নীড়বৃষ্টি পর্ব-১৭

0
3

নীড়বৃষ্টি
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
১৭.

পৃথিবীতে অসংখ্য অদ্ভুৎ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে নিজের জীবনের সবথেকে অদ্ভুৎ ঘটনাটা নিতুন আজ দেখতে পেল। তার সামনে চেয়ারে বসে থাকা স্নেহা মিস অন্যমনস্ক হয়ে আছে। শুধু যে অন্যমনস্ক তা নয়, বরং খুব গভীর কোনো ভাবনায় বুদ হয়ে আছে। পড়ানোর সময় যে-ই মিস কি-না কারো কল অব্দি রিসিভ করে না, তিনি গত চার মিনিট ধরে অন্য ধ্যানে ডুবে আছে, এটা যেন নিতুনের বিশ্বাসই হচ্ছে না। হুট করে কী হলো মিসের? উনি কি কোনো কারণে চিন্তিত? নাকি মিস প্রেম ট্রেমে পড়েছে? নিতুন আড়চোখে ভালো করে মিসকে পরখ করলো। স্নেহা একটা কলম হাতে বসে সাদা দেয়ালের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। নাহ, মিসের চোখে প্রেমিকের ধ্যানে মশগুল ভাবটা নেই। তারমানে, প্রেমে ট্রেমে পড়ে নি। খুব সম্ভবত এটাই ভাবছে নিতুনকে নতুন কী শাস্তি দেওয়া যায়।

আরো মিনিট দুয়েক অপেক্ষা করে নিতুন এবার বাধ্য হয়েই স্নেহাকে ডাকে,

“মিস, অংক করেছি।”

স্নেহার সম্বিত ফিরে। কিছুটা অপ্রস্তুত সে। ছাত্রের সামনে অন্যমনস্ক হয়ে পড়াটা একটা লজ্জাজনক ব্যাপার যেন। স্নেহা খাতা নিয়ে নিতুনের করা অংকগুলোর উত্তর দেখতে থাকে। নিতুন এই পর্যায়ে একটু সাহস করে জিজ্ঞেস করে,

“মিস, আপনি ঠিক আছেন?”

স্নেহা এই প্রশ্নেত জবাব দেয় না। বরং নিতুনের উপর রেগে ধমকাতে শুরু করে,

“তুমি সারাদিন বাসায় করোটা কী? এই অংক কি নতুন শেখানো হয়েছে তোমাকে। এই উপপাদ্যটা এখন অব্দি চার বার ভেঙে বুঝিয়েছি তোমাকে। তবুও খাতায় এগুলো কীসব লিখে রেখেছ? পরীক্ষার খাতায় তুমি এসব লিখে দিয়ে আসবে?”

স্নেহাকে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ একটু বেশি-ই রাগী মনে হচ্ছে। তার কথার সঙ্গে যেন আগুন ঝরছে। নিতুন এতে ঘাবড়ে যায় কিছুটা। নীলা বেগম ততক্ষণে স্নেহার উঁচু স্বর শুনে ছেলের রুমে এসে উপস্থিত হয়েছে। কিছুটা রেগেই তিনি স্নেহাকে জিজ্ঞেস করে,

“আবার কী করেছে ও?”

স্নেহা রাখঢাক করে না। নিতুনের প্রতি চরম রাগ নিয়ে নীলা বেগমকে জানায়,

“আন্টি, ওর গত দুই মাসের খাতা চেক করুন। এই এক উপপাদ্য আমি ওকে কয়বার করিয়েছি, আপনি নিজেই দেখুন। আমি সময় নিয়ে ভেঙে ভেঙে বুঝানোর পরও ওকে জিজ্ঞেস করি ঠিকঠাক বুঝেছে কি-না। ও সবসময় উত্তর দেয়, ও বুঝতে পেরেছে। ও যদি বুঝেই থাকে, তাহলে ম্যাথ করতে দিলে খাতায় কখনো আমি সঠিক আউটকাম পাই না কেন? এতটা অমনোযোগী আচরণ কীভাবে সহ্য করবো? আমার কী করা উচিত? আমার রেগে যাওয়াটা কি ভুল হচ্ছে?”

নীলা বেগম ক্ষিপ্ত দৃষ্টি মেলে ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। নিতুন তখন অপরাধীর মতো মাথা নত করে বসে আছে। স্নেহার রাগ হওয়াটা অযৌক্তিক নয়। উল্টো নীলা বেগমও ছেলের পড়াশোনা নিয়ে এই হেয়ালিপনা দেখে বিরক্ত। সাধারণ ঘরের মেয়ে ছিলেন নীলা বেগম। কথাবার্তায় তাই সে-ই সাধারণ আচরণ মিশে আছে উনার। দশটা বাঙালি মা’য়ের মতোই তিনি ছেলেকে শাসালেন,

“কী সমস্যা তোর? তোর আব্বু কোন জিনিসটার অভাব রাখছে? কীসের অভাবে তুই মন দিয়ে পড়ছিস না? তুই ক্লাসে টপ কর সেরকম কিছু তো আমরা চাইছি না। একটা এভারেজ রেজাল্টের আশা করাটাও কি ভুল? এতটা অবাধ্য কেন তুই? তোর ভাইয়াকেও তো পড়াশোনা করিয়েছি আমরা। ও তো কখনো তোর মতো এরকম অমনোযোগী আচরণ করে নি।’’

নীলা বেগমের বলা শেষ দুটো বাক্য পছন্দ হলো না স্নেহার। নিতুনের সঙ্গে নিতুনের ব্যাপারে কথার মাঝে বড়ো ছেলের গীত গাওয়াটা খুব একটা কার্যকরী ব্যাপার নয়। বাচ্চাদের পড়াতে পড়াতে টুকটাক বাচ্চাদের সাইকোলজি বুঝতে পারে স্নেহা। এরকম তুলনা দিলে বাচ্চাদের মন উল্টো আরো ছোট হয়। তাই সে কণ্ঠে পরিমিত ভদ্রতা রেখেই বলে,

“সরি, আন্টি। কিন্তু ওর ব্যাপারে কথা বলার সময় ওর সামনে প্লিজ কখনো ওর বড়ো ভাইকে টেনে কথা বলবেন না। ওর বড়ো ভাই পড়াশোনায় ভালো ছিল বলে, ওরও ভালো রেজাল্ট করা জরুরী না। ওর ভালো রেজাল্ট করা জরুরী শুধুমাত্র ও নিতুন বলেই। ওর আব্বু-আম্মু ওকে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দেওয়ার জন্য এতো পরিশ্রম করে বলেই ওর মন দিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।”

নীলা বেগম স্নেহার উপর রাগ হয় না। বরং বুঝতে পারে তার কথার অর্থ। তবুও উনার রাগ কমে না খুব একটা। উনি ধপ করে নিতুনের বিছানার এককোণে বসে পড়েন। বলতে থাকেন,

“ওর আব্বুকে বিচার দিয়েও দেখি লাভ হচ্ছে না। শরীরের যে-ই অবস্থা বানিয়ে রেখেছে, বেতের বাড়ি দেওয়াও সম্ভব না। তুই কী করলে একটু মানুষ হবি রে, নিতুন?”

স্নেহা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। ভদ্রমহিলা রাগে কিছুটা হাইপার হয়ে উঠেছেন। কি এক মুসিবত! স্নেহা একবার নিতুনের নত অপরাধী মুখটা দেখে নেয়। পরপর নীলা বেগমকে আশ্বস্ত করে বলে,

“আমি ওর সঙ্গে কথা বলছি, আন্টি। আপনি টেনশন নিয়ে হাইপার হবেন না। পরে আলাদা করে ঠান্ডা মাথায় ওকে বুঝাবেন।”

রান্নাঘরে লম্বা সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকে নীলা বেগমের মাথা গরম ছিল। তিনি ছেলের উপর রাগ ঝেড়ে নিজেকে আর অস্থির করে তুললেন না। আপাততর জন্য বুঝানোর দায়িত্ব স্নেহার আওতায় ছেড়ে দিয়ে উনি রুম থেকে বেরিয়ে যান। স্নেহা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় নিতুনের পানে৷ দু মিনিট সময় নিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে ছেলেটার আক্কেল কীভাবে ঠিক করা যায়?

__________

জ্বরের কারণে তিনদিনের ছুটি কাটিয়ে আজ থানায় ফিরেছে অয়ন। গতকাল স্নেহাকে দেখে বাসায় ফিরে সে লম্বা ঘুমে সারাদিন কাটিয়ে দিয়েছিল। দূর্বল শরীরটাকে বিশ্রাম দিয়ে কর্মজীবনের চাপের জন্য প্রস্তুত করতেই ঘুমকে বেছে নেয় সে। তার এই কাজের ফলাফল অবশ্য বেশ ভালো এসেছে। স্নেহার মুখদর্শন, আম্মুর যত্ন এবং প্রচুর বিশ্রামে সে এখন পুরোপুরি সুস্থ বোধ করছে।

যেহেতু গত তিনদিন অয়ন পুরোপুরি কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল তাই থানার পরিস্থিতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। সকল রিপোর্ট পেতে সে ওসি মনিরুলকে নিজের অফিসে ডেকেছে। ওসি মনিরুলের চেহারাটা কেমন বিষণ্ণ দেখাচ্ছে। অয়ন কারণ জানতে চাইলেই সে জানায়,

“স্যার, মাদকের কেসে আপনি এমপি সাহেবের বিরুদ্ধে যে-সব প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন, সেগুলো রাতের আঁধারে হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। থানায় কোনো প্রমাণ মজুদ নেই। উনার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন আর সম্ভব নয়।”

অয়ন শুনে সবটা। কিচ্ছু বলে না সে, নীরব রয়। ওসিকে ইশারায় যাওয়ার অনুমতি দেয়। ওসি মনিরুল প্রস্থান করতেই একাকী রুমটায় অয়ন এক মিনিট থম মেরে বসে থাকে। তারপর হুট করেই দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে চেয়ারে পিঠ এলিয়ে দেয়। তিনটা দিন, মাত্র তিনটা দিন অয়ন থানায় আসে নি। তিনদিনে কি-না এমপির বিরুদ্ধে জোগাড়কৃত সকল প্রমাণ হাওয়া হয়ে গিয়েছে। অয়নের অনুপস্থিতির ফায়দা লুটে প্রতিপক্ষ চাল চেলেছে। তবে অয়ন এখানে আরেকটা ব্যাপারও বুঝতে পারছে। থানার ভেতরের ভল্ট থেকে প্রমাণ উধাও হয়ে যাওয়া মানে এই ঘটনায় থানার ভেতরের লোকও জড়িত রয়েছে। বাহিরের রাজনৈতিক প্রভাবে সাড়া দিয়েছে এই থানারই কোনো কর্মকর্তা। কে হতে পারে সে?

অয়নের মাথা ধরে যায়। সন্দেহের তীর থানার সকল কর্মকর্তার দিকেই যায়। যতই প্রমাণ সংগ্রহ করুক না কেন, ভেতরে এরকম গোপন শত্রু গাদ্দারি করার জন্য থাকলে আসলে দিনশেষে কিছুই প্রমাণ করা সম্ভব না। অয়ন তেমন একটা অবাক হয় নি এই বিষয়টা নিয়ে। এটাই বাংলাদেশ। ক্ষমতার প্রভাবে এখানে অনেক কিছুই সম্ভব। অয়ন যদিও নিজের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। কিন্তু এই দেশে একজন অয়ন দিয়ে সুষ্ঠু বিচার কখনো সম্ভব না। দুধে যেমন একটা মাছি থাকলে পুরো দুধ নষ্ট হয়ে যায়, তেমনই একটা থানায় একটা কর্মকর্তাও যদি গাদ্দার হয়, সেক্ষেত্রে পুরো থানার সকলের পরিশ্রমই বিফলে যাওয়া নিশ্চিত।

__________

যূথীবনে ঐ হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া
হায় হায়রে দিন যায়রে
ভরে আঁধারে ভুবন…

স্নেহার রুমমেট মেয়েটা মোবাইলে গান ছেড়ে খুব আয়োজন করে টেবিলের উপর থাকা ছোট্ট আয়নার সামনে সাজতে বসেছে। গানটা অবশ্য স্নেহার অনুমতি নিয়েই প্লে করেছে মেয়েটা। গানের প্রতি বিশেষ আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও স্নেহা বারণ করে নি আর। মেয়েটা এভাবেই স্নেহাকে বিরক্ত না করে নিজের মতো খুব সমঝে চলে তাকে। স্নেহাও এই ব্যাপার নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট। সে তো এমন জীবনই চেয়েছিল। যেখানে কেউ তার আশেপাশে অহেতুক আলাপ করে তাকে বিরক্ত করবে না।

বই কোলে নিয়ে সিঙ্গেল বিছানায় হেলান দিয়ে বসে থাকা স্নেহার নজর হঠাৎ আপনাআপনিই চলে যায় টেবিলের সামনে বসে সাজতে থাকা মেয়েটার দিকে। গায়ে চমৎকার এক শাড়ি জড়িয়ে মেয়েটা কী সুন্দর করে তৈরি হচ্ছে। মুখে স্নেহার নাম না জানা অসংখ্য মেকাপ প্রোডাক্টও মেখেছে। তবে আপাতত চোখে যে-ই জিনিসটা লাগাচ্ছে, সেটার নাম স্নেহার জানা আছে। কাজল, মেয়েটা নিজের সুন্দর চোখে কাজল টেনে সে-ই চোখদ্বয়কে আরো সুন্দর বানাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখতে দেখতে স্নেহার মনযোগ পড়াশোনা থেকে সড়ে যায়। এসব শাড়ি অথবা সাজগোজের ধারে কাছে স্নেহার কখনো ঘেঁষা হয় নি। এই সাজগোজের ব্যাপারটাকে স্নেহার কখনো নিজের জন্য মনেই হয় নি।

এই যেমন ঐন্দ্রিলা যে এতো সুন্দর করে সাজছে, ব্যাপারটা তার উপর মানানসই লাগছে। শাড়ি, চুড়ি, আলতা সব মিলিয়ে এক অদ্ভুৎ মহিমা এবং দ্যুতি ছড়াচ্ছে মেয়েটা। কিন্তু একইভাবে স্নেহা যদি সাজে তাকে দেখাবে জঘন্য। সারাদিন রোদে পুড়ে এবং ঘামে ভিজে কামলা সেজে ঘুরে বেড়ানো মেয়ের গায়ে খুবই বিশ্রী দেখাবে এসব আয়োজন। স্নেহারা তো চাইলেই পারে না ঐন্দ্রিলা সাজতে।

স্নেহার ভাবনার জগতে ছন্দপতন ঘটে ফোনের রিংটোনের শব্দে। বালিশের পাশে থাকা স্ক্রিন ফাটা ফোনটা হাতে তুলে নেয় স্নেহা। স্ক্রিনে ভেসে উঠা অচেনা নাম্বারটার দিকে দু সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ফোনটা রেখে বইয়ে মুখ গুজে সে। অচেনা নাম্বার থেকে কল এলে সে কখনো প্রথমবারেই কলটা রিসিভ করে না। কিন্তু একবার কলটা কেটে গিয়ে দ্বিতীয় বার আবারও বেজে উঠলে স্নেহা বই রেখে কলটা রিসিভ করে। ফোন কানে চেপে ধরে অপেক্ষা করে কল দেওয়া ব্যক্তির কিছু বলার অপেক্ষায়। সেকেন্ড দশেক গড়ায়। ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। স্নেহা কিছুটা বিরক্ত হয়ে নীরবতা ভেঙে নিজেই প্রশ্ন করে,

“কে?”

ওপাশ থেকে পাঁচ সেকেন্ড নীরবতার পর একটা ভারী পুরুষালি স্বর বলে উঠে,

“শ্রেয়া ঘোষালের যুগে বসে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায় গান শুনছেন। অবাক হলাম আমি। আপনি গান পছন্দ করেন ধারণা ছিল না।”

পরিচয় জানতে চাওয়ার পিঠে আগুন্তকের এমন উদ্ভট জবাবে স্নেহার কপালে ভাজ পড়লো। রুমটা তখনও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্বরে গাওয়া ‘এই মেঘলা দিনে একলা’ গানে মুখোরিত। স্নেহা রুম ছেড়ে বেরিয়ে চলে যায় হলের বারান্দার নিরিবিলি একটা দিকে। ঠান্ডা মাথায় এবার রাগ ঝেড়ে জানতে চায়,

“নাম, পরিচয় কী?”

অপর পক্ষের ব্যক্তিটি ভনিতা না করে উত্তর দেয়,

“রাগ হয়ে আপনি লাফাঙ্গা বলে ডেকেছিলেন।”

স্নেহা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারে এটা সেই অসভ্য, ইতর, স্টকার ছেলেটা। কী মারাত্মক চালু! স্নেহার নাম্বারও যোগাড় করে ফেলেছে। নিশ্চয়ই রিচার্জ করার দোকানটা থেকে নাম্বারটা মেরে দিয়েছে। এই ছেলে কি বুঝতে পারছে যে ও ভুল মেয়ের সঙ্গে এরকম ফালতু আচরণ করছে? স্নেহা রেগে গিয়ে কল কাটে না। বরং রাগটা নিজের কণ্ঠ মিশিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,

“প্রথমে চিরকুট, তারপর রিকশা, অতঃপর গোলাপ, ছাতা, আখের শরবত। কী প্রমাণ করতে চাইছো তুমি? খুব বড়ো বাপের ছেলে তুমি? ভুল জায়গায় এসেছো। নিজেকে শুধরে নাও।”

স্নেহা স্পষ্ট হুমকি দিচ্ছে। অপর পাশের ভারী স্বরের ছেলেটা বোধহয় কিছুটা হাসলো। অতঃপর বলে,

“স্নেহা, কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আসেন নি সেদিন। আমি অবাক হই নি মোটেও। বরং আসলেই উল্টো আমি আরো অবাক হতাম। আমি খুব বড়ো বাপের সন্তানও নই। তবে সঠিক জায়গায় আটকেছি এতটুকু বুঝতে পারছি। আমি কিছু প্রমাণ করতে চাইছি না। আপনার জীবন সহজ করতে চাইছি কেবল। এখন আপনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিছুপা হওয়া সম্ভব নয় আমার পক্ষে। দ্যাট’স ইট।”

স্নেহার রাগে গা কাপতে থাকে। তার জীবন সহজ করতে চায় মানে? কে এই ছেলে? কোথা থেকে এসেছে? কোন সাহসে স্নেহাকে এমন একটা কথা বললো? স্নেহাকে কি কাউকে বলেছে তার জীবন সহজ করে দিতে? তাহলে? স্নেহা আর ভদ্র জবাব দিতে পারে না। বরং এই অচেনা ছেলেকে মুখের উপর বলে দেয়,

“থাপড়ে দাঁত ফেলে দিবো একদম। আমার সঙ্গে ফাইজলামি করতে আসলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আর কখনো যেন এধরণের দুঃসাহস না দেখি।”

বলেই স্নেহা কলটা কেটে দেয়। শুধু কেটেই ক্ষ্যান্ত হয় না, বরং সরাসরি নাম্বারটাই ব্লক করে দেয়। বারান্দার রেলিঙের কাছে দাঁড়িয়ে স্নেহা বড়ো করে দুটো নিঃশ্বাস নেয়। চেনা নেই, জানা নেই একটা ছেলে স্নেহাকে আড়াল থেকে স্টক করে তার জীবন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে ফেলেছে। ধারণা নিয়েই থামে নি, স্নেহার উপর দয়াও দেখাচ্ছে। এতটা সাহস কোথা থেকে পেল? স্নেহা চায় না কারো সাহায্য, চায় না কারো দোয়া, না চায় কারো এসব খেলাধুলা গোছের অনুভূতির শিকার হতে। এই ছেলে যদি এখানেই না থামে তাহলে স্নেহা ওকে দেখে নিবে। এই পরোপকারী সাজতে চাওয়ার ভূত ভালো করে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিবে।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]