মিষ্টির তনুদা পর্ব-১২

0
2

#মিষ্টির_তনুদা
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১২

তনু কথা বলতে বলতে উঠে গিয়ে জানালার ভারি পর্দা টেনে দিল। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর বিছানায় গড়িয়ে পরে, মিষ্টিকে জোর করে নিজের কাছে টেনে নিল। মিষ্টি প্রথমে কম্পিত কণ্ঠে না..না..করলেও একসময় তনুর অসহ্য ভালোবাসার ডাকে সারা দিল।
কয়েক দফা ভালোবাসাবাসির পর মিষ্টি তনুর মসৃণ বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে রইল। তনু মিষ্টির এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কখনোবা চুলগুলো একটু টেনে ধরে, মিষ্টির সুন্দর মুখটা খানিক উঁচুতে তুলে ধরে, মিষ্টির ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিচ্ছে। মিষ্টি মুখ তুলে আদুরে কণ্ঠে বলল,
“আপনি আজ যাবেন না প্লিজ।”
“থেকে কী করব?”
মিষ্টি নিভলো। কী বলবে মিষ্টি? যে আপনাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত ভালো লাগে না। সবকিছু অসহ্য, অর্থহীন মনে হয়। সারাক্ষণ আপনি আমার চোখের সামনে থাকলে, আমার খুব ভালো লাগে, শান্তি লাগে।
“বললি নাতো? থেকে কী করব?”
মিষ্টি মনে মনে বলল,
“আমাকে আদর করবেন।”
মিষ্টির কণ্ঠরোধ হলো। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারল না। তনু ঠোঁট টিপে হাসল। বলল,
“থাকতে পারি এক শর্তে?”
মুহূর্তেই মিষ্টির চোখদুটো চক চক করে উঠল। উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,
“কী শর্ত? বলুন প্লিজ?”
“তুই আজ সারারাত আমার ঘরে থাকবি।”
মিষ্টির মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাবা জানলে রাগ করবে। মা হয়ত থাকতেই দেবে না। যদি সত্যি সত্যিই থাকতে পারতো। তাহলে মিষ্টির থেকে বেশি খুশি আর কেউ হতো না। তনু মিষ্টির নাকে নাক ঘষে বলল,
“কী হলো?”
মিষ্টি মন খারাপ করে বলল,
“মা থাকতে দেবে না।”
“কেন? আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে।”
“আপনি বরং আমাদের বাড়িতে চলুন।”
“অসম্ভব। আমি আজ কিছুতেই যাব না। গতকাল রাতে আমি তোর বাড়িতে থেকেছি। আজ রাতে তুই আমার বাড়িতে থাকবি। ব্যস..”
“কেন শুধু শুধু জেদ করছেন?”
“আমাকে ছাড় মিষ্টি। আমি উঠব।”
“না প্লিজ।”
“না মানে কী? তুই আমার কথা রাখবি না। আমি কেন তোর কথা রাখব?”
মিষ্টি তনুকে আঁকড়ে ধরল। বিড়বিড় করে বলল,
“আজ আপনাকে কিছুতেই যেতে দেব না আমি।”
“তুই আমাকে বাঁধা দেওয়ার কে?”
মিষ্টির চোখে জল এসে গেল। কান্না চেপে নিচু কণ্ঠে বলল,
“আমি আপনার বউ।”
তনু হাসল। মিষ্টির চোখের দিকে তাকিয়ে গাঢ় কণ্ঠে বলল,
“তাহলে আজ রাতে তুই আমার সাথে থাকবি?”
মিষ্টি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কান্না পাচ্ছে খুব। রিতুর মা মানে তনুর কাকিমা একটু ঠোঁটকাটা টাইপের মানুষ। আজ তো মুখের উপর টিপ্পনী কেটে বলেই দিল, শুনলাম তনু নাকি আজকাল রাতে তোর ঘরে থাকছে? দেখিস, অনুষ্ঠানের আগে আবার পেট-টেট বাঁধিয়ে নিস না। অপমানে মিষ্টির মুখটা থমথমে হয়ে গেলেও তনুর কাকিমাকে মুখের উপরে মিষ্টি কিছুই বলতে পারেনি। তবে নীরবে কেঁদেছে খুব। এই কথাটা মাকেও বলেনি মিষ্টি। মা জানলে, নিশ্চিত ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতো। ওনাদের সহজে ঝগড়া লাগে না। তবে কোনো কারণে যদি ঝগড়া লাগে সহজে রিতুর সাথে মিশতে দেয় না, কথা বলতে দেয় না। ওদের দুজনকেই আটকে রাখে। কমপক্ষে সাতদিন তাদের দণ্ড থাকে। তারপর আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। কী দরকার সামান্য বিষয় নিয়ে দুজনের মাঝে ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়ার।
“কী এত ভাবছিস মিষ্টি?”
“কিছু না।”
“থাকবি?”
মিষ্টি বুকে পাথর চেপে বলল,
“না।”
তনু আচমকা মিষ্টিকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার অপর পাশে ফেলে দিয়ে, উঠে গেল। সোফা থেকে গামছাটা টেনে নিয়ে, স্নান করতে বাথরুমে ঢুকল। বাথরুমের দরজা এত জোরে শব্দ করে বন্ধ করল তনু। মিষ্টি ভয় পেয়ে কেঁপে উঠল। বুক ধড়ফড় করছে খুব। এই মানুষটা এত জেদি কেন? মিষ্টি এই বাড়িতে না থাকুক। ওনি কী মিষ্টিদের বাড়িতে গিয়ে
থাকতে পারতো না? মিষ্টিদের বাড়িতে না থাকুক। ওরা দুজন সারারাত ছাদে বসে জোৎস্না বিলাস করতো, গল্প করতে পারত।

তনু স্নান করে ঘরে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা মুছতে লাগল। বলল,
“অশুদ্ধ শরীরে এখানে বসে আছিস কেন মিষ্টি?”
মিষ্টি দাঁতে ঠোঁট চেপে ধরে গাট হয়ে বসেই রইল। তনু আলমারি থেকে প্যান্ট-শার্ট বের করে একে একে পরতে লাগল। বলল,
“কি রে তোর না বাড়ি যাওয়ার খুব তাড়া? এখনো বসে আছিস কেন?”
মিষ্টি কান্না ভেজা চোখ তুলে তাকাল। বড় বিষণ্ণ কণ্ঠে আক্ষেপ করে বলল,
“আপনি সবসময় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন কেন?”
তনু বিদ্রুপ করে বলল,
“তো কী করব? আদর করব? একবার করেছি। মন ভরেনি?”
“ছিঃ..আমি কী তাই বলেছি?”
“তোকে বলতে হবে কেন? আমি বুঝি না।”
“বুঝলে আমাকে সবসময় আঘাত দিয়ে কথা বলতে পারতেন না।”
মিষ্টি আস্তেধীরে উঠে দাঁড়াল। দরজার দিকে পা বাড়াতেই তনু পেছন থেকে মিষ্টির একহাত টেনে ধরল। মিষ্টিকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে খুব যত্ন করে চোখের জল মুছিয়ে দিল। তারপর মিষ্টির গালদুটো আঁজলায় তুলে ধরে মিষ্টির কান্না ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে গাঢ় কণ্ঠে বলল,
“রাগ করেছিস?”
মিষ্টি কান্না ভেজা কণ্ঠে বলল,
“ছাড়ুন। আমি বাড়ি যাব।”
“চল আমরা ঘুরে আসি।”
“আমি কোথাও যাব না।”
“জেদ করিস না মিষ্টি। পরে কিন্তু আফসোস করবি।”
মিষ্টি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। তনু একটা সাদা রঙের গোলাপি পাড়ের খুব সুন্দর জামদানি শাড়ি মিষ্টির হাতে তুলে দিয়ে বলল,
“শাড়িটা পরে চট করে রেডি হয়ে নে।”
“ব্লাউজ, পেটিকোট বাড়ি থেকে আনতে হবে।”
“দাঁড়া রিতুকে দিয়ে আনিয়ে দিচ্ছি।”

মিষ্টি স্নান করে, ফুলহাতা ব্লাউজ, পেটিকোট পরে বাথরুমে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুতেই শাড়িটা সুন্দর করে পরতে পারল না। তনু অধৈর্য হয়ে গেল। তাড়া দিয়ে বলল,
“শাড়ি পরতে এতক্ষণ সময় লাগে নাকি? বাথরুম থেকে বের হ। দেখি কীভাবে শাড়ি পরেছিস?”
মিষ্টি কুণ্ঠিত বোধ করল। আস্তে করে বলল,
“জেঠী কী বাসায় এসেছে?”
“হ্যাঁ।”
“একটু পাঠিয়ে দিন না।”
তনু রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল। জেঠী এসে খুব যত্ন করে মিষ্টিকে শাড়ি পরিয়ে দিল। মিষ্টিকে সাদা শাড়িতে এত সুন্দর লাগছে। তনুর দু’চোখ জুড়িয়ে গেল। তনু কসমেটিক বের করে দিয়ে বলল,
“একটু সাজগোছ কর?”
মিষ্টি মুখে খুব সামান্য মেকাপ করে, চোখে কাজল টেনে নিল। তারপর ঠোঁটে খুব যত্ন করে লিপস্টিক পরে, ভেজা চুলগুলো একটা ক্লিপ দিয়ে আটকে নিল। সিঁথিতে এক চিমটি সিঁদুর পরে নিল। মিষ্টির সিল্কি চুলে সিঁদুরটুকু ঢাকা পরে গেল। কপালের মাঝখানে ছোট্ট একটা লাল টিপ পরল।
এতটুকু সাজেই মিষ্টিকে দেখতে অপূর্ব লাগছে। তনু ডানহাতে ঘড়ি পরে, একটা মিনি সাইজের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নিল। মাকে বলল,
“মিষ্টিকে নিয়ে বেড়াতে গেলাম মা। আগামীকাল বাসায় ফিরব। তুমি একটু কাকিমাকে বলে দিও।”
“আচ্ছা সাবধানে যেও।”

মিষ্টি তনুর কাঁধ জড়িয়ে ধরে বাইকের পেছনে উঠে বসতেই তনু বাইক স্টার্ট দিল। মিষ্টি আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
“এত সুন্দর শাড়িটা কোথায় পাইলেন?”
“রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি।”
“সত্যিই?”
“বোকা। অনলাইনে অর্ডার দিয়েছি।”
“কার জন্য?”
“আমার গার্লফ্রেন্ডের জন্য।”
“তাহলে আমাকে দিলেন কেন?”
“আর একটা কথা বললে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেব। চুপচাপ বসে থাক। অযথা কথা বলে, আমার মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে।”

(চলবে)