#মিষ্টির_তনুদা
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১১
মিষ্টির কান ভেদ করে তনুর কথাটা মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই মিষ্টি কাঁচা ঘুম ভেঙে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।
তখনো মিষ্টির দুচোখ জলে ভেজা। তনুকে মিষ্টির সামনে বসে থাকতে দেখে, মিষ্টি হতভম্ব হয়ে গেল। বেশি অবাক লাগল রাত এখনো শেষ হয়নি দেখে।
মিষ্টি মনে করার চেষ্টা করল, তনুর সদ্য দেওয়া আদর গায়ে মেখে, ভালোবাসার নীল ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছিল মিষ্টি। তারপরই ওই কুৎসিত স্বপ্নটা দেখল। তনুদা একটা মেয়ের সাথে ইমুতে খারাপ কাজ করে। শুধু তাই না। তনুদা প্লে-বয়। স্বপ্নে ঘটনাটা এতটাই বাস্তব আর জীবন্ত লেগেছে। মিষ্টি সহ্য করতে পারেনি। হাউমাউ করে কেঁদেছে। মিষ্টি ও মিষ্টির পুরো পরিবার তো তনুকে খুব ভালো করেই চিনে। মানুষটা একটু স্টাইলিশ আছে বৈকি! তবে চরিত্র খারাপ না। তাহলে ওই কুৎসিত স্বপ্নটা কেন দেখল মিষ্টি? আজকাল মানুষটাকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবে মিষ্টি। মানুষটা সারাক্ষণ মিষ্টির মাথায় চেপে বসে থাকে। সেইজন্যই কী এমন কুৎসিত স্বপ্ন দেখল? মিষ্টি বুঝতে পারছে না। মিষ্টি সন্দিহান গলায় বলল,
“আপনার ফোনটা দেখি?”
তনু ফোনের লক খুলে মিষ্টির হাতে ফোনটা দিয়ে দিল। মিষ্টি কতক্ষণ ইমো, মেসেঞ্জার, গুগল সাইড ঘাটা-ঘাটি করেও সন্দেহজনক কিছুই পেল না। মিষ্টি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ফোনটা তনুর হাতে দিয়ে দিতেই তনু ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কৌতূহলী কণ্ঠে বলল,
“কী হয়েছে মিষ্টি?”
মিষ্টি তনুর বুকে মুখ লুকালো। বিড়বিড় করে বলল,
“স্বপ্নে দেখলাম আপনি মেয়েবাজ।”
তনু রেগে গেল। চাপা কণ্ঠে বলল,
“ছিঃ..তুই আমার সম্বন্ধে এত খারাপ খারাপ ধারণা মনে পুষছিস?”
উত্তরে মিষ্টি কিছুই বলল না। শুধু তনুকে দুইহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে রইল। তনু প্রচণ্ড অভিমানে বলল,
“ছাড় আমাকে। আমি সকাল হলেই ঢাকা চলে যাব। তোর স্বপ্নটা সত্যি করতে হবে তো।”
মিষ্টির হাতের বাঁধন আর একটু শক্ত হলো। তনুর বুকে নাক ঘষে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“এমন করছেন কেন?”
“তুই আমাকে দিন দিন পাগল বানিয়ে দিচ্ছিস মিষ্টি। এমন করলে আমি পরীক্ষায় ডাহা ফেল করব। আজকাল আমার কী যেন হয়েছে। পড়া-টরায় খুব একটা মন-টন বসে না। শুধু তোর কাছে থাকতে ইচ্ছে করে। তোকে মন ভরে আদর করতে ইচ্ছে করে।”
“আপনি শুধু আমার কাছেই থাকবেন। কখনো যদি আমার স্বপ্নটা ভুল করেও সত্যি হয়। আমি কিন্তু মানতে পারব না। আপনার চোখের সামনেই সুইসাইড করব আমি..
তনু মিষ্টির মুখটা শক্ত করে চেপে ধরল। চোখ রাঙিয়ে বলল,
” উল্টাপাল্টা কথা বললে, তোকে আমি গলা টিপেই মেরে ফেলব মিষ্টি।”
মিষ্টি তনুর কোলে চেপে বসল। দুইহাতে তনুর গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“শুধু মারতে চান কেন আমাকে? একটু আদর করতে পারেন না?”
“তুই বড্ড পেকে গেছিস মিষ্টি।”
“আর আপনি বুঝি কচি খোকা?”
“অনেক পাকামি করেছিস। এবার যা স্নান করে আয়।”
“আপনি?”
“একটু পরেই ভোরের আলো ফুটবে। আমি বাসায় চলে যাব।”
“কেন?”
“কেন আবার। আজ আমি ঢাকা যাব।”
“অসম্ভব। আজ আপনাকে কিছুতেই যেতে দেব না।”
“জেদ করিস না মিষ্টি।”
“বললাম তো আজ না।”
“চেঁচাচ্ছিস কেন? আস্তে কথা বল।”
“শুনুন?”
“বল?”
“কিছু না।”
তনু মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল,
“মন দিয়ে পড়াশোনা কর। পরীক্ষা শেষে তোকে কক্সবাজার ঘুরতে নিয়ে যাব।”
“আমার কোথাও যাওয়া লাগবে না। আমার শুধু আপনাকে চাই।”
মিষ্টির বোকা বোকা কথা শুনে তনু হেসে দিল। মিষ্টি কিন্তু ভুলেও তনুকে ছাড়ল না। তনু অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মিষ্টিকে রেখে বাসায় গেল। মিষ্টি মন খারাপ করে অনেকক্ষণ বসে রইল। তারপর ধীর পায়ে স্নান করতে গেল। মিষ্টির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঁচড়, কামড়ের লালচে দাগ। শরীরে জল লাগতেই জ্বলে গেল। মিষ্টি স্নান করে মাথায় গামছা পেঁচিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। তনুও জানালার পাশে দাঁড়িয়েছিল। হাতে কফির মগ। থেকে থেকে কফিতে চমৎকার করে চুমুক দিচ্ছে তনু। মিষ্টিকে দেখে তনুর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। মিষ্টি ব্যস্ত পায়ে ঘরে গিয়ে ফোনটা এনে তনুকে ফোন দিল। তনু ফোন রিসিভ করে বলল,
“আবার ফোন দিয়েছিস কেন?”
” আপনি তো গতকাল রাতে আমাকে কিছু গিফট করলেন না।”
“কেন, গোটা আমিটাকেই না তোকে দিয়ে দিলাম?”
মিষ্টি লজ্জা পেয়ে বলল,
“ধ্যুৎ..”
সকালে খেতে বসে মিষ্টি দেখল ; মা চিৎড়ি মাছ দিয়ে কচুর লতি রেঁধেছে। তনুর মা মানে মিষ্টির শাশুড়িমা এই খাবারটা খুব পছন্দ করে। তনুদের বাড়ি যাওয়ার একটা অজুহাত পেয়ে গেল মিষ্টি। বলল,
“মা একটু বাটিতে কচুর লতি বেড়ে দাও। জেঠীকে দিয়ে আসি। জেঠীর মুখে রুচি নেই। ভাত খেতে পারছে না।”
মিষ্টির মা তরকারি বাটিতে বেড়ে দিয়ে বলল,
“এত ঘন ঘন ও বাড়িতে একা একা যাস না।”
“একা একা গেলে কী হবে?”
“কী আর হবে। তনুর কাকিমারা তোকে নিয়ে সমালোচনা করবে।
“করলে করুকগে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
“কিন্তু আমার যায় আসে।
“ মা ওটা কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ি।
“তো কী বিয়ের সময় বড়মুখ করে তোর বাবা বলল, এখুনি তোকে তনুর হাতে তুলে দেবে না। তনুর চাকরি হলে তারপর ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে তোকে তুলে দেবে।
“ধ্যুৎ..ভাল্লাগে না।
মিষ্টি বিরক্ত হয়ে মায়ের সামনে থেকে উঠে গেল। ঘরে গিয়ে একটু টিপটপ করে সাজলো। তারপর খাবারের বাটিটা হাতে নিয়ে, তনুদের বাড়ি চলে গেল। একধাপ সিড়ি উঠতেই গৌরবের সাথে দেখা হলো। মিষ্টি পাশ কাটিয়ে যেতে লাগল। গৌরব ইচ্ছে করে মিষ্টির গা ঘেষে চলে গেল। মিষ্টি ভয় পেল খুব। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি। তনু দেখলে তো এই বজ্জাতটাকে থাপড় মেরে দিতো। না বাবাহ.. গৌরবের এই বাড়াবাড়ি আচরণ তনুকে বলার দরকার নেই। শেষে দেখা যাবে, মিষ্টিকেই ভুল বুঝবে তনু।
মিষ্টি খাবারের বাটিটা জেঠীর হাতে তুলে দিল। বলল,
“মা পাঠিয়েছে।”
“আবার এগুলো পাঠিয়েছে কেন?”
মিষ্টি মিথ্যে করে বলল,
“তুমি খেতে ভালোবাসো তাই।”
মিষ্টির শাশুড়িমা বলল,
“আমি একটু বাজারে যাচ্ছি। তনু ঘরেই আছে। যা..ওর সাথে দেখা করে আয়।”
মিষ্টি জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল,
” আচ্ছা।”
“আমার আসতে দেরি হবে। গেইটটা লাগিয়ে দিয়ে ঘরে যা মিষ্টি।”
মিষ্টির মনের ভেতর রঙিন প্রজাপ্রতি উড়ে গেল। এতবড় বাড়িতে এখন শুধু ও আর তনু থাকবে। ইশ, ভাবতেই লজ্জায় নুইয়ে গেল মিষ্টি। ঠোঁটের কোণে একটুখানি লাজুক হাসি ফুটে উঠল।
জেঠী চলে যেতেই মিষ্টি তনুর ঘরে চলে গেল। তনু খাটে বসে ল্যাপটপে গভীর মনোযোগ দিয়ে কী যেন করছিল। মিষ্টি আচমকা তনুর পেছনে গিয়ে গলায় ঝুলে পড়ল। তনু আগেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মিষ্টিকে দেখেছে। ওর মুখেও হাসি ফুটে উঠল। বলল,
“কি রে, এমন বাদরের মতো আমার গলায় ঝুলছিস কেন?”
“মোটেও আমি বাদরের মতো দেখতে না। মিষ্টি অভিমান করে বলল। তনু ল্যাপটপটা বন্ধ করে মিষ্টিকে কোলের মাঝে বসিয়ে দিল। মিষ্টির ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলল,
“মিষ্টি বুড়ি আবার রাগও করে?”
“ছাড়ুন। আমি বাড়ি যাব..
“কোথায় যাবি?”
“বাড়ি যাব।”
তনু মিষ্টির কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
“এখন না। পরে যাবি..
(চলবে)