#মিষ্টির_তনুদা
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১৭
খুব ছোটবেলা থেকে মাকে সবকথা বলে দেওয়ার অভ্যাস মিষ্টির। আজও তার অন্যথা হলো না। তনুর সাথে কথপোকথনের সব কথাই মাকে বলে দিল মিষ্টি। সব শুনে অন্নপূর্ণা রেগে গেলেন। মিষ্টিকে বলল,
“তোর কী বোধ-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে মিষ্টি? ছয়মাস সংসার করবি মানে কী? এই ছয়মাস তুই কী তনুর ভোগের পন্য হয়ে থাকবি?”
মিষ্টি লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। অস্ফুট স্বরে বলল,
“মা..”
“শোন মিষ্টি। তুই আর ভুলেও ওই বাড়িতে পা রাখবি না। ভেবেছিলাম তোর বাবাকে বিষয়টা জানাব না। কিন্তু এখন উপায় নেই। তারও জানা দরকার। তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুর ছেলের কুকীর্তির কথা।”
মিষ্টি বিড়বিড় করে বলল,
“ওনি কিন্তু এখন ভালো হয়ে গেছে মা।”
“ভালো না ছাই। নাটক করছে বুঝলি? তোকে বোকা বানাচ্ছে।”
মিষ্টি মাকে অনুরোধ করে বলল,
“মা আমি এতকিছু বুঝি না। তুমি প্লিজ বাবাকে এই বিষয়ে কিছুই বলবে না।”
“কেন বলব না, শুনি? নিজের চোখে তোর ভবিষ্যত নষ্ট হতে দেখব?”
মিষ্টি তনুর হয়ে সাফাই গাইল। বলল,
“ওনি এতোটাও খারাপ না মা। তাছাড়া বিয়ের আগে যা খুশি করুক। এখন খারাপ কিছু করে নাকি, বিপথে যায় নাকি তোমরা শুধু এটাই দেখবে।”
“এতই যখন ভালো। ছয়মাস সংসার করার কথা বলেছে কেন, তোকে?”
“আমাকে বুঝ দিতে বলেছে মা। আমি জানি তো ওনি আমাকে নিয়েই সংসার করবে। ওই কথাটা ওনার মনের কথা না। মুখের কথা।”
“তনুর সম্পর্কে খুব জানিস দেখছি?”
মিষ্টি আর কিছু বলল না। ওর খুব ক্লান্ত লাগছে। তাছাড়া সামনের সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা শুরু। তনুর চত্বরে পড়াশোনা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। পড়তে হবে। মিষ্টি গুটিগুটি পায়ে ঘরে চলে গেল। কতক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকল। কিছুতেই পড়ায় মন বসছে না। জোর করে কতক্ষণ পড়ল। তবে পড়া মুখস্থ হলো না। না.. এভাবে পড়া হবে না। মিষ্টি একটা বই হাতে নিয়ে উঠে গেল। ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। তনু জানালার ফাঁক গলে মিষ্টিকে দেখে ফোন হাতে তুলে নিল। মিষ্টির ফোনে রিং বাজতেই মিষ্টি ফোন রিসিভ করে অসল ভঙ্গিতে ফোনটা কানে তুলে ধরল। তনু আদুরে কণ্ঠে বলল,
“কী করো বউ?”
মিষ্টির বুকের ভেতর কাঁপন ধরে গেল। মানুষটা কখনো এত ব্যাকুল হয়ে মিষ্টিকে ‘বউ’ বলে ডাকেনি। এই প্রথম। মিষ্টির অসম্ভব ভালো লাগল। মিষ্টি তনুর বর্তমান ঘটনাটার জন্য যতই রাগ অভিমান করুক না কেন! মিষ্টির মন জানে, সমস্ত নারী সত্ত্বা জানে, এই মানুষটাকে পাগলের মতো ভালোবাসে মিষ্টি। ভালোবাসার মানুষের উপরে বেশিক্ষণ অভিমান করে থাকা যায় না। শত চেষ্টা করেও দূরে সরে থাকা যায় না। মানুষটার পরিবর্তন মিষ্টির খুব ভালো লাগছে। মিষ্টি মনে মনে বলল,
“আমার আপনাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না।”
মুখে বলল,
“এই তো পড়তে বসেছি।”
“পড়। মন দিয়ে পড়। আমি কী আসব? পড়া দেখিয়ে দিতে।”
“না।”
তনু সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
“পরীক্ষায় পাস করবি তো মিষ্টি?”
“ফেল করলে আপনার কোনো সমস্যা?”
“একশোবার সমস্যা। আমার ‘বউ’ ফেল করলে লোকে কী বলবে?”
“লোকের কথা খুব মানেন দেখি?”
“লোক, সমাজ নিয়েই আমাদের চলতে হয় রে মিষ্টি।”
“খারাপ কাজ করার সময় মনে ছিল না?” বলব না বলব না করেও চট করে মিষ্টির মুখ দিয়ে কথাটা বেরিয়ে গেল। উত্তরে তনু কিছু বলল না। শুধু বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মিষ্টি কিছু সময় চুপ থেকে উদাস হয়ে বলল,
“সরি।”
“সরি বলছিস কেন?”
“এমনিই।”
তনু নিঃশব্দে হাসল। বলল,
“তোর পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই তোকে আমার কাছে নিয়ে আসব। দ্বিতীয়বার তোকে আর কখনো অভিযোগ করার সুযোগ দেব না।”
“আপনি কী সত্যি সত্যিই ভালো হয়ে গেছেন? নাকি নাটক করছেন?” মিষ্টি কৌতূহল চেপে রাখতে পারল না। তনু হো হো করে হেসে দিল। সে-কী দম ফাটা হাসি। হাসতে হাসতে মানুষটার চোখের কোণে জল জমল। মিষ্টি বিবশ হয়ে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মিষ্টির চোখে চোখ পড়তেই তনু হাসি থামিয়ে ইশারায় বলল,
“কী?”
মিষ্টি মাথা নেড়ে কিছু না বোঝাল। তনু বলল,
“আমার জীবন আমাকে ভীষণ ভাবে ধোঁকা দিচ্ছে মিষ্টি। এত ছোট্ট জীবন নিয়ে তোর সাথে নাটক করার সময় কোথায়? শেষের কথাগুলো কী করুণ শোনাল।
মিষ্টি চমকে উঠল। কম্পিত কণ্ঠে বলল,
“এই কথা কেন বললেন?”
“এমনি রে..”
মিষ্টির মন মানল না। কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“আপনার কী হয়েছে, বলুন তো? আমার কাছে কী লুকাচ্ছেন?”
“কিছু না বউ। তুই আমার কাছে চলে আয় তো। ইদানীং কী যেন অসুখ হয়েছে। তোকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না। সারাক্ষণ শুধু তোকে দেখতে ইচ্ছে করে৷ আদর করতে ইচ্ছে করে, ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। এটা বুঝি বিয়ের ইফেক্ট তাই না মিষ্টি?”
“কথা ঘুরাচ্ছেন কেন? কী হয়েছে বলুন না?”
“কিছু না রে মিষ্টি। কী হবে আমার?”
“হঠাৎ আপনি এত পাল্টে গেলেন কেন? আগে তো আমাকে দুচোখ পেতে দেখতেই পারতেন না।”
“সময়ের সাথে সাথে অপ্রিয় মানুষটাও ভীষণ প্রিয় হয়ে যায় রে মিষ্টি। মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল।”
“আপনি ভালো আছেন তো?”
তনু মনে মনে বলল,
“আমি ভালো নেই রে মিষ্টি। একদম ভালো নেই।”
মুখে বলল,
“হুঁ।”
মিষ্টির ঘুম আসছে না। তনুর কথা ভেবে ভেবে মাথা ব্যথা হয়ে গেল। মানুষটা কী কিছু লুকাচ্ছে মিষ্টির কাছ থেকে? নাকি মিষ্টিই বেশি বেশি ভাবছে? শখের পুরুষ হাজারটা খারাপ কাজে লিপ্ত থাকলেও কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে আলিঙ্গন করলে মনের ভেতর অভিমান, অভিযোগ বেশিক্ষণ পুষে রাখা যায় না। ক্ষমা করে তাকে দ্বিতীয়বার ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে ইচ্ছে করে। মনের উপরে জোর খাটে না। মিষ্টি মন থেকে তনুকে ক্ষমা করে দিয়ে, দ্বিতীয়বার সুযোগ দিল। যা কিছু খারাপ অতীতে হয়েছে। অতীত টেনে এনে মিষ্টি কেন বর্তমানটা নষ্ট করবে। সৃষ্টিকর্তার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে মিষ্টির৷ মানুষ মানুষকে ঠকালেও সৃষ্টিকর্তা কোনোদিনও ঠকাবে না। নিশ্চিয়ই মিষ্টির জন্যও সামনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
মিষ্টি ফোনটা হাতে তুলে নিল। তনুকে ফোন দিয়ে বলল,
“এখুনি ছাদে চলে আসুন?”
তনু ঘড়ি দেখল। বলল,
“সবে তো তিনটা বাজে। এত রাতে গেলে চোর বলে বেঁধে রাখবে তো। ভোর পাঁচটার পরে যাব।”
“এখুনি আসতে বলেছি না আপনাকে?”
“এখনিই আসতে হবে?”
“হ্যাঁ।”
“শুধু শুধু জেদ করছিস কেন মিষ্টি?”
মিষ্টি মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।”
“ওই রাতেও না দেখলি।”
মিষ্টি দাঁতে জিভ কাটল। ইশ, মানুষটা শুনে ফেলেছে। জেদ করে বলল,
“আপনি আসুন তো?”
“যেতেই হবে?”
“হ্যাঁ।”
“তোর বাসার গেইট কী খোলা?”
“না।”
“তাহলে কীভাবে যাব?”
“আমি চাবি রাস্তায় ফেলে দেব। আপনি চাবিটা নিয়ে তালা খুলে সরাসরি ছাদে চলে আসবেন।”
“আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।”
“কেন?”
“মাথা ব্যথা করছে।”
“আমি মাথা টিপে দেব তনুদা।”
“আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা হয়ে গেলেও তুই কী আমাকে দাদা বলেই ডাকবি?”
মিষ্টি খুব লজ্জা পেল। কথায় কথায় ভুলে ডেকে ফেলেছে। তনু বলল,
“প্লিজ তুই আমাকে বাচ্চাদের সামনে তনুদা বলে ডাকিস না মিষ্টি। শেষে দেখা যাবে, বাচ্চারা আমাকে বাবা না ডেকে মামা ডাকছে। নিজের ছেলে-মেয়ের মুখ থেকে মামা ডাক শুনতে আমার নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না।”
“ধ্যুৎ..তখন থেকে কী সব বলছেন।”
সে’রাতে তনু মিষ্টির কথা রাখল না। মিষ্টিদের ছাদে আসব বলেও এলো না। মিষ্টির ফোনও আর ধরল না তনু। ঘুটঘুটে অন্ধকারে একাকী বাকি রাতটুকু ছাদে বসে কাঁদতে কাঁদতে কাটিয়ে দিল মিষ্টি। অতিরিক্ত কাঁদতে কাঁদতে চোখ-মুখ ফুলে লালচে হয়ে গেছে। মানুষটা এতটা নিষ্ঠুর কেন? তবে কী সে সত্যি সত্যিই মিষ্টিকে ভালেবাসে না? মায়ের কথাই ঠিক হলো তাহলে..আর কিছু ভাবতে পারে না মিষ্টি। ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। ভোরের আলো ফুটতেই মিষ্টি ছাদ থেকে নেমে নিজের ঘরে চলে গেল। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে বেলা এগারোটা পর্যন্ত পরে পরে ঘুমাল। এগারোটার দিকে স্নান করে খেতে বসতেই অন্নপূর্ণা বলল,
“আজ আবার কী হয়েছে তোর? তনু এসেছিল। ঘন্টা দুই বসে থেকে চলে গেছে।”
“তুমি আবার উল্টাপাল্টা কিছু বলোনি তো মা?”
“না।”
মিষ্টি অভিমানী কণ্ঠে বলল,
“আসুকগে..আমি আর ওনার সাথে দেখাও করব না। কথাও বলব না।”
“কেন?”
“এমনিই। আমার ইচ্ছে করছে না তাই।”
মিষ্টির বাবা একটা দরকারে ঢাকা গিয়েছিল। চারদিন পর ঢাকা থেকে ফিরে এসে স্নান করে, খেয়ে নিল। তারপর কতক্ষণ স্ত্রী’র সাথে তনুর ব্যাপারে আলোচনা করল। মিষ্টির বাবা যে তনুর কু’কীর্তির কথা জানতে পেরেছে। অন্নপূর্ণা মনে মনে খুব খুশি হলো। যাক ভগবান তাহলে মুখ তুলে চেয়েছেন। অন্নপূর্ণাও যে তনুর ব্যাপারে জানে। তা আর আগ বাড়িয়ে মিষ্টির বাবাকে বলল না। ভদ্রলোক অনুতাপের আগুনে পুড়ে গেলেন। তনু যতই বন্ধুর ছেলে হোক। আদরের ছোটমেয়ের সাথে তনুর বিয়ে দেবার আগে অন্তত একবার তনুর সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া উচিত ছিল। তার বড্ড ভুল হয়ে গেছে। তনুর বাবা-মাকেও তিনি ছাড়বে না। ছেলের এত অধঃপতন হয়েছে। অথচ বাবা-মা হয়ে এতদিন কাউকেই কিছু বলেনি। আগে না বলুক। অন্তত ওদের বিয়ের আগে বলতে পারতো। ভাগ্যিস বাসে তনুর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল। ছেলেটা আগ বাড়িয়ে তনুর ব্যাপারে সবকিছু বলল। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে বাকিটা জানতে পেরেছে। যা হওয়ার সে-তো হয়েই গেছে। তবে খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি। তাছাড়া মিষ্টির বিয়েটা বলতে গেলে ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে। বাইরের খুব বেশি মানুষ জানে না। তিনি জেনেশুনে কিছুতেই ওই চরিত্রহীন, লম্পটের সংসারে মেয়েকে পাঠাবে না। ওরা যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে মানহানির কেস দিয়ে দেবে। মিষ্টিকে তনুর সাথে ছাড়াছাড়ি করিয়ে আবারও বিয়ে দিবেন তিনি। এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা ওরা কীভাবে করতে পারল? ভদ্রলোক মিষ্টির ঘরে গেলেন। মিষ্টি আধশোয়া হয়ো একমনে পড়ছে। তিনি নিঃশব্দে মিষ্টির পাশে বসলেন। বাবাকে দেখে মিষ্টির মুখে হাসি ফুটে উঠল। আবারও পড়ায় মনোযোগ দিল মিষ্টি। তিনি মেয়ের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে গেলেন। আহারে..তার আদরের মেয়েটা যখন তনুর সম্পর্কে জানতে পারবে। তখন না জানি কত কষ্ট পাবে। তিনি মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখলেন। বলল,
“মন দিয়ে পড় মা। কোনো চিন্তা নাই। আমরা সবসময় তোর পাশে আছি।”
মিষ্টির মনটা ভালো হয়ে গেল। বাবাকে সবসময় একটু ভয় করে চলে মিষ্টি। তবে মিষ্টির বাবা একটু রাগী হলেও মানুষটা অনেক ভালো।
দেখতে দেখতে মিষ্টির সবগুলো পরীক্ষা ভালো ভাবে হয়ে গেল। মিষ্টির পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলল। কেউ তনুর ব্যাপারে কোনো কথা বলল না। তনু নিয়মিত মিষ্টিকে বাইকের পেছনে বসিয়ে পরীক্ষার হলে নিয়ে যেত, নিয়ে আসতো। তবে সেদিনের পর থেকে অন্নপূর্ণা মিষ্টিকে দিয়ে বলিয়েছে, তনু যেন এই বাড়িতে এসে রাতে আর না থাকে। কিছুদিন পর তো মিষ্টিকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাবে। তনুও চক্ষুলজ্জার জন্য আর রাতে আসতো না। তবে পরীক্ষার হলে নিয়ম করে মিষ্টিকে নিয়ে যেত তনু।
মিষ্টির পরীক্ষার শেষের দিন তুচ্ছ কারণে মিষ্টির সাথে তনুর বিশাল ঝগড়া লেগে গেল। মিষ্টির দৃষ্টিতে যদিও কারণটা তুচ্ছ। তবে তনু ব্যাপারটা অনেক জটিল করে ফেলল। মিষ্টিকে একটা ছেলে পরীক্ষার শুরু থেকেই নোটিশ করতো। শেষের দিন ঘটা করে ফুল-টুল দিয়ে মিষ্টিকে প্রপোজ করে। তনু এই দৃশ্য দেখে ছেলেটাকে কিছুই বলেনি। সমস্ত রাগ ঝেড়েছে মিষ্টির উপরে। মিষ্টি কেন এত সেজেগুজে পরীক্ষা দিতে যায়? কেন হাতের শাঁখা ঢেকে রাখে? কপালের সিঁদুরটুকুও চুল দিয়ে ইচ্ছে করে ঢেকে রাখে। এইজন্যই তো ছেলেগুলো পরীক্ষা ফেলে মেয়েদের প্রপোজ করার সাহস পায়। মিষ্টির রাগ। ছেলেটা যেহেতু মিষ্টিকে প্রপোজ করেছে। তনু ছেলেটাকে দুটো কথা শুনিয়ে দিত। সবার সামনে মিষ্টিকে নিজের বউ বলে পরিচয় করিয়ে দিত। তা-না করে উল্টে মিষ্টিকেই দোষারোপ করছে। দুজনের কথা কাটাকাটি চলতেই থাকল। থামল বিশাল রূপ নিয়ে। ঝগড়ার পর থেকে মিষ্টি আর তনুর সাথে কথা বলে না, দেখা করে না, ফোন ধরে না। ব্যালকনির দরজাও সবসময় বন্ধ করে রাখে। তনু শত চেষ্টা করেও মিষ্টির সাথে আজ তিনদিন যাবৎ কথা বলতে পারে না। মাকেও মিষ্টিকে ডেকে আনতে পাঠিয়েছে। মিষ্টি আসেনি। তনু আর দেরি করতে চায় না। খুব শীঘ্রই মিষ্টিকে অনুষ্ঠান করে এই বাড়িতে নিয়ে আসবে। তনুর মা তৃণা রানী এই বিষয়ে মিষ্টির বাবার সাথে কথা বলতে এলে, মিষ্টির বাবার সাথে তনুর মায়ের এক কথায় দুই কথায় বড় আকারে তর্ক লেগে গেল। ভদ্রলোক যখন তনুর ব্যাপারে একের পর এক তৃণা রানীকে বলল। সবশুনে লজ্জায়, ভয়ে, নুয়ে গেল তৃণা রানী। হাত জোর করে বলল,
“বিশ্বাস করেন দাদা। আমার তনু আগে খারাপ ছেলেপেলের সাথে মিশে বিপথে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন ও ভালো হয়ে গেছে।”
“কখনো তো বলেননি বউদি৷ তনুর এই অধঃপতনের কথা।”
তৃণা রানী কী বলবে ভেবে পেল না। ভদ্রলোক বলল,
“যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি জেনেশুনে কিছুতেই আপনার ছেলের কাছে আমার মেয়ে দেব না।”
“ওদের কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে দাদা।”
“হোক। আপনারা আমার আপনজন হয়ে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করবেন। আমি ভাবতেও পারিনি। লোকে ঠিকই বলে, শক্র ঘরেই থাকে। শুধু সময় হলে পেছন থেকে ছুরি মারে।”
“আপনি এইভাবে ওদের বিয়েটা ভেঙে দিতে পারেন না দাদা।”
“কিসের ভরসায় মেয়ে দেব আমি?”
“আমি কথা দিচ্ছি দাদা। মিষ্টিকে আমি আমার ঘরের রানী করে রাখব।”
“শুধু আপনি রাখলে তো হবে না বউদি। যার সাথে আমার মেয়ে সারাজীবন সংসার করবে তাকেও তো সারাজীবন আমার মেয়েকে রাজরানী করে রাখতে হবে।”
“রাখবে দাদা।”
“চরিত্রহীন কখনো ভালো হয় শুনেছেন?”
“আমার তনু সত্যি সত্যিই ভালো হয়ে গেছে।”
“আমি আর বিশ্বাস করি না। আপনার ছেলের ব্যাপারে যা যা শুনে এসেছি। ও যদি আমার ছেলে হতো না। ওকে আমি জীবন্ত গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতাম।”
“এভাবে বলিয়েন না দাদা। আমার একটামাত্র ছেলে।”
“আপনি এখন যেতে পারেন বউদি।”
“মিষ্টি কোথায়? আমি মিষ্টির সাথে কথা বলব।”
“ওর কোনো কথা নেই। আমার কথাই শেষ কথা।”
তনুর মা মিষ্টির মাকে বলল,
“দিদি মিষ্টি কোথায়?”
ভদ্রলোক বলল,
“আপনি এখন যান তো বউদি।”
অন্নপূর্ণা শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে ধরে চলে গেল।
তনু মিষ্টিকে ফোন দিয়ে বলল,
“তোকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম মিষ্টি। তুইও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলি?”
মিষ্টি ভীতু কণ্ঠে বলল,
“কী করেছি আমি?”
“আমার ব্যাপারে তোর বাবাকে কেন বলেছিস তুই?”
“আমি কিছুই বলিনি।”
“তাহলে তোর বাবা জানল কীভাবে?”
“কী জেনেছে?”
“সব জেনে গেছে। তোর বাবা নাকি আমাদের ছাড়াছাড়ি করিয়ে দিতে চায়। আমি কিন্তু তোকে কিছুতেই ছাড়ব না মিষ্টি।”
শেষের কথাটা দৃঢ় ও জেদি কণ্ঠে বলল তনু।
(চলবে)