দেখেই স্নিগ্ধা মুগ্ধ হয়ে বলল,

“কী সুন্দর শাড়িটা! কে দিয়েছে? রায়ান ভাইয়া?”

অনু লাজুক হাসি দিয়ে উপর-নিচ মাথা ঝাঁকাল।

“ভীষণ মানাবে তোমাকে।”

“গতকাল নীল শাড়িটা বুঝি রিয়াদ ভাইয়া দিয়েছিল?”

স্নিগ্ধা অনুর চেয়েও দ্বিগুণ লজ্জা পেল। জিজ্ঞেস করল,

“কী করে বুঝলে?”

“বিয়ের শপিং করার সময় তো বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করা হয়েছে। আমার যতদূর মনে পড়ে, তুমি একটা কালো শাড়ি পছন্দ করে কিনেছিলে আমার রিসিপশনে পরার জন্য। কালো শাড়ির বদলে নীল শাড়ি! কিছু তো গড়বড় মনে হয়েছিল। এখন বুঝলাম গড়বড়টা কী!”

“অনু! লজ্জা দিও না আর।”

“একটু না হয় দিলাম? ননোদ হয়ে যদি একটু লজ্জা না দিতে পারি তাহলে কেমন দেখায় না বিষয়টা?”

“তাই? তাহলে ভাবি হিসেবে আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে লজ্জা দেওয়ার তাই না? তোমার বুকের কাছটায় লাল দাগটা কীসের ননোদিনী?”

অনু সঙ্গে সঙ্গে দুহাত দিয়ে আড়াল করল। স্নিগ্ধা খিলখিল করে হাসছে। অনুর ইচ্ছে করছে লজ্জায় ম’রে যেতে!

“হয়েছে, এত লজ্জা পেতে হবে না। আদর কেমন করল দেবর সাহেব?”

“ভাবি! তোমার পায়ে পড়ি আর লজ্জা দিও না।”

“বাঃ রে! আমাকে লজ্জা দেওয়ার সময় মনে ছিল না?”

“ভুল হয়ে গেছে। আর লজ্জা দেবো না।”

অনুর শাড়ি পরানো শেষ। স্নিগ্ধা হেসে অনুর গাল টিপে বলল,

“আচ্ছা যাও মাফ করে দিলাম। এখন রুমে গিয়ে আরেকবার আমার দেবরের মাথাটা খারাপ করে এসো তো দেখি।”

“ভাবি, আবার!”

স্নিগ্ধা হাসতে হাসতে নিচে চলে গেল। অনুও মুচকি হাসছে। রায়ানের রুমে গিয়ে দেখল, বিছানা ফাঁকা। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। গোসল করছে হয়তো। অনু সেই সুযোগে জলদি একটু সেজে নিল। মুখে হালকা ফেইস পাউডার, চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে হালকা করে লাল লিপস্টিক দিল। সাজা শেষ করে দৌঁড় দিতে যাবে তখন রায়ান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলল,

“পালাচ্ছিস কোথায়?”

অনু দাঁড়িয়ে পড়ল। থতমত খেয়ে বলল,

“পালাচ্ছি কোথায়? নিচে যাচ্ছি।”

“আলমারি থেকে আমার কালো শার্ট-টা বের করে দিয়ে যা।”

অনু আলমারি থেকে শার্ট বের করে সামনে এগিয়ে বলল,

“নিন।”

রায়ান শার্ট নিতে গিয়ে অনুর হাত ধরে টান দিল। কাছে এনে কোমরে হাত রেখে বলল,

“আমাকে রেখে কোথায় গিয়েছিলি?”

“ভাবির কাছে। শাড়ি পরতে।”

“যেই শাড়ি একটুপর খুলেই ফেলব, সেই শাড়ি পরার দরকার কী?”

লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে অনুর। রায়ান ভাই মুচকি মুচকি হাসছে। অনু দৃষ্টি নত করে বলল,

“কথা কি রয়েসয়ে বলা যায় না?”

“যায়। কিন্তু নিজের আপন বউয়ের কাছে এত রয়েসয়ে থাকতে পারব না, এবং রয়েসয়ে কথাও বলতে পারব না।”

“আপনি তো খুব ঠোঁটকাটা স্বভাবের হয়েছেন দেখছি।”

“আগে ছিলাম না। তুই আমার বউ হওয়ার পর হয়েছি।”

“এত ঠোঁটকাটা স্বভাব হওয়া ভালো না।”

“ঠিক আছে। সেলাই করে দে তাহলে।”

অনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কীভাবে?”

“চুমু দিয়ে।”

“ধুর! ছাড়ুন। নিচে যাব।”

“ছাড়ার জন্য তো ধরিনি। সময় নষ্ট না করে ফটাফট চুমু খা।”

“আমি পারব না।”

“কেন?”

“এমনিই।”

“লজ্জা পাচ্ছিস?”

“লজ্জা দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করছে, লজ্জা পাচ্ছি কিনা।”

“তাড়াতাড়ি চুমু দে। তাহলে ছেড়ে দেবো।”

অনু উপায় না পেয়ে রায়ানের গালে চুমু খেল। সেই সময়ে রুমে ঢুকে পড়ল রিয়াদ। রায়ান ছিটকে অনুকে দূরে সরিয়ে দিল। অনু হকচকিয়ে পেছনে তাকাতেই নিজেও লজ্জায় বরফ হয়ে যাচ্ছে। রিয়াদ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কী করবে বা কী বলবে বুঝতে পারছে না। সে আমতা আমতা করে বলল,

“না মানে সরি আসলে, মানে দরজা খোলা দেখে ভেবেছি…মানে কেন যেন এসেছি।”

এরপর মাথা চুলকিয়ে বলল,

“সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।”

রায়ান বলল,

“ভাইয়া দরজায় দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে আসো।”

“না থাক, পরে আসব। তোরা কন্টিনিউ কর।”

অনুর ইচ্ছে করছে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে। রিয়াদ চলে গিয়েছিল, আবার ফিরে এসে বলল,

“দরজাটা লাগিয়ে নিবি নয়তো চাপিয়ে রাখবি কেমন?”

এরপর নিজেই দরজা চাপিয়ে দিয়ে গেল। অনু আঙুল তুলে শাসিয়ে রায়ানকে বলল,

“সব আপনার জন্য হয়েছে।”

রায়ান ভাই দুকদম এগিয়ে গিয়ে বলল,

“এখনো কিছুই হয়নি। হবে।”

বলেই অনুকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল। শাড়ির আঁচলে হাত রাখতেই অনু প্রায় চেঁচিয়ে বলল,

“না!”

রায়ান ভাই দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,

“ইয়েস।”
.

রিয়াদ রুমে গিয়ে দেখে স্নিগ্ধা বিছানা গোছাচ্ছে। সে মুখ গোমড়া করে চেয়ারে বসল। স্নিগ্ধা লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল,

“কী হয়েছে?”

“কিছু না।”

“মুখ গোমড়া করে রেখেছেন কেন?”

“এমনি।”

“বলেন কী হয়েছে?”

“তুমি আমাকে চুমু দাও না কেন?”

স্নিগ্ধা হকচকিয়ে বলল,

“কী?”

“বললাম, আমাকে তুমি চুমু দাও না কেন?”

“আপনার জ্বর এসেছে?” কাছে গিয়ে রিয়াদের কপালে হাত রেখে বলল স্নিগ্ধা।

রিয়াদ বিরক্ত হয়ে বলল,

“জ্বর আসবে কেন?”

“তাহলে এসব কী বলছেন?”

“খারাপ কী বললাম? অনু তো রায়ানকে…”

পুরো কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল রিয়াদ। এভাবে ছোটো ভাইয়ের প্রাইভেসি ব্রেক করা ঠিক হবে না। স্নিগ্ধা যথেষ্ট বুদ্ধিমান মেয়ে। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেও জিজ্ঞেস করল,

“অনু রায়ানকে কী? চুমু খেয়েছে?”

রিয়াদ বোকাসোকা চোখে তাকিয়ে বলল,

“হু।”

“এজন্য আপনারও চুমু লাগবে?”

“না, বললাম এমনি।”

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে রিয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে কোলে বসল। রিয়াদ বলল,

“আরে, দরজা খোলা।”

রিয়াদের বলতে দেরি, দরজার সামনে এসে হাজির হতে বিলম্ব হয়নি আয়ানের। আয়ান হা করে তাকিয়ে আছে। রিয়াদ চটজলদি স্নিগ্ধাকে পাঁজাকোলে করে চেয়ারে বসিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে পড়ল। আয়ান আর দাঁড়ায়নি। লজ্জায় এবং ভয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে গেছে। যদি রিয়াদ ভাই ধমক দেয়!
.
.

সন্ধ্যায় নিজের রুমে বসে শাপলার সাথে গল্প করছিল অনু। শাপলা অনুর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। আলমগীর চৌধুরী দৃশ্যটা দেখলেন। শাপলার প্রতি তার মায়া আছে। ভালো লাগে। বিশেষ করে মেয়েটা অনুকে নিয়ে অনেক পজেসিভ, এজন্যই আরো বেশি ভালো লাগে। রাতে তিনি অনুকে নিজের রুমে ডেকে পাঠালেন। অনু বাবা-মায়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“আব্বু, ডেকেছ?”

“হ্যাঁ, ভেতরে এসো।”

অনু গিয়ে বাবার পাশে বসল। আলমগীর চৌধুরী মেয়ের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দিত মুখটা দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ভালোমন্দ কিছুক্ষণ কথা বলে জিজ্ঞেস করলেন,

“শাপলাকে তোমার কেমন লাগে? মেয়ে হিসেবে কেমন?”

“খুবই ভালো, আব্বু। নিজেই তো দেখতে পাচ্ছ কতটা নম্র-ভদ্র।”

“হ্যাঁ, এজন্যই তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছি। কোনো সম্পর্ক আছে কি কারো সাথে?”

“না, না। ও এসবে নেই একদম।”

“বেশ! আমি আর তোমার মা ভাবছিলাম যে, শাপলাকে তমালের বউ করে আনলে কেমন হয়?”

অনু একই সাথে অবাক এবং ভীষণ খুশি হলো। প্রফুল্ল কণ্ঠে বলল,

“খুব, খুব, খুব ভালো হয় আব্বু। সবচেয়ে বেশি খুশি তো তাহলে আমি হবো। শাপলা আমার সাথেই থাকবে। আর আমি তো জানি, আমার পরিবার কেমন? ও এখানে অনেক ভালো থাকবে।”

মেয়ের খুশি দেখে আলমগীর চৌধুরী হাসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“ঠিক আছে। তুমি তাহলে আগে শাপলার সাথে কথা বলো। ওর মতামত জানো। তারপর আমি তোমার ভাই এবং দাদুর সাথে কথা বলে ওর বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাব।”

“ঠিক আছে, আব্বু। আমি এখনই গিয়ে কথা বলছি।”

“এত তাড়াহুড়ো করতে হবে না, মা। তুমি যখন সময় পাবে কথা বলো।”

“উঁহু! এখন না বললে শান্তিই পাব না। যাচ্ছি আমি।”

আলমগীর চৌধুরী হেসে বললেন,

“পাগল মেয়ে!”

অনু বাবা-মায়ের রুম থেকে বের হয়েই রায়ানের মুখোমুখি হলো। রায়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

“এত খুশি কেন?”

“কারণ আছে। পরে বলব।”

অনু পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে, রায়ান হাত চেপে ধরল।

“ইগনোর করছিস? ছাদে চল।”

“এখনই?”

“হ্যাঁ।”

অগত্যা অনুকে রায়ানের সাথে ছাদে যেতে হলো। তবে সে যা দেখল তার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আয়ান এবং জুঁই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করছে। আয়ানের কাঁধে জুঁইয়ের মাথা রাখা। অনু এতদিন যেই ভয়টা পেয়ে এসেছিল সেটাই হলো আজ। রায়ানের দিকে তাকানোরও সাহস হচ্ছে না। রায়ান এগিয়ে যেতে চাইলে অনু সামনে এসে দাঁড়াল।

“ঘরে চলুন।”

“সামনে থেকে সর।”

ওদের কথা শুনতে পেয়ে আয়ান এবং জুঁই সতর্ক হয়ে গেল। দুজনে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে।

অনুকে বলার পরও অনু সরছে না দেখে, মৃদু ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দিল রায়ান। এরপর এগিয়ে গিয়ে জুঁই এবং আয়ানের হাত ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নিয়ে গেল। হইচই শুনে সবাই উঠানে এসে হাজির হয়েছে। জুঁই কাঁদছে ভয়ে। দাদু জিজ্ঞেস করলেন,

“কী হয়েছে?”

রায়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই হেসে বলল,

“হয়নি। হবে। আরেকটা বিয়ে হবে দ্রুতই বাসায়। আয়ানের সাথে জুঁইয়ের।”

সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। রায়ান হেসে বলল,

“আমি যেমন আয়ানের বোনকে বিয়ে করে শাস্তি পাচ্ছি, একই শাস্তি যেন আয়ানও পায় তাই ওর কাছে আমার বোনকে বিয়ে দেবো।”

অনু, জুঁই, আয়ান তিনজনেই অবাক হয়ে দেখছে রায়ানকে। বাড়ির সকলে এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না। রায়ান সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে, বিষয়টা বুঝিয়ে বলল সকলকে। যদিও রিলেশন এই বাড়িতে এলাউ না, কিন্তু রায়ানের কথা শুনে এবং দাদুর অনুমতিতে সবাই ওদের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেল। আয়ান, জুঁই খুশিতে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।

লিলি খালা হেসে বললেন,

“ভালোই তো বাড়ির মাইয়াগুলা বিয়া হইয়া বাড়িতেই রইয়া যাইতাছে।”

অনু দূর থেকে হাসিখুশি রায়ানকে দেখছে। কীসব আলোচনা যেন করছে দাদা, বাবা আর চাচ্চুদের সাথে। এমন একটা ভাব ধরে আছে সবার সামনে যেন খুবই সাধারণ ঘটনা। অথচ একটু আগেই অনুর মিনি হার্ট অ্যা’টা’ক করিয়ে ফেলেছিল প্রায়। ব’দ লোক একটা!

রাতে ঘুমাতে গিয়ে অনু ক্ষুব্ধ হয়ে বলল,

“এটা কী হলো?”

“কী?” পাল্টা প্রশ্ন করল রায়ান।

“বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন?”

“তুই কী আশা করেছিলি?”

“আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

“কেন? ওদেরকে মা’র’ধো’র করব এমনটা ভেবেছিলি?”

“হু।”

রায়ান অনুকে কাছে টেনে বলল,

“কী করে মা’র’তা’ম বল তো? যেই প্রেমের সমুদ্রে আমি নিজেই হাবুডুবু খেয়েছি, সেই একই প্রেমে পড়া বাকি দুজনকে কী করে শাস্তি দেই?”

“তবুও আপনি এত সহজে…”

“কারণ আমি আগে থেকেই সব জানতাম।”

অনু অবাক হয়ে বলল,

“কী?”

রায়ান হেসে বলল,

“হ্যাঁ। তোর আগে থেকেই জানতাম।”

“আমি যে জানি, আপনি এটাও জানতেন?”

“হু। আমার সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়াই নেই, অনু।”

“সব জেনেও আপনি চুপ ছিলেন?”

“হ্যাঁ, আগে নিজে না বিয়ে করে বোনকে তোর ভাইয়ের হাতে তুলে দিতাম নাকি?”

“যদি আপনার সাথে আমার বিয়ে না হতো?”

“কেন হতো না? তোর জন্মই হয়েছে আমার জন্য। তুই আমার ছাড়া আর কারো বউ হতে পারতিস না।”

“কী করতেন?”

“খু’ন করে ফেলতাম।”

“ঢং! আগে তো আর ভালোবাসতেন না।”

“আগের কথা আসছে কেন? এখন কতটা ভালোবাসি সেটা দেখ।”

অনু হেসে বলল,

“রিয়াদ ভাইয়ার বিয়ের পর এই বাড়িতে বিয়ের ধুম পড়ে গেছে।”

“এটাই তো ভালো। কেউ কারো সংসার দেখে আর আফসোস করবে না। আয়ান আর জুঁইয়ের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করার সময় মেজ চাচ্চু তমালের বিয়ের কথা বলল। তমালকে বিয়ে না করিয়ে তো আর আয়ানকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। আমি ভেবেছিলাম, ওদের কাবিন করিয়ে রাখব এখন। আয়ানের পড়া শেষ হলে তারপর ধুমধাম করে বিয়ে দেবো। চাচ্চু বলল, তমাল আর আয়ানের একসঙ্গেই বিয়ে দেবে। শাপলাকে নাকি তমালের জন্য পছন্দ করে?”

“হ্যাঁ, আব্বু তখন এজন্যই রুমে ডেকেছিল আমায়। শাপলার সাথে একটু আগে কথা হয়েছে আমার। তমাল ভাইয়ার কথা বললাম। মেয়ে তো লজ্জাতেই শেষ।”

“তারপর?”

“শাপলার কোনো আপত্তি নেই। আর ওর পরিবারেরও আপত্তি হবে বলে মনে হয় না আমার। বরং খুশিই হবে।”

“বউ তাহলে আমার কাছ ছাড়া হয়ে গেল।” আফসোসের সুরে বলল রায়ান।

“মানে?”

“এমনিই তো সুযোগ পেলেই শাপলার কাছে দৌঁড় মারিস। সারাক্ষণ দুজনে কী এত ঘুটুরমুটুর করিস আল্লাহ্ ভালো জানেন। এরপর যদি তমালের বউ হয়ে পার্মানেন্টলি চলে আসে এই বাড়িতে তাহলে তো আর কথাই নেই!”

“আপনি কি তাহলে চাচ্ছেন না ওদের বিয়ে হোক?”

“আরে না বোকা! আমি তো মজা করলাম। একটু হিংসাও করছি আরকি।”

“ছেলে মানুষও এত হিংসুটে হয়?”

“হয়। কেন জীবনে দেখিসনি?”

“না।”

“ঠিক আছে। তাহলে এখন দেখে নে।” বলেই টি-শার্ট খুলে ফেলল রায়ান।

অনু লজ্জা পেয়ে বলল,

“কী করছেন!”

“হিংসায় শরীর জ্ব’ল’ছে। ঠান্ডা করতে হবে।”

অনুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, লাইট নিভিয়ে নিজের উন্মুক্ত শরীরের ভার ছেড়ে দিল অনুর ওপর।

চলবে…