মায়াতীর সংসার পর্ব-০৭

0
4

#মায়াবতীর সংসার
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ৭

মায়াকে খুঁজতে গিয়ে লক্ষ্য করল পাশেই একটা কোণায় মায়া বমি করছে। বিপ্রতীপ দৌঁড়ে মায়ার কাছে গেল। মায়া বিপ্রতীপকে দেখে নিজেকে সামলে নিল। কিন্তু শারিরীক দুর্বলতার জন্য সে নিজেকে সামলাতে পারছে না। মাথা ঘুরে পড়ল সে। মাথা ঘুরার সাথে সাথে বিপ্রতীপ তাকে ধরে নিল। এরপর গাড়িতে তুলে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে গেল। হাসপাতালে ডক্টর দেখে জানাল প্রেসার লো হয়ে যাওয়ার জন্য এমন হয়েছে। রোগীকে স্যালাইন দিতে হবে। বিপ্রতীপ ডাক্তারের কথায় মায়াকে স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করল। মায়া প্রায় ঘন্টাখানেক পর একটু স্বাভাবিক হলো। সে চোখ খুলে দেখল বিপ্রতীপ বেডের পাশেই ফ্লোরে বসে আছে। মায়ার চোখ খুলতেই বিপ্রতীপ হুড়মুড়িয়ে উঠে বলল

“শরীর কেমন লাগছে আপনার? আমি তো আপনার বমি আর মাথা ঘুরে যাওয়ায় বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। ভাবলাম ধরলাম না ছুইলাম না কী করে এ অকাজ হলো!”

মায়া কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল

“কিসের অকাজ?”

বিপ্রতীপ লজ্জা মুখে হেসে উত্তর দিল

“আরে ভেবেছিলাম আপনি মা হতে চলেছেন।”

বিপ্রতীপের কথা শুনে আজকে মায়া রাগ হয়নি। বিরক্তও দেখায়নি। একটু হেসে জবাব দিল

“আপনি কী সারাজীবন এমন মজা করেন?”

এরপর মায়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে আাবার বলল

“আমি বমি করতেছিলাম ঘৃনায়। এই ভেবে যে এ মানুষটাকে আমি ভালোবেসেছিলাম। তার জন্য আমার জীবনের ছয়টা বছর নষ্ট করেছি। নিজেকে একাকীত্বে ভুগিয়েছি। নিজেকে কষ্ট দিয়েছি। আমার উচিত ছিল সময় মতো মুভ অন করে অন্য কাউকে বেছে নেওয়া৷ এত নোংরা একটা গুটি ছিলাম মিহানের জীবনে ভাবতেই ঘৃনা লাগছে। তাই ঘৃনায় বমি করছিলাম আমি। এরপর টেনশনে হয়তো মাথা ঘুরে গেছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনি সময় মতো আমার পাশে ছিলেন। আপনি এরকম না করলে আমি হয়তো এ নোংরা কারণটা জানতেই পারতাম না। নিজেকে অনেক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেও আমি পারছিলাম না। আমার জীবনের একটা নোংরা অতীত এ মিহান। আমি ওর জন্য নিজের জীবনে অনেক কিছু সহ্য করেছি। আমার একমাত্র বাবায় ছিল জীবনে। হুট করে একদিন বাবাও চলে গেলেন। আমার চিন্তায় বাবাও অনেক শুকিয়ে গিয়েছিলেন। শরীর অনেক খারাপ করলো। এরপর আল্লাহ তাকে নিয়ে গেল। দুনিয়ায় আছে বলতে ফুফুরা। তারাও তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমাকে বিয়ের কথা বলতে বলতে তারাও এখন ক্লান্ত। এখন আর কেউ কিছু বলে না। কেউ রাগে কল দেয় না। আর আমি এতকিছু করেছিলাম মিহানের মতো নোংরা মানুষের জন্য। ভাবতেই আমার নিজের উপর ঘৃনা লাগছে৷ খুব অন্যায় করেছি। শরীর সুস্থ রাখার দায়িত্ব আমার। কিন্তু এই অতীতের জন্য আমি সেটাও পারিনি। চিন্তায় চিন্তায় মাইগ্রেন বাড়িয়েছি। আবার মনের রঙগুলোকে মেরে ফেলেছি। তখনের আমি এখনের আমিতে বিরাট ফারাক।”

মায়া চুপ হয়ে গেল। বিপ্রতীপ মায়ার মাথায় হাত রেখে বলল

“কষ্ট কেন আসে বলতে পারেন? কষ্ট আসেই সুখের মূল্য বুঝাতে। কষ্টের পরেই সুখটা আসে। আমাদের নিজেদের ভুলেই আমরা কষ্ট পাই। কিন্তু আমরা অহেতুক সৃষ্টিকর্তাকে দোষারূপ করি। সব ঠিক হয়ে যাবে। যা হয় যতটুকু হয় ভালোর জন্য। শুধু আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। ধৈর্য ধরুন সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমাকে একটু বের হতে হবে।”

মায়া একটা নিঃশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল

“কোথায় যাবেন?”

বিপ্রতীপ বাম হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে হেসে উত্তর দিল

“টিকা দিতে। নাহয় তো কুকুরে বাচ্চার বাবা হয়ে যাব। কী যে খারাপ আপনার বাসার কুকুরটা। তবে যতদূর জানি কুকুরটা ছেলে কুকুর। তারপরও কী আমি প্র্যাগনেন্ট হয়ে যাব? নাকি না হওয়ার সম্ভবনা আছে। না হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকলে টিকা দিব না। টিকা দিতে ভয় লাগে। সুই দেখলেই আত্মা শুকিয়ে যায়। বাধ্য হয়ে সাহস জুগিয়ে টিকা দিতে হচ্ছে। কারণ আমি কু*ত্তার বাচ্চার বাবা হতে চাই না।”

বিপ্রতীপের কথা শুনে মায়া খিলখিল করে হেসে দিল। হাসতে হাসতে উত্তর দিল

“আপনি কী সবসময় এভাবে হেয়ালি করে কথা বলেন? সিরিয়াস হতে আপনার ভালো লাগে না। যান টিকা দিয়ে আসুন নাহয় সত্যি সত্যি গুড নিউজ পেয়ে যাব একদিন। দেখা যাবে একসাথে একটা না ১০ টা কুত্তা*র বাবা হয়ে গেছেন আপনি৷ নিউজের হেডলাইনেও আপনার নাম লেখা থাকবে।?”

বিপ্রতীপ হেসেই উত্তর দিল

“সিরিয়াস হয়ে তো লাভ নেই। শান্তিতে থাকলে হলে ডেম কেয়ার ভাব নিয়ে থাকতে হবে। যাইহোক আপনি বিশ্রাম করেন। আমি কু*ত্তার ইনজেকশন টা দিয়ে আসি। ১০ টা বাচ্চার বাবা হওয়ার ইচ্ছা আমার নাই।”

মায়া মাথা নাড়ল। বিপ্রতীপ চলে গেল ইনজেকশন দিতে। বিপ্রতীপ চলে যেতেই মায়ার ফোনে একটা কল আসলো। মায়া কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে অফিসার বোরহান বলে উঠল

“আপনার নাম সায়রা জান্নাত মায়া?”

মায়া উত্তর দিল

“জি। কিন্তু আপনি কে?”

অফিসার বোরহান উত্তর দিল

“আপনার নামে একটা অভিযোগ এসেছে। আপনি একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাকে টাকা দেওয়ার জন্য ব্লেকমেইল করেছেন। এবং টাকা দিচ্ছিল না বলে আপনি তাকে তুলে নিয়ে গুন্ডা দিয়ে পিটিয়েছেন। আপনি এখনই থানায় আসুন।”

কথাটা শুনে মায়ার রাগটা বেড়ে গেল। সে নিজেকে সংযত করে উত্তর দিল

“আমি এ মুহুর্তে অসুস্থ। আমি একটু বেটার ফিল করলে আসব। যে ব্যক্তি আপনার কাছে অভিযোগ করেছে। তিনি উল্টো আমাকে ব্লেকমেইল করেছে। এবং তিনিই আমাকে আমার স্কুলের সামনে হ্যারেজ করেছে। আমার কাছে সকল প্রমাণ আছে। আমি একটু বেটার ফিল করলে এসে প্রমাণ দিয়ে যাব। এবং আমার নামে এমন নোংরা মন্তব্য করায় উনার নামেও মানহানির মামলা করে যাব।”

অফিসার বোরহান মায়াকে কড়া ভাষায় বলল

“একজন সরকারি কর্মকর্তা কিসের জন্য আপনাকে ব্লেকমেইল করবে? যাইহোক বাহানা রেখে দ্রূত আসুন। নাহয় ওয়ারেন্ট বের করব আপনার নামে।”

মায়া কিছুটা রাগান্বিত গলায় জবাব দিল

“আমি ল এর স্টুডেন্ট। আমাকে ল শেখাতে আসবেন না। কী থেকে কী করা যায় আমার একটু হলেও জানা আছে। আপনার কোনো রাইট নেই অভিযুক্তের অভিযোগ প্রমাণের আগে এরকম ব্যবহার করা। আমার দিক থেকে আমি হাসপাতালে আছি। আপনার যদি একান্ত স্টেটমেন্টের প্রয়োজন হয় কাউকে হাসপাতালে পাঠিয়ে স্ট্যাটম্যান নিয়ে যান। শুধু শুধু বাজে মন্তব্য করার প্রয়োজন পড়ছে না।”

কথাগুলো বলেই মায়া কল কেটে দিল। সে চাচ্ছে না বিপ্রতীপকে এখনই এ বিষয়ে জানাতে। কারণ বিপ্রতীপ সবে টিকা দিতে গিয়েছে। তার টিকাটা জরুরি। তাই সে বিপ্রতীপের জন্য অপেক্ষা করছে।

ঘন্টাখানেক পর বিপ্রতীপ আসলো। হাতে খাবার নিয়ে। খাবারের বক্সটা খুলে একটা চামচ সাথে দিয়ে খাবারটা এগিয়ে মায়াকে বলল

“কিছু খেয়ে নিন। বেটার ফিল করলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দিবে। আপনাকে বাসায় দিয়ে আসব। দেরি হলে অনেক রাত হয়ে যাবে। তখন বাধ্য হয়ে হাসপাতালে থাকতে হবে।”

মায়া বক্সটা হাতে নিয়ে উত্তর দিল

“মিহান আমার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ কল করেছিল। আমাকে থানায় যেতে বলেছে। আমি বুঝতেছি না কী করব। ভেবেছিলাম সে থেমে যাবে। তবে আমার বিশ্বাস ভুল ছিল। কুকুরের লেজ সহজে সোজা হয় না এটাই তার প্রমাণ।”

বিপ্রতীপ মায়ার কথা শুনার পর বেশ ঠান্ডাভাবে উত্তর দিল

“ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি আগে খেয়ে নিন।।আমরা থানায় যাব। এরপর সেক্সি শিলাকে সাইজ করব। ভেবেছিলাম মাফ করে দিব। এখন আর সেটা হবে না। সেক্সি শিলাকে অকেজো করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। ওর চাকুরিতেও ঝামেলা করব আবার ওর জীবনেও। সেক্সি শিলা বুঝবে এ স্কুল মাস্টারের পাওয়ার কত। এখনও থানায় গিয়ে নিশ্চয় ক্যাডার গিরি করেছে। এ সেক্সি শিলাকে মেক্সি শিলা বানানোর আগ পর্যন্ত শান্তি হচ্ছে না। আপনি খান তো দ্রূত।”

মায়া বিপ্রতীপের কথাগুলো বেশ ইনজয় করলেও একটু ভয় লাগছে তার। কারণ মায়া কখনও থানায় যায়নি। থানা জিনিসটাকেই সে ভয় পায়। চুর পুলিশের আড্ডাখানা সে সাথে মিথ্যার কয়েকখানা। মিহানের জন্য আজকে তাকে থানাতেও যেতে হচ্ছে ভাবলেই তার অস্বস্থি হচ্ছে। অস্বস্থি নিয়ে অনেকটা জোর করেই সে খাবার টা খেল। খাবার টা খাওয়ার পর শরীটাতে একটু বল পেতে লাগল। সে বিপ্রতীপকে বলল আমরা চাইলে এখন যেতে পারি। আমি পুলিশকে কল দিয়ে বলতেছি আমরা আসতেছি।

বিপ্রতীপ মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে বলল

“হ্যা অবশ্যই। পুলিশকে বলবেন সেক্সি শিলা যেন থাকে। নাহয় একা গিয়ে বকবক করে মজা পাব না।”

মায়া ফোনটা হাতে নিয়ে অফিসার বোরহানকে কল দিয়ে জানাল সে আসতেছে। আর মিহানকেও যেন সেখানে রাখা হয়।

এরপর মায়া আর বিপ্রতীপ গেল থানায়। সেখানে মায়া আর বিপ্রতীপ বসলো একপাশে অন্যপাশে বসলো মিহান। আর মাঝখানে অফিসার বোরহান বসলো বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু সেখানে ঘটে গেল কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

চলবে।