মায়াতীর সংসার পর্ব-০৮

0
4

#মায়াবতীর সংসার
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ৮

অফিসার বোরহান মায়া আর বিপ্রতীপের কোনো কথা না শুনেই বলতে লাগলেন

“টাকার জন্য ব্ল্যাকমেইল করেছেন তাই তো? এটা অস্বীকার করলে হবে না। আপনারা যতই প্রমাণ দেন সব প্রমাণ এখানে বৃথা। এখন আপনাদের হয় সব স্বীকার করে উনার কাছে মাফ চাইতে হবে নাহয় একদম জেলে ঢুকিয়ে দিব৷ মিহান এ দেশের সম্পদ। প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকর্তা। তাকে আপনারা হ্যারেজ করতে পারেন না। এটা দন্ডনীয় অপরাধ।”

মায়া অফিসার বোরহানের কথার পৃষ্ঠে কথা বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু অফিসার বোরহান কথা বলার কোনো সুযোগ দিচ্ছিল না। তিনি চাচ্ছিলেন না মায়া কোনো প্রমাণ পেশ করুক। এক রকম জোর জবরদস্তি করে মায়াকে দিয়ে সব স্বীকারোক্তি নিয়ে মিহানকেই জিতিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। বিপ্রতীপ বিষয়টি বুঝতে পারলেও মায়া প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারে নি। যখন সে বুঝতে পারে তখন কথার পৃষ্ঠে মায়া অফিসার বোরহানকে বলল

“আমাকে বলার সুযোগ তো দিবেন। একপক্ষের বয়ান নিয়ে তো আপনি বিষয়টি সমাধান করতে পারবেন না। আপনি কী চাচ্ছেন সাধারণ একটা অভিযোগ মামলা পর্যন্ত গড়াক? এতে কিন্তু আপনারেই ব্যর্থতা প্রকাশ পাবে। এবার যদি আমি মামলা করি আপনার বিরুদ্ধেও করব। আপনার সকল কিছুই ফোনে বেকর্ড করা হয়েছে এতক্ষণ। ”

অফিসার বোরহান একটু ভয় পেয়ে গেলেন। সে মায়ার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে বললেন

“আপনি এখানে বসে আমার সাথে বেয়াদবি করছেন? আমার নামে মিথ্যা মালার হুমকি দিচ্ছেন? এখন আমার কাছ থেকেও টাকা খাওয়ার ধান্দা করেছেন তাই না? আপনাদের মতো বাজারের মেয়েদের আমার ভালো করে চেনা। টাকার জন্য বিছানায় পর্যন্ত চলে যাবেন। পেয়েছেন একজন বিসিএস ক্যাডার। ভেবেছিলেন ফাঁসিয়ে টাকা নিবেন। সেটা তো পারলেন না এখন উল্টো আমাকে হুমকি দিচ্ছেন? আর সাথে কাকে নিয়ে আসছেন? আপনাদের গ্যাং এ কতজন আছে ভালো করে স্বীকার করুন। নাহয় মহিলা কনস্টেবলকে দিয়ে এমন মার দিব সব গড়গড় করে বের হয়ে যাবে।”

বিপ্রতীপের মাথায় আগুন জ্বলতে লাগল। সে নিজেকে তবুও সামলে নিল। হালকা গলায় অফিসার বোরহানকে বলল

“কিছু মনে না করলে আপনি যদি একটু খালি রুমটায় আসতেন খুব ভালো হত। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমি চাচ্ছি না এগুলো সবার সামনে বলি। আপনার অভিযোগ অবশ্যই সত্যি। এ মেয়েটি সত্যিই ভালো না। একদম গায়ে পড়া মেয়ে। আমার সাথে কী হয়েছে চলুন আপনাকে বলি। তবে এখানে বলব না
। ফাঁকা রুমটায় চলুন বলি।”

অফিসার বোরহান রাগে বলে উঠলেন

“যা বলার এখানে বল।”

বিপ্রতীপ অফিসার বোরহানের কলার চেপে ধরে বলল

“তুই কী যাবি নাকি এখানে বসে থাকবি? হাড় গোড় একটাও আস্ত থাকবে না। না জেনে কাকে বাজারের মেয়ে বলছিস?”

অফিসার বোরহান রাগে আগুন হয়ে গেলেন। সে থানার অন্য পুলিশদের ডাকতে ডাকতে বললেন

“আপনারা এখনই এখানে আসেন। এ ছেলেটিকে ধরে লকাবে ভরেন। কত বড়ো সাহস আমার কলারে হাত রেখেছে। এ হাত আমি কেটে দিব।”

অফিসার বোরহানের চিৎকারে সবাই দরজার সামনে আসলেও ভেতরে প্রবেশ করছে না। বিপ্রতীপকে দেখে একদম চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অফিসার বোরহান তাদের দাঁড়ানো থাকা দেখে রেগে বললেন

“আপনারা যদি না আসেন আপনাদের চাকুরি থেকে আমি বরখাস্ত করব। আপনাদের বিরুদ্ধে আমি অ্যাকশন নিব। কাকে ভয় পাচ্ছেন? এ দুই টাকার মাস্টারকে? রাস্তার পাতি নেতাকে? চাকুরি বাঁচাতে চাইলে এখনই একে ধরে লকাবে নিন । পুলিশ হয়ে একে ভয় পাচ্ছেন? এ কে যে সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছেন?”

বিপ্রতীপ অফিসার বোরহানের কলারটা টেনে মুচরিয়ে ধরে বলল

“তোর চাকুরি থাকে কি’না আগে দেখ। ঢুকার আগেই সবাইকে আমার পরিচয়টা দিয়েই ঢুকেছি। শুধু তোকে দেইনি। কারণ তোর গতিবিধি দেখতে চেয়েছিলাম। টাকা খেয়ে থানায় এনে মেয়েদের হ্যারেজ করার ফল তোকে পেতে হবে। এমন মার দিব হাফপ্যান্ট খুলে দৌঁড়াবি।”

অফিসার বোরহান বিপ্রতীপকে রাগে গজগজ করে বললেন

“তুই যত বড়ো মাফিয়ায় হ। আমার সাথে পারবি না। তোকে আমি ছাড়ব না। আমার কলার ছাড় বলছি।”

অফিসার বোরহানের কথা শুনে বিপ্রতীপ টেবিলের উপর থাকা ডান্ডাটা নিয়ে উনার নিতম্ব বরাবর কয়েকটা ডান্ডা মেরে বলল

“পাপ করতে করতে বাপকে ভুলে গিয়েছিস। আমি কে তোকে তোর অফিসের কনস্টেবল বিপ্লব জানিয়ে দিবে। এরপর থেকে তুই কী করে চাকুরি করিস দেখে নিব। ”

এরমধ্যেই কনস্টেবল বিপ্লব আসলো৷ অফিসার বোরহানের উদ্দেশ্য বলল

“বিপ্রতীপ স্যার গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। যে স্কুলে তিনি আছেন সে স্কুলের আড়ালে একটা শিশু পাচারের বড়ো গ্যাং আছে আর সেটাকে ধরতেই তিনি শিক্ষক হিসেবে সে স্কুলে জয়েন করেছেন। কারণ গত চার বছরে এ স্কুল থেকে ১৫৬ টি শিশু নিখোঁজ হয়েছে। তাই বিশেষ অপারেশনের জন্য উনি নিজ ইচ্ছায় এখানে এসেছেন। সেই শিশুদের মধ্যে উনার ভাগ্নী রুমাইশাও নিঁখোজ। তাই স্যার নিজে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।”

বিপ্রতীপের এমন পরিচয় শুনে অফিসার বোরহান হা হয়ে গেল। সাথে সাথে সুর পাল্টে বিপ্রতীপের পায়ে ধরে বলল

“আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার। আমি বুঝতে পারিনি। এই যে মিহান আমাকে ভুল বুঝিয়েছে। আমি সেটাই সঠিক মনে করেছি। আমি এখনই এ মিহানের বিরুদ্ধে স্টেপ নিচ্ছি।”

মিহান চুপসে গেল। মায়া কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। যেই ছেলেটির ব্যবহার হেয়ালিপনায় ভরা ছিল সে কীভাবে এত বড়ো একটা পদে আছে সেটাই সে ভাবছে। আগের বিপ্রতীপ আর এখনের বিপ্রতীপের মধ্যে যেন বিশাল ফারাক। অফিসার বোরহানের কথা শুনে বিপ্রতীপ বলে উঠল

“তোকে আর কোনো স্টেপ নিতে হবে না। আপাতত যতদিন অপারেশন সাকসেস নাহয় তোকে বিশেষ কারাগারে রাখা হবে। কারণ এ বার্তা কোনোভাবে কারও কানে পৌঁছাক আমি চাই না। তোর যে স্বভাব দেখেছি টাকা পেলে তুই মানুষের গু খাবি। তাই যতদিন পর্যন্ত শিশুপাচার গ্যাংটা ধরতে না পারব ততদিন পর্যন্ত কারাগারে থেকে কয়েদীদের দেখাশুনা কর।”

মিহান পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বের হতে নিল। বিপ্রতীপ মিহানকে ধরে বলল

“সেক্সি শিলা কই যাস? তোকে বলেছিলাম ভালো হয়ে যা। হলি না তো? এবার দেখ কী কী করি। তোর চাকুরি থাকে কি’না দেখ। বিসিএস দিয়েছিস কী নোংরামি করতে? তোর নোংরামি আমি বের করতেছি। ”

বিপ্রতীপ কনস্টেবল বিপ্লবকে বলল

“বিপ্লব কঠিন একটা অপারেশনে আসছি আমি। কোনো কারণে চাচ্ছি না বিষয়টা জানাজানি হোক। আমি একদম অপারেশনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। এ সময় সবকিছু নষ্ট হোক আমি চাই না। মিস্টার মিহানকেও আপাতত আটক করে রাখুন। সে সাথে মায়ার সাথে অভদ্র আচরণ, পরোক্ষভাবে রেইপ করার প্রচেষ্টা মামলা দেওয়া হোক। আর আমি সিভিল সার্জন অফিসে কথা বলে মিস্টার মিহানের বাকি ব্যবস্থা করব। মিহান সাহেব কোথায় থাকবে কাক,পক্ষীও যেন টের না পায়। কারণ বাইরের মানুষের মধ্যে উনিই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি বিপদজনক এবং আমাদের পরিকল্পনা জানে। আশাকরি দক্ষতার সাথে কাজটি করবেন।”

কনস্টেবল বিপ্লব জোর গলায় বলল

“অবশ্যই স্যার। আমি এস আই আকবরের সাথে কথা বলে বিষয়টা নিয়ে এগুচ্ছি। আপনি নিশ্চিন্তায় থাকুন”

বিপ্রতীপ মিহানের কাছে গিয়ে একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে বলল

“মিহান জানেমন আমার। তোমার জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে। তোমার বিছানায় এবার অনেক ছাড়পোকা তোমার সঙ্গী হয়ে থাকবে। তোমার মেশিনের যত চুলকানি আছে ছাড়পোকারা মিটিয়ে দিব। যেদিন ছাড়া পাবে সেদিন আমি একটা মলম গিফট করব। সেক্সি শিলা থেকে চুলকানি শিলাতে পরিণত হওয়া পর্যন্ত আমার তর সইছে না।”

মিহান বুঝতে পারল সে কঠিন জালে ফেঁসে গেছে। সে মায়ার পায়ের কাছে এসে মায়ার পা টা ধরে বলল

“মায়া আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি। আমি কখনও এমন করব না। তোমার সাথে যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে। এজন্য তুমি আমাকে অন্য শাস্তি দাও। এখানে আটকে রেখো না। আমার মেয়েটা বাসায় একা। ওকে দেখার মতো কেউ নেই। ওর মা দেশের বাইরে। আমার মেয়ের জন্য হলেও আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

মিহানের কথা শুনে মায়ার একবিন্দু কষ্টও হলো না। সে মিহানকে একটা লাথি দিয়ে পা ছাড়িয়ে বলল

“যতদিন এ অপারেশন চলবে আর তুমি যতদিন লকাবে থাকবে এবং তোমার স্ত্রী যতদিন দেশের বাইরে থাকবে। ততদিন তোমার মেয়েকে আমি দেখব। আপাতত আমি চাইলেও এ ফাঁদ থেকে তুমি বের হতে পারবে না। আমার জন্য কুয়া খুঁড়ে নিজেই সেখানে পড়েছো। এখানে আমার কিছু করার নেই।”

কথাগুলো শেষ করে বিপ্রতীপ আর মায়া বের হয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে তারা রাস্তার পাশে এসে দাঁড়াল। মায়া একটু হতাশ গলায় বলল

“আমি আপনাকে এভাবে আবিষ্কার করব চিন্তাও করতে পারিনি। আমি বিষয়টি কেন জানি না মানতে পারছি না। আমি যেমন বিপ্রতীপকে দেখেছিলাম সে বিপ্রতীপ ঠিক তার উল্টো। আমি বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারছি না। খুব অস্থির লাগছে আমার।”

মায়া আরও কিছু বলতে যাবে ঠিক এমন সময় একটি বাইক এসে মায়াকে ধাক্কা দিয়ে জোর গতিতে চলে গেল। মায়া রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল। মাথাটা রাস্তায় লেগে ফেটে রক্ত বের হতে লাগল।

….
চলবে।