মিষ্টির তনুদা পর্ব-০৭

0
4

#মিষ্টির_তনুদা
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ০৭

তনু ফোনের লাইন কেটে দিতেই মিষ্টি মুখে হাত চেপে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে দিল। আচ্ছা তনুদা কী সত্যিই মিষ্টিকে ভালোবাসে না? যদি নাই ভালোবাসবে সেদিন অমন করে হাঁটু মুড়ে বসে, হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে প্রপোজ করেছিল কেন? সবই তাহলে মিথ্যা অভিনয় ছিল বুঝি? হায়, বোকা মিষ্টি এই অতি-সহজ কথাটা বুঝতে এত দেরি করে ফেলল? মিষ্টি চোখের জল মুছে নিল৷ অকারণে আর কাঁদবে না মিষ্টি। বুক ফেটে মরে গেলেও না। ওই পাষাণ, নির্দয় মানুষটার জন্য কেঁদে কোনো লাভ নেই। মানুষটা তো মিষ্টির বুকের দুই ইঞ্চি গভীরে লুকিয়ে থাকা অবুঝ মনের অনুভূতি বুঝে না। মিষ্টিও এখন থেকে নিজের মতো থাকবে। মানুষটা তো বলেই দিয়েছে, বিয়ের পর যে যার মতো থাকবে।

মিষ্টি পরেরদিন ভোরবেলা তনুর মা মানে মিষ্টির শাশুড়ি মাকে বলে, পড়াশোনার অজুহাতে নিজেদের বাড়িতে চলে গেল।

মিষ্টির সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। প্রাইভেট, কোচিং করে দিনগুলো বেশ কেটে যাচ্ছে। মিষ্টির যে বিয়ে হয়েছে। ওদের কলেজের শুধু শিলা ছাড়া আর কেউ জানে না। কারণ মিষ্টি কলেজে ফুলহাতা জামা পরে যায়। হাতের শাঁখা দেখা যায় না। জামার নিচে ঢাকা থাকে। বাড়ি থেকে লাল টিপ পরে গেলেও কলেজে গিয়ে টিপ খুলে রাখে। বাড়ি আসার সময় আবার টিপটা কপালের মাঝখানে পরে নেয়। সিঁথির সিঁদুর চুলের ভাঁজে ঢাকা থাকে। তনুর সাথে জেদ করেই এইরকম ভাবে চলাফেরা করে মিষ্টি।

সেই রাতের পর মিষ্টি না চাইতেও তনুকে কারণে-অকারণে বার বার ফোন দিয়েছে। তনু ফোনে মিষ্টির সাথে একটুও ভালো করে কথা বলে না। অযথা মিষ্টির সাথে খারাপ ব্যবহার করে, কটুকথা শুনিয়ে ফোন রেখে দেয়। মিষ্টি ফোন দিলে শুরুতেই ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলে,
-‘তুই এত বেহায়া কেন রে মিষ্টি? বার বার বারণ করার পরও ফোন দিস কেন? তোর কী একটুও লজ্জা করে না?
কথাগুলো শুনলে মিষ্টির কী ভীষণ কান্না পায়। মনে মনে হাজারবার বলে, “আর জীবনেও গণ্ডারটাকে ফোন দেব না। মরে গেলেও না। আমার আর ইচ্ছে নেই যেচে-পড়ে অপমানিত হওয়ার।”
দিনশেষে সব ভুলে গুলে খায় মিষ্টি। তনুর করা তিক্ত ব্যবহার ভুলে আবারও বেহায়ার মতো ফোন দেয়।

অনিকের কাজিনের নাম গৌরব। সিঙ্গাপুর থাকে। পাঁচবছর পরে গৌরব দেশে এলো। শেষবার যখন এসেছিল। তখন অনিকের মামা-মামী মানে গৌরবের বাবা-মা নিজেদের বাড়িতে থাকতো। একবছর যাবৎ ওনারা অনিকদের ফ্ল্যাটে এসে থাকছে। গৌরব দেখতে লম্বাচওড়া, পেটানো শরীর। গায়ের রঙ চাপা। তবে দেখতে মন্দ না। এইবার নাকি দেশে বিয়ে করতে এসেছে। পুরো ছয়মাসের ছুটি। গৌরবের জন্য পুরোদমে মেয়ে দেখা হচ্ছে। ওনি এসেছেন আজ দুই-তিনদিন যাবৎ। সবার সাথে দেখা হলেও মিষ্টির সাথে এখনো দেখা হয়নি। মিষ্টির দেখা করার ইচ্ছেও নেই। তবে সবাইকে নাকি ওনি খুব দামি দামি গিফট দিচ্ছেন। অনিককে তো আইফোন গিফট করেছে। সেতু দিদিকে বেশ দামি একটা পারফিউম দিয়েছে। রিতুকেও মেকাপ বাক্স দিয়েছে। রিতু খুব আগ্রহ নিয়ে মিষ্টিকে গিফট দেখাল। মিষ্টি আনমনা হয়ে নেড়ে-চেড়ে দেখল। রিতু মিষ্টিকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,
-‘এই মিষ্টি, তুইও গৌরব দাদার সাথে দেখা করে আয়। তোকেও কিছু না কিছু গিফট দেবে।
মিষ্টি ভেংচি কেটে বলল,
-‘আমার এত শখ নাই।
-‘হ্যাঁ তোর তো আবার বর আছে।
কথাটা রিতু মিষ্টিকে একচোখ টিপে হাসতে হাসতে মজা করে বলল। মিষ্টির মনটা খারাপ হয়ে গেল। আজ পর্যন্ত তনুদা মিষ্টিকে কিছুই গিফট করেনি। সেই যে ঝুমবৃষ্টিতে ভিজে একগুচ্ছ কদমফুল দিয়ে প্রপোজ করল। সেই প্রথম। সেই শেষ। শুকনো ফুলগুলো এখনো মিষ্টি খুব যত্ন করে ডায়েরির ভাঁজে রেখে দিয়েছে। মিষ্টির যখন ছেলে-মেয়ে অনেক বড় হয়ে যাবে। মিষ্টি শুকনো ফুলগুলো ওদের দেখিয়ে বলবে, -‘এই দ্যাখ্..তোর কিপ্টে বাপ আমাকে শুধু কদমফুল দিয়েছিল।
কথাগুলো আনমনে ভেবেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। রিতু ঘড়ি দেখে বলল,
-‘প্রাইভেটে যাবি না?
মিষ্টি উঠে গেল। টেবিল থেকে বই-খাতা ব্যাগে রাখতে রাখতে বলল,
-‘যাব। চল..

বাসার গেইটের সামনে গৌরবের সাথে মিষ্টির প্রথম দেখা হলো। রিতু হেসে বলল,
-‘কেমন আছেন দাদা?
-‘ভালো। তোমার কী অবস্থা?
-‘আছি ভালো।
-‘কোথায় যাচ্ছ?
-‘প্রাইভেট পড়তে।
গৌরব আঁড়চোখে মিষ্টির দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,
-‘ওনি কে?
-‘আমার বেস্টফ্রেন্ড৷ ওর নাম মিষ্টি।
-‘সেই ছোট্ট মিষ্টি। এত বড় হয়ে গেছে?
গৌরবের বলার ভঙ্গিতে মিষ্টি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে লাজুক হাসল। গৌরব কিঞ্চিৎ হেসে বলল,
-‘আমাকে চিনতে পেরেছ মিষ্টি? আমি গৌরব। অনিকের মামাতো ভাই।
-‘চিনেছি।
-‘এবার কোন ক্লাসে পড়ো?
-‘এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
-‘ভালো। মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
-‘আচ্ছা।
ওরা চলে গেল। গৌরব তখনো মিষ্টির গমন পথের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই দৃশ্য তনু দেখে ভেতরে ভেতরে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। আজ ভোরেই বাড়ি এসেছে তনু। মিষ্টি এখনো জানে না যে তনু এসেছে। ভোরে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম থেকে উঠে জানালার পাশে দাঁড়াতেই মিষ্টিকে একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে, মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেল। মাথা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য একটা ঘটনা। এত সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। এই সহজ ভাবনাটুকুই মস্তিষ্ক কিছুতেই মানতে পারছে না। আসুক আজ বাড়িতে মিষ্টি। ওর খবর আছে।

মিষ্টি প্রাইভেট পড়ে এসে দেখল; গৌরব ওদের বসার ঘরে বসে বসে মায়ের সাথে গল্প করছে। মা মিষ্টিকে দেখে বলল,
-‘মিষ্টি এদিকে আয়? ওকে তো বোধহয় চিনিস না। ও হলো গৌরব। অনিকের মামাতো দাদা। সিঙ্গাপুর থাকে। বড় ভালো ছেলে।
মিষ্টি বলল,
“চিনেছি মা। তোমরা কথা বলো।
মিষ্টি আর দাঁড়াল না। ঘরে চলে গেল। গৌরব আঁড়চোখে মিষ্টির ঘরে যাওয়া দেখল। হঠাৎ কথার ফাঁকে মিষ্টির মাকে বলল,
-‘ওহ কাকিমা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। মিষ্টির জন্য ছোট্ট একটা উপহার এনেছি। আপনি যদি অনুমতি দেন। উপহারটা কী আমি মিষ্টির হাতে দিতে পারি?
-‘অবশ্যই বাবা। যাও মিষ্টির ঘরে গিয়ে দিয়ে আসো। এই ফাঁকে আমি একটু চা করি।
-‘আচ্ছা।

গৌরব উঠে চলে গেল। দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,
-‘আসব?
মিষ্টি সদ্য হাত-মুখ ধুয়ে ভেজা মুখ গামছায় মুছছিল। কপালে এখনো বিন্দু বিন্দু জলের কণা লেগে আছে। দেখতে ভালো লাগছে। মিষ্টি চোখ তুলে তাকাল। একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
-‘আসুন।
গৌরব ধীর পায়ে ঘরে এলো। বলল,
-‘বাহ্..তোমার ঘরটা তো খুব গোছানো।
-‘ধন্যবাদ।
-‘এটা কী? ব্যালকনির দরজা?
-‘হুঁ।
-‘আমি কী একটু ব্যালকনিতে যেতে পারি মিষ্টি?
-‘অবশ্যই।
-‘তুমিও আসো।
-‘আচ্ছা।
গৌরব ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। একটা টবে গোলাপ ফুল গাছ। গাছে সবে দুটো কলি এসেছে। গৌরব সেদিকে তাকিয়ে বলল,
-‘পড়াশোনা কেমন চলছে?
-‘ভালো।
-‘বেশ।
গৌরব একটা গিফট বাক্স মিষ্টির দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল,
-‘তোমার জন্য ছোট্ট একটা উপহার এনেছি। তুমি নিলে আমার খুব ভালো লাগবে।
মিষ্টি সাত-পাঁচ না ভেবেই খুশিমনে গিফটের বাক্সটা হাতে নিল৷ কে জানতো, এই গিফট নেওয়াই ওর জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
আশ্চর্যজনক ভাবে এই দৃশ্যও তনু দেখে ফেলল। কতবড় সাহস মিষ্টি ওই ছেলেটার সাথে একা একা হেসে হেসে গল্প করছে। ভাবনাটা মনে আসতেই মাথায় দাউ দাউ করে আগুন ধরে গেল। শরীরের রক্ত কণিকা টগবগ করে ফুটছে। তনুর বিয়ে করা বউ কেন পরপুরুষকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে বেহায়ার মতো হেসে হেসে গল্প করবে?
তনু অতিরিক্ত রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। মাথা দপদপ করছে। তনু মায়ের ঘরে গেল। শান্ত স্বরে বলল,
-‘মা মিষ্টিকে একটু ডেকে এনে দাও।
-‘কেন?
-‘দরকার আছে।
-‘তোর দরকার তুই মিষ্টির কাছে যা।
-‘মা প্লিজ..
-‘আচ্ছা যাচ্ছি।
-‘মা শোনো? আমি যে এসেছি। এই কথা ভুলেও মিষ্টিকে বলবে না।
তনুর মা চিন্তিত হয়ে বলল,
– কী হয়েছে, বলতো?
-‘কিছু হয়নি। তুমি যাও তো..

তনু নিজের ঘরের সবকটা জানালা বন্ধ করে ভারি পর্দা টেনে দিল। একটা পেইজ থেকে অনেকগুলো ড্রেস, জুয়েলারি, শাড়ি মিষ্টির জন্য অনলাইনে অর্ডার দিল। মিষ্টি গল্প, উপন্যাসের বই পড়তে খুব পছন্দ করে। কী মনে করে, মিষ্টির পছন্দের লেখকের বেশকিছু বইও অর্ডার দিল।

বিয়ের পরে জেঠীর হাত ধরে, দ্বিতীয়বারের মতো তনুদের বাড়িতে এলো মিষ্টি। বলল,
-‘কিছু বলবে জেঠী?
-‘জেঠী কী রে.. মা বল?
-‘লজ্জা লাগে।
-‘হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এবার যা তনুর ঘরে যা।
মিষ্টি অবাক হয়ে বলল,
-‘কেন?
-‘তনু এসেছে।
মিষ্টির মনের ভেতর একশো একটা রঙিন প্রজাপ্রতি উড়ে গেল। বুকের ভেতর তিরতির করে কাঁপছে৷ লজ্জা লাগছে খুব। ইশ..জেঠী আগে বললে, সেজেগুজে আসা যেত।
জেঠী বলল,
-‘এই মিষ্টি, কী এত ভাবছিস? যা..
-‘যাচ্ছি।

মিষ্টি হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো পরিপাটি করতে করতে তনুর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে নিচু কণ্ঠে বলল,
-‘আমায় ডেকেছিলেন?
মিষ্টির ঢঙের কথা শুনে তনুর শরীর জ্বলে গেল। মিষ্টি ঘরে এসে দাঁড়াতেই ঘরের ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিল তনু।
আচমকা মিষ্টির দুইহাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। মিষ্টি ভড়কে গেল। চোখদুটো এত বড় বড় হয়ে গেল। যেন আর একটু হলেই কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।
তনু মিষ্টির চোখে চোখ রেখে, চাপা কণ্ঠে বলল,
-‘আমার অগোচরে তাহলে এইসব হয়?
-‘কী..কী হয়েছে?
-‘তোর ওই ছেলেটার সাথে এত কিসের খাতির?
-‘কোন ছেলে?
-‘আমার মাথা বিগড়ে দিস না মিষ্টি। যার সাথে একটু আগে তোর ঘরে ফষ্টি-নষ্টি করছিলি। আবার দেখি তোকে গিফটও দিল। বাহ্…
-‘ছিঃ..
-‘এখন ছি..ছি..করছিস কেন? তুই আমার বিয়ে করা বউ হয়ে, পরপুরুষের সাথে ঢলাঢলি করবি। আর আমি মুখ বুঁজে মেনে নেব? তুই ভাবলি কীভাবে? আর এইসব কী জামা পরেছিস? শাঁখা-পলা ঢেকে রেখেছিস কেন? সিঁথিতে সিঁদুর পরিসনি কেন? কুমারী সাজার খুব শখ হয়েছে তোর তাই না?
মিষ্টির চোখে জল এসে গেল। অস্ফুট স্বরে বলল,
-‘চুপ করুন।
-‘এখন চুপ করব কেন? আমি তোকে আদর করতে গেলে তোর অস্বস্তি হয়। চুমু খেতে চাইলে তুই ভড়কে যাস। অথচ অপরিচিত একটা ছেলেকে তোর বেডরুম পর্যন্ত নিয়ে গেছিস। তোর লজ্জা করে না মিষ্টি?
-‘ওনি অনিকের মামাতো দাদা।
-‘সে যেই হোক। তোর তো আর মামাতো দাদা না।
মিষ্টি কান্না গিলে ফেলে বলল,
-‘ছাড়ুন। আমি বাড়ি যাব।
তনু মিষ্টিকে আর একটু শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরল। চোখে চোখ রেখে একগুঁয়ের মতো বলল,
-‘ছাড়ব না…
কথাটা বলেই চট করে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিল তনু। বিছানায় মিষ্টিকে শুইয়ে দিয়ে নিজের শরীরের ভরটুকু মিষ্টির উপরে ছেড়ে দিল। মিষ্টির পেটের ভেতর কী যেন কামড়ে ধরল। মস্তিষ্ক একটু একটু করে বিবশ অনুভূতিতে ছেয়ে গেল। তনু মিষ্টির কপালে কপাল ঠেকিয়ে গাঢ় কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
-‘তোকে আমার কাছে আটকে রাখার ঔষধ আমার কাছে আছে। এমন পাগল করব না তোকে আজ আমি। আমি ছাড়া অন্যকারো কথা তুই ভাবতেও পারবি না।
তনু মিষ্টির ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ালো। মিষ্টি নিঃশ্বাস বন্ধ করে তীব্র অনুভূতিটুকু গভীর ভাবে অনুভব করল। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা শব্দ হচ্ছে। চোখে জল, মনটা খুব অশান্ত। তনু মিষ্টির বুকে মুখ গুঁজে বিড়বিড় করে বলল,
-‘তুই আমাকে এত কষ্ট দিস কেন মিষ্টি? তোর পাশে অন্যকাউকে আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার.. আমার.. জাস্ট পাগল পাগল লাগে।

তনু মিষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে যেতে নিল। এই প্রথমবার নিজে থেকে তনুকে দুইহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল মিষ্টি। মরিয়া হয়ে বলল,
-‘আমি এখন আপনাকে কিছুতেই যেতে দেব না।
তনু মিষ্টির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘আমাকে সহ্য করতে পারবি তো?
-‘জানি না।
-‘ছাড় আমাকে।
-‘না।
-‘মিষ্টি জেদ করিস না।
মিষ্টি ঝরঝর করে কেঁদে দিল। ভেজা কণ্ঠে বলল,
-‘আমাকে গলা টিপে মেরে রেখে যান আপনি।
-‘তাই মারব তোকে আমি। আর কখনো ওই লোকটাকে নিজের বেডরুম পর্যন্ত নিয়ে যাবি?
-‘না।
-‘প্রমিস।
-‘প্রমিস।
-‘আমার হাত ছুঁয়ে বল?
মিষ্টি বাধ্য মেয়ের মতো তনুর হাতে হাত রেখে বলল,
-‘প্রমিস।
-‘এবার ছাড়।
মিষ্টি জেদি কণ্ঠে বলল,
-‘না।
-‘তোর পরীক্ষা হয়ে যাক। তারপর…
-‘না।
তনু শুকনো ঢোক চিপে বলল,
-‘মিষ্টি জেদ করিস না।
-‘আপনি আমাকে এত কষ্ট দেন কেন?
-‘আর কষ্ট দেব না।
-‘তাহলে আমাকে একটু আদর করেন।
-‘তুই খুব পেকে গেছিস মিষ্টি।
-‘বিয়ের পর মেয়েরা আর কাঁচা থাকে না।
-‘খুব জানিস দেখছি?
-‘হ্যাঁ জানি। আপনার কোনো সমস্যা?
তনু চোখ রাঙিয়ে কিছু বলতে গিয়েও হেসে ফেলল। মিষ্টি তনুর বুকে মুখ গুঁজে ওভাবেই পড়ে রইল।

কে যেন দরজায় কড়া নাড়ছে। মিষ্টির একটুও তনুকে ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। মানুষটা এই প্রথম নিজে থেকে জড়িয়ে ধরেছে মিষ্টিকে। মিষ্টিও তনুকে নিজের নারীসত্ত্বা উৎসর্গ করে দিতে চেয়েছিল। আর একটু হলেই তনুও মিষ্টিকে নিয়ে ভালোবাসার অথৈ সমুদ্রে ডুবে যেত। অসময়ে কে এভাবে দরজায় কড়া নাড়ছে। তনু মিষ্টির কাছ থেকে নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে গেল। মিষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাটের এককোণে ভদ্র মেয়ের মতো বসল। তনু দরজা খুলে চমকে উঠল। বিস্ময় চেপে বলল,
-‘তুমি..?

(চলবে)