মায়াতীর সংসার পর্ব-১২

0
3

#মায়াবতীর সংসার
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১২

বিপ্রতীপের চড় খেয়ে বাকিরা হা করে তাকিয়ে রইল। বাকিরা কিছু না বুঝতে পারলেও চিন্ময় বিপ্রতীপের ইশারা বেশ ভালোই বুঝতে পারলো। বিপ্রতীপ ইচ্ছা করেই চাচ্ছে একটা হট্টগোল করতে। কারণ সে ও সবাইকে অবাক করে বিপ্রতীপের গালে কষিয়ে চড় দিয়ে দিল পাল্টা। বিপ্রতীপ আর চিন্ময় বেশ হুলুস্থুল বাঁধিয়ে ঝগড়া করতে লাগল। ঝগড়ার এক পর্যায়ে চিন্ময় বিপ্রতীপের হাত থেকে খাবারটা টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে বলল,

“আমি যে খাবার খেতে পারব না সেটা কাউকে খেতে দিব না। কত বড়ো স্পর্ধা আমাকে চড় মারা। আমাকে কী মনে করেছিস? তুই মারতে পারবি আমি পারব না? তোর হাত আছে আমার হাত নেই? তোকে আমি শেষ করেই দিব।”

বিপ্রতীপও রাগে গজ গজ করে বলতে লাগল

“আমি তোর সিনিয়র সম্মান দিয়ে কথা বল। নাহয় কানের নীচে আরও দুখান মারব। তোর হাত আমি ভেঙে দিব। আমাকে শেষ করতে গেলে তুই নিজেই শেষ হয়ে যাবি। ”

সাকিব, দিতি, প্রিয়ম আর মায়া কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছে না। তাদের কাছে এদের আচরণ বেশ অস্বাভাবিক লাগছে। তারা সবাই বিপ্রতীপের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। বিপ্রতীপ মায়াকে ইশারা দিল পেছন দিকে সরতে। পেছনে একটি লোক দাঁড়ানো তার কাছে যেতে। বিপ্রতীপের ইশারায় মায়া পিছিয়ে গেল। এবার মায়ার সবকিছুই বোধগম্য হলো। মায়া বুঝতে পারল এটা পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। মায়ার মতো বাকিরাও বিষয়টা অনুধাবন করতে পারল। এদিকে বিপ্রতীপ আর চিন্ময় মারামারি বাঁধিয়ে দিল। পেছনে দাঁড়িয়ে আছে লুওজাং নামের একজন আদিবাসী। মায়া উনার কাছে গেল। মায়াকে দেখে লোকটি জিজ্ঞেস করল

” ঐখানে কী হচ্ছে? কোনো সমস্যা? কারা এভাবে ঝগড়া করছে? আর কী নিয়ে ঝগড়াটা হচ্ছে?”

মায়া ভয় ভয় গলায় জবাব দিল

“আমার বন্ধু ওরা। লাফাং খাওয়া নিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছে। আপনি যদি একটু সাহায্য করতেন। কেউ ওদের থামাতে পারছে না। সবাই মিলে চেষ্টা করেও ব্যর্থ।”

মায়ার সাথে এবার প্রিয়মও যোগ দিল। সেও লুওজংকে বললো

“আপনি অবশ্যই এটার সমাধান করতে পারবেন। এতটুকু হেল্প করেন। নাহয় এখানে যেভাবে ঝগড়া করছে রক্তারক্তি হয়ে যাবে। আপনি এখানকার লোক দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আপনার কথা ওরা মানতে বাধ্য।”

লুওজং তাদের কথায় সেখানে গেল। সেখানে গিয়ে বিপ্রতীপকে বলল

“ঝগড়া থামান আপনারা। এভাবে আমাদের এলাকায় এসে ঝগড়া কেন করছেন? সমস্যা কী আপনাদের? এখানেই ঝগড়া বাদ দিন। নাহয় পরিণতি খারাপ হয়ে যাবে।”

লুওজং এর এ কথা শুনে টিমের ১৪ জন বিপ্রতীপকে ঘিরে ধরে। তবে প্রকৃতপক্ষে তারা ঘিরে ধরে লুওজং কে। এরপর তারা লুওজং কে অজ্ঞান করে দেয়। অজ্ঞান হওয়ার পর বিপ্রতীপ চিন্ময়কে বলে উঠে

“তোর জন্য লোকটার এ হাল হলো। এখনই হাসপাতালে নিতে হবে। দ্রূত হাসপাতালে নিয়ে চল। নাহয় এখানকার লোক আমাদের মেরে ফেলবে। যে করেই হোক লোকটিকে বাঁচাতে হবে।”

এরপর তারা সবাই লুওজং কে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলল। এতে করে সেখানকার কারও সন্দেহ হলো না। তারা লুওজং কে গাড়িতে তুলে বেঁধে ফেলল। মূলত লুওজং ছিল সেই কিডন্যাপার গ্যাং এর একজন। এরপর সাকিবকে লুওজং এর দায়িত্ব দিয়ে বিপ্রতীপ বলল

“আপনি উনাকে চোখে চোখে রাখেন। যতটা পারবেন সকল কথা নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার গ্রূপকে লুওজং এর দায়িত্ব দেওয়া হলো।”

এরপর বাকি গ্রূপকে উদ্দেশ্য করে বলল

“আমি প্রথম সে টিলাতে যাব যেখানে ১৬ জন বাচ্চা আছে। সে টিলাতে গিয়ে আমি লুওজং এর পরিচয়ে ঢুকব৷ বলব আমাকে লুওজং পাঠিয়েছে তার হয়ে কাজ করার জন্য। লুওজং একটু অসুস্থ। এই বলে তাদের সাথে মিশে যাব৷ আমি মিশে গিয়েই সবাইকে অজ্ঞান করে ফেলব। এরপর আমি সিগন্যাল দিলে সবাই ভেতরে প্রবেশ করে সবগুলো বডি আস্তে আস্তে গাড়িতে তুলবেন। এবং বাচ্চাগুলোকেও ধীরে ধীরে গাড়িতে তুলতে হবে। এ কাজে একদম ভুল করা যাবে না। ভুল করলেই বিপদ। কারণ ঐ টিলার আশেপাশে আদিবাসীদের নিবাস। তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এ কাজে জড়িত। কোনোভাবে এটা প্রকাশ পেলে পুরো আদিবাসীদের দল আমাদের বিরুদ্ধে চলে যাবে। এতে আমাদের বিপদ বাড়বে। প্রাণহানিও ঘটবে। সুতরাং তিল পরিমাণও ভুল করা যাবে না। মায়া তোমার দায়িত্ব হলো বাচ্চাদের বের করে দিলে গাড়িতে তুলা।”

মায়া মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। এরপর প্রিয়ম, চিন্ময়ের গ্রূপ, বিপ্রতীপ আর মায়া টিলার কাছে গেল। সবাই টিলার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মিশে গেল। একটা ট্রাক এনে রাখা হলো। ট্রাকটাতে কিছু মাল বুঝাই করে রাখা হলো। যাতে করে সবাই মনে করে এ ট্রাকে মাল পরিবহণ হচ্ছে। মায়া আর প্রিয়মের গ্রূপ ট্রাকটার আশেপাশে রইল। চিন্ময় আর তার গ্রূপ চলে গেল টিলার পেছন দিক বরাবর। আর বিপ্রতীপ সরাসরি টিলাতে ঢুকে গেল। বিপ্রতীপ ঢুকতেই কিডন্যাপার লিয়াকত তাকে বাঁধা দিল। লিয়াকত এখানে প্রহরীর কাজ করছে। বয়স বেশি না ৩৫-৪০ বছর। মোটা গোফ সমেত তিনি। বেশ কঠোর গলায় বিপ্রতীপকে জিজ্ঞেস করল

“কে তুই? এখানে কি চাস? কেন এসেছিস? কে পাঠিয়েছে তোকে?”

বিপ্রতীপ একটু আমতা আমতা করে বলল

“আমাকে লুওজং পাঠিয়েছে। আমাকে মারবেন না প্লিজ। আমি কিছু জানি না। তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমাকে বলল আমি যেন আপনাদের কাছে এসে উনার নাম বলি। তাহলে আপনারা আমাকে বাঁধা দিবেন না। আরও বলেছে কিছু প্রোডাক্ট ডেলিভারি করা লাগবে সেগুলো যেন করি৷ এমনিতে আমি গাজা পাচার করি। এখন যদি সেটা করা লাগে বলুন করে দিচ্ছি। হাতটা ভীষণ খালি। কিছু টাকা পেলে একটু লাল পানি খাব।”

লিয়াকত সাহেব বিপ্রতীপকে অভয় দিয়ে বলল

“আরে কিছুই করব না। প্রথমে পরিচয় দিলেই হত। এত ভীতু লোককে লুওজং কী করে মাল ডেলিভারির জন্য পাঠাল বুঝলাম না। মানুষ পাচার করার অভিজ্ঞতা আছে?”

বিপ্রতীপ মাথা ঝাঁকিয়ে লিয়াকত সাহেবকে বলল

“মানুষ অজ্ঞান করার অভিযোগ আছে। এরপর সাথে সাথে একটা ঔষধ লিয়াকত সাহেবের মুখে দিয়ে দিল। ফলস্বরূপ লিয়াকত সাহেব সাথে সাথে তলিয়ে পড়ল। বিপ্রতীপ লিয়াকত সাহেব অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হালকা চেঁচিয়ে বলল

” এখানে কে আছেন? এদিকে আসেন। আপনাদের একজন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।”

বিপ্রতীপের কথা শুনে বাকিরা এসে লিয়াকত সাহেবকে তুলতে লাগল। এদের মধ্যে একজন বিপ্রতীপকে জিজ্ঞেস করল

“তুই কে?”

বিপ্রতীপ লিয়াকত সাহেবকে যেভাবে উত্তর দিয়েছে ঠিক সেভাবেই ঐ লোককেও উত্তর দিল। বিপ্রতীপের কথা শুনে লোকটি তাকে বলল

“ভেতরে বাচ্চাগুলো আছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বাচ্চাগুলোকে বাইরে নিয়ে যাবে। বাইরে হলুদ গাড়ি দাঁড়ানো থাকবে সেটাই তুলবে।”

বিপ্রতীপ মাথা নেড়ে ভেতরে প্রবেশ করল। এদিকে বিপ্রতীপের কানে মাগরিবের আযান ধেয়ে আসছে। বাইরে বিপ্রতীপ এক বিশেষ গ্যাস ছেড়ে এসেছে। যার দরুণ সেখানেই সবাই অজ্ঞান হয়ে গেছে। এবার শুধু একজন মানুষকে অজ্ঞান করতে পারলেই কাজটি সফলভাবে শেষ হবে। ভেতরে বাচ্চাদের নিয়ে বসে আছে তারিফ। তারিফ বিপ্রতীপকে দেখেই বলল

“তোমাকে কে পাঠিয়েছে? আগে তো দেখিনি?”

বিপ্রতীপ মাথা নুইয়ে উত্তর দিল

“আমাকে লুওজং পাঠিয়েছে। আমি উনার বিশ্বস্ত। বলেছে বাচ্চাগুলোকে বাইরে নিয়ে গাড়িতে তুলতে। বাকি কাজ আমাকেই করতে বলেছে। পুরো ডেলিভারি হলে তারপর উনাকে জানাতে বলেছে। বেচারা হুট করেই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই আমাকে আসতে বললো। চিন্তা করবেন না আমি ঠিকমতো কাজ করে দিব।”

তারিফ বিপ্রতীপের কথায় আস্থা পেল। সে বিপ্রতীপকে ইশারা করে বলল

“আমি ঘরেই আছি তুমি বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে যাও। সাবধান একটুও যেন এদিক সেদিক না হয়। একটু এদিক সেদিক হলে কল্লা কেটে দেব। আর বাইরে এতক্ষণ কিসের আওয়াজ হচ্ছিল?”

বিপ্রতীপ প্রশ্নের জবাবে বলল

“বাইরে একজন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। তাই তাকে ধরে সবাই মাথায় পানি ঢালছে। এজন্য একটু আওয়াজ হচ্ছিল। এখন ঠিক আছে সব।”

তারিফ গম্ভীর গলায় বলল

“যা হওয়ার হয়েছে। যাও গিয়ে কাজ করো মন দিয়ে। আর স্কুলের গার্ড ইজাজুল হক আর অধ্যক্ষ হেলেন কে ডেলিভারির হওয়ার পর জানিয়ে দাও।”

বিপ্রতীপ বুঝতে পারল এ কাজে স্কুলের গার্ড আর অধ্যক্ষ জড়িত। যেটা সে এতদিন স্কুলে থেকেও বুঝতে পারেনি। ভালো মানুষের আড়ালে কত নোংরা খেলা চলছে।।এজন্যই তারা বাচ্চা হারানোর ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে। স্কুল থেকে বের হয়ে বাচ্চা উধাও একজন দুজন হতে পারে তবে শত শত বাচ্চা উধাও স্বাভাবিক ব্যাপার না। আর অস্বাভাবিক ব্যাপারের পেছনের কারণটা তো বুঝায় গেল এখন।

এদিকে মায়া বাইরে অপেক্ষা করছে। সে অপেক্ষার এক পর্যায়ে একটু সামনে এগিয়ে টিলার আরও কাছে আসলো। বাকিরাও ভেতরে কী হচ্ছে বুঝতে পারছে না। তবে ভেতর থেকে কোনো সিগন্যাল না আসলেও তারা কোনো কিছু করতে পারছে না। এক দম বন্ধকর আতঙ্ক যেন তাদের মধ্যে বিরাজ করছে।

এদিকে বিপ্রতীপ তারিফকে রেখে বাচ্চাগুলোর কাছে গিয়ে একে একে বাচ্চা গুলোকে বের করছে। বাচ্চাগুলোকে বের করেই বিপ্রতীপ বিশেষ গ্যাস ঘরে ছেড়ে দিবে। এরপর নিজে বের হয়ে যাবে। এতে করে ভেতরের লোকটাও অজ্ঞান হয়ে যাবে। এরপর কৌশলে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। এ চিন্তা করেই সে আাগাচ্ছিল। তবে বিপত্তি ঘটে রুমাইশা যখন বিপ্রতীপকে দেখে। সে খুশিতে জোরে বলে উঠে

“চাচ্চু তুমি এসেছো? আমার অনেক ভয় লাগছে। ওরা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমাকে ঠিক মতো খেতে দেয়নি। অনেক কষ্ট হচ্ছে চাচ্চু। বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে। আমাকে নিয়ে যাও। আমি আর কোনোদিন বাবা মায়ের কথার অবাধ্য হব না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে চাচ্চু।”

রুমাইশাকে থামানোর অনেক চেষ্টা করছে বিপ্রতীপ। তবে তাকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। বাচ্চা মেয়ে তো, তাই সে ইশারা বুঝে নি। এতসব জটিলতা বুঝে নি। এদিকে রুমাইশার কথা শুনে তারিফ বুঝতে পারে বিপ্রতীপ তাদের কেউ না। তাই সে সাথে সাথে বিপ্রতীপকে ছুরি দিয়ে পেটে আঘাত করে। বিপ্রতীপ জোরে চিৎকার করে উঠে। মায়া বিপ্রতীপের চিৎকার শুনার সাথে সাথে বাকিদের বলল

“ভেতরে খারাপ কিছু হচ্ছে। ৮ টা বাচ্চা বের হওয়ার পর আর কোনো বাচ্চায় বের হচ্ছে না। এখনই আমাদের ভেতরে যাওয়া দরকার। বিপ্রতীপের হয়তো কিছু হয়েছে।”

মায়ার কথা শুনে বাকিরাও টিলায় ঢুকে পড়ল। তারিফ বাকিদের মারতে আসলো। মায়া আচমকা তারিফের হাত থেকে ছুরি নিয়ে তারিফের দিকে তাক করে বলল

“আমার কলিজায় ছুরি বসিয়েছিস। আমার কলিজা নিঃশ্বেষ হওয়ার আগেই তোকে আমি ধ্বংস করব।”

মায়া সেই একই ছুরি দিয়ে তারিফকে ক্ষতবিক্ষত করে দিল। তারিফও মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। বিপ্রতীপের অবস্থা দেখে রুমাইশা অনেক কাঁদছে। মায়া প্রতিটা বাচ্চাকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। রাঙামাটি শহর থেকে এ অভিযানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যে। এ কাজের সাথে জড়িত মোট ১৭ জনকে সেখান থেকে গ্রফতার করা হয়েছে। আর টোটাল ১৬ টা বাচ্চা না বরং ৩৪ টা বাচ্চা সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ৩৪ টা বাচ্চাকে সেদিন রাতেই নিরাপদ জায়গায় নেওয়া হয়। আর বিপ্রতীপকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ রক্তক্ষরণ হওয়ায় বিপ্রতীপ নিস্তেজ হয়ে যায়। এম্বুলেন্সে মায়া বসে আছে। সে বিপ্রতীপকে বলছে

“আপনার কিছু হবে না। আমি আপনার পাশে আছি। আমার জন্য হলেও আপনাকে বাঁচতে হবে। যে সংসারের স্বপ্ন দেখিয়েছেন সেটা যে করেই হোক পূরণ করবেন আপনি। আপনাকে ছাড়া আমি শূন্য হয়ে যাব। এ শূন্যতা আপনি ছাড়া পুরো দুনিয়া দিলেও পূর্ণ হবে না। আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি।”

মায়া বিপ্রতীপের হাতটা ধরে আছে। মায়ার সাথে প্রিয়ম এসেছে। বাকিরা বাচ্চাদের সাথে আছে। আর আইনী প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করছে। বিপ্রতীপকে হাসপাতালে আনার সাথে সাথে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো। মায়া করিডোরে বসে শুধু কাঁদছে। তার চোখ ভার হয়ে যাচ্ছে। যে রঙিন স্বপ্ন সে এঁকেছিল আজ সে স্বপ্ন লাল রক্তে রক্তাক্ত। সে চেয়েছিল তার জীবনের ফিকে হয়ে যাওয়া রঙ রঙিন হোক। কিন্তু রক্তাক্ত হয়ে লাল হোক চায়নি। সে আল্লাহর কাছে বিপ্রতীপের জন্য দোয়া করেই যাচ্ছে।

প্রায় দেড় ঘন্টা অপারেশনের পর ডাক্তার বের হলো। ডাক্তার বের হওয়ার সাথে সাথে মায়া আর প্রিয়ম সেখানে গেল। ডাক্তার মায়াকে বলল

“রোগীর অপারেশন সাকসেসফুল। সবকিছুই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। তবে একটা সমস্যা রয়ে গেছে।”

মায়া জিজ্ঞেস করল

“কী সেটা?”

ডাক্তার উত্তর দিল

“রোগী তার মেমোরি লস করেছে। সে হয়তো কাউকে চিনতে পারবে না। জ্ঞান ফেরার পর নিশ্চিত করা যাবে বিষয়টা।”

কথাটা শুনে মায়া স্তব্ধ হয়ে গেল।

চলবে।